যদি তুমি জানতে !! Part- 04
-চলে যাও ভাই।সামনে আসবেনা।
-চলে যাচ্ছি। কাপড়টা চেপে রাখিস কিছুক্ষণ, ব্যাথা কিছুটা হলেও কমবে।
সাঈদ ভাই শান্ত গলায় কথাটা বলেই সোজা চলে গেলেন।পিছন ফিরে তাকাননি।
বরফ মোড়ানো কাপড়টা কিছুক্ষণ চেপে ধরলাম। ডানপাশ এখনো খুব ব্যাথা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারটা বেজে দশ মিনিট। বোল সহ কাপড় নিচে রেখে এসে রুমে আসলাম। ব্যাথা কিছুক্ষণের জন্য উপেক্ষা করে টেবিলে বসলাম। পড়তে বসব। সামনে টেস্ট পরীক্ষা। খালামনির বাসায় এসে পড়াশোনায় গাফিলতি করলে নিশ্চিত যে বাশঁ খাব এটা সিউর। কিছুক্ষণ পর স্যার আসবেন। বাবা আমার পড়াশোনার চিন্তা করে প্রাইভেট টিচারকে খালামনির বাসায় ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। স্যারের বাসা এখান থেকে এক ঘন্টার রাস্তা। অবশ্য বাবার রিকুয়েস্টের কাছে হার মেনেছেন জানা কথা।
বইয়ের চার নম্বর পাতা যেই না উল্টাব ওমনেই দেখি নিচে থেকে খুব চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । সম্ভবত সাঈদ ভাইয়া চিল্লাচ্ছেন। টেবিল ছেড়ে নিচে নেমে দেখি ভাইয়া স্যারের সাথে ঝগড়া করছেন। তার মধ্যে খালামনি সেই পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমাকে দেখে সাঈদ ভাই বললেন-
-নাবিলা, উনি তোর টিচার নাকি প্রেমিক ! সত্যি করে বল কে এই লোক!
-কী আজব! ভাইয়া উনি স্যার আমার। তুমি শান্ত হও। শান্ত হলে তবে তো খালামনি কিছু বলার সুযোগ পাবে। বাবা খালামনিকে জানিয়ে রেখেছেন। আর স্যার এসেছেন বাবার রিকুয়েস্টে। শান্ত হও ভাইয়া।
খালামনি সাঈদ ভাইকে টেনে সব বুঝাতে বুঝাতে রুমে নিয়ে গেলেন। আর আমাকে রুমে যেয়ে পড়া শুরু করতে বললেন। আমি স্যারকে রুম এনে পড়তে বসলাম। স্যার এমন পরিস্থিতিতে বেশ লজ্জায় পড়ে গেছেন এটা জানি। টেবিলে বসতেই স্যার বললেন-
-ফিহা কে ও?
-স্যার উনি আমার খালাতো ভাই।
-এমন কেন বলোতো?
-স্যার উনি রাগী স্বভাবের এজন্য।
-তাই বলে এমনসব কথা বলবে?
-মাফ করবেন স্যার। আসলে ভাইয়া বোনগুলোর জন্য একটু বেশি চিন্তা করে।
-ও আচ্ছা। তো, কি অবস্থা তোমার? কতদিন হলো দেখিনা।
– স্যার আমিতো দুইদিন হলো পড়ায় গ্যাপ দিয়েছি।
-আরে এই দুইদিন যে কত্ত কিছু তা তুমি বুঝবে না। তার জন্য রেজাল্ট কিন্তু খারাপ হতে পারে।
-খেয়াল রাখবো স্যার, সামনে পড়ার যেন ব্যাঘাত না ঘটে।
ঘন্টাদুয়েক পড়িয়ে স্যার চলে গেলে আমি গোসল সেরে নিচে চলে যাই। বলে রাখি স্যার কে বাবা আমার সাথে ঘটা ব্যাপারগুলো জানায়নি। কোন এক বাহানা দেখিয়ে জাষ্ট রিকুয়েস্ট করেছে এখানে পড়ানোর জন্য।
দুপুরের খাওয়া পর্ব সকালের মতো পানি দিয়ে গিলে গিলে সারলাম । রুমে এসে ফোন হাতে নিলাম বাবাকে কল করবো বলে কিন্তু তার আগেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো। ঠিক এরকম-
-নাবিলা আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। কিছু খেতে নিয়ে আয় না।আমি সকাল থেকে না খাওয়া। খাবার নিয়ে ছাদে চলে আসিস। খবরদার আম্মু যেন না দেখে। প্লিজ!!
বুঝতে আর বাকি রইল না, মেসেজ যে শ্রদ্ধেয় সাঈদ ভাই দিয়েছে। এখন প্রায় চারটে বাজবে। বেচারার উত্তম শাস্তি হয়েছে। আর না।এই মেসেজের ব্যাপারে খালামনিকে জানালে, না জানি উনি কালকেও ভাইয়াকে খেতে দিবেনা।
বলে রাখি এসব মামলায় খালামনি খুব স্ট্রিক্ট।কেউ ভুল করলে উপর্যুক্ত শাস্তি দিয়ে ছাড়ে। সেটা নিজের ছেলেই করুক না কেন।থাক। জানানো দরকার নেই আমি চুপিচুপি যেয়ে খাবার দিয়ে আসি।
একটা প্লেট নিয়ে খাবার বেড়ে আরেকটা প্লেট দিয়ে ঢেকে চোরের মতো ছাদে যাচ্ছি। উদ্দেশ্য খালামনির চোখে ধূলো দেখিয়ে সাঈদ ভাইকে খাবার দিয়ে আসা। সিড়িতে আরেক কদম দিব হঠাৎ মনে হলো ডান কাধে হাত রেখে কেউ থামিয়ে দিল। মনেমনে ভয়ে ঢোক গিলে যাচ্ছি। এখন যদি খাবার নেয়া অবস্থায় খালামনি দেখেন। তাহলে আরো এক অঘটন আমারও ঘটবে। ওই যে কথায় আছে না “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়”। ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বড় আপু। যাক বাবা! বড় বাচা বাচলাম। আপু আমার অবস্থা দেখে বললেন-
-কীরে তুই ওমন চোরের মতো ছাদের দিকে যাচ্ছিস কেন?
-আআরে ধুরর। কিযে বলনা। আমি কেন চোরের মতো যাব। আকাশ দেখবো তো, এজন্য খাবার নিয়ে ওখানে যাচ্ছি।
-তুই আকাশ দেখবি এটার সাথে খাবারের কি সম্পর্ক?সত্যি করে বল কেন যাচ্ছিস!
– আস্তে কথা বল আপু। খালামনি শুনলে বিপদ হবে। ছাদে ভাইয়া, উনার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি। উনি মেসেজ করেছেন আসতে।
-হায় রে গাধা ! এটা আগে বললে কী হতো? কতক্ষণ ধরে কথা পেচাচ্ছিস।
-আচ্ছা সরি আপু। আমি গেলাম।
-ওই দাড়া আমিও আসব।
.
.
.
খাবার নিতেই দেখি সাঈদ ভাইয়া ছাদের বাম পাশে রাখা টেবিল টার চেয়ারে বসে আছেন। আমাকে আর বড় আপুকে দেখে উনি বললেন-
– নাবিলা খাবার টেবিলে রাখ। ফিমা আয়, বস। একটু আড্ডা দেই তোর সাথে।বস।
শোনার সাথে সাথে বড় আপু সাঈদ ভাইয়ের পাশে চেয়ার টেনে বসলেন।যেন আপু ওত পেতে ছিল কখন সাঈদ ভাইয়া আসতে বলবে। আমি খাবার টেবিলে রেখে চলে যাচ্ছি। আর মনেমনে ভাবছি, ভাইয়া কত খারাপ ! আমি বাচাল বলে আমাকে একটা ধন্যবাদও বলল না। আর আপুকে ঠিকি উনি পাশে বসিয়ে আড্ডার আসর বসাচ্ছেন। যত্তসব স্বার্থপর মানুষ !
ছাদ থেকে চলে যাচ্ছি ওমনেই সাঈদ ভাইয়া পেছন থেকে ডাক দিলেন-
-নাবিলা দাড়া!
আমি ঘুরে উনার দিকে তাকাতেই বললেন-
-তোকে কি আমি যেতে বলেছি? বেশি পাকনামি করলে তোকে যে আস্ত রাখব না, এটা তুই সিউর থাক। এখন এইদিকে আয়। আর আমাকে খাইয়ে দে।
-ভাইয়া আমি খাইয়ে দিব?
-কেন ! তোর কি ট্যাক্স লাগবে ! কথা যে বললাম কানে যায়নি? জলদি এখানে আয়। আমার ক্ষুদা লাগছে। এমনেই তোর জন্য আমার এই দশা। আয় বলছি!
ভাইয়ার কথা মতো উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।চোখ পড়ল ভাইয়ার হাতের দিকে। উনার ডানহাতে ব্যান্ডেজ করা।কিন্তু সকালে তো দেখলাম না!!
বড় আপু ভাইয়াকে খাইয়ে দেয়ার কথাটা শুনার পর থেকে থম মেরে আছেন। উনিও দেখি এসাইনমেন্টের বাহানা দেখিয়ে প্রস্থান হলেন। আপুর ব্যবহার মাঝে মাঝে আমার কাছে ভিন্নরকম ঠেকে। এতক্ষন আমার সাথে এমন ভাব করলেন যেন আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে পারলে বেশ শান্তি !!
খাইয়ে দিতেই সাঈদ ভাইয়া বললেন-
– নাবিলা, তোর স্যার এতো ইয়াং কেন?
-সেটা আমি কীভাবে বলব ভাইয়া?
-এতো ইয়াং স্যার দেখে যে কেউ ভাববে ওটা তোর প্রেমিক। কিসে পড়ে তোর স্যার?
-স্যার মাস্টার্সে পড়ছেন।
-দেখতে তো পুরাই বাচ্চা বাচ্চা লাগে। যাই হোক দূরে দূরে থাকবি।বেশি ঘেঁষলে তোর অবস্থা টাইট করবো!
-আচ্ছা ঠিকআছে। খেয়াল রাখব।।
.
.
খাওয়া শেষ করে প্লেট নিয়ে নিচে যেতে নিলে সাঈদ ভাইয়া ডাক দিয়ে থামিয়ে দিলেন, বললেন-
-প্লেট রাখ ওখানে। যাওয়ার সময় নিয়ে যাবি। এখন একটু রেস্ট নিব। মাদুর বিছানো আছে বস ওখানে।
-ভাইয়া তুমি রেস্ট নিবে, তাতে আমার কি কাজ? আমাকে খাইয়ে দিতে বলছো, খাইয়ে দিসি। আর কোনো কাজ নেই আমার। চলি।
-তোর কাজ আছে নাকি নেই, সেটা আমি বুঝব। তোকে বসতে বলছি বস। বাড়তি কথা বলবি না।
এই সাঈদ ভাইয়া মাঝে মাঝে যে কি বলেন, তার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝিনা। এই আমাকে থাপ্পড় দেয়, তো আবার আদর করতে কাছে আসে। কি যে চান ! উনি ভালো জানেন। কথানুযায়ী মাদুরের ওপর বসলে ভাইয়াও উঠে এসে পাশে বসেন। বসতে না বসতেই আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলেন। আমি অবাকের শেষ সীমান্তে! ভাইয়া আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছেন! হঠাৎ ভাইয়া চোখ বন্ধ চোখে রেখে আমার হাত নিয়ে উনার চুল টেনে দিতে ইশারা করলেন। আর বললেন-
-নাবিলা মাথার চুল গুলো একটু টেনে দে। কেমন জানি ঝিমঝিম করছে। সারদিন না খেয়ে আছি।শরীর কেমন নিস্তেজ লাগছে।
-ভাইয়া, একটা কথা বলি তোমার হাতে কি হয়েছে?
-তোর জানতে হবেনা। যেটা বলছি সেটা করতে থাক।
-ভাইয়া প্লিজ বলনা।।
-প্রজেক্ট করতে যেয়ে হাত কেটেছে।
-সকালে তো ঠিক ছিলো।
-তুই আবার বাচালের মতো প্রশ্ন করছিস!
-না না ভাইয়া সরি।
.
.
সন্ধ্যাবেলা। রুমে বসে আছি। ঘাড় পিঠ ব্যাথায় শেষ। সাঈদ ভাইয়ের খেদমত করতে করতে এই অবস্থা। মাত্র উনি রুমে গেল।টেবিল থেকে ফোনটা নিতে যাব তার মধ্যে কারেন্ট চলে গেল। কিন্তু আমি যতটুকু জানি খালামনির বাসায় কারেন্ট যাওয়ার সাথেসাথেই আইপিএস অন হয়ে যায়। তবে এখনো সেটা অন হচ্ছেনা। হঠাৎ মনে হলো কেউ রুমের দরজা লাগিয়ে দিচ্ছেন। জানালা খোলা। শো শো বাতাসে পর্দাগুলো ছুটাছুটি করছে। ভয়ে আমি পিছাতে লাগলাম। এক পা দুপা করে। বাইরে থেকে আসা আবছা আলোতে বোঝা যাচ্ছে ওই ব্যক্তি আমার দিকে আসছে। অন্ধকারের পরিমান বাইরের আবছা আলোর তুলনায় বেশি বলে স্পষ্ট তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছেনা। অনেক চেষ্টা করছি। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এখনো চেষ্টা করছি চিল্লানোর।পারছিনা। আমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম। কিন্তু সে এখনো এগোচ্ছে। ভয়ে চোখমুখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার করলাম। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করলে মনে হয়। কেউ আমাকে এখনো টাচ করেনি। চোখ খুলে দেখি কারেন্ট চলে এসেছে আর খালামনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন। আমি দৌড়ে দরজা খুলে দিলে খালামনি আমার ভয়ার্ত অবস্থা দেখে জড়িয়ে ধরেন। আপু এসেও প্রশ্ন করতে লাগলেন- কী হয়েছে, চিল্লালাম কেন, ভয় কেন পেয়েছি। খালামনি আমাকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে পানির গ্লাস দিয়ে খেতে বললেন।
পানি খেতেই দেখি সাঈদ ভাই দৌড়ে আমার রুমে আসলেন।এসে উনিও নানারকম প্রশ্ন করতে লাগলেন।ভয়ে এখনো চুপ করে আছি। পানি গিলছি আর ভাবছি সাঈদ ভাইয়ের রুম ঠিক বাম পাশে। উনার আমার রুমে আসতে এত সময় লাগল? নাকি,
-চলবে