ভালোবাসব যে তোকে

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ! Part- 02

ধীরে ধীরে সব মেহমান রা আসা শুরু করলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেলো। আয়ানের জন্য প্রথম থেকেই মৌ এর মুড অফ ছিলো। কিন্তু পরে নিজেকেই বুঝালো এই বলে যে,
“নিজের ভাইয়ের বিয়েতে এভাবে মুড অফ করে রাখার কোনো মানে হয়না।”
সে মনমতো এন্জয় করতে চায়।
কিছুক্ষন পর মৌ এর ও পালা আসলো মাহতাবকে হলুদ লাগানোর। সে ইচ্ছামতো সারা মুখে হলুদ মাখিয়ে দিলো।এ দেখে মাহতাব কিছুই বললো না। কারন তার একমাত্র বোন বলে কথা,এমন মজা সে করবে না তো আর করবে কে।
মাহতাব এর চুপ থাকা দেখে মৌ অবাক হলো। কারন সে ভেবেছিলো মাহতাব হয়তো রাগ করবে। কিন্তু এমন কিছুই তো হলো না। সে কৌতুহল হয়ে তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো।,

“কি ব্যাপার, ভাইয়া তুমি রাগ করো নি??”
মাহতাব মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“এখানে রাগ করার কি আছে। তুই আমার আদরের ছোটো বোন। সো এতটুকু তো করতেই পারিস।”
মাহতাব এর কথা শুনে মৌ খুশি হয়ে জবাব দিলো,
“ইউ আর দা বেস্ট ব্রাদার ইন দা ওয়ার্ল্ড। ”
মাহতাব একটু ভাব নিয়ে বললো,
“আই নো আই নো।”বলেই দুই ভাইবোন ফিক করে হেসে দিলো।
এদিকে আড়াল থেকে একজন মৌ এর মিষ্টি হাসি দেখে যাচ্ছে। যা তার মনে অসম্ভব ভালো লাগার অনুভুতি তৈরী করছে।
হলুদের শেষের দিকে মাহতাবের বন্ধুরা আর কাজিনরা মিলে গ্রুপ ডান্স করলো।এর মধ্যে অবশ্যই আয়ান আছে।মেয়েরা তো সব আয়ানের ডান্স মুভ দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে প্রায়।আবার ডান্স এর মধ্য আয়ানের ফেস এক্সপ্রেশান্সগুলোও দেখার মতো। যে কাউকে ফিদা করে দিবে।আয়ানের ডান্স দেখে মৌ এর ও খুব ভালো লাগে।কিন্তু বাকি সব কিছু চিন্তা করে নিজের ভালো লাগাটাকে এক সাইডে সরিয়ে দেয় সে।
ডান্স এর মধ্য আয়ান বেশ কয়েকবার মৌ কে আড়চোখে দেখেছে। আবার অন্য সুন্দরী মেয়েদের দিকে যে তার চোখ যায়নি তা না।
সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।সবাই আজকে বেশ ক্লান্ত। আবার কালকে বিয়ে। এজন্য রাতের খাবারের পরে সবাই শুয়ে পরতে যায় যে যার জায়গায়।
রাতের খাবার শেষে নিজের রুমে এসে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে মৌ। তার রুমে সে সহ তার ৫জন কাজিন আছে।সবাই বসে বসে আজকের দিন নিয়ে গল্প করছে। কথা যাই হোক, ঘুরে ফিরে তারা আয়ানের কথাতেই চলে আসছে।মৌ এর তো এসব শুনে রাগ উঠে যাচ্ছে। সে তাদের ধমক দিয়ে বলে,
“এই তোরা চুপ করবি??আর একবার ঐ আয়ান আয়ান করলে সবগুলোর মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিবো। ঐ আয়ানের বাচ্চা আয়ান ছাড়া কি আর কোনো কথা নেই তোদের হুম??”
রিয়া বলে উঠে,

“আচ্ছা তোর সমস্যা কি বলতো?? তোর ঐ ইয়াং ম্যান কে সহ্য হয়না কেনো??”
“তুই কি দেখিস না সবার সাথে কেমন বিহেইভ করে??”
ইশা অবাক হয়ে বলে,
“কেমন বিহেভিয়ার আপু?? সব তে ঠিকঠাকই। সবার সাথে কতো সুইট হয়ে কথা বলে।”
“এটাই তো সমস্যা। সবার সাথে এতো সুইট হয়ে কথা বলার কি দরকার!!স্বাভাবিকভাবে কথা বললেই তো হয়।কারোর মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত সুইটনেস থাকা ভালো না।এতে যে কারোর ডায়াবেটিস হতে পারে।”
রিয়া সব শুনে সন্দেহের সুরে বলে,
“আচ্ছা,তুই জেলাস না তো আবার?? যে আয়ান ভাইয়া তোকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু অন্য মেয়েদের দেয়??”
মৌ রেগে বলে,
“কিসের জেলাস হুম?? আমরা কি লাভার নাকি হুম??আর আমাকে পাত্তা দিবে কি।আমি নিজেই ঐ বজ্জাত বেটাকে পাত্তা দেই না।”
রুমে উপস্থিত সবাই বলে,
“ওওওওও তাই?????”
“হুম তাই। এবার সব কয়টা ঘুমা। ঐ আয়ানের বাচ্চা আয়ান নিয়ে আর একটা কথাও যেনো না হয়। বিরক্তিকর একটা মানুষ।”
বলে মৌ শোয়ার প্রস্তুতি নেয়।
এদিকে যে রুমের বাইরে দিয়ে আয়ান এদের সব কথা শুনেছে তা কেউ জানে না।আয়ান তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলার পর মৌ এর রুমের পাশে দিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছিলো পানি খেতে।তখনই এদের কথা শুনে থেমে যায় সে।তাকে উদ্দেশ্য করে মৌ যা যা বলেছে তা শুনে সে রেগে যায়।সবার কথা শেষ হলে আয়ান মাহতাব এর রুমে এসে শুয়ে পরে।
🍁
🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠে মৌ ঘুম ঘুম চোখে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সামনে পরে যাওয়া পানিতে স্লিপ কেটে সে পরে যায়।পরে গিয়ে কোমড়ে হালকা ব্যাথা ও পায়। খুব বেশি ব্যাথা পায়নি বলে নিজে থেকেই উঠে দাঁড়ালো সে।উঠে গিয়ে খাটের উপর বসে রাগে ফুঁসছে সে।নিজের রাগ দমিয়ে রেখে সে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
“আমার রুমে পানি কে ফেলেছে??”
কিন্তু ওদিক থেকে কোনো আওয়াজ আসলো না।কারন সবাই কাজে বিজি।মৌ কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে রইলো। সে জানে এখন কেউ জবাব দিবে না।
কিছুক্ষন পর রুমে রিয়া আসলো।তাকে দেখেই মৌ জিজ্ঞাসা করলো
“আচ্ছ এখানে পানি কে ফেলেছে রে??”
“আমি তে জানি না কে ফেলেছে।কেনো আবার পরে গিয়েছিস নাকি?””
মৌ মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
“হুম।”
মৌ এর জবাব শুনে রিয়া হাসতে হাসতে রীতিমতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। রিয়ার হাসি মৌ এর কাছে এতো বিরক্তি লাগছে যে সে জোরে রিয়াকে ধমক দিয়ে বললো,
“চুপ করবি তুই!!!””
রিয়া হাসি থামিয়ে বললো,
“তোর কি পরে যাওয়ার কোনো রোগে ধরেছে নাকি রে???সেই গত পরশু থেকে শুধু পরেই যাচ্ছিস।পরশুদিনও পানিতে পিছলে পরেছিলি। আবার আজকেও। গতকাল তো তাও শাড়িতে আটকে পরে যেতে বসেছিলি, তাও সময়মতো আয়ান ভাইয়া তোকে ধরেছিলে বলে পরিসনি তুই।”
মৌ অসহায় ভাবে বলে,
“কি যে হচ্ছে বুঝছি না। মাসে কতোবার ই পরি আমি।উফফ।আবার সামনে পানি থাকলে তো কথাই নেই। পানি মনে হয় আমার পা কে ইনভাইট করে,’আসো বাবু এখানে ধপাস করে পরো’।কি এক ঝামেলা উফফ।…..”
মৌ এর কথা শুনে রিয়া মিটিমিটি হাসতে থাকে।হাসতে হাসতে বলে,
“বেবি, আজকে সাবধানে থেকো হুম??আজকে মেয়েপক্ষের সামনে পরে গেলে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে নে।”
রিয়ার কথা শুনে মৌ অসহায় দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকায়।মৌ মনে মনে চাচ্ছে যে এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে।
কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।ছেলেপক্ষ আর মেয়েপক্ষ উভয়ই চলে এসেছে।
মৌ আজকে মিষ্টি কালারের একটা গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পরেছে। মুখে যে খুব বেশি বা কম মেকআপ করেছে তা না। মিডিয়াম মেকআপ।যা তাক সুন্দর করে তুলেছে।
কাকতলীয়ভাবে আয়ানও সেইম কালারের পান্জাবী পরেছে।তাকেও আজকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।
মৌ আর তার কাজিনরা বাইরে গিয়েছে ছবি তুলতে।কিছুক্ষন পরেই তাদের ডাক পরলো বিয়ে পরানো হবে বলে। সবাই একে একে কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে আলে গেলো।আর মৌ তাদের তোলা ছবিগুলো দেখতে দেখতে আসতে লাগলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় আবারো পরে যেতে লাগলো মৌ কিন্তু তার আগেই একটা ছেলে তার হাত ধরে ফেললো।মৌ তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো।সে ভেবেছিলো আজকে মনে হয় তার মান সম্মান গেলো বলে।ছেলেটা মৌ এর হাত ধরে টান দেয়। মৌ টাল সামলাতে না পেরে ছেলেটার গায়ের উপর পরে যায়।কিন্তু এভাবে বেশিক্ষণ থাকেনি মৌ।কারন কোনো ছেলের এতো কাছাকাছি আসা মোটেও পছন্দ করে না সে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে নিজেকে সামলে নিয়ে ছেলেটা থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়।
কিছুক্ষন দুজনই চুপ ছিলো। সামনে থাকা ছেলেটা নিরবতা ভেঙে বললো,
“সরি এমন করায়।”
“না না আপনি সরি বলছেন কেনো?দোষটা আমারই। আমিই টাল সামলাতে না পেরে পরে যাই।”
“ওহ,ইটস ওকে। বাই দা ওয়ে আপনাকে চিনলাম না। আপনার নাম??”
“আমি মাহতাব ভাইয়ার ছোটো বোন।”
“ওহ। তাহলে আপনি সেই মৌ?”
“মানে??”

“চলুন যেতে বলা যাবে।বিয় পরানো শুরু হয়ে যাবে।”
“জি চলুন।”
এদিকে একজন তো এসব দেখে রাগে জ্বলছে।
মৌ জিজ্ঞাস করলো,
“আপনার নামটা??”
“আমার নাম রাহাত। আমি আপনার ভাবির চাচাতো ভাই।”
“ওহ।।।”
“আপনি কিসে পড়েন??”
“এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। আপনি??”
“আমি জব করি।আয়ান আর আমি ফ্রেন্ড।আমাদের মাধ্যমেই মাহতাব আর জান্নাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
“ওওওও। বুঝলাম।”
বিয়ে পরানো হয়ে গেলে সবাই মিষ্টিমুখ করে।
কনেপক্ষ থেকে কনের অনেক মেয়ে কাজিন এসেছে।তার মধ্যে একজন হলো পায়েল। যেমন সুন্দরী তেমন অহংকারী।সে আবার আয়ানকে খুব পছন্দ করে। প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খায় সে। আজকে বেশিরভাগ সময় আয়ানের আশেপাশে ঘুরছে সে।সম্পূর্ণ বিষয়টা আয়ান বেশ এন্জয় করছে।কিন্তু তার মনের ভিতর চলছে অন্য ফিলিংস।
এদিকে মৌ আর রাহাতের বেশ ভালো পরিচয় হয়ে যায়।মৌ এর কাছে রাহাতের একটা বিষয় ভালো লেগেছে যে সে আয়ানের মতো না। বরং অনেক ভালো। তার মনে হয়েছে রাহাত মেয়েদেরকে এটলিস্ট অনেক সম্মান করে।
বউ নিয়ে বাসায় চলে আসে সবাই। এসে আরো কতো কিছু করলো মুরুব্বিরা। সব দিয়ে সবাই বেশ ক্লান্ত।জান্নাতকে বাসর ঘরে দিয়ে সবাই নিজ নিজ রুমে চলে যায়।
ঘুমানোর আগে মৌ পানি আনতে রান্নাঘরে যায়। গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়। সে সুইচবোর্ডের কাছে যাওয়ার আগেই কেউ একজন তার হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়।
চলবে….