ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 04

ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর রাফিত সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।আমি তখনো ওইভাবেই দাড়িয়ে ছিলাম।তাকে শুয়ে পরতে দেখে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“জি বলছিলাম যে রাতে খাবনে না?আপনি আসুন আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”

সে এক হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো।আমার কথা শুনে ওভাবে থাকা অবস্থায়ই বলল,

“আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”

কি আজব একটাবারও আমার কথাটা জিজ্ঞেস করলোনা সে।আমি খেয়েছি কিনা তাও একবারের জন্য জানতে চাইলো না।বুকে একরাশ কষ্ট আর অভিমান নিয়ে আমি তার পাশে শুয়ে পরলাম।কিন্তুু এই ঘুমটাও যে আমার সাথে বেইমানি করছে।কিছুতেই আসতে চাইছে না।আমি অনেক্ষন যাবত অন্য পাশ ফিরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে চলেছি।

এরই মধ্যে আচমকা কেউ আমাকে হেচকা টান মেরে তার নিচে ফেলে আমাকে বিছানার সাথে আমার দুই হাত চেপে ধরলো।হ্যা ওটা আর কেই নয় রাফিত।সে এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“আর একবার যদি একটা টু শব্দও পেয়েছিতো তোমার সাথে এখন যা হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।সো বি কোয়াইট।”

এবার আর আমার সহ্য হলোনা।আর কতো অত্যাচার সহ্য করবো আমি তার।তাই রাগের মাথায় চিৎকার করে বলেই ফেললাম,

“কি করবেন আপনি হে?কি করবেন?মারবেন?তো মারুন না।মানা করছে কে আপনাকে?প্রতিদিনতো ওটাই করেন আপনি।তার থেকে ভালো একবারে মেরে ফেলুননা আমায়।আপনার এই রোজকার অত্যাচার থেকেতো ভালোই হবে আমার জন্য।কি হলো মারুন।থেমে আছেন কেনো মারুননা।মারুন।”

সে কিছুক্ষণ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর চোখমুখ শক্ত করে রেগে বলল,

“খুব বার বেড়েছে তোর তাইনা।বোবার মুখে বুলি ফুটেছে।বেশি উড়িসনা।তোর ওই পাখনা কাটতে আমার দুই মিনিটও লাগবেনা বুঝতে পেরেছিস।এখন চুপচাপ ঘুমাবি।নাহলে কাল থেকে আর খাটে তোর জায়গা হবেনা।”

বলেই সে আমার ঘাড়ের মধ্যে জোড়ে একটা কামড় দিয়ে আমার উপর থেকে উঠে বিছানার অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।আমি এদিকে নিরবে কাদছি আর ভাবছি,

“কি পেলাম আমি #ভালোবেসে তারে?শুধু একরাশ যন্ত্রণা আর বুক ভরা কষ্ট ছাড়া কিছুইনা।বিয়ের আগে যেদিন প্রথমবার রাফিতকে দেখেছিলাম আমি সেদিনই তাকে আমার মনের এক কোনে জায়গা করে দিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম এই সেই ব্যাক্তি যাকে ভালোবেসে আমার সব দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।কিন্তুু না তার সম্পূর্ণ বিপরীত হলো।

“কষ্ট আমার রোজকার সঙ্গী আজ ভালোবেসে তারে,
হৃদয় আমার দ্বিখণ্ডিত আজ ভালোবেসে তারে,
চোখের জলে ভাসে চোখ আমার ভালোবেসে তারে,
বেদনার জীবন আমার আজ শুধু ভালোবেসে তারে,
কিন্তুু
সে কি বোঝবে কোনোদিন কতটা ভালোবাসি তারে?
হয়তো না
নিজের রাগ অভিমান পুষে রাখবে ওই অভিমানি
অন্তরে।”

এসব ভেবে নিরবে কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম তার কোনো খেয়াল নেই।
,
,
,
,
,
,
রাত ২.০০ টা,,,,,,,,,,

হঠাৎ কিছু একটার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।চট করে চোখ মেলে তাকালাম।পাশে তাকিয়ে দেখি রাফিত নেই।রাত দুটো বাজে এতো রাতে কোথায় গেলো ও।ওয়াশরুম ও বেলকনিতেও চেক করলাম।না একজায়গায়ও নেই সে।ঠিক তখনই আবারও সেই শব্দটা পেলাম।শব্দটা অনেকটা গুলির আওয়াজের মতো।কিন্তুু এতো রাতে গুলির শব্দ আসবে কোথা থেকে তাই বোঝতে পারছিনা।শব্দটা মনে হচ্ছে বাড়ির পেছন সাইড থেকে আসছে।ভাবছি এখন কি বের হবো নাকি হবোনা।তার উপর রাফিতও ঘরে নেই।

প্রচন্ড জানার আগ্রহ,কৌতুহল ও ভয়ে রুম থেকে বের হলাম।পুরো বাড়ি খোজা শেষ।না কোথাওই নেই রাফিত।আমার ভয়টা এবার আরও বেশি বেড়ে গেলো।ওর কিছু হলোনাতো আবার।মেইন ডোরের সামনে গিয়ে দরজা খোলারও চেষ্টা করেছি কতক্ষন।কিন্তুু দরজা বাইরে থেকে লক করা।রাফিত এতো রাতে বাইরে যাবে কেনো? তারাতারি করে সিড়ি বেয়ে ছাদের উপরে যাই।কারন ছাদ থেকে বাড়ির চারপাশটা খুব ভালো করে দেখা যায়।ছাদের যেই সাইডটা থেকে বাড়ির পেছনটা দেখা যায় ওখানে গিয়ে দাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছি কে আছে ওখানে।কিন্তুু আমি যে হতভাগিনী এ আর নতুন কি।চাদের আলোয় কিছুটা আবছা দেখা গেলেও এই বড় বড় গাছের ডালপালার জন্য নিচের দিকটা দেখা যাচ্ছেনা।

চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে যেই পিছনের দিকে পা বাড়াবো ওমনি নিচে কারও অস্তিত্ব বোঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি রাফিত গাছের ওইদিক থেকেই বাড়ির দিকে আসছে।রাফিত ওখানে কি করছে এই সময়?আমি দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম।মনে হয় রাফিত ঘরে এসেছে। সে যেনো কিছু যেনো না বোঝে সেই জন্য বিছানায় গিয়ে আগের মতো করে শুয়ে পরি।তাকে কিছু বোঝতে দেওয়া যাবেনা।তখনই সে রুমে ঢুকে।চোখ বন্ধ থাকলেও এটা ঠিকই বোঝতে পারছি সে এসেছে।তার গায়ের পারফিমের কড়া গন্ধটাই আমাকে সেটা বলে দিচ্ছে।

হালকা চোখ মেলে দেখি সে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে। তার হাতের দিকে নজর পরতেই আমি চমকে উঠলাম।ঢিম লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার হাতে রক্ত লেগে আছে।দেখে মনে হচ্ছেনা তার হাতের কোথাও কেটেছে। তাহলে রক্ত কোথা থেকে আসলো?তাহলে কি সে কাউকে….না না এটা কি করে হতে পারে?ওফফ আর ভাবতে পারছিনা আমি।এই রাফিত দিন দিন আমার কাছে শুধু রহস্যই রয়ে যাচ্ছে।না আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এই রহস্যের সমাধান আমার চাই ই চাই।কেনো যেনো মনে হচ্ছে এর সাথে আমার কিছুতো একটা কানেকশান আছে।কিন্তুু কি?এর জবাব আমাকেই বের করতে হবে।করতেই হবে।তবে কিভাবে?হাউ?

আমি এদিকে এসব ভাবছি আর ওইদিকে রাফিত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে কতদিন পর এমন শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে সে।কিন্তুু আমার ঘুম কিছুতেই আসছেনা।কিভাবে আসবে এতো চিন্তার মধ্যে আর যাই হোক ঘুম আসেনা।এভাবে একটা নির্ঘুম রাত পার করলাম আমি।শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে আসে।
,
,
,
,
সকালে,,,,,,,,,,,

পেটের উপর গরম কিছুর ছ্যাকায় ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি রাফিত হাতে ইস্ত্রি নতুন য়ে দাড়িয়ে আছে।…………………….
to be continued…………………….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *