সে কি জানে Season 2 ! Part- 14
হুট করে কোথা থেকে রেয়ান এসে কোলে তুলে নেন আমায়। আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে উঠেন….
— মানা করেছিলাম না তোমাকে।তাও বের হলে কেন?তাও আবার এত সাজগোজ।উফফ!মারাত্তক লাগছে তোমাকে।এখন বলতো কি করা যায় তোমার সাথে?
চোখ বড় বড় করে তাকালাম রেয়ানের দিকে।তার কোনো হেলদোল নেই।সে নিজের মতোই হাঁটছে। চোখে-মুখে বিরাজ করেছে এক বিশেষ ধরণের এটিটিউট। আমাকে কোলে নিয়েছেনও সেরকম ভাবে।আচ্ছা কোলে নেওয়ারও কি এটিটিউট থাকে। হয়তো! নাহলে এ মানুষটা সব কিছুতেই এত এটিটিউট থাকে কেন?
ভাবনার মাঝেই আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দেন উনি।আশ্চর্য রকম ভাবে নিজেকে ছোড়ানোর কোনো ধরণের চেষ্টা করি নি আমি।কিন্তু কেন? হয়তো ভাবনার মাঝে এতই ডুবে ছিলাম, যে উনার আমাকে কোলে নেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলাম। যখন ভাবনার ছেদ ঘটলো, তাড়াতাড়ি গাড়ির দরজা খুলতে লাগলাম। কিন্তু ততক্ষনে রেয়ান গাড়িতে বসে গাড়ি লক করে দিয়েছেন। সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে উনি বেশ শান্ত সরে বলে উঠলেন….
— গাড়ি লক করা।এত শক্তি খরচ করে লাভ হবে না।
বিরক্তি যেন মুখের মধ্যে চেপে বসেছে আমার। কিন্তু রেয়ান শান্ত। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই উনি বলে উঠলেন….
— তোমার ফোনটা দাও তো মরুভূমি!
— কেন? আমার ফোন দিয়ে কি করবেন?
— ফোন দিতে বলেছি তোমাকে।
— না দিবো না আমি!
সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালেন রেয়ান। ইতোমধ্যে তার কপালের রগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তাকে এভাবে দেখে কিঞ্চিত ভয় পেলাম আমি। ভদ্র মেয়ের মতো ফোনটা বের করে তার দিকে দিতেই সে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো ফোনটা। ফোন নেওয়ার এক সেকেন্ড পরপরই আবার ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলেন….
— পাসওয়ার্ড কি?
পাসওয়ার্ড বললাম তাকে। সে কি যেন করল আমার ফোন দিয়ে। সবশেষে ফোনটা আমাকে না দিয়ে নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। হতবাক আমি! আমার ফোন নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকালেন কেন? রাগ হলো আমার। ভীষণ রাগ! একজন ডক্টরের অনতত মেনার্স তো থাকে। কিন্তু উনার! উনার সে জিনিসটাও নেই। বেহায়া লোক কোথাকার! নিজের রাগটা একটু কমাতে চেষ্টা করলাম। বড় একটা দম ছেঁড়ে বললাম…..
— আমার ফোন দিন ডক্টর।
— নো!
— মানে কি? আমার ফোন আপনি নিয়েছেন কেন? আবার বলছেন দিবেন না। তাড়াতাড়ি আমার ফোন দিন বলছি।
প্রতিউত্তরে রেয়ান কিছু বললেন না। হুট করে আমার দিকে ঝুঁকে পড়লেন। চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার সীট বেল্ট-টা লাগিয়ে দিলেন। সরে আসার সময় কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন…
— আজকে তোমাকে মরুভূমির মতো হট লাগছে। তারওপর এখানেও অনেক গরম। বুঝতে পারছো আমার কেমন লাগছে? বাইরেও হট ওয়েদার আবার আমার পাশেও একটা হট রমণী বসে আছে। উমম… অস্বস্থি লাগছে আমার।কিছু না করতে পারার জন্যে অস্বস্থি!
সোজা হয়ে বসে পড়েন রেয়ান। কয়েক সেকেন্ড বসে থেকে গাড়ি স্টার্ট দেন উনি। এদিকে আমার করুণ অবস্থা। কানে এখনও রেয়ানের সেই ফিসফিসানো কথাগুলি বেজে উঠছে। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে ফেলছি। রেয়ানের দিকে আড়চোখে একবার তাকালাম। মনে মনে বলে উঠলাম…”মানুষটা আসলেই অসভ্য!”
নিজেকে একটু শান্ত করে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম….
— আমার ফোন দিয়ে আপনি কি করেছিলেন তখন?
আমার দিকে একবার তাকালেন রেয়ান। পরক্ষনেই আবার ড্রাইভিংয়ে মন দিলেন। ধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন….
— তোমার ওই বন্ধুর নাম যেন কি? দিহান নাকি ফিহান? সে যাই হোক, ওকে এসএমএস দিয়েছি। বলেছি যে তুমি ব্যস্ত আছো দেখা করতে পারবে না ওর সাথে।
এবার যেন রাগ সীমা ছাঁড়িয়ে গেছে আমার। জোড়ে জোড়ে কয়েকটা দম নিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলাম….
— আমার ফোন দিন!
— দিব না।
— আমি আপনাকে দিতে বলেছি। কোন সাহেস আপনি আমার পার্মিসন ছাড়া ওকে এসএমএস দিয়েছেন? জানেন ও কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্যে পার্কে।
জবাব দিলেন না রেয়ান। উনার দিকে তাকিয়ে আবার কিছু বলতে গিয়েও আর বললাম না। রেয়ানের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি বেশ রেগে আছেন। এ মুহুর্তে আর একটা শব্দ বের করলে উনি উনার টর্নেডোর মতো রুপ ধারণ করতে দিধা বোধ করবেন না। তাই চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর খেয়াল করলান রেয়ান কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছেন আমায়। রাস্তা-টা কেমন অচেনা অচেনা। ভয়ে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় রেয়ানের ফোন বেজে উঠল। ফোনটা সামনে থাকায় দেখতে পেলাম কে ফোন দিয়েছে। জেনি নামের একটি মেয়ে! তবে ফোন বেশকয়েকবার বেজে উঠার পরও রেয়ান ফোন ধরছেন না। এবার বিরক্ত হচ্ছি আমি। কানের কাছে ভোঁ ভোঁ করে ফোনের রিংটন বেজে উঠছে বারংবার। বিরক্ত নিয়েই রেয়ানকে বললাম….
— ফোন ধরছেন না কেন?
— চুপ থাকো।
গায়ে লাগলো কথাটা আমার। পরেরবার ফোন বাজতেই ছোঁ মেরে ফোনটা হাতে নিয়ে নিলাম। ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে ন্যাকামো ভরা কণ্ঠ ভেসে উঠল….
— জান এতক্ষন লাগে ফোন ধরতে। জানো আমি কত্ত মিস করছিলাম তোমাকে। এই রেয়ান, প্লিজ এক্সেপ্ট মি! আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। সত্যি বলছি তুমি যা বলবে আমি তাই করব।চাইলে রুম….
কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোন আমার হাত থেকে নিয়ে লাইন কেটে দিলেন রেয়ান। পেছনের সীটে ফোনটা ছুঁড়ে মেরে রাগী কণ্ঠে বলে উঠলেন….
— তোমাকে কে বলেছে আমার ফোন রিসিভ করতে। এত সাহস কেন তোমার৷ ধুর! ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।মুডটাই নষ্ট করে দিলে। স্টুপিড ফেলো!
এভাবে আরও কয়েকটা বকাবকি করলেন আমায়। কিন্তু আমি নির্বাক। মাথায় অন্য কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটার অসম্পূর্ণ কথাটার মানে বুঝতে পেরেছি আমি। কতটা অশ্লীল হলে একটা ছেলেকে একটা মেয়ে এগুলো বলতে পারে। ভাবতেই গা শিউরে উঠল আমার।
৪.
দীঘিকে নিয়ে সোফায় বসে আছে আবদ্ধ। সামনেই বসা কামরুল। আর তার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শারমিন। কষ্টে,অভিমানে কান্না পেয়ে যাচ্ছে দীঘির। সে এসেছিলো তার বাবা-মাকে দেখতে।কিন্তু আবদ্ধ কি করছে? তারই সামনে তার বাবাকে মরিচ খাওয়ার শাস্তি দিচ্ছে। ভাবতেই কান্নার ইচ্ছেটা যেন আরও বেড়ে যায়। এদিকে আবদ্ধ বিরক্ত হচ্ছে কামরুলের উপর।সেই কখন বলেছে মরিচ খাওয়া শুরু করতে।কিন্তু উনি এখনও খাওয়া শুরু করছেন না। তাই বেশ তাড়া দিয়েই আবদ্ধ কামরুলকে বলে….
— শ্বশুড়মশাই তাড়াতাড়ি শুরু করেন খাওয়া। এবার কিন্তু আমার বিরক্তি লাগছে।
আবদ্ধের হাত খামচে ধরে দীঘি। আবদ্ধ দীঘির দিকে এক পলক তাকায়। দীঘির কষ্টে তারও কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু সে নিরুপায়। দীঘির হাতের পায়ের ক্ষত গুলো দেখলে ইচ্ছে করে কামরুলকে মেরে ফেলতে। এটা তো সামান্য মরিচ খাওয়া। কতটা নির্দয় বাবা হলে সন্তানকে এভাবে মারতে পারে? হাতের জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে।আবার কিছু জায়গা ফুলে কাঁলচে রঙ ধারণ করেছে। না আর ভাবতে পারছে না আবদ্ধ। হিংস্র হয়ে উঠছে সে। কামরুলকে এখনও মরিচ মুখে না দিতে দেখে ধমকে উঠে আবদ্ধ। আবদ্ধের হাত আরেকটু শক্ত করে ধরে কেঁপে উঠে দীঘি। আর কামরুল! সে তো একটার পর একটা মরিচ মুখে দিচ্ছে। গুণেগুণে দশটা মরিচ খাওয়া শেষ হতেই আবদ্ধ দীঘিকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কামরুল যখন পানির জন্য আহাজারি করছে তখন আবদ্ধ দীঘিকে নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। দীঘি তখনও কাঁদছে। আবদ্ধ থমকে দাঁড়ায়। দীঘির চোখের পানি আলতো করে মুছে বলে উঠে….
— সরি দীঘু! এভাবে কাঁদিস না প্লিজ। আমার যে কষ্ট হচ্ছে।
— আমার বাবাকে আর এভাবে কষ্ট দিয়েন না আবদ্ধ।
চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল আবদ্ধের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল….
— কালকেই লাস্ট। আর দিবো না প্রমিস।
দীঘির কপালে একটা চুমু খেলো আবদ্ধ। গলা থেকে সর বের হচ্ছে না তার। কথাগুলো কেমন যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায়। তবুও ধীর কণ্ঠে বলল….
— দীঘি? আজকে রাতে আবার ছাদে দেখা করতে পারবি? কথা ছিল।
বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই দরজা খুলে বেড়িয়ে পরি গাড়ি থেকে। কয়েক কদম যেতেই রেয়ানের ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনতে পাই।
— আম ওয়ার্নিং ইউ মরুভূমি। ওই ছেলেটার সাথে যেন তোমাকে আর না দেখি। এতে তোমার আর ওই ছেলেটার ভালো হবে না।
আর শুনতে পারলাম না রেয়ানের কথা। সব সময় উনি থ্রেট দেন আমায়। যা শোনার ক্ষমতা এ মুহুর্তে আমার নেই। যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বাসায় ঢুকে পড়লাম আমি। এসেই সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তি চারপাশ দিয়ে ঘের করে ফেলেছে আমায়। এখন একটু ঘুমানোর প্রয়োজন খুব!
.
ঘুম ভাঙ্গতেই বালিশের নিচে মোবাইল খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথায় যে রেখেছি! খুঁজেই পাচ্ছি। দিহানের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। কিনা কি ভাবছে সে আমাকে। পরমুহূর্তেই মনে হলো, ফোন তো রেয়ানের কাছে। আসার সময় ফোন নিতে মনে ছিল না আমার। এখন দিহানের সাথে কথা বলব কিভাবে? ভাবতেই মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। হঠাৎ বারান্দা থেকে আওয়াজ আসতেই সামনে তাকালাম আমি। বারান্দার দরজার সাথে হেলান দিয়ে এক হাত প্যান্টের পকেটে রেখে অন্য হাতে আমার মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেয়ান। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন…
— ফোন দিতে আসলাম। তা কি করছিলে?
উত্তর দিলাম না। তার কাছে গিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলাম। আমি সোফায় বসতেই উনি বিছানায় গিয়ে বসলেন। আর বললেন….
— খবরদার ওই ছেলেকে ফোন দিবে না মরুভূমি! ফোন কিন্তু জীবনের জন্য নিয়ে ফেলবো।
বলতে বলতেই উনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন।একটা লম্বা শ্বাস টেনে বললেন….
— তোমার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ তোমার বিছানায় লেপ্টে আছে মরভূমি। এই বিছানায় খুব আরামে ঘুম হবে আমার। আই সোয়ের! যদি পারতাম আমার বিছানাটা তোমাকে দিয়ে তোমার বিছানাটা আমি নিয়ে যেতাম।
কি বলব বুঝতে পারছি না আমি। আসলে কি বলা উচিত আমার? আমি যখন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম তখনই হুট করে রেয়ান দাঁড়িয়ে যান। শান্ত সরে বলে উঠেন….
— নিজের খেয়াল রেখো।
ব্যস এতটুকু বলেই সে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে যায়।আর আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম মাত্র!
.
.
#চলবে🍁