বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 14
খান মঞ্জিলে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। খান বাড়ির সামনের খালি জায়গায় প্যান্ডেল সাজিয়ে মেহমান বসার জায়গা ঠিক করা হচ্ছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের অনেকে ইতমধ্যে চলেও এসেছে।মায়ার ১৭ তম বিবাহবার্ষিকি আয়োজন হচ্ছে। মায়া চাইনি এতো জাঁকজমকের কিন্তু আসিফের জেদের কাছে হার মানতেই হয় মায়াকে।লোকটা ভালোর ভালো আবার জেদ করে বসলে সে জিনিস তার চাই ই চাই।নীলকে সকাল সকাল ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। শুভাও এসেছে। নীল শুভাকে রোদেলির কাছে রেখে অয়নের সাথে জরুরি কাজে বাইরে গেছে।রোদেলি ঘরে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে তাই শুভার সাহায্যে হুইলচেয়ারে করে ছাঁদে এসে বসেছে।এমন সময় আসিফ ফুপা ছাঁদে আসলো,
“-কেমন আছ সিন্ডারেলা!
“- আসসালামু আলাইকুম ফুপা! আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি
“-এই আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাক খুবই ভালো রাখছে।এটা আমাদের বউ মা না?
“-হুমম( হেসে)
“-আসসালামু আলাইকুম ( মুচকি হেসে)
“- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আম্মাজানের নাম কি?
“- শুভাসিনী জান্নাত!
“- কি!কে রেখেছে এ নাম?
“- না! মানে! আমার বড় মা।শুভা কথা লুকালো।আসলে ওকে যে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিল সে একটা চিঠিতে ওর নাম কি হবে সেটা লিখে দিয়েছিল।সেখানেই বলা ছিল কেউ শুভাকে পেলে ওর নাম যেন শুভাসিনী জান্নাত রাখে।
“-সত্যি বলছ? ( ভ্রু কুচকে)
“- জ্বী! ( বিস্ময়ে)
“-না মানে কিছু না।আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি আসি।আচ্ছা একটা কথা বলি?
“- জ্বী ফুপা!
“- তোমার বড় মায়ের ঠিকানা টা দেবে আমাকে?
“- হুমম।
“- ঠিক আছে যাওয়ার আগে আমি মনে করে নিয়ে নেব।তুমি খুব লক্ষি একটা মেয়ে মা।তোমাকে দেখলে আমার শাহেদের কথা মনে পড়ে।মনে হয় তুমি আমার অনেক আপন কেউ।
“- আসিফ!ছাদের দরজায় দাড়িয়ে মায়া ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এগিয়ে এসে বলে।মাথা কি সম্পূর্ণ খারাপ হয়েছে তোমার? ওকে এসব কেন বলছ? নিচে যাও
“- সারাদিন হিটলারের মতো করো কেন বুঝি না।মেয়েটা,,,
“- আসিফ প্লিজ!
“- ওকে! জাস্ট রিলাক্স। ওকে ব্লাক ডাইমন্ড পরে কথা হবে? আসিফ ছাদ থেকে নেমে যেতেই মিরা ছাঁদের দরজা আটকে দেয়।এতোক্ষন ফুপার কথায় রোদি আর শুভার মুখে যে হাসি আসছিল তা হঠাৎই উবে যায় এই তিন নারী মূর্তি দেখে।সামনে দস্যুর ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে মায়া,মালা আর মিরা।রোদি খারাপ কিছুর আচ করতে পেরে শুভাকে নিচে নামতে বলে।ঠেলে পাঠাতেই মিরা আচমকাই শুভার চুলের মুঠি ধরে ছাদের উপর ফেলে দেয়।শুভা হাটুতে মারাত্মক ব্যথা পায়।ঘটনার আকস্মিকতায় শুভাও হতভম্ব হয়ে যায়।যে সাহস ছিল সব ভয়ের শিকলে বন্দী হয়ে পড়ে।শিকল ভেদ করে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে উঠে দাড়িয়ে তেড়ে যায় মিরার দিকে,
“- সাহস কি করে হয় আমাকে ধাক্কা দিস? তোকে তো?
শুভা হাত উঠানোর আগেই মায়া কষে শুভার গালে চড় লাগায়।এতোটাই জোরে চড়টা ছিল যে শুভার ভেতরটা নড়ে উঠলো।এই মহিলাকে শুভা কেন যেন খুব পছন্দ করে ফেলেছিল। সেই পছন্দের মানুষটার কাছ থেকে এমন ব্যবহার শুভা মোটেও আশা করে নি।
“- আপনি আমাকে কেন মারলেন ফুপি?
“- ফুপি ভাবিকে মারছ কেন? ভাবিকে ছেড়ে দাও ফুপি।
“- আরে তুই চুপ কর! অপয়া,অলক্ষি একটা।মালা রোদির মুখ চেপে ধরে।মায়া এই মেয়েকে আজ শিক্ষা দিবি।চরম শিক্ষা।বড়লোকের ছেলে ফাসিয়ে বিয়ে করানোর স্বাদ মজিয়ে দেব।ছোটজাত একটা।
“- এই মেয়ে সাইন কর।ডিভোর্স পেপার শুভার সামনে তুলে ধরে।
“- আপনি এমন কেন করছেন আমার সাথে? কেন ডিভোর্স দেব? কোনোদিন দেব না।
“- দিবি না মানে কি? বস্তির বাচ্চা বস্তি। তোর মতো কালো মেয়ের জায়গা এ বাড়ি জুতা মুছার জন্যও হয় না।আর তুই কিনা আমাদের ছেলেকেই দখল করে নিয়েছিস? এতো সহজ?তুই অশুভ,অপয়া তোর ছায়া আমি আমার নীলের উপর পড়তে দেবো ভেবেছিস? আমার ভাগ্নির গায়ে তোলার সাহস তোকে আজ কড়াগন্ডায় বুঝিয়ে দেবো।শুভার চুল ধরে মাথা নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে।
“- দেখুন আপনি ভুল বুঝছেন।ব্যথায় শুভার চোখে জল চলে আসে।মায়ার কেন যেন মায়া হয় মেয়েটার ব্যথায় লাল হওয়া মুখটা দেখে।কিন্তু যখনই শুভার ঠোঁটের কোনের তিলটা দেখে রেগে খেঁকিয়ে ওঠে,
“- এই মায়া ভুল করা ছেড়ে দিয়েছে।বরং তোর মতো কালি কে ছেড়ে দিলে ভুল হবে।সাইন কর।
“- না! কোনোদিন না।
“- করবি না মানে? তোর মতো অজাত কুজাতকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার জানা আছে।
মিরা ধর এটার হাত ধরে সাইন করা।
“- দয়া করুন এটা করবেন না।আপনার পায়ে পড়ি।শুভার আকুতি মায়ার কঠিন হৃদয় গলাতে পারলো না।মিরা জোর করে সাইন নিয়েই নিল।
“- খালামনি ডান( হেসে)
“- চল! কাজ শেষ।নীল কোনোদিন আমার কথার অবাধ্য হবে না।
“- খালামনি ওয়েট! সেদিন নীলের সামনে খুব লাফালাফি করছিলি তাই না? আঙুল তুলে কথা বলেছিল।তোর আঙুল আমি।মিরা শুভার আঙুল জোরে করে চেপে ধরলো।ব্যথায় কুকড়ে উঠলো শুভা।মিরা কে ধাক্কাদিতে মিরা মায়ার উপর পড়ে যায়।মায়া টাল সামলাতে না পেরে দরজায় হুমড়ে পড়তেই জং ধরা দরজার এককোনা লেগে মায়ার হাত কেটে গলগল করে রক্ত বের হয়।মিরা মালা দৌড়ে মায়াকে উঠায়।রাগে গর্জে ওঠে মায়া,
“-আমাকে আঘাত করিস! এতো সাহস তোর? এর শাস্তি তুই পাবি।
“- দেখেন আমি ইচ্ছা করে আপনাকে ব্যথা দেয় নি ফুপি।আপনি চলুন আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
শুভাকে কাছে আসতে দেখে মালা আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় শুভাকে।
“- একদম আমার বোনকে ছুবি না।তোদের মতো ছোটলোক, কালির ছোয়া লাগলেও ওরে সাত গোসল করতে করবে।চল মিরা মায়াকে নিয়ে চল।আসুক আজ নীল।
“- ভাবি তুমি ঠিক আছ? আল্লাহ আমাকে পঙ্গু কেন বানালে? অমানুষ তোমরা! অমানুষ! ভাবি ওঠ।
“- আপু আমি ঠিক আছি কেদো না তুমি।আল্লাহ কে দোষ দিও না। আল্লাহ নির্দোষ! সব দোষ এসব পাপীদের। তুমি কেদো না।
|
|
নীল অয়নের সাথে হাসতে হাসতে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখে মিরা মায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করছে।মায়া ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে।নীলের হাসি মুখে মুহুর্তেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল।ছুটে গেল ফুপি কাছে।
“- কি হয়েছে ফুপি! কিভাবে ব্যথা পেয়েছ?
“- আরে এমনি।
“- কেন মিথ্যা বলছিস মায়া? সত্যি টা বল।
“- নীল আমি তোমার যোগ্য না তাই ঐ কালি কে বিয়ে করেছ তাই না?ওর গায়ের রঙের মতো ওর মনটাও কালো সেকি জানো তুমি?
“- মিরা! একদম শুভার ব্যাপারে উল্টো পাল্টা বলবি না।
“- নীল! ও ঠিকই বলেছে।তোর বউ কে মায়া শুধু দু এক কথা জিজ্ঞেস করেছিল তাতে হাজারটা বিশ্রী কথা শুনিয়ে দিয়েছে তোর বউ।বস্তির ভাষা যেমন হয়।
“- বড় ফুপি তুমি মিথ্যা বলছ।আমার শুভা আর যা করুক কারো সাথে বেয়াদবি করবে না।
“- আচ্ছা! তাহলে কি এসব মিথ্যা। আচ্ছা আমি মিথ্যা বলছি।তাহলে তোর মায়া ফুপিকে জিজ্ঞেস কর হাত কিভাবে কেটেছে। জিজ্ঞেস কর।
“- ফুপি! বলো!
“- হ্যাঁ নীল বড় আপা যা বলেছে সত্যি। এমন অসভ্য আনকালচার মেয়েকে কেন বিয়ে করলি তুই? আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি নীল অনেক।মায়া কেঁদে দেয় কথাগুলো বলতে বলতে।
“- শুভা! শুভা!নীল হুঙ্কার দিয়ে চিৎকার করে ওঠে।নীলের মম,চাচী বের হয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। নীলের রাগকে তারা জানে তাই কাছে এগোয় না।শুভা রোদির ঘরে বসে কাঁদছিল। নীলের ডাকে ছুটে আসে নিচে।রোদি মা কে চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকে।কিন্তু ওর ডাক নিচ মায়ের কান অব্দি আসে না।নীলকে জড়িয়ে ধরতেই নীল নিজের থেকে ছাড়িয়ে মুখোমুখি দাড় করায়।শুভা ভয়ে শিওরে ওঠে নীলের চোখ মুখ দেখে।পুরো বাড়ির লোক জমা হয় হল রুমে।
“- ফুপির হাত কেটেছে কিভাবে?
“- আমি ইচ্ছা করে কাটি নি বিশ্বাস করুন।শুভার কথা শেষ না হতেই নীল সজোরে চড় লাগিয়ে দেয় শুভার গালে।
“- ছি! শুভা! ছি! আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার শুভা এতো নীচ কাজ করতে পারে।উনি আমার মায়ের সমান শুভা।আমার কষ্টের সময় দুঃখের সময় ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন।তুমি তাকে অপমান করে কথা বলছ।তাকে আঘাত করেছ?এই তুমি কি বাচ্চা?
“- আপনি বিশ্বাস করুন!
“- ছোটলোক সারাজীবন ছোটলোক থাকে।একে বিয়ে করাই তোমার ভুল হয়েছে নীল।
“- এই চুপ! ডায়নি একটা।আমার স্বামীকে ভুল ভাল বুঝাচ্ছিস?
“- চুপ! মিরা ঠিকই বলেছে।তোমাকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে।চরম ভুল।।
“- নীল! এভাবে বলবেন না প্লিজ।আমি মরে যাবো।আসিফ ছোট চাচি এগিয়ে আসে নীলের রাগ থামাতে।
“- নীল! কি বলছিস? বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে।
“-বাচ্চা মেয়ে বাচ্চা মেয়ে ভেবেই কিছু বলি নাই এতোদিন। যাও মরে! যা খুশি করো। জাস্ট আমার চোখের সামনে থেকে যাও।জাস্ট লিভ
নীল ফুপির হাতটা ধরে হাঁটু মুড়ে বসে।শুভা পুরো বাড়ির লোকের কানাঘুষা শুনে লজ্জা,অপমানে মাথা নুয়ে কাঁদতে থাকে।
“- ছোট চাচি ওকে যেতে বলো আমার সামনে থেকে।ছোট চাচি এগিয়ে আসার আগেই শুভা ছুটে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।নীল চোখ বন্ধ করে চোখে জল ফেলে।গা কাঁপছে নীলের, প্রচন্ড কাঁপছে।
|
|
শুভা বাড়ি এসে মনিরাকে জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
“- কি হয়েছে মা! বল! নীল কিছু বলেছে
“-আচ্ছা বড় মা!কালো কি অপবিত্র, অস্পৃশ্য,অসুন্দর?তবে কা’বার গায়ে কালো কাপড়ে মোড়া কেন? কেনইবা সবাই কালো কেশে,কাজল কালো চোখে হৃদয়হারায়?সবার আরাধ্য কালো কেশ, কালো টানা কুচকুচে ঘন ভ্রু।শুধু গায়ের কালো রঙের বেলায় সবাই ছি! ছি! করে।অস্পৃশ্য, অসুন্দর বলে সদ্য ভূমিষ্ঠ কালো মেয়ে শিশুর স্থান মায়ের কোল থেকে ময়লার ডাস্টবিনে স্থানান্তরিত হয়।অবহেলা,অনাদরে সমাজে তার নতুন নাম হয় কাল্লেনি,কালি,অপয়া,অশুভ।আমিও তো এক কাল্লেনি,কালি,অপয়া তাই না বড় মা?কালো দেবীর যদি বন্দনা হয় কালো মেয়ের তবে নিন্দে কেন হয়? মানুষ বলে!আমার কপাল তো জন্মথেকেই পোড়া মা! কারন? ঐ যে আমার গায়ের রঙ ময়লা।যে ময়লা পৃথিবীর কোনো পরিষ্কারক দ্রব্যেই দূর হয় না।আমি এই গায়ের রঙের কাছেই কেন বার বার দূর্বল হয়ে যায়।কেন পারি না মানুষকে উচিত জবাব দিতে? বল বড় মা!
“- কাদিস না মা! কাদিস না।যারা গায়ের রঙে মানুষকে বিচার করে তারা মানুষ না অমানুষ।আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে মুখ বেকালে আল্লাহ তার শাস্তি অবশ্যই দেবে।কালা, ধলা সব আল্লাহ ভালোবেসে সৃষ্টি করেছে।এতে তোর তো হাত নেই।যারা এসব ভেদাভেদ করে তাদের অন্তর পোড়া কয়লার মতো কালো।তুই তো পবিত্র অন্তরের রে মা।তুই আমার মেয়ে।মনিরা সুলতানার মেয়ে।শুভার মাথায় হাত বুলিয়ে মনিরা মেয়েকে বুঝায়।
অনুষ্ঠান ভালোয় হয়েছে।শুধু নীলের মন ভালো নেই।চুপচাপ এক কোনে স্থির দৃষ্টিতে বসে আছে শুভাকে থাপ্পড় দেওয়া হাতটার দিকে তাকিয়ে।নীলের অনুশোচনা হচ্ছে শুভাকে মেরে।সত্যি তো বাচ্চা ও।ভুলে হয়তো লেগে গেছে।একটিবার শুনলেও হতো ওর কথা।নীল শুভার কাছে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়। মায়ার ইশারায় মিরা নীলকে জোর করে ধরে এনে খাবার টেবিলে বসায়।মায়ার খুশি নষ্ট হবে ভেবে উঠেও যেতে পারছে না নীল।নীল একটু বস আসছি আমি।মিরা এদিক আয়!
|
|
রাত ১০ টার কাছাকাছি বাজে।শুভা দরজার দিকে দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করছে নীলের।নীল আসবে।হ্যাঁ আসবেই নীল।খুব অভিমান করবে শুভা।কথায় বলবে না বদটার সাথে।হঠাৎ করে ঘরে ৫/৬ জন যুবক ঢুকে পড়লো।শুভা দৌড়ে পালাবে তার আগেই শুভার পথ আগলে দাড়ায়।মনিরা ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে শুভার চিৎকারে।
“- এই কারা তোমরা? আমার মেয়েকে ছাড়ো বলছি?আশিক! আশিক!
আশিক পাশের ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে।কিন্তু পেরে ওঠে না।আশিক কে অনেক মেরে মনিরাকে আঘাত করে শুভাকে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে যায়।সামি,রাতুল,রাবুকে পাশে ঘরে হাত মুখ বেঁধে ফেলে রেখে যায়।আশেপাশের কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেল না এ বাড়িতে কি ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেল।
নীল অয়নের সাথে কথা বলছিল তখনই মেহরাজ বলে,
“- ভাইয়া! রোদি আপু তোমাকে ডাকছে।আপু খুব কাদছে ভাইয়া!নীল ছুটে যায় বোনের কাছে।নীলকে দেখে পাগলের মতো চিৎকার করে কাদে রোদি।সব ঘটনা খুলে বলতেই নীলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।এতো বড় ভুল রাগের মাথায় কি করে করলো নীল।নীল আর এক মিনিটও অপেক্ষা করে না যাওয়ার আগে তিনদজনকে শাসিয়ে যায় শুভার কিছু হলে কাওকে ছাড়বে না।মায়ার দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে।
“- সত্যি টা যখন জানতে পারবে নিজের কর্মের জন্য আয়নায় নিজের মুখটাও দেখতে ঘৃণা হবে তোমার ফুপি।নীল দ্রুত বেগে গাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসে।রিনা বুয়া জানায় শুভা খিলক্ষেত আছে।মনিরা রিনা বুয়াকে মোবাইলে জানিয়েছে। নীল তৎক্ষনাৎ খিলক্ষেত রওনা হয়।হাত পা কাঁপছে নীলের।কোন মুখে শুভার সামনে দাড়াবে? কোন মুখে? কেন এমন করে আপন মানুষ গুলো।কেন নীলকে সুখী হতে দেয় না ওরা।নীল আর সম্পর্ক রাখবে না ঐ বেঈমানদের সাথে।শুভাকে নিয়ে নিজের দুনিয়া গড়বে।
নীল গাড়ি কোনোমতে ফেলেই বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখে বাড়িতে মানুষের ভীর।এতো মানুষ দেখে কলিজা মুচড়ে ওঠে নীলের।নীল পড়তে পড়তে দেয়াল ধরে বসে।শরীরে শক্তি পাচ্ছে না।কি হয়েছে ভেতরে? আমার শুভা ঠিক আছে তো?হঠাৎ গত রাতে বলা শুভার কথাগুলো মনে পড়লো।উঠে দাড়িয়ে ছুটে গেল ভীর ঠেলে। মনিরার মাথায় ব্যান্ডেজ করা।আশিক হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় পুলিশের সাথে কথা বলছে।নীলকে দেখে মনিরা পাগলের মতো ছুটে আসে।হাওমাও করে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যায়।নীলের বুঝতে বাকি থাকে না কি অঘটন ঘটে গেছে।মনিরাকে একহাতে বুকে ধরে চিৎকার করে শুভা!শুভা! বলে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ডাকে।না! শুভা দৌড়ে আসে না।নী আবার ডাকে,
“- শুভা!এই দেখো কানে ধরেছি।তুমি বললে হাজারবার উঠবস করবো।ক্ষমা করে দাও না ইদুরনী।ভুল হয়েছে আমার।অনেক বড় ভুল।প্লিজ বের হয়ে আসো।শুভা! নীল গগনবিদারী আর্তনাদ করে ওঠে।রাতের অন্ধকার ভেদ করে পুরো শহর কাপিয়ে তোলে নীলের আহাজারি।
চলবে😥😥