ভালোবেসে মরেছি

ভালোবেসে মরেছি – Part- 04

___________________
সমস্ত রুমে ধোয়া। মিহু ও বিপুল কাশতে কাশতে রুমে ঢোকে। রুমে সিগারেটের ধোয়ার পরিমান এতোই বেশি যে কিছু দেখা পাওয়া মুশকিল।লাইট জ্বালিয়ে দিলে মিহু দেখতে পেল খাটের ওপর চিৎ হয়ে পরে আছে একজন,ওরা দুজনে তাড়াহুড়ো করে তাকে উল্টোদিকে ফেরায়। মিহু ও বিপুল দুজনেই অবাক হয়ে যায় পিয়াসের এমন অবস্হা দেখে…. ।
পিয়াসের ঠোটের এক কোনায় হালকা রক্ত জমে আছে,আর চোখের নিচের কালো দাগটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি।একা বাসায় থাকায় কেয়ার করার মত কেউ নেই।শুধু একটা বুয়া আছে যে রান্না করে দিয়ে যায়।
মিহু ও বিপুল মিলে পিয়াসকে ধরে গাড়িতে করে হসপিটালে নিয়ে গেল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে পিয়াস।পাশে দারিয়ে আছে মিহু ও বাকি সবাই। যখন পিয়াসের হালকা জ্ঞান ফিরলো তখন চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বিড়বিড় করে বলছিল,
-খবরদার, না, আমাকে কিছু করোনা।প্লিজজজজজ
পিয়াসের এমন কথা শুনে মিহু ওর মাতায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত সূরে বললো,
-পিয়াস?তুই ঠিক আছিস?কে তোকে কি করবে?পিয়াস??
পিয়াসের কানে মিহুর কথাগুলো পৌছুতেই ধুরমুর করে উঠে বসলো সে।ওর এমন হঠাৎ উঠে বসায় বাকিরা হালকা অবাক হলো।ওরা সবাই একটাই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে থাকলো,

-এসব কিভাবে হলো?
এমন প্রশ্নে পিয়াস অনেকটা ঘাবড়ে গেল। বেডের পাশে থাকা স্যালাইনটি ছুড়ে দিল ফ্লোরে। বিপুল ওকে যতই শান্ত করার চেষ্টা করছে ও ততই রেগে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ডাক্তার এসে পিয়াসকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস ঘুমিয়ে পরলো।
পিয়াসের এমন কান্ডে মিহু ও বাকিরা অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিল।চৈতি কান্না করছে। কারন পিয়াস ও চৈতির মাঝে বন্ধুত্বের চেয়েও বেশিকিছু আছে।মিহু চৈতিকে শান্তনা দিচ্ছে।
বিকেলের দিকে ওরা পিয়াসকে বাসায় নিয়ে যায়।পিয়াস খুব একটা কথা বলে না ওদের সাথে। এ ব্যাপার নিয়ে ওরা সবাই টেনশনে আছে। কারন এই একদিনের মাথায় এমন কি হলো যে পিয়াসের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছোলো।
পিয়াস বরাবরি পলিটিকস নিয়ে থাকতে পছন্দ করে।ভার্সিটিতে পলিটিক্স এ ওর বেশ নাম ডাক আছে। নিজের ফ্রেন্ডদের ও সবসময় ঝামেলা থেকে বের করে।আবার নিজেও ঝামেলায় পৌছোয়।
সন্ধ্যার দিকে মিহু, চৈতি,তিথি ও বিপুল পিয়াসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।।।
____________রাত আটটা
একটা সুবিশাল বাংলো বাড়ির বিশাল ডাইনিং টেবিলে বিভিন্নরকম খাবার সাজানো রয়েছে। যিনি খাবারগুলো খাবেন তার জন্য ডাইনিং এরিয়ার পাশেই রয়েছে চারজন সার্ভেন্ট।
কিছুক্ষণ পর সিড়ি বেয়ে একজন নেমে এলো।তার আসার সাথে সাথেই সব সার্ভেন্ট একে একে নিজের কাজ শুরু করতে লাগলো।কেউ খাবার এগিয়ে দেয়া,কেউ গ্লাস এগিয়ে দেয়া,কেউ মুখ মুছে দেওয়া আবার কেউ হাত ধুইয়ে দেওয়া।
এত সুখ খুব ভাগ্য করে পায় মানুষ।এতো সুখ তাকার পরও এই মানিষটি প্রতি রাতে নিজের অন্তরালে চোখের জল ফেলে। কিছু কষ্ট বুকে নিয়ে বেচে থাকা কঠিন।তবুও মানুষটি আজও বেচে আছে। কোন কিছুর প্রতিক্ষায়,কোন কিছুর জিদে,নয়তো কারও থেকে কিছু ছিনিয়ে নিতে।

__________________
নিজের স্কুটি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দেয় মিহু।মিহুর স্কুটিটা পিংক কালারের। এবং সে তার এই স্কুটিটা প্রচন্ড ভালোবাসে। স্কুটিতে কেউ হালকা দাগ দিলেই মিহু রেগে যায়।তাহলে যদি সেটার সামনের লািট কেউ ভেঙ্গে দেয় তার কি অবস্থা হতে পারে বলে আপনাদের মনে হয়?
.
স্কুটি চালাচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে,
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
ভুল বুঝে তুমি চলে গেছ দূরে
ক্ষমা পাব আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি -আশা ছাড়িনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো….
এর মাঝে একটা বয়স্ক লোককে দেখে মিহুর চোখ আটকে যায় সেখানে। এতে সামনে কি আছে তা খেয়াল না করেই গাড়ি চালাতে থাকে।ওদিকে একজন নিজের গাড়ির সাথে ধাক্কা দেয় মিহুকে।ধাক্কাটা আস্তে লাগায় নিজেকে সামলে নেয় মিহু, তবে,,,,
তবে ওর ফেভারেট স্কুটির সামনের লাইটের কাঁচ ফেটে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়।
তা দেখে মিহু নিজের স্কুটি থেকে নেমে কান্না শুরু করে দেয়।এরপর নিজের ব্যাগ থেকে পানি ভর্তি বোতলটা বের করে। এবং গিয়েই দেয় গাড়ির সামনের কাচের ওপর এক বাড়ি।যার ফলে গাড়ির সামনের কাচটা না ভাংলেও অনেকটা ফেটে যায়।গাড়িতে থাকা লোকটি মিহুর এমন ব্যাবহারে রেগে বেরিয়ে আসে।
মিহু একটা কালো থ্রিপিস পড়েছে, চুলগুলো বিনুনি করা। কাধে ব্যাগ ঝুলানো।মিহুকে দেখতে যতটা সাধাসিধে মনে হবে ও ততটাই চালাক।যাই হোক এখন আসল কথায় আসি।
লোকটি গাড়ি থেকে বেরিয়েই বললো,
-এই মেয়ে তুমি আমার গাড়ির কাচ কেন ভাংলে?
-আপনি আমার স্কুটির সামনের লাইট কেন ভাংলেন আগে সেটা বলুন?(কোমরে হাত রেখে)
-হাও চিপ,তোমার গাড়ির লািট আমি ভাংবো কেন?ওটা তো আমার গাড়ি থেকে লেগে ভেঙেছে। আমি তো ভাঙ্গিনি।
-(মিহু কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে ভেবে উত্তর দিল,)ওহ তাই নাকি?আমিও তো আপনার গাড়ির কাচ ভাঙ্গিনি।আমার এই বোতলটা পরে ভেঙ্গে গেছে।
-ওই মেয়ে মুখে মুখে তর্ক করা তো ভালোই শিখেছ দেখছি।বাবা মা কি শিক্ষা দেয়নি?(রেগে গিয়ে)
এরপরই ছেলেটির গালে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় পড়ে।
আসলে কি মিহু ওর বাবা মাকে প্রচুর ভালোবাসে। বাবা মা সম্বন্ধে কেউ কিছু বললে মিহুর মাথা গরম হয়ে যায়। তবে আজ পর্যন্ত মিহুর বাড়ির আশেপাশের লোকজন জানে মিহু ওর বাবা মাকে নিয়ে ততটা আদিক্ষেতা করে না যতটা ভালোবাসা মানুষের কাছে বলে বেরায়।

থাপ্পড়টা গালে পড়তেই ছেলেটি আর এক মুহুর্ত দেরি করে না। ভরা পাবলিকে একটা মেয়ের হাতে থাপ্পড় না খাওয়ার চেয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করে ছেলেটি।।।
ছেলেটি চলে যাওয়ার পর মিহু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে স্কুটি নিয়ে ভার্সিটি চলে আসে।
.
ভার্সিটি পৌছে তিথির কাছে জানতে পারে পিয়াস কিছুদিন ভার্সিটি আসবে না। মিহু এ বিষয়ে আর কুব একটা জোর দেয়না। কারন সে জানে পিয়াসের শরীর ঠিক হলে এমনিই আসবে।
কিছুক্ষন পর একজন পিয়ন এসে মিহুকে জানায় অর্নব তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। মিহু জানায় তিথি সাথে আসলে হবে নাকি?পিয়ন বলে মিহুকে একাই ডেকেছেন।
তিথিও কিছুটা অবাক হয়। যে সয়ার কারও সাথে কথাই বলেনা ঠিক মতো আর সে মিহুকে একা ডেকে পাঠিয়েছে?অদ্ভুত।
তিথিকে ক্যান্টিনে বসিয়ে পিয়নের সাথে চলে যায় অর্নবের রুমে।
সেখানে মিহুকে পৌঁছে দিয়ে পিয়ন চলে যায়।মিহুর সরু দৃষ্টি সামনে বসে থাকা অর্নবের ওপর। অর্নবও মিহুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে অর্নব চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়।পেনস্ট্যান্ড থেকে একটা পেন্সিল তুলে নিয়ে মিহুর দিকে এগোতে থাকে তিনি। মিহুর কপাল কুচকে যায়। মিহুকে এভাবে দেখে অর্নবের ঠোটেট কোনে হালকা হাসি ভেসে ওঠে।
মিহু পেছোতে পেছোতে দেয়ালের সাথে ঠেকে যায়। এবং অর্নব এতক্ষণে মিহুর আরও কাছে চলে আসে……..
.
.
#চলবে___