সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 15

খোলা আকাশের নিচে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে দীঘি আর আবদ্ধ। প্রায় আধাঘন্টা হতে চলেছে কিন্তু আবদ্ধ কিছুই বলছে না। আর না বলছে দীঘি। আবদ্ধ কেন তাকে ডাকলো সেটাও বুঝতে পারছে না সে। এদিকে আবদ্ধের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ করছে। বাসা থেকে সে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিভাবে কি বলবে দীঘিকে,কিভাবে গুছিয়ে বলবে! কিন্তু দীঘির সামনে আসতেই সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বারবার তার মধ্যে একটা ভয় জেকে বসছে। দীঘি কি তার মিথ্যা বলার কারনে তাকে ছেঁড়ে চলে যাবে? প্রশ্নটা যে বেশ ভাবে জানতে ইচ্ছে করছে আবদ্ধের। আবার ভয়ও করছে।গলা দিয়ে সর বের হচ্ছে না তার। গলাটা শুকিয়ে গেছে মুহুর্তেই। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করল আবদ্ধ। দীঘির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠল সে…
— সরি!
অবাক হলো দীঘি। তার জানা মতে আবদ্ধ তো তার সাথে এমন কিছু করে নি যার জন্য সে সরি বলছে। আর যদি বাবাকে নিয়ে সরি বলার থাকে তাহলে তো আগেই বলতো। ভাবতেই ভ্রুঁ কুঁচকালো দীঘি। জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে উঠল…
— কেন?

আবার কয়েকবার দম নিলো আবদ্ধ। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে শুরু করলো।
— আমি তোকে অনেক মিথ্যা কথা বলেছিরে পিচ্চি। তাই মাফ চাচ্ছি। মাফ করে দেয় আমায়।
— কি মিথ্যা বলেছেন আপনি?
— আহমেদ কোম্পানির কথা শুনেছিস?
— কোনটা? যে কোম্পানির অবস্থা খুব খারাপ ছিল? নিলাম হওয়ার কথা ছিল?
— হুম! ওই কোম্পানির মালিক আমি আর আপু। তোকে আমি মিথ্যা বলেছিলাম। তার সাথে পড়ালেখা নিয়েও মিথ্যা বলেছি! আসলে দীঘি আমি হায়ার এজুকেডেট না। মাত্র ইন্টার পাশ। তুই তো জানিস মিরাপু আর এক্সিডেন্টের কথা। তখন কোম্পানির এত চাপ ছিল যে কেউ বিজনেসটা সামলানোর ছিল না। কোম্পানির হাল সামলাতে বাধ্য হয়ে পড়ালেখা ছাঁড়তে হয় আমার। আমার ভয় ছিল তুই আমাকে রেখে চলে যাবি। তাই তোকে কখনও বলা হয় নি। মাফ করে দিস আমায় পিচ্চি!
আবদ্ধ থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দূরে অবস্থান করা চাঁদের দিকে তাকালো সে। নিজের অন্য হাত দিয়ে আবদ্ধের শক্ত করে ধরে থাকা হাতটায় হাত রাখলো সে। শান্ত কণ্ঠে বলল….
— আমাকে এতটা নিকৃষ্ট মনে হয় আপনার। আমি তো এস.এস.সি. পাসও না, আপনি তো তাও ইন্টার পাশ! তাহলে কার কাকে ছেঁড়ে যাওয়ার কথা ছিল আবদ্ধ?আর যদি কোম্পানির কথা বলেন, তাহলে বলব আমি লোভী না। যে টাকা দেখে আপনার সাথে থাকবো আবার টাকা চলে গেলে চলে যাবো। আমি তো কখনই আপনার সাথে থাকতে চাই নি।আপনিই জোড় করেছেন। চলে গেলেও তো আবার জোড় করে নিয়ে আসতে পারতেন তাই না?যাই হোক, আপনার মাফ চেতে হবে না। আপনি কি জানেন, আমার জীবনের শ্রেষ্ট পুরুষ আপনি। যাকে দেখে মন থেকে বিশ্বাস আসে আমার। যার সাথে থাকলে নিজেকে নিরাপদ মনে হয়।
থামলো দীঘি। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো….

— জানেন আমার আব্বা আমার নিজের আপন আব্বা না। সৎ আব্বা! আর আমার আম্মার প্রথম স্বামীর মেয়ে আমি। যখন আমার আসল আব্বা মারা যান তখন আম্মা আব্বাকে বিয়ে করেন। আব্বারও তৃতীয় বউ ছিল আম্মা। আব্বার এতগুলো বিয়ে হয়েছিল কেন জানেন? কারন আব্বা কখনও বাবা হতে পারবেন না। প্রতিবার উনি মিথ্যা বলে বিয়ে করতেন।যখন ধরা পরে যেতেন তখম তার বউরা তাকে ছেঁড়ে চলে যেত।তাছাড়া আরেকটা কারন ছিল, আব্বা কারনে-অকারনে তার বউদের অনেক মারতেন।আমাদের বেলায়ও তেমনই হয়। কোনো কিছু কম-বেশি হলেই উনি আমাদের নির্মম, নির্দয় ভাবে মারতেন।তাছাড়া আব্বার আরেকটা নেশা ছিল।নারীর নেশা! ছোট ছিলাম তো তাই বুঝতাম না আব্বা কেন পর নারীকে বাসায় এনে রুমে দরজা বন্ধ করে থাকতেন। শুধু আম্মাকে দেখতাম সোফায় বসে বসে সারারাত কাঁদতে।আম্মার কান্না দেখে আমিও কাঁদতাম। আম্মাকে যখন জিজ্ঞেস করতাম কেন কান্না করছে তখন আম্মা নির্বাক হয়ে থাকতেন। এভাবেই বড় হতে লাগলাম আমি। আম্মার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না।তাই সে আব্বার কাছে দিন দিন আপমানের পাত্রী হওয়া সত্ত্বেও পরে থাকতেন।এতে যেন আব্বার অত্যাচার বেড়ে যায়। ততদিনে আব্বার কূ-কির্তি সম্পর্কে অনেকটাই জেনে গেছি আমি।ঘ্রণা হতে শুরু হয় তার প্রতি। যখন তাকে কষ্ট পেতে দেখতাম তখন অনেক খুশি হতাম। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে আমি কেন আপনাকে আব্বার এত দোহাই দিতাম? কেন আব্বাকে না কষ্ট দিতে বলতাম? কারনটা হলো আমার আম্মা।আপনি আব্বাকে যতটা-না কষ্ট দিচ্ছেন তার দ্বিগুণ কষ্ট আব্বা আম্মাকে দিচ্ছেন। আমার বিশ্বাস, আপনি আজকে আব্বাকে শাস্তি দেওয়ার পর আব্বা আম্মাকে মেরেছে। যদি পারেন তাহলে আম্মার হাত-পায়ের দিকে তাকাবেন।দেখবেন তার হাতে পায়ে কতটা আঘাতের চিহ্ন! তাই দোহাই লাগে আপনার আব্বাকে আর শাস্তি দিবেন না।
থামলো দীঘি। তার চোখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পরছে। আবদ্ধের মনে হচ্ছে তার মাথায় কে যেন আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।এতটা নির্দয় আদও কি মানুষ হতে পারে। মানুষ বললে ভুল হবে এগুলো জানোয়ার থেকেও নিকৃষ্ঠ। আবদ্ধ দীঘির গালের পানি গুলো আলতো করে মুছে দিলো।মনে মনে বলতে লাগলো…. “দীঘির এই চোখে আর পানি আসতে দিবে না সে।দীঘিকে আর তার মাকে তাদের প্রাপ্ত পর্যাদা দিবে।আর ওই জানোয়ারটাকে দিবে উচিত শিক্ষা!”

৪.
ঘুমের মাঝেই অনুভব করছি কেউ আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কেমন যেন আরাম আরাম লাগছে আমার।চোখ খুলতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। তবে কে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে?মামী? কিন্তু মামীর স্পর্শ তো এমন না। তবে কি অন্য কেউ? ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও চোখ খুললাম আমি। সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। রেয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকি আছেন।ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।আমার চোখ বড় বড় করা দেখে মুখ ভরে হাসলেন উনি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন….
— এতক্ষন কেউ ঘুমায় মরুভূমি?আজ না তুমি ভার্সিটি যাবে?
বলেই একগুচ্ছ লাল তাজা ফুল আমার সামনে এগিয়ে দিলেন। চোখ কচলে আবারও ভালো মতো তাকালাম আমি।না রেয়ানই দাঁড়িয়ে আছেন আমার সামনে। আর আমার দিকে বাড়িয়ে রয়েছেন একগুচ্ছ গোলাপ! গোলাপগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে রেয়ানের দিকে তাকালাম আমি। লাল শার্টে তার ফর্সা মুখে কেমন ভাবে যেন মিশে আছে।অপরুপ লাগছে তাকে।একদম কোনো রাজ্যের রাজপুত্র!
.
.
#চলবে🍁