বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 13

মিরার চলে যেতেই শুভা রেগে নীলের দিকে তাকায়,
“- এতো দরদ কেন ওর জন্য? এখনও ভালোবাসা আছে নাকি?( রেগে লাল হয়ে)
“- অনেককক( মুচকি হেসে অন্য দিকে মুখ করে)
“- কি!
“- আবার বলবো?আশেপাশে সাপ ফোশ ফোশ করার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না শুভা? ও মাই গুডনেস! আমার বউ তো নাগিনী হয়ে গেছে।এখন কি করি কি করি? ( হেসে)
“- ভাল্লাগে না! ধুর!শুভা রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই দরজা বন্ধ করে পথ আগলে ঠোঁট কামড়ে হাসে নীল।শুভা নীলের মতলব বুঝতে পেরে দরজা খোলার জন্য টানাটানি করে।
“-অযথায় এনার্জি নষ্ট করছ।তার চেয়ে চলো ভালো কোনো কাজে লাগায় এনার্জি গুলো।লেটস স্টার্ট! ( শুভার কানে ফিসফিস করে)
“- ছি!
“- এই মেয়ে এতো ছি! ছি! কেন করো? শুভাকে কোলে তুলে বিছানায় আছড়ে পড়ল নীল।
“- আল্লাহ গো! এই এমনে ধিড়িম করে পড়লেন কেন? খাট তো ভেঙে যাবে
“- ভাঙলে ভাঙবে।লোকে জানবে বউ আদর করতে গিয়ে নীল খাট ভেঙেছে।কি দারুন কথা তাই না।
“- দারুন কথা না ছাই! পঁচা কথা।আপনি একটা পঁচা লোক।
“- তাই? তাহলে পঁচা লোকের পঁচা ভালোবাসা কেমন হয় দেখাই হুমম( শুভার শাড়ির আঁচল এক টানে সরিয়ে ফেলে)
“- আমি কিন্তু চিৎকার করবো। ছাড়েন আমাকে।
“- চিৎকার করবা? সে সুযোগ পেলে তো? নীল সমস্ত ভালোবাসা উজার করে শুভার ঠোঁট জোড়া সহ সর্বাঙ্গ দখল করে নেয়।
|
|
মিরা কাঁদতে কাঁদতে নানির কোলে হুমড়ে পড়ে।
“- আমার রাজকন্যাটা কাদে কেন হুমম?
“- নানু তুমি কি করে আমার নীল কে বিয়ে করতে দিলে? আমি নীলকে ছাড়া বাঁচব না নানু।প্লিজ ডু সামথিং।
“- ধৈর্য ধর! মায়া আশুক! খেলা তো তখনই শুরু হবে।
“- ছোট খালা আসলে কি হবে? নীল কি এই কালোটি কে ছেড়ে আমার কাছে আসবে?
“- না! তুই যাতে নীলের কাছে আবার যেতে পারিস সে ব্যবস্থা করা হবে।
“- কি বলছ? কিছু বুঝতে পারছি না তো।
“- বললাম না মায়া কে আসতে দে।আমাদের চেয়ে ঐ বেশি রেগে যাবে যখন নীলের পাশে ঐ কাল সাপকে দেখবে।নীল তো আমাদের কথা না শুনলেও ওর ছোট ফুপির কথার অবাধ্য হবে না।মেহেরুন খাতুনের কথা শেষ না হতেই একটা ১০/১২ বছরের ছেলে এসে মেহেরুন খাতুনের গলা জড়িয়ে ধরলো।
“- ন্যানি! ইউ নো হোয়াট হাও মাচ আই মিস ইউ?
“- মিস ইউ বেশি বেশি ভাই! (হেসে)
“- ওহ ন্যানি! তুমি ইংলিশ কেন গুলিয়ে ফেলো।
“- কারন ওটা তোমার নানির গলায় জমে না যে ভাই।
“-হোয়াট জমে না?
“-মেহরাজ!এসেই শুরু হয়ে গেলে।বাংলাদেশে আসছ সো এখানকার ভাষায় কথা বলবা। আমি চাই তুমি তোমার মাতৃভাষাটাকেও আত্মস্থ করো।
“- ইয়াআ!উপস! আচ্ছা ( মুখটা পানসে করে)
“- কেমন আছ মা? ( মেহেরুন কে জড়িয়ে)
“- এই তো আল্লাহ পাক বাঁচিয়ে রেখেছে।তোরা ভালো আছিস তো? জ্বামাই কই
“- হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।তোমার জ্বামাইয়ের কথা বলো না। পুরো উজবুক একটা।মেহেরাজের চেয়েও বাচ্চা মনে হয় এমন বিহেভ করছে দেখো গিয়ে।
“- আসসালামু আলাইকুম আম্মাজান! মেহেরুনের হাতে চুমো খেয়ে মায়ার পাশে বসে।
“- আমার আসিফ জ্বামাই হিসেবে কোটিতে একটা! কেমন আছ বাবা!
“- আলহামদুলিল্লাহ আম্মা ভালো।আপনার মেয়ের আমাকে না পচালে ভালোই লাগে না।আমিও বেচারা বউ পাগল পুরুষ।বউ যাতে খুশি তাতেই খুশি।
“- কি সব বলছ মা য়ের সামনে।লজ্জা শরম সব ভুলে গেলে?( পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে)
“-উপ! ওটাতো তোমাকে পেয়েই ভুলে গেছি কবে।( ফিসফিস করে)তা মিরা দ্যা বিউটি কুইন কেমন আছ? তোমার রাগী,এটিটিউডের ডিব্বা ফিওন্সি কই?
মিরা খালুর কথা শুনে কাঁদতে কাদতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আসিফ বোকা হয়ে মায়ার দিকে তাকাতে মায়া চোখ গরম দেয়।মায়া মেহেরাজকে সহ আসিফকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেয়।
“- কি হয়েছে মা! মিরা নীলের কথা শুনে কাদলো কেন?
মেহেরুন নেসা তুরুপের তাস মায়াকে সত্যি মিথ্যা বুঝিয়ে নীল ও শুভার বিয়ের ঘটনা বললো।
“- কি! নীলের এতো অর্ধঃপতন হয়েছে? পরিবারের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে বস্তির মেয়ে ঘরে এনেছে।
“- তাহলে আর কি বলছি রে মা! এই বুড়ো বয়সে এসে মানুষের কটু কথা শুনতে শুনতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম।শরীর ভালো থাকে না তারউপর নীলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা। আচ্ছা পছন্দ মতো বিয়ে করবি কর।তাই বলে একটা কালা কুলা মেয়ে বিয়ে করতে হবে? মায়া রে এই কালা মানুষ কি সাংঘাতিক তা তোর চেয়ে ভালো কে বোঝে বল? আমার নীলের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনবে ঐ মেয়ে দেখিস?
“- কোনোদিন না মা! কোনোদিন আমি আমার নীলকে ঐ দিন দেখতে দেবো না।কালো মানুষ আমার শত্রু। এরা জীবনেও কারো জীবনে সুখ আনতে পারে না।দেহের কালোর মতো নীলের জীবনেও কালো অন্ধকারে ঢেকে দেবে।মা এই মেয়েকে আমি তাড়াতে চাই মা।আমার নীল জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। আমার মতো ধোঁকা ও কোনোদিন সহ্য করতে পারবে না মা।
“- তুই যা করবি আমি, মিরা,মালা তোর সাথে আছি।শুধু ঐ কালো ছায়াটাকে আমাদের পরিবার থেকে সরা মা।
“- চিন্তা করো না মা! আমি যখন একবার এসে গেছি ঐ মেয়েকে নীলের জীবনে কিছুতেই থাকতে দেবো না।মায়ার অতীত যেন আজ আরেকবার সামনে চলে আসে।সামনে চলে আসে শাহেদ নামের কারো স্মৃতি। শাহেদ নামটা মনে আসতেই ঘৃণায় বিষিয়ে ওঠে মন।
|
|
খাবার টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে। মিরা বার বার নীলের দিকে তাকাচ্ছে আর কাঁদছে। নীল শুভার প্লেটে মাছ তরকারি উঠিয়ে দিচ্ছে। একহাতে খাচ্ছে অন্য হাতে চেয়ারে উপর শুভার হাতটা চেপে ধরে রেখেছে।
“- নীল বউ মা কে গরুর মাংস উঠিয়ে দে!
“- না! চাচী ওর গরুতে এলার্জি। তুমি বরং দেশি মুরগিটা এদিকে দাও।
“- আচ্ছা নে! শুভা! পেট ভরে খাও।কোনো সংকোচ করবা না।
“-জ্বী! ( লাজুক হেসে)
“- জ্বী! চাচী ওকে এই যে এক চামচ দিয়েছি সেটাই খাই নাকি দেখ।আবার পেট ভরে খাবে।ও পেট ভরে খেলে আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি কে ছিড়বে?
শুভা লজ্জাতে টেবিলে মাথা নত করে ফেলে।তাই দেখে নীল, ছোট চাচী,আসিফ,অয়ন,মেহরাজ হো হো হো করে হেসে ওঠে।
“- এই নীল বড্ড ফাজিল হয়েছিস?শুভা তুই খা! নীল ওকে আর লজ্জা দিস না।
“- আরও লজ্জা দেবো বলো বলো? কুত্তাওয়ালা ব্যাডা বলা হয় আমাকে হুমম( কানে ফিসফিস করে বলে)
শুভা মুখ ফুলিয়ে তাকাতেই নীল টুপ করে টেবিল সুদ্ধ বাড়ির বড় ছোটদের সামনে শুভার গালে কিস করে বসে।মিরা আর সহ্য করতে পারে না।চেয়ার ঠেলে উঠে চলে যায়।শুভা সেদিকে তাকালেও নীল কথার জালে ফুলিয়ে আবার দুষ্টুমি শুরু করে।মায়া এতোক্ষন বসে বসে দেখছিল সব।নীলের বেয়াদবী দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছে।সামনে বাপ চাচা দাদী সহ বড় দের সামনে কি করে বউকে কিস করতে পারলো? শুভা মেয়েটার দিকে তাকাতেই কেন যেন কলিজায় টান লাগলো মায়ার।কারও ছায়া আছে এই মেয়েটার অবয়বে।কার ছায়া মায়া খুজতে চাওয়ার আগেই পাশ থেকে মালা বললো,
“-দেখেছিস কেমন করছে? আমার তো মনে হয় কালো জাদু টাদু করেছে নীলকে।নয়তো নীল কি এমন ছেলে বল? বস্তির মানুষ আবার এসব জাদু টাদু ভালো জানে বুঝলি মায়া।কেমন বশ করে ফেলেছে আমাদের ছেলেটাকে।
“- যতো জাদুই জানুক কাজ হবে না।নীলের জীবনে ওর দিন শেষ হয়ে আসছে।ওর কালো ছায়া আমি দ্রুতই সরিয়ে দেব।তুমি নীলকে আজ রাত থেকে যাওয়ার কথা বলো তো।
“- কি বলিস?
“- যা বলেছি তাই করো তো আপা।
“- এই নীল!
“- হ্যাঁ ফুপি!
“- বউ মা কে নিয়ে প্রথমবার আসলি।থেকে যা আজ রাতটা।
“- না ফুপি! আজ নয় অন্য দিন।
“- কেন রে নীল? আমাদের সাথে এখন আর থাকতে ইচ্ছা করে না?
“- এদের সাথে থাকতে ইচ্ছা করে না সেটা তুমিও জানো আর এরাও জানে।বাট তোমার সাথে অবশ্যই থাকতে ইচ্ছা করে ছোট ফুপি।
তবে আজ নয়। পরশু তোমার বিবাহবার্ষিকি ঐ দিন থাকবো কথা দিলাম।
“- ঠিক আছে। তোর কথা কি আর ফেলতে পারি? তবে ফুপির একটা অনুরোধ তোকে রাখতেই হবে কিন্তু।
“- বলো চেষ্টা করবো।
“- চেষ্টা না।রাখতেই হবে।ওয়াদা কর।ভয় নেই ফুপি কঠিন কিছু বলবে না।
“- আচ্ছা বলো।
“- কাল বিকালেই চলে আসবি নতুন বউকে নিয়ে।বল আসবি?
“- কাল! তা কি করে,,,
“- ওয়াদা করেছিস নীল।
“- আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার কোনো সমস্যা নেই তো শুভা?
“- না!
রাতে খেয়ে দেয়ে শুভা আর নীল চলে এলো।শুভা বাসায় আসার পর থেকেই নীলের ছোট ফুপির কথা ভাবছে।কি সুন্দর মহিলা।দেখলে বোঝা মুসকিল তিনি ৪০ এর কাছাকাছি। কেমন একটা অদ্ভুত মায়া কাজ করেছে মায়া ফুপিকে দেখে শুভার।চুলটুল বেধে নীলের দেওয়া লাল সিল্কের শাড়ি পড়ে বসার ঘরে আসলো।নীল আসার পর কই যেন বেরিয়ে গেল।এখনও আসার নাম নেই।শুভা বসার ঘরে বসে পায়চারি করছে সমস্ত দিনের কথা ভেবে।
“- মায়া! ঘুমিয়েছ?
“- না!কিছু বলবে?
“- হুমম।মায়া নীলের বউকে দেখেছ?
“- হ্যাঁ কেন?
“- মেয়েটার গায়ের রং ফর্সা হলে অবিকল তোমার মতো দেখতে হতো।ওর নাকটা আর চোখটা কিন্তু পুরো তোমার কপি।
আসিফের কথা শুনে মায়া উঠে বসলো।ধেড়ে গলায় বলে উঠলো,
“- কি বলতে চাচ্ছ তুমি আসিফ? পরিষ্কার করে বলো।
“- ওর হাসি ওর ঠোটের কোনে কালো তিলটা আমাকে শাহেদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল মায়া।
“- চুপ কর! চুপ কর।ঐ ধোকাবাজ, চরিত্রহীনটার কথা মুখেও আনবে না তুমি।কোনোদিন না।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে আসিফ।যাকে তাকে তুমি শাহেদের মতো দেখো।
“- না হয়নি! আমার বন্ধুকে তুমি অযথায় ভুল বুঝেছ।একটিবার ওর কথা শোনো নি।বেচারা মৃত্যুকালেও কতো অনুনয় করেছিল তোমার সাথে দেখার জন্য। পাষান তুমি।নিষ্ঠুর নারী আসিফ কাদো কাদো হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মায়া ঠাই দাড়িয়ে রয়। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও মায়া শুনতে পাচ্ছে।সত্যি কি ভুল করেছে শাহেদ কে অবিশ্বাস করে? না! কোনোদিন না।চোখে দেখা সত্য মিথ্যা কি করে হয়।হ্যাঁ নিষ্ঠুর, পাষান আমি আসিফ।তুমি তো ধোকা খাওনি,ভালোবাসার অমর্যাদার মুখোমুখি তোমাকে হতে হয়নি তাইতো আজ সহজে আমাকে দোষ দিয়ে যেতে পারলে।তোমার বন্ধুকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবো না।কোনোদিন না।ওর পাপের শাস্তি আমার আমার নিষ্পাপ সন্তানটাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছি।জানি না কেমন আছে? বেঁচে আছে না মরে গেছে।যেখানেই থাক আমার থেকে দূরে থাক।শাহেদের মতো বেঈমানের রক্ত আমি দেখতে চাই না।
মায়া বালিশে মুখ চেপে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
|
|
শুভা নীলের প্রতিক্ষা করে করে আজও ঘুমিয়ে পড়ে।হঠাৎ মনে হয় শূন্যে ভাসছে।চোখ খুলে ভয় পেয়ে যায় নীলের কোলে নিজেকে দেখে।
“- এই পাগল আপনি? ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।নামান!
“- না! আজ সারারাত কোলে করে বাড়ি ঘুরবো মজা হবে না বলো?
“- ঘোড়ার আন্ডা হবে? নামান তো।ঘুম পাচ্ছে খুব।
“- ঘুমাও! ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী।ফুলেরও বিছানায়,,ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী।আকাশে রূপালি চাঁদ। চাঁদে ভরা জোছনা ঝরে পরুক তোমার গায়। ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনি,,,,
নীল শুভাকে ছাদে নিয়ে এসে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো সাদা চাদরের বিছানায় শুইয়ে গান গাইতে থাকে।শুভা সিল্কের লাল শাড়ির পড়ে গোলাপের পাঁপড়ির মাঝে শুয়ে আছে অদ্ভুত আবেগের লজ্জায় লাল হয়ে।নীল শুভা মুখোমুখি শুয়ে।মাথার উপরে সাদা থালার মতো চাঁদ। শুভার আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে নীল নিজের আঙুল নিয়ে খেলা করে।শুভার হাতে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে ক্রমশ অধর,চিবুক ছুয়ে নীলের ঠোঁট শুভার সর্ব শরীরে বিচরন করে।ভালোবাসার সুরের ঝঙ্কারে এই চাঁদ এই রাত মধুময় হয়ে ওঠে।শুভার লজ্জা ভেদ করে নীলের ভালোবাসা জায়গা করে নেয় শুভার অস্তিত্ব জুড়ে।
একই চাদরে মোড়া দুটো মানুষ চাদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনছে।শুভা নীলের গলায় মাথায় ঠেকিয়ে চাঁদকে দেখে যাচ্ছে পরম ভালোবাসায়।
“- শুভা!
“- হুমম
“-ভালোবাসো আমাকে?( শুভার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে)
“- জানি না? ( লজ্জায় নীলের মুখে মুখ লুকায়)
“- হা! হা! হা!
“- অসভ্য একটা।যান কথা নাই আপনার সাথে।
“- বুঝেছ আমার বাচ্চার মা!আমি কিন্তু একটা নয় দুটোর বাবা হতে চাই একসাথে।একটা প্রিন্স আর একটা প্রিন্সেস।দুহাতে দুটোকে নিয়ে সারাদিক কাটবে আমার।
“- ইশশ! লজ্জা নেই।শখ কেন এতো? দুটোকে কে পালবে?
“- কেন আমি? ওদের এই ঝগরুটে মা কে যদি একাই সামলে নিতে পারি ওরা তো আমার মতো গুড বাচ্চা হবে।ওদের তো আরও আগেই সামলে নিব।আচ্ছা টুইন নয় ৪ টা একসাথে ওকে।
“- আল্লাহ গো! কি সাংঘাতিক মানুষ?আমি তো মরেই যাবো তাহলে।এতো বাচ্চার শখ আরেকটা বিয়ে করেন না।
“- সত্যি করবো?
“- একদম নাক ফাটিয়ে দেবো না।আমার জায়গা আমি মরেও ছাড়বো না বুঝলেন?
“- মরার কথা বলো না শুভা। তুমি ছাড়া আমি বেঁচে থাকবো কি নিয়ে বলো? আমার মন প্রান জুড়ে শুভা ছাড়া আর করো বসতি স্থাপন হবে না।এ হৃদয় মোর বিরান বালুচর তুমি হীন বুঝলে ইদুরনি?
“- হু! কবি হয়ে গেলেন দেখছি।হি! হি!
নীল সুযোগ বুঝে আবার শুভা ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।
“-ধ্যাৎ! আচ্ছা ছেলের নাম কি রাখবেন?
“-উমম!আমার প্রিন্সের নাম হবে শাহারান আবদুল্লাহ শৌর্য আর প্রিন্সেসের,,,
“- ওটা আমি রাখবো প্লিজ! প্লিজ!
“- ওকে বাচ্চার মা( শুভার চিকন সরু নাকটায় আলতো করে কামড়ে)
“- উহু! ( নাকে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে)উমম নিলায়া রায়ান নুরভি
“- নুরভি! নাইস নেম? অর্থ কি?
“- মূল্যবান।আমার স্বামীর দেওয়া মূল্যবান উপহার আমার সন্তান।
“- আই লাভ ইউ শুভার মুখটা উচু করে গালে ঠোঁটে ভালোবাসা দিয়ে।তুমি বলবে না?
“- আমার লজ্জা লাগে না। নীলের বুকের লোম টেনে বলে।
“- আউচ! এটা কি ছিল?
“- ভালোবাসা!
“- হুমম! ( চোখ রাঙিয়ে)
“- হুমম( হেসে)
“- আজ তো কাঁচা খেয়ে ফেলবো তোমাকে আমার সাথে চালাকি? শুভাকে বিছানায় ফেলে গলায় চিবুকে আলতো কামড় দেয়। চোখে চোখ পড়তেই অপলক চেয়ে থাকে।নীলকে অবাক করে দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।
“- আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি নীল।অনেক!আপনি আমাকে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে মারবেন না তো? ফেলে যাবেন না তো একা।
“- কোনোদিন না শুভা।কোনোদিন না।এই বুকে লুকিয়ে রাখবো আমার এই ছোট্ট ইদুরনি কে।
“- আমার ভয় হয় নীল!আপনি আমাকে একা করে দিলে আমার মনে হয় আমি হারিয়ে যাবো।তখন আর পাবেন না কিন্তু।
“- এমন দিন কখনোই আসবে না।আসলেও আমি তোমাকে খুজে বের করে আমার আমার ভালোবাসার শিকলে বেঁধে রাখবো।শুভাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা হয় নীলের।তা দেখে শুভা বলে,
“- শিকলে কেন বাধবেন? ব্যথা পাবো না আমি?
“- পেলে পাবে? আমাকে ছেড়ে দূরে যাওয়ার চিন্তা করলেই আটকে রাখবো।তারপর অনেক পিটুনি দিবো।
“- ইশশ! আসছে পিটুনি দেবে। মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো না আপনার?
“- স্বামীর নাক ফাটিয়ে দেবে? দজ্জাল মেয়ে! আমার সন্তানদের বলবো তোমার মাম্মী দজ্জাল। একদম মিশবা না।আদরও দেবা না
“- আসছে! যান ভাগেন? আমার সন্তানদের আমি আপনাকে দিব নাকি? ওদের বলবো এই কুত্তাওয়ালা ব্যাডার কাছে যাবি না তোরা।বহুত বদ।কথায় কথায় খালি পচা আদর করে।
“- ওদের এসব বলবা? হা! হা! হা! তাহলে তো মজা হবে।ওদের সামনেই আদর করা শুরু করবো।
“- কেমন ফাজিল লোক! লজ্জা নাই।বদ একটা।আমি ঘুমাবো সরেন! কি হলো সরেন?
“- না! শুভাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে।শুভা হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করতে করতে দুজনই খাটের কিনারে ধিড়িম করে পড়ে।
“- আহ! ব্যথা পেয়েছি! ( নীল নিচে পড়ে শুভাকে বুকের মধ্যে রাখে)
“- ভালো হইছে।আরও জড়িয়ে ধরেন।
“- আচ্ছা!
“- আরে কি শুরু করছে? কি জ্বালা রে! বিছানায় তো উঠতে দিন?
“- না! এভাবেই থাকো।
“- কাঠালের আঠা একটা? অসহ্য!
“- অসহ্য টু!
“- অসহ্য থ্রি!
“- অসহ্য ১০০
“- ধ্যাৎ
“- ধ্যাৎ২
শুভা নীলের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয়।নীল সেই সুযোগে আবার শুভার ওষ্ঠদ্বয় বিনা নোটিশে দখল করে নেয়।

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *