হারিয়ে খুজবে আমায় !! Part- 05
কোন কিছু না নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল অনু।রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাটছে সে বারবার শাফিনের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খাবারের খোটা তাকে শুনতে হলো।
এত ভালোবাসার এই ফল পেল সে? তার ভালোবাসা তো কোন খাদ ছিল না। এখন সে কোথায় যাবে বাবা মায়ের কাছে যাবার মুখ নেই তার। তাদের কথা অমান্য করেই তো সে শাফিনের সাথে গিয়েছিল এখন কোন মুখে সে বাবা-মায়ের কাছে আছে আশ্রয় চাইবে?
এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই সে পাশের একটা পার্কে গিয়ে বসে। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি তার ওপরে শরীরে অসম্ভব ব্যথা ও জ্বর।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ সে শুনতে পেল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে পিছনে ফিরে সে দেখতে পেল সাদাত ভাই।
প্রায় ৩০ মিনিট শাওয়ারের পর শাফিনের মাথা ঠান্ডা হলো। সাথে সাথে তার মাথায় এলো রাগের মাথায় সে অনুকে কি সব বলেছে। প্রায় সাথে সাথেই সে কোনরকম টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
বের হয়ে দেখল অনু ঘরে নেই। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে তাড়াতাড়ি অনু নম্বরে ডায়াল করলো কিন্তু ফোনটা ড্রেসিন টেবিলের সামনে বাড়ছে। তাই ভাবল সে হয়তো ঘরেই আছে তাই সে জোরে জোরে অনুর নাম ধরে ডাকতে লাগল কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
এইবার সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।সে উপলব্ধি করতে পারছে সে অনেক ভুল করেছে যার কোন ক্ষমা হয় না। সে কি করে মুখ দেখাবে অনু সামনে ।কোন মুখে যাবে তার সাথে কথা বলতে বা ক্ষমা চাইতে।
সে কি তার শর্ত মেনে নেবে? থাকবে তার বন্ধু হয়ে? মনে হয় শেষ আশাটাও যে সে নিজ হাতে হত্যা করেছে।
অনু বাচ্চামো সভাবের হলেও আত্মসম্মান টা খুব বেশি। একবার শাফিন অনুকে আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে কথা শোনায় তারপর থেকে সে আর শত অনুরোধের পরেও আর ক্ষমা চাওয়ার পরেও আর আইসক্রিম খাইনি। যেখানে আইসক্রিম সবচেয়ে প্রিয় খাবার।সে সবকিছু কে না করতে পারলেও আইসক্রিম কে না করতে পারত না।
শাফিনের নিজেকে এখন জুতা পিটা করতে ইচ্ছে করছে। কি করে পারল অনুকে এসব কথা বলতে যা একটাও সত্যি না। কথা গুলো শাফিন মন থেকে বলেনি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।নাহ যে করেই হোক তার অনু কাছে মাফ চাইতে হবে মাফ চাইলে তো কেউ ছোট হয়ে যায় না।
অনু হয়তো তাকে মাফ করে দেবে কারণ ও তো জানে শাফিন রাগের মাথায় কি বলে তা নিজেও জানেনা পরে ঠিকই সে তার ভুল বুঝতে পারে।
শাফিনের রাগটা বরাবরের মতোই বেশি। যা মাঝে মাঝে শাফিনকে বিপদে ফেলে দেয় একবার রাগ উঠলে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না যা নয় তাই বলে ফেলো। অনু তার রাগ কন্ট্রোল করার জন্য সব সময় বলতো। আরো বলতো এই রাগের কারণেই হয়তো একদিন সবকিছু হারাবে।
তাহলে কি সে অনুকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল…?
সাদাত অনুর আপন মামাতো ভাই।সে তার ছেলেকে নিয়ে এখানে খেলতে এসেছে। সে আশেপাশেই থাকে। তার ছেলেকে জন্ম দেওয়ার সময় সাদাত ভাইয়ের স্ত্রী মারা যায় তারপর সে আর বিয়ে করেনি। এখনো স্ত্রীকেই ভালোবাসেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে দিন কাটে তার। সাদাতের ছেলের বয়স চার বছর নাম সাদ। ভীষণ মিষ্টি দেখতে আর সারাদিন পাকা পাকা কথা বলে ঘর মাতিয়ে রাখে।
সাদাত অনুর ভাই কম বেস্ট ফ্রেন্ড বেশী।সে তার জীবনের সব কথাই তাকে বলতো।কিন্তু বিয়ের পর তার সাথে আর বেশি যোগাযোগ হয়নি কারণ শাফিন তার সাথে কথা বলা পছন্দ করত না।আর শাফিন পছন্দ করে না এমন কোনো কাজই অনু দ্বিতীয় বার করত না।
সাদাত সব সময় অনুকে একজন গাইড এর মত প্রটেক্ট করত। সকল বিষয়ে ভালো পরামর্শ দিত যদিও সে অনুর থেকে বয়সে প্রায় 10 বছরের বড় ছিল।
সাদাত কে দেখে অনু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।
এমন আচরণে সাদাত হতচকিয়ে গেল তারপর সে আস্তে আস্তে তাকে শান্ত করল।
সাদাত: হয়েছে অনু আর কাঁদে না বাচ্চাটা।কি হয়েছে তোর? আমাকে বল কান্না থামা কথা বল আমার সাথে শাফিনের সাথে কিছু হয়েছে?
তারপরেও অনু কান্না করতে থাকলো, এবার সাদাত একটু জোরে ধমক দিল
সাদাত: চুপ একদম চুপ কান্না থামা কান্না থামা বলছি। তারপর অনু আস্তে আস্তে শান্ত হলো।
এবার বল কি হয়েছে কেন কান্না করছিস?
শাফিনের সাথে রিলেশনের সব কথাই সে জানতো এবং কি বিয়ে পরেও কয়েকদিন ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের কিন্তু আস্তে আস্তে অনু নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
এবার অনু শুরু থেকে একে একে সব ঘটনা সাদাতকে বলে দেয়।
সব কথা শুনে সাদাত খুব রেগে যায় ।সে খুব ভরসা করে অনুকে শাফিনের হাতে তুলে দিয়েছিল। শাফিনও অনুকে ভালো রাখার আশ্বাস দেয় সাদাত কে। তাহলে এই কি তার ভালো রাখার নমুনা প্রেগনেন্ট অবস্থায় একটা মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া।
সে অগ্রসর হয় শাফিনের কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু অনু বাধা দেয় সে চায় তার ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকুক। আর তা যদি হয় তাকে ছেড়ে তাহলে সে নাইবা থাকল তার জীবনে।বেঁচে থাকার অবলম্বন তো আছে তার আর কি চাই?
তারপর সাদাত তাকে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে যায় ।আর কিছু খাইয়ে বিশ্রাম নিতে বলে সে অনুদের বাসায় অগ্রসর হয়। তারপর অনু বাবা-মায়ের কাছে সব খুলে বলে। তারা মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাদাত তাদের সামলায় এবং নিজেদের অনুর জন্য শক্ত হতে বলেন।
কারণ অনুর এখন আপনজনদের খুব প্রয়োজন। তাকে তার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করতে হলে তাদের সাপোর্টের দরকার হবে।
আর অনু খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সারাদিন ক্লান্ত থাকায় বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে।
তার ঘুম ভাঙ্গে সন্ধ্যায় মাথায় কারো ঠান্ডা হতে স্পর্শে।স্পর্শটি তার খুব চেনা এটি তার মায়ের হাতের স্পর্শ। আচ্ছা মমতা স্পর্শগুলো কি এমনই হয়?
অন্ধকার ঘরে বসে আছে শাফিন…
চলবে…