প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 21
তোরা আড্ডা দে আমি আসতেসি
.
কই যাস?
.
একটু কাজ আছে,আসতেসি ৫মিনিট
.
শান্ত উঠে এসে আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,আহানা রাগে ফুসতেসে
.
তো??কি খবর,ভালো আছো?
.
আপনি একটা!!!
.
কি আমি?
.
বেয়াদব!
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো,শান্ত হাসতেসে কারণ সে এশাকে দিয়ে আহানার ওড়নায় গিট্টু দিয়ে ২হাজার টাকা রেখেছিল
ভার্সিটিতে ছুটি হয়ে গেছে আহানা অন্য রোড দিয়ে টিউশনিতে যাচ্ছে,শান্ত রোডটার পাশেই বাইকে বসে আরামসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে,আহানাকে দেখে ফু দিয়ে ধোঁয়া ওর মুখের দিকে দিলো
আহানা দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে শান্তর হাত থেকে টেনে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দিলো নিচে
.
এটা কি করলে?
.
একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি,সিগারেটের ধোঁয়া আমার মুখের সামনে দিলেন কেন?
.
আমার ইচ্ছা
তাহলে এটাও আমার ইচ্ছা
আহানা শান্তর দিকে ভেঁংচি কাটতে কাটতে যাচ্ছে আর দুম করে নিচে পড়ে গেলো
শান্ত রাক্ষসের মত জোরে হাসতে হাসতে বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে
আহানা নিচে মাটিতে বসে বকতেছে ওকে
বাসায় ফিরে টাকা গুলো নিয়ে বসে আছে সে,আর বাড়াবাড়ি করা যাবে না,পরে কি করতে না কি করে ফেলবে শয়তানটা!
আমি বরং এক কাজ করি,টাকা গুলো দিয়ে বাজার করি,চাল আর ডাল কিনবো আরও কত কি কিনা বাকি
আহানা ২হাজার টাকা থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলো
বাকি এক হাজার টাকা নিয়ে কাগজ কলম সহ খাটের উপরে গিয়ে বসলো লিস্ট করার জন্য
একটা নতুন জামা-৫০০টাকা
চাল এক কেজি ১০টাকা করে ২০কেজি- ২০০টাকা
খোলা মসুর ডাল এক কেজি ১২০করে ২কেজি-২৪০টাকা
আর থাকে ৬০টাকা
পেঁয়াজ আর আলু কিনবো সেটা দিয়ে,কম কম করে কিনবো তাহলে ৬০টাকায় হয়ে যাবে,ব্যাস,কাল ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় বাজার করে আনবো
আলমারিতে ধোয়া জামাটা রাখতে গিয়ে আশ্রমের মায়ের শাড়ীটা পড়ে যেতে নিলো,আহানা সেটা ধরে জড়িয়ে ধরে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো
আমার মায়ের শাড়ী,আরেহ আজ মাসের কয় তারিখ! ঈদের পরেরদিনই তো আমার সালেহা মায়ের মৃত্যু বার্ষিকি
ইস যদি এবার আশ্রমটাতে যেতে পারতাম তাহলে কত ভালো হতো,মায়ের কবরটা দেখা হতো আর আশ্রমের বাচ্চাদের সাথেও দেখা হয়ে যেতো
এক মিনিট! আমার কাছে তো ১হাজার টাকা আছে,সেটা দিয়ে তো আমি আশ্রমে গিয়ে আবার ফেরত ও আসতে পারি,আরে হ্যাঁ তাই তো,ট্রেনে করে গেলে ভাড়াও কম যাবে,তাহলে আমি ঈদের কদিন আগে যাবো আশ্রমে,টিউশনিও থাকবে না তখন
আহানা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো
পরেরদিন ভোরে উঠে রেডি হয়ে নিয়ে মিষ্টি বাসায় গেলো
শান্তর বাসার দরজা বন্ধ,উফ যাক বাবা বাঁচলাম,শয়তানটা আজ আর তাহলে জ্বালাবে না
আহানা নেচে নেচে মিষ্টিদের বাসার দরজায় নক করলো
শান্ত এসে দরজা খুললো
শান্তকে দেখে আহানা ভূত দেখার মত ভয় পেয়ে এক দৌড় দিলো
পরে আবার কিসব ভেবে ফেরত আসলো
.
আসেন ম্যাডাম ভিতরে আসেন, এভাবে পালালে কি হয়!!
.
আপনি এখানে?
.
ওমা,আমার মিষ্টির বাসায় আমি থাকতে পারি না?
.
😒
.
আহানা কিছু না বলে গিয়ে সোফায় বসলো,শান্ত ওর সামনে বরাবর বসলো পায়ের উপর পা তুলে
আহানা বিরক্তি নিয়ে মিষ্টিকে পড়িয়ে যাচ্ছে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে ঢুলতেসে শুধু
আহানার দম বন্ধ হয়ে আসতেসে,কেউ এমন করে তাকিয়ে থাকলে কার ভালো লাগবে?উফ!!
শান্ত ৭টা বাজার ১০মিনিট আগে উঠে চলে গেলো
আহানা বড় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,যাক বাবা বাঁচলাম!
মিষ্টিকে আরও ১০মিনিট পড়িয়ে আহানা বাসা থেকে বের হলো,শান্তর বাসার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর লিফটের দিকে তাকালো,শান্ত লিফটের ভেতরে দাঁত কেলিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
আহানা চোখ বড় করে সিঁড়ির দিকে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত টেনে ধরে লিফটের ভিতরে নিয়ে আসলো
.
এই!
.
চুপ!
আহানা চুপ করে তাকিয়ে আছে
শান্ত পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার নিলো,লিফট থেকে বের হলে ধরাবে
নিচ তলা আসতেই আহানা শান্তর হাত ছাড়িয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত ও দৌড়ে ওর সামনে এসে পড়লো
.
উফ!কি সমস্যা আপনার?
.
তুমি আমার থেকে এত পালাও কেন বলোতো?
.
আপনার কি তাতে?ইস!
.
আমার কি?
শান্ত এগিয়ে গেলো আহানার দিকে
.
আবার বলো তো
.
আহানা ঢোক গিলে পিছনে থাকা একটা কারের সাথে লেগে গেলো
.
সরি মুখ ফসকে বলে ফেলছি,প্লিস আমাকে ছাদ থেকে ফেলবেন না
.
শান্ত সিগারেট ধরিয়ে আহানার এক পাশে হাত নিয়ে কারের উপর রেখে মন দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে,আহানার দিকে ধোঁয়া ছাড়তেই আহানা চোখ বন্ধ করে কাশি শুরু করে দিলো
.
আপনি খুব খারাপ, হাত সরান আমি বাসায় যাব
.
রোজ রোজ বুয়ার হাতের রান্না ভালো লাগে না,আজ সকালের নাস্তা বানিয়ে দাও না প্লিস
.
কিহ?আপনার মাথা ঠিক আছে?হাত সরান আমি আমার বাসায় যাব
.
তাহলে আমিও তোমার সাথে যাব
.
আমি মালিকের কাছে বিচার দিব
.
তারেক মিয়া আমার সেক্রেটারি,ওরে যদি বলি আমি আহানার সাথে এক বাসায় থাকবো সে কিছু বলবে না
.
হাত সরান বলতেসি,আমি বাসায় যাবো
.
যেকোনো একটা চুজ করো
.
আপনি এমন করেন কেন আমার সাথে?
.
বারবার এক কথা ভালো লাগে না আহানা,চুপচাপ আমার বাসায় চলো নয়ত আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাও
.
আমি এতগুলো ছেলের মাঝে যাবো না আপনার বাসায়
.
তাহলে চলো তোমার বাসায় যাই
.
আহানা শান্তর হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হেঁটে চলে গেলো
অনেকদূর এসে দম ফেলে তারপর পিছনে তাকালো,শান্তকে দেখা যাচ্ছে না,মুচকি হেসে স্বস্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো শান্ত ও আহানার সাথে সাথে ওদিকে চেয়ে আছে
কাউকে খুঁজতেসিলা বুঝি?
.
আপনি একটা অসভ্য লোক!
.
আহানা বাসায় এসে দরজা আটকাতে যেতেই শান্ত হাত দিয়ে দরজা ধরে ফেললো
.
আরে এমন করো কেন,মেহমানকে কেউ এভাবে অপমান করে?
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে টেবিলের উপর ঠাস করে ব্যাগ রেখে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
শান্ত আহানার বিছানায় বসে গেমস খেলতেসে
আহানা ভাত রাঁধলো পরে ভাবলো বাঁদরটা তো আমার মত খালি বেগুন ভাজা দিয়ে ভাত খেতে পারবে না,কি করি!!
আলু কেটে বেগুন দিয়ে তরকারি রেঁধে নিলো আহানা,মাছ তো নেই
শান্তর সামনে বাটি আর প্লেট এনে রাখলো
শান্ত ফোন রেখে হাত ধুয়ে বসে গেলো খাওয়ার জন্য
আহানা অবাক হচ্ছে,শান্ত এত ছোটখাটো খাবার খুব মজা করে খেয়ে যাচ্ছে
.
অনেক মজা হয়েছে
.
কথাটা শুনে আহানার মনে হলো যেন রান্না করাটা সফল হয়েছে তার
.
খাওয়া শেষে শান্ত গেলো হাত ধুতে
আহানা বিছানার থেকে বাটি আর প্লেট নিচ্ছে রান্নাঘরে রাখার জন্য
শান্ত হাত ধুয়ে এসে আহানার ওড়না টেনে মুখ মুছতে লাগলো
আহানা অবাক হয়ে গেছে শান্তর এমন কাজে
শান্তর ও খেয়াল নেই সে কি করতেছে,মায়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছতো সবসময়
মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অভ্যাসটা কয়েকবছর ধরে বন্ধ ছিল আজ হঠাৎ করে এসে যাবে সে ভাবতে পারেনি,,শান্তর হুস আসতেই ইতস্তত বোধ নিয়ে বললো সরি আহানা,আমি আসলে….
.
ইটস ওকে
.
আহানা ওড়না ঠিক করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো
শান্ত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো থ্যাংকস
.
মেনশন নট!😒👿
.
বাই,এমন করে মাঝে মাঝে জ্বালাবো😜
.
বাহির হোন বলতেসি,ঢং যত্তসব
আহানা দরজা লাগিয়ে দিলো শান্তর মুখের উপর,আজ খাইয়েছি এটাই অনেক আবার বলে মাঝে মাঝে,ব্যাটার শখ কত!
.
বেয়াদ্দপ মাইয়া!!
♣
কিরে কোথায় ছিলি তুই?
.
আসলে রিয়াজ একটু জগিং করতে গেসিলাম
.
বুয়া নাস্তা বানিয়েছে,চল একসাথে খাই
নাহ,আমার খিধে নেই,পরে খাবো,তোরা খা
কথাটা বলে শান্ত নিজের রুমে ফিরে গেলো
রিয়াজ হা করে চেয়ে আছে,অন্য সময়ে সঠিক টাইমে নাস্তা না পেলে চিল্লাই বাসা উল্টায় ফেলে আর আজ বলে খাবে না?আজব তো!
.
আহানা বাকি খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আসলো,আজ ঈদের ছুটি দিয়ে দিবে
আহানা খুব খুশি,সে তার ছোটবেলা কাটানো সেই আশ্রমে যাবে
আর শান্ত খুশি সে তার মায়ের কবর আর বাবাকে দেখতে যাবে
কাল ভোরেই রওনা হবে,কয়েকদিন বাদেই ঈদ
.
কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে আহানা ২৩তম কদম ফেলতেই শান্ত পিছন থেকে ডাক দিলো
আহানা পিছন ফিরে তাকালো ওর দিকে
.
ঈদে দেশের বাড়ি যাবে না?মা বাবার কাছে
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো হুম যাবো
.
আমিও যাব,বাই তাহলে,একে বারে ঈদের পরে দেখা হবে
.
বাই😒
.
শান্ত বাইকে উঠে আহানার দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলো
আহানা টিউশনি শেষ করে নিউমার্কেটে গিয়ে একটা জামা কিনেছে
৫০০টাকার মধ্যেই ভালো জামা পেয়ে গেলো,তারপর চাল ডাল পেঁয়াজ আলু কিনে বাসায় ফিরলো
শান্ত মার্কেটে এসে মায়ের জন্য গোলাপি চুড়ি কিনলো তারপর ফুলের দোকান থেকে রজনীগন্ধা কিনলো,বাবার জন্য পাঞ্জাবিও কিনেছে সে
আর তার সৎ মা,ভাই বোনের জন্য ও জামা কাপড় নিয়েছে
ব্যাগ গুছিয়ে ফেললো,সব রেডি কাল ট্রেন ধরতে হবে,আহানাকে জ্বালাতে জ্বালাতে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে,এ কটা দিন না জ্বালিয়ে থাকলে আবার আগের মতন হয়ে যাবে সব,হুম!
পরেরদিন সকাল ৬টায় আহানা কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে হাজির,মানুষের সমাগম বেশি,যাক, খালি থাকলে একা একা লাগতো,ভয় ও করতো
ঈদ তো তাই এত ভিড়!
কথা হলো গিয়ে আমি তো অগ্রিম টিকেট কাটিনি😒
অনেক রিকুয়েস্ট করে একটা টিকেট জোগাড় করলো আহানা তাও একটা বাচ্চা ছেলের সিট,ছেলের মাকে রিকুয়েস্ট করে ওরে কোলে রাখবে কথা দিয়ে টিকেটটা নিয়েছে সে
কিছু করার নেই,ঈদের ২দিন আগে টিকেট কিনতে আসলে জীবনেও সরাসরি টিকেট পাওয়া যায় না,অগ্রিম কেটে রাখতে হয়,আহানা ভুলেই গেসিলো সেটা,মনে রাখবে কি করে ২হাজার টাকা নিয়ে এ কদিন ধরে শান্তর সাথে যে লঙ্কা কান্ড চলছিলো,বাপরে বাপ!
অবশেষে টিকেট পেয়ে খুশি হয়ে আহানা দাঁড়িয়ে পড়লো ট্রেনের অপেক্ষায়
হাওর এক্সপ্রেস আসতেসে,,ঢাকা টু মোহনগঞ্জ
কমলাপুর আসতে আমার ২০০টাকা শেষ হয়ে গেলো,হেঁটে তো এতদূর আসা যায় না তা নাহলে হেঁটেই আসতাম,ট্রেন আসতেই আহানা তড়িগড়ি করে উঠে পড়লো
.
শান্ত ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছে হাতে ট্রলি ব্যাগ,দেরি হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে,সে জানেও না এই ট্রেনে তার জ্বালানোর পার্টনার আহানাও আছে
দৌড়ে এক লাফ দিয়ে উঠে গেলো,উফ বাঁচলাম,একটুর জন্য মিস করতাম আমি
এসব ট্রেন ট্রুনে চলতে ভাল্লাগে একদম!না পারতে উঠসি
বাসের টিকেট পাইনি বলে এখানে আসতে হলো আমাকে!!
শান্ত জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসলো
তার ঠিক পিছনের কেবিনে আহানাও জানালার সিটে বসেছে
আহানার কোলে বাবুটা,৫বছরের হবে,ওর মা ওকে কোলে নিতে পারবে না কারন উনি গর্ভবতী তাই বাবুর জন্য আলাদা টিকেট কিনেছেন তিনি,আহানা তার টিকেট নিয়েই তাকে কোলে নিয়ে বসে আছে,বাবুটা কোল থেকে নেমে তার বাবার কাছে চলে গেলো,তার বাবার কোলে ২/৩বছরের একটা বাবু,হয়ত তাই তার জন্য আলাদা সিট নেওয়া হয়েছিল
আহানা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,ট্রেনে সে আরও একবার উঠেছিল,আশ্রম থেকে ফেরার সময়,গাছ পালা চলছে?নাকি ট্রেন চলছে?অদ্ভুত রহস্য
ক্ষেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন,ছোট মেয়ে একটা গরুর বাচ্চাকে নিয়ে ক্ষেত পেরিয়ে চলেছে,তার হাতে আবার একটা ছাগলও বাঁধা
সবুজ ক্ষেত,আর নীল আকাশ,যেন আকাশে আর্জেন্টিনা আর নিচে ব্রাজিলের পতাকা,আহানা এই দুই পক্ষের পতাকার রঙ জানে শুধু,তাদের দলে কে কে আছে,কে কয়বার জিতলো তা জানে না,জানতেও চায় না
বাবুটা তার বাবার কাছ থেকে এসে আহানার কোলে উঠে বসলো
শান্তর পাশে একজন বয়স্ক মহিলা বসেছেন,উনি শুধু দোয়াদরুদ পড়তেসেন,শান্ত এই নিয়ে ৬বার কানে ইয়ারফোন গুজেছে উনি ততবারই টান মেরে শান্তর কান থেকে সেটা ছুটিয়েছেন
উনার একটাই কথা এসব শুনা হারাম আর তাও উনি যখন দোয়াদরুদ পড়তেসেন তখন তো গান শুনলে চ্যালচ্যালাইয়া জাহান্নামে যাবে শান্ত
শান্ত ব্রু কুঁচকে ইয়ারফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললো
খুব ছোটবেলায় নানি দাদিকে হারিয়েছে সে,তাই তাদের আদর পায়নি কখনও,এই মহিলাকে দেখে যেন নতুন করে হারানো নানি দাদিকে একসাথে পেয়ে গেলো সে
দোয়াদরুদ শেষ করে উনি তার হাতের লেডিস ব্যাগটা খুললেন,শান্তকে বললেন হাত পাততে
শান্ত হাত পেতে জানালার দিকে নজর দিলো
একটা পুকুর নজরে আসলো,জামা কাপড় ছাড়া ছোট ছোট ছেলে কতগুলো ঝাঁপ দিচ্ছে পুকুরটাতে
শান্ত তাদের দিকে চেয়ে হেসে দিয়ে তার হাতের দিকে তাকালো
গোটা এক আলমারির জিনিস পত্র তার হাতে কিন্তু মহিলাটি এখনও বের করেই যাচ্ছেন তার ব্যাগ থেকে আর সব নিয়ে শান্তর হাতে রাখতেছেন
মানুষ এত জিনিস নিয়েও বুঝি হাঁটে?ওহ মাই গড!!
মহিলাটি একটা বক্স খুঁজে পেলেন অবশেষে,এতক্ষণ এটাই খুঁজতেছিলেন,তারপর শান্তকে বললেন তার হাতের সব জিনিস আবার এই ব্যাগে ঢুকাতে
.
দাদি আমার মনে হয় না এসব এই ব্যাগে ঢুকবে
.
আরে কি বলো নাতি,আমি এসব কিছু তো এই ব্যাগ থেকেই বের করেছি
.
ওহ!
.
শান্ত এক এক করে সব ব্যাগে ঢুকাচ্ছে,টিসু এক বক্স,রুমাল ৫টা,সলা ৬টা,কাগজ পত্র আলা একটা প্যাকেট,আয়না,পানের বাটুয়া,ফোন,চিরুনি,নতুন জুতা,জামা এক সুট
শান্ত অবাক হচ্ছে আর ব্যাগে সব ঢুকাচ্ছে,কারন ছোট মিনি সাইজের এই ব্যাগটায় যে এক আলমারির সমান জিনিস ঢুকবে তা জানা ছিল না তার
.
দেখেছো?আমি বলসি না সব এটাতে আঁটবে
.
জি দাদি,বুঝলাম
শান্ত কাজ সেরে আবার জানালার দিকে ফিরে বসলো
.
এই ছেলে
.
জি দাদি?
.
নাও খাও
মহিলাটি একটা বক্স খুলে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলেন,ভিতরে পিঠা
নাও খাও,আমার বানানো
.
শান্ত একটা নিলো,কিন্তু না উনি জোর করে আরও ২টা খাওয়ালো শান্তকে,শান্তর কান্না পাচ্ছে,এমন করে মা চলে যাওয়ার পর থেকে কেউ আদর করে নাই তাকে
চোখের পানি মুছতেই মহিলাটি মাথা মুছে বললেন কি হয়েছে রে?
.
আমাকে এমন করে মায়ের পরে আর কেউ আদর করে নিই
.
থাক আমি করলাম তো!মায়ের কাছে যাচ্ছিস বুঝি?
.
হুম
.
সেখানে গেলে দেখবি সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে,মায়ের কোলে মাথা রাখলেই
কথাটা শুনে শান্ত কেঁদে দিলো এবার
ছেলেরা হুটহাট করে কাঁদে না তবে প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে তারা কান্না থামাতে পারে না কখনও,কেঁদেই ফেলে
.
কিরে এমন করে কাঁদিস কেন
.
আমি আর কখনও আমার মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারবো না গো দাদি
.
কেন?
.
আমার মা আমাকে ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে অনেক দূরে
.
মহিলাটি মুখটা ফ্যাকাসে করে শান্তর হাত চেপে বললেন থাক কাঁদিস না,শান্তকে কাঁদতে মানা করে উনি নিজেই হিজাবের ওড়না দিয়ে তার চোখ মুছলেন,তার ছেলে নেই,একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে,এখন তিনি যাচ্ছেন তার ছোট মেয়ের বাসায়,,এই কথা শান্তকে বললেন না কারন শান্ত এমনিতেও কাঁদতেসে আর কষ্ট দেওয়া উচিত না
.
তা তোর মায়ের কি হয়েছিল রে?
.
ক্যানসার
.
ওহ😞
বাবুটাকে তার মা খাইয়ে দিচ্ছে আহানা সেটা দেখে ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো,তাকে কেউ কখনও এমন করে খাইয়ে দেয়নি,যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই নিজের হাতে খেতো সে,হয়ত এর আগে নিচে যা পেতো তাই খেতো,আশ্রমের সব বাচ্চাকে তো আর হাতে ধরিয়ে খাইয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না,একজন আসতেন,থালায় থালায় খাবার সামনে দিয়ে চলে যেতেন,কিভাবে খেতে হয় তা কেউ বলে দেয়নি,একজন আরেকজনকে দেখে খাওয়া শিখতে হতো,আর সালেহা মা আসার পর আহানার মত অনেক বাচ্চাকেই ভালোবাসতেন,তিনি এসেছিলেন যখন আহানার ৬বছর সে সময়ে
.
বাবুটা আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা ছোট করে বললো কাঁদো কেন?
.
আহানা চোখ মুছে বললো কই না তো
.
দুপাশে দুজন কাঁদতেসে,একজন মা হারিয়ে আরেকজন মা বাবা দুজনকে হারিয়ে
বাবুটা তার হাতের বিসকুটের প্যাকেট আহানার হাতে দিয়ে বললো খাও,কেঁদো না
চলবে♥