1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃভালোবাসব যে তোকেলেখাঃ সারা মেহেক

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ! লেখাঃ সারা মেহেক

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2

সেই কখন থেকে এক জোড়া চোখ মৌ এর দিকে চেয়ে আছে। এখন অবশ্য মৌ এটা খেয়াল করছে না। কারন ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। এদিক সেদিক কতো কাজ।
সেই সকাল থেকে মৌ কাজে ব্যস্ত কারন আজকে তার ভাই মানে মাহতাব এর গায়ে হলুদ।ছেলের একমাত্র বোন বলে কথা। হলুদের স্টেজ সাজানোর কাজ মাহতাবের বন্ধু আর কিছু কাজিন করছে।আর হলুদের ডালা,মিষ্টি সহ বাকি সব মৌ আর তার মেয়ে কাজিনরা করছে।মৌ তো আজ বেশ খুশি। এতো বছরের আশা আজ পূরন হতে চাচ্ছে। তার অনেকদিনের ইচ্ছা ভাইয়ের বিয়েতে খুব ইন্জয় করবে। এবং সে তা করছেও বেশ।

(বিঃ দ্রঃ “ ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ! লেখাঃ সারা মেহেক ” উপন্যাসর সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
দেখতে দেখতে সব গুছানো হয়ে গেলো হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য।মৌ আর তার মেয়ে কাজিনরা গেলো রেডি হতে।সবাই নিজ নিজ মতো রেডি হচ্ছে।যারা ছোটো তাদের রেডি করিয়ে দিচ্ছে বড়রা।
মৌ আর তার সমবয়সী কাজিনরা হালকা গোলাপি কালারের শাড়ি পরেছে। আর ছেলেরা হালকা গোলাপি কালারের পান্ঞ্জাবী পরেছে। হলুদের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই সব অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছে। মাহতাব এর যে কজন বন্ধুরা এসেছে তারাও একই রংয়ের পান্ঞ্জাবী পরেছে।
মাহতাব পরেছে হলুদ রংয়ের পান্ঞ্জাবী। ওকে রেডি করিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে। আর মৌ এবং কয়েকটা মেয়ে গেলো হলুদের জন্য মাহতাবের সামনে যা যা গুছিয়ে রাখা হবে তা আনতে।মাহতাবের সামনে রাখা টেবিলে সব রেখে মৌ স্টেজ থেকে নিচে নামতে গেলো। কিন্তু নামতে গিয়ে নিজের শাড়িতেই পা আটকে সে পরে যেতে লাগলো।হঠাৎ করেই একজন মৌ কে পরে যাওয়া থেকে ধরে ফেললো।সে তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। ভাবছে যে সে পরে গিয়েছে। কিন্তু কই সে তো পরেনি। পরলে তো ব্যাথা পেতো।তাই মৌ চোখ খুললো,কিন্তু চোখ খুলে যাকে দেখলো তার জন্য সে মোটেও রেডি ছিলো না। তাকে দেখেই মৌ অবাক হয়ে গেলো।সে অবাক কন্ঠে বললো,
“আয়ান ভাইয়া আপনি!!!”
আয়ান মৌ এর কোমড় ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ীয়ে রইলো।সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি??”
এ কথা শুনে মৌ রেগে বললো,

“আমি কাউকে আশা করিনি।আর আপনার সাহস তো কম না, আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছেন!!”
“দেখো মেয়ের কান্ড। পরে যাওয়া থেকে যে আমি বাঁচালাম,কই আমাকে থ্যাংকস বলবে। তা না।উল্টা আমাকে রাগ দেখাচ্ছে।”
“পরে গেলে ভালো হতো। এট লিস্ট আপনি আমাকে ছুঁয়ে দিতেন না।”
আয়ান রেগে বললো,
“ওহ,রিয়েলি। তাহলে তো তোমার পরে যাওয়াই বেটার ছিলো। এখন থেকে তুমি আবার পরে গেলে বর কোনো বিপদে পরলে যে আমার কাছে সাহায্য পাবে না। সেটার সিওরিটি দিচ্ছি আমি।”
“এটাই ভালো।” বলেই মৌ রেগে চলে গেলো।আর আয়ান রেগে পাশে থাকা দেয়ালে জোরে ঘুষি মারলো।
এতোক্ষন যে এই দুজন ঝগড়া করছিলো,তা আশেপাশের সবাই দেখছিলো।কিন্তু আয়ান, মৌ এর কোনো খেয়ালই ছিলো না যে আশেপাশে মানুষজন রয়েছে। তারা তো নিজেদের মধ্য তর্কে ব্যস্ত ছিলো। অবশ্য এ সময় বড়রা কেউ ছিলো না। কারন মেইন অনুষ্টান এখনো শুরু হয়নি।
🍁🍁
এবার আয়ান আর মৌ এর পরিচয় দিয়ে নেই।
মৌ ইসলাম।পড়ে অনার্স ১ম বর্ষে।পড়ালেখায় বেশ ভালো ও। আবার দেখতেও সুন্দর। শ্যামলা বর্ন গায়ের। চেহারার মধ্য আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। যা প্রথমবারেই নজর পরে। কিন্তু গায়ের রং ফর্সা না বিধায় অনেকের কাছেই কিছু কথা শুনে।কিন্তু সে এসবের কোনো তোয়াক্কা করেনা। কারন গায়ের রংয়ের প্রাধান্য দেওয়া মানুষ তার একদমই দেখতে ইচ্ছা করে না।
মুচকি হাসলে ডান গালে একটা টোল পরে। যা ওর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
আয়ান খান।পড়ালেখা তার শেষ। তাকে বেকার বলাও যায় আবার না ও। কারন তার কেবল ইচ্ছা হলেই সে তার বাবার অফিসে একটু বসে। মাঝে মাঝে কিছু কাজ করে। আবার মাঝে মাঝে এমনিই বসে থাকে, এজন্য অবশ্য আয়ানের বাবা কিছু বলে না। কারন একমাত্র ছেলে বলে কথা। যদিও আয়ানের ছোটো একটা বোন আছে। নাম অহনা।বাবা দুভাইবোনকেই অনেক ভালোবাসে। আয়ানের ক্যারেকটার একটু ঢিলা টাইপের। আই মিন, হি ইজ এ প্লেবয়। মেয়েদের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে সে একটু বেশি ই ভালোবাসে। এপর্যন্ত অনেক মেয়েকে পটিয়েছে সে। এমনকি তাকেও অনেক মেয়ে পটিয়েছে। কিন্তু একটা মেয়েও দুদিনের বেশি টিকেনি।
দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম। এজন্যই কিছু কিছু মেয়েরা নিজের থেকে প্রপোজাল দেয়। আয়ান সেটা একসেপ্টও করে।

স্টেজ থেকে এসে মৌ দূরে একটা চেয়ারে বসে আছে। রাগে তার হাত পা মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে। সে কখনোই চায়নি যে বিয়ে ছাড়া কোনো ছেলে এভাবে তাকে স্পর্শ করুক।আর আয়ানের স্পর্শ তো একদমই সহ্য হয়নি।পুরো শরীর ঘিনঘিন করছে তার।আয়ানকে সহ্য না হওয়ারও অবশ্য কারন আছে।প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকেই আয়ানের প্রতি একটা বিরক্তি আছে মৌ এর।
মাহতাব হলুদের দুদিন আগেই আয়ানকে তার বাসায় থাকার জন্য ডাকে। এমন নয় যে আয়ানের বাসা এ শহরে না। একই শহরে থাকে, কিন্তু বন্ধুর বিয়ের জন্য বাসায় এসে থাকা আর আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা।মাহতাব আর আয়ান বেস্ট ফ্রেন্ড। তো স্বভাবতই দুজন সম্পর্কে দুজন সবই জানে।মাহতাবের ছোটো বোন আছে সেটা আয়ান জানে।সে অবশ্য কখনো ইন্টারেস্ট দেখায়নি। কারন বন্ধুর বোন বলে কথা।
মাহতাবদের বাসায় আসার পর থেকে আয়ান সোফায় বসে আছে। বসে ফোন টিপছে।কারন কাজ নেই কোনো।মাহতাব গিয়ছে বাইরে একটা কাজে।
বাসায় মেহমানে গিজগিজ করছে। এর মধ্য মামি মৌ কে বললো,
“বাসায় যে মেহমান এসেছে সেদিকে খেয়াল আছে তোর??”
“আরে মামি। আরো মানুষ আছে তাদের বলো খেয়াল রাখতে। আমি কাজ করছি তো।”
“হুম দেখছিই তো কি কাজ করছিস। এসব মেকআপের প্র্যাকটিস পরেও করা যাবে। যা ছেলেটাকে চা নাশতা দিয়ে আয়।”
“ছেলে!!!কোথাকার কোন ছেলে!!আমি যাবো না।আমার এসব বিরক্তি লাগে।”
“কোথাকার কেউ না। তোর ভাইয়ের বন্ধু।আর বাকি সবাই কাজে বিজি। তাই তুই যা।”
“আচ্ছা যাচ্ছি।”
এরপর মৌ নাশতা নিয়ে আয়ানের কাছে গেলো।আয়ান খেয়ালও করেনি। কারন সে ফোনে বিজি। তার একদিন আগে হওয়া নতুন গার্লফ্রেন্ড এর সাথে চ্যাটিং করছে।
মৌ নাশতা টেবিলে রেখে চায়ের কাপটা আয়ানের দিকে এগিয়ে ধরে।কিন্তু আয়ান এখনো ফোনে বিজি।মৌ এর এটা দেখে রাগ হয়ে গেলো। তাই সে চায়ের কাপ ট্রে তে রেখে চলে আসতে যাবে কিন্তু তার আগেই পিছন থেকে ছোটো একটা বাচ্চা ধাক্কা দেওয়ায় সেই চা ডিরেক্ট আয়ানের পায়ের উপর পরে।
গরম চা পায়ে পরার সাথে সাথে আয়ানের হুশ ফিরে। সে জোরে করে চিৎকার দিয়ে উঠে।সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়ীয়ে আছে।মানে মৌ আরকি।সে মৌ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই মেয়ে দেখে কাজ করতে পারো না!!গরম চা ঢেলে দিলে আমার উপর!!”
মৌ অনুশোচনার সুরে বলে,
“সরি।আমি ইচ্ছা করে ফেলি নি।”
“ইচ্ছা করে ফেলোনি মানে!!ইচ্ছা করে না ফেললে এতোক্ষনে আমাকে সরি বলে আমার জন্য ওষুধ এনে দিতে। “(আয়ান সম্পর্কে আরেকটা বিষয় জানা দরকার।আর তা হলো ওর রাগ। অল্পতেই রাগ এসে যায় তার। অবশ্য অল্পতে আসা এ রাগ বেশিক্ষণ টিকে না। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রচন্ড রেগে গেলে আশেপাশের কিছুই তেয়াক্কা করে না।)
আয়ানের এমন কথা শুনে মৌ রেগে বলে,
“এই যে মিস্টার আপনার সাহস দেখে বাঁচি না। আমার বাড়ীতে থেকেই আমার উপরেই চিল্লাচ্ছেন!!!
আর বলে রাখি যে আমি ইচ্ছা করে এটা ফেলিনি। পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়াতে পরে গিয়েছে। আর আপনি ফোনের মধ্য এভাবে ঢুকে না থাকলে প্রথমবারেই চা নিয়ে নিতেন।”
পিছন থেকে হঠাৎ মাহতাব আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আরে দোস্ত কখন আসলি??আর চেহারার এমন অবস্থা কেনো??”
মাহতাবের কথার কোনো জবাব দিলে না আয়ান। দিবেই বা কি করে। সে তো একভাবে মৌ কে দেখছে।
মাহতাবের কথায় মৌ বুঝলো যে এটা তার ভাইয়ের বন্ধু।সে মাহতাবকে বললো,
“ভাইয়া তোমার বন্ধুকে বলো একটু আশেপাশের দিকে একটু দেখতে।বেশি ফোন টিপতে মানা করো।”
বলেই মৌ চলে গেলো।আর আয়ান মৌ এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।কোনে সাজ ছাড়াই অপরুপ লাগছে এ মেয়েটাকে দেখতে।আয়ান অস্ফুট সুরে বললো,
“”বিউটিফুল ”
মাহতাব এসে আয়ানের চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে বললো,
“ওদিকে কি দেখছিস??কি হয়েছে তোর??”
আয়ান বলে,
“আর না কিছুই না। ”
এর মধ্য মৌ এসে মাহতাবের হাতে ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“ভাইয়া তোমার বন্ধুর পায়ে গরম চা পরে গিয়েছিলো। ওষুধ লাগিয়ে দিও।”এ বলেই মৌ চলে গেলো সেখান থেকে
এরপর থেকে মৌ এর কেনো যেনো আয়ানকে সহ্য হতো না।যদিও সে আয়ানকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলো কিন্তু আয়ানের আচরন দেখে অসহ্য ধরে যায় তার প্রতি মৌ এর।কারন আয়ান এ বাসায় আসার পর থেকে এমন কোনো মেয়ে নেই যার সাথে কথা বলেনি। মৌ এর অনেক কাজিন এর সাথে রীতিমতো ফ্লার্ট করেছে সে।মেয়েরাও আয়ানকে কিছু বলছে না। কারন আয়ানের স্টাইল, এটিটিউড এ সবাই ফিদা।
আয়ান যে মৌ কে পটানোর চেষ্টা করে নি তা না। কিন্তু সে বিফল।কারন মৌ এর আয়ানের মতো প্লেবয়,গায়ে পরা স্বভাবের ছেলেদের দু চোখে দেখতে ইচ্ছা করে না।যদিও আয়ান অনেক হ্যান্ডসাম, কিন্তু তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বলা যায় সে মৌ এর শত্রু।মৌ চেষ্টা করে তার বোনদের আয়ান থেকে দূরে রাখার জন্য কিন্তু সে ব্যর্থ।
চলবে…….
(সিজন ১ এ আপনাদের অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। আশা করি সিজন ২ তেও বেশি সাপোর্ট পাবো।
প্রথম পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন।প্রথম পার্ট দেখে একটু ছোটো করেই দিলাম।😁
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ)

বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে

বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ সারা মেহেক ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

ভালোবাসব যে তোকে- Season 2 ভালোবাসব যে তোকে- Season 2