বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 21 ( অন্তিম-পর্ব )

শুভার বধূবরণ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে হতে লাগলো।শুভাকে লাল বেনারসি, খান বাড়ির খানদানি গহনায় সাজিয়ে ঠিক নতুন বধূর মতোই স্টেজে বসিয়ে রেখেছে।নীল একটু পর নুরভি আর শৌর্য কে পাজাকোলে করে নিয়ে শুভার পাশে এসে বসে।
নুরভি মাম্মীর গলা জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে একগাল হেসে বলে,
“- মাম্মী তুমি বউ সেজেছ?তোমাকে আজ ঠিক পুতুল বউয়ের মতো লাগছে।ও মাম্মী তোমার পিচ্চি বর কই?
পাশে দাড়ানো শর্মি,অয়ন, মেহেরাজ হেসে ফেলে নুরভির কথা শুনে।শুভার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাবার দশা।দু বাচ্চার মা হয়ে মেয়ের মুখে শুনতে হচ্ছে মাম্মী তোমার পিচ্চি বর কোথায়? শুভা নীলের দিকে তাকাতেই নীল বা’ চোখ টিপে হো হো হো করে হেসে ওঠে।শুভা মনে মনে ভাবে খুব হাসি আসছে তাই না মশাই! দেখাচ্ছি মজা!এদিকে নুরভি মায়ের জবাব না পেয়ে গলা ঝুলে লাফাতে থাকে,
“- ও মাম্মী বলো না! তোমার পিচ্চি বর কই?
“- মা! এসব কথা বলতে হয় না।পঁচা কথা।
“- না! পঁচা কথা না।ঐ যে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে সবসময়ই বলে আমার পিচ্চি বর হবে পিচ্চি বর হবে।পঁচা কথা হলে কি বলতো?
“- শর্মির বাচ্চা! শর্মির দিকে দাঁত কটমটিয়ে তাকাতেই শর্মি অয়নকে নিয়ে অন্য কথায় ব্যস্ত হওয়ার ভান কর মিটিমিটি হাসে।
“- ও মাম্মী বলো না! বলো! বলো!
“- আচ্ছা বলছি থাম! আমার তো পিচ্চি বর নাই রে মা।শুভার অসহায়ভাবে বলা কথাটা শুনে নীল সহ সবাই ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে থাকে।নুরভি মায়ের গালে আরেকটা চুমু দিয়ে আদর আহ্লাদে বলে।
“- ও মাম্মী! তোমার পিচ্চি বর নাই কেন?
“- কারন আমার বর টা বুড়ো বর মা!
নীল ছাড়া বাকি সবাই শুভার কথা শুনে নীলের মুচকি হাসির ভ্রু বাকানো মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসে।
“- মাম্মী বুড়ো বর ও হয় বুঝি?
“- হ্যাঁ হয়তো? দেখবে তুমি?
“- হুম দেখবো।
“- এই যে দেখো আমার বুড়ো বর!নীলের দিকে ইশারায় করে বলে শুভা শব্দ করে হেসে দেয়।নুরভি শৌর্য হা করে বাবাইকে দেখে মায়ের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।নুরভি মায়ের সাথে হেসে বাবাইয়ের ঘাড় ঝুলে চুমু দিয়ে বলে,
“-যা!আমার বাবাই কত্ত সুন্দর। বুড়ো কেন হবে? আমার বাবাই সবচেয়ে সুন্দর বাবাই।তাই না শৌর্য বল?
“- হ্যাঁ তো।
“-শিখো শিখো! আমার সন্তান কাল জন্ম নিয়েও আমাকে কতো বোঝে। তুমি বোঝো না শুধু।
“- আমার বুঝে কাজও নেই।
“- আমাকে বুড়ো বর বলা তোমার ছুটাবো।রাত হতে দাও শুধু।
“- শখ কতো!
“- অনেককককক! শুভা সবার অগোচরে নীলের পেটে জোরে একটা চিমটি দিতেই নীল আহ! করে ওঠে।শৌর্য বাবাইকে ব্যথায় চিৎকার করতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“- ও বাবাই! কি হয়েছে?
“- মশা কামড়েছে বাবা!আজকাল মশাটা খুব জ্বালাচ্ছে রে বাবা! শুভার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলতেই শুভা শব্দ করে হাসে অন্য দিকে ফিরে।
“- খুব জোরে কামড়েছে বাবাই!
“- খুবব।আমিও হাতে পাই সব কামড় সুদে আসলে উসুল করে নিবো।
“- দেখা যাবে দেখা যাবে! এখানে বসে বসে জ্বালালে আরও মজা দেখাবো।ভালোই ভালোই উঠে যান সাহেব! নীলের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে মুচকি হাসে শুভা।নীল মুখটা বেজার করে শৌর্য নুরভিকে কোলে নিয়ে চলে যায়।নীল যেতেই মনিরা এসে শুভার পাশে বসে।
“- কি রে জ্বালাই মুখ কালো করে গেল কেন? বকেছিস?
“- আরে কি যে বলো বড় মা! উনাকে বকা লাগে।নুরভি শৌর্যের চেয়েও বড্ড বেশি বাচ্চামো করে আজকাল।আচ্ছা বাদ দাও এসব।রাতুল, সামি,রাবু ওরা কোথায়?
“-ওরা ওদিকে আছে তোর ভাইয়ের সাথে।মেহেরাজ খুব ভালো ঠিক তোর মতো।এখানে আসার পর থেকে নিজে ওদেরকে দেখাশোনা করছে।
“- ওহ!শুভা মনিরা কথা বলার এক ফাঁকে সামনে তাকাতেই দেখলো আশিক রোদিকে পরম ভালোবাসায় খাবার মুখে তুলে খাওয়াচ্ছে। শুভা সেদিকে তাকিয়ে মনিরাকে প্রশ্ন করলো।
“- রোদি আপুর মতো মেয়ে হয় না বড় মা।সমাজে রোদি আপুদের সবাই অবহেলা করে।কিন্তু একটু ভালোবাসার জন্য এরাও কাতরায় তাই না বড় মা।
“- হ্যাঁ! রে মেয়েটা খুব ভালো তুই হারিয়ে যাওয়ার পর আমাদের খোঁজ খবর নিত।প্রায়ই আসতো রিনা বুয়ার সাথে।আশিকের সাথে তোকে খোঁজা নিয়ে নানা কথা হতো।কারন নীল তোর শোকে তোকে পাগলপ্রায়। আশিকের সহযোগিতায় রোদিই নীলকে সামলায়।না হলে যে কি হতো নীলের।মনিরা কথা বলার এ পর্যায়ে কেঁদে ফেলে।শুভা মনিরার কাঁধে মাথা রাখতেই মনিরা আঁচলে চোখ মোছে।তারপর আবার বলে।ক্রমশ আশিকের প্রতি রোদি দূর্বলতা অনুভব করে।আশিকও করে।কিন্তু বলে না।কারন আশিক গরিব ঘরের সন্তান।নীল দুজনের মনের কথা বুঝতে পেরে ৫ মাস আগে ওদের বিয়ে দেয়।বিয়েটা সহজ ছিল না কারন আশিকের বাবা মা একটা পঙ্গু মেয়েকে ছেলের বউ করতে রাজি ছিল না আবার এ বাড়ির লোকও গরিব আশিককে জামাতা মানতে নারাজ ছিল।কিন্তু নীলকে তো জানিসই।বোনের সুখের কাছে এ বাড়ির কারো কথায় সে মানবে না।কিন্তু আশিকের বাবা মা কে তো কিছু বলতে পারবে না তাই হতাশ হয়ে পড়ে।তখনই আশিক দৃঢ়তার সাথে বলে ভালোবাসার সাথে কোনো আপোষ করবো না আর।রোদিকে আমার চাই।তার জন্য বাবা মা কে যে করেই হোক আমি রাজি করাবো।ব্যস! আর কি ছেলের জোরের কাছে আশিকের বাবা মাও বিয়েতে রাজি হলো।
“-আমি ওদের জন্য মন থেকে দুআ করি বড় মা। ওরা এভাবে একে অন্যের আপন হয়ে থাকুক।
“- হুমম! আল্লাহ ভরসা।আচ্ছা শুভা!তোকে একটা গল্প শোনায়! শুনবি?
“- গল্প! এখন! আচ্ছা শোনাও।
“-এক রাজকন্যা ছিল! দেখতে অনেক সুন্দর। রাজকন্যার এজন্য খুবই অহংকার ছিল।সে এবং তার পরিবার কালো লোক পছন্দই করতো না।রাজকন্যা যখন স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠলো তখন সেখানে ভর্তি হলো এক সুন্দর রাজকুমার ও এক গরিব কৃষকপুত্র।গরিব কৃষক পুত্র ছিল খুব কালো।তবে খুব মেধাবী। সুন্দর রাজকুমারের সাথে ছিল তার খুব ভালো বন্ধুত্ব।কলেজের প্রথম পরীক্ষায় সুন্দরী রাজকন্যাকে পেছনে ফেলে কালো কৃষক পুত্র মেধার জোরে ফাস্ট হয়ে যায়।আর তাতেই রেগে আগুন হয় রাজকন্যা। লোক লাগিয়ে গরিব কৃষক পুত্র কে আচ্ছা মতো পিটানি দেয়। সুন্দর রাজকুমার বন্ধুর কষ্টের কথা শুনে রাজকন্যাকে অনেক কথা শোনায়।গরিব কৃষক পুত্রকে এভাবে মারায় রাজকন্যাকে ধিক্কার জানায়।রাজকন্যার বিবেক জাগ্রত হয়।সে পরদিন গরিব কৃষক পুত্রের কাছে ক্ষমা চাই।গরিব কৃষক পুত্র রাজকন্যাকে মুচকি হেসে ক্ষমা করে দেয়।রাজকন্যা আস্তে আস্তে সুন্দর রাজকুমার ও কৃষক পুত্রের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।অহংকার ভুলে ভালোবাসতে শুরু করে কৃষক পুত্র কে।এদিকে সুন্দর রাজকুমারও রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যায়।এ কথা রাজকন্যাকে বলতেই রাজকন্যা জানায় সে বিবাহিত আর তার স্বামী তারই বন্ধু কৃষক পুত্র। তারা পরস্পরকে ভালোবেসে গত মাসেই গোপনে বিয়ে করে।সুন্দর রাজকুমারের মন ভেঙে যায়।বন্ধুর উপর অভিমান করে কাওকে কিছু না বলে চলে যায় সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে।দিন মাস যেতেই সুন্দর রাজকন্যা সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে।তার বাড়ির লোক বিষয়টা জানতে পেরে নানা ভাবে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য বলেও রাজকন্যাকে রাজি করাতে পারে না।তখন রাজকন্যার মা ভাই মিলে গভীর ষড়যন্ত্র ফাঁদে। তারা কৃষক পুত্রের নামে বদনাম করে। মিথ্যা সাক্ষী এনে রাজকন্যার মনকে বিষিয়ে তোলে কৃষকপুত্রের উপর।রাজকন্যা ঘৃণা করতে শুরু করে কৃষক পুত্র কে। ওদিকে কৃষক পুত্র হঠাৎ রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায়।রাজকন্যা স্বামীহারা হয়ে অনাগত সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল।কৃষক পুত্রের প্রতি ঘৃণা মেয়ের উপর পড়লো যখন মেয়েটাও পিতার মতোই দেখতে হলো।পরিবারের চাপে সমাজের ভয়ে রাতের আঁধার মায়ের মমত্বকে বুকের দাফন করে ফেলে আসলো রাস্তায়।মনিরা কথাটা শেষ করে একটা দম নিল।শুভার দিকে তাকাতেই দেখলো শুভা স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। শুভার মাথায় হাত বুলাতেই শুভা ছলছল চোখে মনিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“- আমার বাবা কে আমি দেখবো বড় মা!
“- কাদিস না মা!
“- ঐ মহিলাকে আমি ঘৃণা করি।ঘৃণা করি তাকে।আমার পিতার মৃত্যু কারন এরা বড় মা।
“- শান্ত হ শুভা।মনিরা ক্রন্দনরত শুভাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে আসে।নীল শুভার কান্নার বিষয়টা শুনে ছুটে আসে।আসিফ শুভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“- তোর বাবার উপর অভিমান করে চলে গেলেও সময় পেলেই খোজ নিতাম আমি।যখন ওদের বিচ্ছেদের কথা শুনলাম।আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি দেশে ফিরে আসি।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।শাহেদ মৃত্যু শয্যায়।বার বার মায়ার নাম নিচ্ছে। মায়ার মন তখন এ বাড়ির লোক এতোই বিষিয়ে দিয়েছিল যে মায়া শাহেদের কাতর ডাক শোনে নি।কিন্তু আমি তো জানি শাহেদের সাথে সাথে ঐদিন আমার চেনাজানা মায়াটাও মারা গিয়েছে।জীবন্ত লাশ হয়েছিল তোর মা।তোকে কোথায় ফেলেছে কেউ জানতো না। তোকে ফেলে এসে পাগল হয়ে গিয়েছিল।মানসিক অবস্থা মারাত্মক খারাপ ছিল।একবছর মায়াকে হেমায়েতপুর রাখা হয়েছিল।আমিই জোর করে মায়াকে বিয়ে করে বিদেশ নিয়ে যায়।অনেকটা সময় লেগেছিল ঠিক হতে।পাষান,নির্দয় একটা মানুষকে পেয়েছি আমি।আমার মেহেরাজও আজপর্যন্ত মায়ের আদর পায় নি রে মা! রাতের পর রাত তোদের জন্য কেঁদেছে মায়া।অভিমান আর রাগে মনটা ইস্পাতের মতো হয়েছিল মায়ার।আমার মায়াকে ক্ষমা করে দে মা! ও তোর ক্ষমা ছাড়া! তোর মা ডাক ছাড়া মা যে কোনোদিনই হবে না শুভা।তোর জন্মদাত্রীকে ক্ষমা করে দে।শাহেদ বেঁচে থাকলেও এ কথায় বলতো।আজ আমি শাহেদের হয়ে তোর বাবা হয়ে তোকে অনুরোধ করছি মা বলে ডেকে স্বীকৃতি দে আপনজনের ষড়যন্ত্রে ঐ স্বর্বস্বান্ত হওয়া মহিলাকে।
শুভা আসিফের বুকে হাহাকার করে কেঁদে ওঠে।মায়া দূর্বল শরীর নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে মেয়ের কান্না দেখে স্থির দৃষ্টিতে পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকে।শুভা চোখ মুছে মায়ার কাছে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।মায়াকে জড়িয়ে ধরে মা বলে কাঁদে। মায়াও মেয়েকে ধরে কাঁদে। মেহেরুন খাতুনের এ দৃশ্য সহ্য হয় না।ঘরে এসে তার চোখেও জল গড়ায়।বর্ণ, রূপ, দৌলত এসব করে করেই মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিল।শান্তি পেল না মেয়েটা।আজ নিজেকে পাপী পাপী মনে হচ্ছে। শরীর টালমাটাল করতেই নীল এসে দাদিকে ধরে বিছানায় বসায়।
“- দাদী! এবার তো জাগো! প্রতিনিয়ত যার কাছে সেজদায় মাথা নত করো সেই মহাশক্তিধর কিন্তু জাত পাতের বিভেদ করে না।যারা করেন তাদেরও পছন্দ করে না।তুমি তার সৃষ্টিকে তুচ্ছ করছ মানে তাকেই তুচ্ছ করছ।কালো,ধলো,লম্বা, খাটো সব তার সৃষ্টি। তার সৃষ্টির অপমান সে সহ্য করবে না দাদী।এখনও সময় আছে নিজেকে বদলাও।তাকে ভালোবাসার আগে তার সৃষ্টিকে ভালোবাসো।
“- দাদু আমার ভুল হয়েছে।আমি পাপী!আল্লাহ আমাকে শাস্তি দেবে তাই না রে নীল।
“- তুমি ক্ষমা চাও। তার সৃষ্টির সম্মান করো। দেখবে আল্লাহ ঠিক ক্ষমা করে দেবে।তিনি তো ক্ষমাশীল।
নীল দাদীকে বুঝিয়ে দরজায় এসে দাড়ায়।দাদীর চোখে আজ অনুশোচনা জল। নীল জানতো এমন দিন আসবে। মিরার উপর রাগ করে খারাপ জায়গা থেকে যে মেয়েগুলোকে নিয়ে আসতো সব গুলোকেই নীল তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মুক্ত করেছে।শুভাকে দেখে সেদিন আসলে নীল শুভার মায়া পড়ে গিয়েছিল।অতিরিক্ত নেশায় নিজেকে সংযত রাখতে পারে নি।ভাগ্যক্রমে অল্পতেই শুভার চিৎকারে নিজেকে সামলে নেয়।শুভাকে বাড়িতে পাঠানোর পরও শুভার সাথে করা আচরণ নীলকে স্বস্তি দেয় না।নীল খোঁজ খবর শুরু করে একসময় জানতে পারে শুভা মায়ার ফেলে দেওয়া সেই সন্তান। নীল শুভার প্রতি আরও আকর্ষন অনুভব করে দায়বদ্ধতা একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।যার পরিণতি আজ নীলের শুভা।
খান বাড়িতে আজ অন্যরকমই আমেজ।সবাই মান অভিমান ভুলে এক হয়েছে।নীলের বাবা নীলের হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে।নাহিদাকে সে আরও আগেই স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে মনের ঘরে তুলেছে।এদিকে সবার পরে এসে মালা সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে লাগলো।শুভাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
“- আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।ছেলে আমেরিকা থাকে।আমার মেয়েকেও নিয়ে যাবে।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
মালার কথা শুনে নীল মুচকি হেসে শুভার কানে কানে বলে,
“- বিয়ের পরেই দেখবে জ্বামাই আমেরিকার ঠিকই কিন্তু দেখতে কালো।আহ! মিরার যে কি রিয়াকশন হবে?
“- তুমি জানলে থুক্কু আপনি জানলেন কি করে?
“- তুমিই তো ভালো লাগছিল! আপনি বললে বলবো না।
“- উফ! আচ্ছা বলো এবার!
“- মোহিত মানে মিরার স্বামী তোমার চাচাতো ভাই।আমিই মোহিতকে বলে সব ঠিক করিয়েছি।সারাটা জীবন এবার ভুগবে মিরা।
“- এটা কিন্তু ঠিক না নীল।ওর জীবন নিয়ে খেলার রাইট তোমার নাই।
“- চুপ! বেশি মায়া দেখাতে আসবা না। ওরা মা বেটি মিলে যখন তোমাকে কিডন্যাপ করিয়েছিল। তোমার জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিল।চারটা বছর নষ্ট করেছে আমার।এমনিতেই ছেড়ে দেব এদের।আর তাছাড়া ওর জীবন তো নষ্ট করছি না।মোহিত ভালো ছেলে ওর ক্ষতি করবে না শুধু ওর মতো ত্যাড়া মেয়েকে সোজা করে রাখবে।আচ্ছা চলো মোহিতের সাথে কথা বলি।ব্যাটা বোন বোন করে মাথা খেয়ে ফেলছে।
রাতে মেহেরুন হিরার বালা পরিয়ে শুভার বধূবরণ করে। ফুলে সাজানো বিছানায় সন্তানদের ঘুম পাড়িয়ে বসে বসে সারাদিনের কথা ভাবছে।এমন সময় শর্মি অয়ন এসে ইশারায় শুভাকে চুপ করিয়ে নুরভি শৌর্য কে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।শুভার এবার অস্বস্তি লাগছে এই বাসরে বসে।মনে পড়ে যাচ্ছে নীলের সাথে প্রথম বাসরের কথা।লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে আছে।
“- ভাবনার দুয়ার খোলো সখি! চোখ তুলে চেয়ে দেখ তোমার নাগর এসেছে তোমার দুয়ারে।দুহাতে তারে কাছে টানো।
“- ধ্যাৎ! কি সব বলেন
“- আবার বলেন? শুভার গলায় আলতো করে কামড় দিয়ে বলে।
“- উফ!
“- উফ! ২।শুভাকে জড়িয়ে ভালোবাসার সমুদ্রে অবগাহন করে নীল।হারিয়ে যায় নতুন সৃষ্টির আগমনি বার্তা দিয়ে।
চাঁদের আলো একই চাদরের তলে জড়িয়ে দুজন বসে আছে।নীল শুভার ঘার,গলা,চিবুক একটু পর পর ওষ্ঠের পরশে মাতাল করে দিচ্ছে।
“-শুভা!
“- হুমম!
“- আমাকে তো অনেক কিছুই দিলে বিনিময়ে কিছুই দেওয়া হলো না তোমাকে।
“- আমার কিছুই চায় না নীল।শুধু তুমি এভাবেই ভালোবেসে যেও আমাকে।এতেই পরম পাওয়া আমার।
“-তবুও আমার বউয়ের একটা ইচ্ছা আমি আজ পূরণ করবো।
“- তাই নাকি? তা কি সেটা?
“- ট্যানট্যানা! শুভার সামনে একটা খাম তুলে ধরে নীল।শুভা খামটা খুলে খুশিতে নির্বাক হয়ে যায়।
“- শেফ কোর্স! আমার জন্য নীল?
“- না আমার দুই নম্বর বউয়ের জন্য।
“- ধ্যাৎ!নীলের গলা জড়িয়ে ধরে খুশিতে শুভা।দুহাতে ভর্তির ফরমটা বুলাতে থাকে।
“- আমার বউটা কি ভুলে গেল আমাকে?
“- কোনোদিন না! এমন স্বামীকে কি কেউ ভুলতে পারে।আস্ত একটা ভালোবাসা তুমি নীল।
“- কি! কি! আবার বলো?
“- যাও আমার লজ্জা লাগে।
“- লজ্জা লাগে! আসো লজ্জা ভাঙি।
“- নীল একদম না! আমি নুরভিকে ডাক দেব।
“- দাও! দাও।
“- সত্যি কিন্তু!
“- দাও!
“- নুরভি!নীল বাকিকথা বলার সুযোগ না দিয়ে শুভার ওষ্ঠদ্বয় নিজের দখলদারিত্বে নিয়ে নেয়।ভালোবাসায় ভালোলাগায় মিলেমিশে একাকার হয় রাতের জোস্নার ঝরা আঁধার আলোতে।জীবন সংসার পরিপূর্ণতা পায় দুজনের চাওয়া পাওয়ায়।সম্মান, মর্যাদায় পরিপূর্ণতা পায় এই বধূবরণ,,,,

👰👰👰সমাপ্ত👨‍👩‍👧‍👦

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *