পূর্ব রোদ

পূর্ব রোদ !! Part- 06

রোদের পরিক্ষা আর মাত্র দুটো বাকি।তবে আজ শুক্রবার।সকাল বেলা চোখ খুলতেই বিরিয়ানি’র সুগন্ধি নাকে বেঁধে গেলো।সুবাশে রোদ চোখ বন্ধ করে সুগন্ধ অনুভব করলো।একটুপর বিছানা ছেড়ে তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে গেলো।গিয়ে দেখলো তার মায়ের চুলার উপরে থাকা বিরিয়ানির নেড়ে দিচ্ছে।তার পাশে রাফিয়া বসে নিজের ইচ্ছে মতো কথা বলছে।
“মামুনি বিরিয়ানি রান্না করছো?”
“নাহ!কচু রাঁধছি।ফাজিল দেখছিস না বিরিয়ানি করছি।”
“সুন্দর করে বললেই তো হয়।”

“আমি তো সাত-সকালে বিরিয়ানির সুগন্ধ পেয়ে চলে এলাম!”
যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাফিয়া কথাটি বললেও তার সব আত্মবিশ্বাসে জল ঢেলে দিয়ে রোদ বললো,
“জানি তো খাবারের গন্ধ তোর নাকে লাগলেই ছুটে চলে আছিস।”রোদের কথা শুনে রাফিয়া প্রচন্ড রেগে গেলো।রোদকে বকা দেওয়ার জন্য মিসেস ছায়া’র দিকে রাফিয়া অসহায় দৃষ্টতে তাকালো।
“রোদ কানের নিচে দিবো একটা চড়।যা গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে আয়।”
“ছিঃ রোদ তোর মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।ওয়াক!”
রাফিয়া মন্তব্য শুনে রোদ ক্ষেপে গেলো।তেড়ে গিয়ে মারতে যাবে তখনি আলো এসে বললো,”আপি!তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।”
“ক্যান?কোথায় যাবো?”
“পায়েস রাঁধবি!”
“পায়েস!ইয়াহু।আমি এখনি আসছি।”
অন্যকিছুর চেয়ে রোদ পায়েসটা ভালো রাঁধে তাই আলো ওর কাছে সবসময় আবধার রাখে পায়েসের।আর রোদও কোনোদিন তার বোনের আবদার ফেলে না।
রোদ মুখ-হাত ধুয়ে পায়েস রাঁধার জন্য জোরজার করতে লাগলো।রাফিয়া আর আলো পাশে বসে ইচ্ছে মতো বকবক করছে।পড়াশোনা নিয়ে রাফিয়া’কে প্রশ্ন করলো,
“রবিবারে তোর কী পদার্থবিজ্ঞান?”
“হ্যা।তোদের তো যুক্তিবিদ্যা মনে হয়।”
“হুম।বাই দ্যা ওয়ে রোদ সেদিন আমরা একটা ছেলে দেখলাম না ইন্না-লিল্লাহ?”
“হ্যা।তো?”

“রাফিয়াপু তুমি ছেলেটার সাথে প্রেম করতে চাচ্ছো না তো?”
আলো’র কথা শুনে রোদ হেসে ফেললো।রাফিয়া মুখ গোমড়া করে বললো,
“হ্যা রে।ছেলেটা পুরাই চকলেট!”
“একটা মেয়ে হয়ে ছেলের প্রেমে পড়ে তুই মেয়েজাতির অপমান করছিস।”
“যাহ!অপমান না।”
“কী রে?কী এতো কথা বলছিস তোরা?”
রোদের মা রান্না ঘরে চলে আসায় রাফিয়ার কথা চাপা পড়ে গেলো।তিনি রোদের রান্না করা পায়েসের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মাশাল্লাহ!খুব ভালো সুগন্ধি বের হচ্ছে।”
“কিন্তু মামুনি আজকে এতো রান্না আর এসব কেনো?”
“ও মা! তুই জানিস না?আজকে পূর্ব আসছে।”
“হরিচন্দন?ও কেনো আসছে?”
“সে কি কথা?জামাই এ বাড়িতে আসবে না?”
“ও কি নতুন জামাই?”
“তুই বুঝবি না এসব।পায়েস হলো?”
“হ্যা।”
চুলার পাশ থেকে রোদ সরে এলো।তার মাথায় কু-বুদ্ধি’র উদয় হচ্ছে।পূর্ব তাদের বাড়িতে একা আসছে তারমানে পাল্টা জবাব দেওয়া উত্তম সুযোগ।রোদ পূর্ব’কে কীভাবে শিক্ষা দিবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করে ফেললো।রোদ বাকা হেঁসে বললো,”এতোদিন তোকে না জ্বালিয়ে আমার পেটের ভাত হজম হচ্ছিলো না।ঘুম তো হারিয়েই গেছে।আজকে রাতে শান্তি মতো ঘুম হবে আমার।আহা!”


“পূর্ব বাবা তুই রোদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।”
“রোদ কোথায়?”
“রুমে আছে।পড়ছে হয়তো।”
“আচ্ছা।”
রোদের মায়ের সাথে কথা শেষ করে পূর্ব রোদের রুমে আসার জন্য পা বাড়ালো।মাত্র কিছুক্ষণ আগে পূর্ব রোদের বাসায় আসলো।মূলত পূর্ব এসেছে রোদের মায়ের সাথে দেখা করতে।পূর্ব রুমে ডুকতেই নজরে পরলো রোদ মাথা নিচু করে পড়ছে।চুলগুচ্ছ কাটি দিয়ে বেঁধে রাখা।পরনে এ্যাস কালারের সেলোয়ার-কামিজ।পূর্ব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
দরজা লাগার আওয়াজে রোদ পেছনে তাকিয়ে দেখলো পূর্ব ওয়াশরুমে ঢুকছে।পূর্বকে দেখেই তার মুখে হাসি ফুটলো।দৌড়ে নিচে গিয়ে রোদ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে ফেললো।
পূর্ব ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রোদের চেয়ারে বসে নেই।ড্রয়িং রুমে আছে ভেবে পূর্ব চলে গেলো।
“পূর্ব আয় বস!” (ছায়া)
“কী রেঁধেছো তুমি?”
“তুই যা যা খেতে চাইছিলি সব।”
“বিরিয়ানি?”
“হুম।”
রোদের মা আর পূর্বের কথা শুনে রোদ বিড়বিড় করে বললো,”আদিক্ষেতা!”আগে থেকে বেড়ে রাখা বিরিয়ানি মুখে দিতে চিবোতেই পূর্বের শরীর সারা শরীর ক্ষেপে উঠলো।মুহুর্তেই কালো মেঘে ঢেকে থাকা রোদের চেহেরাটা যুুদ্ধজয়ে হাসি ফুটে উঠলো।
“আহ!মামুনি।” এক ডাক দিয়ে পূর্ব গ্লাসে থাকা সব জল শেষ করে ফেললো।জগ কাঁধ করে গদগদ জল খেতে লাগলো।সামনে পায়েসের বাটি দেখে পায়েস মুখে দিয়ে আরেক ঝটকা খেলো।মুখের ভিতর যা ছিলো তা বেসিনে গিয়ে সব ভমি করে দিলো।বেসিন থেকে মুখে জল ছিটিয়ে শান্ত হয়ে চেয়ারে বসতেই রোদেল হাসায় আওয়াজ কানে বাজলো।পূর্বের বুঝতে বাকি রইলো না যে সব কাজ রোদ করেছে।হাসতে হাসতেই রোদ হাতে থাকা তোয়ালে পূর্বের দিকে এগিয়ে দিলো।মুখ মুছে পূর্ব তোয়ালেটা রোদের মুখে ছুঁড়ে মারলো।রেগে গিয়ে রোদ কথা বলতে যাবে তখনি তার মামুনি বললো,
“পূর্ব কী হয়েছে তোর?ঠিক আছিস?”
“হ..হ্যা মামুনি।জানি না হুট করে ভমি এলো।”
পূর্বের কথা শুনে রোদের মুখ থেকে রাগি ভাব দূর হয়ে আবারো হাসির চিহ্ন রেখে বললো,”ও মা!কংগ্রাচুলেশন আপনি মা হয়ে চলেছেন!স্যার বাচ্চার বাবা কে?”নিজে নিজে কথা বলে রোদ ফিক করে হেসে দিলো।রোদকে ধমক দিয়ে মিসেস ছায়া বললেন,
“পূর্ব তুই যেভাবে জল খেলি মনে তো হলো বিরিয়ানি যথেষ্ট জাল হয়েছে।দেখি তো..”
রোদের মা বিরিয়ানির বাটি’টা নিতে গেলে রোদ চমকে গেলো।ঐ বাটির বিরিয়ানি খাওয়ার পর রোদের মা জেনে যাবে বিরিয়ানিতে এক্সট্রা মরিচগুঁড়া দেওয়া হয়েছে।তখন নিঃসন্দেহে তীরটা রোদের দিকে ছুঁড়ে মারবে সবাই।এসব ভাবতেই আপনা-আপনি ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুল দাঁতে কামড়ে ধরলো।কিন্তু রোদকে অবাক করে দিয়ে রোদের মা বাটি নেওয়ার আগেই পূর্ব সেই বাটি তুলে নিলো।রোদের মা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পূর্ব গড়গড় করে বললো,
“সত্যি বলছি মামুনি বিরিয়ানিটা জাস্ট অসাধারণ হয়েছে।এত্তো ভালো বিরিয়ানি লাইফে ফাস্ট খেলাম।”
রোদের মায়ের চেহেরা দেখে পূর্ব বুঝতে পারলো তার কথায় তিনি একশো পার্সেন্ট বিশ্বাস করেনি।বিশ্বাস করানোর জন্য পূর্ব আরেক চামচ বিরিয়ানি মুখে ভরে দিলো।তৃপ্তির হাসি দিয়ে মিসেস ছায়া স্থান ত্যাগ করলো।কিন্তু তারপরও পূর্ব বিরিয়ানি মুখে ভরে যাচ্ছে।আর সহ্য করতে না পেরে রোদ বিরিয়ানির বাটি’টা নিয়ে বাকি অংশটা ময়লার ঝুঁটি’তে ফেলে দিলো।বাটিতে থাকা পায়েস টাও ফেলে দিয়ে নতুন পায়েস এনে পূর্বের মুখের সামনে রেখে বললো,”নে।এই পায়েসে লবণ বেশি নেই।”
“কী বিশ্বাস যে নেই?”
“আমি বলছি তো।”

“তোমাকে…”
পূর্বকে আর বলতে না দিয়ে রোদ তার মুখে চামচে করে পায়েস মুখে ভরে দিলো।আরেকবার মুখ খুলতেই আবারো দিলো।কয়েক চামচ এভাবে দেওয়ার পর রোদ নিজের রুমে এসে ওয়াশরুম ঢুকলো।
খুব অস্থির লাগছে রোদের।পূর্বের কষ্ট’টা সে কিছুতেই মানতে পারছে না।পরিকল্পনা’টা করার সময় তো এমন অস্থিরতা হয়নি।তাহলে পূর্বের রিয়াকশন দেখে এখন কেনো এই অদ্ভুত অনুভূতি কড়া নাড়ছে?এমনটা তো আগে কোনোদিনও হয় নি।গত একমাসে কী এমন হলো যার জন্য রোদ নিজেকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে পারছে না?
রোদ নাকে মুখে জল ছেটালো।তার চোখের সামনে শুধু পূর্বের চেহেরা ভাসছে।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিজে বকে দিয়ে রোদ বললো,”কী দরকার ছিলো ওর পেছনে আবার লাগার?তুই তো বলছিলি না ও কে এড়িয়ে যাবি?ওর পেছনে আর লাগবি না।তাহলে?গত একমাস ধরে পূর্ব তোর সাথে ঝগড়া দেয়নি তো?তাহলে তুই ক্যান সেজেগুজে গেলি ঝগড়া করতে?পূর্বকে কষ্ট যখন দিয়েছিস ভালো কথা!কিন্তু এখন কেনো কষ্ট হচ্ছে?রোদ তোকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম!”
নিজের সাথে বোঝাপড়া করে রোদ বেরিয়ে এলো।ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই পূর্বের সামনে পড়লো।যথা সম্ভব রোদ নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।কারণ কয়েকদিন ধরে পূর্ব সামনে এলে মনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আবাস পায়।
“আমার জন্য গর্ত খুড়ে,আমাকে সেই গর্তে ফেলে আবার আমাকেই কি’না গর্ত থেকে উদ্ধার করলা?ভেরি ইন্টারেস্টিং!”
“মোটেও আমি তোকে বাঁচাই নি।ওটা তো মামুনির জন্য…”
“ওহ হো।মামুনির জন্য তাহলে।”
“হুম।”

“তা এখন সেদিনের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে।”
“একদম!”
দাঁত দেখিয়ে রোদ হাসি দিলো।রোদের সামনে পূর্ব নরমাল বিহেভ করলেও রোদের করা একটু আগে ব্যবহারে পূর্বের ভয় হচ্ছে।রোদের মনে পূর্বে জন্য কোনো মায়া বা প্রেম কড়া নাড়ছে না তো?তাহলে যে পূর্ব নিজের কাছে অপরাধী হয়ে যাবে।কারণ যে যাই হোক অন্তত একটা মেয়ের মন নিয়ে পূর্ব খেলতে পারে না।
(চলবে)