যদি তুমি জানতে !! Part- 05
পানি গিলছি আর ভাবছি সাঈদ ভাইয়ের রুম ঠিক বাম পাশে। উনার আমার রুমে আসতে এত সময় লাগল, নাকি উনি এসবের পিছনে? না না, সন্দেহ করলে চলবে না। আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। না আমি তার চেহারা দেখেছি। শুধু শুধু ভাইকে সন্দেহ করলে চলবে না।
খালামনি আমাকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন-
-ফিহা, ঠিক আছিস তো? মা আমার এখন বল কি হয়েছে? ওমন চিৎকার কেন করলি?
-খালামনি কেউ রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। কেউ ছিল রুমে খালামনি। কেউ ছিল।
-কে ছিল? দেখেছিস?
-না খালামনি অন্ধকার ছিল। তোমাদের আইপিএস ঠিকসময়ে অন হলে দেখতে পেতাম।
– কী বলছিস। আইপিএস তো অন ছিল।তার মানে কেউ তোর রুমে আসার জন্য আইপিএসের মেইন সকেটে কিছু করেছে। দাড়া, আমি দেখছি। সাঈদ একটু চল তো আমার সাথে।কোথায় কাহিনি হয়েছে, তা দেখা দরকার!
সাঈদ ভাই ফিমা আপুকে দেখিয়ে বললেন-
-আম্মু তুমি ফিমাকে নিয়ে যাও। ফিমা এসব ইলেকট্রিসিটির জিনিস ভালো বুঝবে। ওকে নিয়ে যাও।
– তুই তাহলে ফিহার দিকে খেয়াল রাখিস। আর সাবধান ! এক সেকেন্ডের জন্য যদি একা রেখে যাস, তোর হাল যে কি করব ভালোভাবে জানিস।
-না আম্মু তুমি যাও। আমি আছি।
বলে রাখি আপু তড়িৎ বিষয়ক জিনিস ভালো বুঝেন।ডিপার্টমেন্টে এসব নিয়ে কাজ করেছেন।
খালামনি ফিমা আপুকে নিয়ে মেইন সকেটের গরপর দেখতে গেলেন। আর সাঈদ ভাই আমার পাশে এসে বসলেন। আর বললেন-
-নাবিলা, এখনো ভয় পাচ্ছিস? আমি আছি ভয় পাবি না। তোর কিচ্ছু হতে দিব না আমি।
-সাঈদ ভাই তুমি আসতে এত সময় নিলে কেন?
-আমি বারান্দায় ছিলাম। তোর চিৎকার শুনে ফিমা আমাকে ডাক দিয়ে তোর রুমের দিকে চলে যায়। আমি যখন আসি তখন দেখি সবাই তোর রুমে।
-কী করছিলে তুমি?
-তুই কি আমাকে সন্দেহ করছিস?
-আমি কি কোথাও বলেছি, তোমাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
-না। কিন্তু তুই যে এত প্রশ্ন করছিস।
-আসলে কী ভাইয়া জানো, আমার বিপদের সময় তুমি কখনো আসবে না।
-এভাবে কেন বলছিস?
-তুমি ভালো জানো।
সাঈদ ভাই মুখ কালো করে চুপ করে আছেন।হঠাৎ খেয়াল করলাম, ভাইয়ার ব্যান্ডেজ করা হাত থেকে রক্ত পড়ছে। ব্যান্ডেজের সাদা কাপড় লাল। মনে হচ্ছে এই হাত দিয়ে উনি কিছুক্ষণ আগে কোনো কাজ করেছেন। ব্যাপারটা উপেক্ষা করলাম না।
জানালায় চোখ আটকালো। দেখি রক্ত।এবার যে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ভাইয়াই ছিল! কারন, আমার রুমের জানালা আর উনার রুমের বারান্দা অনেক কাছাকাছি। জানালা ধরে ঝুলে তার বারান্দা বরাবর পা ফেললেই উনার রুমে যাওয়া যায়। উনি ঠিক এমনটাই করেছেন।সবাই রুমে আসার পর উনি এসেছেন। হ্যাঁ! এটা সাঈদ ভাই-ই। তার মানে বাসা থেকে যে অজানা ব্যক্তির আশঙ্কা ছিলো সেটাই কি সাঈদ ভাই? কিন্তু এই ব্যক্তি এমন নিচু কাজ করবেন? ছি! উনি কিনা আমার ভাই। বলতেও লজ্জা করছে এখন।
খালামনি আর আপু সব চেক করে রুমে আসলে খালামনি সবাইকে যার যার রুমে চলে যেতে বললেন। আর খালামনি আমার পাশ ঘেঁষে বসে বললেন-
-ফিহা, নিচে দেখে এসেছি। কেউ সকেটের ওখানে একটা তার ঢিলে করে রেখেছে। তোর সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি যে এমন করেছে আমার মনে হচ্ছে। এখন বল এ পযর্ন্ত কি এমন আরো কিছু হয়েছে?
-হ্যাঁ খালামনি। গতরাতেও কেউ এমন ভাবে রুমে এসেছিল। আমাকে টাচ করেছিল, খালামনি। আবার একটা আননোন নাম্বার থেকে থ্রেট টাইপের মেসেজ এসেছিল।এরপর ফাহিম ছেলেটা যাওয়ার পর পরই কেউ একটা বিড়াল পাঠিয়ে চিরকুট দিয়েছিল।
-এতকিছু হয়েছে, আর তুই আমাকে জানাস নি!
-খালামনি আমি বুঝতে পারিনি যে আবারও এমন কিছু হবে।
-এখন যদি তোর কিছু হতো তোর বাবাকে আমি কি উত্তর দিতাম!
-রাগ করো না খালামনি। প্লিজ।
-এই মামলা রফাদফা না করা পযর্ন্ত তোকে যে শান্তি দিবে না,খাটি সত্য। সাঈদকে বলে দিচ্ছি চব্বিশ ঘন্টা তোর নজরদারি করার জন্য। তুই দরজা লাগিয়ে ঘুমাবি না। লাইট জালিয়ে রাখবি। আজ তোর খালু রাতে আসবেনা। আমি ঘুমাব তোর সাথে। শুয়ে পড়।
-আচ্ছা খালামনি। তুমি যা বলবে।
রাতে আর কিছু হয়নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাঈদ ভাই আমার রুমে সোফায় বসে বসে বই পড়ছেন। ঘড়িতে বারোটা বাজবে। খালামনি বোধহয় সাঈদ ভাইকে সকাল সকাল আমার নজরদারির চাকরি দিয়েছেন। বেশ। এখন এ ব্যক্তি আমার চোখেচোখে থাকবে।
সাঈদ ভাই আমাকে উঠতে দেখে বললেন-
-নাবিলা, ফ্রেশ হয়ে নে। আম্মু তোর জন্য খাবার দিয়ে গেছে।
-প্লেট তো আমি দুইটা দেখছি।
-চুপ। মুখ ধুয়ে আয়।
কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই সাঈদ ভাইয়া দুইটা প্লেট নিয়ে আমার পাশে বসলেন। আর বললেন-
-নাবিলা আমাকে খাইয়ে দে। হাত কাটা।
-তুমি খাওনি?
-এক বাচালের সাথে খাব বলে আটটা থেকে অপেক্ষা করছি।
-চামচ দিয়ে খাও। আমি পারব না।
-সাহস তো বেড়ে গেছে দেখছি।ওই তুই আমাকে কোন বড় গলায় না করছিস ! ভুলিস না আমি কী করতে পারি।
-ঠিক বলছো। তুমি সব পারো। শেষ করতেও পার।
-নাবিলা কী হয়েছে? কাল রাত থেকে দেখছি তুই কেমন জানি কথা বলছিস। কী হয়েছে আমাকে বল। নিজের সাধ্য দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করব। বল।
-সাঈদ ভাই সত্যি করে একটা কথা বলবে?
-বাচালের মুখ আটকানো যায় না।
-ভাই তুমি কাল কোথায় ছিলে? প্লিজ মিথ্যে বলো না। সত্যটা জানলে বলে দাও ভাই।
-আল্লাহর কসম আমি বারান্দায় ছিলাম। তুই কালকে অনেক সেবা করেছিস। যার বদৌলতে মাথা ব্যাথাটা অনেক কমে গিয়েছে। এজন্য ঠান্ডা হাওয়া নিতে বারান্দায় ছিলাম।
-হাতটা থেকে রক্ত পড়ছিল কেন?
-না জানলে হয় না? প্লিজ নাবিলা।
– জবাব চাই।
-প্লিজ আম্মুকে বলিস না। ওয়াদা কর।
-বলো।
-ওইদিন যে তোকে থাপ্পড় মারলাম, এই হাত দিয়ে মেরেছি। আমার কেন যে তোর উপর রাগ উঠেছিল জানি না। কিন্তু তুই যখন বললি তোর গালের ভেতরের চামড়া কেটে গেছে, বিশ্বাস কর মন চাচ্ছিলো হাতটা কেটে ফেলে দেই। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রজেক্টের ভাঙা কাচের উপর হাত চেপে রেখেছিলাম। কালকে আবার তোর চেহারা দেখে তোকে দেয়া পুরোনো কষ্টটা মনে পড়ে, তাই আমি আবারো আঘা…
সাঈদ ভাইয়ের কথা শুনে আমি হতভম্ভ! সামান্য কেটেছে বলে নিজের হাতে এত আঘাত করবে! পরপর দুবার! আমি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম-
-সাঈদ ভাই আমার রুমের জানালায় আমি রক্ত দেখেছি। সেটা কি মিথ্যে ?
-জানালা? আমি তো জানালার ওখানে কখনো যাইনি। আর তোর যদি এখনো বিশ্বাস না হয় তাহলে চল আমার রুমে। বারান্দায় যেয়ে দেখে আসিস। এখানে যদি থাকে ওখানেও রক্তের ছিটেফোঁটা থাকবে।
.
.
সাঈদ ভাইয়ের রুমের বারান্দায় যেয়ে দেখি সত্যিই তো রক্ত নেই। কিন্তু এটাও তো হতে পারে, ভাইয়া মুছে ফেলেছেন। কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভাইয়া করেনি। এমনেতেও কসম কেটেছেন। মিথ্যে বলবেন না।
আমি আমার রুমে এসে ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে থাকি। হাতের দিকে তাকালাম। ব্যান্ডেজ কিছুটা লাল। যদিও নতুন কাপড়ে ব্যান্ডেজ করা। হঠাৎ সাঈদ ভাই বললেন-
-নাবিলা, তোর কি বিশ্বাস হয়েছে?
-বিশ্বাস না হলে খাইয়ে দিতাম না।
-আজ তোর আমার সাথে মার্কেটে যেতে হবে। খেয়ে রেডি থাকিস।
-মার্কেটে কেনো?
-বেশি কথা বলবি না। যা বলছি করিস।
.
.
নিচে অপেক্ষা করছি সাঈদ ভাইয়ের জন্য। আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলে নিজেই লেট করছেন। ছেলেদের কী এত করা লাগে! জাষ্ট শার্ট,প্যান্ট পড়লেই তো শেষ!! উফ, যত জালা সব আমার!
হঠাৎ দেখি সাঈদ ভাই শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছেন। কালো সাদার কম্বিনেশনে শার্ট। কালো প্যান্ট। হাতে এজ অলওয়েজ কালো ঘড়ি। ভাইয়া এমনেই ছয়ফুটের তালগাছ। তার মধ্যে উজ্জ্বল ফর্সা।
এভাবে কেউ স্টাইল করে বের হয়!! আজব! ফিমা আপু দেখলে তো হা করে তাকিয়ে থাকবে। ভাইয়া এই গেটআপে না আসলেও তো পারত!!
সাঈদ ভাই আমার তাকানো দেখে কাছে এসে মাথায় চাট্টি মেরে বললেন-
-ওই গর্দভ ! এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন!
-ভাইয়া তোমাকে না সুন্দর লাগছে।
-তুই দেখি কুনজর দিচ্ছিস! লজ্জা করে না! যা রিকশা ডাক !
-তোমার কি মুখ আল্লাহ দেয়নি। আমাকে কেন ডাকতে বলছো?
-আরেকটা বেশি কথা বললে একটুপর এক কানে কম শুনবি ! সাবধানে কথা বলিস। যা বলছি চুপচাপ কর।
-না না ভাই আমার কান এমনেই ভালো আছে। আমি দুকানে শুনতে চাই ভাই। রিকশা ডাকছি।।
রিকশাতে গুটিশুটি হয়ে বসে আছি, বামপাশে সাঈদ ভাই। চেষ্টা চালাচ্ছি যেন কোনোভাবে উনার সাথে ঘেঁষে না থাকতে হয়। সুযোগ বুঝে আরো ডানে চেপে বসলাম।কিন্তু রিকশার হুটহাট ঝাকুনিতে ধপ করে যে রাস্তায় পড়বো, এটা যে কেউ বলবে। হঠাৎ সাঈদ ভাই পিছন থেকে আগলে ধরেছেন যেন না পড়ে যাই। আর বললেন-
-ঠিক করে বসিস নাহলে এক লাত্থি মেরে নিচে ফেলে দিব। কয়টা হার ভাঙবে গুনে রাখিস।
– না ভাই কিছু করার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।
-তাহলে ইদুরের মতো গুহায় যেয়ে বসিস না। ঠিক করে বস।
-আচ্ছা ঠিকআছে।।
সাঈদ ভাই কোনোভাবেই আমার কোমর আগলে ধরেননি। ভাই উনার বাম হাত দিয়ে আমার বাম পাশের হাত আকড়ে রেখেছেন। রিকশার হুট নামানো ছিল। যেতেই দেখলাম ফাহিম ছেলেটা আমাদের রিকশার পাশ কাটিয়ে বাইক দিয়ে গেল। সে কিছু দূর যেতে দেখি বাইক থেকে পিছু ফিরে তাকালো। এরপর স্পিড বাড়িয়ে চলে গেল।
তার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ পেছন দিক থেকে এক সিএনজি এসে সজোরে আমাদের রিকশায় ধাক্কা মেরে চলে যায়। আমি, সাঈদ ভাইয়া আর রিকশাওয়ালা ঘটনাক্রমে চলন্ত রিকশা থেকে সোজা রাস্তায় পড়ে যাই। আমি রাস্তার ফুটপাত অংশে পড়লেও সাঈদ ভাইয়া ডিরেক্ট মেইনরোডে পড়েন। এরপর কিছু,,,
-চলবে