ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 32
বাসর ঘরে দু-হাঁটু ভাজ করে ঘোমটা টেনে বসে আছি, আমানের অপেক্ষায়। দিয়া সব ভাইয়েদের থেকে টাকা আদায় করবে তারপর ঘরে আসতে দেবে। হিহিহি। ভাবতেই অবাক লাগছে আজ আমাদের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমাকে আর আমানকে নিজের থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে হবে না। নীলাদ্রির পরিচয়টাই হয়তো আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। আমার মতো মেয়ের ভাগ্যে যে আমান থাকবে আমি ভাবিইনি। এসব আকাশ-কুসুম ভাবছিলাম তখনই দরজা দেওয়ার শব্দ এলো। আমি আলতো করে ঘোমটা টা উঠিয়ে দেখলাম আমান এসেছে। আমি বেড থেকে নেমে সালাম দিতে নিলেই আমাকে ধরে ফেললো।
আমান– মীরু প্লিজ! তোমার স্থান আমার পায়ে নয়, আমার হৃদয়ে।
ও আমান ঘোমটা টা উঠিয়ে দিতেই আমি লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলাম, কেমন জানো একটা লজ্জা লাগছে, ভয় কাজ করছে।
আমান– এভাবে লাল, লাল টমেটো হয়ে গেলে আমি কিন্তু এখনই গালে কামড় বসিয়ে দেবো।
আমানের কথা শুনে ওর দিকে বড় বড় করে তাকাতেই ও ফিক করে হেসে দিলো, আর আমি ওর বুকে একটা কীল দিয়ে মাথা গুঁজে দিলাম। আমান আমাকে কোলে তুলে নিলো ঝট করে।
মীরা– কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমান??
আমান– সারপ্রাইজ মীরু!
আমি আর কিছু বললাম না, ও আমাকে কাবার্ডের থেকে কিছুটা দুরে এনে দাঁড় করিয়ে দিলো, আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমার চোখ আটকে গেলো।
আমান– কি হলো??
মীরা– এ..এটা??
আমান– তুমি সেদিন এই কপল ড্রেসটাই তো ড্র করছিলে তাই না??
মীরা– তুমি কি করে পেলে??
আমান– আই অ্যাম দ্য গ্রেট আমান খান মীরু!
মীরা– তুফান খান।
আমান– হুহ!
মীরা– ফুহ!
আমান– যাও চেঞ্জ করে আসো। এই ভারী ড্রেস বেশিক্ষণ পরে থাকাটা ঠিক না।
আমি সামনে তাকাতেই দেখলাম একটা ম্যান্নিকুইন, মেয়েটার ম্যান্নিকুইনে এক কালারের হাল্কা আকাশি রঙের সিল্কের শাড়ি, আঁচলে সুন্দর কাজ করা এক রঙের। হাল্কা নীল রঙের নেটের স্লিভলেস ব্লাউস। ছেলের ম্যান্নিকুইনটাতে একটা ব্ল্যাক ডেনিম জিন্স, আর শাড়ির রঙের সাথে ম্যাচ করে হাল্কা নীল রঙের একটা হাফ হাতা শার্ট। আমিই এই কপল ড্রেস টা ডিজাইন করে ছিলাম খাতায়। আমান সেটা পেয়েও গেলো?? সত্যি ও দ্য গ্রেট আমান খান। “আমার আমান”। যাই বাবা, নাহলে আবার ধমক খেতে হবে আজকের দিনে। আমি আমার ড্রেস টা নিয়ে চলে গেলাম চেঞ্জ করতে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসতেই আমান কে দেখে আপনা আপনি মুখটা হা হয়ে গেলো।
আমান কে ঠিক প্রথম দিন যেদিন আমি ওকে দেখেছিলাম সেরকম দেখতে লাগছে। সেদিন পার্পল শার্ট ছিলো আর আজ হাল্কা নীল। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমান আমার সামনে দাঁড়িয়ে হুট করেই আমাকে কাছে টেনে নিলো।
আমান– এভাবে নিজের বরের দিকে হা! করে তাকিয়ে আছো কেনো মীরু?? ক্রাস খেলে, অন্যান্য মেয়েদের মতো??
মীরু– অন্যান্য মেয়েদের মতো মানে?? (ভ্রু কুঁচকে)
আমান– আমার উপর তো সব মেয়েরাই ক্রাস খায়, আড় চোখে দেখে তাই বললাম।
মীরা– (ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম) তাহলে ওদের কাছেই যান।
আমান– আরেহ! রাগ করো কেনো বেবস?? আমি তো আর ওদের দিকে তাকাই না তাই না??
মীরা– হমম আপনি তো অন্তর্যামী তাই না দেখেই জেনে গেলেন কে আপনাকে আড় চোখে দেখছে আর কে সোজা চোখে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করতে যাচ্ছি, ঘুম পাচ্ছে আমার।
আমান– (ঢোঁক গিলে) স্যরি বেবস। আজ আমাদের একটা স্পেশাল রাত আর তুমি এমন করছো?? আবারও আপনি বলছো?? নট ফেয়ার মীরু! এতদিন তো দুরে থাকলাম, আজকেও?? ফাইন তুমি যা চাইবে সেটাই হবে। আমিও ড্রেস চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
মীরা– শেষ ড্রামা??
আমান– হমম শেষ। আসছি আমি।
মীরা– (মনে মনে– সত্যি রেগে গেলো নাকি তুফান খান টা?? সাধে কি আর তুফান খান বলি??) আরে কোথায় যাচ্ছো??
আমান– চেঞ্জ করতে।
মীরা– কেনো?? চেঞ্জ করার হলে ড্রেস পরালে কেনো??
আমান– যেই ইচ্ছে টা ছিলো সেটা আর নেই। তোমার অনিচ্ছায় কোনো কিছু করবো না আমি। তুম…
মীরা– এক লাইন বেশি বোঝো কেনো বলো তো তুমি?? আমি বলেছি আমি যাবো না?? রাগ করার কথা ছিলো আমার, উল্টো টা হয়ে গেলো সেখানে। ধুর! ভালো লাগে না, বেকার বর একটা। কোনো কম্মে…
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমান আমার ঠোঁট দখল করে নিলো, আমার কোমরে ওর দু-হাত বিচরণ করছে। আমিও আস্তে আস্তে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম।
ইসমি বেডে বসে আঙুল কচ্লাচ্ছে, আজ পর্যন্ত এতো টেনশন কোনদিন হয়নি যা এই মুহুর্তে হচ্ছে। ভীষণ নার্ভাস লাগছে ইসমির আজকে। ইসমি নিজের ভাবনায় মগ্ন ঠিক সে সময় ওর গালে ঠোঁটের স্পর্শ পেলো। ইসমি পাশে তাকাতেই অর্নিল কে দেখতে পেলো। অর্নিল সঙ্গে সঙ্গে ইসমি কে একটা চোখ মারতেই ইসমি লাঁফ মেরে উঠে গেলো বেড থেকে, এই দেখে অর্নিল বেডে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। অর্নিলের হাসি দেখে ইসমি প্রথমে হাসলেও পরে মেকি রাগ দেখিয়ে ড্রেসিং টেবিলে গিয়ে বসে পরলো।
অর্নিল– উহুম! আজ আমি গয়নাগুলো খুলে দি??
ইসমি গয়না খুলতে নিলেই অর্নিল বাঁধা দিয়ে বলে।
ইসমি– আমি পারবো।
অর্নিল– আমি জানি তুমি পারবে মৌ!
ইসমি– মৌ?? (অবাক হয়ে)
অর্নিল– হমম! ধানি লঙ্কা আর আইসব্যাগ বাদ। এখন থেকে মৌ বলে ডাকবো আমি তোমাকে। আমি ছাড়া আর কেউ ডাকবে না তোমাকে এই নামে, কাওর অধিকার নেই সেটার।
ইসমি হেসে মাথা নামিয়ে নিলো, এদিকে অর্নিল এক এক করে ইসমির গয়না খুলছে, সঙ্গে দুষ্টুমিও চলছে। ইসমি তো চেয়েও বাঁধা দিতে পারছে না, আজ কেনো জানো অর্নিলের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে ইসমির, আর অর্নিল এটা বুঝতে পেরে সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। আস্তে আস্তে অর্নিলের হাত এখন ইসমির কোমরে, অর্নিলের ছোঁয়া পেতেই ইসমি কেঁপে উঠে খামচে ধরলো অর্নিলের হাত। আস্তে আস্তে অর্নিলের হাত ইসমির খোলা কোমরে বিচরণ করছে, এদিকে ইসমির তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর অর্নিল ইসমির চোখের উপর ঠোঁট ছোঁয়ালো।
অর্নিল– মৌ! (ইসমি চোখ খুললো) এটা তোমার জন্য!
ইসমি তাকিয়ে দেখলো ওর কোমরে একটা হিরের কোমর বন্ধনী। ইসমি সেটার দিকে তাকিয়ে অর্নিলের দিকে তাকাতেই অর্নিল বললো।
অর্নিল– ইউ নৌ না, সবাই যেটা করে আমরা তিন ভাই সেটা করি না। তাই এটা গিফ্ট করলাম। পছন্দ??
ইসমি শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।
অর্নিল– মৌ! আমি যেই কাজটা করি সেটা মোটেও সেফ নয়। আমি আজ এই মুহুর্তে তোমার কাছে, তোমার সাথে দাঁড়িয়ে আছি, কিছুক্ষণ পর হয়তো না ও থাকতে পারি। আমার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ক্রিমিনালদের সাথে মিশতে হয় আমাকে ওদের মারার জন্য, এটা যদি ওরা একবার ও টের পায়, দ্যান আই অ্যাম ফিনিসড। দ্যাটস হোয়াই আমি কোনোদিন নিজের লাইফে কোনো মেয়েকে জরায়নি। কিন্তু তোমাকে চেয়েও দুরে সরাতে পারিনি আমি।
ইসমি– অর্নিল প্লিজ! আজকে এসব…
অর্নিল– আজকে এসব বলছি তার কারণ কে জানে আজ আছি কাল না ও থাকতে পারি।
ইসমি– অর্নিল প্লিজ! (কাঁদো কণ্ঠে)
অর্নিল– এটা ফ্যাক্ট মৌ! আমি চাই আমি যতদিন থাকবো ততদিন তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না, দুরে সরিয়ে রাখবে না আমাকে। আমার ভালো থাকার জন্য অলওয়েস তোমাকে দরকার আমার।
ইসমি আর কিছু না বলে অর্নিল কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
ইসমি– তুমি প্লিজ এইসবের থেকে বেরিয়ে আসো নীল। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। জীবনে শুধুমাত্র মীরা কে পেয়েছি এতদিন নিজের আপন বলে, আর এখন তুমি। আমি তোমাকে কোনোমতে হারাতে চাই না। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।
অর্নিল– শশশশ!! (ইসমিকে সামনে এনে ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে) যতদিন তুমি আছো ততদিন আমি আছি। কিচ্ছু হবে না আমার। আমি জাস্ট জানিয়ে দিলাম তোমায়। আর এখন এসিব নিয়ে কোনো কথা নয়। ওকেই?? আজকের রাতটা আমি মেমরেবল করে রাখতে চাই
ইসমি– হমম। (মন খারাপ করে)
অর্নিল– মৌ! প্লিজ। মন খারাপ করে থাকলে, রাতটা মেমরেবল কি করে হবে?? আমি তো বললাম আমি অলওয়েস তোমার সাথে আছি। সেটা বেঁচে হোক বা..লেট ইট বি। আমি মাস্টার্সটা কম্পলীট করেই ভাইয়ের সাথে অফিস জয়েন করবো।
ইসমি– সত্যি?? (খুশি হয়ে)
অর্নিল– আজ্ঞে।
ইসমি– (হেসে) তুমি চেঞ্জ করে আসো।
অর্নিল– উহুম! তুমি যাও। আমি জাস্ট ট্রাউজার টা পরবো।
ইসমি অর্নিলের কথা শুনে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে, চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসতেই দেখলো পুরো ঘর অন্ধকার। ইসমির মনে কেমন ধুক করে উঠলো।
ইসমি– নীল! নীললল!! নী…
হঠাৎই ইসমিকে পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো, ইসমি নিজের কাঁধে কাওর গরম নিশ্বাস অনুভব করলো। ইসমি আস্তে করে পিছন ফিরে কিছু বলতে যাবে তখনই অর্নিল ইসমির ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ পর ইসমি কে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো বেডের দিকে। আজ থেকে ইসমি আর অর্নিলের একটা নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
কিন্তু অর্নিলের কথাগুলো কি শুধুই ইসমি কে জানানোর জন্য?? নাকি এসব বলার কোনো কারণ আছে??