ভালোবেসে মরেছি – Part- 03
মিহুর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে আছে একজন।কোমর এমনভাবে জড়িয়ে ধরায় ওর খুব কাতুকুতু লাগছে।বেঞ্চের ওপর থেকে পরে যাওয়ার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে হাত দিয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করে আছে সে,চোখ খোলারই নাম নেই। ওদিকে বারবার ইচ্ছে করে কেউ মিহুর কোমরে চিমটি কাটছে। কেু ওর সারা শরীর আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরতে চাইছে। এমনটা হালকা অদ্ভুত লাগায় সে নিজের চোখ খোলে।দেখে যে ও চৈতি ও তিথির কোলের ওপর পরে আছে। আর ওরা দুজন মিহুকে এতক্ষণ ধরে ওভাবে চিমটি কেটে যাচ্ছিল। সামনে থাকা স্যার তিথি ও চৈতির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে দেখছে।।মিহু ওদের কোলে আর পরে না থেকে উঠে দাড়ালো। স্যার মিহুর দিকে তাকিয়ে খুবই শান্ত গলায় বলল,
-নাও ইউ ক্যান সিট ডাউন
মিহু স্যারের কথামতো বসতে নিলেই ক্লাস আওয়ারের ঘন্টা বাজলো। স্যার সব স্টুডেন্টদের বিদায় জানিয়ে চলে গেল। স্যারের যাওয়ার সাথে সাথে ধরাম দিয়ে বেঞ্চে বসে পরলো মিহু। খুবই উৎফুল্লতা নিয়ে মিহুকে একে একে নানান প্রশ্ন করতে থাকে তিথি ও চৈতি । মিহু বা চোখের ভ্রু নাচিয়ে ওদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে,
-আচ্ছা এই স্যারটা কে রে?নতুন নাকি?
চৈতি মুখে একটা চিন্তার ছাপ নিয়ে বলে,
-নতুন নয়,তবে পুরাতন ও নয়।
কথাটি শুনে চৈতির কথায় মিহু আরেকটু মনোযোগি হয়,এবং কপাল কুচকে বলে,
-মানে?
-ওনার নাম শাইখ অর্নব। এইতো তোর এই ভার্সিটিতে আসার একমাস আগেই এখানে জয়েন করেছেন।তবে উনি এই একমাস ক্লাস নিতেন না। ওনার নাকি কি একটা জরুরী কাজে ফরেইন যেতে হয়েছিল। তবে আজ উনি হঠাৎ করেই ফিরেছেন।
-বুঝলাম।কিন্তু এই একমাস উনি কোথায় ছিলেন?
-সেটা আমরাও জানিনা। হতে পারে অফিসিয়াল কোন কাজে।
-হুম।
-তবে জানিস একটা অদ্ভুত জিনিস। উনি কারও সাথে তেমন কথা বলেন না। ক্লাস নেওয়া শেষ ওনার খাজও শেষ। তবে আজকে অ্যাকসিডেন্টলি তোর সাথে উনি কথা বললেন।
-তাহলে আমি তো খুব লাকি তাইনা?(ঠোটে কামড় দিয়ে বলল মিহু)
-হুম, কারন আমাদের ভার্সিটির সব মেয়েরা তো ওনার জন্য পাগল।বলা যায় চোখের মনি। আর সেখানে তুই ওনাকে ওভাবে কথা শোনালি।।(হালকা দুষ্টু হেসে)
-যাহ বাদ দে। আমাদের টিচার হয়। এসব টপিক বাদ দেই। এটা বল আমি তোদের কোলে কিভাবে পরলাম?আমার তো ফ্লোরে পরার কথা ছিল।
মিহুর এমন কথায় ওর চারজন ফ্রেন্ডই হেসেই চলেছে। এদের মাঝে বিপুল হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
-তুই হালকা ম্যাড আছিস জানতাম কিন্তু এতোটা তা জানতাম না।
মিহুর মুখ বাকা হয়ে যায় কথাটি শোনার পর। এরপর অভীমানি সুরে বলে,
-ওহ আমি তাহলে পাগল হয়ে গেলাম তাইনা?
-তা নয়তো কি?তুই তো একদম স্যারের গায়ের ওপর পরতি কিন্তু স্যার হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়েছিলেন যার জন্য তুই ওদের কোলের ওপর পরেছিলি।বুঝেছিস?
-এই ব্যাপার?।আচ্ছা শোন তোরা থাক আমি আজকে আসি কেমন?
মিহুর কথা শুনে ওরা সবাই মুখ গোমড়া করে ফেলে৷। চৈতি ঠোট উল্টিয়ে কাদো কাদো সুরে মিহুকে বলে,
-কেন রে?একটা ক্লাসই তো হলো মাত্র। এখনই কেন যাবি?
-ধুর আমি কি একেবারে যাচ্ছি নাকি?আধাঘন্টা পর তো আবারও চলে আসবো।
-ওহহ।কিন্তু কেন?
-অত কেন এর উত্তর দিতে পারবো না।ফিরলেই বুঝতে পারবি।
মিহু কথাগুলো বলে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে গেল।
[দেখেছেন এতদিনেও আপনাদের সাথে পরিচয় করানো হলোনা মিহুর , চলুন আজ পরিচয় করিয়ে দেই]
অপর্ণা মেহজাবিন ওরফে মিহু অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। একমাস আগেই সে এই নতুন ভার্সিটিতে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে।খুবই মিস্টি একটা মেয়ে মিহু।ওর চঞ্চলতার জন্য খুব অল্পদিনেই সবার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।গায়ের রংটা লাল ফর্সা। চোখের মনিটা বাদামী রংয়ের। হাসলে দু গালে খুব সুন্দরভাবে টোল পরে।দেখতে খুবই সুন্দরী। বাসায় বাবা মা ও একটা ছোট ভাই আছে।
[এখনকার জন্য এটুকুই জানুন।বাকিটুকু ধীরে ধীরে জানতে পারবেন]
আধাঘন্টা পর মিহু ফিরে আসলো।চৈতিকে ফোন করে জানতে পারলো ওরা সবাই ক্যান্টিনে।এক মুহুর্ত দেরি না করে ক্যান্টিনে চলে গেল মিহু।
ক্যান্টিন দেড় দু ঘন্টা আগেও অন্যরকম ছিলো।কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে কেউ সাজিয়েছে। তিথি,চৈতি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ওদিকে মিহু পেছন থেকে এসেই চৈতির চোখ ধরে ফেলল।চৈতি বারবার কাতরাচ্ছে চোখ ছাড়ানোর জন্য তবুও মিহু ওকে ছাড়ছে না। পাচ মিনিট পর ওর চোখ ছেড়ে দিল মিহু। চৈতির চোখ খোলার সাথে সাথে ওর ফ্রেন্ডরা সহ ক্যান্টিনে থাকা সবাই একসাথে বলে ওঠে,
-Happy Birthday To You……..chaiti
এমন কিছুর কথা চৈতি কল্পনাতেও কল্পনা করে নি। সবাই মিলে এভাবে ওকে সারপ্রাইজ দেবে এটা ভেবেই ওর চোখে জল চলে এলো। টেবিলের ওপর থাকা কেক,পাশে থাকা চাকু দিয়ে পাঁচজনে মিলে কাটলো।
[এরপর আপনারাও জানেন কি হয়,মানে কেক মাখামাখি]বিকেলে পাচজন একসাথে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। এবং আজকে চৈতি ওদের ট্রিট দিলো।।।সারাটাদিন অনেকটা মজা করে যে যার বাসায় চলে আসলো ওরা
______________
রাত্রি দুটো বাজতে চলেছে। একটা ছেলে রাতভর বারে থেকে বাড়ি ফিরছে।একহাতে টর্চ এবং এক হাতে মোবাইল ফোন। রিকশাওয়ালা এত রাতে গলির ভেতরে ডুকতে পারবেনা বলেছিল তাই মেইন রোডের পাশেই ছেলেটিকে নামিয়ে দেয়। এখন গলিটা শুনশান।হবারই কথা।রাত যেখানে দুটো বাজে। ছেলেটি শান্ত পায়ে হেটে যাচ্ছে বাড়ির পথে। মনোযোগটা মোবাইলের ওপর থাকায় কিছু মনে করছে না সে৷কারন কেউ একজন তাকে ফলো করছে সেটা সে টপর পাচ্ছে না।।
ফোন টিপতে টিপতে ছেলেটি কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে পরে গেল। সাথে সাথে একটা অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিল সে। দেখলো একটা ইট উচু হয়ে আছে।ইটের ওপর একটা লাথি মেরে এবার নিজের চলার পথে মনোযোগ দিল। ছেলেটি বুঝতে পারছে কেউ ওকে ফলো করছ। একটুদুর গিয়ে থেমে চারপাশে টর্চ ঘুরিয়ে দেখলো। নাহ কোতাও কেউ নেই। সে মনে করলো হয়তো মনেরই ভুল। যেতে যেতে একটা হাত ছেলেটির কাধে পরলো। ছেলেটির যায় যায় অবস্থা। কারন এত রাতে কে ওকে এভাবে ফলো করবে। সামনে থেকে যতটুকু ঘাড় ঘুরালে একজনকে দেখা যায় ছেলেটিও ততটুকুই ঘাড় ঘুরাল।এবং দেখলো সম্পুর্ন কালোর সাজে একজন ওর দিকে মুখ করে আছে।মুখে একটা কালো মাস্ক থাকায় বোঝা যাচ্ছিল না মানুষটি কে। ছেলেটি এসব দেখে এক চিতকার দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যেই দৌড়ে পালালো।
এবং কালো ব্যাক্তিটি রাস্তার পাশের দেয়ালে সজোরে লাথি মারলো। এবং রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেল।
_______________
সকাল হতে না হতেই মিহুর মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা দেখে মিহু আর এক মুর্হুতও দেরি করে না। কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাসার সবাইকে বিদায় দিয়ে কোন এক উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে…….
.
#চলবে___