ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 28
“আঁধার ভাইয়ার পায়ের নীচ থেকে আজ জানো মাটিটাই সরে গেছে। আসল সত্য টা শুনে আমরা সবাই স্তব্ধ।”
____ আমান সাইন করবে না। আমান নির্দোষ।
আমরা সবাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে তার মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। একটু এগিয়ে আসতেই আমরা বুঝতে পারলাম এটা আর কেউ নয় আকাশি আপু। কিন্তু আকাশি আপু এখানে কি করছে??
আমান– তুমি! তুমি এখানে কি করছো??
আকাশি– তোমাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এসেছি আমান।
আকাশি আপু আর আমানের কথা বলা দেখে আমি আঁধার ভাইয়ার দিকে লক্ষ্য করলাম দেখলাম আঁধার ভাইয়া নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে নিল যেন সহ্য হচ্ছে না ওদের দুজনের একসাথে কথা বলা। আমার কেমন যেন খটকা লাগলো ব্যাপারটা। সঙ্গে সঙ্গে আঁধার ভাইয়া আকাশি আপুর কাছে গিয়ে আকাশি আপুর হাত টেনে নিয়ে বলল।
আঁধার– তুমি এখানে কি করছো “শবনম”?? তোমার কাজ শেষ। তুমি যাও।
[আকাশিই শবনম তাই এখন থেকে শবনম লিখবো]
শবনম– আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি আঁধার। আমি আমার কাজ শেষ করতেই এখানে এসেছি।
আঁধার– কোন কাজের কথা বলছো তুমি??
শবনম– ঐ যে বললাম আমান কে নির্দোষ প্রমাণ করার। তোমার কাছে এটা প্রমান করতে এসেছি যে তোমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।
অর্নিল– কিউটিপাই তুমি এসব কি করে জানলে??
শবনম– এখুনি দেখতে পাবে সবটা।
এই বলে আকাশি আপু একটা পেনড্রাইভ বার করে টেবিলে থাকা ল্যাপটপটার মধ্যে লাগিয়ে দিল আর তারপর একটা ভিডিও প্লে করল। ভিডিওটা প্লে করার সঙ্গে সঙ্গেই আঁধার ভাইয়া আমান আর অর্নিল একসঙ্গে ভিডিও টার দিকে তাকালো। আমান আর অর্নিল বললো।
আমান এবং অর্নিল– চাচ্চু!!?? (অবাক হয়ে)
শবনম– সবাই একটু মন দিয়ে এই ভিডিওর কথাগুলো শোনো তাহলেই সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
ইন ভিডিও …………………………
চাচি– শোনো আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।
চাচ্চু– তুমি কি আবারও ঐ তিন ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করবে?? যদি সেটাই হয় তাহলে আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার কথা শোনার।
চাচি– আমি সেটা বলতে আসিনি। আমি আর ওদের তিন ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করব না আমি এবার থেকে তোমার সঙ্গই দেবো।
চাচ্চু– বাহবা! হঠাৎ এই সুমতি??
চাচি– আমি আর ওদের হয় কোন কথা বলবো না। কি লাভ ওদের হয়ে কথা বলে আর কতদিনই বা নিজের স্বামীর বিপরীতে কথা বলব তাই ভাবলাম তোমার হয়েই সঙ্গ দেবো কিন্তু আমি কিছু বুঝতে পারছিনা তুমি কিভাবে কি প্লানিং করেছো??
চাচ্চু– তুমি জানতে চাও আমি কিভাবে কি প্লানিং করেছি কিন্তু তোমার কি লাভ এসব জানতে চেয়ে??
চাচি– সেকি পুরো প্ল্যান না জানলে তোমার সঙ্গ টা ভালো করে দেবো কি করে?? আমার দ্বারা তো কিছু ভুল হয়ে যেতে পারে। আমি যদি পুরো প্ল্যানটা জানি তাহলে আর কোন ভুল হবেনা। বিপদে পড়লে আমি কথা বানিয়ে বলে দিতে পারব তাই জানতে চাইছি আর কি।
চাচ্চু– ওহ আচ্ছা।
চাচি– আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না তুমি কি করে এদের এই তিন ভাইকে আলাদা করলে?? আমান আর আঁধারকে আলাদা করা তো মুখের কথা নয় ওদের মধ্যে বন্ডিং তো খুব স্ট্রং ছোটবেলা থেকেই। কি করে ভাঙলে এই বন্ডিং??
চাচ্চু– শোনো তাহলে।
আমি অনেক আগে থেকেই আমার ভাই অর্থাৎ আঁধার আমান আর অর্নিল এর আব্বু আরহাম খানের সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনোভাবেই সফল হচ্ছিলাম না। তারপর একটা সুযোগ এলো যখন আঁধার হতে গিয়ে ওর আম্মু মারা গেল। ওই সময় আঁধার কে দেখার মত কেউ ছিলনা। আঁধার সদ্যোজাত ছিল আর আরহাম ভাই ভাবির শোকে বিধ্বস্ত ছিল। ভেবেছিলাম ঠিক ওই সময় সাইন করিয়ে নেব কিন্তু যখনই সাইন করাব ভাবলাম তখনই ভাবির বেস্ট ফ্রেন্ড অর্থাৎ আমান আর অর্নিলের মা কোথা থেকে এসে আরহাম ভাইকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বিয়ে করে নিল। একচুয়ালি প্রথম থেকেই আমানের মা আমাকে সন্দেহ করতো তাই বিয়েটা করে নেয় আর আরহাম ভাই সহ আঁধার কে সামলে নেয়। আঁধারের যখন দু বছর বয়স তখন আমান হয় আর আমানের তিন বছর পর অর্নিল। সেই সময় আমার মেয়ে হওয়ায় আমি আর কিছু করিনি আমার মেয়ে আস্তে আস্তে যখন বড় হতে লাগলো তখন ভাবলাম আমাকে কিছু একটা প্ল্যান করতেই হবে।
চাচি– আমাদের মেয়ে বড় হতে লাগলো মানে তখন সবার কত বয়স??
চাচ্চু– তখন আমাদের মেয়ের বয়স ৮, অর্নিলের বয়স ১১, আমানের বয়স ১৪ আর আঁধারের বয়স ১৬। তখনই যদি আমি কোন প্ল্যান করে আমান আর আঁধারকে আলাদা না করতাম তাহলে পরে আর কোন কিছু করা সম্ভব হতো না তাই আমি প্ল্যানটা করেই ফেললাম।
চাচি– সেটাই তো জানতে চাইছি কি প্ল্যান করেছিলে তুমি আর ওই সময় তো ওর ওদের আব্বা মারা গেল মানে আরহাম ভাই মারা গেছিল তাই জন্যই তো তুমি আঁধার কে নিয়ে চলে এসেছিলে। তুমি তো সেই সময় বলেছিলে আঁধার আরহাম ভাইকে মেরে ফেলেছে তাই আমরা পালিয়ে এসেছি।
চাচ্চু– না আঁধার আরহাম ভাইকে মারেনি।
চাচি– তাহলে আর আমি বেশিরভাগ সময় আধারের মুখে শুনেছি যে আমান আরহাম ভাই কে মেরেছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
চাচ্চু– আরহাম ভাইকে আমি মেরেছি।
চাচি– ত..তু..তুমি??
চাচ্চু– হ্যাঁ এটা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমি একদিন আরাম ভাইয়ের কাছে গিয়ে আরাম ভাইয়ের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিই আর তারপর আমান আর অর্নিল এর কাছে যাই গিয়ে বলি আঁধার ওদের আব্বুকে মেরে পালিয়ে গেছে সেই শুনে আমান আর অর্নিল ছুটে চলে আসে আরহাম ভাইয়ের কাছে আর আমিও পিছন পিছন যাই। গিয়ে বলি আমানকে আরহাম ভাইয়ের পেট থেকে ছুরিটা টা বের করে নিতে, ছুরিটা বের না করে নিলে আরহাম ভাই সবই সত্যিটা বলে দিত আমান আর অর্নিল কে। অর্নিল অনেকবার না করছিল আমানকে ছুরিটা বার করতে কিন্তু তবুও আমার জোরাজুরিতে আমান ছুরিটা বার করে নেয় আর সঙ্গে সঙ্গে আরহাম ভাই ওখানেই মারা যায়। ছুরিটা হাতে নেওয়া অবস্থায় আমি আমানের একটা ভিডিও করে নি আর সেখান থেকে সরে আঁধারের কাছে চলে যাই। প্রথমে আঁধারকে মুখে বলেছিলাম যে আমান ওদের আব্বুকে মেরে ফেলেছে কিন্তু আঁধার সেটা বিশ্বাস না করায় আমি ওই ভিডিওটা দেখাই আর আঁধার ওখানে যেতে চায়। আমাকেও ওখানে যেতে হতো প্রপার্টির কাগজে আমান আর অর্নিলের সই নেওয়ার জন্য। তাই আঁধার কে আর বাধা দিই না আমি আঁধার কে নিয়ে ওখানে যাই কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি আমান আর অর্নিলের মা ওখানে উপস্থিত আর পুলিশের গাড়ির হর্ণ ও শুনতে পেয়েছিলাম। তাই আঁধার কে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে পালিয়ে যাই ওখান থেকে।
চাচি– তারপর।
চাচ্চু– তারপর আর কি আঁধারকে আমি বড় করতে থাকি এখানে। ওর মনে বিষ ঢেলে দিতে থাকি আমানের নামে কিন্তু ওই আঁধার এতোই আমান কে ভালোবাসে যে এতকিছুর পরেও কিছুতেই সে নিজের ভাইকে মারবে না। যখন ওই আমানের ভালোবাসা মীরাকে বিয়ে করতে বললাম তখন ও আমাকে বুঝিয়ে দিল যে এখনই মীরাকে যদি ও বিয়ে করে নেয় তাহলে আমানের কোনো যায় আসবেনা, কারণ মীরা আমান কে ভালোবাসে না, ইভেন চেনে পর্যন্ত না। আমান দেশে ফিরে এসে যখন মীরার বিয়ের কথা শুনবে তখন ঠিকই মীরা কে বিয়ে করতে চাইবে সে সময় মীরা কে আমরা তুলে নিয়ে আসবো। যেখানে মীরা কে বিয়ে না করেই কাজ হয়ে যাবে সেখানে কেনো বিয়ে করবে। মীরাকে বিয়ে করে কি লাভ মীরাকে তো আমাদের শুধু আমানের জন্যই দরকার আমান আসলেই হলো। এতকিছু বুঝিয়ে সুজিয়ে আমাকে, বিয়েটা করলো না আঁধার। ও কি ভাবে আমি বুঝি না যে ও এইভাবে নিজের ভাইয়ের ভালোবাসা কে সেভ করলো??
কিন্তু আমরা ভাবিনি যে আমান মীরাকে হুট করেই বিয়ে করে ফেলবে আর বিয়ে করে বাসা থেকে এক মুহূর্ত বের করবে না। এমনকি নিজের চোখের আড়ালে করবেনা, যতদূর মনে হয় আমান বুঝতে পেরেছিল মীরার ওপর কেউ নজর রাখছে তাই এই ব্যবস্থা করেছিল। ওরা যখন বাগানবাড়িতে গেল তখন ও আমান মীরার সাথে ছিল। তাই তখন আমি আঁধার কে বললাম যে এভাবে মীরাকে নিয়ে আসা যাবে না যেখানে তুই বলেছিলিস বিয়ের আগেই মীরাকে নিয়ে আসব সেখানেতো মীরাকে আমান বিয়ে করে ফেলেছে আর এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করে না। তাই এবার একমাত্র উপায় আমানকে আঘাত করতে হবে। এটা শুনে তো আঁধার একবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সে কিছুতেই নিজের ভাইকে আঘাত করতে দেবেনা, ইভেন ফুলের টোকাও পর্যন্ত পরতে দেবেনা ভাইয়ের গায়ে, অন্যভাবে কিছু করবে। তখনই আমি ঠিক করে নিলাম এইবার যদি আঁধারের কথা শুনে চলি তাহলে আর প্রপার্টি পেতে হবে না তাই আমানকে মারার প্ল্যান করলাম সঙ্গে অর্নিল কেও। আমানের আঘাতের কথা শুনে মীরা যেমন বেরিয়ে আসবে তেমন অর্নিল ও বেরিয়ে আসবে। সাইন তো শুধু আমানের না অর্নিলেরও দরকার পড়বে। আর আঁধার তো আমার কাছেই আছে আঁধারকে দিয়ে আমি পরে সাইন করিয়ে নেব। তাই একদিকে আঁধারকে হাতে গুলি করার জন্য পাঠালাম আর অর্নিল কে তুলে আনার জন্য কয়েকটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিলাম। এতক্ষণে নিশ্চয়ই কাজ হয়ে গেছে। এদিকে আঁধার তো মীরার ওপর নজর রাখছেই। মীরা বাইরে বেরোলেই আঁধারের লোক মীরাকে তুলে নেবে আর আঁধার জানতেও পারবে না আমানের ক্ষতি কে করলো।
শবনম ভিডিও টা বন্ধ করে দিলো, ভিডিও টা বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আঁধার অর্নিল এর কাছে চলে গেল। আঁধারের পরপরই আমান ও চলে গেল। দুই ভাই মিলে অর্নিল কে ঘিরে ধরে বললো ” কোথায় লেগেছে তোর “। একেই তো অর্নিল ভিডিওটা দেখে পুরোপুরি শকড। তার মধ্যে দুই ভাই মিলে এভাবে ওকে ঘিরে ধরেছে ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না, এদিকে আমান আঁধার একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে।
আঁধার– তোর কথা কানে যায় না?? এতক্ষণ তো খুব ভাইয়া ভাইয়া করছিলিস, এখন মুখে কুলু পেটেছিস কেনো??
অর্নিল আঁধারকে উত্তরটা দিতে যাবে তখনই আমান প্রশ্ন করে বসলো।
আমান– কে মেরেছে তোকে?? আর কপালে রুমাল বাঁধা কেনো জিজ্ঞেস করায় এড়িয়ে গেছিলি কেনো??
অর্নিল আমানের প্রশ্ন শুনে এবার আমানকে উত্তরটা দিতে যাবে তখন আবার আঁধার প্রশ্ন করে বসলো।
আঁধার– ছেলেগুলো কে চিনতে পারবি তো তুই?? এক একটা কে তো আমি…
ইসমি– আপনাকে কিছু করতে হবে না আঁধার ভাইয়া যা করার অর্নিল করে দিয়েছে। আপনারা তো ওকে কিছু বলতেই দিচ্ছেন না তাই বললাম।
আমান– কি হয়েছিল??
ইসমি– আমি মীরা কে খুঁজতে খুঁজতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম তখন অর্নিল আমার কাছে আসে আর তারপরেই আমি দেখতে পাই কয়েকটা ছেলে অনেকগুলো হকিস্টিক কেউ কেউ চুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারপর আমি…
অর্নিল– তারপর আমি সুমিকে ওখান থেকে সরে যেতে বলি, তাই সেই সময়ে ওরা কয়েকবার আমাকে আঘাত করতে পেরেছে তারপর আমি ওদেরকে ওদের জায়গাটা বুঝিয়ে দিয়েছি। ভাই আর ভাইয়া এবার তোরা একটু শান্ত হ ঠিক আছে আমি।
ইসমি বুঝতে পারলো অর্নিল ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল তাই আর কিছু বলল না এদিকে মীরা, শবনম সবাই হতবাক এই তিন ভাইয়ের বন্ডিং দেখে। এরপরই শবনম বলে উঠলো।
শবনম– এখন সবার কাছে সবটা ক্লিয়ার তো??
আঁধার– তুমি কি করে জানলে চাচ্চু আমান কে মারতে চায়??
শবনম– সেদিন যখন আমি তোমার সাথে দেখা করেছিলাম তোমাদের বাসায়, বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম চাচা কার সাথে ফোনে কথা বলছিল আর তখনই আমি পুরো কথাটা শুনে ফেলি আর সেই জন্যেই ডিসিশন নিয়েছে আমি এখানে আসবই। আমি যেদিন আমানদের বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন আমানরা ওদের বাগান বাড়ি থেকে ফিরছিল, তাই সেইদিন আমি চলে যাওয়ায় আমানের অফিস যাওয়া হয়নি। তাই আমি সিওর জানতাম তার পরের দিনই আমানের উপর অ্যাটাক টা হবে তাই আমানের অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমিও বেরিয়ে যাই আর আমার একটা লোক ইচ্ছে করেই আমানকে ধাক্কাটা মারে না হলে আমানের বুকে লেগে যেতে পারত গুলিটা। ধাক্কা খেয়ে পরে যাওয়ায় আমান ওর মাথায় চোট পায়।
আমান– এতদিন এসবের পিছনে চাচ্চু ছিলো আর আমরা জানতেও পারিনি।
শবনম– যার জানার কথা ছিল সে তো চোখে পট্টি পড়ে বসে ছিল নিজের ভাইকে বিশ্বাস করার আগে চাচ্চুকে বিশ্বাস করেছিল তাই আজ তোমাদের এই অবস্থা। যখন বলেছিলাম একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, বেকার বেকার আমানের থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছ তখন সে শোনেনি আমার কথা। চাচ্চুর পাশাপাশি আঁধার ও সমান দোষী কারণ আমানের কাছ থেকে প্রথমে তুর্য তারপর আমি আর তারপর মীরা কে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল।
আঁধার ভাইয়া মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেন সেই সময় আমান ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখলো।
আমান– আমার ভাই যদি প্রতিশোধ নিতে চাইত তাহলে মীরা কে বিয়ে করে নিতো, ও অনেক আগেই জানত মীরা কে প্রথম দেখায় আমি ভালো বেসে ফেলেছি তাই তো বিয়ে টা করেনি। ও চাইলে আব্বুর জন্য আমাকে মেরে ফেলতে পারতো, অর্নিল কে মেরে ফেলতে পারতো বাট ও সেভ করে গেছে আমাদের। আজকে ওর অর্নিলের প্রতি রিয়াকসন দেখে সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে কেউ কখনো আসতে পারবে না।
শবনম– আমি তোমাকে বলেছিলাম আঁধার, আমান তোমাকে ভুল বোঝে না, তুমি ওকে ভুল বুঝেছো।
আমান– তুমিও কি ভাইয়ের কথায় এসেছিলে??
শবনম– হ্যাঁ। সে অনেক কথা।
অর্নিল– বাসায় চলো ভাইয়া, আম্মি তোমাকে দেখে ভীষণ খুশি হবে।
আঁধার– নাহ! আমি কোথাও যাবো না।
আমান– মানে টা কি ভাই??
আঁধার– আমি তোদের ভাই হওয়ার যোগ্য নই। শব…আকাশি তুই ঠিকই বলতিস, প্রথম থেকেই আমি ভুল করে এসেছি। প্রথমে তুর্য কে আমানের লাইফ থেকে সরিয়ে তোকে পাঠিয়েছিলাম ভালোবাসার নাটক করতে আর তারপর মীরা কে দুরে সরাতে চেয়েছিলাম। এতো কিছুর পরেও আমান আমাকে ট্রাস্ট করছে অর্নিল ভাইয়া বলছে, এটুকুতেই আমি খুশি। আমি চলে যাবো এখান থেকে, এখানে থাকলে পুরোনো অপরাধ গুলো বেশি করে মনে পরবে।
শবনম– (মনে মনে– কয়েকটা খারাপ কথা বললাম দেখে এতো রাগ দেখাচ্ছ?? শবনম থেকে এখন আকাশি হয়ে গেলাম আমি?? আচ্ছা তুমি কি কোনোদিন বুঝবে না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?? সেই ছোট থেকে তোমার পিছনে ঘুরঘুর করতাম, কখন তুমি শবনম বলে ডাকবে। আর আজ এক ঝটকায় আমি আকাশি হয়ে গেলাম?? শুধু ইউস করে গেছো, চাচ্চু যখন আমানের কাছে পাঠাল আমাকে তখন একবার হলেও তুমি আটকাতে পারতে কিন্তু সেটা করনি তুমি। সত্যি আঁধার তুমি কোনদিন আমাকে ভালবাসোনি। কোনদিন না।) [ডুকরে কেঁদে উঠলো মনে মনে]
আঁধার ভাইয়া ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই একজন এসে আঁধার ভাইয়ার পথ আটকায়।
মীরা– তুর্য তুইইইই!!
তুর্য– প্রথম থেকেই ছিলাম। সবটা শুনছিলাম। সব কিছু তো এখনো ক্লিয়ার হয়নি তাই সেটা করতেই এলাম।
আঁধার– তুর্য তুই চুপ থাক। যেতে দে আমায়, আমার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে।
আমান– (কোমরের পিছন থেকে বন্দুক বার করে, আঁধারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে) এটা দেখেছিস??
মীরা– আমান কি করছো টা কি??
অর্নিল আমার কথা শেষ হওয়ার পর পরেই নিজের পায়ের নীচ থেকে জিন্স উঠিয়ে বন্দুকটা আঁধার ভাইয়ার পিঠে ধরে বললো।
অর্নিল– আরেকবার যাওয়ার কথা বললে সোজা ওপরে পাঠিয়ে দেবো। তোর নিশ্চই মনে আছে ছোটবেলায় তুই যাওয়ার কথা বললে আমরা খেলনা বন্দুক নিয়ে ভয় দেখাতাম। এখন কিন্তু এগুলো খেলনা নয়, পুরো রিয়েল।
আমান– তুই জানিস অর্নিল কে??
আঁধার– ফাজিল! আবার কে??
আঁধার ভাইয়ার কথা শুনে আমানসহ আমরা হেসে ফেললাম সেই দেখে অর্নিল জোরে একটা ধমক দিলো আমান কে।
অর্নিল– ভাইইইইইই!!
আমান– (থতমত খেয়ে) আব, বলছি তো ওয়েট। (একটু হেসে) আমাদের অর্নিল এখন আর ছোট নেই। সে এখন গ্যাংস্টার।
কথাটা শুনেই ইসমির কাশি উঠে গেলো, কাশতে কাশতে বললো।
ইসমি– এই ফাজিল পোলা আর গ্যাংস্টার?? এরে দেখলে তো চ্যাংরাস্টার মনে হয়।
অর্নিল– 😡😡
সবাই– 😂😂🤣🤣
তুর্য– আচ্ছা তোরা এবার এই বন্দুক গুলো সরা, আমার ভয় লাগছে কিন্তু। মানছি আমান তুই মাফিয়াওয়ার্ল্ড এর বাদশাহ। আঁধার ভাইয়া তুমি আন্ডারকভার কমান্ডার। অর্নিল ভাই আমার, তুই গ্যাংস্টার। কিন্তু আমি?? আমি তো নাদানসা সিবিআই তাই না??
শবনম– আ..আঁ..আঁধার ত..তু..তুমি আন্ডার কভার কমান্ডার??
তুর্য– হ্যাঁ।
মীরা– আমান মা..মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর বা..বাদ..বাদশাহ??
তুর্য– জ্বী।
ইসমি– অর্নিল চ্যাংস্টার থুক্কু গ..গ্যাংস্টার?? 😅
তুর্য– (হেসে) আজ্ঞে।
অর্নিল– 😡😡
শবনম– কমান্ডার না ছাই। চোখের সামনে ক্রিমিনাল ঘুরে বেড়াচ্ছে তাকেই ধরতে পারে না সে আবার আন্ডার কভার কমান্ডার। 😑
আঁধার– 😒😒
মীরা– মাফিয়া না ব্যাঙ! ঝাড়ু দেখলে ভয় পায়। 😂
আমান– 😣😣
তুর্য– এবার আসল ঘটনায় আসি। অ্যাকচুয়লী আঁধার ভাইয়া আমাকে ফোন করে বলেছিল আমানের লাইফ থেকে সরে না গেলে, আমার আম্মুর ক্ষতি করে দেবে। জানে মেরে দেবে।
শবনম– আঁধার তুমি?? এটা কি করে?? সারাজীবন যেমন আমাকে ইউস করে এসেছো নিজের স্বার্থে তেমন সবাই কে…
আঁধার– (মনে মনে– তুমি আমাকে বিশ্বাস করার কথা বলছিলে শবনম, আজ ১২ বছর ধরেও তুমি আমার মনের কথা বুঝলে না। কেনো তোমাকে আমি শবনম নাম দিয়েছিলাম, কেনো এই নামে ডাকার অধিকার শুধু আমার বলেছিলাম সেটা বুঝলে না। এতটা অবিশ্বাস নিয়ে আমি কি করে বাঁচবো?? তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই মরে ছিলাম। আমার অন্ধকার জীবনে নক্ষত্রের মতো ছিলে তুমি তাই তোমাকে শবনম বলতাম। আমি তো তোমাকে ইউস করিনি,আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি একবার বলবে যে তুমি আমানের সাথে নাটক করতে পারবে না। বাট তুমি তো বলোনি। ভালোবাসি তোমাকে। সেই ছোটো থেকে, আপসোস তুমি বুঝলে না।)
তুর্য– একমিনিট আকাশিপু। আমিও প্রথমে এটাই ভেবেছিলাম। সবার এটাই ভাবার কথা বাট এমন টা নয়। আঁধার ভাইয়া এই ব্যাপারে কিছু জানেই না। ভাইয়া জাস্ট বলেছিল আমাকে সরে যেতে, বাদ বাকি কথা গুলো ভাইয়ার ভয়েস নকল করে একজন বলেছে।
শবনম– তাহলে কি এটাও চাচ্চু করেছে??
____হ্যাঁ! এটাও আমিই করেছি।
আমান– চাচ্চু!!??
চাচ্চু– আমি ইচ্ছে করেই কাজ টা করেছিলাম। যাতে আমানের মনে আঁধারের জন্য ঘৃণা সৃষ্টি হয়, আর এটা বলতে বলেছিলাম ঐ আকাশি কে কিন্তু ও কি করলো?? আমানের জীবন থেকে হুট করেই গায়েব হয়ে গেলো আমার কাছে মিথ্যে বলে যে ও আমান কে বলবে। প্রথম থেকে এই মেয়েটা আমার কাজের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আঁধারের কাছে আমার বিপরীত কথা বলেছে, আর এই আঁধার তো প্রেমে অন্ধ হয়ে ছিলো আকাশির তাই সব মেনে নিয়ে আমার কথা শোনেনি।
চাচ্চুর কথা শুনে আকাশি আপু ছলছল চোখে আঁধার ভাইয়ার দিকে তাকালো, আমি তো আগেই বুঝেছিলাম যে ভাইয়া আপু কে ভালোবাসেন।
চাচ্চু– অনেক ঢং হয়েছে এবার তোরা চুপচাপ সাইন কর। (একটা কাগজ এগিয়ে)
আমান কিছু বলতে গেলেই চাচ্চু ওকে থামিয়ে দেয় আর আমি নিজের মাথায় কিছু একটা অনুভব করি।
চাচ্চু– তেরি বেরি করলে তোর কলিজা আর তোর ভাইয়ের কলিজা কে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেবো।
আমার আর ইসমির মাথায় হুট করেই পিছন থেকে কেউ বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে। অর্নিল সেটা দেখে চুপচাপ সাইন করে দিয়ে আমান কে দেয় কাগজ টা, আমান একবার আমার দিকে তাকিয়ে কাগজে সাইন করে দেয়। আজ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, যখন সবটা ঠিক হয়ে যাচ্ছিল তখনই এসব…
চাচ্চু– এটা কি করলি তুই আঁধারররর??
আঁধার– যেটা করা উচিত ছিলো। আমান আর অর্নিল সাইন করে দিয়েছে বলে যে আমিও করে দেবো ভাবলে কি করে?? তোমার আসল রুপ আমার সামনে না আসলেও আমি সাইন করতাম না। তাই সম্পত্তির আশা ছেড়ে দাও। (কাগজ গুলো হাওয়ায় উড়িয়ে)
আসলে আমান যখন সাইন করে পেপার টা আঁধার ভাইয়ার কাছে দিয়েছিল তখন আঁধার ভাইয়া ওটা ছিড়ে ফেলে, আকাশি আপুর দিকে তাকিয়ে। তারপর কথাগুলো বলে।
চাচ্চু– আচ্ছা তাই নাকি?? এইইইই!!
চাচ্চুর “এই” বলার সঙ্গে সঙ্গেই একটা গুলির আওয়াজ হয় আর আমি চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার শুনতে পাই।
আঁধার– শবনমমমমমম!!!!