ভালোবাসব যে তোকে

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ! Part- 03

মৌ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে। অন্ধকারে সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখতেও পারছে না সে। শুধু এ টুকু বুঝতে পারছে যে এই মানুষটা তার অনেক কাছে দাঁড়ীয়ে আছে।
মৌ আর কোনো উপায় না পেয়ে চিৎকার করতে যাবে কিন্তু তার আগেই সামনে থাকা ব্যক্তিটা এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে।সে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারছে না।শেষ পর্যন্ত সামনে থাকা ব্যক্তিটা মুখ খুললো।সে বললো,
“এতো ছটফট করো না।আমি আয়ান।
আর তোমার মুখ থেকে হাত সরাচ্ছি কিন্তু তুমি একটুও চিৎকার করবে না।চিৎকার করলেই খবর আছে।”
মৌ নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে জানান দেয় যে সে চিৎকার করবে না।
মৌ এর ইশারা বুঝতে পেরে আয়ান নিজের হাত সরায়।আর সাথে সাথে মৌ বলে,
“আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে টাচ করার!!!!”
“বাহ রে,আমি টাচ করলেই দোষ!!অপরিচিত একটা মানুষ তো তোমাকে ঠিকই টাচ করতে পারে।”
“এসব কি বলছেন আপনি!!”
” এতো অবাক হওয়ার কি আছে?? রাহাত এর গায়ে পরার সময় তো কিছু মনে হয়নি তোমার।”
মৌ অবাক হয়ে বললো,
“আমি উনার গায়ে পরতে যাবো কেনো!!”
“ওহ, তাই!!!কালকে যে রাহাতের গায়ের সাথে লেগে ছিলে সেটা???
আার আমার সাথে তো সোজা মুখে কথাই বলো না। অথচ কালকে ওর সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছিলে।”
“এসব উল্টা পাল্টা চিন্তাভাবনা আপনার দ্বারাই সম্ভব।আর আমি কালকে পরে যেতে নিয়েছিলাম তাই রাহাত ভাইয়া ধরেছিলো। আর আমি কার সাথে কথা বলি, না বলি,সেটাতে আপনার এতো সমস্যা কেনো!!!”
মৌ এর শেষের কথাগুলো শুনে আয়ান চুপ হয়ে যায়। কারন এ কথার জবাব তার কাছে নেই। আসলেই তো, মৌ যার তার সাথে কথা বলুক,এতে তার সমস্যা থাকার কথা না।আয়ান আমতা আমতা করে বললো,
“আছে অনেক সমস্যা আছে। তুমি আর রাহাতের সাথে কথা বলবা না। এমনকি অন্য কোনো অপরিচিত ছেলের সাথেও কথা বলবে না।”
“আমাকো অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলতে মানা করছেন। কিন্তু এদিকে আপনি খেয়াল করেন নি যে আপনিও আমার কাছে অপরিচিত। সে হিসেবে আপনার সাথেও কথা বলা উচিত না আমার।”

“এতো কিছু তোমাকে বুঝতে হবে না। আর আমি তোমার অপরিচিত নই। তুমি আমাকে অনেকখানিই চেনো। আর না চিনলেও আজ থেকে চিনে যাবে।
আর শোনো, আমি যেনো না দেখি যে তুমি রাহাতের সাথে বা এমন কোনো ছেলের সাথে কথা বলছো।”
এমন অধিকার খাটানো দেখে মৌ এর প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো।সে রেগে বললো,
“আপনি মানা করার কে??আর আমি আপনার কথাই বা শুনবো কেনো!!আপনি আমার উপর এতো অধিকার ফলাচ্ছেন কেনো??
আমি সবার সাথে কথা বলবো। হাজারবার কথা বলবো।”
এখন মৌ এর কথা শুনে আয়ানের খুব রাগ উঠে গেলো। এতোক্ষন মৌ এর থেকে দূরুত্ব বজায় রেখে কথা বললেও এখন সে মৌ এর একদম কাছে চলে আসে। আর তার একহাত দিয়ে মৌ এর দুহাত একসাথে চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়।আর বলে,
“আমি বলেছি কথা বলবে না মানে বলবে না। যদি কথা বলো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আমার রাগ তো তুমি জানো না।”
আয়ানের এতো কাছে আসা মৌ এর কাছে খুব অসহ্য লাগছে।আবার আয়ান তার হাত দুটোও এতো জোরে চেপে ধরেছে যে কান্না চলে আসছে তার। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“নিজের দিকে একবার দেখুন তারপর আমাকে বলুন।আপনি যে এতো এতো মেয়ের সাথে কথা বলেন,সেটাতে সমস্যা হয় না তাইনা?”
আয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিয়া রান্নাঘরে চলে আছে আর লাইট অন করে দেয়। রিয়া তো আয়ান আর মৌ কে এতো কাছাকাছি দেখে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে।রিয়াকে দেখে আয়ান মৌ এর হাত ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।মৌ যেনো এখন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।আর রিয়া তো সেখানেই থম মেরে দাঁড়ীয়ে আছে।মৌ রিয়াকে দেখে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। সে গিয়ে রিয়াকে হালকা ধাক্কা দেয়।রিয়া মনে হলো বাস্তবে ফিরে এলো।সে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“তুই আর আয়ান ভাইয়া একে অপরকে লাইক করিস!!!তোরা দুজন গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড!!! তুই আমাকে বলিস নি তাই এ কথা!! আমি তোর শুধু কাজিন ই না, বেস্ট ফ্রেন্ড ও। আর তুই আমাকে এসব বলিসনি!!”
রিয়ার অবিরাম কথা শুনে মৌ রিয়াকে এক ধমক দিয়ে বলে,
“কি সব উল্টা পাল্টা বলছিস তুই!! বলার আগে একবার চিন্তা তো করে নিবি যে কি বলছিস।”
“এখানে চিন্তা করার কি হলো!!তুই আর আয়ান ভাইয়া কতো ক্লোজ ছিলি জানিস!!! এমন থাকা দেখলে যে কেউ বলবে,তোরা দুজন একে অপরকে লাভ করিস।”
“লাভ!!তোর মাথা সত্যিই গিয়েছে।”
“ও তাই নাকি!!তাহলে তুই বল এতো ক্লোজ ছিলি কেনো তোরা??”
এরপর মৌ রিয়াকে সব বলে।সবকিছু শুনে রিয়া তো পুরাই শকড।সে বলে,
“ওওও তাহলে এ কথা। তাহলে আমার সন্দেহ এতোদিন ঠিকই ছিলো।”
মৌ অবাক হয়ে বলে,
“কি সন্দেহ??”
“এই যে,আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।”
রিয়ার কথা শুনে মৌ হেসে জবাব দেয়,
“ভালোবাসে তাও আবার আয়ান ভাইয়া।এটা সত্যিই খুব হাস্যকর বটে।”
রিয়া মৌ এর চুল টেনে দিয়ে বলে,
“জ্বি না ম্যাডাম।এটা সিরিয়াস ব্যাপার। তুই হয়তো এর আগে খেয়াল করিস নি,যে আয়ান ভাইয়া তোকে অন্য নজরে দেখতো। যে নজরে একজন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের দিকে চেয়ে থাকে।”
“এসব কিছুই না বুঝলি?? উনি আমাকে ভালোবাসতে যাবে কেনো। উনার যে কতো শত গার্লফ্রেন্ড, তার হিসাব হয়তো তিনি নিজেও জানেন না।উনি এসব থেকে ফুরসত পেলে তো আমাকে ভালেবাসবে।”
“আরে আমি শিওর।আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।তুই দেখে নিস এটাই হবে। উনি যদি তোকে ভালো না বাসতো তাহলে উনি রাহাত ভাইয়া থেকে এতো জ্বেলাস হতো না।তোকে এভাবে নিষেধও করতো না। উনি তোকে ভালেবাসে বলেই তোর আশপাশে এমন কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারছে না। ”
এসব কথা শুনে এবার মৌ এর মনেও খটখট করতে লাগলো।সে কিছুতেই মানতে রাজি না যে আয়ান তাকে ভালোবাসে। সে আমতা আমতা করে বললো,
“এসব কিছুই না বুঝলি। কালকে বৌভাতের অনুষ্টানে দেখিস আয়ান ভাইয়া পায়েলকে কতো প্রায়োরিটি দেয়। আমাকে যদি সত্যিই উনি ভালোবেসে থাকেন তাহলে এমন কিছুই করবে না উনি। সো কালকেই সব প্রমান হয়ে যাবে।”
“ঠিক আছে। কালকেই দেখা যাবে তাহলে।”
🍁
🍁
বৌভাতের অনুষ্টান মৌ দের বাসার ছাদেই করা হলো।জান্নাতকে সাজিয়ে স্টেজ এ বসানো হয়েছে। মাহতাব ও বসেছে। দুজনকে একসাথে অনেক মানিয়েছে।১২টার মধ্যেই জান্নাতের দিকের সব ফ্যমিলি মেম্বাররা চলে এলো।আজকে পায়েল সেই সাজ দিয়েছে। দেখতেও অবশ্য বেশ ভালোই লাগছে।তার উদ্দেশ্য আয়ানকে ইমপ্রেস করা।বাড়ীতে এসেই আগে তার চোখ আয়ানকে খুঁজছে।বেশকিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে আয়ানকে দেখতে পেলো পায়েল।সে গিয়েই আয়ানের একদম কাছাকাছি দাঁড়ীয়ে রইলো।আর বললো,
“হাই আয়ান, কেমন আছো??”
আয়ান জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“এই তো আছি ভালোই। তুমি??”
“আমিও অনেক ভালে আছি।”
এভাবে করেই কথা এগুতে লাগলো। পায়েল তো খুব খুশি যে আয়ান তার সাথে সময় কাটাচ্ছে।এদিকে আয়ান যে মনে মনে চরম বিরক্ত তা তো আর সে জানে না। কালকো থেকে আয়ানকে একটা বিষয় ভাবাচ্ছে অনেক যে সে কেনো কালকে মৌ এর সাথে এমন বিহেভিয়ার করলো??কেনো মৌ কে অন্য কারোর সাথে সহ্য হয়না।কই আগে তো কোনো মেয়ের জন্য এমন হয়নি তার মনে।কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সে।মাথাটা মনে হচ্ছে জ্যাম হয়ে আছে। এর মধ্যো আবার পায়েলের কিটকিট আরো বিরক্তি লাগছে।পায়েলকে কিছু বলতেও পারছে না। কারন সে চাচ্ছে না কোনো মেয়ের সাথে আজকে রুড বিহেভ করতে।না চাওয়া সত্ত্বেও পায়েলের সাথে মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

দূর থেকে এসব পর্যবেক্ষণ করছে রিয়া আর মৌ। রিয়া চাচ্ছে যে তার সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হোক। আবার মৌ চাচ্ছে রিয়ার সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হোক।
আয়ানের পায়েলের প্রতি সফট বিহেভিয়ার দেখে মৌ মনে মনে শিওর হলো যে আয়ান তাকে ভালোবাসে না। কারন তাকে ভালোবাসলে গতকালের কাজের পর আজকে আর হয়তো পায়েলের সাথে কথা বলতো না। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি।আয়ান পায়েলের সাথে বেশ ভালোভাবে কথা বলছে।
মৌ গিয়ে রিয়াকে বললো,
“দেখছিস সব?? বললাম না আমি যে তুই যা চিন্তা করছিস এমন কিছুই না।”
জবাবে রিয়া কিছুই বললো না। কারন সে এটা মোটেও চিন্তা করেনি। সে তো ভেবেছিলো হয়তো আয়ান মৌ কে ভালেবাসে। কিন্তু এমন তো কিছুই না।
হঠাৎ করে রাহাত তাদের সামনে উপস্থিত হলো।মৌ কে দেখে বললো,
“কেমন আছো মৌ??”
রাহাতের এভাবে হঠাৎ উপস্থিতিতে মৌ আর রিয়া কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তাও মৌ নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলে,
“জ্বি ভালে আছি রাহাত ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন??”
“এইতো ভালো।গল্প করছিলে??”
“হুম।”

এদিকে আয়ান এটা দেখে রাগে ফুসতে থাকে।এতোক্ষন পায়েলের জন্য যে বিরক্তি ভাবটা ছিলো মূহুর্তে তা রাগে পরিণত হয়। কারন তার একটুও সহ্য হচ্ছে না রাহাত আর মৌ এর কথা বলা।
সে পায়েলের কথার মাঝেই উঠে গিয়ে মৌ আর রাহাতের সামনে দাঁড়ায়। মৌ কে কিছু না বলেই আয়ান মৌ এর হাত ধরে টেনে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একটা রুমের উদ্দেশ্যে যায়। এদিকে মৌ তো নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু পারছে না।
আর রাহাতের তো আয়ানের এমন হুটহাট লাজে প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো। সে চাইছিলো মৌ এর সাথে কিছুটা সময় কাটানোর,কিন্তু আয়ান এসে সব নষ্ট করে দিলো।মনে মনে আয়ানকে বেশ কিছু গালিও দিয়ে বসলো।
আর রিয়া এবং পায়েল দুজনই আয়ানের এমন কাজে হতভম্ব।রিয়া তো ভেবেই নিয়েছিলো যে হয়তো আয়ান মৌ কে ভালেবাসে না। কিন্তু রাহাতের সাথে কথা বলা সহ্য করতে না পেরে যে আয়ান এমন করেছে তা রিয়া বেশ ভালোভাবেই বুঝলো।
আশেপাশে বেশি মানুষ না থাকায় তেমন কেউ এসব দেখেনি।কারন সবাই ব্যস্ত বউ এর সাথে ছবি তুলতে। আর যারা দেখেছে তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি বিষয়টা।
আয়ান মৌ কে মৌ এর রুমে নিয়ে এসে জোরে দরজা লাগিয়ে দেয়। এভাবে দরজা লাগানোতে মৌ এর আত্মা যেনো কেঁপে উঠলো।
চলবে…..