বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ- ১০ (শেষ)

শার‌মিন আক্তার
আঁকা বাঁকা রাস্তায় বাসটা তার নি‌জের গ‌তি‌তে চল‌ছে। তনয়া জানলা দি‌য়ে বাই‌রে তা‌কি‌য়ে আছে আর ভাব‌ছে কত বছর পর নি‌জের শহ‌রে নি‌জের বা‌ড়ি‌তে যাবো!
ভাব‌তেই অজানা সু‌খে মনটা ভ‌রে যা‌চ্ছে। সা‌থে অনেক ভয়ও কর‌ছে বা‌ড়ি সবাই এত বছর পর আমাকে দে‌খে কেমন রিয়াক্ট কর‌বে? আচ্ছা ভাইটা তো এখন অনেক বড় হ‌য়ে গে‌ছে। যখন কেউ আমাকে বিশ্বাস ক‌রে‌নি তখন আমার ভাইটা আমায় বিশ্বাস ক‌রে‌ছি‌লো। ভাব‌তেই বুক চি‌ড়ে একটা দীর্ঘ‌নিঃশ্বাস বের হয়ে এলো।
রায়ান এমদা‌দের কো‌লে ব‌সে এমদা‌দের সা‌থে দুষ্ট‌মি কর‌ছে। প্রথ‌মে তনয়া রায়ান‌কে নি‌য়ে একা আস‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু এমদা‌দের মা বল‌লেন এমদাদ তোমার সা‌থে যা‌বে। এতদূ‌রের পথ একা যাওয়া ঠিক না। বা‌ড়ি যে‌তে এখ‌নো পাঁচ ঘন্টার বে‌শি লাগ‌বে। তনয়া ব্যাগ থে‌কে ফোনটা বের ক‌রে আয়াত‌কে ফোন দি‌লো।
তনয়াঃ আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন?
আয়াতঃ ওয়ালাইকুম আসসালা, আলহাদু‌লিল্লাহ্ ভা‌লো আপ‌নি?
তনয়াঃ আলহামদু‌লিল্লাহ্। আচ্ছা তু‌লি কোথায় ? ক‌দিন ধ‌রে ওকে ফো‌নে পা‌চ্ছি না ইনফ্যাক্ট আমি আপনা‌দের বাসা থে‌কে আসার পর মাত্র একবার তু‌লির সা‌থে কথা হ‌য়ে‌ছি‌লো, তারপর ওর কোন পাত্তাই নেই ও ঠিক আছে তো?
আয়াতঃ আস‌লে আপ‌নি যে‌দিন গে‌ছেন সে‌দিন রাত থে‌কে তু‌লির খ‌ুব জ্বর উঠ‌ছে। তাই বোধয় ফো‌নের দি‌কে খেয়াল নাই।
তনয়াঃ কি ব‌লেন জ্বর? এখন কি অবস্থা আর ডাক্তার কি বল‌ছে?
আয়াতঃ টেনশন নি‌বেন না আস‌লে ডাক্তার বল‌ছে এসময় না‌কি এমন একটু আকটু হ‌বে। ডাক্তার ঔষধ দি‌ছে, জল‌দি ঠিক হ‌য়ে যা‌বে ইনশাল্লাহ!
তনয়াঃ আল্লাহর উপর ভরশা রাখুন সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। ওর খেয়াল রাখ‌বেন আর হ্যা ওকে বল‌বেন আমি বাবা মা‌য়ের সা‌থে দেখা কর‌তে যা‌চ্ছি।
আয়াতঃ আচ্ছা সাবধা‌নে যা‌বেন। আল্লাহর উপর ভরশা রাখ‌বেন তি‌নি সব ঠিক ক‌রে দি‌বেন। হ্যা‌পি জা‌র্নি।
তনয়াঃ হুমমম ধন্যবাদ। আল্লাহ্ হা‌ফেজ।
আয়াত ফোনটা রে‌খে তু‌লির কা‌ছে গে‌লো। তু‌লি তখন শু‌য়ে শু‌য়ে রায়ান আর আদ্রর ছ‌বি দেখ‌ছি‌লো আর নিঃশব্দে কাঁদ‌ছি‌লো। আয়াত তু‌লির পা‌শে ব‌সে ওর চো‌খের পা‌নি মু‌ছে দি‌য়ে তু‌লি‌কে শোয়া থে‌কে উঠি‌য়ে বসা‌লো, তু‌লির মাথাটা নি‌জের কাঁধে রাখ‌লো।
আয়াতঃ কি হ‌য়ে‌ছে তু‌লি?
তু‌লিঃ কিছু না। (নাক টে‌নে)
আয়াতঃ প্লিজ তু‌লি লুকা‌নোর আর বৃথা চেষ্টা ক‌রো না। যে‌দিন থে‌কে তনয়া গে‌ছে সে‌দিন থে‌কে তু‌মি মন খারাপ ক‌রে আছো। তারপর সে‌দিন রাত থে‌কেই তোমার জ্বর, ডাক্তা‌রের ঔষ‌ধেও তোমার তেমন ইমপ্রুভ হ‌চ্ছে না। ডাক্তার বল‌লো তু‌মি নিশ্চই ম‌নে কোন ভয় বা টেনশন লু‌কি‌য়ে রাখ‌ছো। যার কার‌নে তু‌মি সুস্থ হ‌চ্ছো না। প্লিজ ল‌ক্ষি সোনা ব‌লোনা কি টেনশন কর‌ছো?
তু‌লি আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে জো‌ড়ে জো‌ড়ে কান্না ক‌রে দি‌লো। আয়াত কান্না না থা‌মি‌য়ে চুপচাপ মাথায় হাত বুলা‌তে বুলা‌তে বল‌লো তু‌মি না বল‌লে কি ক‌রে বুঝ‌বো? প্লিজ কান্না না ক‌রে ব‌লো কি হ‌য়েছে?
তু‌লিঃ রায়ান আমা‌দের ছে‌লে তাই না আয়াত?
তু‌লির কথায় আয়া‌তের বুকটা অজানা আতং‌কে থম‌কে গে‌লো। কি বল‌বে ঠিক ভে‌বে পা‌চ্ছে না।তুলি কিভা‌বে জান‌লো? তাহ‌লে কি তনয়া। না না তনয়া‌তো আমা‌কে ওয়াদা কর‌ছে তাহ‌লে কিভা‌বে জান‌লো?
আয়াতঃ কি বল‌ছো এসব? রায়ান তো তনয়ার ছে‌লে!
তু‌লিঃ আমি সব জা‌নি আয়াত। আমার কার‌নে তনয়ার এক‌সি‌ডেন্ট হওয়া, বাচ্চা নষ্ট হওয়া, তোমার রায়ান‌কে তনয়া‌র কো‌লে দি‌য়ে দেওয়া সব জা‌নি!
আয়াতঃ কিভা‌বে জান‌লে?
তু‌লিঃ সে‌দিন তু‌মি আমা‌কে ঘুম পা‌ড়ি‌য়ে দেবার পর আরার বান্ধবীর ফো‌নে ঘুম ভে‌ঙে যায়, ওর সা‌থে কথা ব‌লে দে‌খি তু‌মি রু‌মে, ওয়াশরু‌মে কোথাও নেই। তোমা‌কে খুঁজ‌তে খুঁজ‌তে ছাঁ‌দে গি‌য়ে তোমার আর তনয়ার কথা শু‌নি। তোমা‌দের সাম‌নে যা‌বো এমন সময় তনয়া ব‌লে উঠ‌লো রায়ান আপনার আর তু‌লির সন্তান, আর আদ্রর জমজ ভাই। তারপর দড়জার ওপর পা‌শে দা‌ড়ি‌য়ে তো‌দের সব কথা শু‌নে‌ছিলাম। আমি চাই‌নি তনয়া বুঝ‌তে পারুক আমি স‌ত্যিটা জা‌নি তাই তনয়ারা যে দু‌দিন ছি‌লো সে দু‌দিন স্বাভা‌বিক থাকার সর্বত্তক চেষ্টা ক‌রে‌ছি।
আয়াত তু‌মি আমা‌কে এত ভা‌লোবা‌সো যে, আমার উপর থে‌কে পাঁ‌পের বোঝা দূর কর‌তে নি‌জের সন্তান‌কে দি‌য়ে দি‌লে! এত কেন ভা‌লোবা‌সো যে, আমার ম‌নের উপর যা‌তে কোন প্রভাব না প‌ড়ে তার কার‌নে পাঁচ বছরের বে‌শি সময় ধ‌রে নি‌জের বুকে এতটা কষ্ট চে‌ঁপে রে‌খে‌ছি‌লো! আর আমি স্বার্থপ‌রের মত তোমার ভা‌লোবাসা শুধু নি‌য়ে গে‌ছি। বি‌নিম‌য়ে দেই‌নি কিছুই! রোজ তোমার ভা‌লোবাসায় সিক্ত হ‌য়ে‌ছি, পৃ‌থিবী‌তে নি‌জে‌কে সব চে‌য়ে ভাগ্যবতী ম‌নে ক‌রে‌ছি! তোমার ওপর কার‌নে অকার‌নে রাগ ক‌রে‌ছি। আর তু‌মি সব মে‌নে নি‌য়ে নিঃশ্বার্থ ভা‌বে আমায় ভা‌লোবে‌সে গে‌ছো! কে‌নো আয়াত? একটা মানুষ কিভা‌বে এত ভা‌লো হয়, কিভা‌বে এত ভা‌লোবা‌সে?
আয়াতঃ তোমা‌কে ভা‌লোবাস‌বো না‌তো কা‌কে বাস‌বো? তু‌মি আমার অর্ধা‌ঙ্গিনী, তুমিই তো আমার অগোছা‌লো জীবনটা‌কে গু‌ছি‌য়ে সম্পূর্ন ক‌রে‌ছো, প‌রিপূর্ন ক‌রে‌ছো আমা‌কে, দি‌য়ে‌ছো ভা‌লোবাসার অসীম সুখ। তোমার রাগ অভিমা‌নের ম‌ধ্যেও যে ল‌ু‌কি‌য়ে আছে ভা‌লোবাসার মুক্ত। তোমার খু‌শির জন্য যে, সব কর‌তে পা‌রি। আচ্ছা তু‌লি স‌ত্যিটা জে‌নে কি তোমার আমার উপর রাগ হয়‌নি?
তু‌লিঃ হুমম অনেক হ‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু যখন জানলাম আমার ভু‌লে তনয়া শুধু তার বাচ্চা‌কেই না, হা‌রি‌য়ে‌ছে মা হবার ক্ষমতাও তখন নি‌জের উপর খুব রাগ আর ঘৃনা হ‌চ্ছি‌লো নগন্য ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো নি‌জের কষ্টগু‌লো‌কে। আর তোমার উপর শ্রদ্ধা আরো হাজার গুন বে‌ড়ে গে‌লো। কারন তু‌মি আমার ভু‌লের প্রায়‌শ্চিত্ত কর‌তে, আমার মানু‌ষিক দিক খেয়াল রাখ‌তে এত বছর ধরে নি‌জের ম‌নে পাহাড় সমান কষ্ট চে‌পে রে‌খে‌ছি‌লে। আয়াত তোমা‌কে পে‌য়ে আমি নারী হিসা‌বে সম্পূর্না। আমায় ক্ষমা ক‌রে দাও প্লিজ।
আয়াতঃ প্লিজ তু‌লি এভাবে আর কখ‌নো ব‌লো না, সে‌দি‌ন যা ছি‌লো তা দূর্ঘটনা। আর আমা‌দের উচিৎ দূর্ঘটনা ভু‌লে নতুন ক‌রে শুরু ক‌রা। আর এসময় সব‌চে‌য়ে জরু‌রি তোমার নি‌জের খেয়াল রাখা।
তু‌লিঃ তু‌মি জা‌নো না আয়াত আমার বু‌কের উপর থে‌কে কতটা প্রেশার নে‌মে গে‌ছে, নি‌জে‌কে হালকা লাগ‌ছে। জানো সে‌দিন যখন রায়ান তনয়ার সা‌থে চ‌লে যা‌চ্ছি‌লো খুব কষ্ট হ‌চ্ছি‌লো। কিন্তু মহান আল্লাহর অসীম কৃপা যে আমি নি‌জে‌কে সামলা‌তে পে‌রে‌ছি। তখন চিন্তা করলাম আমি ঠিক কি কার‌নে রায়ান‌কে তনয়ার বুক থে‌কে কে‌ড়ে নি‌বো? কি নেই আমার? আমার দু‌টো সুন্দর প‌রিবার আছে, আদ্র আছে, ক‌দিন পর আরেকজন আস‌ছে, আর সব থে‌কে বড় কথা আমার কা‌ছে তু‌মি আছো। আমার আমার কি চাই? আর একটা কথা দাও! তনয়া‌কে কখ‌নো বল‌বেনা যে আমি স‌ত্যিটা জা‌নি। তাহ‌লে তনয়া ভাব‌বে আমি ওর ওপর করুনা কর‌ছি যেটা তনয়া সহ্য কর‌তে পার‌বে না। তুমি ‌ঠিক বল‌ছি‌লে কিছু কথা অজানা থাকাই ভা‌লো।
আয়াতঃ হুমম। ঠিক আছে তু‌মি যা ব‌লো। ত‌বে হ্যা পিছ‌নের কথা ভে‌বে তু‌মি প্লিজ নি‌জে কষ্ট পেও না। এখন তোমার নি‌জের খেয়াল রাখাটা জরু‌রি।
তু‌লিঃ ওকে। আয়াত! লাভ ইউ এ লট।
আয়াতঃ মি টু।
আদ্রঃ তোমরা দুজন খুব পঁচা!
আয়াতঃ কেন বাবা? কি হই‌ছে?
আদ্রঃ তু‌মি আর মা সবসময় একেঅপ‌রে লাভ ইউ ব‌লো আমা‌কে ব‌লো না।
আয়াতঃ কি পাকা ছে‌লে!
তু‌লিঃ তোমার ছেলেনা তোমার মতই পাকা হই‌ছে! ইচ‌রে পাঁকা। বাপ ২০ বছ‌রে বি‌য়ে কর‌ছে ছেলে না জা‌নি কি ক‌রে। কতবার বল‌ছি বাচ্চা‌দের সাম‌নে দুষ্ট‌মি করবা না। আদ্র বাবা আসো আমার কাছে? আমার আদ্র বাবাটা‌কে আমি সব‌থে‌কে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি। লাভ ইউ,বাবা।
আদ্রঃ লাভ ইউ টু মা।
আয়াতঃ যাহ্ মা ছে‌লে মি‌লে গে‌লো,আর আমি দূ‌রে চ‌লে গেলাম! আমি ভাব‌ছি একজন আমার এ অবস্থা কর‌ছে আরেকটা আস‌লে না জা‌নি কি হয়!
আয়াত আর তু‌লির জীবন যে সুন্দর ভা‌বে চল‌বে তা‌তো বুঝ‌তেই পার‌ছেন! এখন দে‌খি তনয়ারা কতদূর পৌছা‌লো?
রাত নটার দি‌কে তনয়ারা ওদের বা‌ড়ি পৌছা‌লো। বা‌ড়ির গে‌টের সাম‌নে আস‌তেই তনয়ার বুকটা ক‌ষ্টে ভ‌রে গে‌লো। কারন এই গেট থে‌কেই এক‌দিন তনয়া‌কে ঘার ধাক্কা দি‌য়ে বের ক‌রে দি‌ছি‌লো। কিন্তু বা‌ড়ির ভিত‌রে যে‌তেই ম‌নে প‌রে গে‌লো ছোট‌বেলা থে‌কে কাটা‌নো হাজার হাজার মধুময় স্মৃ‌তি। জীব‌নের সব থে‌কে বে‌শি সু‌খের সময়টাও এ বা‌ড়ি পার ক‌রে‌ছি‌লো আর ক‌ষ্টের সময়টাও। কাঁপা কাঁপা হা‌তে ক‌লিং বেল বাজা‌লো তনয়া। তনয়ার মা দড়জা খু‌লে তনয়া‌কে দে‌খে হতভম্ব হ‌য়ে ঠায় দা‌ড়ি‌য়ে রই‌লো। তারপর তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না ক‌রে দি‌লো। তনয়ার বাবা ভাইও তনয়া‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না ক‌র‌লো।
তা‌দের অবস্থা‌ দে‌খে তনয়ার ভিষন কষ্ট লাগ‌ছি‌লো। হয়‌তো এত বছর তনয়ার শো‌কে নি‌জে‌দের এ অবস্থা কর‌ছে। তনয়াও পিছ‌নের কথা তু‌লে তা‌দের আর কষ্ট দি‌লো না। তারা তনয়ার কা‌ছে মাফ চাই‌তে নি‌লে তনয়া ব‌লে বাবা মা সন্তান‌কে শাসন ক‌রে মাফ চায় না। মানুষ মাত্রই ভুল আর আপনারা মাফ চে‌য়ে আমা‌কে পাঁপের ভাগি কর‌বেন না। তারপর তনয়া এমদাদ আর রায়া‌নের সা‌থে প‌রিচয় ক‌রি‌য়ে দি‌লো। তনয়ার বাবা মা রায়ান‌কে পে‌য়ে যে‌নো চাঁ‌দের কনা হা‌তে পে‌লো। তারপর সম‌য়ের সা‌থে সা‌থে ধী‌রে ধী‌রে তনয়া আর ওর বাবা মা‌য়ের সম্পর্ক স্বাভা‌বিক হ‌তে লাগ‌লো।
অভির বিষ‌য়ে ওর বাবা মা‌য়ের কাছ থে‌কে সব জান‌তে পা‌রে তনয়া। কিন্তু অভির জন্য কোন অনুভু‌তি কাজ ক‌রে না। তনয়া ওর বাবা মা‌য়ের সা‌থে থা‌কে না ঠিকই কিন্তু সপ্তা‌হে একবার এসে দেখা ক‌রে যায়। মা‌ঝে মা‌ঝে তারা তনয়ার সা‌থে দেখা‌ কর‌তে যায়। তনয়া এখ‌নো এমদাদ আর ওর মা‌য়ের সা‌থে থাকে। যারা দুঃ‌খের দি‌নের সঙ্গী ছিলো সু‌খের দি‌নে তা‌দের ছে‌ড়ে দেয়াটা ঘোর পাঁপ হ‌বে।
এভা‌বে হঠাৎ এক‌দিন অভির সা‌থে দেখা হয় তনয়ার। অভি তার সব কা‌জের জন্য তনয়ার কা‌ছে অনেক মাফ চায়। ব‌লে
অ‌ভিঃ তোমা‌কে আমার সন্তান‌কে ফি‌রি‌য়ে নি‌তে চাই। তনয়া একবার আমায় ক্ষমা ক‌রে দে‌খো আমি তোমা‌কে দ্বিতীয়বার অভি‌যোগ করার মত কাজ করবো না। প্লিজ আমার বাচ্চা‌কে আমার থে‌কে দূর করো না। আমায় একটা সূ‌যোগ দাও।
তনয়াঃ সন্তান! হুমমমম। যে, সন্তান পৃ‌থিবীর মুখই দে‌খে‌নি তার কথা বল‌ছো? উপর ওয়ালা বোধয় আমা‌কে মা হবার পরম সুখ দি‌তে চায়‌নি যার কার‌নে জ‌ন্মের আগেই একটা এক‌সি‌ডেন্টএ আমার গ‌র্ভের সন্তান‌কে কেড়ে নেয়, সা‌থে আমার মা হবার ক্ষমতাও।
অ‌ভিঃ কি! তাহ‌লে রায়ান কে?
তনয়াঃ রায়ান‌কে আমি দত্তক নি‌য়ে‌ছি। (রায়ান যে আয়াত আর তনয়ার ছে‌লে সেটা বল‌লো না)
অ‌ভিঃ তনয়া তোমার সা‌থে যা হয়ে‌ছে সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমি রায়ান‌কে নি‌জের ছে‌লের মতই আদর দি‌য়ে বড় কর‌বো। কখ‌নো বুঝ‌তে দি‌বো না ও আমা‌দের পা‌লিত সন্তান। আমি আমার ভ‌ু‌লের অনেক শা‌স্তি পে‌য়ে‌ছি দরকার হ‌লে তু‌মি আরোও দি‌য়ো প্লিজ তনয়া বা‌ড়ি চ‌লো।
তনয়াঃ হুমম ভ‌ুল! বা‌ড়ি! কি আজব না! তোমার একটা ভু‌লের কার‌নে আমি নি‌জে‌কে বাঁচা‌তে বা‌ড়ি থে‌কে পালালাম আমায় সবাই বে** বদনাম দি‌লো। তু‌মি জা‌নো সে‌দি‌নের পর আমার সা‌থে ঠিক কি কি হ‌য়ে‌ছে? দি‌নের পর দিন না খে‌য়ে রাস্তায় রাস্তায় এতি‌মের হাঁট‌ছি কাঁদ‌ছি, লো‌কের নোংড়া দৃ‌ষ্টির সম্মু‌খীন হ‌য়ে‌ছি। শেষ মেস তু‌লি আর আয়াত আশ্রয় দিলো তাও তু‌মি আয়া‌তের মত মানুষ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে মিথ্যা বদনাম র‌টি‌য়ে সেখান থে‌কেও আশ্রয়হীন কর‌লে। প্রেগ‌নেন্ট অবস্থায়ও দি‌নের পর দিন কাজ করা লাগ‌ছে। আর তু‌মি বল‌ছো এত কিছুর পরও মাফ ক‌রে দি‌বো? এতটাই সস্তা আমি ?
আর রায়া‌নের কথা তো?
অ‌ভি তু‌মি চাইলে রায়া‌নের সা‌থে যখন তখন দেখা কর‌তে পা‌রো, তা‌কে বাবার ভা‌লোবাসা দি‌তে পা‌রো তা‌তে আমার কোন আপ‌ত্তি নেই কিন্তু আমা‌কে ফেরৎ পাবার কথা চিন্তা ক‌রো না। আমি রায়া‌নের থে‌কে তোমার প‌রিচয় লুকায়‌নি। রায়ান তোমা‌কেই বাবা হিসা‌বে জা‌নে। তু‌মি রায়া‌নের বাবা হ‌লেও আমার স্বামী নও।
অ‌ভিঃ প্লিজ তনয়া মাফ ক‌রে দাও। শু‌নে‌ছি অনুতপ্ত হ‌লে আল্লাহও ক্ষমা ক‌রে দেন।
তনয়াঃ তি‌নি আল্লাহ্! পরম করুনাময়,আর আমরা মানুষ। আমি তোমা‌কে ক্ষমা‌তো সে‌দিন ক‌রে দি‌য়ে‌ছি যে‌দিন শুন‌ছি তু‌মি মিথ্যা অপরা‌ধের দায় অনেক বছর জে‌লে ছি‌লে, তোমার প‌রিবার বন্ধু সব হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছো। জা‌নো তোমার মু‌খোমু‌খি হ‌য়ে তোমা‌কে কিছু প্রশ্ন কর‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কিন্তু তোমার অবস্থার কথা শু‌নে আর তোমার মু‌খোমু‌খি হ‌তে চাই‌নি।
ত‌বে কি জা‌নো? তোমা‌কে ক্ষমা কর‌লেও তোমার সা‌থে এ জীব‌নে আর ঘর কর‌তে পার‌বো না। তোমার প্র‌তি অনুভুতি গু‌লো ক‌বেই ম‌রে গে‌ছে। আর যে মনটা পু‌ড়ে কয়লা হ‌য়ে‌ গে‌ছে সে ম‌নে আর কখনো ভা‌লোবাসা নামক বীজ বপন করা যা‌বে না। তু‌মি নি‌জের মত সুন্দর জীবন শুরু ক‌রো। আজ থে‌কে আমার সা‌থে করা সব অপরাধ থে‌কে মু‌ক্তি দিলাম তোমা‌কে, তু‌মি মুক্ত! কিন্তু সে মু‌ক্তির দা‌য়ে তু‌মি আমা‌কে আঁট‌কিও না, আমি একা থাক‌তে শি‌খে গে‌ছি! শি‌খে গে‌ছি ভা‌লো থাক‌তে। আর তাছাড়া রায়ান তো এখন আমার সা‌থেই আছে তো কোন সমস্যা হ‌বে না।
তু‌মি চাই‌লে মা‌ঝে মা‌ঝে রায়া‌নের সা‌থে দেখা ক‌রে সময় কাটা‌তে পা‌রো বা তোমার বাবা মা‌য়ের কা‌ছে নি‌য়ে যে‌তে পা‌রো। কিন্তু হ্যা আমার উপর কোন অধিকার খাটা‌তে পার‌বে না। কারন যে বদনা‌মের ভা‌গি হ‌য়ে‌ছিলাম সে বদনাম নি‌য়েই সারাজীবন থাক‌তে চাই।
ভা‌লো থে‌কো। আল্লাহ হা‌ফেজ।
তনয়া চ‌লে যা‌চ্ছে আর অভি অশ্রু সিক্ত নয়‌নে তা‌কি‌য়ে আছে ওর যাবার প‌থে।
নাহ অভি রায়া‌নের কাছ থে‌কে বাবা ডাক শুন‌লেও পায়‌নি তনয়ার ম‌নের সু‌তো। সে বাবা হ‌য়ে‌ছে কিন্তু স্বামী হ‌তে পা‌রে‌নি। এজন্য অভির খুব কষ্ট হ‌লেও আফসুস নাই কারন তনয়া যে ওকে রায়া‌নের বাবা হবার অধিকার দিছে ‌সেটাই অনেক। তনয়া রায়ান‌কে তার বাবার আদর থে‌কে ব‌ঞ্চিত ক‌রে‌নি।
অ‌নেক্ষন ক‌ষ্টের কাহী‌নি প‌ড়ে আপনা‌দের মন খারাপ হ‌য়ে গে‌লো তাইনা! তাহ‌লে চলুন শে‌ষের দি‌কে একটু হা‌সি‌য়ে বিদায় দি!
তু‌লি যখন সাত মা‌সের প্রেগ‌নেন্ট তখন তনয়া রায়ান‌কে নি‌য়ে তু‌লি‌দের বা‌ড়ি যায়, তখন আদ্র আর রায়া‌নের কিছ‌ু কথা!
রায়ানঃ জা‌নিস আদ্র মা বল‌ছে কিছু‌দিন পর মি‌ষ্টি আন্টি আমা‌দের দুজনার জন্য ভাই নয়‌তো বোন কি‌নে আন‌বে।
আদ্রঃ হ্যা মা বল‌ছে। আমি তো মাকে ব‌লে দি‌ছি আমার বোন চাই। তোর?
রায়ানঃ আমারও বোন চাই।
আদ্রঃ আচ্ছা রায়ান তোর কি গার্ল‌ফ্রেন্ড আছে?
রায়ানঃ গার্ল‌ফ্রেন্ড মা‌নে কি?
আদ্রঃ কি তুই গার্ল‌ফ্রেন্ড মা‌নে জা‌নিস না? হাউ বো‌রিং! আমার‌তো গাল‌ফ্রেন্ড আছে, আরে ঐ পা‌শের বাসার রিয়া। ও বল‌ছে আমরা দুজন গার্ল‌ফ্রেন্ড বয়‌ফ্রেন্ড। আরে বাবাও জা‌নে আমা‌দের বিষ‌য়ে।
আয়া‌তের কথা শু‌নে তনয়া আর তু‌লি বড় বড় চোখ ক‌রে আয়াতের দি‌কে তাকায়।
আয়াতঃ বিশ্বাস ক‌রো তু‌লি আমি এসব জা‌নিনা! আদ্র মিথ্যা বল‌ছে।
আদ্রঃ বাবা তু‌মিই‌তো বললা সে‌দিন গার্লফ্রেন্ড মা‌নে কি!
আয়াতঃ চ‌ুপ পাকা ছে‌লে। আমা‌কে ফাঁসাস‌নে বাপ।
তু‌লিঃ তু‌মি না শিখা‌লে ও কোথা থে‌কে শিখ‌ছে। ও তোমার ইচ‌রে পাকা ছে‌লে হই‌ছে। চ‌রি‌ত্রের গ‌ন্ডো‌গোল আছে।
আয়াতঃ দে‌খো তু‌লি তু‌মি আমা‌কে যা খু‌শি ব‌লো আমার চ‌রিত্র নি‌য়ে কিছু বল‌বে না। এত বছ‌রে তু‌মি ছাড়া অন্য কোন মে‌য়ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে‌ছি ব‌লো?
তু‌লিঃ গল্প শেষ এখন বল‌তে পার‌বো কোন কোন মে‌য়ের সা‌থে তু‌মি ইঞ্চি ইঞ্চি ভাব কর‌ছো। প্রথ‌মে তনয়া, তারপর আমি মা‌নে তু‌লি, তারপর অয়‌নি, সোহানী, ফুল, হায়া‌তি, নিশী আরো আছে।এত কিছুর পরও মে‌য়েগুলা তোমা‌কে পছন্দ ক‌রে মে‌য়েগুলার মাথায় সিট আছে।
আয়াতঃ বন্ধুরা গল্প শেষ বা‌ড়ি যান সবাই। আমার প্রে‌মিকারা আমাকে বাংলা সাঈজ কর‌বে সেটা দেখা লা‌গ‌বে না। বাই বাই টেইক কেয়ার বন্ধুরা। আল্লাহ হা‌ফেজ।
সমাপ্ত
ভুলত্রু‌টি ক্ষমার চো‌খে দেখ‌বেন
আর গল্পটা কেমন লাগ‌লো জানা‌বেন।