ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 29

আঁধার– শবনমমমমমম!!!!
আধার ভাই আর চিৎকার শুনে চোখ খুললাম আর চোখ খুলতে না খুলতেই আমার আর সুমির মাথায় বন্দুক ধরে থাকা লোক দুটি নিচে পড়ে গেল সামনে তাকিয়ে দেখলাম ওর নিজের হাতে বন্দুক আর সেই বন্দুকের মুখ থেকে ধোঁয়া উঠছে পাশে আঁধার ভাইয়ার কোলে আকাশি আপু রক্তাক্ত অবস্থায় তারমানে প্রথম গুলিটা আকাশি আপুর লেগেছে আমাদের মাথার পিছনে বন্দুক ধরে থাকা লোক দুটি পড়ে যেতেই আমানার অর্নিল চাচুকে এগিয়ে ধরল আমি আর সুমি আধার ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলাম আকাশি আপুর দু’জায়গায় গুলি লেগেছে। আমরা বসতেই আঁধার ভাইয়া আকাশী আপুকে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল কারণ আকাশি আপুর জ্ঞান এখনো রয়েছে।
আঁধার– এটা তুমি কি করলে শবনম?? কেন আমাদের মাঝখানে এলে?? গুলি টা আমার লাগতো আর সেখানে তুমি চলে এলে??
শবনম– চাচ্চুকে ছেরোনা আঁধার। তোমরা তিন ভাই মিলে উনাকে উপযুক্ত শাস্তি দিও। আর এই কারনেই আমি চাচীকে বলেছিলাম চাচ্চুকে যেন বলে দেয় আমরা সবাই কোথায় আছি। উনি একদিক থেকে তোমায় গুলি করত আরেকদিক দিয়ে ওনার লোক তোমায় গুলি করতো। তুমি মরে গেলে ওনাকে শাস্তি কে দেবে?? কে তোমার আব্বুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে?? আমি চাই তোমরা তিন ভাই মিলে ওনাকে শাস্তি দাও। তাইতো তোমার গুলিটা নিজের উপর নিলাম। আমি আজীবন তোমার ঢাল হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, যেখানে আমি বেঁচে আছি, পাশে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে তোমাকে কি করে আঘাত পেতে দিই আঁধার।
আপু কথাগুলো বলার পরেই জ্ঞান হারালো। অন্যদিকে অর্নিল এক এক করে চাচ্চুর সব ভাড়া করা লোক গুলোকে মেরে ফেলেছে আর আমান চাচ্চু কে ধরে রেখেছে। আঁধার ভাইয়া তখনই একটা চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো ওর নীলকে।
আঁধার– নীলললললল!!
অর্নিল– বল ভাইয়া।
আঁধার– ইমিডিয়েটলি শবনম কে নিয়ে হসপিটালে এডমিট কর ওর জানো কিছু না হয়।
অর্নিল– আমি থাকতে কিউটিপাইয়ের কিছু হবে না, কিন্তু যে ওর এই অবস্থা করেছে তাক…
আঁধার– তার এর চেয়ে খারাপ অবস্থা হবে। তুই নিয়ে যা ওকে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না। (কড়া গলায়)
তুর্য– নীল! তুই আকাশিপু কে নিয়ে আয় আমি গাড়ি বার করছি।
আমান– মীরু, ইসমি তোমরাও যাও। (গম্ভীর ভাবে।)
অর্নিল আকাশি আপু কে কোলে তুলে নিলো, একটু কষ্ট হলেও তখন অর্নিলের কোনো হুঁশ নেই। আমি আর সুমি গাড়ির পিছনে বসে পরলাম আকাশি আপু কে নিয়ে। অর্নিল ড্রাইভ করতে করতে কাওকে একটা ফোন করলো।
অর্নিল– সুমন!
সুমন– ইয়েস স্যার।
অর্নিল– আমি তোমাকে এড্রেস মেসেজ করছি, তুমি সেখানে ফোর্স পাঠাও কুইক।
সুমন– কিন্তু কেনো স্যার?? আর কে কে আছে ওখানে??
অর্নিল– মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এর হেড আমান খান আর আন্ডারকভার কমান্ডার আঁধার খান। হেল্প লাগবে ওদের।
সুমন– ওকে স্যার এক্ষুনি পাঠাচ্ছি।
অর্নিল– তুর্য ভাই। এড্রেস টা সেন্ড করো এই নাম্বারে।
তুর্য– হমম করে দিচ্ছি। আমি ফোর্স পাঠাতে বলবো??
অর্নিল– যেখানে আমান খান আর আঁধার খান আছে, সেখানে সিবিআই ফোর্স কি করবে?? আমরা যেমন আমাদের সাথে তেমন ফোর্সই মানায়। ওরা দুজন একাই হাজার জনের সমান। আমি শুধু বডি গুলো মর্গে পাঠানর জন্য ফোর্স পাঠাতে বলেছি।
তুর্য– সুমন সেটা বুঝলো কীভাবে??
অর্নিল– সুমনের কাজই ওটা। আমি যখনই ফোন করি আর ফোর্স পাঠাতে বলি সেটা বডি মর্গে পাচার করার জন্যই।
তুর্য আর কিছু না বলে এক্যা শুকনো ঢোঁক গিললো, আর অর্নিল সেই দেখে বাঁকা হাসলো।
ইসমি– তুর্য! তুই সিবিআই??
তুর্য– হমম, সবই আমানের জন্য। আমাকে সিবিআই তে ঢুকিয়ে অর্নিল কে নিজে ট্রেনিং দিতো আর আমাকেও। কিন্তু বিশ্বাস কর এরা এতদিনে যতোকটা খুন করেছে তার ১% ও করতে পারিনি আমি। (দুঃখী দুঃখী মুখ করে)
মীরা– ত..তুই ও?? (ঢোঁক গিলে)
তুর্য– সিবিআইদের কে তো ক্রিমিনালদের মারতেই হবে কিন্তু আমি যখন পৌঁছাতাম ততক্ষণে নয় আমান আর না হয় অর্নিল কেউ একজন ওদের এনকাউন্টার করে দিতো। যার জন্য এখনো আমার প্রমোশন হয়নি 🙂
সুমি কথাটা শুনে আর তুর্যের ফেস দেখে ফিক করে হেসে দিলো, আমি বললাম।
মীরা– বাপ রে, এ কাদের খপ্পরে পরেছি। একেকটা একেক মাপের খুনি আর ক্রিমিনাল।
তুর্য– আল্লাহ! যারা ক্রিমিনালদের মারে তাদেরই ক্রিমিনাল বানায় দিলো, নাথিং টু সে। 😑
অর্নিল– কিউটিপাই কে নিয়ে আসো তুর্য ভাই। আমি ভিতরে যাচ্ছি।
তুর্য আকাশি আপু কে কোলে নিয়ে হসপিটালে ঢুকে গেলো সঙ্গে আমরাও গেলাম।
অন্যদিকে,
চাচ্চু– ছ..ছেড়ে দে আমাকে। আমি না তোদের চাচ্চু?? তোরা এমনটা করতে পারিস না আমার সাথে??
আঁধার– আমার আব্বু কে মারার সময় মনে ছিলো না আমরা তোমার ভাতিজা। আমার আব্বু তোমার নিজ ভাই। মনে ছিলো নাআআআআ!! (চিৎকার করে)
চাচ্চু– আআআআআ!! ছেড়ে দে আমায়। আমান! আমাকে ছেড়ে দে।
[আঁধার আর আমান মিলে চাচ্চুর সব লোক কে মেরে চাচ্চু কে একটা চেয়ারে হাত পা বেঁধে রেখেছে। আঁধারের হাতে একটা গরম শিক আর আমানের হাতে মরিচ গুড়ো। একটা একটা করে কথা বলছে আর আঁধার শিক টা হাতের মুঠোয় চেপে ধরছে তারপর আমান সেটার উপর মরিচ গুঁড়ো ছিটাচ্ছে।]
আমান– ছেড়ে দেবো?? হমম দেবো তো!! এতোদিন আমার প্রাণ প্রিয় ভাই কে আমার থেকে দুরে রেখেছো, আমার ছোট্ট বোন কে দুরে রেখেছো, চাচি কে কষ্ট দিয়েছো এতগুলো বছর ধরে। সেই সময় গুলো ফিরিয়ে দাও যেগুলো আমি আমার ভাই বোন চাচি কে ছাড়া ছিলাম। ছেড়ে দেবো তোমাকে।
চাচ্চু– যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন তোরা আমায় কষ্ট দিলে, তোদের বোন আর চাচির কি হবে??
আঁধার– আমাদের চাচি আর বোন আমাদের কাছে ভালো থাকবে, তোমার মতো পাষাণ, নিষ্ঠুর মানুষের কথা মনেও পরবে না।
চাচ্চু– ম..মা..মানে ত..তোরা কি আ..আমায় প..পু..পুলিশে দিবি??
আমান– ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করার শখ আমার বা ভাইয়ের কাওরই নেই। তুমি যেই হাত দিয়ে আমার আব্বু কে মেরেছ সেই হাত শাস্তি পেয়েছে।
আঁধার– আজীবন তোমার হাত থেকেও থাকবে না। নিজের মানুষ থেকেও থাকবে না। এটাই হবে তোমার পাপের শাস্তি।
চাচ্চু– ক..কি ব..বলতে চ..চা..চাইছিস তোরা??
আঁধার আর আমান কোনো কথা না বলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল আর রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে গিয়ে দেখল যে ওদের ফোর্স এসে গেছে, ওরা ওখানে গিয়ে একজন গার্ড কে বলল।
আমান– ওই রুমে একজন চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে তার হাত যেমন রয়েছে অর্থাৎ যেমন অবস্থায় রয়েছে তেমনি যেন থাকে।
আঁধার– উনাকে যেন কেউ কোনদিন খুঁজে না পায়। এমন জায়গায় ওনাকে গুম করে দাও। খাবার-দাবার সব ঠিকঠাকই দেবে কিন্তু কোনদিনও যেন কোন আলোর মুখ দেখতে না পায়।
গার্ড– ওকে স্যার।
আঁধার– আমার নীল শবনম কে নিয়ে কোন হসপিটালে গেছে আমি এখনি যাবো।
আমান– হমম চল।
এদিকে,
অর্নিল এদিক থেকে ওদিকে পাইচারি করছে, মাথায় ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে নার্স। জোর করে সুমি অর্নিল কে ব্যান্ডেজ করিয়েছে। আমি আর সুমি বসে রয়েছি আর বারবার ও.টি।র দিকে তাকাচ্ছি। আকাশি আপু কে ও.টি. তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঠিক সে সময় আঁধার ভাইয়া আর আমান এসে উপস্থিত হলো।
আঁধার– নীল! শবনম??
অর্নিল– ও.টি.তে নিয়েছে ভাই।
আমান– ডক্টর কিছু বলেছে??
মীরা– নাহ এখনো বের হয়নি।
সবাই নীরব হয়ে গেলাম, আমি দেখলাম আঁধার ভাইয়ার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, আমানের চাইতে বেশি তো আঁধার ভাইয়া কষ্ট পেয়েছে এতগুলো দিন। আমানের কাছে তো আম্মু ছিলো, অর্নিল ছিলো, নিজের মানুস ছিলো কিন্তু ভাইয়ার?? ভাইয়ার তো নিজের বলতে চাচ্চু ছিলো যে কি না এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আঁধার ভাইয়া আকাশি আপু কে কতটা ভালোবাসেন। আল্লাহ! রক্ষা করো আকাশি আপু কে।
নার্স– আকাশি রহমান সাঞ্জানার বাসার লোক কে আছেন??
আঁধার– আমি। (তড়িঘড়ি করে)
নার্স– কে হন আপনি ওনার??
আঁধার– আ..আমি…
আমান– হাসবেন্ড! হাসবেন্ড হয়।
নার্স– একচুয়ালি পেশেন্টের খুব ব্লিডিং হয়েছে, গুলি গুলো বার করার পর। এখন সিচুয়েশন ক্রিটিক্যাল আর ওনার ব্লাড গ্রুপ O নেগেটিভ। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে O নেগেটিভ ব্লাড নেই। আপনাদের জোগাড় করতে হবে O নেগেটিভ ব্লাড ইমিডিয়েটলি।
আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বলে উঠলাম।
মীরা– আমি ব্লাড দেবো। আমার ব্লাড গ্রুপ O নেগেটিভ।
নার্স– কিন্তু ম্যাডাম একজনের থেকে এতো ব্লাড আমরা নিতে পারবো না এতে আপনার হেলথের ক্ষতি হতে পারে।
ইসমি– ও একা নয় আমিও দেব ব্লাড। আমরা দুজন টুইন তাই আমাদের ব্লাড গ্রুপ ও সেম সো অসুবিধা হবে না।
নার্স– ওকে তাহলে তাড়াতাড়ি আসুন আপনারা আমার সাথে।
ইসমি– চল মীরা।
মীরা– হমম, আমরা আসছি।
মীরা আর ইসমি চলে যেতেই আঁধার ধপ করে চেয়ারে বসে পরলো, আঁধারকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে আমান আর অর্নিল আঁধারের দুই পাশে বসে পরলো। বসে আঁধারের কাঁধে হাত রাখলো আর আঁধার ডুকরে কেঁদে উঠলো আর বলতে লাগলো।
আঁধার– এসবের জন্য আমি দায়ী। আমি যদি প্রথমেই শবনমের কথা বিশ্বাস করতাম তাহলে হয়তো আজ এই দিনে আসতো না। আমরা আরো আগে একসাথে থাকতে পারতাম আর শবনম কেউ আমার জন্য এই অবস্থায় পড়তে হতো না, এই সিচুয়েশন ট্যাকেল করতে হত না। সারাটা জীবন আমি ওকে ইউস করে গেছি আরো ও মুখ বুজে সহ্য করে গেছে। আজও আমার জন্য শবনম এই জায়গায়। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। বাঁচবোনা আমি ওকে ছাড়া, ওকে তো কোনদিনও নিজের ভালোবাসার কথাটা বলতেই পারলাম না আমি।
আমান– ভাই ভাই শান্ত হওয়া কিচ্ছু হবেনা আকাশির শি উইল বি ফাইন।
অর্নিল– নার্স তো বললো যে গুলি গুলো বার করা হয়ে গেছে। এখন জাস্ট ব্লাড দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।
আঁধারের জানো আজ কোনো সান্তোনা কানে যাচ্ছে না। ওর শুধু মনে একটাই ভয় হচ্ছে যে শবনমের কিছু হয়ে গেলে, ওর কি হবে?? কার জন্য বাঁচবে??
আঁধারের আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝে ডক্টর বেরিয়ে এলো, আর বললো।
ডক্টর– পেশেন্ট আউট অফ ডেঞ্জার। ইমিডিয়েটলি ব্লাড না পেলে হয়তো বাঁচানো যেতো না।
আমান– ডক্টর মীরা কেমন আছে??
ডক্টর– আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে মিস্টার খান। ওনার বোন যদি ব্লাড দিয়ে হেল্প না করতেন ওনার সাথে তাহলে প্রব্লেমে পরতে হতো।
অর্নিল– তাহলে সবাই ঠিক আছে তাই তো??
ডক্টর– নাহ! সবাই ঠিক নেই। পেশেন্ট আর মিসেস খান ঠিক থাকলেও ওনার বোন ভীষণ উইক। ব্লাড দেওয়ার পরেই সেন্সলেস হয়ে গেছেন। মিসেস খান আর উনি এক কেবিনে আছেন আর পেশেন্ট কে কিছুক্ষণ পর কেবিনে দেওয়া হবে।
ডক্টর চলে যেতেই আমান দেখলো অর্নিল চুপ মেরে গেছে, হাতের মুঠো দুটো মুষ্টিবদ্ধ। আমান অর্নিলের কাঁধে এক হাত রাখলো আরেক হাত আঁধারের কাঁধে রাখলো, আঁধার আর অর্নিল এক হাত দিয়ে আমান কে জড়িয়ে ধরলো আরেক হাত দিয়ে একে অপরকে ধরে গ্রুপ হাগ করলো।
আমান মীরার কেবিনে আসতেই দেখলো মীরা বসে আছে এক মনে, খুব চুপচাপ। আমান গিয়ে মীরা কাঁধে হাত রাখতেই মীরা চমকে উঠলো। সেই দেখে আমান ও একটু ঘাবড়ে গেলো।
মীরা– আপনি??
আমান– হ্যাঁ তো কে হবে?? তুর্য??
মীরা– হমম সেটাই ভেবেছিলাম। 😁
আমান– আচ্ছা তাই নাকি?? 😒
মীরা– হিহিহি। আচ্ছা আপনাদের যে এতো সব আলতু ফালতু পরিচয় আছে এগুলো আগে জানাননি কেনো??
আমান– কোনটা আলতু ফালতু?? 😦
মীরা– এই যে কি সব মাফিয়া না কচু তারপর ঐ কমান্ডার না ঘেচু আর ব্যাঙ, চ্যাঙ গ্যাংস্টার।
আমান– আরআইপি মি 🙂
আমান আমার বেডে শুয়ে পরলো ধপাস করে, আর আমি এদিকে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। আমার হাসি শুনে সুমি আমার দিকে তাকালো।
ইসমি– হাসোস ক্যান??🤨
ওরে সবটা বলতেই ও হাসি শুরু করলো কিন্তু মাঝপথে হঠাৎই অর্নিল এসে সুমি কে জড়িয়ে ধরলো, বুঝলাম সুমির জ্ঞান না থাকায় চিন্তিত ছিলো। একটু মজা করার জন্য বললাম।
মীরা– লজ্জা করে না ভাবির সামনে বউ রে জরায় ধরো??
অর্নিল– কিসের লজ্জা?? আমার ওসব লজ্জা নাই। আমার ভাই যেমন সবার সামনে কোলে তুলে নিতে পারে বউরে আমিও তেমন জরায় ধরতে পারি। কিউট নাহ?? 😁
ইসমি– আল্লাহ! হেতি নাকি চ্যাঙ থুক্কু গ্যাংস্টার। 😑
অর্নিল– আম্মুউউউউ!! 🥺 কখন থিকা খালি অপমান কইরা যাইতাসে 😭
আমান– সুমি! তুমি ঠিকই বলেছো অর্নিল ভীষণ ফাজিল। আর ও ফাজিল বলেই আমি ওকে গ্যাংস্টার বানিয়েছি।
ইসমি– মানে??
আমান আমার পাশে উঠে বসে কোমরে এক হাত জড়িয়ে বললো।
আমান– অর্নিল যেমন বাইরে থেকে ফাজিল তেমন ভিতর থেকে অনেক রাগী, জেদি একটা ছেলে। যতটা নরম দেখায় ওকে বাইরে থেকে ঠিক ততটাই কঠিন ও ভিতর থেকে। আমি বাইরে যা ভিতরেও তাই কিন্তু ওর ক্ষেত্রে এটা নয়। খুব সহজে মানুষের সাথে মিশতে জানে আর এভাবেই আমাদের শত্রুদের সাথে মিশে তাদের কে সবার শেষে মেরে দেয়। সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেড়াতে জানে অর্নিল।
ইসমি– সেটা আমার থেকে ভালো আর কেই বা জানে??
অর্নিল– আবার 😒😡
ইসমি– 🙊

মীরা– আচ্ছা আঁধার ভাইয়া কোথায়??
আমান– আমরা যেমন আমাদের বউয়ের কাছে, সেও তেমন তার বউয়ের কাছে।
আঁধার শবনমের হাতের কাছে বসে আছে, চোখ থেকে অনরবরত পানি ঝরছে, সেই পানি শবনমের হাতের উপর পরতেই শবনম।চোখ মেলে তাকালো, আস্তে করে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো আঁধার বসে আছে আর চোখ থেকে সমানে পানি পরছে। মুখ লাল হয়ে রয়েছে, মাঝে মাঝেই নাক টানছে জানো একটা ছোট্ট বাচ্চা।
শবনম– আঁধার!
আঁধার– শবনম! শবনম তোমার জ্ঞান ফিরেছে?? কখন ফিরলো?? আমি তো…
শবনম– তুমি তো তখন কাঁদতে ব্যস্ত ছিলে। (আস্তে করে উঠে বসতে বসতে)
আঁধার– তুমি উঠছ কেনো?? ইউ নীড রেস্ট।
শবনম– ঠিক আছি আমি। এতো কাঁদছিলে কেনো?? মরে তো যাইনি…
ব্যাস কথাটা শেষ ও হয়নি আঁধার ঝড়ের গতিতে শবনম কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, শবনম তো পুরোই শকড।
আঁধার– তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না মেরি জান। তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আই ক্যান্ট লিভ উইথআউট ইউ। আই লাভ ইউ সো মাচ শবনম। প্লিজ তুমি আমাকে আব্বুর মতো ছেড়ে যেও না, এমনটা যদি হয় তাহলে আমি নিজেকে আর সামলাতে পারবো না, আই উইল ডাই!
শবনম– আঁধার প্লিজ! (আঁধার কে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে)
আঁধার আচমকা ধাক্কা খেয়ে বেশ অনেকটা সরে গেলো, আঁধার মনে মনে ভাবছে ” তাহলে কি সত্যি শবনম ওকে কোনদিন ভালোবাসেনি??”
শবনম– কি ভেবেছো টা কি তুমি?? (আঁধারের কলার টেনে ধরে) বলো কি ভেবেছো নিজেকে?? যা খুশি তাই করবে?? যা মন চাইবে তাই বলবে?? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে ইডিয়ট?? আই লাভ ইউ টু (আঁধারের বুকে মাথা রেখে)
আঁধার– আগে কেনো বলনি তুমি আমায়??
শবনম– তুমি বলেছিলে??
আঁধার– ভালোবাসো যখন রাজি হলে কেনো চাচ্চু যখন আমানের কাছে আসতে বললো??
শবনম– ভেবেছিলাম তুমি ভালোবাসলে আটকাবে আমাকে। বাট আই অ্যাম রং।
শবনম মাথা তুলে আঁধারের দিকে তাকাতেই দেখলো আঁধার তীক্ষ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, শবনম মাথা নীচু করে নিতেই আঁধার ফিক করে হেসে দিলো সেই দেখে শবনম ও হাসলো।
আঁধার– তারমানে আমাদের মনে মনে একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল??
শবনম– হিহিহি হ্যাঁ।
____সাঞ্জুপিইইইইইইই!!
আঁধার ডাক টা শুনেই লাফ মেরে সরে গেলো বেড থেকে আর শবনম কে ঝড়ের গতিতে কেউ একজন জড়িয়ে ধরলো। আঁধার পাসে দাঁড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ল আর শবনম ওর দিকে তাকিয়ে একটা অসহায় হাসি দিলো।
আঁধার– বাপ রে বাপ! এক্ষুনি ঝড়ের সাথে সংঘর্ষ হয়ে যেতো আমার।
____কিইইইইইইই??
আঁধার– আরেহ মা আমার অফ যা। আইয়াই পেত্নি গো মতোন চিল্লাইতাসে।
____সাঞ্জুপিইইইইই!!
শবনম– আউচচচচ!!
আঁধার– হোয়াট হ্যাপেন্ড শবনম?? “দিয়া” এই জন্যই তোকে কম লাফাতে বলি।
দিয়া– স্যরি সাঞ্জুপি। (মন খারাপ করে)
শবনম– আরেহ দিয়ু! ইটস ওকে। আমি ঠিক আছি। চাচি কেমন আছো??
চাচি– তোর জন্য এবার থেকে ভালো থাকবো। আচ্ছা আঁধার! আমান আর অর্নিল কোথায় রে?? অনেক দিন দেখিনি।
আমান– চাচি! আই অ্যাম হিয়ার! (দু-পাসে দু-হাত ছড়িয়ে)
চাচি– এত্ত বড় হয়ে গেছিস আর একটুও চেঞ্জ হোসনি। ঐ ফাজিল টা কোথায়??
অর্নিল– আমি এখানে!! (আমানের পিছন থেকে উঁকি মেরে)
চাচি– তুই উঁকি মারিস কেনো হ্যাঁ?? আয় সামনে। (কান ধরে টেনে এনে।)
অর্নিল– আহ! লাগতিছে চাচি, ছাইরা দাও।
দিয়া– মারো ব্যাটারে! আচ্ছা কইরা ধোলাই দাও।
অর্নিল– আবে পেঁচি! তোকে হাতে পাই আমি তারপর তরে উস্টা দিয়া উরায় দিমু।
দিয়া– আহাহা! আম্রে উস্টা দিবো, তোরে তোর বন্দুক দিয়াই গুলি কইরা খুলি উরায় দিমু।
আমান– সাদু! এখনো ঝগড়া করবি??

দিয়া– মেজ ভাইয়া। (গিয়ে জড়িয়ে ধরলো)
আমান– মীরা, ইসমি। উনি আমার চাচি (চাচি কে উদ্দেশ্য করে) আর এ হচ্ছে আমাদের সবার আদরের একমাত্র প্রিয় বোন সাদিয়া খান রোজ।
দিয়া– এটা মীরা ভাবি আর এটা সুমি ভাবি।
মীরা– তুমি কি করে জানলে??
ইসমি– আচ্ছা আমরা কি বলে ডাকবো তোমায়??
আমান– রোজ!
দিয়া– নাআআআআআ।
আমান– বাপ রে বাপ আমার কান আল্লাহ!
আঁধার আর অর্নিল– 😂😂
দিয়া– একদম না। ঐ নামে আমাকে শুধু আমার মেঘরোদ্দুর ডাকবে। হুহ!
আমান– বইন তুই প্রেম ও করতিসস।
অর্নিল– আবার নাম রাখসস তার।
দিয়া– ক্যান প্রেম করুম না?? আমার বয়স এখন ২০ ওকেই?? আর নাম রাখুম না ক্যান?? এই যে বড় ভাইয়া সাঞ্জুপি রে শবনম কয়, মেজভাইয়া মীরা ভাবি কে মীরু কয় আর এই বেয়াদোপ টা ইসমি ভাবি কে সুমি কয় আমি কিসু কইসি??
আমান– ঠিক আসে বইন তুই চুপ যা।😣
আঁধার– হেতিরে চুপ করা নাইলে সব ফাঁস কইরা দিবো।😖
অর্নিল– ওর ডাক নাম সুমি বইন আমার। আমি অন্য কোনো নাম দিই নাই। 😑
দিয়া– তা দিবি ক্যামনে?? সব সময় তো উচ্চিঙ্ড়ের মতো লাফাইতে থাকস। তোর দ্বারা এইসব কিসু হইব?? আমি ভাইবা দিমু নে।
অর্নিল– সাদি পাদি খাদি তরে তো!!
অর্নিল আর দিয়া সারা কেবিন দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে আর সবাই খিলখিল করে হাসছে। এতদিনে সবার জীবনে খুশি ফিরে এসেছে।
আমান– চলো এবার তো সবাই কে বাসায় যেতে হবে। তুর্য ডিসচার্জ করিয়ে নিয়েছে ভাই তোর কথায়।
আঁধার– হমম, আমি ওকে নিজের কাছেই রাখবো, হসপিটালে থাকার দরকার নেই।
কথাটা শেষ হতে না হতেই শবনম কে কোলে তুলে নিলো, আর হাঁটা শুরু করলো, শবনমের বলার মতো কিছু নেই কারণ আঁধার ওর কথা মেনে নেবে না। আঁধার যাওয়ার পর আমান ও মীরা কে কোলে তুলে নিলো।
মীরা– আমায় কেনো তুললে?? আমার কি গুলি লেগেছে নাকি??
আমান– আমি থাকতে আমার বউ কে হাঁটতে দেবো না।
অর্নিল ইসমির দিকে এগাতেই ইসমি অর্নিলের বুকে হাত দিয়ে অর্নিল কে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে।
ইসমি– একদম না অর্নিল। আমি জানি তোমার পিঠে ব্যাথা আছে। আকাশি আপু কে তোলার সময় বুঝতে পেরেছি। আমাকে কোলে নিতে হবে না আমি হেঁটেই যে…
ইসমির কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্নিল ইসমির বুকে রাখা হাত টা ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোলে তুলে নিলো।
অর্নিল– সামান্য স্টিকের বারি তে আমার কিচ্ছু হবে না। তুমি উইক এটা জানার পরেও আমি তোমাকে হেঁটে যেতে দেবো ভাবলে কি করে?? আমার পিঠে কেউ তলোয়ার চালিয়ে দিলেও তোমাকে কোলে নিয়ে যেতাম আমি।
ইসমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অর্নিলের দিকে। কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।
দিয়া– ইশশশশ সবাই কি সুন্দর কোলে করে গেলো আর আমাকে হেঁটে যেতে হবে??
চাচি– দিয়াআআ! আমি তোর মা হই ভুলে যাস না।
দিয়া– আহাহা চেনে না জানো মেয়ের জামাইকে। বাসায় থাকাকালীন তো মাইয়া রে চেনোও না সব সময় মে…
____আমার ব্যাপারে কথা হচ্ছে বুঝি??
দিয়া– মেঘরোদ্দুর!!

মেঘ– মেঘরোদ্দুরের রোজ মেঘ কে ডাকবে আর সে আসবে না এটা হতে পারে??
কথাটা বলেই দিয়া কে কোলে তুলে নিলো আর দিয়া খিলখিল করে হেসে দিলো আর পা দোলাতে থাকলো।
সবাই চলে যাওয়ার পির চাচি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
চাচি– আজ তুমিও আমাদের মতো খুশি থাকতে যদি সম্পত্তির জন্য আলাদা না হতে। আফসোস তুমি নিজের ভালো বুঝলে না। অবশ্য ওখানে না গেলে আমার দিয়া তার মেঘরোদ্দুর কে পেতো না। যাক আমাদের বাচ্চাগুলো সবাই নিজের ভালোবাসার মানুষ গুলো কে পেয়েছে। এতগুলো বছর কষ্টে ছিলাম এবার অন্তত একটু ভালো থাকবো।