অবশেষে তুমি আমার

অবশেষে তুমি আমার !! Part- 40

– এদিকে দেখতে দেখতে প্রায় ছয় বছরে কেটে যায়। ছয় বছরে অধরা রাজকে কত জায়গায় খুঁজেছে।কিন্তু কোথাও পায়নি।
– এদিকে অধরা তার ব্যবসার কাজে আমেরিকায় গিয়ে রাজকে রেস্টুরেন্ট দেখে চমকে যায়। রাজের সাথে একটা চার- পাঁচ বছরের মেয়ে বসে আছে । রাজকে পাপা পাপা বলছে। রাজ নিজ হাতে মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে দেখতে একদম রাজকন্যার মতো লাগছে। ছোট্ট হলেও চুলগুলো জুটি গাঁথা। মনে হচ্ছে সমস্ত কিউটনেস আল্লাহ তায়ালা বাচ্চাটাকে দিয়েছে।
– অধরা রেস্টুরেন্টে দাঁড়িয়ে পলকহীন চোখ জোড়ায় রাজ আর বেবীটার দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ নয়নে রাজের খাইয়ে দেওয়া দৃশ্য দেখছে।
– হঠাত মেয়েটা বললো,’ পাপা এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়? সেই কখন থেকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছো। আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়?
– রাজ মাথা নাড়িয়ে বলল,’ আমার অনুত্রি মামনি আমাকে খাইয়ে দিবে আমি কি না করতে পারি?
-অনুত্রি রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে ছোট্ট হাতে।

– অধরার কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। রাজ কি সত্যিই তাকে রেখে বিয়ে করে নিয়েছে? কেন করলো এমন? আমি খুব খারাপ তাই বলে এতটা কষ্ট দিবে আমায়?রাইমার কথা খুব করে মনে পড়ছে। রাইমা কতোবার বলেছে তার বাবাই এর কথা। এখনো মনে আছে অধরা একদিন রাইমা পুতুল নিয়ে খেলা করতে করতে বলছিল,’ মম সবার বাবাই আছে আমার বাবাই কোথায়?
সেদিন অধরা রাইমাকে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি কারণ তার জন্যই রাজ রাইমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
– এদিকে রাজ অনুত্রিকে খাইয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে যখন বের হবে তখন অধরা লুকিয়ে পড়লো। রাজ অনুত্রিকে নিয়ে যখন গাড়িতে করে বাসায় রওনা দিল। রাজের পিছন পিছন অধরাও গাড়িটিকে ফলো করতে লাগল। প্রায় মিনিট ত্রিশেক পর গাড়িটা একটা রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ির সামনে এসে থামল। রাজ অনুত্রিকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলে অধরা গাড়ি নিয়ে হোটেলে ব্যাক করে। হোটেলে যাওয়ার সাথে সাথেই রাইমা অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ মম তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আমার খুব ভয় করছিল জানো মম। তুমি আমাকে রেখে আর কোথাও যেয়ো না মম।
– অধরা রাইমাকে কপালে চুমু দিয়ে মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,’ মামনি তোমাকে রেখে আর কোথাও যাবো না। তুমি আর কান্না করো না ।
– আচ্ছা মম সবার বাবাই আছে আমার বাবাই কোথায়? সবার বাবা সবাইকে কত্তো আদর করে। আর আমার বাবাই আমার সাথে দেখা করতেও আসে না। মম তুমি বলো না বাবাইকে আসতে। জানো মম সবার বাবাই যখন সবাইকে কুলে নিয়ে আদর করে তখন আমার খুব কষ্ট হয়। মম আমার বাবাই কি আর আসবে না। আমি চক্লেত চায় না মম। আমার বাবাকে আসতে বলিয়ো।
– অধরা রাইমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাইমার কথা শুনে বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তার।
– কি হলো মম বলো না। আমার বাবাই কভে আসবে? তুমি শুধু বলো আসবে। কিন্তু বাবাই আসে না।
– বাবাই এর কাছে যাবে?
– হুমম মম। যাবো। তুমি আমাকে নিয়ে যাও না প্লিজ মম। আচ্ছা চলো মামনি। অধরা রাইমাকে নিয়ে রাজের বাসায় সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
– রাইমা গাড়ি থেকে নেমেই বলে মম আমরা কোথায় আসছি?
– মামনি এই বাড়িতে তোমার বাবাই থাকে। তোমার বাবাই এর কাছে আসছি।
– সত্যি মামনি?
– হুম সত্যি।

– অধরা পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে রুমে নক করতেই রাজ দরজা খুলে দেয়। রাজ দরজা খুলে দিতেই রাইমা রাজকে দেখে চিনে ফেলে। কারণ এর আগে অধরার ফোনে তার বাবার পিক দেখেছে। রাইমা রাজকে দেখেই বাবাই বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,’ বাবাই ও বাবাই তুমি আমার সাথে দেখা করোনি কেন বাবাই? জানো আমার কত কষ্ট হয়েছে? রাজ দরজা খুলতেই রাইমার জড়িয়ে ধরে বাবাই বাবাই ডাকাতে অবাক হয়ে যায়। তবে সে ভাবতে পারেনি তার চেয়েও বড় চমক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। সেই চিরচেনা মুখ। সেই মায়াবী চাহনী। সে মানুষটা যে আর কেউ নয় অধরা। রাজ অধরাকে এভাবে দেখতে পারবে কল্পনাও করতে পারেনি।মন চাচ্ছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু না অধরা আর তার আগের অধরা নেই। অধরার প্রতি নেই কোন অধিকার। যে পবিত্র সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে সেটা ডির্ভোসের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে।
– রাজ রাইমাকে কুলে তুলে নিয়ে বলল,’ মামনি তোমার নাম কী?
– বাবাই তুমি আমার নামটাও ভুলে গেছ?
– তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই। তুমি পঁচা।
-রাজ তোমার মেয়ে রাইমা। এতবছর আদর যত্ন করে আমি বড় করলেও সে আমার চেয়ে সারাদিন তোমার কথা বলে।
– অধরার মুখে রাইমা নামটা শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। মনটা মুহূর্তে পাল্টে গেল। এক অজানা শিহরণ যেন সারা শরীর বয়ে গেল।রাজ অপলক দৃষ্টিতে রাইমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কলিজার টুকরাটা এত্তোবড় হয়ে গেছে ভাবতেই পারেনি। চোখের পানি আর বাঁধা মানছে না।
– রাইমা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। এক পর্যায়ে রাইমা বললো,’বাবাই আমাকে আর মমকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো? ও বাবাি বলো না আমাদের ছেড়ে আর যাবে না? জানো তোমার কথা মনো হলে খুব কষ্ট হয়। এখন কারেরে সাথে খেলতে গেলে বলতে পারবে না তোমার বাবাই নেই। আমার বাবাই আমার জন্য আইসক্রিম এনে দেয়। চকলেট এনে দেয়। এসব বললে আমিও বলবো আমার বাবাই আছে। কি হলো বাবাই কথা বলছো না কেন? আমি আর তোমাকে পঁচা বাবাই বলবো না। তুমি আমার ভালো বাবাই। রাজ রাইমার মুখে এসব কথা শুনে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলো না টপটপ করে কয়েক ফোটা পানি চোখের কার্ণিশ বেয়ে নিচে পড়ে গেল।

– অধরা রাজেে সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ রুম থেকে কান্নার শব্দ শুনে রাজ দৌড়ে গেল। রাজ রুমে গিয়ে দেখে অনুত্রির ঘুমম ভেঙে গেছে। রাজ অনুত্রির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতেই অনুত্রি আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।
– অনুত্রি ঘুমিয়ে গেল রাজ অধরার সামনে এসে বললো,’ ম্যাডাম আপনি হঠাৎ ছোটলোকের কাছে কি মনে করে? নাকি আবারো অপমান করতে মন চাচ্ছে?
– রাজ প্লিজ ম্যাডাম ডেকো না। আর তুমি আমার স্বামী। তাই ম্যাডাম ডাকার প্রশ্নই আসে না।
– হা হা। কিসের স্বামী? আপনাকে তো ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছি। আর আপনি তো সেটাই চেয়েছিলেন। আরেকটা কথা আপনার কাছে তো আমি মৃত। জীবিত হলাম কিভাবে? আর কতো নাটক করবেন? বলেছিলেন আপনার সামনে যেন এই চরিত্রহীন মুখ না দেখায়। সত্যিই আমি আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসতাম। তাই বেহায়ার মতো আপনার শত অপমান সহ্য করেও আপনার বুকে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি কুকুরের চেয়েও খারাপ ব্যবহার করেছেন। রাস্তার কুকুরের সাথেও মানুষ হয়তো এমন ব্যবহার করে না। আর আপনি? আচ্ছা তিয়াসকে এখন আর ভালো লাগে না? তুমি না তিয়াসকে বিয়ে করো নাকি ছোটলোককে আবার থাপ্পর দিতে ইচ্ছে করছে?
– রাজ প্লিজ এভাবে বলো না। আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি তোমার সাথে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। পারবে না আমায় ক্ষমা করে দিতে? জানে এ ছয়টা বছর তোমাকে কত্ততো খুঁজেছি। কোথাও পায়নি। এমন একটা রাত বাদ যায়নি মাঝ রাতে সিজদায় পড়ে কাঁদেনি। রাজ আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচবো না। আমার জন্য না হয় মেয়েটার জন্য হলেও আমাকে তোমার বুকে টেনে নাও।
– অধরা মনে পড়ে সবার সামনে কি বলেছিলেন? আমি ছোটলোকের বাচ্চা। জানেন আমি আমার মেয়েটাকে বিদায় বেলা ভালো করে একটা বারের জন্য কুলেও নিতে পারিনি। আমি কেমন বাবা? মেয়েকে দুশ্চরিত্রহীন বলে কুলে নিতে পারি না। জানেন সেদিন মনে হচ্ছিল নিজের জীবনটা শেষ করে দেয়। আত্মাহত্যা মহাপাপ এজন্য এখনোও বেঁচে আছি। জানেন আপনার হাতে চড় খাওয়ার পরও নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছি। বাট তার বিনিময়ে সকলের সামনে অপমান। যাই হোক আরেকটা কথা প্লিজ নেক্সট টাইমে আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না। আমি অনুত্রিকে নিয়েই ভালো আছি। ভুলে যাবেন না আমার এখন নতুন একটা সংসার হয়েছে। একটা মেয়ে আছে। সত্যিই আমি খুব হ্যাপি এখন। এখন আর আমার কাঁদতে হয় না । আনিশা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আর অনুত্রি তো হৃদয়ের প্রতিটি রক্ত কণিকায় মিশে আছে। তাই এখন চাইলেও আপনাকে আপন করে নিতে পারবো না। আপনি আপনার তিয়াসের সাথেই থাকেন। আমার কাছে আসবেন না।
– জীবনে যে কয়টা দিন বাঁচি সে কয়টা দিন আনিশা””’
– রাজ প্লিজ স্টপ। আমি আর নিতে পারছি না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না এটাই জানি। আমাকে একটু বুকে নিবে?
চলব”””