ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 27

“নীলাদ্রির আসল পরিচয় শুনে আর আমানের আসল রুপ জেনে সত্যি আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে। ”
আমান– বল মীরা কোথায় নাহলে আজকে আমি তোকে জানে মেরে দেবো। এতদিন ছেড়ে দিয়েছি বলে আজকেও ছেড়ে দেবো এটা ভাবিস না।
ইসমি– জিজু!! জিজু প্লিজ ছেড়ে দাও তুর্য কে।
ইসমি তখন তুর্যের কাছে আসার কথা বলেছিল। আর ওর লোকেশন ফলো করে অর্নিল আর আমান এসে পড়েছে। অর্নিল আর আমান খুব তাড়াতাড়ি এসেছে তার কারণ অর্নিল যখন বাসায় যাচ্ছিল আমানকে সবটা জানানোর জন্য তখন আমান রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলো তাই অর্নিলের সাথে আমানের রাস্তায় দেখা হয়ে যায়। আর অর্নিল সঙ্গে সঙ্গে ইসমির লোকেশন ফলো করে চলে আসে। এসে আমান স্তব্ধ হয়ে যায়। আমানের মনে হয়েছিল যে এটা তূর্য ছাড়া আর কেউ জানবে না তাই একটু দেরী না করে তূর্যর কলার ধরে বলতে শুরু করে।
আমান– তুর্য দেরি করিসনা বল আমাকে মীরা কোথায়?? অ্যানসার মি ড্যাম ইট!!
ইসমি– তুমি এতটা সিওর কি করে হচ্ছো জিজু যে তুর্য জানে মীরা কোথায়?? আর তুমি তুর্যকে আগে থেকে চেনো??
অর্নিল– আগে থেকে মানে! অনেক আগে থেকে চিনে ভাই তূর্যকে। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা না চিনে কোথায় যাবে বলো??
ইসমি– কিইইইই?? তূর্য তুই তো আগে এটা বলিস নি যে জিজু তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ইনফ্যাক্ট মীরাও জানে না এটা।
আমান– তূর্য আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না বল মীরা কোথায়??
তুর্য– যেখানে ওর থাকার কথা সেখানেই আছে। এই পরিস্থিতি অনেকদিন আগে আসার কথা ছিল আমান যেটা আসেনি শুধুমাত্র তোর জন্য। আর এখন এসেছেও শুধুমাত্র তোরই জন্য। তোর যদি এক্সিডেন্ট না হতো তাহলে মীরা এই ডিসিশন নিতো না তাই তো এই নাটক।
আমান– কি বলতে চাইছিস তুই??
তুর্য– চল আমার সাথে।
মীরা– কিসের সত্যির কথা বলছেন আপনি??
নীলাদ্রি– জানবে জানবে সবটা জানবে।
এটা বলেই নীলাদ্রি নিজের জায়গা থেকে উঠে অন্যদিকে চলে গেল আর আমি ভাবতে লাগলাম আমি কি করে এখানে এলাম আমি তো রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম আর তখনই একটা গাড়ি আমার সামনে এসে থামল আর আমার মুখে পিছন থেকে রুমাল চেপে ধরলো তারপর আর আমার মনে নেই। তারমানে আমাকে এখানে অজ্ঞান করে নিয়ে এসেছে কিন্তু আমার হাত পা তো বাঁধেনি। আমিতো শুধু চেয়ারে বসে আছি।
নীলাদ্রি– এ নাও পানি খাও। (পানির গ্লাস সামনে ধরে)
মীরা– লাগবে না। (সরিয়ে দিলাম)
নীলাদ্রি– এখন লাগবে না বাট সব শোনার পর লাগতেই পারে।
মীরা– কিসের সত্যির কথা বলছিলেন আপনি??
নীলাদ্রি– তুমি গত একবছর ধরে আমাকে চেনো রাইট?? আর কেনো জানো মনে রেখেছো আমাকে বললে??
মীরা– আপনার নৃশংসতার জন্য। আপনি যেভাবে ঐ ছেলেগুলো কে মে…
নীলাদ্রি– আমি মারিনি।
মীরা– মানে??
নীলাদ্রি– প্রথম থেকে বলি তাহলে??
আমি শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালাম।
নীলাদ্রি– তোমার অনার্স শেষ হওয়ার পর তুমি জব খুজিনি আর সেই সময় রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছিলে তখন তোমার ফাইল এর কাগজপত্র সব হাওয়ায় উড়ে যায় আর তুমি সেগুলো কে ধরার জন্য এদিক-ওদিক ছুটতে লাগলে। আনমনে হাটছিলে তাই এমন হয়েছিল তাই না??
মীরা– আপনি এসব কি করে জানলেন?? তাও আবার এতো ডিটেইলসে??
নীলাদ্রি– সবই আমানকে ফলো করার ফল। ওকে ফলো করতাম তাই তোমার সবই খবর রাখতাম। তুমি জানো সেই দিনের পর থেকে আমান তোমার প্রেমে পড়েছে তুমি কি করে ভাবলে যে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মত আমান তোমার হাতে চড় খেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে গেল?? তোমাকে নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিয়ে দিলো?? নো নো নো এটা একদমই না আমান এক বছর আগে তোমার প্রেমে পড়েছে আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে হত্যালীলা।
মীরা– হত্যালীলা??
নীলাদ্রি– হ্যাঁ হত্যালীলা এই যে এক বছর ধরে যেই নৃশংসতার কথা তুমি আমার নামে চাপাচ্ছ। সেগুলো সবই তোমার আমান করেছে। যেই ছেলেগুলো তোমাকে টিজ করত তোমার নামে উল্টোপাল্টা কথা বলতো তোমার বডি শেমিং করত তাদেরকে আমানই মারত আর সেই খবরই তুমি তার পরেরদিন পেতে। আমি জানতাম আমান তোমাকে খুব ভালবাসে কিছুতেই তোমাকে অন্য কারো হতে দেবে না কিন্তু একটা কোম্পানির কাজে ওকে মাঝখানে বিদেশ চলে যেতে হয় আর সেই ফাঁকে আমি তোমার লাইফে এন্ট্রি নিই। তোমার ফুপি তোমাকে অনেক টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে চাইছিল একজনের কাছে আর সেই একজনটা হলাম আমি আমি চাইছিলাম না তোমার সাথে বিয়ে করতে বাট না ও করতে পারছিলাম না। সেখানে তুমি আমার কাজ টা সোজা করে দিলে বিয়েতে না করে। আমি তোমার ফুপি কে বলে দিলাম যাতে তোমাকে জোর না করে তার বিনিময়ে আমি টাকা দেবো। তোমার ফুপি রাজি ও হয়ে গেলো।
এরপর তোমাকে আমার ভাড়া করা একটা ছেলে টিজ করল আর আমি তোমার সামনে সেই ছেলেটাকে মারলাম। এটা সম্পূর্ণ আমার সাজানো নাটক ছিল যাতে তুমি ভাবো এই সবকিছু আমি করছি আর আমানকে নিজের থেকে দূরে রাখো। আমি খুব ভালোভাবে জানতাম আমার দেশে আসলেই জানতে পারবে যে তোমার ফুপি তোমার বিয়ে ঠিক করেছে আর তারপরেই তোমাকে বিয়ে করে নিতে চাইবে তাই জন্যই তোমার সামনে দেখালাম যে আমি সেই সব ছেলেকে মেরে দেব যারা তোমার কাছে আসার চেষ্টা করবে আর তুমি এইটাই ভাবলে আর আমাকে নিজে থেকে দূরে রাখলে। তারপর আবারও আমান দেশে ফিরে এলো আর নিজের কার্যক্রম চালু রাখলো। বেচারা বড্ড ভালোবাসে তোমাকে। তাই জন্যই তো তোমাকে এক মুহূর্তও বেরোতে দিত না বাসার বাইরে। ও তো জানতে পেরে গিয়েছিল বাসার বাইরে বেরোলে তোমার ক্ষতি হতে পারে নাহলে অনেকদিন আগে এই দিন টা চলে আসত। আজ ওর অ্যাক্সিডেন্ট হল না হলে আজকেও তুমি বাসার বাইরে বেরোতে না আর আমিও তোমাকে পেতাম না আর তোমাকে না পেলে যে আমান এখানে আসবেনা। আমার যে আসল দরকার আমানের সাথে। তুমি তো শুধুমাত্র আমার তুরুপের তাস। মাই ট্রাম কার্ড।
মীরা– তারমানে আমানের কথা আপনি শুরু থেকে জানেন?? আর ফুপি আমাকে এতদিন মিথ্যে ভয় দেখালো??
নীলাদ্রি– হ্যাঁ হবে হয়তো। বাট তোমার ফুপির অবস্থা খুব খারাপ সঙ্গে নীতার ও।
মীরা– মানে??
নীলাদ্রি কিছু না বলে নিজের ল্যাপটপের ভিডিও প্লে করলো। আমি কিছুটা দেখার পরেই হাত দিয়ে চোখ ঢেঁকে ফেললাম কিন্তু কথাগুলো ঠিকই শুনতে পেলাম।
নীলাদ্রি– এখন তোমার কাছে সব ক্লিয়ার তো??
মীরা– নাহ!! আপনার আমানের সাথে কি শত্রুতা?? আর আপনি যখন আমাকে আমানের কাছ থেকে কেড়েই নেবেন তখন বিয়ের সুযোগ থাকতে বিয়ে কেনো করে নিলেন না??
নীলাদ্রি– আমার জীবনে একজনই শত্রু তার নাম হলো আমান খান। আমার থেকে আমার সব থেকে কাছের মানুষ আমার আব্বু কে খুন করেছে ও। তাই তো ওর জীবনের ভালোবাসার মানুষ কে কেড়ে নিই আমি।
____মীরাআআআআ!!
নীলাদ্রি কথা বলছিল তার মাঝেই আমি আমানের কণ্ঠর স্বর শুনতে পেলাম, কিন্তু আমার কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছি।
নীলাদ্রি– নাও এসে গেছে তোমার আমান।
সুমি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমি সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমান আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, মনে হলো জানো ধরে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। হঠাৎই আমার চোখ গেলো নীলাদ্রির দিকে গেলো, এতক্ষণ নীলাদ্রি এদিকেই ফিরে ছিলেন, আমান আসতেই পিছন ফিরে গেছেন ওদের থেকে, কিন্তু আমি সাইড থেকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছি নীলাদ্রি নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, নিজেকে প্রস্তুত করছে।
ইসমি– মীরা তুই ঠিক আছিস তো??
নীলাদ্রি– তোমার বোন একদম ঠিক আছে ইসমি। আমি অনেক যত্নে রেখেছি।
নীলাদ্রি আমার বলার আগেই কথাটা বলে সামনে ফিরলো, আমান আর অর্নিল জানো নীলাদ্রি কে দেখে থম মেরে গেলো, আমান তো পিছিয়েই গেলো দু-কদম। সেই দেখে নীলাদ্রি বললো।

নীলাদ্রি– কি হলো দ্য গ্রেট আমান খান?? আমাকে দেখে তোমার কদম পিছিয়ে গেলো কেনো?? (বাঁকা হেসে)
অর্নিল– ভ..ভা..ভাইয়া!! ভাই দেখো ” আঁধার ” ভাইয়া। আমাদের বড়ো ভা..
নীলাদ্রি– শাট আপ অর্নিল! আমি আঁধার না আমি নীলাদ্রি। আমি কাওর ভাই ও না আর ভাইয়া ও না ওকে??
অর্নিল– এসব তুই কি বলছিস ভাইয়া?? তুই আমার ভাইয়া! আমান খানের ভাই! আঁধার খান।
[এখন থেকে নীলাদ্রি নয় আঁধার ইউস করবো কারণ আসল পরিচয় পেয়ে গেছেন]
আঁধার– নাহ অর্নিল! আঁধার খান কে মানে তোর ভাইয়া কে অনেক আগেই খুন করে ফেলেছে তোর ভাই আমান খান।
অর্নিল– ভাইয়াআআ!! কি বলছিস এসব তুই??
আঁধার– জিজ্ঞেস কর তোর ভাই কে। পাশেই তো দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর সুমি এতক্ষণ নির্বাকের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম, ” নীলাদ্রির আসল পরিচয় শুনে আর আমানের আসল রুপ জেনে সত্যি আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে। ”
অর্নিল– ভাই (আমান কে ডেকে) ভাই তুমি ঠিকই বলেছিলে, অনেক বড়ো একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল আজ থেকে ১২ বছর আগে। ভাইয়া ভাই খুন করেনি। তোমার ভুল হচ্ছে। (আঁধার কে উদ্দেশ্য করে)
আঁধার– আমি এতো সাফাই শুনতে চাইছি না অর্নিল। আমার দরকার টা যদিও তোদের দুজনের সাথে বাট তার আগে আমান এর সাথে কিছু কথা আছে। (বাঁকা হেসে)
আমান ছলছল চোখে আঁধারের দিকে তাকিয়ে আছে, আঁধার আমানের সাথে কথা বলতে চায় কথাটা শুনেই আমানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। যা আমার নজর এড়ালো না।
আঁধার– আমান! আমি কিন্তু তোর অনেক হেল্প করেছি। তোর প্রাণ প্রিয় মীরা কে এতদিনের লুকানো তোর রুপ আমি জানিয়ে দিয়েছি, তোকে আর কষ্ট করতে হবে না।
কথাটা শুনে আমান আমার দিকে তাকালো আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নিলাম, আড় চোখে দেখলাম আমান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
আঁধার– তো এবার বল। কেমন লাগছে নিজের প্রিয় মানুষগুলো কে হারিয়ে?? এতদিন দুর থেকে খবর নিতাম তুই কষ্টে আছিস এখন সামনে থেকে শুনতে চাই।
আমান– হা হা হা হা হা হা।
আমান হাসতে লাগলো, আমানের হাসি শুনে ওর দিকে তাকালাম এদিকে আঁধার গম্ভীর হয়ে গেছে। আমান আঁধারের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমান– আমি তো কোনদিন ভালোই ছিলাম না ভাই। কষ্টেই ছিলাম এখন আর কি এক্সট্রা করে শুনতে চাইছিস তুই??
আঁধার– ডোন্ট কল মি ভাই আমান।
আমান– আজ ১২ বছর পর তোকে পেয়েছি ভাই। আমি “ভাই” বলেই ডাকবো।
আঁধার– ওয়াহ! কি সুন্দর নাটক করছিস। গ্রেট!
আমান– এমনটা কেনো করলি ভাই?? তুই যখন আমার খোঁজ জানতিস তখন ফিরে কেনো এলি না??
আঁধার– কার কাছে ফিরে আসবো ভাই আমার??
আমান– হাহ! (তাচ্ছিল্য হেসে) ভাই বলে স্বীকার করলি তাহলে…
আঁধার– সৎ ভাই!

অর্নিল– ভাইয়াআ!! তুই এটা বলতে পারলি??
আঁধার– না বলার কি আছে?? এমন অনেক কাজই তো হয়েছে আমার সাথে যেটা আমি ভাবতে পারিনি। কি করে পারলি আমান সম্পত্তির জন্য নিজের আব্বু কে খুন করতে?? সেদিন থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম আমার থেকে যেমন আমার সব চেয়ে প্রিয়, আমার ভালোবাসার মানুষ কে তুই কেড়ে নিয়েছিস, তোর থেকেও কেড়ে নেবো আমি তোর ভালোবাসার মানুষগুলো কে।
কথাগুলো শুনে আমান একবার আমার দিকে তাকালো তারপর আঁধারের দিকে তাকিয়ে বলল।
আমান– ভালোবাসার মানুষ?? সে তো আমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি ভাই তোকে হারিয়ে!! আমার জীবনে যদি ভালবাসার মানুষ কেউ থাকে তার সর্বপ্রথম ছিল আমার আব্বু-আম্মু আর তারপর তুই আর তারপর অর্নিল। প্রথমে আব্বু চলে গেল আর তারপর তুই চলে গেলি এখন তো শুধু আম্মু আর অর্নিল রয়েছে। মীরাকে তো তুই সরিয়ে দিলি আমার জীবন থেকে আমি খুব খুশি জানিস তো ভাই তুই তোর কাজে সফল হলি। আমার ভালোবাসার মানুষ কে আমার কাছ থেকে দূরে….
কথাটা শেষ করার আগেই আমি গিয়ে আমান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আর বলতে লাগলাম।
মীরা– আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না আমান। আমার এতদিনের ভয় ছিল নীলাদ্রি! আর এই নীলাদ্রির যখন কোনো অস্তিত্ব নেই তখন আমারও কোন ভয় নেই। এখন তুমিও সব জানো আর আমিও সব জানি। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। কোথাও যাব না আমি তোমাকে ছেড়ে। আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
আমান– আমার ব্যাপারে সবকিছু জানার পরেও তুমি আমার সাথে থাকবে মীরু?? ভাই তো নিশ্চয়ই বলেছে তোমাকে যে গত এক বছরে যে কটা ছেলে তোমাকে ডিস্টার্ব করেছে, তোমাকে টিজ করেছে, তাদের সবাইকে আমি মেরেছি নীলাদ্রি নয়।
মীরা– কার জন্য করেছো এমন?? কেন করেছো এমন?? আমাকে ভালোবেসে তাই তো?? আমাকে আগলে রাখার জন্য করেছো। তাহলে আমি কি করে তোমার থেকে নিজেকে আলাদা করবো আমান যেখানে আমি তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ! আমি যে তোমার ” ভালোবাসার অন্যরুপে ” অভ্যস্ত।
আমান আমার চোখের পানি মুছিয়ে আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আমিও ওনার চোখের পানি মুছিয়ে আঁধার ভাইয়ার দিকে ঘুরলাম আর বললাম।
মীরা– আপনি পারেননি আমানের কাছ থেকে তার ভালোবাসার মানুষ কে দুরে সরাতে। আর আমান! তোমার জীবন থেকে শুধু তোমার আব্বুই হারিয়ে গেছে। তোমার ভাই কিন্তু এখনো তোমাকে ভালোবাসে। তাই জন্যই তো সুযোগ পেয়েও আমাকে বিয়ে করেনি। আমাকে এখানে এনে টাচ পর্যন্ত করেনি আর তোমাকে যে গুলি করেছে সেটাও আঁধার ভাইয়া জানে না।
আঁধার– (মনে মনে– তখনকার কথাটা মীরা শুনে ফেলেছে। আমান কে যে মেরেছে তাকে তো আমি…) আব, এমন কিছুই না। মীরার উপর আমার কোনদিন কোনো ইন্টেরেষ্ট ছিলো না। অন্যের ভালোবাসার উপর কোনো লোভ নেই আমার।
মীরা– তাহলে কি অন্য কাওর উপর লোভ আছে ভাইয়া?? তাহলে ধুমধাম করে তোমার বিয়ে দেবো (হেসে)
আমার কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছে, আঁধার ভাইয়াও ব্লাশ করছে দেখ্লাম।
আঁধার– আব, এসব কি বলছো। আর আমি কি মজা করছি নাকি এখানে?? (গম্ভীর হয়ে গেলেন)
মীরা– আমরাও তো মজা করছি না। সিরিয়াসলি বলছি।
আঁধার– আমান তুই তোর ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে থাক না থাক আমার আর কোনো যায় আসে না। তুই শুধু এই সম্পত্তির কাগজে সাইন করেদে। দ্যান আমি চলে যাবো এখান থেকে।

আমান– কি বলছিস এসব ভাই। এতদিন তুই এতো কিছু করলি শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য?? আরেহ তুই আমার কাছে এসে একবার বলতিস তোর সম্পত্তি চাই। আমি হাসতে হাসতে দিয়ে দিতাম এই সব সম্পত্তি।
আঁধার– (মনে মনে– এইসব সম্পত্তি দিয়ে কি হবে আমার যেখানে নিজের কেউ নেই?? এসব তো শুধুমাত্র চাচ্চুর জন্য! সম্পত্তির লোভ তো কোনো কালেই ছিলো না। বদলা নিতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে চেয়ে ছিলাম প্রিয় মানুষ কে হারালে কতটা কষ্ট হয়। কিন্তু তোর ভাগ্যে বোধ হয় এই কষ্ট টা নেই। তাই দেখ না এতো কিছুর পরেও মীরা তোকে ছেড়ে যাবে না। শুধু শুধু আমার জন্য এই ১ মাস মীরা তোকে দুরে সরিয়ে রেখেছিল। এখন সেটাও হবে না। সত্যি বলতে আমিও চাই না মীরা তোর কাছ থেকে দুরে যাক। তাই তো বিয়েটা করিনি, আর মীরা কে বিয়ে করলে আমার ভালোবাসার কি হতো?? আমিও এবার আমার ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে সুখে থাকবো সবার থেকে দুরে গিয়ে।) হ্যাঁ তাই তো এখন চাইছি। সাইন টা করেদে।
আমান– সাইন করবো না আমি ভাই। সাইন করলেই তো তুই দুরে চলে যাবি। আমি তোকে আর হারাতে চাই না। ১২টা বছর তোকে ছাড়া ছিলাম, আর নয়। এইবার যেতে হলে তুই আমাকে মেরে আমার লাশের উপর দি…
আঁধার– শাট আপ! কি সব আজে বাজে কথা বলছিস ইডিয়ট! (উত্তেজিত হয়ে)
আমারা সবাই আঁধার ভাইয়ার রিয়াকসন দেখে অবাক! এখনও এতো ভালোবাসে ভাই কে। তারপরেও কেনো এতো দুরত্ব?? আমান নিজের আব্বু কে খুন করবে, এটা হতেই পারে না। আঁধার ভাইয়ার ভুল হচ্ছে কোথাও।
আঁধার– আব, না মানে, আমি যাবোই। তুই সাইন কর ব্যাস।
আমান কাগজ টা হাতে নিতেই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।
____আমান সাইন করবে না। আমান নির্দোষ!