ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 31

আমি আজকে সারা বাসায় ঘুরছি। আকাশী আপুকে নিয়ে আঁধার ভাইয়া ঘরে চলে গেছে আর অর্নিল ঘরে রয়েছে। সুমি বলল অর্নিলের পিঠে একটু মেসেজ দিয়ে দেবে বা আইসবাগ দিয়ে সেক দিয়ে দেবে তাই সেটা একটু দেখতে যাচ্ছি। আমার তো করার কিছুই নেই। সুমির রুমের সামনে আসতেই দেখলাম।
অর্নিল– আহহহহ!! সুমি লাগছে আমার।
ইসমি– লাগুক! আরো বেশি বেশি লাগুক!
অর্নিল– তুমি আমার ব্যাথা কমাতে এসেছো নাকি বাড়াতে এসেছো??
ইসমি– অবশ্যই বাড়াতে।
অর্নিল এতক্ষণ উপুর হয়ে শুয়ে ছিলো টি শার্ট পরেই। আর সুমি ওর পিঠে ম্যাসাজ করে দিচ্ছিল। অর্নিল সুমির কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে পরলো।
অর্নিল– তুমি আমার লগে এমন করো ক্যান?? আমার ভাইয়ের বউগুলা তো কতো শান্ত শিষ্ট নিরীহ আর তুমি..
ইসমি– ধানি লঙ্কা। তাই তো??
অর্নিল– হুহ। তুমি ওদের মতো ভালো ব্যবহার করলে তোমাকেও একটা মিষ্টি নাম দিতাম।
ইসমি– তোমার ভাবিরা যখন ভালো যাও তাদের কাছেই যাও। আমি করবো না ভালো ব্যবহার।
অর্নিল– করো না আমার সাথে ভালো ব্যবহার, করা উচিত ও নয়। কে আসতে বলেছিল তখন তোমাকে ওখানে?? তুমি না আসলে তো আমি ওদের মারতাম না। মেরে ফেলতো ওরা আমাকে এটাই বেটার ছিলো।
ইসমি– নীলললল! কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি??
অর্নিল– আই নৌ তুমি এখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারনি সো বেকার এই ড্রামা টা করো না। আমি উঠছি।
অর্নিল উঠতে গেলেই সুমি অর্নিল কে ধরে আবার বসিয়ে দেয় আর অর্নিল হাল্কা কুঁকীয়ে ওঠে।
অর্নিল– আহহহহ!!

ইসমি– কোথায় লাগলো?? কে উঠতে বলেছিল তোমায়?? ডক্টর কিন্তু তোমাকে ম্যাসাজ নিতে বলেছিল আর তু..
অর্নিল– ছাড়ো আমায় ঠিক আছি আমি। ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে…
ইসমি– চুপপ!! নিজে যখন ফাজলামি করো তখন কোনো দোষ নেই তাই না?? এখন চুপচাপ শার্ট খোলো।
অর্নিল– কিইইইই!! শ..শা..শার্ট কেনো??
ইসমি– তোমার ইজ্জত লুটবো তাই!!
আমি ওখান থেকে সরে এলাম, এই দুটোর দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া চলতেই থাকবে। আর যাই করুক সুমি জানো আর অর্নিল কে কোনো ভাবে কষ্ট না দেয়। বেচারা অনেক ভালোবাসে ওকে।
অর্নিল– শার্ট খুলবো কেনো বলবে তো??
ইসমি– আইসব্যাগ এনেছি সেটা দিয়ে সেক দেবো গর্ধব।
অর্নিল– লাগবে না। তুমি এখন যাও আমায় একা থাকতে দাও। (কড়া গলায়)
ইসমি কিছু না বলে কিছুক্ষণ চুপ করে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে রইলো, অর্নিল বেশ রেগে রয়েছে, সাধারণত অর্নিল কে এভাবে দেখা যায় না। সব সময় হাসি খুশি থাকে কিন্তু আজ বেশ আপসেট। ইসমি একটা নিশ্বাস ছেড়ে অর্নিলের শার্টের বোতামে হাত দিলো।
অর্নিল– হোয়াট?? যেতে বললাম ত….সুমি! সুমি হোয়াট আর ইউ ডুয়িং??
ইসমি– বলেছিলাম শার্ট খুলতে খোলোনি তাই নিজেই খুলছি। আমি এতটাও খারাপ না অর্নিল যতো টা তুমি ভাবো। (ছল ছল চোখে)
অর্নিল– এভাবে রাতের বেলায় তুমি আমার শার্ট খুলছো। আমি কন্ট্রোল না করতে পারলে কিন্তু তোমার দোষ।
ইসমি ঠাস! করে একটা চাপড় মারলো অর্নিলের হাতে।
ইসমি– ফাজিল! উপুর হয়ে শু…
অর্নিল ইসমির কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো, কপালের থেকে চুলগুলো সরিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই ইসমি কেঁপে উঠল।
ইসমি– নীল! ছ..ছা..ছাড়ো দরজা খোলা আছে।
অর্নিল– আমি বারণ করেছিলাম শার্ট খুলতে, এখন আই ক্যান্ট কন্ট্রোল।
অর্নিলের চোখে আজকে ইসমি কে কাছে পাওয়ার একটা নেশা কাজ করছে, অর্নিল ইসমির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতেই ইসমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় আর অর্নিলের হাত খামচে ধরে। অর্নিল ইসমির ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছোঁয়াতেই ইসমি নিজের হাতে থাকা আইসব্যাগ টা অর্নিলের হাতে চেপে ধরলো আর অর্নিল ছিটকে দুরে সরে গেলো, এ দেখে ইসমি হেসেই চলেছে।
অর্নিল– এবার থেকে ধানি লঙ্কা না আইসব্যাগ বলে ডাকবো তোমায়। ধ্যাত! রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে দিলে।
ইসমি– হিহিহিহি। তুমি শোবে কি না বলো।
অর্নিল– হুহ! শুচ্ছি।
অর্নিল উপুর হয়ে শুতেই ইসমি একটু ঘাবড়ে গেলো। অর্নিলের পিঠে স্টিকের বারি গুলো স্পষ্ট লাল লাল হয়ে ফুটে উঠেছে। ইসমি সেই দাগ গুলোর মধ্যে একবার নিজের হাত বুলালো তারপর আস্তে করে ওটার উপর আইসব্যাগ দিতেই অর্নিল একটু কুঁকীয়ে উঠলো “আহ” বলে। ইসমি অর্নিলের শুয়ে থাকা অবস্থায় কাঁধে বাম হাত রেখে ডান হাত দিয়ে আস্তে আস্তে সেক দিতে লাগলো। অর্নিল ইসমির বাম হাতটার উপর নিজের হাত রাখলো।
আমি অর্নিলের ঘরের সামনে থেকে এসে আঁধার ভাইয়ার ঘরের দিকে এলাম।
শবনম– আঁধার প্লিজ!! এবার কিন্তু আমার বিরক্ত লাগছে।
আঁধার– এটুকুতেই?? এখনো তোমাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হবে মেরি জান।
শবনম– না না না। আমি এতো কিছু মোটেও খাবো না। কি বিচ্ছিরি খেতে এই ওষুধ গুলো। ছিইইইই।
আঁধার– চুপচাপ খাও নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
শবনম– খাবো না, খাবো না, খাবো না।
আঁধার– খাবে না তো??

শবনম– নাআআ। আঁধার তুমি যদি আমাকে এসব খাওয়াও তো আমি তোমাকে কি কি খাওয়াবো তার কোনো আইডিয়া নেই তোমার।
আঁধার– কি খাওয়াবে??
শবনম– টিকটিকির রেজালা, শুয়োপোকার কাবাব, আর…
আঁধার– তেলাপোকার দো-পেঁয়াজা, জোঁকের ফ্রাই, ইঁদুরের সুপ, কেঁচোর নুডলস…
শবনম– ওষুধ খাবো। (ঢোঁক গিলে)
আঁধার– গুড গার্ল।
শবনম– (মনে মনে– খচ্চর ব্যাটা, এ তো দেখি আমার থেকেও দুই কাঠি উপরে যায়। অ্যাঅ্যাঅ্যা, এখন এইসব আজে বাজে ওষুধ খেতে হবে। আল্লাহ!! বাঁচাও আমায়।)
আঁধার– বাঁচাবে না। তোমাকে আজকে আল্লাহ বাঁচাবে না তার কারণ ইটস মি মেরি জান। তুমি যেই সব রেসিপির কথা বললে এগুলো আমাকে ছোটো বেলায় বলেছিলে যার ফলে আমার হালাট খারাপ হয়ে গিয়েছিল আর তুমি ওষুধ জোর করে খাইয়ে ছিলে। সো বদলা আমি নেবোই ঠিক করেছিলাম আর দেখো! নিয়েও নিলাম।
শবনম– তোমার মনে আছে এখনো??
আঁধার– হ্যাঁ না মনে থেকে থাকা যায়??
শবনম– হিহিহিহি।
আকাশি আপু হাসছে আর আঁধার ভাইয়া আকাশি আপুর দিকে তাকিয়ে আছে, আমি আস্তে আস্তে পিছিয়ে এলাম ওখান থেকে। আমি পিছন দিকে হাঁটছি ঠিক সে সময় একজনের বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝেছি এটা আর কেউ নয় আমার “তুফান খান”। আমি ওনার দিকে ফিরতেই উনি আমায় কোলে তুলে নিলেন।
আঁধার– শবনম!
শবনম– হমম বলো।
আঁধার– (শবনমের হাত নিজের হাতে নিয়ে) আই লাভ ইউ আ লট!! আমি তোমাকে কোনো মতেই হারাতে চাইনা।
শবনম– আই লাভ ইউ টু আঁধার। তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো?? অন্ধকার না থাকলে যেমন নক্ষত্রের আলোর কোনো অস্তিত্ব নেই ঠিক তেমন তোমাকে ছাড়া আমার ও কোনো অস্তিত্ব নেই।
আঁধার আস্তে আস্তে শবনমের দিকে এগিয়ে যেতেই শবনম মুখ নীচে নামিয়ে নিলো, আঁধার শবনমের থুতনি ধরে উপরে তুলে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো আর আস্তে আস্তে শবনমের ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।
মীরা– এই আপনি আমাকে এভাবে কোলে নিলেন কেনো??
আমান– আবার আপনি??
মীরা– উপসস! স্যরি! (জিভ কেটে) তুমি আমাকে কোলে নিলে কেনো?? আমি কি হাঁটতে পারিনা নাকি??
আমান– আমার বউ আমি যা খুশি করবো আর তুমি সেটা মানতে বাধ্য মিসেস খান।
মীরা– হুহ! (ওর গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলাম।)
রোজ (দিয়া)– আচ্ছা মেঘরোদ্দুর! তুমি কীভাবে জানলে আমি এইখানে??
মেঘরোদ্দুর(মেঘ)– না জেনে কি উপায় আছে বলো?? তুই যেখানে থাকবি আমিও সেখানেই থাকবো। যেমন ছোটোবেলা থেকে এক মুহুর্ত তোকে কি একা ছেড়েছি যে আজ ছাড়বো??

রোজ– হিহিহি। আমার মেঘরোদ্দুর অলয়েস আমার সাথেই থাকবে।
মেঘ– হমম (রোজের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো)
আমান– দেখেছো আমার বোনটাও রোম্যান্স করছে আর তু…
আমানের কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর গালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। আমান অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে আর আমি কিছু না বকে লজ্জায় মুখ গুঁজলাম ওর বুকে। আমরা যখন ঘরের দিকে আসছিলাম তখন ড্রয়িং রুমে বসে মেঘ আর দিয়া গল্প করছিল। সে সময়ই কথাটা শুনলাম।
আমান আমাকে ঘরে নিয়ে এসে বেডে বসিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই আমি আমানের হাত টেনে ধরলাম।
আমান– কি হলো??
মীরা– কথা আছে তোমার সাথে।
আমান– কি কথা??
মীরা– আমার মনে এখনো অনেক প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে।
আমান– আচ্ছা বলো।
মীরা– আমান তুর্য আর নীতার ব্যাপারটা বুঝলাম না। আর নীতা কীভাবে তোমাকে আমার খবর দিতো?? ও তো তোমাকে চিনতই না। এছাড়া তুর্যের আমার সাথে বন্ধুত্বটাকে নীতা মেনে নিয়েছিল নাকি সেটাও একটা প্লান??
আমান– এতো গুলো প্রশ্ন?? তাও আবার একসাথে??
মীরা– হমম জানতে চাই। আর তুমি আমাকে জানাবে।
আমান– ওকে দ্যান শোনো প্রথম থেকে।
আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, নীতা যে আমাকে তোমার খবর দিতো এটা আমি জানতাম না। নীতা কে যখন এ বাসা থেকে বের করলাম তখন ওকে আমার কাছে রেখেছিলাম, অনেক টর্চার করার পরেও ও স্বীকার করেনি কার কথায় ও সম্পত্তি নিতে এসেছিল, বলেছিল মরে যাবে কিন্তু তার নাম নেবে না। তাই আমি বাধ্য হয়ে তোমার ফুপি কে ধরে আনি, ওনাকে শাস্তিও দেওয়ার ছিলো আবার কথাগুলো জানারও ছিলো। ওনাকে শাস্তি দিতে না দিতেই উনি আমাকে আর অর্নিল কে বলে দেন যে নীতা ওনাদের নিজের মেয়ে না। নীলাদ্রি বলে একটা ছেলের কাছে তোমাকে বিক্রি করতে চেয়েছিল, বিয়ে দিতেও চেয়েছিল বাট তুমি না করে দিয়েছো আর সে ও নাকি বলেছে সে বিয়ে করবে না। বাট তোমার ফুপি কে টাকা টা ও দিয়ে দিয়েছিল যেটা তুমি জানতেই না। তোমার ফুপিও জানতো যে ছেলেগুলো কে মারা হতো তাদের কে নীলাদ্রি মেরেছে। কারণ এমনটাই তোমার ফুপি আমাকে বলেছে।
মীরা– কিন্তু তাদের তো তুমি মেরেছো তাইনা??
আমান– হ্যাঁ আমি মেরেছি তাদেরকে আর সেই সময়ই একদিন নীতা আমাকে দেখে ফেলে কিন্তু সেটা আমি জানতাম না যখন ফুপির কথাগুলো আমি তার কাছে গিয়ে বললাম অর্থাৎ নীলাদ্রির কথা বললাম তখন আস্তে আস্তে আমাকে সবটা বলতে শুরু করল তখন ও আমাকে বলেছিল যে ও একদিন আমাকে দেখে ফেলে ছেলেগুলোকে মারতে আর সেখানে দেখেই আমাকে চিনে ফেলে যে আমি আমান খান। ওই কথাটা ও তূর্যকে বলে, তুর্য তখন সঙ্গে সঙ্গে বলে দেয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি কারণ তুর্য এটা অনেক আগে থেকেই জানতো। তুমি আমার জীবনে আসার পরেই তুর্য আমার জীবন থেকে হঠাৎ করে চলে যায়।
মীরা– আমার সব ঘেটে যাচ্ছে আমান।
আমান– বোঝাচ্ছি। ভাই তোমাকে যেমনটা বলেছে যে তূর্যকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছিল ওর আম্মুকে নিয়ে, একচুয়ালি ঠিক সেই সময় তুর্য আমার জীবন থেকে গায়েব হয়ে যায় কিন্তু যখন গায়েব হয় তার আগেই আমি তোমাকে দেখি আর ওকে গিয়ে বলি যে আই অ্যাম ইন লাভ। নীতাকে যখন আমি জিজ্ঞেস করি যে ওর মা বলেছে যে ও তাদের নিজের সন্তান না এবং নীলাদ্রির সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তখন ও আমাকে বলে যে নীলাদ্রি ওকে পাঠিয়েছে। আমার সব সম্পত্তির জন্য। নীলাদ্রি তূর্যকে ব্ল্যাকমেল করেছিল যদি এই কাজটা না করে তাহলে ওর আম্মুকে মেরে ফেলবে। আর ও তূর্যকে ভীষণ ভালবাসে তাই তূর্যের কথা শুনে ও নীলাদ্রির কথায় রাজি হয়ে যায় আর এখানে আসে সম্পত্তির কাগজে সাইন করানোর জন্য। তূর্য আমার জীবন থেকে সরে গিয়ে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে সেটা নীলাদ্রির কথা অনুযায়ী। ও যখন তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল তখনই ও একটা বড় শক পায় কারণ তুমি সেই মেয়ে যাকে আমি ভালোবাসি। ও কিছু বুঝতে পারিনি তখন শুধু চুপচাপ নীলাদ্রির কোথায় চলছিল।
মীরা– তারমানে আমি ঠিকই ধরেছিলাম আঁধার ভাইয়াই তুর্য কে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তুর্য কি জানত না আঁধার ভাইয়া তোমার ভাই??
আমান– না মীরু। আমি কোনদিনও ভাইয়ের ব্যাপারে কারো সাথে আলোচনা করি নি। তুর্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও ওকে কোনদিন বলা হয়নি যে আমার বড় ভাই আছে। নীতার কথা শুনে আমার মাথাটাই ঘুইরা গেছিলো কে নীলাদ্রি যে আমার সম্পত্তি চায় আমি ভেবে নিয়েছিলাম হয়তো কোন আমার শত্রু যার লোভ আমার সম্পত্তি প্রতি আছে। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তোমার সাথে তার আগেই তো অর্নিলা রেশমীকে নিয়ে আমরা দুজন আমাদের বাগান বাড়িতে গেলাম আর তারপর আকাশে এল একের পর এক ঘটনা ঘটতে লাগল আর আমার তোমার সাথে এই নিয়ে কোনো কথা হলো না। আমি যদি তুর্য সাথে আগে কথা বলতাম তাহলে হয়তো কিছু জানতে পারতাম না কারণ তূর্য বলতো না আমাকে নীলাদ্রির পরিচয় ও এড়িয়ে যেত কারন নীলাদ্রির এটা দারুন ছিল তাই কোনভাবেই আমি জানতে পারিনি নিলাদ্রি আমার ভাই।
মীরা– হ্যাঁ এবার সবটা বুঝেছি। কিন্তু আমান তুমি এভাবে কেন ছেলেগুলোকে মারতে?? শুধুমাত্র টিজ আর ডিস্টার্ব এর জন্য এভাবে মেরে ফেলতে?? তাহলে তো তুমিও একপ্রকার খুনি হয়ে গেলে, ক্রিমিনাল হয়ে গেলে।
আমান– আমি সব ছেলেদের মার তাম না জাস্ট তাদেরকেই মার তাম যারা মেয়েদের পাচার করত।
মীরা– পাচার?? (অবাক হয়ে)
আমান– হ্যাঁ পাচার। আমি জানি তুমি হয়তো ভাবছো যে আমি আর অর্নিল অনেকগুলো নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলেছি কিন্তু সেটা একদমই না। আমরা তাদেরকেই মারতাম যাদেরকে মারার অর্ডার থাকতো অর্থাৎ এনকাউন্টার। আমি আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়া সব মাফিয়ারা খারাপ হয় না আমি শুধুমাত্র তাদেরকেই আটক করতাম যারা ড্রাগস বিক্রি করতো। এখনকার ১৫ থেকে ১৬ বছরের বাচ্চা গুলোকে ওরা ভুল বুঝিয়ে ড্রাগস মিশ্রিত খাবার খাওয়াত। তুমি তো জানো স্কুলের বাইরে অনেক ধরনের আইসক্রিম ট্রফি অনেক কিছু খাবার বসে। ওরা সেগুলোর মধ্যে ড্রাগস মিশিয়ে দিতে অনেক সময়। এছাড়া বাইরে বাইরে বিক্রি করতো। তাদেরকেই আমি শুধু আটক করতাম আর অর্নিল আমার হয়ে কাজ করত, যেসব ক্রিমিনালদের সিবিআই ধরতে পারছে না কিন্তু তাদেরকে এনকাউন্টার করার অর্ডার আছে, তাদেরকে অর্নিল শুট করতো।
মীরা– সিবিআই কেন তাদেরকে ধরতে পারতো আর আন্ডারকভার এজেন্ট কমান্ডার এদের কি কাজ??
আমান– এমন অনেক ক্রিমিনাল আছে যারা সমাজে আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু আমরা ধরতে পারছিনা তুমি জানো আমি কেন তোমাদের ভার্সিটিতে মেম্বারশিপ নিয়েছি ট্রাস্টির??
মীরা– কেন??
আমান– তোমাদের ভার্সিটি থেকে যেই মেয়েরা বের হতো তার মধ্যে অনেক মেয়ে গায়েব হয়ে গেছিল এই খবরটা পেয়েছিলে??
মীরা– হ্যাঁ।
আমান– ওদের সবাইকে পাচার করা হচ্ছিলো।
মীরা– কিইইইই??
আমান– হ্যাঁ। তোমার ভার্সিটি, সুমির ভার্সিটি আরো কয়েকটা ভার্সিটি থেকে এরম ভাবে মেয়ে পাচার হচ্ছিল কিংবা ছেলেদের উল্টো পাল্টা বুঝিয়ে ড্রাগস বিক্রি করা হচ্ছিলো কাইন্ড অফ আ র‌্যাকেট। আমরা জাস্ট এদেরকেই ধরে শাস্তি দিই, কোনো নিরীহ মানুষ কে মারি না। আর যদি আমরা খুনি হয়ে থাকি, ক্রিমিনাল হয়ে থাকি তাহলে পুলিশ অফিসাররা কি?? ওরাও তো ক্রিমিনালদের হত্যা করে। ওদের কে যদি মেনে নিতে পারো তাহলে আমাদের কেন নয়?? আমরা তো ওরা যেটা পারে না সেটাই করে দেখাই।
মীরা– আমি জানি আমান! এই জন্যই তো আমি তোমাকে ভুল বুঝিনি। আমি জানতাম এসবের পিছনে কোনো না কোনো কারণ আছে। তুমি কোনো কারণ ছাড়া কিছু করতেই পারো না।
আমান– হ্যাঁ সেই সবই বুঝতে যখন আগে কেনো বলনি আমায় যে আমাকে ভালোবাসো??
মীরা– ভয় পেতাম। আমি কি জানতাম নাকি আমার বরটাই আমাকে রক্ষা করতো?? এছাড়া ফুপি সবসময় ভয় দেখাত নীলাদ্রি কে জানিয়ে দেবে তোমায় ব্যাপারে আমি ওকে ভয় পাই দেখে। পরে তো আঁধার ভাইয়া জানালো ফুপি সব জানতো। আর আজকেই আমি তোমাকে সবটা জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই তো…
আমান– বাদ দাও। যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে, ইউ নৌ তোমাকে তো আমি প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
মীরা– হুহ! ঢঙ!
আমান– মোটেও না। বাতাসে তোমার চুলগুলো উড়ছিল, তোমার ওড়না উড়ছিল আর তুমি ব্যস্ত ছিলে তোমার কাগজ গোছাতে। সিনেমা হলে নিশ্চই তোমার ওড়না টা আমার মুখে এসে পড়ত বা আমার ঘড়িতে আটকে যেতো তাই না??
মীরা– হিহিহিহি। হমম।
আমান– (আমাকে হুট করে কাছে টেনে) আই লাভ ইউ মীরু!
মীরা– আই লাভ ইউ টু! (ওর নাকে চুমু দিয়ে)
আমান– উমম, নাকে দিলে হবে না, অন্য জায়গায় দিতে হবে।
মীরা– ঝাড়ু চিনো?? 😒
আমান– ডোন্ট আন্ডাররেস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ দ্য আমান খান।
মীরা– ঝাড়ু! 😉
আমান– 😣😖
মীরা– 😂🤣
আমান আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আজ দুজন দুজনকে ভালোবেসে, মনের কথা নিবেদন করে কাছে টেনে নিয়েছি।
১ মাস পর…………………………
আজ খান ভিলা হৈ হৈ করছে, অনেক লোকের সমাগম বেশিরভাগ সব ডেকোরেশনের লোক কেউ ফুল দিয়ে সাজাতে কেউ লাইক দিয়ে সাজাচ্ছে তো কেউ গেট সাজাচ্ছে। আর এইসব কিছু নাচানাচি লাফালাফি করে সামলাচ্ছে তিন খান খান ভাইয়ের একমাত্র বোন দিয়া। তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে তার মেঘ রোদ্দুর। আজ তিন খানের বিয়ে অর্থাৎ আঁধার খান, আমান খান আর অর্নিল খান। দিয়ার বিয়ে নয় তার কারণ দিয়া এখন অনেকটা ছোট মাত্র কুড়ি বছর বয়স তিন ভাই মিলে ঠিক করেছে বিয়ে আর বিয়ে তিন ভাই মিলে হৈ হুল্লোর করে দেবে এখন দিয়া মজা করুক ওদের বিয়েতে। দিয়া তো এই প্রস্তাবে একলাফে রাজি কিন্তু তুর্য আর নীতা নেই। তূর্যর আম্মুর ট্রিটমেন্টের জন্য আঁধার ওদেরকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে, ওর আম্মুর সিচুয়েশন ক্রিটিক্যাল তাই।
[ কেউ ভাববেন না তূর্য আর নীতা লিড ক্যারেক্টার। এখানে মেইন ক্যারেক্টার গুলি হলো আঁধার শবনম, অর্নিল ইসমি আর মেঘ রোজ, আর লিড রোল করছে আমান মীরা। ওদেরকে নিয়েই ঘটনা ]
কাজী এসে তিন ভাইয়ের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আঁধার আর অর্নিলের সাথে সাথে ওদের মা আমানেরও বিয়ে দিয়ে দেয়। আঁধার আর অর্নিল ও জোর করে কারণ ছোটবেলা থেকেই ওদের ইচ্ছে ওরা তিন ভাই একসাথে বিয়ে করবে। বিয়ে শেষ হতে না হতেই দিয়ার বায়না শুরু হলো।
দিয়া– এই যে তিন নবাবপুত্র। বিয়ে শেষ, তাই বলে কি হৈ হুল্লড় শেষ নাকি??
অর্নিল– কে না করেছে তোকে হৈ হুল্লড় করতে?? সারাক্ষণ তো ক্যাঁ ক্যাঁ করিস।
দিয়া– শোন আজ তোর বিয়ে, আমাকে বাধ্য করিস না মুখ খোলাতে।
আঁধার– আচ্ছা, থাম। তোর মতলব টা কি রে??
আমান– নিশ্চই এমন কোনো মতলব যাতে আমাদের ওয়াট লেগে যাবে।
দিয়া– হুহ! গান গাইতে হবে।
আঁধার, আমান এবং অর্নিল– হোয়াটটটট??
দিয়া– বাপ রে, আস্তে চিল্লাও। ভুল কি বললাম?? মেঘরোদ্দুর!! ঠিক বলেছি না আমি??
মেঘ– একদম ঠিক।
অর্নিল– আব্বে বউয়ের চামচা, তোরে হাতে পাইলে মাইরা লমু।
দিয়া– কিইইইই??
আঁধার– থাম মা আমার।
দিয়া– গান গাইলে তবেই থামবো। আর মেঘরোদ্দুর ও গাইবে।
হঠাৎই সব লাইট অফ হয়ে গেল আমি আর আঁকাশি আপু একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছি হঠাৎ করে এরকম লাইট অফ হয়ে গেল কেন আর আমানইবা কোথায়?? হঠাৎ করে একজনের উপর স্পটলাইট বলল আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে আর তখনই গান শুরু হলো।
🎶তুমসে হি মিলকার তো,
দিল ধারাকতা হেইন।🎶
(আমান আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, আমার হাত নিজের বুকের বাম পাশে রেখে গাইলো)
🎶তুম সানসো জেইসে হো,
অ্যাসা লাগতা হেইন।🎶
(আঁধার ভাইয়া আকাশি আপুর হাত মুখের সামনে নিয়ে গাইলো)
🎶পেহলি দাফা জো হোনে লাগা হেইন,
পেহলে হুয়া না কাভি।🎶
(অর্নিল সুমি কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো)
🎶মেহসুস দিল নে জো ভি কিয়া হেইন
লাফজোন মেইন কেহ দুন আভি।🎶
(মেঘ পিছন থেকে দিয়ার কানে কানে গাইলো)
🎶প্যায়ার হো, যাব প্যায়ার হো।🎶 (আমান)
🎶হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (আঁধার)
🎶প্যায়ার হো, বেসুমার হো।🎶 (অর্নিল)
🎶হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (মেঘ)
🎶তুম জো নাহি থে সাথ তোহ,
তানহা সা থা দিল কা সাফার।🎶
(ইসমি অর্নিলের বুকে মাথা রেখে গাইলো)
🎶বে-খাব হি শোতি রাহি,
জাগতি রাহি মেরি নাজার।🎶
(দিয়া মেঘের দিকে ঘুরে মেঘের গলা জড়িয়ে গাইলো)
🎶আ পাস মেরে,
পালকোন পে রাখ দুন,
জিতনে সাপ্নে হেইন সাভি।🎶
(ইসমি সরে যেতে চাইলে অর্নিল ইসমি কে কাছে চোখে ঠোঁট ছুঁইয়ে গাইলো)
🎶হঁঠোন পে মেরে,
খুলনে লাগি হেইন,
খোয়াইস থি দিল মেইন দাবি।🎶
(মেঘ দিয়াড় কপালে কপাল ঠেকিয়ে গাইলো)
🎶প্যায়ার হো, যাব প্যায়ার হো।
হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (অর্নিল & ইসমি)
(অর্নিল ইসমির কোমরে এক হাত জড়িয়ে রেখেছে, ইসমির এক হাত অর্নিলের কাঁধে, আরেকহাত অর্নিলের হাতে আবদ্ধ)
🎶প্যায়ার হো, বেসুমার হো।
হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (মেঘ & দিয়া)
(মেঘ দু-হাত দিয়ে দিয়ার কোমর জড়িয়ে আছে আর দিয়া মেঘের গলা)
🎶তুমপে রুকে,
তুমসে চালে,
লামহে মেরে আব তোহ ইয়াহান।🎶
(আকাশি আপু আঁধার ভাইয়ার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আঁধার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
🎶রাহেন মেরি,
তুমপে থামি,
আব হেইন মুঝে জানা কাহা।🎶
(আমানের পিছন থেকে বেরিয়ে, আমানের কাছে গিয়ে)
🎶তুম বিন চালুন তো
কাদমো সে মেরে
ইয়ে রুঠ যায়ে জামিন।🎶
(আমান আমার দু-হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসে গাইলেন)
🎶আব জিন্দেগি মেইন,
কুছ হো না পার,
ইক বাত হেইন লাজমি।🎶
(আঁধার ভাইয়া আকাশি আপুর এক হাত ধরে ঘুরিয়ে পিছন দিক করে নিজের সাথে মিশিয়ে গাইলেন)
🎶প্যায়ার হো, যাব প্যায়ার হো।
হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (আমান & মীরা)
(আমান আমাকে লম্বা করে কোলে তুলে নিলেন)
🎶প্যায়ার হো, বেসুমার হো।
হার বার হো, তুমসে হি।🎶 (আঁধার & শবনম)
(আঁধার ভাইয়া আকাশি আপুর কাঁধে মাথা রেখে রয়েছেন)