ভালোবেসে তারে !! Part- 05
সকালে,,,,,,,,
পেটের উপর গরম কিছুর ছ্যাকায় ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রাফিত হাতে ইস্ত্রি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি এবার আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে।এমনও কোনো মানুষ করতে পারে।শেষে কিনা ইস্ত্রির ছ্যাকা।কিন্তুু কথাতো সেটা নয়।কথা হলো গিয়ে উত্তপ্ত ইস্ত্রি আমার পেটে রাখলেতো এতক্ষণে আমার মাংস পুড়ে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে যাওয়ার কথা।তবে তেমন কিছুই হলোনা কেনো?এবার আমি আমার শাড়িটা পেটের সাইড থেকে একটু সরিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি যেই জায়গাটায় ছ্যাকা দিয়েছে ওখানে সামান্য লাল হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি।আমি অবাক হয়ে রাফিতের দিকে তাকাতেই সে বলল,
“অবাক হওয়ার কিছু নেই দিশা সোনা।তোমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য যে ইস্ত্রিটা বেশি গরম না।কিন্তুু নেক্সট টাইম দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে তোমার ভাগ্যটাও তোমার সঙ্গ ছেড়ে দিতে পারে।এখন তারাতারি উঠে আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে এসো।আজকে আমি অনেক খুশি তাই চা খাবোনা কফি খাবো।”
আমি বোঝতে পারছি সকাল সকাল খুশি হওয়ার মতো এমন কি হলো।আর সে খুশি হোক আর যাই হোক আমাকে এভাবে উঠানোর মানেটা কি?যত্তসব খাটাস মার্কা গন্ডারের কান্ডকারখানা। আমি যখন এসব বিরবির করছিলাম তখন সে আবারও ধমক দিয়ে বলল,
“কি হলো কথা কানে যায়নি।এভাবে বসে আছো কেনো?যাও কফি করে নিয়ে আসো। গো।”
“যা….যাচ্ছি।”
আমি খাট থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়েই থেমে গেলাম।তারপর পিছনে ফিরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আচ্ছা আপনার সকাল সকাল এতো খুশি হওয়ার কারণটা কি জানতে পারি?
সে এবার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো যার মানে হলো না সে আমাকে তার খুশি হওয়ার কারণটা বলবেনা।আমিও এক দৌড়ে নিচে।নিচে এসে নিজের বুকে নিজেই হাফাতে হাফাতে থুথু দিলাম।
” বাহ দিশা বাহ তুই তো দেখি সেই সাহসী হয়ে গেছিস।বজ্জাতটা এখন যদি আমাকে ধরতো তাহলে নিশ্চিত রিমান্ডের মাইর দিতো আবারও।(দুই হাত সামনে এনে সেদিকে তাকিয়ে)চলো বাবুসোনা এখন কাজে লেগে পরো।”
,
,
,
,
রাফিতকে কফি দিয়ে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে একমনে ব্রাশ করে চলেছি।যার মানে হলো দিশা তুই যতক্ষণ এখানে আছিস ততোক্ষণ তুই সেফ।কিন্তুু খাটাস মার্কাটার জন্য ওটাও হলো না আমার।তার আগেই সে জোরে জোরে আমার নাম ধরে ডাকছে বাইরে থেকে।
“দিশা এই দিশা তারাতারি বের হও।কি হলো শুনতে পাচ্ছোনা তারাতারি বের হও।কুইক।”
মুখে ব্রাশ থাকায় কথাও বলতে পারছিলামনা।আরে ধুর ডাকলে ডাকুক আমার কি।
“দিশা আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে দেরি করছো এক্ষুনি বের হও বলছি।নাহলে এখন আমি দরজা ভাঙবো বলে দিলাম। (রেগে)”
আমার কানে তার কোনো কথাই যাচ্ছেনা।যা খুশি করুকগে আমি আমার কাজ করি।
একটুপর ধরাম করে জোরে একটা কিছু ভাঙ্গার শব্দ হলো।আমি পিছনে ফিরে ব্রাশ মুখে নেওয়া অবস্থায়ই হা করে সামনে তাকিয়ে আছি।হ্যা যা ভাবছেন তাই।খাটাস মার্কাটায় দরজা ভেঙে ফেলেছে। আর আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এক্ষুনি আমাকে গিলে খাবে।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“জাস্ট ফাইভ মিনিট।এর মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বের হবে।”
বলেই সে চলে গেলো।আাচ্ছা এর কি আমাকে ওয়ার্নিং দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।খালি ধমকায় হাহহ।ভাবে কি নিজেকে?দরজাটা ভাঙ্গার কি দরকার ছিলো।এখন বিপদতো আমারই।ওফফ কেনো যে এমন করতে গিয়েছিলাম।ধেতত ছাতার মাথা ঘোড়ার ডিম ভাল্লাগেনা।সবসময় এই বেশি বোঝে একটা না একটা গড়বর করি।
আমি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সে কাবার্ড থেকে কি একটার পেকেট বের করে বিছানায় ছুড়ে মেরে বলল,
“সন্ধায় এটা পরে রেডি থাকবে।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“কেনো।কি আছে এতে আর রেডি থাকবো কেনো?”
“যা বলেছি তা করবে।তোমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আমার নেই।আর কি আছে এতে নিজেই দেখে নিও।”
বলেই সে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।আরে যে যাই বলুক কুকুরের লেজ যেমন সারাবছর ঘি মাখলেও সোজা হয়না তেমনি এসব খাটাস মানুষও কোনোদিন ভালো হয়না।যত্তসব ফাউল লোক কোথাকার।এএএহহ বলে কিনা তোমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নেই (ভেঙ্গিয়ে)।আরে যাতো আমার লাগবেনা উত্তর।আমিও রেডি হবোনা।দেখি কি করতে পারিস তুই বজ্জাত পোলা হুহহ😤।
,
,
,
,
সন্ধায় রেডি হচ্ছি।তখন সেই লেভেলের বড় বড় ডায়লগ মারলেও রাফিতের টর্চার এর কথা মনে পড়তেই আমার আত্মার পানি সব ফুটো হয়ে বেরিয়ে গেছে।মানে হচ্ছে হাওয়া ফুসসসসস।
পেকেটের মধ্যে একটা হালকা পিংক কালার একটা শাড়ি,পেটিকোট আর থ্রি কোয়ার্টার হাতা ও গলা অবধি কলার দেওয়া একটা ব্লাউজ ছিলো।পেটিকোট আর ব্লাউজ আগেই পরে নিয়েছিলাম।ওগুলো পরেই এতক্ষন আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছিলাম।যেহেতু বাড়িতে আমি একা তাই কোনো সমস্যাও নেই।শাড়িটা রাফিত আসার আগে পরে নিবো।
হঠাৎই মনে হলো আমার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আমাকে দেখছে।সাথে সাথে পিছনে ঘুরে আমি ৪৮০ ডিগ্রির একটা ঝটকা খেলাম।হ্যা রাফিত দরজার সামনে দারিয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সেও খুব বড়সড় একটা শক খেয়েছে।সে আমার দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে রয়েছে।আমি একবার নিজের দিকে আর একবার রাফিতের দিকে তাকিয়ে যেই চিৎকার করতে ওমনি সে এসে তার এক হাত আমার কোমরে ও অন্য হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে বলল,
“আরে আজবতো চেচানোর কি আছে এখানে?আমি কি পরপুরুষ নাকি?আমি চাইলে তোমার সবকিছু দেখতেই পারি।আফার অল এটা অধিকার আমার।সো বি কুয়াইট।”
এদিকে তার হাত আমার কোমরে এমনভাবে স্পর্শ করায় আমার পুরো শরীর যেনো জমে গেছে।তাকে সরানোর শক্তিটুকুও নেই আমার মাঝে।মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরায় কথাও বলতে পারছিনা আমি।শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।এই অবস্থায় একটা ছেলের সামনে থাকা অবশ্যই একট অসস্থিকর ব্যাপার।সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে বলল,
“আমি বাইরে অন্যরুমে গিয়ে রেডি হচ্ছি।”
বলে সে রুম থেকে চলে গেলো।তার ছেড়ে দেওয়াতে যেনো আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
,
,
,
,
অনেকক্ষণ যাবত শাড়ির কুচিটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।কিন্তুু শাড়িটা জরজেট কাপড়ের হওয়ায় অতিরিক্ত সিলকি।তাই পারছিনা।আমি সুতি কাপড়ের শাড়ি পরলেও জরজেট শাড়ি কোনোসময় পড়িনি।তাই এ অবস্থা। শাড়ির আচল আমার কাধে আর কুচির কাপড় নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে।প্রচুর বিরক্তিকর একটা পরিস্থিতি। এই লোকটা কি আর কোনো শাড়ি পায়নি আনার জন্য।ধুর ছাই।এখন এটার আমি কি করবো?দেরি হলে আরেক পতোনি ঝারি খেতে হবে আমার।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসবই ভাবছিলাম তখনই কোথা থেকে রাফিত এসে নিচ থেকে কুচির কাপড়গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলো।আর আমি এদিকে বড় বড় চোখ কর তার দিকে তাকিয়ে আছি।এ এমন হুটহাট এসে পরে যে বোঝাও যায়না।সে কি এবার আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে নাকি?ভেবেই আমার হার্টবীটটা যেনো দ্রুত লাফাতে লাগলো।………………………
to be continued………………….