ভালোবেসে মরেছি

ভালোবেসে মরেছি – Part- 05

হাতে থাকা পেন্সিলের মাথা দিয়ে মিহুর গালে স্লাইড করে অর্নব।এতে মিহু খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। একটু ভারী কন্ঠে বলে,
-কি করছেন এসব স্যার?
মিহুর এ অবস্থা দেখে অর্নব হো হো করে হেসে দেয়। অর্নবকে দেখে মিহুর মনে হচ্ছে সে কোন জোকস বলেছে। তাই কপাল কুচকে আবারও জিজ্ঞেস করে,
,
-আপনি হাসছেন কেন স্যার?আমি কি এমন বললাম?আর আমাকে এভাবেই বা ডাকার কারন কি?
অর্নব নিজের হাসি থামানোর চেষ্টা করে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোছাতে গোছাতে বলে,
-তোমার নাম তো মেহজাবিন তাইনা?
সন্দেহের দৃষ্টিতে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলে,
-হ্যাঁ, কিন্তু কেন স্যার?
-এবারের বসন্ত উৎসবে প্রিন্সিপাল সব অ্যারেন্জমেন্ট করার দায়িত্ব আমার ওপর দিয়েছেন।সাজানো সম্বন্ধে আমার তেমন কোন ধারনা নেই।আর আমি খোজ নিয়ে জানতে পারলাম আর্ট, কোনকিছু সাজানো এসবকিছু সম্পর্কে তুমি অনেকটা ভালো জানো। তাই এখন এসব সাজানো গোছানোর সবকিছুর ব্যাপারে তুমি আমায় হেল্প করবা।
-কিন্তু স্যার এসব করার জন্য তো সিনিয়ররাও রয়েছে। তাহলে আমি কেন?
-প্রিন্সিপাল স্যার বলে দিয়েছেন, হেল্প নিলে অনলি জুনিয়রদের হেল্পই নিতে হবে।
-স্যার এসব করতে তো সারাদিন ভার্সিটি থাকতে হবে। তাহলে?
-সো হোয়াট?তুমি কি বাড়িতে নিজের হাজবেন্ড অর বাচ্চা কাচ্চা রেখে আসছো?
এমন কথা শুনে মিহুর ভ্রু কুচকে যায়। এবং বিড়বিড় করে বলে,
-এ নাকি কথা বলতে জানেনা। হুহ।ঝামেলায় ফেলে দিয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছে।
,
কথাগুলো অর্নবের কান অব্দি পৌঁছোয় না..
-কিছু বললে?
-নাহ স্যার, কি বলবো?বাই দ্যা রাস্তা, কবে থেকে এসবকিছুর প্রস্তুতি নিতে হবে?
-সেটা পরে বলবো।এখন তুমি যেতে পারো।
মিহু মনে মনে ভাবছে,নিজেই সেধে সেধে ডেকে নিয়ে, এখন কেমন দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।
-কি হলো, দাড়িয়ে আছো যে?যাও…।
,
মনে মনে হাজারটা গালাগাল দিতে দিতে মিহু বেরিয়ে চলে আসে।

_______________
তিথির সাথে বিকেলে হালকা শপিং করতে বেরিয়েছে মিহু।আসলে বসন্ত উৎসবের জন্যই শপিং করতে বের হওয়া। তিথি নিজের জন্য কুর্তি ও টপস চয়েজ করছিলো। ও পাশেই মিহু ওকে ভালো মন্দের জাজমেন্ট দিচ্ছিল।
,
কিছু একটা কারনে মিহু পাশে তাকাতেই খেয়াল করে একটা মেয়ে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। মিহু কিছু না ভেবেই চোখ সরিয়ে নেয়।
অন্যদিকে মেয়েটি এতোদিন পর চিরচেনা ওই মুখটি দেখে থ মেরে যায়।মেয়েটির মুখ থেকে একটা অস্পষ্ট শব্দ বেরিয়ে আসে,
-অর্নি?
মিহু ও তিথির কাজ হয়ে গেলে ওখান থেকে অন্যদিকে হাটা দেয়।অচেনা মেয়েটি মিহুর যাওয়ার পথের দিকে ছুটতে থাকে।মিহু নিজেও টের পায় ওকে কখন থেকে মেয়েটি ফলো করছে। তবুও কিছু বলে না।
.
এভাবে থাকার পর, একটা সময় গিয়ে মেয়েটি মিহুর সামনে এসে দাড়ায়।মিহুর চোখের দিকে তাকায় মেয়েটও।এরপর ভ্রু কুচকে মিহুকে হালকা ছুয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলে,
-অর্নি?তুই এখানে?
তিথি ও মিহু মেয়েটির কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর একটু হাসার চেষ্টা করে তিথি বলে ওঠে,
-এক্সকিউজ মি,অর্নি কে?
তিথির কথায় মেয়েটি প্রচুর অবাক হয়।কারন মিহুর চেহারাটা এমন একটি চেহারা যা ভোলার মতো নয়। মেয়েটি আবারও মিহুকে প্রশ্ন করে,
-অর্নি?আমায় চিনতে পারছিস না?ভুলে গেছিস আমায়?আর তুই এখানে কিভাবে আসলি, এতোদিনই বা কোথায় উধাও হয়ে গেছিলি তুই?
,
মিহু এবার মুখ খোলে,
-ওয়েট ওয়েট। আমাকে কথা বলার সুজোগ দিন।আপনি কে?আমরা কি একে অপরকে চিনি?আর এই অর্নিটাই বা কে?
-তোর কি কিছুই মনে নেই?
-আপনাকে চিনলে তো মনে থাকবে?আপনি কে?
-আমি… (এটুকু বলেই থামে মেয়েটি.. মনে মনে ভাবে সে, যদি এটা অর্নি না হয় তাহলে কে?নাহ এ যদি অর্নি না হয় তাহলে আর কিছু বলা যাবেনা। কিন্তু এর ওপর নজর রাখতে হবে)আসলে আই অ্যাম সরি। হয়তো আমি আপনাকে আমার খুব চেনা কারও সাথে গুলিয়ে ফেলেছি।আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।
-নো নো ইটস ওকে। এমনটা হতেই পারে।এতে সরি বলার কি আছে।
-ওকে তাহলে আমি আসি
বলে একটা হাসি দিয়ে সেই অচেনা মেয়েটি হেটে ওখান থেকে চলে আসে।
,
মিহু মেয়েটির যাওয়ার দিকে কপাল কুচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একটাবারের জন্য ফিরে তাকায়।।।এরপর তিথির হাত ধরে চলে যায়।
.
______________________________
সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে মিহু। ফ্রেশ হয়ে রুমের ব্যালকনিতে এসে দাড়ায় সে।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।প্রাকৃতিক হাওয়া ওর কাছে খুবই ভারী ভারী লাগছে।হাওয়া একটু হালকা হলে ভালো হতো। কিছু একটা গভীর চিন্তার ছাপ মিহুর চোখে মুখে জেকে বসেছে। এসব ভাবছিলো ঠিক তখনই ওর দরজায় কেউ নক করে, ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে রুমে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল।দেখলো ওর মা হাতে খবারের ট্রে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর মাকে সাফ বলে দিল ভালোলাগছেনা, যখন ইচ্ছে হবে নিজেই খেয়ে নিবে।এরপর দরজাটা ওনার মুখের ওপরই লাগিয়ে দিল।
,
বিছানায় একটা পুরোনো ডায়েরি নিয়ে বসে। এরপর কিছু একটা লিখে আবারও ডায়েরির জায়গায় রেখে দেয়। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
,
মিহুর রুমের লাইট অফ করা দেখে ওর মা খাবারের ট্রে ফেরত নিয়ে যায়।এবং নিজে গিয়ে খেয়ে নেয়।
_______________
….ঘড়ির কাটায় রাত দুটো ছুই ছুই,
,
আজ আবারও সেই এক জায়গায়। একটা মেয়েকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় বসানো। তার পাশে দু একটি ছেলেরা আছে। এবং মেয়েটির সামনে সেই কালো কোর্ট পরা ব্যাক্তিটি। তবে আজ তার মুখে মাস্ক নেই। চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটি কালো কোর্ট পড়া মানুষটির চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
,
ওই মানুষটার চোখ দেখে মেয়েটির গলা শুকিয়ে আসছে।
টেবিলের ওপর থাকা ট্যাটু মেশিনটি হাতে নিয়ে মেয়েটির পিঠে সেই একই চিহ্ন আকতে লাগলো। এতে করে মেয়েটি চিৎকার করে পুরো রুমটা বিষিয়ে তুলছিল।মেয়েটি ওই মানুষটিকে কান্নামাখা সুরে জিজ্ঞেস করলো,
-আমার সাথে কেন এমন করছিস?আমি তোর কি ক্ষতি করেছি?
সে কোন উত্তর দিল না। সে তো নিজের কাজে ব্যাস্ত।
মেয়েটি চিৎকার করে বলে উঠলো,
-আমাকে প্লিজ মারিস না অর্নি। প্লিজ। তোর কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ। আমায় মারিস না।
পাশ থেকে একটা ছেলে ডেভিল হাসি দিয় বলে ওঠে,
-আপনাকে ছেড়েও তো দেওয়া যায়না তাইনা?
মেয়েটি কাতরাচ্ছে তবুও সেই কান্নাভরা আওয়াজ অর্নির কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।

“[এই অর্নিটা কে সেটা না হয় পরেই জানবেন,কেমন?]”
একটা ঘুমের ইনজেকশন মেয়েটির শরীরে পুশ করে দেওয়া হয়।যাতে মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর মাথার পেছনের অংশে একটা ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। এমনভাবে আঘাত করা হয়,যেটা করলে মেয়েটি মারা যাবেনা তবে সবকিছু ভুলে যাবে।
,
এরপর অর্নি নামের সেই কালো কোর্ট পরা মানুষটি পাশে থাকা ছেলেদের বলে মেয়েটিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে।ছেলেগুলো অর্নির কথামতো মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যায়।

সবাই চলে গেলে শরীরে মুড়িয়ে রাখা লম্বা কোটখানা খুলে পাশে তাকা চেয়ারের ওপর ছুড়ে মারে।
,
মাথার কালো টুপিটা খুলে লম্বা সিল্কি চুলগুলো পিঠ অব্দি ছড়িয়ে দেয়। এবং চোখের কোনায় জমে থাকা একফোটা জল বা হাতের অনামিকা দিয়ে মুছে নেয়।.
,
চেহারায় একটা প্রশান্তি ও কষ্টে উভয়েরই ছাপ নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে সে।
_______________________
,
সকালে উঠে মোবাইলের রিংটোন এর আওয়াজে মিহুর মেজাজ চরমে উঠে যায়।রেগে গিয়ে মোবাইলটা এক আছার মারে।দেয়ালের সাথে লেগে একদম ভেঙ্গে যায় ফোনটা।এরপর বালিশে আবারও মুখ গুজে দেয় মিহু।কিছুক্ষন পর দরজায় প্রচন্ড কড়া নাড়ার আওয়াজ পায় সে। একলাফে বিছানায় উঠে বসে রাগে সমস্ত বালিশে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর একটা ছোট বালিশ হাতে নিয়ে দরজার কাছে যায় সে।
,
দরজা খুলতেই ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটির মুখের ওপর বালিশটি ছুড়ে মারে মিহু।
.
.
#চলবে___