বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ- ৯

শার‌মিন আক্তার
——-তারপর আদ্র আর রায়ান দুজন খেল‌তে চ‌লে গে‌লো।
আর বড়রা কা‌জে লে‌গে পড়‌লো। তু‌লি তনয়ার কাছ থে‌কে জানতে পার‌লো রায়ান আর আদ্রর জন্ম‌দিন একই দি‌নে। সেজন্য দুপু‌রে দোয়া কালাম পড়ার সময় রায়ান এর জন্যও দোয়া করা‌লো। বা‌ড়ির সবাই ভিষন খু‌শি। এমদাদ দুপু‌রে খে‌য়ে চ‌লে গে‌লো কারন তার জরু‌রি কিছু কাজ ছি‌লো। কিন্তু তনয়া আর রায়ানকে তু‌লি যে‌তে দি‌লো না। বিকা‌লে তু‌লি তনয়ার সা‌থে কথার ঝু‌ড়ি খু‌লে বস‌লো।
তনয়া ওর সা‌থে ঘ‌টে যাওয়া সব ঘটনা খু‌লে বল‌লো। তারপর বল‌লো এখন একটা হাই স্কু‌লে টিচার হিসা‌বে আছে। এমদাদ লেখাপড়ার পাশাপা‌শি ছোট খা‌টো একটা ব্যবসায় খু‌লে ব‌সে সেটা‌তে তনয়া ওকে হেল্প ক‌রে। ব্যবসায়টা দিন দিন আল্লাহ‌র রহম‌তে ব‌ড়ো হ‌চ্ছে।
তারপর তু‌লি তনয়ার বাবা মা‌য়ের বিষয়, অভির বিষয় সব খু‌লে বল‌লো। আর এও বল‌লো তনয়া যে‌নো ওর বাবা মা‌কে এখন মাফ ক‌রে দেয় এবং তা‌দের সা‌থে যোগা‌যোগ ক‌রে। তারা এখন খুব ক‌ষ্টে আছে তনয়ার জন্য। তারপর আরো অনেক কথা বল‌লো ঘ‌রের সবাই। আয়াত বে‌শির ভাগ টাইমই চুপ ছি‌লো। মাথার ম‌ধ্যে একটা চিন্তা ঘুর‌ছি‌লো তনয়া সব স‌ত্যি জে‌নে যায়‌নি তো?
রা‌তে আদ্র আর রায়ান বায়না ধর‌লো তু‌লির সা‌থে ঘুমা‌বে। তু‌লি না কর‌লো না কারন তু‌লি বাচ্চা‌দের ভিষন ভা‌লোবা‌সে। তু‌লি ওদের গল্প শুনা‌তে শুনা‌তে ঘুম পা‌ড়ি‌য়ে দিলো। তু‌লির মাথাটা ভিষন ব্যাথা কর‌ছি‌লো তাই আয়াত মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তেই তু‌লিও ঘু‌মি‌য়ে পর‌লো।
তনয়ার ঘুম আস‌ছি‌লো না, তাই তু‌লি‌দের ছা‌ঁদে গি‌য়ে চ‌ুপচাপ দা‌ড়ি‌য়ে জোৎস্না দেখ‌তে লাগ‌লো। পিছন থে‌কে কেউ ব‌লে উঠ‌লো চা খা‌বেন? তনয়া পিছ‌নে তা‌কি‌য়ে দে‌খে আয়াত!
তনয়াঃ ওকে দিন।
আয়াত তনয়ার দি‌কে চা‌য়ের মগটা বা‌ড়ি‌য়ে দি‌লো। তনয়া চা‌য়ের কা‌পে চুমুক দি‌য়ে বল‌লো
তনয়াঃ তু‌লি ঘু‌মি‌য়ে‌ছে?
আয়াতঃ হুমম। ওর ভিষন মাথা ব্যাথা কর‌ছে। ঔষধ খাই‌য়ে মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌তেই ঘু‌মি‌য়ে পর‌লো।
তনয়াঃ ওহ! খুব বে‌শি ভা‌লোবা‌সেন তু‌লি‌কে?
আয়াতঃ নি‌জের জীবনটা‌কে কে না ভা‌লোবাসে।
তনয়াঃ হুমমম। ভিষন লা‌কি তু‌লি!
দুজন কিছুক্ষন নীরব তারপর আয়াত বল‌লো
আয়াতঃ এত বছর পর হঠাৎ আমা‌দের কথা ম‌নে পর‌লো?
তনয়াঃ ম‌নে তো সবসময়ই পড়ে, কিন্তু কখ‌নো আসি‌নি। আর তাছাড়া আপনা‌দের ঋণের বোঝা বাড়া‌তে চাই‌নি। কিন্তু ভু‌লে গে‌ছিলাম জীবন দি‌য়ে হ‌লেও আপনা‌দের ঋণ শোধ করা সম্ভব না। তার জন্য আমা‌কে সাত জন্ম নি‌তে হ‌বে।
আয়াতঃ মা‌নে?
তনয়াঃ আজ আমি আপনার কা‌ছে কিছু সত্যি জান‌তে এসে‌ছি। আর আ‌মি জা‌নি তার উত্তরও আপ‌নি জা‌নেন!
আয়াতঃ কি স‌ত্যি? কি উত্তর? অনেক রাত হ‌য়ে‌ছে ঘুমাতে যান। এটা ব‌লে আয়াত চ‌লে যে‌তে নি‌লো তনয়া বল‌লো
তনয়াঃ রায়ান কার ছে‌লে আয়াত?
আয়া‌তের সারা শরীর যে‌নো হিম ধ‌রে গে‌লো। কারন যে, প্র‌শ্নের সম্মু‌খীন ও জীব‌নে হ‌তে চায়‌নি, যে, প্রশ্ন পাঁচ বছর ধ‌রে ওকে কু‌ঁড়ে কু‌ঁড়ে খা‌চ্ছে সে প্রশ্ন আজ ওর সাম‌নে তনয়া তু‌লে ধর‌ছে! আয়াত প্রশ্নটা এড়ি‌য়ে যে‌তে চাই‌ছে। কিন্তু কিভা‌বে এড়া‌বে তার কোন উপায় খুঁ‌জে পা‌চ্ছে না? তারপর ম‌নে কিছুটা সাহস নি‌য়ে বল‌লো—-
আয়াতঃ আজব প্রশ্ন‌তো! রায়ান আপনার ছে‌লে আপ‌নি আমা‌কে কেন জি‌গেস কর‌ছেন যে রায়ান কার ছে‌লে ?
তনয়াঃ যে, সন্তান পৃ‌থিবী‌র আলো দেখার আগেই বিদায় নি‌য়ে‌ছে সে সন্তান আমার কিভা‌বে হয়?
আয়াতঃ মমমম মা‌নে?
তনয়াঃ কে‌নো সব জে‌নেও না জানার ভান কর‌ছেন আয়াত? বলুন? আমি জা‌নি রায়ান আপনার আর তু‌লির সন্তান, আদ্রর জমজ ভাই। বলুন কেন নি‌জের সন্তান কে আমার কো‌লে তু‌লে দি‌লেন? কি এমন কারন যার কার‌নে আপ‌নি তু‌লির বুক থে‌কে তার এক ছে‌লে‌কে কে‌ড়ে নি‌য়ে আমার কো‌লে দিলেন? বলুন? আজ আপনা‌কে আমার সব প্র‌শ্নের উত্তর দি‌তে হ‌বে।
আয়াতঃ আপ‌নি ঠিক কি বল‌ছেন আমি কিছু বুঝ‌তে পার‌ছিনা!
তনয়াঃ ডাক্তার হা‌মিদা আমা‌কে সব কথা ব‌লে দি‌ছে। আর তাছাড়া রায়ান‌কে কে তো আমি পাঁচ বছর আগে এই দি‌নেই দত্তক নি‌য়েছিলাম। আমার গ‌র্ভের সন্তান তো যখন আমার প্রেগ‌নে‌ন্সির ছয় মাস বয়স তখন ‌মিসক্যা‌রেজ হ‌য়ে যায়। কিন্তু আমি এটা বুঝ‌তে পার‌ছি না আপনি কেন ‌নি‌জের ছে‌লে‌কে আমার কো‌লে তু‌লে দি‌লেন?
আয়াতঃ ভুল শুধরা‌তে!
তনয়াঃ মা‌নে?
আয়াতঃ আপনার মিসক্যা‌রেজটা তু‌লির কার‌নে হ‌য়ে‌ছে।
তনয়াঃ হোয়াট? কিন্তু আমার যতদূর ম‌নে প‌ড়ে আমি একটা গা‌ড়ির সা‌থে ধাক্কা লে‌গে আমার এক‌সি‌ডেন্ট হয় যার কার‌নে আমার বাচ্চাটা পৃ‌থিবী‌তে আসার আগেই——?
আয়াতঃ সে গা‌ড়িটা তু‌লি চালা‌চ্ছি‌লো।
তনয়াঃ কি? কিন্তু আপ‌নি কি ক‌রে জান‌লেন?
আয়াতঃ আমিও গা‌ড়ির ভিত‌রে ছিলাম। আস‌লে তখন তু‌লির ছয় মাস চলছিলো। তু‌লি সে‌দিন জেদ ধ‌রে নি‌জে গা‌ড়ি ড্রাইভ কর‌বে। আমি নি‌ষেধ করার পরও শো‌নে‌নি তু‌লি। গা‌ড়ি অবশ্য ও ভা‌লোই চালায়। কিন্তু সে‌দিন হঠাৎ ক‌রে গা‌ড়ি চালা‌তে চালা‌তে ওর মাথা ঘু‌রে যায় গা‌ড়ি ক‌ন্ট্রোল কর‌তে না পে‌ড়ে আপনা‌কে ধাক্কা দেয়। আমি গা‌ড়ি সামলা‌তে চেষ্টা কর‌ছিলাম কিন্তু ততক্ষ‌নে অনেক দে‌রি হ‌য়ে যায়। তু‌লিও মাথায় আঘাত লাগায় বেহুস হ‌য়ে যায়। আমি তু‌লি‌কে কোন ম‌তে সাম‌লে গা‌ড়ি থে‌কে বের হ‌য়ে দে‌খি আপ‌নি প‌ড়ে আছেন আপনা‌কে তারাতা‌রি তু‌লে আপনা‌দের দ‌ুজনকে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে যাই। তু‌লির তেমন কিছু না হ‌লেও আপনার বে‌বি মিসক্যা‌রেজ হয়। ব্যাপারটা ডাক্তার যখন আমা‌কে বল‌লো তখন ঠিক কি বল‌বো ভেবে পা‌চ্ছিলাম না! আপনার সাম‌নে যাবার মত সাহস হ‌চ্ছি‌লো না।
বাই‌রে দা‌ড়ি‌য়ে আপনার কান্না আর সন্তান হারা‌নোর আর্তনাদ শু‌নে‌ছি। তখন নি‌জে‌কে নিজে অপরা‌ধী ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো। প‌রে অনেকবার ভে‌বে‌ছি আপনা‌র সা‌থে দেখা করে মাফ চাই‌বো কিন্তু সাহস হ‌চ্ছি‌লো না। আপনা‌কে কৃতঙ্ঘতা জান‌া‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কারন আপ‌নি নি‌জের সন্তান হা‌রি‌য়েও পু‌লিশ‌কে বলেছেন এক‌সি‌ডেন্টটা আপনা‌র নি‌জের দে‌া‌ষে হ‌য়ে‌ছে। নয়‌তো আমা‌দের অনেক প্রব‌লেম হ‌তো।
তু‌লি‌কে বিষয়টা জানায়‌নি কারন তু‌লি খুব নরম ম‌নের, এ ঘটনা জান‌লে ও মান‌ু‌ষিক ভা‌বে খুব ভে‌ঙে পর‌বে। নিজে‌কে সারা জীবন অপরাধী ভাব‌বে। তখনই ডিসাইড ক‌রে‌ছি আপনার সা‌থে আমা‌দের জন্য যে, অন্যায় হয়ে‌ছে তা আমরা কিছুটা হ‌লেও পূরন করার চেষ্টা কর‌বো। আমারা তখন জানতাম যে আমা‌দের জমজ বাচ্চা হ‌বে। অনেক ভে‌বে ‌সিদ্ধান্ত নিলাম আমা‌দের একটা বাচ্চা আপনা‌কে দি‌য়ে দি‌বো। আর এটাই হ‌বে আমা‌দের পাঁপের শা‌স্তি। তারপর অনেক ক‌ষ্টে আপনার ফোন নাম্বার যোগার করলাম ডাঃ হা‌মিদা‌কে দি‌য়ে ফোন করালাম আপনার কা‌ছে জান‌তে চাই‌লো কোন অনাথ বাচ্চা দত্তক নি‌বেন কিনা? আপ‌নি এক কথায় রা‌জি হ‌য়ে গে‌লেন। তারপর তু‌লি‌কে যে‌দিন হস‌পিটা‌লে ভ‌র্তি ক‌রি সে‌দিন আপনা‌কে ফোন দি‌য়ে হাসপাতা‌লে আস‌তে ব‌লি। অপা‌রেশ‌নের সময় তু‌লি‌ পু‌রোপু‌রি বেহুস থা‌কে কারন ওর কিছু প্রব‌লেম থাকায় ওকে হু‌সে রে‌খে অপা‌রেশন করা যা‌চ্ছিলো না।
বাচ্চা জ‌ন্মের সময় ওটি‌তে যে কজন লোক ছি‌লো তা‌দের ম‌ধ্যে দুজন জানতো আমা‌দের প্ল্যানটা। বাচ্চা জ‌ন্মের পর রায়ান‌কে ডাঃ হা‌মিদা আপনার কো‌লে তু‌লে দি‌লো। আর বললো বাচ্চাটার মা‌য়ের বি‌য়ে হয়‌নি তাই বাচ্চাটা‌কে লালন পালন করা তার প‌ক্ষে সম্ভব নয়। আর বাচ্চাটার মা কা‌রো সা‌থে দেখা কর‌তে চায়না! দূর থে‌কে সব দেখ‌ছিলাম আমি।
তখন খুব কেঁদে‌ছিলাম। রায়ান‌কে আপনার কো‌লে দেবার আগে কো‌লে নি‌য়ে পাগ‌লের মত চু‌মো খে‌য়ে‌ছিলাম শত হ‌লেও ওতো আমারই রক্ত। কিন্তু ম‌নের ভিতর একটু শা‌ন্তি পা‌চ্ছিলাম পাঁ‌পের প্রা‌শ্চিত্য কিছুটা হ‌লেও কর‌তে পার‌ছিলাম ব‌লে। ডাঃ তু‌লি‌ সহ সবাই‌কে বল‌লো একটা ছে‌লে‌কে বাঁচা‌তে পার‌ছে আরেকজনকে পা‌রে‌নি। তখন আমার তু‌লি পাগ‌লের মত কান্না ক‌রে‌ছি‌লো। কেঁ‌দে‌ছিলাম আমিও প্রথমত নি‌জের জী‌বিত ছে‌লে‌কে সবার কা‌ছে মৃত বলার জন্য আর আমার তু‌লি‌কে জীব‌নে প্রথম বার মিথ্যা বলার জন্য। এখ‌নো নি‌জে‌কে তু‌লির কা‌ছে খুব অপরাধী ম‌নে হয় কিন্তু আমাদের কার‌নে আপ‌নি যা হা‌রি‌য়ে‌ছেন তার তুলনায় আমা‌দের কষ্ট নগন্য। তু‌লি চাইলে আবার যখন তখন মা হ‌তে পার‌বে। কিন্তু সেই এক‌সি‌ডে‌ন্টের পর আপনার গর্ভনালী ফে‌টে ইন‌ফেকসন করায় সেটা কে‌টে রফলা হয় যার কার‌নে আপ‌নি জীব‌নেও মা হ‌তে পার‌বেন না। আপনার ক্ষ‌তিপূর দেয়ার সাধ্য‌ তো আমা‌দের নেই কিন্তু রায়ান‌কে দি‌য়ে তার কিছুটা অন্তত পূরন কর‌তে পে‌রে‌ছি।
তনয়াঃ আপ‌নি কি মানুষ আয়াত! (কেঁদে কেঁদে) কারন মানু‌ষের মন‌ তো এতো বিশাল হয়না!
আয়াতঃ জা‌নিনা? ত‌বে মানু‌ষের মত মানুষ হবার চেষ্টা ক‌রে‌ছি। আচ্ছা একটা কথা বলুন আপ‌নি কিভা‌বে জান‌লেন রায়ান আমা‌দের সন্তান?
তনয়াঃ আস‌লে রায়ান যত বড় হ‌চ্ছি‌লো ওর চেহারা হুবুহ আপনার আর তু‌লির চেহারার সা‌থে মি‌লে যা‌চ্ছি‌লো। তখন স‌ন্দেহ হ‌তে থা‌কে। ডাক্তা‌রের কা‌ছে গিয়ে রায়া‌নের মা‌য়ের বিষয় সব জান‌তে চাই। প্রথ‌মে ডাক্তার বল‌তে চায়‌নি কারন ডাক্তার আপনা‌কে নি‌জের ছে‌লের মত ভা‌লোবা‌সে তারপর অনেক অনু‌রোধ করার পর ডাক্তার রায়া‌নের আসল প‌রিচয় জানা‌লো। কিছু‌দিন আগেই আমি রায়া‌নের আসল পরিচয় জান‌তে পা‌রি তারপর আপনা‌দের এখা‌নে চ‌লে আসলাম স‌ত্যিটা জান‌তে।
আচ্ছা তু‌লি‌ কি এখ‌নো কিছু জা‌নে না?
আয়াতঃ নাহ্। জানাই‌নি ওকে আমি। কিছু কথা অজানা থাকাই ভা‌লো। তা‌তে সবাই সু‌খি হবে। শত হ‌লে মা তো? সন্তা‌নের মায়া ছাড়া মা‌য়ের জন্য অসম্ভব!
তনয়াঃ কিন্তু আমি এমন অন্যায় কর‌তে পার‌বো না। আমি এখনই তু‌লি‌কে সব ব‌লে দি‌বো। তনয়া চ‌লে যে‌তে চাই‌লে আয়াত ব‌লে আপনা‌কে রায়া‌নের কসম। তনয়া থে‌মে যায়! ছা‌ঁদে বসে কান্না কর‌তে থা‌কে।
আয়াতঃ দেখুন তনয়া যেটা যেমন চল‌ছে তা‌কে তেমনই চল‌তে দিন। সম‌য়ের স্রো‌তে গা ভা‌সি‌য়ে দিন। দেখুন বিধাতা কোথায় নি‌য়ে থামায়! ‌দেখুন আল্লাহ বোধয় এটাই চে‌য়ে‌ছি‌লো যে রায়ান আপনার ছে‌লে হ‌য়ে থাকুক যার কার‌নে রায়ান আর আদ্র জমজ ভাই হ‌য়েও দুজনার চেহারায় তেমন কোন মিল নাই। উপরওয়ালার উপর ভরশা রাখুন। তি‌নি যা কর‌বেন সব ভা‌লোর জন্যই কর‌বে।
তনয়াঃ কিন্তু আয়াত তু‌লি আমায় নি‌জের বো‌নের মত ভা‌বে আমি নি‌জের বো‌নের সা‌থে এত বড় বিশ্ব‌াস ঘাতকতা কিভা‌বে ক‌রি?
আয়াতঃ আপ‌নি একবার ভে‌বে দে‌খে‌ছেন তু‌লি য‌দি জান‌তে পা‌রে আপনার এই অবস্থায় জন্য তু‌লি নি‌জে দায়ী তু‌লি পাগল হ‌য়ে যা‌বে। অপরাধ বোধ তু‌লিকে সারাজীবন কু‌ঁড়ে কুঁ‌ড়ে শেষ ক‌রে দি‌বে। তু‌লি জা‌নে ও জীব‌নে কা‌রো কোন ক্ষ‌তি ক‌রে‌নি। সেই তু‌লি য‌দি জা‌নে ওর জন্য অন্য কা‌রো জীব‌নের রং হা‌রি‌য়ে বেরং হ‌য়ে গে‌ছে তু‌লি সেটা নি‌তে পার‌বে না! আর তাছাড়া সময় হ‌লে আমি নিজে তু‌লিকে সবটা বু‌ঝি‌য়ে ব‌লে দি‌বো।‌ তার আগে প্লিজ আপ‌নি কিছু বল‌বেন না। তু‌লির এখন মানু‌ষিক প্রেসার নেয়া একদম মানা।
তনয়াঃ কেন?
আয়াতঃ কারন তু‌লি দ্বিতীয়বা‌রের মত মা হ‌তে চল‌ছে। তিন মা‌সের প্রেগ‌নেন্ট বর্তমা‌নে। এ অবস্থায় ওকে এসব না জানা‌নো বেটার। ওয়াদা করুন আমি না বলা পর্যন্ত আপ‌নি তু‌লি‌কে কিছ‌ু বল‌বেন না।
তনয়া আর কোন পথ খু‌ঁজে না পে‌য়ে মে‌নে নি‌লো আয়া‌তের কথা।
আয়াত আর কোন কথা বল‌লো না। চ‌লে গে‌লো নিচে। তনয়া কতক্ষন পাগ‌লের মত কান্না কর‌তে লাগ‌লে‌া। আর বল‌তে লাগ‌লো মানুষ এত ভা‌লো হয় কি ক‌রে? হে খোদা তু‌মি আমার সা‌থে আর কত খেলা কর‌বে! জীব‌নের সব ক্ষে‌ত্রে কখ‌নো চরম অপমা‌নিত হ‌য়ে‌ছি আবার কখ‌নো শুধু মানু‌ষের করুনা পে‌য়ে‌ছি, আমি এখন ক্লান্ত! নি‌জের ব‌লে যে, কিছু নেই আমার এখন।
‌নি‌জের রু‌মে গি‌য়ে আয়াত তু‌লি ঘুমান্ত নিষ্পাপ মুখটার দি‌কে কতক্ষন তা‌কি‌য়ে থা‌কে। তারপর নিজে নি‌জে ব‌লে
আয়াতঃ মাফ ক‌রো তু‌লি! জা‌নিনা স‌ত্যিটা কখ‌নো তোমায় বলতে পার‌বো কিনা ত‌বে আমার কা‌ছে এছাড়া কোন উপায় ছি‌লো না! তোমা‌কে যে, খুব বে‌শি ভা‌লোবা‌সি তাই চাইনা তোমা‌কে কেউ অভিশাপ দিক। তোমার জন্য আমি সব কর‌তে পা‌রি তু‌লি সব। তারপর তু‌লির কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ ছু‌য়ে দি‌তে তুলির মাথাটা‌কে নি‌জের ব‌ুকের ম‌ধ্যে নি‌য়ে ঘু‌মি‌য়ে পর‌লো।
সকাল বেলা ঘুম থে‌কে উঠে তনয়া স‌ত্যিটা বল‌তে চে‌য়েও পা‌রে‌নি কারন আয়াত রায়া‌নের কসম দি‌য়ে‌ছে যেটা ভাঙার সাধ্য তনয়ার নেই। তু‌লি তনয়া‌কে নিজের দ্বিতীয়বার প্রেগ‌নেন্ট হবার খবর দি‌লো। তনয়া খুব খু‌শি হ‌লো। তনয়া রায়ান‌কে নি‌য়ে আরো দু‌দিন তু‌লির সা‌থে থাক‌লো। রায়ান‌কে সবসময় তু‌লি নিজের কা‌ছেই রে‌খে‌ছে। অথচ তু‌লি জান‌তেও পার‌লো না যে, রায়ান তু‌লির নি‌জের সন্তান।
দু‌দিন পর তনয়া রায়ান‌কে নি‌য়ে ফি‌রে যায় কিন্তু তু‌লি‌কে প্র‌মিস ক‌রে আসে রায়ান‌কে নি‌য়ে মা‌ঝে মা‌ঝে ওর কা‌ছে যা‌বে।
‌কিছু‌দিন পর তনয়া রায়ান‌কে নি‌য়ে ওর বাবা মা‌য়ের সা‌থে দেখা কর‌তে রওনা হয়। উ‌দ্দেশ্য কিছু মানু‌ষের মু‌খোমু‌খি হ‌য়ে নি‌জের সব প্র‌শ্নের উত্তর চাওয়া।—–
চল‌বে———