আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 25

সেদিন রাজের বলা কথা শোনার পর থেকে আরিয়ান অনুর থেকে দূরে থাকে।
প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।
অনুর থেকে অনেক দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে আরিয়ান ।

এভাবে অনুর দিন গুলো বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। নিজের ভালোবাসার মানুষ যখন কাছে থেকেও দূরে থাকে তখন বোঝা যায় কষ্ট কাকে বলে।

এভাবে জীবন ছন্নছাড়া হয়ে যাবে অনু স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই।
তবুও অনু হাল ছাড়ার মেয়ে নয় সে নতুন ভাবে আরিয়ান আর ওর মাঝে সব কিছু ঠিক করার জন্য চেষ্টা করে।

সকালে আরিয়ানের আগে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা রেডি করে দেয়।আরিয়ান চুপচাপ খাবার খেয়ে চলে যাবার সময় অনু পেছন থেকে বলে ওঠে,
“শুনুন আমিও আপনার সাথে অফিসে যাবো”।

আরিয়ান অনুর কাছে এসে বলে,”বাড়িতে আরো অনেক গাড়ি আছে যে কোনো একটা গাড়িতে করে অফিসে চলে আসো”।
আমার অনেক কাজ আছে আমি আসছি বলে,”অনুর কপালে চুমা দিয়ে চলে যায় “।

অনু বেআক্কেল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।কি হলো এইটা?

অনুকে দেখে আয়াত বলে,”ভাবি তোমার আর ভাইয়ের মাঝে কি কেনো সমস্যা হয়েছে “?

অনু :নাহ কোনো সমস্যা নায়,,শুধু রাজের বলে যাওয়া কথার জন্য তোমার ভাই বদলে গেছে।

আয়াত বলে,”কিছু অতীত খারাপ হতেই পারে তার জন্য তোমাদের সংসারজীবন কেনো নষ্ট করবে,,ভাইয়ার এটা বোঝা উচিৎ “!

অনু বলে,”আমি তো তার কাছে অতীত জানতে চায় নি তাহলে কেনো এতো অবহেলা? কিসের জন্য বলতে পারো তোমরা “?

আয়াত বলে,”ভাবী তুমি তো সহজে ভেঙ্গে পরার মেয়ে না,,তাহলে আজ তোমার মুখে এমন কথা মানায় না যাও তুমি তোমার মতো করে ভাইকে তার অতীত থেকে বাহির করে আনো।
আমরা সবাই তোমার পাশে আছি “।

তারপর অনু রেডি হয়ে অফিসে যায়।
কিন্তু সে অারিয়ানের সাথে কথা বলবে ভাবছে,, তার আগে আরিয়ান অনুর টেবিলের উপর একগাদা ফাইল গাদি দিয়ে রাখছে।

অনু বেচারি সর সব ফাইল বসে বসে চেক করতে থাকে,, এদিকে সকালে না খেয়ে আসছে তার উপর দুপুরবেলা লাঞ্চ টাইম পার হয়ে যায় এক ভাবে বেচারি কাজ করতে থাকে।

অনু তার কাজ শেষ করে দেখে পুরা অফিস ফাঁকা।কেউ কোথাও নাই।
এমন কি আরিয়ান ও নাই।
এটা কি হলো আমি এতোটা কাজে ব্যস্ত যে সবাই আমাকে একা রেখে চলে গেছে।
বাহ আমার কি কপাল বর পর্যন্ত আমার কথা ভুলে গেছে।

অনু বাহিরে এসে বাড়ি যাবার সময় কোনো কিছু পায় না।কি করবে রাত ও হয়ে গেছে।

ঐ দিকে আরিয়ান বাড়িতে গেলে ওর মা জিজ্ঞাস করে, “কি বেপার অনু কোথায়”?

আরিয়ান বলে,”কেনো আনু বাড়িতে আসে নাই “?

আরিয়ানের মা : বাহ বউ তোর সে এখনো বাড়িতে আসে নাই উল্টা আমাকে জিজ্ঞাস করিস সে কোথায়? দিনে দিনে তোর এতো অবনতি হয়েছে ভাবা যায় না।

আরিয়ান আর কোনো কথা না বলে সোজা গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দেয়।

অফিসে এসে দেখে অনু গেটের বাহিরে বসে আছে।
আরিয়ান কে দেখে অনু আর কিছু বলে না।
আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরতে গেলে অনু পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

আরিয়ান দেখে পেছনে আবির গাড়ি নিয়ে আসছে।
অনু আরিয়ান কে কিছু না বলে,
আবিরের সাথে চলে যায়।

অনু তার বাবার বাড়িতে গিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়।আজ আর কেউ অনুকে কোনো প্রশ্ন করে না। অনুকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ওর মন ভালো নাই।

ঐদিকে আরিয়ান নিজেকে বলে,”অনু তো ঠিক কাজ করেছে,,আমি কেনো অযথা অনুর সাথে এমন করছি? অনুর পুরা অধিকার আছে আমার অতীত জানার।আমার কালো অতীতের জন্য আমি তোমাকে হারাতে পারবো না”।।

আরিয়ান সোজা গাড়ি ড্রাইভ করে অনুদের বাড়িতে চলে যায়।কারো সাথে কোনো কথা না বলে সে সোজা অনুর রুমে গিয়ে অনুকে কোলে কোরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করে।
অনু চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না।

অনুকে এভাবে নিয়ে যাওয়া দেখে তো অনুর বাড়ির সবাই খুব খুশী যাক দুজন বোঝাপড়া করে সব ঠিক করে নিবে।

আরিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে শহর থেকে দূরে একটা নদীর তীরে এসে গাড়ি থামায়।

তারপর আরিয়ান গাড়ি থেকে নেমে অনুর হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে।

অনু চুপচাপ আরিয়ানের সাথে হাটছে।একটু পর দুজন নদীর পাড়ে বসে। অনু আরিয়ানের পাশে বসে অনেক সময় নিরব থাকে।

তারপর আরিয়ান অনুর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে,”জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন?
আজ আমি সব প্রশ্নের উওর দিবো।
জানি তুমি জানতে চাও না,তবুও বলবো।
কারণ সত্যি তোমার জানার পুরা অধিকার তোমার অাছে”।



আজ থেকে দশ বছর আগে,,,

আমি আরিয়ান রাজ চৌধুরী আমার
ভাই আয়াতুল্লাহ চৌধুরী আয়াত।
আমাদের দুই ভাই কে নিয়ে বাবা মার দিন গুলা বেশ ভালো কেটে যাচ্ছিল।

আমি স্কুলের সব মেয়ের ক্রাশ ছিলাম।

স্কুলে যাবার সময় আমাকে দেখে সব মেয়েরা হ্যা করে তাকিয়ে থাকে।
পারলে ওরা সবাই আমাকে গিলে খাবে।

স্কুলের যে কোনো অনুষ্ঠানে সবার আগে রাজের নাম শোনা যাবে।

আসাদ (আমার বন্ধু) :আরে দোস্তো তোর পেছনে মেয়েরা এখুনি যে ভাবে ঘুরাঘুরি করে তাতে মনে হয় তুই বড় হবার আগেই এরা তোকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করবে।

আরিয়ান :এতো সোজা না কি এই রাজ কে পাওয়া।আমাকে যে পাবে তাকে তো সাধনা করতে হবে।তাহলে যদি সে এই আরিয়ান রাজ চৌধুরী কে তার বর হিসাবে পাবে।

আসাদ :সাধনা করবে কেন,,তোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করবে। দেখবি এভাবে চলতে থাকলে এটাই তোর ভবিষ্যৎ ।

আরিয়ান :আরে এসব পিচ্ছি মেয়েদের ক্রাশ খাওয়ার কিছু বলি।আমি এখন যেমন আছি দশ বছর পর তো এমন থাকবো না।ততোদিনে এদের রুচি ও বদলে যাবে।তাই এদের কেয়ার করার সময় আমার নাই।

আসাদ : সে তুই যা বলিস না কেনো, মেয়ে গুলা তোর সিল্কি চুল, তোর সুন্দর ইনোসেন্ট চেহারা আর হ্যা তোর মিষ্টি মধুর কণ্ঠের গান শুনে তো আরো বেশী পাগল হয়ে যায়।

তখন আয়াত এসে বলে,”ভাইয়া সব মেয়েরা তোমার দিকে এভাবে কেনো তাকাই।। আমার ঐ মেয়েদের কাউকে ভালো লাগে না “।

আরিয়ান বলে,”আহারে আমার রসগোল্লা ভাই চিন্তা করিস না এইতো পরিক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বিদায় নিলে তখন দেখবি, তোর ভাই কে না পেয়ে তোর পিছনে ছুটবে সবাই”।

আয়াত :আমি তোমার মতো জাতির ক্রাশ না যে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা ক্রাশ খাবে। আমার উপর ক্রাশ বড় মেয়েরা খাবে।

আরিয়ান :তা অবশ্য ঠিক তুই যে নিরামিষ তোর পিছনে পাগল ছাড়া কেউ আসবে না।

আয়াত :ভাইয়া তোমার কখনো ভালো হবে না।যখন আমাকে জ্বালাত্বন করার জন্য কাছে পাবে না তখন আমার কদর বুঝতে তার আগে না।

এভাবে স্কুলের দিন গুলা রাজের শেষ হয়ে যায়।
সে S S C পরিক্ষা শেষ করে।তারপর বাড়িতে সারাদিন আয়াতের সাথে দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া করে।



রাজ সারাদিন আয়াতের সাথে দুষ্টুমি করে। কিন্তু তবুও বাবা মা রাজকে কখনো কিছু বলতো না।কারণ দু ভাই এমন মজা না করলে কে করবে।

এভাবে আমাদের সুখের দিন গুলা যাচ্ছিল।
আমাদের সুখের সংসারে যে গ্রহণ লাগবে তা কেউ জানতো না।

হঠাৎ অনেক গুলা বছর পর ফুপু আম্মা আমাদের বাড়িতে অাগমণ করেন।

ফুপুর পরিবার এতো বছর বাহিরে ছিল
হঠাৎ করে তারা দেশে বেড়াতে আসে।

সে একা আসে না তার সাথে তার ছেলে রাইদুল ইসলাম রাজ আর আমাদের ছোট মৌ আসে।

আর কি একটা আশ্চর্যজনক কথা আমাদের দুজনের নাম রাজ।

আরিয়ান বলে,”Hey Raj What’s up bro??

রাজ বল,”আরে রাজ তুমি ও না,, তোমার সমনে দাড়িয়ে আছি কি আর করবো বলো”?

আরিয়ান বলে,”আরে তাই তো “!

তারপর সবাই তো অনেক ইমোশনাল হয়ে যায় এতো বছর পর তারা দেশে আসছে।

রাতে পুরো পরিবার একসাথে ছাদে আড্ডা দেয়।

তখন আমি ফুপুকে জিজ্ঞাস করি,”আচ্ছা ফুপু দুজনের নাম কি করে রাজ হয়েছে বলবেন”?

ফুপু আর বলো না, “তুমি আর রাজ কিছুদিনের ছোট বড়।আমরা বাহিরে থাকি তাই তখন যোগাযোগ সে ভাবে করতে পারি নাই।
আমার পেটে তখন রাজ সে সময় যখন জানতে পারি আমার ছেলে বাবু হবে তার নাম রাখার জন্য নাম খুঁজতে থাকি।
তখন রাজ নামটা আমার খুব পছন্দ হয়,
এদিকে ভাবীর ও না কি রাজ নাম পছন্দ তা আমি জানতাম না”।

আরিয়ানের মা বলে,”রাজ নামটা তোমার দাদাভাই খুব ভালোবেসে রেখেছিল।
পরে জানতে পারি আপার ছেলের নাম ও রাজ।আমার যেদিন জানতে পারি সেদিন খুব হেসেছি।আমাদের ছেলে দুই টা নাম একটা।
তারপর দুই ভাইয়ের তো খুব বেশী দেখা হবে না সেই চিন্তা করে আমিও তোমার নাম রাজ রাখি।নামটা আর বদলানোর প্রয়োজন মনে করি নাই।

আরিয়ান :দেখো রাজ আমার দুজন আলাদা মানুষ হলেও কিন্তু নাম এক।
রাজকে এখানে সবাই খুব ভালোবাসে।
সে ভালো বাসার মান রেখো কিন্তু।

রাজ :আরে কি যে বলো না তুমি,”তোমার যা কিছু সব আমার আমার যা কিছু সব তোমার এসবের মাঝে আবার অন্য কিছু কি করে আসবে বলো তো”।

আয়াত বলে,”দেখো দুই রাজের মাঝে এই পিচ্ছ আয়াত কে তোমরা ভুলে যেওনা কিন্তু “।

আরিয়ান বলে,”আহারে বেচারা মাএ দু বছরের ছোট সে না কি আমার পিচ্ছি ভাই।।এই লম্বায় কোন দিক দিয়ে ছোট তুই “?

আয়াত :দেখো আম্মু আমি তাদের সমান লম্ব হয়েগেছি বলে আমার কোনো কদর নাই ভাবা যায়।

রাজ :আরে ছোটে Don’t worry আমরা তিন ভাই তো এক তাই না কি বলো?

আয়াত বলে,”হুম রাজ ভাই আপনি খুব ভালো,, আরিয়ান রাজ ভালো না “।

আরিয়ান বলে,”এইতো মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশী হয়ে গেলো তো ভাল “।

আরিয়ানের মা আরিয়ান কে বলে, “শোনো আরিয়ান রাজ এখানে কোনো কিছু চেনে না।তুমি যেহেতু ফ্রি আছো,সেহেতু তুমি রাজ কে কোম্পানি দিবে”।

আরিয়ান বলে,”কি যে বলো না তুমি মা, সে কথা আর বলতে হবে না,আমাদের ভাইয়দের মাঝে তোমাদের না আসলেও চলবে আমাদের কাহিনী আমরা বুঝে নিবো”।

তারপর রাতে আরিয়ান ভাবে রাজ তো দেশের কিছু চেনে না।রাজ কে আমাদের দেশটা ঘুরে দেখানোর দরকার আছে।

যা ভাবা সেই কাজ।সোজা সব বন্ধুদের বাড়িতে কল করে সে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ঘুরতে যাবার প্লানিং করে।

সকালে আরিয়ান বাড়ির সবাই কে বলে,
“আমরা সব বন্ধুরা মিলে ভেবেছি রাজ কে দেশ ঘুরে দেখানোর দরকার। তাই আমার সবাই একসাথে পাহাড় দেখতে যাবো “।

আরিয়ানের বাবা বলে,ঠিক আছে আমার সবাই এক সাথে যাবো।তোমার ছোট তোমাদের একা এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না।

আরিয়ান বলে,”বাবা আমি রফিক চাচাকে সাথে নিয়ে যাবো,সে থাকবে তো আমাদের সাথে “।

আরিয়ানের বাবা :আচ্ছা তোমার আগে যাবে কিন্তু আমারও তোমাদের সাথে যাবো।তোমার তোমাদের মতো ইনজয় করবা।আর আমরা আমাদের মতো করে।কিন্তু তবুও পরিবার সাথে যাবে।

আরিয়ান আর কোনো অমত করে না।পরিবার সাথে থাকা ভালো তো।গেট টুগেদার হয়ে যাবে।

পরেরদিন সকালবেলা আরিয়ান আয়াত রাজ ও তার সব বন্ধুরা এক সাথে রফিক চাচার গাড়িতে রওনা দেয়।

সবাই পুরা রাস্তা অনেক হাসি -মজা,হই- হুল্লোর করতে করতে আসে।
তারা তাদের নিদিষ্ট স্থানে অবশেষে পৌঁছে যায়।

(আজকের পর্বের ভুল এুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।গল্পটা দুইবার লিখতে গিয়ে ডিলেট হয়েছে তাও আবার লিখে পোষ্ট করছি।😣😣)



চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *