বদনাম

বদনাম—– পর্বঃ ৪

শার‌মিন আক্তার
-তু‌লিঃ ব‌লো না আয়াত বাসার সবাই‌কে কিভা‌বে রা‌জি করা‌লে?
আয়াতঃ‌ বে‌শি কিছু না বাসায় গি‌য়ে সবার আগে আকাশ ভাইয়া‌কে সব খু‌লে ব‌লি। ভাইয়া প্রথ‌মে খুব হাস‌লো কিন্তু আমার সি‌রিয়াস‌নেস দে‌খে বল‌লো
আকাশঃ বাবা‌কে কি বল‌বি? এ বয়‌সে বি‌য়ে কর‌লে লো‌কে কি বল‌বে?
আয়াতঃ আমি কি বল‌ছি না‌কি যে, এখনই বি‌য়ে কর‌বো?
আকাশঃ তাহ‌লে?
আয়াতঃ বাবা-মা‌কে বলবা সব কথা বার্তা ঠিক ক‌রে রাখ‌তে। দুজনার লেখা-পড়া শেষ হ‌লে বি‌য়ে ক‌রে নি‌বো!
আকাশঃ তো এখা‌নে আমার কি কাজ?
আয়াতঃ তু‌মিই‌তো বাবা‌কে বল‌বে! কারন বাবা সব থে‌কে বে‌শি তোমার কথা শু‌নে!
আকাশঃ ভাই আমা‌কে বলির ছাগল বানাস না প্লিজ—–
আয়াতঃ তা বল‌লে তো হ‌বে না ভাই, সব কিছু তো‌কেই কর‌তে হ‌বে! আমি বাবাকে বল‌ছি তুই বাবা‌কে কিছু জরু‌রি কথা বল‌বি! এখন চল আমার সা‌থে!
আকাশঃ তোর লজ্জা ক‌রে না বড় ভাই‌য়ের আগে নি‌জের বি‌য়ে ঠিক কর‌ছিস তাও বড় ভাই‌কে দি‌য়ে!
আয়াতঃ তোর লজ্জা ক‌রেনা ২৫-২৬ বছর বয়‌সেও একটা মে‌য়ে পটি‌য়ে বি‌য়ে কর‌তে পা‌রিস নি। তোর জন্যই তো আমার রাস্তা ক্লিয়ার হ‌চ্ছে না। আমা‌কে এখন সাহায্য কর আমি খুব শিগ্রই তোর জন্য সুন্দর ভা‌বি খু‌জে দি‌বো। মা‌নে আমার ক্লাসমেট নীরা যার সা‌থে তোর ইঞ্চি ইঞ্চি ভাব আছে। ওর সা‌থে লাইন ক্লি‌য়ার ক‌রে দি‌বো পাক্কা।
আকাশঃ পাক্কা নীরার সা‌থে—–
আয়াতঃ হুমমম এখন চল—–?
তু‌লিঃ তারপর ভাইয়া গি‌য়ে কি বল‌লো?
আয়াতঃ ভাইয়া গি‌য়ে বাবার কা‌ছে সব খু‌লে বল‌লো আমি তখন দরজার আড়া‌লে লুকি‌য়ে ছিলাম। বাবার কথা শু‌নে গ‌ম্ভির গলায় বল‌লো কোথায় আহম্মকটা?
ভাইয়া টে‌নে আমা‌কে দড়জার আড়াল থে‌কে বাই‌রে আন‌লো। আমি নি‌চের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছিলাম চোখ তুল‌লে য‌দি চড় টড় দি‌য়ে ব‌সে। এমনি‌তেও ফর্সা মানুষ চড় মার‌লে গা‌লে দাগ প‌রে যা‌বে তখন মানুষ‌কে মুখ দেখাতাম কি ক‌রে! বাবা গম্ভীর গলায় বল‌লো
বাবাঃ তা বাবা এ বয়‌সে আপনার মাথায় বি‌য়ের ভূত কি ক‌রে ডুক‌লো?
আয়াতঃ বাবা এখন তো বি‌য়ে কর‌তে চাই‌নি? বি‌য়ে তো পড়া‌লেখা শেষ হ‌লে কর‌বো। এখন তো মে‌য়ে‌ ঠিক—
বাবাঃ আবার মুখ ফু‌টে কথা বল‌ছিস লজ্জা ক‌রে না।
আয়াতঃ আমি কি বল‌বো? ভাইয়া আমা‌কে যা বল‌তে বল‌ছে তাই বল‌ছি।
আকাশঃ আমি?
আয়াতঃ তু‌মিই তো বললা ভাইয়া যে, বাবা সা‌থে সব খু‌লে কথা বল! আমি তো সেটাই বললাম।
আকাশঃ এ্যা।
বাবাঃ চুপ কর তোরা! মে‌য়ের বাবার ফোন নাম্বার দে আমি কথা বল‌ছি।
আয়াতঃ দি‌তে পা‌রি এক শ‌র্তে য‌দি ব‌লো তা‌দের সা‌থে রাগারা‌গি কর‌বে না।
বাবা রা‌গি চো‌খে আমার দি‌কে তাকা‌লেন ভ‌য়ে ফোন নাম্বার দি‌য়ে দিলাম। তারপর তোমার বাবা আর আমার বাবা কি কথা বল‌লেন জা‌নি না। ত‌বে কথা বল‌া শে‌ষে বাবা আমায় বল‌লো সন্ধ্যা বেলা তোমা‌দের বা‌ড়ি যা‌বে। তখনখিু‌শি‌তে নাচ‌তে মন চাই‌ছি‌লো কিন্তু তখন তো আমি এটা ভে‌বে‌ছিলাম হয়‌তো এন‌গেজ‌মেন্ট পর্যন্ত হ‌বে। কিন্তু সবাই মি‌লে বি‌য়ে প‌ড়ি‌য়ে দি‌লো।
তু‌লিঃ কি তারমা‌নে তু‌মিও জান‌তে না আজ আমা‌দের বি‌য়ে?
আয়াতঃ আরে নাহ! এসব তো তোমার বাসায় আসার পর শুনলাম। বাবা তোমার বাবার সা‌থে কিছুক্ষন কথা ব‌লে বল‌লেন বেয়াই সা‌হেব কাজী কখন আস‌বে? তোমার বাবা বল‌লো কিছুক্ষ‌নের ম‌ধ্যে এসে পড়‌বে। আমি বাবা‌কে জি‌গেস করলাম বাবা কাজী কেন আস‌বে? এখা‌নে কি অন্য কা‌রোর বি‌য়ে হ‌বে?
বাবাঃ ন্যাকা! কিছু বো‌ঝে না। আর কার বি‌য়ে হ‌বে? তোর আর তু‌লি মা‌য়ের বি‌য়ে হ‌বে।
বাবার কথায় আমার মাথায় চক্কর দি‌য়ে‌ উঠলো। ভাইয়া‌কে বললাম ভাইয়া এসব কেম‌নে কি?
আকাশঃ আমরা আগে থে‌কেই সব জা‌নি।
আয়াতঃ কিভা‌বে?
আকাশঃ সকা‌লে তোর শ্বশুর বাসায় এসে সব ব‌লে গে‌ছে। তখনই বাবার সা‌থে তোর শ্বশু‌রের বেশ ভাব জমে গে‌ছি‌লো। কিন্তু বিয়ে করার ডি‌সিসন কিছুক্ষন আগে নি‌লো। আজ এখনই তো‌দের বি‌য়ে হ‌বে।
আয়াতঃ কিন্তু ভাইয়া আমি‌তো ভাব‌ছি শুধু এন‌গেজ‌মেন্ট হ‌বে। এত তারাতা‌রি বি‌য়ের কি দরকার ছি‌লো?
আকাশঃ এন‌গেজ‌মেন্ট হ‌য়ে গে‌লেই তোমরা মুক্ত পা‌খির মত ঘোরাঘু‌রি আর রোমান্স করা শুরু করবা তা কি আমরা জা‌নি না বাচ্চু! আর তখন যদি লি‌মিট ক্রস ক‌রার প‌রে দুজন ব্রেকাপ ক‌রে ফে‌লিস? তোর তো কিছু হ‌বে না কারন তুই ছে‌লে কিন্তু তু‌লি তখন সমা‌জে মুখ দেখা‌বে কি ক‌রে? তাই আমরা সবাই মি‌লে সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি আজ বি‌য়ে হ‌বে তিনমাস পর তু‌লি‌কে আনুষ্ঠা‌নিক ভা‌বে আমা‌দের বা‌ড়ি নেয়া হ‌বে। আজ বি‌য়ের পর তোরা আইন আর ধর্ম ম‌তে স্বামী স্ত্রী তখন তোরা যা ইচ্ছা তাই কর। তা‌তে কা‌রো কোন আপ‌ত্তি থাক‌বে না।
ভাইয়ার কথা শু‌নে হা হ‌য়ে তা‌কি‌য়ে রইলাম ঠিক কি বল‌বো ভে‌বে পা‌চ্ছি না। খু‌শি হ‌বো না‌কি বেজার হ‌বো?
আকাশঃ মুখ বন্ধ কর মশা ডু‌কে যা‌বে। ফা‌ন্দে প‌রে এখন কান্না আস‌ছে? হি হি হা হা। এবার হা‌ড়ে হা‌ড়ে টের পাবা চান্দু বি‌য়ে কি জি‌নিস? আর বৌ‌য়ের ভা‌লোবাসা কি? যখন কিছু হ‌লে খু‌ন্তি নি‌য়ে তোর পিঁছ‌নে ছুট‌বে তখন মজা বুঝবা কত ধা‌ঁনে কত গম থুক্কু চাল। আমার আগে প্রেম করা বি‌য়ে করা মজা বুঝা‌চ্ছি। তোর বৌ‌কে এমন কুব‌ু‌দ্ধি দি‌বো না যে রোজ তো‌কে উল্টে পা‌ল্টে ওয়াস কর‌বে উইথ আউট সাবান হি হি হা হা। জা‌নিস আয়াত তোর অবস্থা দে‌খে একটা গান ম‌নে পড়‌ছে। ‌কি গান জা‌নিস? শুন‌বি?
ফান্দে প‌ড়িয়া বগা কা‌ন্দে রে !
আরে ভাগ বগা ভাগ
তুই ভাগ ভাগ ভাগ!
আয়াতঃ তুই ভাই না শত্রু! আমার এ অবস্থায়ও আমার সা‌থে মজা কর‌ছিস।
আকাশঃ এ তো কুচ নে‌হি বাচ্চ‌ু আগে আগে দে‌খো ক্যা ক্যা হোতা‌হে। হা হা
তারপর কি বি‌য়ে হ‌য়ে গে‌লো। আয়া‌তের কথা শু‌নে তু‌লি হাস‌তে হাস‌তে পেট ‌চে‌পে ধ‌রেছে।
আয়াতঃ হা‌সো হা‌সো! আমার অবস্থা যে তখন কি ছি‌লো তা কেবল আমিই জা‌নি। ত‌বে কি জা‌নো তু‌লি?
তু‌লিঃ কি?
আয়াতঃ এক দিক দি‌য়ে ভা‌লোই হ‌য়ে‌ছে। লু‌কি‌য়ে লু‌কি‌য়ে দেখা করার কোন ঝা‌মেলাই থাক‌বে না। যখন ইচ্ছা তখন দেখা কর‌বো আর সা‌থে সা‌থে—–।
আর তাছাড়া তিনমাস পর যখন তোমা‌কে আনুষ্ঠা‌নিক ভা‌বে নি‌য়ে যা‌বো তখন তো পারমা‌নেন্ট‌লি তোমা‌কে পা‌বো। ওফ ভাব‌তেই গা‌য়ে কাটা দি‌ছে—–।
তু‌লিঃ যাহ্। এসব কি বল‌ছো লজ্জা ক‌রে না?
আয়াতঃ লজ্জা সবজায়গায় করা ঠিক না। আচ্ছা রাত অনেক হই‌ছে ঘু‌মি‌য়ে প‌রো।
তু‌লিঃ আয়াত!
আয়াতঃ হুমম
তু‌লিঃ তু‌মিও কি আমার সা‌থে এক বিছানায় ঘুমা‌বে?
আয়াতঃ নাহ্ খা‌টের নি‌চে শোব আর ইঁদুর তাড়াবো।
তু‌লিঃ রাগ‌ছো কেন! আমি তো বুঝা‌তে চাই‌ছিলাম মা‌নে——-?
আয়াতঃ কি বুঝা‌তে চাই‌ছিলা বিড়াল মারার কথা?
তুলি লজ্জায় লাল হ‌য়ে যাহ্ পা‌জি
আয়াতঃ আমি খুব ভা‌লো ক‌রে বুঝ‌ছি কিন্তু তুমি যা ভাব‌ছো ও ধর‌নের প্ল্যান আমার আপাতত নাই। তাই নি‌চি‌ন্তে ঘুমা‌তে পা‌রো। ত‌বে হ্যা ঘুমাতে হ‌বে কিন্তু আমার বু‌কের মা‌ঝে।
তু‌লিঃ হি হি। আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আই লাভ ইউ।
আয়াতঃ যাক তাহ‌লে আমার এত বছ‌রের অপেক্ষার অবসান হ‌লো। ম্যাডাম মুখ ফু‌টে কথাটা বল‌লো।
তনয়াঃ ওয়াও হোয়াট এ বিউ‌টিফুট স্টো‌রি! হাউ রোমা‌ন্টিক! মনে ভ‌রে গে‌লো। আচ্ছা তু‌লি তোমা‌দের বয়‌সের পার্থক্য এত কম তাহ‌লে এত বছর নি‌জে‌দের ভিতর আন্ড্যাস‌টে‌ন্ডিং কিভা‌বে বজায় রাখ‌ছো? কোন প্রব‌লেম হয়‌নি?
তু‌লিঃ হয়‌নি বল‌লে মিথ্যা‌ বলা হ‌বে। অনেক বার হয় কিন্তু সেটা আধা ঘন্টার বে‌শি টে‌কে না। আমরা আমা‌দের সম্প‌র্কে ইগো নামক ব্যাধিটা ডুক‌তে দেই‌নি তাই মান অভিমা‌নের পালা চল‌লেও সিমীত সম‌য়ের জন্য থাকে। জা‌নো বি‌য়ের পর তখনও আয়াত‌দের বাসায় যাই‌নি আমি! আমাদের দেখা সেই কো‌চিংই বে‌শি হ‌তো কারন আমিও ইউনির্ভা‌সি‌টি‌তে ভ‌র্তি কো‌চিং আয়া‌তের কো‌চিংই করতাম। কিন্তু তখন‌ আয়াত আমাদের পড়া‌তো না। কারন ও ইন্টা‌রের ব্যাচ পড়া‌তো। কিন্তু পড়া শে‌ষে দুজন বাসায় ফেরার প‌থে দ‌ুজন একসা‌থে অনেকটা পথ আসতাম। তারপর দুজন দুজনার বা‌ড়ি চ‌লে যেতাম। তখন কেমন যে‌নো খুব কষ্ট হ‌তো দুজনার। তারপর যখন আমাদের আনুষ্ঠা‌নিক বি‌য়ে হ‌লো তখন রোজ আয়া‌তের সা‌থেই যাওয়া আসা করতাম ওর সাই‌কে‌লে। আমি সাম‌নে বসতাম ও চালা‌তো। তখন এত ভা‌লো লাগ‌তো যা ভাষায় ব্যাক্ত করা সম্ভব না। আমার প্রথম প্রথম ভয় হ‌তো কারন আয়াত জব ক‌রে না অথচ আমা‌দের দুজ‌নের খরচ! য‌দি ফ্যা‌মি‌লির কেউ কিছু ব‌লে? কিন্তু না আমা‌দের ধারানা ভুল প্রমান ক‌রে দি‌লো বড়রা। আয়া‌তের বাবা মা ভাই এত ভা‌লো এত ভা‌লো যা বুঝা‌নো যা‌বে না। তারা সবসময় আমা‌দের সা‌পোর্ট কর‌তো। আমা‌দের ঝগরা গু‌লো‌কেও তারা মিমাংশা ক‌রে দি‌তো।
আমার বাবা আমা‌কে প্র‌তিমা‌সে অনেক হাতখরচ দি‌তো। কিন্তু আয়াত বা ওর বাবার সেটা পছন্দ ছি‌লো না তা‌দের ম‌তে আমি এখন তা‌দের দা‌য়ি‌ত্বে। আয়াত রাগ করার পর বাবার কাছ থে‌কে আর হাত খরচ নিতাম না কিন্তু তাই ব‌লে আয়াত আমা‌কে কোন অভাব বুঝ‌তে দেয়‌নি। ও কো‌চিংএ দু‌টো ব্যাচ প‌ড়ি‌য়ে প্রায় আট হাজারের মত টাকা পে‌তো তারপর আরেকটা একাউ‌টিং এর ব্যাচ পড়া‌নো শুরু ক‌রে সেটা থে‌কে মাশাল্লাহ মা‌সে প্রায় নয়হাজার টাকার বে‌শি হ‌তো। দ‌ুজনার খরচ সুন্দর ভা‌বে চ‌লে যে‌তো। আর আমা‌দের প‌রিবার‌তো আছেই। আয়াত ওর বাবা‌কে বেত‌নের টাকা পে‌লে দি‌তে গে‌লে তি‌নি রাগ কর‌তেন তি‌নি বল‌তেন এগু‌লো তো‌দের কা‌জে লাগ‌বে আপাতত তো আমি আছি।
জা‌নো আমরা যখন ঘুর‌তে যেতাম বা শ‌পিংএ যেতাম আয়া‌তের বাবা বা আকাশ ভাইয়া সব খরচা দি‌য়ে দি‌তো। আকাশ ভাইয়া মা‌ঝে মা‌ঝে আয়াতকে টাকা দি‌য়ে বল‌তো যা তু‌লি বুবু‌কে নি‌য়ে ঘু‌রে আয় কোথাও থে‌কে। ওহ হ্যা আকা‌শ ভাইয়া ভা‌লো‌বে‌সে আমা‌কে বুবু ডাক‌তো। কারন আর্থি মা‌নে আয়া‌তের বোন আমাদের বি‌য়ের কিছু‌দিন পর ঢাকা মে‌ডি‌কেল ক‌লে‌জে চান্স পায় সেখা‌নেই থা‌কে। আর্থি আর আমি ব্যাচ মেট। ওর অভাবটা সবাই আমা‌কে মে‌য়ে বা বোন ভে‌বে পূরন কর‌তো। আল্লাহর রহম‌তে আমি আয়া‌তের ইউনির্ভা‌সি‌টি‌তেই চান্স পে‌য়ে‌ছিলাম সোনায় সোহাগা যা‌কে ব‌লে। রোজ সাই‌কেল ক‌রে একসা‌থে ক‌লেজ যেতাম। ক‌লে‌জের বন্ধুরা আমা‌দের লাভ বার্ড ডাক‌তো। এক‌দিন আমি আর আয়াত সাই‌কেল ক‌রে যা‌চ্ছিলাম তখন সাম‌নে থে‌কে একটা বাইক এসে ধাক্কা দেয় দুজ‌নেই প‌রে গি‌য়ে‌ছিলাম আয়াত তেমন ব্যাথা পায়‌নি কিন্তু কিভা‌বে যে‌নো আমার হাতের একটা আঙুল ভে‌ঙে গে‌ছি‌লো। সেসময় আয়াত আমার এতটা কেয়ার ক‌রে‌ছে যে ‌নিজের ব্যাথা নি‌মি‌ষেই ভু‌লে গেলাম ওর ভা‌লোবাসায় সিক্ত হ‌য়ে। তার কিছু‌দিন পরই আমাদের প্রথম বিবাহ বা‌র্ষি‌কি ছি‌লো তখন আমা‌দের দুজনার বাবা মি‌লে আয়াত‌কে একটা বাইক গিফ্ট ক‌রে। তারপর থে‌কে টোনাটু‌নি বাই‌কে ব‌সে প্রেম করতাম।
আমা‌দের বি‌য়ের এক বছর পূর্ন হবার কিছ‌ু‌দিন পর আকাশ ভাইয়ার বি‌য়ে হয় নীরা ভা‌বির সা‌থে। নীরা ভা‌বি সম্প‌র্কে আর বয়‌সেও আমার থে‌কে বড়। ভা‌বি আমা‌কে নি‌জের ছোট বোনের মত স্নেহ ক‌রে। কখ‌নো ম‌নেই হয়না যে আমরা দুজন জাঁ। বো‌নের মত থা‌কি আমরা। ভা‌ইয়ার বি‌য়ের বি‌য়ের দেড় বছ‌রের মাথায় তা‌দের একটা মে‌য়ে হয় নাম অরনী। এখন‌তো তার বয়স প্রায় আড়াই বছর। আয়াত মার্স্টাস শেষ ক‌রে মোটাম‌ু‌টি ভা‌লো একটা জব নেয়। সা‌থে ভা‌লো ক‌য়েকটা কম্পা‌নি‌তে এপ্লাই কর‌তে থা‌কে। আল্লাহ সহায় ছি‌লো যে প‌রে খুব ভা‌লো একটা কম্পা‌নি‌ত ভালো প‌জিশ‌নে জব পায়। তারপর থে‌কে সুন্দর ভা‌বেই চল‌ছে। আমিও ক‌দিন আগে মার্স্টাস শেষ করলাম। আমার চাক‌রি করার কোন ইচ্ছা নাই। আমার চাকরি করা‌তে প‌রিবা‌রের কারো আপ‌ত্তি নেই। কিন্তু আমি সবাই‌কে ব‌লে দি‌য়ে‌ছি আমি এখন সংসার কর‌তে চাই।‌ চাকরি করার কোন ইচ্ছা নাই।
জা‌নো তনয়া আমা‌দের সম্পর্কটা কিন্তু এক‌দি‌নেই এত সুন্দর হয়‌নি। নি‌জে‌দের অনেক ক‌ম্প্রোমাইজ করা লাগ‌ছে। কিন্তু যাই হোক এখন আমরা সু‌খি খুব সু‌খি।
তনয়াঃ এত সুন্দর সুস্থ সম্পর্ক‌ের কথা আমি আগে শু‌নি‌নি। যেখা‌নে বাবা মা থে‌কে ভাই বোন সবাই খুব বে‌শি প‌রিমান ভা‌লো।
তু‌লিঃ হুমমম। সবটাই হ‌লো মহান আল্লাহ তা’আলার দান। দিন রাত আমি এর জন্য তার শুক‌রিয়া আদায় করি।
তনয়াঃ আচ্ছা তোমরা তো এখন সে‌টেল তাহ‌লে বে‌বির কথা চিন্তা কেন কর‌ছো না?
তু‌লিঃ (লজ্জা পে‌য়ে) আল্লাহ চাই‌লে এবার প্ল্যান আছে।
এইরে মাগ‌রি‌বের আযান দি‌বে চ‌লো নামাজ প‌ড়ে আসি। আয়াতও সন্ধ্যার পর চ‌লে আস‌বে ।
আয়াত তু‌লি আর তনয়া তিন জনের দিনগু‌লো খুব সুন্দর ভা‌বেই চল‌ছি‌লো। তনয়া আয়াত‌দের ওখা‌নে আছে‌ প্রায় এক মাস। তনয়া আয়াত‌কে বল‌ছে একটা চাক‌রির ব্যাবস্থা ক‌রে দি‌তে।
কিন্তু এক‌দিন বিকা‌লে তু‌লির কা‌ছে এক‌টি খাম আসে খা‌মের ভিতর কিছু ছ‌বি থা‌কে। ছ‌বিগু‌লো দে‌খে তু‌লির পাথ‌রের ন্যায় ব‌সে থা‌কে। আয়াত তু‌লির হাত থে‌কে ছ‌বিগু‌লো নি‌য়ে দে‌খে নি‌জেও দপ ক‌রে ব‌সে প‌ড়ে। তা‌কি‌য়ে থা‌কে তু‌লির চো‌খের দি‌কে একটু বিশ্বা‌সের খোঁ‌জে।
ঠিক তখনই আয়াত‌দের বা‌ড়ির সাম‌নে বেশ কিছ‌ু লোক এসে জ‌ড়ো হ‌য়ে হৈঁ চৈঁ কর‌তে থা‌কে। সেটা দেখার জন্য সবাই বাই‌রে আস‌তেই তনয়ার চোখ দু‌টো বড় বড় হ‌য়ে যায়।
চল‌বে——