ও আমায় ভালোবাসেনি

ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 05

সেপ্টেম্বরের আটাশ তারিখ বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে ।
আজ হলো একুশ৷ মিথির থেকে বেশি এক্সাইটমেন্ট শব্দ’র কাজ করছে । ও ফোন দিয়ে পাগল করে তুলছে শপিংয়ের জন্য । এই সপ্তাহে যেন একটু ব্যাস্ততা বেড়েছে মিথির ।
অক্টোবরে একটা বড় প্রজেক্ট আছে । নতুন কাপড় লঞ্চ হবে এবং দীর্ঘ একমাস ব্যাপী এইগুলির ওপর ফটোশূট হবে । বিভিন্ন মডেলের সাথে কন্ট্র্যাক্ট করে শিডিউল দেয়া হচ্ছে সেই অনুযায়ী সম্ভাব্য আউটফিটগুলো রেডি করে রাখতে হচ্ছে এদের ।
মারজুকের মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া আসে আর সাথেসাথে ডাক পড়ে মিথির । রাত হোক দিন হোক একডাকে চলে যেতে হয় একদম গাধার মতো খাটুনি খাটতে হচ্ছে ।
এখন তার মনে হচ্ছে লেখাপড়ার মধ্যে থাকা শত আরাম এই প্রফেশনাল লাইনের থেকে ।
আজ সকালে না খেয়ে বেরিয়েছিলো ও , অর্ধেক পথ আসার পর মারজুক কল করে না করে দিয়েছে । এখন কাজ হবে সন্ধ্যায় ।
তাই আবার বাসায় ফেরত যাচ্ছে মিথি , প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে আর এই জ্যামে বসে থাকতে থাকতে মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে ।
খুব ভাবনা চিন্তা করে ও সিএনজি থেকে নেমে পড়লো , ভাড়া হাফ দিয়ে ভাবলো এখনই কোনো ক্যাফেতে গিয়ে বসবে ।
ঘড়িতে সময় এগারোটা মোটামুটি সব ওপেন হয়েছে ।

ও গুগল ম্যাপে দেখে নিলো আশেপাশে কোনো ক্যাফে আছে কি না । ডিরেকশন অনুযায়ী ধীর পায়ে এগুচ্ছে ।
কাছাকাছি আসতেই হাতে থাকা সেলফোন বেঁজে উঠল স্ক্রিনে শব্দ’র নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো তার । এই লোক দেখি যখন তখন ফোন দেয় এ আসলেই আর্মি অফিসার নাকি ভুজুংভাজুং বোঝায় এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ মিথির ।
রিসিভ করে সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে_
— আচ্ছা আপনি আসলেই ফোর্সে আছেন তো? নাকি ভুজুংভাজুং দিচ্ছেন । নাকি কোনো অফিসারের ড্রাইভার? সত্যিটা বলেন তো ।
— মানে? কি বলছো এইসব? তোমার কি কাজের চাপে মাথা খারাপ হয়ে গেছে ডিয়ার?
— আমার মাথা ঠিকই আছে । আপনি ভুজুংভাজুং দেয়ার চেষ্টা করছেন আমার মনে হচ্ছে ।
— তো এতদিন পর তোমার হঠাৎ কেনো মনে হলো?
— এই যে আপনি আমাকে যখন তখন ফোন করে ফেলেন । পুলিশ অফিসারদের না’হয় এই সুযোগ থাকে কিন্তু আপনাদের তো থাকার কথা না । আমি ড্যাম শিওর আপনি অফিসার না , হয় ড্রাইভার নয়তো..
— নয়তো কি দারোয়ান?
— হ্যাঁ তাও হতে পারেন ।
— আচ্ছা ঐ দু’টো প্রফেশন বুঝি আমাকে স্যুট করে?
— মিথ্যা কথা বলে লাভ নাই যদিও কোনো প্রফেশনই খারাপ না বাট আপনাকে আসলে ঐ প্রফেশন তো মানাবে না । আপনি একটু বেশীই হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং ।
— শুকরিয়া জনাবা এত প্রশংসা করার জন্য তবে আপনাকে বলে রাখি আজ শুক্রবার আমি বাসায় আছি এবং আমাদের ফোর্সে বিভিন্ন ইউনিট রয়েছে । আমরা একেকজন একেক কাজে নিয়োজিত এন্ড…
— হয়েছে থাক থাক এই ব্যাপারগুলো এখন বুঝাতে হবে না । এমনিতেই আমি প্যারায় আছি । আপনি বুঝতে পারছেন আজ শুক্রবার বাট আমার মনে নেই ।
— তুমি তো ঘাসে মুখ , মস্তিষ্ক দিয়ে চলো তাই দিন মাস , হবু জামাই কারো দিকে তোমার নজর নেই ।
— আরে না বাঙালি বাবু আমি আসলেই খুব প্যারায় আছি গো । আজ সাতসকালে বস ডেকে পাঠিয়েছেন অর্ধেক রাস্তায় এসে কল দিয়ে বললেন থাক আসতে হবে না । মানে সিরিয়াসলি? আমি না খেয়ে বেরিয়েছিলাম ।
— আহারে তুমি আসলেই কষ্টে আছো । এখন কোথায় তা’হলে?
— একটা ক্যাফেতে বসলাম মাত্র । দেখি কিছু অর্ডার দেয়া যায় কি না!
— আচ্ছা তুমি আমাকে লোকেশন মেসেজ করে দাও আমি আসছি ।
— তুমি আসবা কেনো আবার?
— কাজ আছে , দেখা করতে হবে আসছি আমি ।
— ওকে এসো ।

ফোন রেখে লোকেশন সেন্ড করে দিয়ে খাবার অর্ডার দিলো মিথি ।
খাবার এসে গেলো আধ ঘন্টার মধ্যে । ততক্ষণে রাফনিদের হালকা খোঁজ খবর নিয়ে নিলো । রাফনিদ প্রেগন্যান্ট পাঁচ মাসের , বয়স কম বলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।
আপাতত মিথির একটা ক্লোজ আপুর বাসায় ও আছে , তানভীরও গেছে রাজশাহী । ওকে নিয়ে আসবে দু একদিনের মাঝে । জার্নিটা কীভাবে করবে এই নিয়েই টেনশন ।
— কি ম্যাডাম কোন খেয়ালে হারিয়ে গেছো?
মিথির কাঁধে হাত রাখলো শব্দ । ও চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দেখলো শব্দ বসে আছে ।
— আরেহ্ আপনি কখন আসলেন?
— এসেছি দশ মিনিট হলো । বসেই আছি দেখছি তুমি আমাকে খেয়াল করো কি না!
— ওহ হো আমি আসলে টেনশনে ছিলাম তো ।
— কি নিয়ে টেনশন আমার ম্যামের?
— আরেহ্ রাফনিদ আর তানভীর আসবে কি করে বুঝতে পারছি না আর সবটা সামলানো টাফ । পাঁচ মাসে পেট তো ফোলা ফোলা বোঝা যাবে তার ওপর রাফনিদ অসুস্থ ।
— তুমি এই ব্যাপার নিয়ে টেনশন করছো? এটা টেনশন করার কোনো ব্যাপার! আমি আছি তো সব সলভড করে দিবো ।
— আমি ভেবে ভেবে মাথার পোকা বের করে ফেলছি আর আপনি ফট করে সলভড করে দিবেন?
— আরো দেখোই না কি করে করি ।
— আচ্ছা দেখবোক্ষণ আপনি বলুন তো কিছু খেয়েছেন?
— উঁহু । এখন খাবো । কি অর্ডার দিলে বলো তো?
— বার্গার দিয়েছি । ইয়াম্মি খেতে আপনিও অর্ডার দিয়ে ফেলুন ।
— আচ্ছা! আর কোল্ড কফি?
— জিজ্ঞেস করে দেখুন হবে কি না । আমি অবশ্য ড্রিংকস কিছু অর্ডার দেইনি এখনো ।
— ওকে আমি দিয়ে দিচ্ছি ।
অর্ডারে বার্গার আর কোল্ড কফি দিলেও কোল্ড কফি পাওয়া গেলো না পরে ব্ল্যাক কফি অর্ডার দিয়ে দিলো শব্দ ।
মিথি আবার কফি খায় না চা খাবে এখানে তো চা এভাইলেভেল না তাই রাস্তায় কোনো চা’য়ের দোকান থেকে খেয়ে নিবে ঠিক হলো ।
খাবার খাওয়ার মাঝে তারা বিয়ের প্রোগ্রামের পরিকল্পনা করে নিলো মোটামুটি । এই আলাপ আলোচনার মাঝে হুট করে শব্দ শপিংয়ের কথা তুললো ।
মিথিলা বললো শপিংয়ের টাইম আছে কিন্তু না সে আজই যাবে ।
বলে রাখা ভালো শব্দের পরিবার বলতে তার দূরসম্পর্কের চাচা চাচী আছেন ।
বেশ কয়েকবছর হলো ওর বাবা মায়ের মৃত্যুর । ও যখন নতুন চাকরিতে জয়েন করে তখন ওর বাবা মা খুলনা থেকে আসছিলেন দেখা করার জন্য। সাভারে এসে তাদের কার টার ভয়ংকর ভাবে আ্যাক্সিডেন্ট হয় । স্পটেই মারা যান ওর বাবা আর মা কে ইমিডিয়েট হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও রাতেই মারা যান উনিও ।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলো শব্দ । সেদিনের দূর্ঘটনায় একদম মুষড়ে পড়েছিলো বেচারা । তারপর থেকে আর নিজের শহরে পা রাখা হয়নি ।

শব্দের জোরাজুরি তে শেষ অবধি শপিংয়ের জন্য যেতে হলো মিথিলা কে ।
শপিং মলের সামনে গিয়ে দেখা গেলো অন্তর আর ওর গার্লফ্রেন্ডও আছে সেখানে ।
অন্তরের গার্লফ্রেন্ড ঐশী বেশ মিশুক মেয়ে । খুব সহজেই মিথির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো তার ।
প্রথমেই তারা গেলো মিথি আর তার পরিবারের জন্য শপিং করতে ।
শব্দ প্রত্যেকটা কাপড় নিজে পছন্দ করে দিলো ।
বেনারসি কেনার সময় বাঁধলো বিপত্তি । মিথি লাল বেনারসি পরতে চায় কিন্তু শব্দ সাদা বেনারসি নিতে বলে ।
লাল নাকি সাদা এই নিয়ে তুমুল কথা কাটাকাটি । মিথি একদম মুখ ফুলিয়ে এক সাইডে সরে গেলো শব্দ তবুও সাদা বেনারসিই নিয়ে নিলো । তার ধারণা সাদা বেনারসি তে তার হবু বউ কে সবচাইতে সুন্দর লাগবে আর অভিমানের ব্যাপারটা হলো সে ঠিক মানিয়ে নিবে ।
এবার শব্দের পালা ও মিথির চ্যুজ করা কাপড় নিবে কিন্তু মিথি ঐ যে মুখে খিল দিয়েছে আর একটা কথাও বলছে না ।
অন্তর বারবার এসে তাকে মানানোর চেষ্টা করছে ।
অনুরোধের সুরে বলছে_
— ম্যাডাম প্লিজ আপনি মুখ বন্ধ করে থাকবেন না । স্যারের তো তিন চারটে রগ বাঁকা উনি যা বোঝেন তাই করেন কিন্তু আপনি এমন করলে তো হবেনা ম্যাডাম । প্লিজ ম্যাডাম কথা না বলুন অন্তত সিলেক্ট করে দিন?
অন্তরের এত অনুরোধ মিথি ফেলতে পারলো না ।
ও কথা বললো না কিন্তু দেখিয়ে দিলো কোন কোন কালারের নিতে হবে যদিও শব্দের জন্য শেরওয়ানির ডিজাইন ও নিজ হাতে করছে । কমপ্লিট হতে আর দু’দিন লাগবে তবে এটা ওকে বলেনি সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছে ।
শব্দ ট্রায়াল রুমে চলে গেলো তার ড্রেসগুলো ট্রায়াল দিতে । মিথির একটু শরীর খারাপ লাগছিলো ও ঐশী কে নিয়ে দোকানের বাইরে এসে দাঁড়ালো । দু’জনেই হাঁটাহাঁটি করছিলো আসেপাশে হঠাৎ ঐশী দৌড়ে এসে মিথির হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো ।
মিথি অবাক হয়ে জানতে চাইলো_
— কি হয়েছে?
— আপু আমার ফেভরেট হিরো এখানে এসেছে ।
— এখানে হিরো কি করে আসবে? আর আসলে তো ভীড় হতো ।
— না আপু সে ছদ্মবেশে এসেছে । মাথায় ক্যাপ মুখে মাস্ক , সানগ্লাস ।
— সে ছদ্মবেশে থাকলে তুমি জানলে কি করে?
— জানলাম আপু কারণ আমি সবসময় তাকে ফলো করি । তার বডি স্ট্রাকচার চিনতে পারি আর সবচাইতে ইন্টারেস্টিং তার ব্রেসলেট । এটা দেখলেই তাকে চেনা যায় তো ।

— আচ্ছা আচ্ছা আমাকেও দেখাও তোমার ফেভরেট হিরো কে? তার নাম কি?
— ওর নাম রাইদ । রাইদ ইজমাম খান ।
— রাইদ?
— হ্যাঁ রাইদ ইজমাম খান ।
— কোথায় সে?
বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন মিথির । ঐশীর সেদিকে খেয়াল নেই । ও একগাল হেসে মিথি কে জুয়েলারি শপটার কাছে নিয়ে আসলো যেখানে রাইদ কে দেখেছে ।
ওরা বেশ দূরেই রাইদের থেকে । মিথি বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদিকে । রাইদের আশেপাশে অনেক লোক বিধায় ভালোমত দেখা যাচ্ছে না । মিথি ওর মুখ দেখার আশা ছেড়ে হাতের দিকে তাকালো ।
বিস্ফোরিত হয়ে গেলো নেত্রজোড়া । দরদর করে ঘামতে থাকলো হঠাৎ ।
ঐশীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে সে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো_
— আমাকে ধরো ঐশী । আমার খুব পিপাসা লাগছে , আমার বুকের ভেতর টা কেমন করছে যেন । আমাকে একটু ধরো প্লিজ ।
,
চলবে?