বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ ৩

শার‌মিন আক্তার
–তু‌লিঃ তনয়া চ‌লো!
তনয়াঃ কোথায়?
তু‌লিঃ কিছু শ‌পিং কর‌বো! আয়াতের সময় হ‌বে না। বড় ভা‌বিও যে‌তে পার‌বে না। তু‌মি চ‌লো না প্লিজ!
তনয়াঃ হুম। কিন্তু—–
তু‌লিঃ কোন কিন্তু নাই চ‌লো!
তু‌লি তনয়া‌কে একরকম ‌জোড় ক‌রে শ‌পিং এ নি‌য়ে গে‌লো। মা‌র্কে‌টে গি‌য়ে তু‌লি তনয়ার জন্য ড্রেস কিন‌ছে তনয়া সেটা দে‌খে বল‌লো—-
তনয়াঃ তু‌লি তোমরা এম‌নি‌তেই আমার জন্য অনেক কর‌ছো। তারপর এত টাকা খরচ করার দরকার নাই।
তু‌লিঃ চ‌ুপ। বল‌ছি না এখন থে‌কে আমরা বোন। আর আমি চাইনা আমার বোন মাত্র দু তিনটা ড্রে‌সে এডজাস্ট করুক। এখন কিছু না ব‌লে চুপচাপ পছন্দ ক‌রো তো।
তু‌লির জে‌দের কা‌ছে তনয়া হার মান‌লো। শ‌পিং ক‌রে দুজন ক‌ফিশ‌পে গে‌লো।
তনয়াঃ তু‌লি তু‌মি ব‌সো আমি ওয়াশরুম থে‌কে আস‌ছি।
তু‌লিঃ ঠিক আছে আমি ততক্ষ‌নে অর্ডার ক‌রি।
তনয়া ওয়াশরুম থে‌কে এসে টে‌বি‌লে বস‌লো কিন্তু পা‌শের টে‌বি‌লে চোখ যে‌তেই সারা শরীর ঠান্ডা হ‌য়ে গে‌লো। কারন পা‌শের টেবি‌লে অভি বসা ছি‌লো। আর অভি চোখ বড় বড় ক‌রে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো। তনয়া ভ‌য়ে খুব ঘাম‌ছি‌লো। তু‌লি সেটা খেয়াল ক‌রে বল‌লো
তু‌লিঃ কি হ‌য়ে‌ছে তনয়া? তোমার শরীর ঠিক আছে তো! এত ঘাম‌ছো কেন?
তনয়াঃ হঠাৎ শরীরটা খুব খারাপ লাগ‌ছে প্লিজ বাসায় চ‌লো।
তু‌লিঃ ঠিক আছে চ‌লো। রিকশায় উঠে জি‌গেস কর‌লো কি হ‌য়ে‌ছে তনয়া তু‌মি এত ভয় পা‌চ্ছো কেন?
তনয়াঃ অভি এখা‌নেও এসে গে‌ছে।
তু‌লিঃ হোয়াট? কোথায়?
তনয়াঃ ক‌ফিশ‌পে বসা ছি‌লো। আমা‌দের পা‌শের টে‌বি‌লে।
তু‌লিঃ তু‌মি আমাকে তখন কেন বল‌লে না বেটা‌কে আচ্ছামত দে‌খে নিতাম।
তনয়াঃ তু‌লি কুকু‌রের সা‌থে মানু‌ষের লাগ‌তে যাওয়া ঠিক না।
তু‌লিঃ তাই ব‌লে কি তা‌কে ক্ষমা ক‌রে দি‌বে!
তনয়াঃ আমি ওকে জীব‌নেও ক্ষমা কর‌তে পার‌বো না। ওর মুখ দেখ‌লেও ঘৃনা ক‌রে। ত‌বে হ্যা ওর মু‌খোমু‌খি একবার অন্তত দাড়া‌বো। কারন ও আমার জীবনটা নি‌য়ে এমন নোংড়া খেলা কেন খেল‌লো তার জবাব চাই‌বো!
তু‌লিঃ হুমমম ঠিক বল‌ছো। আর তোমার সা‌থে আমরা সবসময় আছি। চিন্ত‌া ক‌রো না। সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে।
দুপু‌রের খাবা‌রের পর বিকালের দি‌কে তু‌লি তনয়া‌কে নি‌য়ে বারান্দায় বসে চা খা‌চ্ছে আর গল্প কর‌ছে। তখন কথায় কথায় তনয়া বল‌লো।
তনয়াঃ আচ্ছা তু‌লি তোমা‌দের এত তারাতা‌ড়ি বি‌য়ে কিভা‌বে হ‌লো? না মা‌নে তোমাদের বি‌য়ের বয়স ছয় বছর। তারমা‌নে ঠিক আঠা‌রো বছ‌রে তোমার বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। আয়া‌তের বয়সও তো তেমন বে‌শি না। তাহ‌লে কিভা‌বে কি? মা‌নে লাভ ম্যা‌রেজ ছি‌লো না‌কি? আচ্ছা তোমা‌দের বয়‌সের পার্থক্য কত হ‌বে?
তু‌লিঃ দু বছ‌রের মত। আর হ্যা বি‌য়ে লাভ আর এ্যা‌রেঞ্জ মি‌লি‌য়ে ছি‌লো। (লজ্জা পে‌য়ে)
তনয়াঃ আচ্ছা! কিছু ম‌নে না কর‌লে তোমা‌দের লাভ স্টো‌রিটা বল‌বে প্লিজ!
তু‌লিঃ আরে ম‌নে করার কি আছে?
আস‌লে আমি আর আয়াত একই স্কু‌লে পড়তাম। আয়াত যখন এস এস সি পরীক্ষার্থী ছি‌লো তখন আমি অষ্টম শ্রেনী‌তে প‌ড়ি। আয়াত না‌কি আমা‌কে তখন থে‌কে পছন্দ কর‌তো। কিন্তু আমি জানতাম না। তারপর ওদের পরীক্ষা শেষ হ‌য়ে গেলো আর ওরা চ‌লে গে‌লো।
তনয়াঃ তাহ‌লে রি‌লেশন কি ক‌রে হ‌লো?
তু‌লিঃ আমি এস এস‌ সি দি‌য়ে যখন ইন্টা‌রে ভ‌র্তি হলাম। তার ক‌য়েকমাস পর একট‌া কো‌চিং এ প্রাই‌ভেট পড়‌তে যাই। কিন্তু গি‌য়ে দেখলাম আয়াতও সেই কো‌চিং এ কিন্তু স্টু‌ডেন্ট + টিচার। মা‌নে ও ইউনিভা‌র্সি‌টি ভর্তির জন্য নি‌জেও কো‌চিংএ পড়‌তো আর ইন্টারের ছে‌লে মে‌য়ে‌দের একাউ‌টিং পড়া‌তো।
তনয়াঃ ওহ তার মা‌নে স্যা‌রের সা‌থেই—-!
তু‌লিঃ আরে নাহ যখন রি‌লেশন হ‌লো তখন আমি ওদের কো‌চিং এ পড়তাম না।
তনয়াঃ মা‌নে?
তু‌লিঃ আস‌লে রোজ কো‌চিং এ যেতাম আয়াত যে আমার উপর একটু বে‌শি কেয়ার কর‌তো সেটা বু্ঝ‌তে পারতাম। আমার যখন ক্লাস শেষ হ‌য় বা‌ড়ি যাবার জন্য বের হ‌ই তখন আয়াতও বা‌ড়ি যাবার জন্য বের হ‌তো। তখন যে‌তে যে‌তে দুজন অনেক কথা বলতাম। ধী‌রে ধী‌রে আমিও আয়াতের প্র‌তি দুর্বল হ‌তে থা‌কি। কিন্তু দুজ‌নের ম‌নের কথা মন পর্যন্তই থাকে। মু‌খে আর আনা হয়‌নি। দেখ‌তে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা চ‌লে আস‌লো। আয়াত তখন কেবল অনার্স ফাস্টইয়া‌রের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হ‌য়ে‌ছি‌লো। আস‌লে ও না‌কি আমাকে দেখার জন্যই ইউনির্ভাসি‌তে চান্স পাওয়ার পরও কো‌চিং‌ টিচার হিসা‌বে থে‌কে‌ছে। আমার পরীক্ষার আগে বিদা‌য়ের সময় আয়া‌তের মন ভিষন খারাপ ছি‌লো সা‌থে আমারও। তারপর পরীক্ষা দি‌তে লাগলাম। পরীক্ষার সময় মা‌ঝে মা‌ঝে আয়াত পরীক্ষার কে‌ন্দ্রে আস‌তো তখন ওর সা‌থে কথা হ‌তো। যে‌দিন মূল পরীক্ষাগু‌লো শেষ হ‌লো কিন্তু প্রা‌র্টিকাল পরীক্ষা বাকি ছি‌লো সে‌দিন ও পরীক্ষা দি‌য়ে বের হ‌য়ে দে‌খি আয়াত দা‌ড়ি‌য়ে আছে।
আ‌মি আয়া‌তের সাম‌নে গি‌য়ে সালাম দি‌য়ে জি‌গেস করলাম কেমন আছেন?
আয়াতঃ ভা‌লো। তু‌মি? আর পরীক্ষা কেমন হ‌লো?
তু‌লিঃ হুম আমিও ভা‌লো আছি। আর পরীক্ষাও খুব ভা‌লো হ‌য়ে‌ছে।
আয়াতঃ গুড। তো মেইন পরীক্ষাগু‌লো সব শেষ?
তু‌লিঃ হুমম। প্রা‌র্টিকাল পরীক্ষা নয় দিন পর।
আয়াতঃ ওহ। (কিছুক্ষন চুপ থে‌কে) তুলি তোমাকে কিছু বল‌বো রাগ কর‌বে না‌তো?
তু‌লিঃ নাহ ব‌লেন ভাইয়া!
আয়াতঃ তু‌লি তোমায় কত বার বল‌ছি আমা‌কে ভাইয়া ডাক‌বে না।
তু‌লিঃ কে‌নো ডাক‌বো না সেটা‌তো ব‌লেন‌নি?
আয়াতঃ কারন আমি তোমাকে ভা‌লোবা‌সি। আর কোন ছে‌লেই নি‌জের ভা‌লোবাসার মে‌য়ের কাছ থে‌কে ভাইয়া ডাক শুন‌তে চায় না।
আমি কিছুক্ষন চুপ ক‌রে ছিলাম। ঠিক কি বল‌বো বুঝ‌তে পারছিলাম না। কারন এভা‌বে কেউ হুট ক‌রে প্র‌পোজ ক‌রে! সেটা ভাব‌ছিলাম।
তারপর আয়াত আবার বল‌লো—–
আয়াতঃ দে‌খো তু‌লি এভা‌বে হুট ক‌রে বলা আমার মো‌টেও উচিৎ হয়‌নি আমি তা জা‌নি! আস‌লে এত বছর ধরে তোমার প্র‌তি ভাবনাটা বাড়‌তে বাড়‌তে এতটা বাড়‌ছে যে এখন সেটা চে‌য়েও আর ল‌ুকা‌তে পা‌ড়ি‌নি। তাই এভা‌বে ব‌লে দিলাম। বা‌কিটা তোমার ইচ্ছা। তোমার যা জবাব আমি তা মান‌তে বাধ্য।
তু‌লিঃ আমার কিছু সময় চাই।
আয়াতঃ ঠিক আছে।
আ‌মি বাড়ি এসে বাবার কা‌ছে সব কিছু খু‌লে বললাম।
তনয়াঃ পা‌নি খে‌তে নি‌ছি‌লো তু‌লির কথা শু‌নে সব পা‌নি মুখ থে‌কে প‌রে গে‌লো। তারপর নি‌জে‌কে সাম‌লে বল‌লো কি বাবার কা‌ছে? আরে এসব কথা কেউ বাবার কা‌ছে ব‌লে?
তু‌লিঃ কি কর‌বো ব‌লো? আমি আমার বাবার কাছ থে‌কে কখ‌নো কিছু লুকাই না। বাবা আমার সব থে‌কে প্রিয় বন্ধু।
তনয়াঃ তারপর তোমার বাবা কি বল‌লো,
তু‌লিঃ বাবার কা‌ছে সব খু‌লে বলার পর বাবা বল‌লো।
বাবাঃ তোমার কি মতামত?
ত‌ুলিঃ জা‌নি না!
বাবাঃ তারমা‌নে তু‌মিও আয়াত‌কে পছন্দ ক‌রো।
ত‌ু‌লিঃ (আ‌মি চুপ ক‌রে মাথা নিচু ক‌রে বললাম) কি ক‌রে বুঝ‌লে?
বাবাঃ তু‌লি এ পর্যন্ত যে ছে‌লেই তোমাকে প্র‌পোজ কর‌ছে তুমি সোজা এসে আমা‌কে বল‌ছো। আর সা‌থে এটাও বল‌ছো বাবা ছে‌লেটা‌কে কিভা‌বে না বল‌বো সেটা ব‌লো আমি ছে‌লেটা‌কে পছন্দ ক‌রি না। কিন্তু আজ প্রথমবার তু‌মি এসে শুধু এতটুকু বল‌লে বাবা আয়াত আজ আমায় প্র‌পোজ কর‌ছে। তারমানে এটাই বুঝায় তু‌মি আয়াত‌কে খুব পছন্দ ক‌রো। আচ্ছা তু‌মি কি ওকে শুধু পছন্দ ক‌রে না কি ভা‌লোওবা‌সো? আর আয়াতও কি তোমাকে স‌ত্যি মন থে‌কে ভা‌লোবা‌সে?
তু‌লিঃ ঠিক বুঝ‌তে পার‌ছি না।
বাব‌াঃ ঠিক আছে কিছু‌দিন আয়াতের থে‌কে দূ‌রে থাকো। ওর সা‌থে কিছু‌দিন যোগা‌যোগ ক‌রো না।
আ‌মিও বাবার কথা মে‌নে নিলাম। আয়াত ফোন কর‌লে রি‌সিভ করতাম না। প‌থে দেখা হ‌লেও কথা বলতাম না। কিন্তু খুব কষ্ট হ‌তো আমার। ও যখন ফোন কর‌তো আর আমি চে‌য়েও রি‌সিভ কর‌তে পারতাম না তখন কেন যে‌নো কান্না চ‌লে আস‌তো। আমা‌দের শেষ পরীক্ষার আগের দিন বাবা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না ক‌রে বললাম বাবা আমার আয়াত‌কে চাই।
বাবাঃ ঠিক আছে কাল আমি নি‌জে আয়া‌তের সা‌থে কথা বল‌বো। ঠিক আছে মা। এবার কান্না থামাও।
প‌রের দিন পরীক্ষা শে‌ষে বের হ‌য়ে দে‌খি আয়াত দা‌ড়ি‌য়ে আছে, মাত্র এই ক‌দিনে বেশ শু‌কি‌য়ে গে‌ছে। কেমন যে‌নো মনমরা দেবদাশ দেবদাশ লাগ‌ছে। পরীক্ষা শে‌ষে আমি বাবার সা‌থে ওর সাম‌নে গেলাম। বাবা‌কে দে‌খে ও কিছুটা নার্ভাস হ‌য়ে পর‌লো। বাবা আয়াত‌কে বল‌লো
বাবাঃ দে‌খো আয়াত মনা (বাবা আমায় মনা ডা‌কে) আমা‌কে তোমার বিষয় সব ব‌লে‌ছে। আমার কোন আপ‌ত্তি নাই কিন্তু কথা হ‌চ্ছে‌ তু‌মি যে মনা‌কে স‌ত্যিই ভা‌লোবা‌সো তার কি প্রমান আছে? কি নিশ্চয়তা যে তু‌মি আমার মে‌য়ে‌কে ধোঁকা দি‌বে না?
আয়াতঃ আঙ্কেল ভা‌লোবাস‌তে কোন প্রমান লা‌গে না। আর আপনার মে‌য়ের নিশ্চয়তার কথা তো! সেটা সন্ধ্যার পর ইনশাল্লাহ দি‌য়ে দি‌বো। কিন্তু আমি তু‌লির কা‌ছে জান‌তে চাই ও কি আমা‌কে?
আ‌মি তখন কোন কথা বল‌তে পা‌রিনি চোখ থে‌কে কে‌নো যে‌নো জল পড়‌ছি‌লো। বারবার আটকা‌নোর চেষ্টা ক‌রেও পা‌ড়ি‌নি। আয়াত আমার এ অবস্থা দে‌খে বল‌লো
আ‌য়াতঃ আমি আমার উত্তর পে‌য়ে গে‌ছি তু‌লি। তু‌মি আঙ্কে‌লের সা‌থে বাসায় যাও। আশাক‌রি আল্লাহর রহম‌তে সন্ধ্যার পর দেখা হ‌বে।
আ‌মি বাবার সা‌থে চ‌লে আসছিলাম। আর আয়াত ওখা‌নে দা‌ড়ি‌য়ে আছে। আমি ওর দি‌কে তা‌কি‌য়েই বাবার হাত ধ‌রে হাট‌ছিলাম। আমার চোখ থে‌কে তখ‌নো জল পড়‌ছি‌লো। আয়াত হা‌তের ইশারায় আমা‌কে হাস‌তে বল‌লো। আর ইশারায় বল‌লো ও আমার পা‌শে আছে, চিন্তা করার কিছু নাই। আসার সময় বাবা আমা‌কে বল‌লো
বাবাঃ মনা
তু‌লিঃ হুমম বাবা!
বাবাঃ গুড চ‌য়েচ।
তু‌লিঃ মা‌নে?
বাবাঃ আমি ছে‌লেটার বিষ‌য়ে সব খোঁজ খবর নি‌য়ে‌ছি খুব ভা‌লো ছে‌লে। আল্লাহ চাই‌লে ও তো‌কে খুব সু‌খে রাখ‌বে।
তু‌লিঃ বাবা তার মা‌নে তু‌মি রা‌জি!
বাবাঃ মা শোন তু‌মি আমা‌কে এতটা বিশ্বাস ক‌রো যে তোমার কোন কিছু আমার কাছ থে‌কে লুকাও না। তাই আমারও উচিৎ আমার মে‌য়ে কি‌সে সু‌খী হ‌বে সে দিকটা নি‌য়ে সুন্দর ভা‌বে বি‌বেচনা করা। আমি তোমাকে আয়া‌তের কাছ থে‌কে কিছু‌দিন দূ‌রে কে‌নো থাক‌তে ব‌লে‌ছিলাম জা‌নো?
ত‌ু‌লিঃ কে‌নো?
বাবাঃ আমি প্রথম দিনই বু‌ঝে‌ছিলাম যে তু‌মি আয়াত‌কে খুব ভা‌লোবা‌সো কিন্তু খুব কনফিউস‌নে আছো। তোমার কন‌ফিউশন দূর করার জন্য আর আয়াত‌কে ভা‌লোভা‌বে জানার আর বোঝার জন্য কিছু সময় দরকার ছি‌লো আমারও আর তোমারও। তাই সে সময়টা নিলাম। তু‌মি জানো বিগত ক‌দি‌নে আয়াত রোজ আমা‌দের বা‌ড়ির আশে পা‌শে ঘু‌রে গে‌ছে। আমি দে‌খে‌ছি, ছে‌লেটা তোমা‌কে ক‌দিন না দে‌খে পাগ‌লের মত অবস্থা হ‌য়ে‌ছি‌লো। তোমা‌কে প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সে।
তু‌লিঃ জা‌নো বাবা তোমার মত বাবা থাক‌লে কোন মে‌য়ে‌কে নীর‌বে মুখ লু‌কি‌য়ে কাঁদ‌তে হ‌বে না। আই লাভ ইউ বাবা!
বাবাঃ আমার ল‌ক্ষি মা।
তনয়াঃ হা হ‌য়ে তু‌লির কথা শুন‌ছে আর বল‌ছে
এমন বাবাও পৃ‌থিবী‌তে আছে! তু‌লি তার পর কি হ‌লো আয়াত সন্ধ্যার পর কি ক‌রে‌ছি‌লো?
তু‌লিঃ সন্ধ্যার পর আয়াত তার প‌রিবার স‌মেত আমা‌দের বাসায় হা‌জির হ‌লো।
তনয়াঃ কি? তারপর তারপর জল‌দি ব‌লো।
তু‌লিঃ তখন আমি রু‌মে ছিলাম। আমার ছোট ভাই আর মা এসে বল‌লো আজ না‌কি আমার বি‌য়ে। আমার মাথায় কিছু ডুক‌ছি‌লো না কি হ‌লো? কিভা‌বে হ‌লো ? সব মাথার উপর দিয়া চ‌লে যা‌চ্ছি‌লো। কিছু ব‌ুঝ‌তে পারার আগেই ঘ‌রোয়া আয়োজ‌নে ক‌য়েকজন আত্নীয় স্বজন নি‌য়ে আমার বি‌য়ে হ‌য়ে গে‌লো। আমার কা‌ছে সব কিছু যে‌নো ঘো‌রের মত লাগ‌ছি‌লো। ঘো‌রের ম‌ধ্যেই কবুল বললাম। জা‌নো বি‌য়ের ঠিক তিন দিন পর আমি আঠা‌রো‌তে পা দি‌য়ে‌ছিলাম। কোন কিছু বু‌ঝে ওঠার আগেই আমি বাসর ঘ‌রে পৌ‌ছে গেলাম। সেখা‌নে ব‌সে ভাব‌ছিলাম সব বোধয় স্বপ্ন, নয়ত আমার কল্পনা। নয়‌তো এত তারাতা‌রি কি ক‌রে এত সব হ‌য়ে গে‌লো? রাত দু‌টো নাগাদ আয়াত আমার রু‌মে আস‌লো। আমি তখন চিন্তা কর‌ছিলাম আঠা‌রো বছ‌রের মে‌য়ে বিশ বছ‌রের ছে‌লে ভাব‌তেই লজ্জ্বায় নি‌জেই নি‌জের কা‌ছে অস‌স্তি‌তে পরলাম ? ম‌নের ম‌ধ্যে একগাদা ভয় আর লজ্জা এসে জ‌ড়ো হ‌য়ে ছি‌লো। আয়াত দড়জা বন্ধ ক‌রে আমা‌র রু‌মটা ভা‌লোভা‌বে দে‌খে বল‌লো
আয়াতঃ এটা কি কোন বাচ্চা‌দের র‌ুম?
তু‌লিঃ কে‌নো?
আয়াতঃ না মা‌নে সারা ঘরে পুতুল, কার্টুন পি‌কে ভরা‌তো তাই বললাম।
আয়া‌তের কথা শু‌নে হাসি ‌পে‌লেও মুখ গ‌ম্ভির ক‌রে বিছানা থে‌কে নে‌মে বললাম
তু‌লিঃ এটা কেমন হলো?
আয়াতঃ কি কেমন হ‌লো!
তু‌লিঃ আমি কিছু বু‌ঝে ওঠার আগেই আমা‌কে বি‌য়ে ক‌রে নি‌লেন!
আয়াতঃ আ‌রে তোমার বাবাই তো নিশ্চয়তা চাই‌ছি‌লেন। তাই সারাজীব‌নের জন্য নিশ্চয়তা দি‌য়ে দিলাম। কাজটা কিন্তু দারুন হই‌ছে এখন লুকি‌য়ে প্রেম করার প্র‌য়োজনই হ‌বে না। কেন তু‌মি বু‌ঝি আমায় ভা‌লোবা‌সো না। ঠিক আছে ভা‌লো না বাস‌লে কি আর করা আমি তাহ‌লে তোমার রুম থে‌কে চ‌লে যাই কি ব‌লো?
আয়াতের চ‌লে যাবার কথা শু‌নে বুকটা কেমন যে‌নো কেঁপে‌ উঠলো। ওকে কোন কথা বলার স‌ু‌যোগ না দি‌য়েই শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধরে কান্না ক‌রে দিলাম। কান্না কর‌তে কর‌তে বললাম
তু‌লিঃ ছে‌ড়ে যাবার জন্য বু‌ঝি বি‌য়ে কর‌ছো? তু‌মি একটা পাগল, পঁচা হ্যাজ‌বেন্ড।
আয়াতঃ (শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে) আমি জা‌নি তো। হুসস কান্না ক‌রো না প্লিজ। জা‌নো দুপু‌রে যখন তোমার চোখ থে‌কে জল পড়‌ছি‌লো আমার কত কষ্ট হ‌চ্ছি‌লো। ম‌নে হ‌চ্ছি‌লো কেউ ক‌লিজায় এ‌সিড ঢে‌লে দি‌য়ে‌ছে। তখনই সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি পার‌তে সা‌ধ্যে আল্লাহর রহম‌তে জীব‌নে তোমাকে কাঁদাবো না।
তু‌লিঃ তাহ‌লে ব‌লো এত জল‌দি বি‌য়ে কি ক‌রে হ‌লো? তু‌মি কি কর‌ছে‌া? কিভা‌বে সবাই‌কে ম্যা‌নেজ কর‌ছো?
আয়াতঃ জাদু কর‌ছি। জ‌াদু!
তু‌লিঃ সেটা কি ব‌লো?
চল‌বে——-