ভালোবাসব যে তোকে

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ! Part- 04

রাগে আয়ানের মাথার রগ ফুটে উঠেছে।এমন হুট করে সবার সামনে দিয়ে হাত ধরে নিয়ে আসার জন্য মৌ এরও রাগ লাগছে। সে আয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো,
“এসব কোন ধরনের অসভ্যতামি আয়ান ভাইয়া??”
“কি অসভ্যতামি দেখলে তুমি এতে?? যখন রাহাতের সাথে কথা বলছিলে তখন মনে হয়নি আমার বলা কথা গুলো???অসভ্যতামির তো কিছুই দেখলে না। দেখবে তো এখন। ”
এই বলে আয়ান ধীর পায়ে মৌ এর দিকে এগুতে থাকে।আয়ানের এভাবে কাছে আসা দেখে মৌ এর ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সে কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
“�এভাবে এগুচ্ছেন কেনো আপনি??”
“তুমিই তো বললে,আমি অসভ্যতা করেছি। তো এখন সেটা করে প্রমান করে দেই যে আমি আসলেই অসভ্যতা করেছি। ”
“দদেখুন আপনি প্লিজ আমার দিকে আগাবেন না। প্লিজ।”
“উঁহু। তুমি আমাকে যা বলেছো তা কি আমি করে দেখাবো না? অবশ্যই করবো।
এন্ড আই থিংক ইট গোনা বি সো আমেইজিং।”
কথা বলতে বলতে আয়ান মৌ এর একদম কাছে চলে আসে।আর মৌ পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যায়।ভয়ে তার বুক ঢিপঢিপ করছে। আয়ানের এগুনো দেখে তা মন একটা দিকেই ইশারা করছে যে আয়ান তার সাথে কি করতে পারে। সবচেয়ে জঘন্য কাজটা তাহলে আয়ান ভাইয়া করতে যাচ্ছে।
ভয়ে মৌ এর মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।চিৎকার যে করবে সে আওয়াজটুকু পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তার মস্তিষ্ক নিষেধ করে দিয়েছে যে তাকে এ মূহুর্তে কোনো সাহা্য্য করবে না।

আয়ান মৌ এর একদম কাছে দাঁড়ীয়ে আছে। এমন কাছে যে দুজন দুজনের হৃৎপিন্ডের ধুকপুক আওয়াজ ও শুনতে পারছে। আয়ান ধীরে ধীরে মৌ এর মুখের দিকে এগুতে থাকে।মৌ যে নিজের শক্তি দিয়ে আয়ানকে ধাক্কা দিবে, সে শক্তিটুকু ও এ মূহুর্তে সন্ঞ্চয় করতে পারছে না।তাই সে ভয়ে নিজের চোখদুটু বন্ধ করে ফেলে। হয়তো চোখদুটু বন্ধ করে রাখলে সে যা চিন্তা করছে তা হবে না।
বেশ কিছুক্ষন ধরে মৌ চোখ বন্ধ করেই আছে। কিছুই তো হচ্ছে না। তাহলে??সে ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুললো আর দেখলো আয়ান এখনো তার দিকে ঝুঁকে আছে। মুগ্ধ নয়নে দেখছে তাকে।মৌ এর চোখ খুলা দেখে আয়ান বললো,
“কি ব্যাপার চোখ খুললে কেনো?? এভাবে তোমাকে দেখতে অনেক ভালো লাগছিলো।”
জবাবে মৌ কিছু বললো না। আয়ান আবারো বললো,
“জানো তোমাকে প্রথমদিন থেকেই আমার একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করে। ইচ্ছে করতো সবসময় তোমাকেই দেখতে থাকি।
আগে আমার সব মেয়ের সাথেই ফ্লার্ট করতে ভালো লাগতো। তোমাকে দেখেও আমি ভেবেছিলাম যে দুদিনের গার্লফ্রেন্ড বানাবো তোমাকে।কিন্তু তুমি আমাকে পাত্তা দিতে না। এইজন্যই আরো আকর্ষন হই তোমার প্রতি।এই আকর্ষন দিন দিন আরো বাড়ছে মনে হচ্ছে আমার তোমার প্রতি।বিয়ের দিনে রাহাতের সাথে তোমার কথা বলা একদম সহ্য হয়নি।কেনো সেটা জানি না ভালোভাবে।এখন এটাকে তুমি পছন্দ বলতে পারো। কিন্তু আমার মনে হয় এটা পছন্দ থেকে বেশি কিছু। হয়তে ভালোবাসা। হয়তো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আবার নাও ভালোবাসতে পারি। আমি কিছুই জানি না। আমি খুবই কনফিউজড। খুবই।”
এটা বলেই আয়ান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিন্তু আবার মৌ এর কাছে এসে বললো,
“আচ্ছা তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে কিস করবো??”
কিসের কথা শুনে মৌ এর চোখ দুটো বড় হয়ে যায়।মৌ কে এভাবে দেখে আয়ান হালকা হেসে বলে,
“ডোন্ট ওরি। আমি এমন খারাপ নই যে বিয়ে ছাড়া এসব করতে যাবো।
আর হ্যা আরেকটা কথা, এরপর থেকে রাহাতের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে।আর আমার কথা না শুনলে নেক্সট বার আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করবো না। বুঝেছো??”
আয়ানের কথা শুনে মৌ মাথা নাড়ায়, যার অর্থ সে বুঝেছে। এরপর আয়ান সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে মৌ এর মাথায় আয়ানের বলা কথাগুলো ঘুরছে। কি বলে গেলো আয়ান।মাথায় ঢুকছে না তো কিছুই। আয়ান কি কারনে ওকে ভালোবাসতে যাবে??ও তো তেমন সুন্দরী না। ওর চেয়েও সুন্দর তো পায়েল। তাহলে ওকে কেনো ভালেবাসতে যাবে??আর আয়ান কি সত্যিই তাকে ভালোবাসে নাকি কিছু সময়ের মোহ এটা??নাহ কিছুই বুঝছে না সে।
🍁🍁
রাতে বারান্দায় দাঁড়ীয়ে আছে মৌ। এখনো তার মাথা থেকে আয়ানের বলা কথাগুলো বের হয়নি।
কিছুক্ষন পর রিয়া এলো বারান্দায়।সে এসেই মৌ কে বললো,
“কি বলেছিলাম না আমি যে আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে??আমার কথা তো বিশ্বাস করলি না। ”
মৌ আনমনে জবাব দেয়,
“হয়তো উনি ভালোবাসেন আমাকে।”
মৌ এর মুখে এ কথা শুনে রিয়া অবাক হয়ে যায়।সে ভাবছে যে মৌ কি তাহলো স্বীকার করলো যে আয়ান তাকে ভালোবাসে।কিন্তু মৌ এর আয়ানের প্রতি কি কোনো ফিলিংস আছে??
মৌ বললো,

“আমার কিছুই মাথায় আসছে না।আসলে উনি কি চায়। উনি কি আমাকে আদৌ ভালোবাসেন নাকি সময়ের মোহ এটা শুধু??”
“তুই ভালোভাবে ভেবে দেখ। কিন্তু আমার মনে হয় কি জানিস,আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। ”
মৌ কিছু বলে না। সে চুপ করে আছে।রিয়া আবার বলে,
“আচ্ছা আয়ান ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।কিন্তু তুই কি উনাকে ভালোবাসিস??এটা ভেবে দেখিস একবার।”
বলে রিয়া চলে যায়।কিন্তু মৌ কে ফেলে যায় এক কঠিন পরিস্থিতিতে। এতোক্ষন সে ভাবনায় ছিলো যে আয়ান তাকে ভালেবাসে কি না।আজকে আয়ান চলে যাবে তার বাসায়।কালকের পর থেকে এখন অবধি মৌ এর সাথে তার দেখা হয়নি।
চলে যাবার সময় তার একটু ইচ্ছে হলো মৌ কে দেখার।কিন্তু মৌ তো বের হচ্ছে না রুম থেকে।
অবশেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আয়ান চলে গেলো। তার একটুও ইচ্ছা করছিলো না যেতে কিন্তু কিছুই করার নেই। তাকে তে যেতে হবে।
নিজের বারান্দায় দাঁড়ীয়ে আয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে মৌ। কেনো যেনো তার খুব খারাপ লাগছে আয়ানের চলে যাওয়াতে। মন বলছে আয়ানকে আটকাতে। কিন্তু কিসের জন্য??কি কারনে তার মন আয়ানকে আটকাতে চাচ্ছে। সে উত্তর সে নিজেও জানে না। কিন্তু তাকে তে উপলব্ধি করতে হবে।হয়তো এ দূরে যাওয়াই তাদের ভালোবাসার সূচনা করবে।
🍁
দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আয়ান। এ মানুষটার কাছে আয়ানের প্রায় সব সমস্যার সমাধান থাকে।আয়ান তার দাদির সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি। সব কথাই শেয়ার করে সে।
“দাদি,তোমাকে তে মৌ এর কথা বললাম। তোমার কি মনে হয়,আমি ওকে ভালোবাসি??”
দাদি কিছুক্ষন ভেবে তারপর আয়ানের মাথায় হালকা চাটি মেরে বললো,
“এই ছেলে,এটুকু বুঝিছ না যে তুই ওকে ভালেবাসিস কি না??এতো বড় ছেলে, আর এটুকু বুঝিছ না!!
আর আমি যদি বলি যে এটা তোর ভালোবাসা না,তারমানে তুই ওকে ভালেবাসিস না তাইনা??
আমার বলা তে কি হবে?? নিজে চিন্তা কর।”
“উফ, দাদি, আমি নিজে জানি না বলেই তো তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। প্লিজ দাদি বলোনা। সিরিয়াস বিষয় কিন্তু এটা।”
“যাহ, বলছি।
এটা তোর ভালোবাসাই মৌ এর জন্য।”
দাদির কথা শুনে আয়ানের চোখমুখে একটা চমক দেখা গেলো।
পরেরদিন
মৌ ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলো। পথে সে দেখলো যে রাহাত দাঁড়ীয়ে আছে।মৌ কে দেখে রাহাত মৌ এর কাছে গেলো। সে চাচ্ছে মৌ এর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু মৌ রাহাতকে সম্পূর্ণ ইগনোর করলো।সে কোনো প্রকার কথাই বললো না।
এ দেখে তো রাহাতের খুব রাগ হয়ে গেলো। তার পরের দিনও রাহাত ওয়েট করছিলো মৌ এর জন্য।মৌ গতদিনের মতোই ইগনোর করলো।
মৌ এর ইগনোর করা দেখে রাহাত সিদ্ধান্ত নিলো পরেরদিন কথা না বললে,সে খারাপ কিছুই করে ফেলবে হয়তো।

রাহাত আজকে মৌ এর জন্য ওয়েট করছে। সে ভেবেছে মৌ কে প্রথমে ভালোভাবে বুঝাবে। না রাজি হলে পরে…..
মৌ যাওয়ার পথে রাহাতকে দেখলো কিন্তু প্রতিদিনের মতো আজকেও ইগনোর করতে চাইলে কিন্তু পারলো না। রাহাত মৌ এর পথ আটকে ধরলো।
“মৌ তুমি আমাকে ইগনোর কেনো করছো??আমি কি কোনো দোষ করেছি??”
“দেখুন আপনার সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।।”
কেনো??আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
এ কথা শুনে মৌ অবাক হয়ে যায়।সে আমতা আমতা করে বলে,
“কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।”
“এখন ভালোবাসো না।কিন্তু ধীরে ধীরে ভালেবেসে ফেলবে।”
“বলছি তো যে ভালোবাসব না।”
এবার রাহাতের রাগ হয়ে যায়।সে বলে,
“কেনো?? অন্য কাউকে ভালোবাসো?”
“সেটা আপনার জানতে হবে না।।”
“কেনো??আমি জানবো।”বলে মৌ এর হাত চেপে ধরে। মৌ নিজেকে ছাড়ানের চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।রাহাত মৌ কে বাজেভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু হঠাৎ করে একজন রাহাতের হাত জোরে করে মুচড়ে ধরে
চলবে…..