ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 06

সে কি এবার আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে নাকি?ভেবেই আমার হার্টবীটটা যেনো দ্রুত লাফাতে লাগলো।আচ্ছা ওকি শাড়ি পরাতে পারে?কিন্তুু ওতো ছেলে মানুষ তাহলে?
রাফিতের দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখি ও একটা ব্লাক কালার শার্ট,ডার্ক ব্লু কালার কোর্ট আর ব্লাক কালার জিন্স পরেছে,হাতে ব্রান্ডেড ঘড়ি আর চুলগুলো খুব সুন্দর করে স্টাইল করা।ফর্সা শরীরে সবগুলো জিনিসই যেনো ফুটে ওঠেছে।ইসসস কি মারাত্নক হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে।ভেবেই আমার মনে একশটা লাড্ডু ফুটছে এতো সুন্দর ছেলেটা আমার হাসবেন্ড। তবে সুন্দর হলে কি হবে কাধেতো মনে হয় একশটা শয়তান নিয়ে ঘুরে হুহহ।বদের বিরান।

রাফিত আামার কাধে যে আচলটুকু ঝুলিয়ে
রেখেছিলাম এক টানে ওটা ফ্লোরে ফেলে দিলো।তারপর আমার সামনে দুই হাটু গেরে বসলো। আমার এবার প্রচুর লজ্জা লাগছে।এই লোকটার কি আমাকে এই অবস্থায় দেখতে এতোই ভালো লাগে।যত্তসব অসভ্য খাটাস মার্কা।আমি দুই হাতে নিজেকে ঢেকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।এরই মধ্যে সে নিচের দিকে তকিয়ে হাতের ভাজে শাড়ির কুচি করতে করতে বলল,

“এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই এখানে।তোমার সবকিছু আমি আগেই দেখে নিয়েছি।আর এভাবে তোমার শরীরের ছিটে ফোটাও ঢাকবেনা।আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, আমি তোমার স্বামী কোনো পরপুরুষ না বোঝতে পেরেছো।সো এসব ন্যাকামো বন্ধ করে চুপচাপ সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকো।নয়তো আমার কুচি ঠিক করতে সমস্যা হচ্ছে।”

আরে বলে কি এই লোক আমার সবকিছু দেখে নিয়েছে মানে?আর আমি কি নির্লজ্জ নাকি যে আমার লজ্জা লাগবেনা।তাও একটা ছেলের সামনে।ভারি আজব লোকতো?তার উপর কোথায় নিয়ে যাবে সেটাও বলছেনা।এখন ইচ্ছাতো করছে……..না থাক ওতো বেশি ইচ্ছা করিসনা দিশা।পরে খাটাসটা আবার তোকে নাকাচুবানি দিবে।তারপর বিরবির করে উপরের দিকে তাকিয়ে গান ধরলাম,

“ওওও এতো ইচ্ছা ইচ্ছা করিসনা,
তুই ইচ্ছা কইরা ফান্দে পরিসনা,
ও তুই ইচ্ছা কইরা ফান্দে পরিস…….।”

আমার গানের মাঝখানে সে ধমক দিয়ে বলল,

“স্টপ দিস ননসেন্স সং দিশা।মুখ দিয়ে যদি তোমার আর একটা সাউন্ড বেরিয়েছে তো তোমাকে এই অবস্থাতেই বাইরে নিয়ে যাবো বলে দিলাম😡।”

তার হঠাৎ এমন ধমকে আমি কেপে উঠলাম।এর নামই কপালের নাম গোপাল।এখন কি নিজের ইচ্ছেতে একটু গানও গাইতে পারবোনা হাহহ।রাফিতের দিকে তাকিয়ে দেখি সে শাড়ির কুচিগুলো হাতে নিয়ে একদৃষ্টে আমার উন্মুক্ত পেটের দিকে তাকিয়ে আছে।যেনো মনে হচ্ছে আমার পেটনা ওটা কোনো ইয়াম্মি খাবার।হায় হায় কি সর্বনেশে কান্ড।এ পোলা কি আমার ইজ্জতের হালুয়া বানিয়ে খাবে?কি করছেটা কি এ?এমনিতেই ও কাছে আসাতে হার্টটা মনে হচ্ছে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে।তার ওপর এভাবে তাকিয়ে থাকলেতো আমি মনে হয় দম আটকে মরেই যাবো।তার কুচি করাও শেষ।আমি কাপা কাপা গলায় তাকে বললাম,

“রা….রাফিত কুচিগুলো আমার হা…হাতে দিন।এখন আমি করতে পারবো।”

কিন্তুু হায় কে শোনে কার কথা।সে যেভাবে ছিলো ওভাবেই রয়েছে। তাই আমিই তার হাত থেকে খপ করে কুচিগুলো নিয়ে পেটিকোটের মধ্যে গুজে নিলাম।রাফিতকে এবার আমার যেনো পুরো স্ট্যাচু বলে মনে হচ্ছে।ওর যেনো কোনা হেলদোলই নেই।আমি ওর দিকে এতো গুরুত্ব না দিয়ে শাড়ির আচলটা যেই ফ্লোর থেকে তুলতে যাবো ওমনি সে তার দুই হাত দিয়ে আমার কোমর চেপে ধরে কাছে টেনে নাভিতে তার নাক ডুবিয়ে দিলো।আমার মনে হলো মুহূর্তেই আমি যেনো কোনো কারেন্টের শক খেলাম।আমি আমার চোখ খিচে বন্ধ করে এক হাতে তার চুলে শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছি।আমার শ্বাস-প্রশ্বাস এতো দ্রুত গতিতে চলছে যেনো মনে হচ্ছে ট্রেনকেও হার মানাবে।সে আমার নাভিতে তার নাক ঘষতে ঘষতে বলল,

“আর কতোবার পাগল করবে তুমি আমাকে?কেনো তোমার কাছ থেকে এতো চেষ্টা করার পরও দূরে থাকতে পারছিনা?প্লিজ বলোনা।আচ্ছা তোমার শরীরে কি আমাকে আকর্ষন করার জন্য কোনো চুম্বক লাগানো আছে?বলোনা কি আছে তোমার মাঝে?কেনো এমন হয় তোমার কাছে থাকলে?”

আমি তার কথার আগা মথা গোড়া কিছুই বোঝতে পারছিনা।তবে আমি এটুকু জানি তার ছোয়ায় আমি নিজেকে এক অন্য জগতে হারিয়ে ফেলছি।সে আমাকে আরও ঝাপটে ধরে আমার পেটে ধীরে ধীরে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।আমি তার ছোয়া খুব গভীরভাবে অনুভব করছি।এভাবে কতক্ষণ ছিলাম ঠিক জানিনা।

রাফিত আচমকা এক ঝটকায় আমাকে ছেড়ে বেডের কাছে গিয়ে ধপ করে বেডে বসে পরলো।তারপর মাথা নিচু করে দুই হাতে নিজের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো।আমি হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।বোঝলামনা হঠাৎ এমন করার কি হলো?সে যভাবে বসে ছিলো ওভাবে থেকেই আমাকে শান্ত গলায় বলল,

“নিজের শাড়ির আচল ঠিক করো।নিজেকে ঢাকো কুইক।”

তার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।আমি তারাতারি করে নিজেকে ঢেকে নিলাম।রাফিতকে আমার কাছে কেমন যেনো খুব এলোমেলো লাগছে।ওকে কিছুতেই আমি বোঝে ওঠতে পারছিনা।না আর সহ্য করা যায়না এসব।হয়তো একবারে কাছে টেনে নেক নয়তো দূরেই রাখুক।কিন্তুু আমার ফিলিংস আর ইমোশান নিয়ে এভাবে খেলার কোনো অধিকার তার নেই।এসব ভেবেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।আমি তার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,

“আচ্ছা রাফিত আপনি ঠিক কি চাইছেন আমার কাছ থেকে তা কি জানতে পারি?এই আমাকে মারছেন,টর্চার করছেন আবার এই কাছে টেনে নিচ্ছেন তো আবার একইভাবে দূরেও ঠেলে দিচ্ছেন।আমার কি ইমোশান নেই?কোনো ফিলিংস নেই?নাকি আমি মানুষ না যে আমার ফিলিংস,ইমোশান থাকতে নেই? আপনি কি মনে করেন আমি রোবট?আমার কি কষ্ট হয়না?কেনো এমন করছেন আপনি আমার সাথে?কি এমন ক্ষতি করেছি আমি আপনার?যার শাস্তি এভাবে দিচ্ছেন আমাকে।প্লিজ বলুননা কেনো করছেন এমন?”

কথাগুলো বলতে বলতে আমার কান্নার পরিমাণ দিগুণ হারে বেড়ে গেলো।কিন্তুু না ওর উপর এসবের কোনো ইফেক্টই হয়নি।প্রতিবারের মতো এবারও সে আমার প্রশ্নগুলো সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেলো।পেলামনা আমি আমার প্রশ্নের জবাব।সে বসা থেকে হনহন করে হেটে দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরলো।তারপর আমার দিকে না ফিরেই বলল,

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি তোমাকে নিচে দেখতে চাই।এর থেকে এক সকেন্ডও যদি দেরি হয় তাহলে…..।আশা করি আর বলতে হবেনা”

সে আবারও তার টাইম হিসেব করে চলে গেলো।

“আর কতো লুকাবে রাফিত।হয়তো বেশিদিন আর পারবেনা।খুব জলদিই আমি এর রহস্য খুজে বের করবো।আমাকে যে করতেই হবে।এভাবে ধুকে ধুকে মরা আমার পক্ষে সম্ভব না।হার মানার মতো মেয়ে আমি নই।(কথাগুলো বলে এক হাতে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে চলে গেলাম।)
,
,
,
,
,
,
,
একটা পার্টিতে এক কোণে বসে আছি।দেখেতো মনে হচ্ছে এখানে কাপল ছাড়া কেউ এলাউড না।কিন্তুু প্রশ্ন হলো গিয়ে রাফিত এখানে কেনো এলো? আর আমাকেই বা কেনো এখানে নিয়ে আসলো?নিয়ে এসেছেতো এসেছে তার উপর আমাকে এখানে একা রেখে সে হাওয়া।তবে যাওয়ার আগে বলে গেছে আমি যেনো এখানেই বসে থাকি।কোথাও যেনো না যাই।আচ্ছা আমাকে যখন তোর সাথে রাখবিই না তাহলে নিয়ে এলি কেনো?অসহ্য লোক একটা।

না আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো।বসে বসে মানুষের এসব রঙ-তামাশা দেখতে আর ভালো লাগছেনা।প্রায় একঘান্টা নাগাত এভাবে বসে আছি।এখানের কাউকে চিনিওনা আমি।তাই রাফিতের না ঠেলেই আমি তাকে খোজার উদ্দেশ্যে উঠে সামনের দিকে হাটা ধরলাম।
,
,
,
অনেকক্ষণ ধরে রাফিতকে খুজছি আমি বাট পাচ্ছিনা।ইভেন সে পার্টিতেই নেই।গেলো কোথায় লোকটা।যেখানে পার্টিটা হচ্ছে সেটা একটা দুই তালা প্লাটফর্ম।আর পার্টিটা হচ্ছে একতলায়।আমি বাধ্য হয়ে একজন ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,

” এইযে ভাইয়া শুনছেন।একটু এদিকে আসবেন প্লিজ।”

সে এদিকে এসে বলল,

“জি ম্যাম বলুন।”

আমি আমার ফোনে রাফিতের একটা পিক বের করে তাকে দেখিয়ে বললাম,

“জি ভাইয়া এই লোকটাকে কি কোথাও দেখেছেন?”

সে ছবিটির দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,

“ও এতো রাফিত দা।হ্যা ওনাকে আমি কিছুক্ষণ আগে ছাদের দিকে যেতে দেখলাম”

“ওকে ভাইয়া ধন্যবাদ”

ওয়াটার চলে গেলো।

কি আজব ব্যাপার পার্টি এখানে হচ্ছে তো সে ছাদের উপরে কি করছে?এইরে আমার কপাল আবার পুড়লো নাতো।যেই লুইচ্চা পোলা বিশ্বাস নাই।ভেবেই তারাতারি করে ছাদের দিকে হাটা দিলাম।

সিড়ি বেয়ে ছাদের উপরে গিয়ে আমি পুরো থমকে গেলাম।আমার হাত-পা নাড়ানোরও কোনো শক্তি পাচ্ছিনা আমি।চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাপছে।আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,

“রাফিইইইইইইত।”
to be continued……………….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *