প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 20

ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে নামাজটা শেষ করে নিয়ে আহানা বেরিয়ে পড়লো তার প্রতিদিনের কাজে,গন্তব্য মিষ্টিদের বাসা
দিনটা ভালোই,ভোরবেলার পরিবেশটাই অন্যরকম,ব্যস্ত নগরীকে চেনা দায়,হুট করে অন্য জেলা থেকে আসা মানুষ বলবেই না এটা বাংলাদেশের সব চাইতে ব্যস্ত শহর ঢাকা,কারণ ভোরের ঢাকার পরিবেশটাই এমন,আমার তো ঢাকার এই চিত্রটাই বেশ লাগে,আমি আর পাখিরা মিলে পথ চলছি,আমি রোড বেয়ে আর পাখিরা আকাশ বেয়ে,আর দু একজন আছে তারা রোড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করায় ব্যস্ত
জ্বর কিছুটা কমেছে,ভালো লাগতেসে এখন,পেটের দায়ে কাজ করাই যায়,কথা হলো গিয়ে শান্ত বেয়াদবটা আজ কি করবে কে জানে
যেভাবে হুমকি দামকি দিলো আমাকে
যাই হোক আমি এসবে ভয় পাই না,বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসলে নাকে দিয়ে দিব এক ঘুষি
সাদা নাকটা তার গোলাপি বর্ণ ধারন করবে তখন,কি সুন্দর লাগবে দেখতে
ভাবতে ভাবতে সে এসে পড়লো মিষ্টিদের বাসার সামনে
পা বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো এদিক ওদিক ভালো করে পর্যবেক্ষন করে,নাহ তাহলে মনে হয় ভার্সিটিতে গেলেই জ্বালাবে যা বুঝলাম,আমি তো ভেবেছি এখানে পাকড়াও করবে আমাকে
সব জায়গা ভালো করে পরোক করে নিলেও মেইন লিফটের ভেতরটা তার দেখা হলো না,সেদিকে তার নজরই নেই,মাথায় একদমই ছিল না যে শান্ত ঠিক কোন জায়গায় তার শিকারের অপেক্ষায় আছে
লিফটে ঢুকে ৫তম বাটনে টিপ দিয়ে পাশে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো আহানার,কলিজা বের হওয়ার উপক্রম প্রায়ই
বড় বড় নিশ্বাস ফেলে লিফটের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়লো আহানা
পাশেই শান্ত আরামসে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে গেমস খেলতেসে
সম্ভবত পাবজি খেলতেসে,কারণ পাবজিই একমাত্র গেম যেটা খেলার সময় আশেপাশে কি চলে সেদিকে খবর থাকে না গেমারদের
আহানা নিজেকে ঠিক করে নরমাল হয়ে দাঁড়ালো
শান্ত যেন খেয়ালই করছে না আহানা যে ভয়ার্ত চোখে বারবার ওকে দেখছে
৫তলা এসে গেছে আহানা পা টিপে বের হতে নিতেই একটা হাত ওর পাশ দিয়ে এসে লিফট অফ হওয়ার বাটনে ক্লিক করে দিলো

একি!এটা কি করলেন আপনি?আমি মিষ্টিকে পড়াবো তার জন্য বের হচ্ছিলাম আপনি লিফট অফ করলেন কেন?
.
শান্ত আহানার কথায় কান না দিয়ে ১০তলার বাটনে টিপ দিয়ে আবারও গেমস খেলায় মন দিলো
আহানা চোখ রাঙিয়ে সামনে গিয়ে ৫তলার বাটনে টিপ দিতে যেতেই শান্ত ওর হাতের কুনুই ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসলো
ভয়ে আহানার গলা শুকিয়ে গেছে,লিফটের ভেতর চিৎকার দিয়েও কাউকে পাবে না,শান্ত এমন করে ধরেছে কেন,কি করবে এখন?
.
শান্ত এক হাত দিয়ে আহানাকে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকাচ্ছে
তার মুখে চুইংগাম,সেন্টারফ্রুট,সেটা ফুলিয়ে বাবল বানিয়ে ঠুস করে ফুটিয়ে আবারও চিবাচ্ছে,গুন্ডা তো নয় যেন মহাগুন্ডা!!
আহানা হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো এসব কি হ্যাঁ??হাত ছাড়ুন আমার,মিষ্টিকে পড়াতে হবে,১দিন পড়াই নাই আমি
.
১০মিনিট বাকি এখনও
.
মানে?কি করবেন আপনি?১০তলায় নিয়ে যাচ্ছেন কেন আমাকে?আমার হাত ছাড়ুন বলে দিচ্ছি খুব খারাপ হয়ে যাবে
.
কেন?চড় মারবে?মারো
.
শান্ত গাল এগিয়ে নিতেই আহানা পিছিয়ে গেলো
১০তলা এসে গেছে শান্ত লিফট থেকে বেরিয়ে আহানাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলো
.
হাত ছাড়ুন!বাঁচাও বাঁচাও কেউ আছো!
.
তোমাকে আমি ১০তলা থেকে ফেলে দিব এখন
.
আহানা চোখ বড় করে ভাবলো মজা করার জায়গা পায় না নাকি
শান্ত আহানাকে টেনে ছাদের শেষ সীমানায় নিয়ে এসেছে,এবার আহানার সত্যি সত্যি ভয় করছে খুব
না জানি ফেলে দেয় আমাকে
.
হুম কাল রাতে কি বলছিলা যেন?রিপিট করো তো
.
না কই,কিছু বলিনি তো
.
তাই?
শান্ত আহানার দুকাঁধ ধরে ওকে ছাদের থেকে বাইরে শূন্যে নিয়ে গেলো ওর অর্ধেক বডি
আহানা চিৎকার দিয়ে বললো আর জীবনেও বলবো না “আপনার কি”,এটা বলবো না সত্যি,ছেড়ে দেন
.
ছেড়ে দিব?
.
না না,আই মিন ফালাইয়েন না আমাকে
.
সরি বলো
.
আচ্ছা সরি
.
আবার!

আহানা বিরক্তি নিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে
শান্ত একটু ঝাঁকাতেই আহানা ভয়ে শান্তর টি -শার্ট খাঁমছে ধরে এগিয়ে কাছে চলে আসলো
চোখ বন্ধ করে বললো সরি সরি আর বলবো না,মাফ করে দেন আমাকে😖
শান্ত অবাক হয়ে আছে,আহানা এভাবে কাছে চলে আসবে তাও শার্ট খাঁমছে ধরে এটা সে ভাবেনি,আহানার এই কাজে মূহুর্তেই শান্তর মুখের রাগ ক্রোধ কমে গিয়ে কেমন একটা অনূভুতির প্রস্ফুটন ঘটলো
আহানা চোখ খুলে দেখলো শান্ত ওর দিকে কেমন করে যেন চেয়ে আছে
আহানা টি -শার্ট ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলো,তারপর দেরি না করে চলে আসলো ওখান থেকে
শান্ত রোবটের মত এখনও সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে,এটা কেমন অনুভূতি হচ্ছে,শরীরের শিরায় শিরায় কাঁপা কাঁপি,বুকটা ধরফর ধরফর করে যাচ্ছে,মেয়ে মানুষের ছোঁয়ায় এত শক্তি থাকে যে রাগ ও কমিয়ে দিতে পারে?
এতদিন কথাটা বিশ্বাস করতাম না এখন করতে বাধ্য,কারন এটা আমার সাথেই ঘটেছে তাও কিছুক্ষন আগে
আহানা তো আল্লাহর নাম দিয়ে লিফটে না উঠেই সিঁড়ি দিয়ে দৌড় দিলো মিষ্টিদের বাসায়
শান্ত রোবটের মত হেঁটে হেঁটে রুমে ঢুকে ধপ করে খাটের মাঝখানে বসে পড়লো
বিছানা হাতিয়ে সিগারেট একটা খুঁজে নিলো তারপর পকেট থেকে লাইটার নিয়ে সেটা দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে মুখে দিলো
টিক টিক টিক ৭টা বাজে
শান্ত এই এক ঘন্টায় ৪টা সিগারেট খেয়েছে,৫তম টা মুখে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে
আহানা এখন লিফটে নিশ্চয় নাকি সিঁড়িতে,মনে হয় না আজ আর লিফটে উঠবে
আহানা বিল্ডিং থেকে বের হতেই একটু থেমে উপরের দিকে তাকালো,শান্ত সিগারেট খাচ্ছে আর ওর দিকে গুন্ডা লুক নিয়ে চেয়ে আছে
আহানা মনে মনে বললো বেয়াদব,ইতর,খাডাস,অসভ্য
.
শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই আহানা তাকে গালি দিচ্ছে,চোখ মুখের expression দেখেই বোঝা যায় যে সে গালি দিচ্ছে
তাও যেনো তেনো না!! হাই লেভেলের চিপ গালি
সিগারেটটা শেষ ততক্ষণে,শান্ত হাত বাড়িয়ে নিচে ফেলে দিলো সেটা
আহানা চোখ বড় করে সরে দাঁড়ালো,সিগারেট এসে একদম ওর সামনে পড়লো
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেলো ওখান থেকে,ইচ্ছে করতেসিলো পা দিয়ে মাড়াই দিই,কিন্তু না পরে আবার আমাকে একা পেলে ছাদ থেকে ফেলে দিবে,এরকম সাইকোর সাথে না লাগাই ভালো হবে আমার জন্য
.
বাসায় ফিরে ব্যাগটা রেখে রান্নাঘরে গেলো আহানা
কালকের বেগুন ৪টার মতন আছে,আলু আছে,চাল আছে
কি খুশি আহানা,ভাবতে লাগলো কতদিনে শেষ দিবে
বেগুন তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে,পোকায় ধরবে তাই সে একটা বেগুন কেটে রাখলো ভাজি করবে সেটা দিয়ে খাবে আজ
১টা বেগুনকে ৫টুকরা করলো,২টুকরা দিয়ে এখন খাবে ভাত দিয়ে
বাকি ৩টুকরা রাতে খাবে,তাহলে বাকি আর যে ৩টা বেগুন আছে সেগুলো কাল,পরশু আর তার পরেরদিন ও যাবে
ব্যাস আগামী ৩দিনের মেনু ডান
এরপরে আলু ভেজে কদিন খাবো,তারপর পেঁয়াজ দিয়ে চালাবো,এক মাসের বাজার করে দিসে বান্দরটা
আমি এগুলাও নিতাম না কথা হলো এগুলো তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না,টাকা হলে ফিরাই দিতাম
বেগুন ভেজে ভাত রেঁধে খেয়ে নিলো তারপর রেডি হয়ে বের হয়ে হাঁটা ধরলো ভার্সিটির দিকে
গেইট দিয়ে ঢুকতেই সবার আগে চোখে পড়লো শান্তকে
বটগাছটার নিচে বসে আছে দলবল নিয়ে,তার চোখ আহানার দিকে
উফ!গন্ডার একটা,ছাদের কথা মনে আসলেই এখনও ভয়ে গা শিউরে উঠে আমার
আহানা চোখ নামিয়ে ক্লাসরুমে চলে গেলো
.
কি ভাই শান্ত,সামথিং সামথিং?
.
নাথিং!সূর্য!

একজন বোরিং স্যার ক্লাস করতেসে,কেউ ফোন টিপছে লুকিয়ে, কেউ গসিপ করছে,শুধু আহানা মনোযোগ দিয়ে শুনতেসে স্যারের কথা,পড়ালেখা নিয়ে আহানা বেশ সিরিয়াস
.
স্যার অবশেষে পড়িয়ে গেলেন,ব্রেক টাইম শুরু
.
আহানা চল ফুচকা খাবো
.
তুই যা আমি খাব না
.
আরেহ চল,নওশাদ খাওয়াবে
রুপা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটির বাইরে,রোডের পাশে ফুচকা আলা
রুপা আহানাকে নিয়ে টুল টেনে বসলো,রুপার পাশে নওশাদ এসে বসেছে,আহানা ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খেয়াল করলো ওর পাশেও কেউ বসেছে,ঢোক গিলে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে একটু সরে বসলো
সবার হাতে হাতে ফুচকাআলা ফুচকার প্লেট দিয়ে দিলেন
আহানা একটা মুখে দিয়ে শান্তর দিকে তাকালো
সে কিছুটা রহস্যময় চেহারায় চেয়ে আছে ফুচকা গুলোর দিকে,আগে কোনোদিন ফুচকা খায়নি সে,নওশাদ বললো আহানা আর রুপাকে ফুচকা খাওয়াবে আহানার কথা শুনে সে এসেছে,কথা হলো গিয়ে ফুচকার প্রতি তার interest নেই আর খেতে কেমন কে জানে
আহানা শয়তানি হাসি দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে
.
আহানা!
.
কি?
.
এই মটকার ভিতরে ওগুলা কি?আই মিন টেস্ট কেমন?ঝাল হবে?নাকি মিষ্টি

আহানা দুষ্টুমি করে বললো খুব মিষ্টি,গোলাপজামের মতো একদম
শান্ত হেসে দিয়ে গপাগপ একসাথে দুইটাই মুখে দিলো
ঝালের চোট যখন ধরলো চোখ বড়করে আহানার দিকে তাকালো সে,চোখ টুকটুকে লাল রঙ ধারন করেছে,চুপচাপ আহানার দিকে তাকিয়ে বসে আছে সে
শান্তর এমন অবস্থা দেখে আহানা তার হাত থেকে প্লেটটাই রেখে দিলো
শান্তর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে অনবরত,আহানার দিকে তাকিয়ে বাকি ফুচকা গুলো খেয়ে যাচ্ছে সে
শেষেরটা খেতে যেতেই নওশাদ হাত থেকে নিয়ে নিলো
.
শান্ত এটা কি করতেছিস তুই??তোরে বলসি না জাস্ট একটা খাবি,তোর ঝালে এলার্জি
নওশাদ পানির বোতল এনে শান্তর পিঠ ডলে পানি খাইয়ে দিলো
শান্ত নাক মুখ খিঁচে চোখ মুছতে মুছতে পানি খেলো
আহানা অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে
সে জানতো না শান্তর ঝাল খেলে সমস্যা হয়
শান্ত পানি সব শেষ করলো তাও ঝাল যাচ্ছে না তার,বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে
আহানা চিন্তিত হয়ে উঠে গিয়ে ফুচকা আলার টক বানানোর চিনি এক চামচ এনে শান্তর গাল টিপে মুখে ঢুকিয়ে দিলো
শান্তর মুখের ঝাল এবার একটু কমে এসেছে
আহানা ব্রু কুঁচকে ব্যাগ নিতে নিতে বললো ঝাল খেতে জানে না আবার ঝাল খেতে আসে,ঢং
কথাটা বলে আহানা চলে গেলো সেখান থেকে
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতেসে বাচ্চাদের মত,ছোট বেলা থেকেই ঝাল খেতে পারে না সে,ঝাল একদম কম খায়,বেশি খেলেই দম বন্ধ হয়ে চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে তার
২টার দিকে ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলো
আহানা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজতেসে
.
আমাকে খুঁজতেসো?
.
আহানা চমকে পিছনে তাকালো,তারপর বললো হুম

কেন?
.
সরি,আমি জানতাম না আপনি ঝাল খেতে পারেন না,জানলে বলতাম না এটা মিষ্টি
.
ইটস ওকে
.
শান্তর ইটস ওকে শুনে নিজেকে নির্দোষ মনে করে আহানা চুপচাপ হেঁটে চলে গেলো সেখান থেকে
.
সব টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরে ঘর পরিষ্কার করছে সে
হঠাৎ বিছানার তোষকের নিচে সেই ২হাজার টাকা পেলো যেটা সে শান্তকে দিয়ে চলে এসেছিল
ফোনে তো টাকাও নেই,কল করবো কি করে,আচ্ছা ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নিই,তাহলেই তো হয়
ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নিয়ে শান্তকে ফোন করলো সে
.
শান্ত ঘুমাচ্ছিলো তখন,সন্ধ্যা ৭টা বাজে
.
হহহহহহুমমমম,কে?
.
আমি
.
আমি কে?
.
আহানা!
.
ওহ তুমি?কি হয়েছে?
শান্ত চাদর সরিয়ে উঠে বসে লাইট জ্বালালো রুমের
.
আমাকে ২হাজার টাকা ফেরত দিলেন কেন?আপনি আমার বাসা ভাড়ার ৬হাজার টাকা শোধ করে দিসেন,আমি ২হাজার টাকা দিলাম,বাকি ৪হাজারও দিয়ে দিব,আপনি আবার ২হাজার ফেরত দিতে গেলেন কেন?

শুনো!!তুমি আমাকে যতবার টাকাটা দিয়ে যাবা ততবার আমি ফেরত দিয়ে আসব,এই টাকা আমি নিব না মানে নিব না,আর হ্যাঁ আর একদিন ফেরত দিতে আসলে ছাদ থেকে সত্যি সত্যি ফেলে দিব তোমাকে
.
আপনি খুব খারাপ একটা লোক,খুব খারাপ!
আহানা লাইন কেটে ফোন বিছানার উপর ছুঁড়ে মারলো,এই টাকা আমি কিছুতেই নিব না
পরেরদিন ভোরবেলায় আবার বের হলো মিষ্টিদের বাসার উদ্দেশ্যে,টাকাগুলো ও সাথে নিলো,আজ সেগুলো ফেরত দিবে সে
শান্ত দরজা খুললো জগিং করতে যাবে,দরজা খুলে হাতে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ি নেই,নিজের রুমে গিয়ে খুঁজলো তাও পেলো না,নওশাদ সূর্যর রুমে গেলো খুঁজতে
আহানা দরজা খোলা পেয়ে উঁকি দিলো ভেতরে
এটাই সুযোগ,বেয়াদবটা আমাকে দেখার আগে টাকাটা রেখে পালাবো
ওটা মনে হয় উনার রুম,সেখানেই রেখে আসি বরং!
আহানা পা টিপে টিপে শান্তর রুমে ঢুকলো
ইয়া বড় একটা রুম
তার বাসার সব রুম মিলালেও এই একটা রুমের সমান হবে না
রুমের মাঝখানে বিছানা,সেটা দেখেই মন ভালো হয়ে যাবে এত সুন্দর,আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পুরো রুমটা কমলা রঙের উপর করা,দেয়াল কমলা রঙের,বেডশিট থেকে শুরু করে কার্পেট ও কমলা রঙের
আহানা দেখতে দেখতে রুমটার মাঝখানে চলে আসলো
শান্ত ঘড়ি পরতে পরতে বের হয়ে যেতে নিতে থেমে গেলো,এটা কে আমার রুমে?
এগিয়ে এসে দেখলো আহানা শান্তর রুমটা ড্যাবড্যাব করে দেখে যাচ্ছে
তারপর টাকাটা বালিশের তলায় রাখলো সে
রেখে পিছন ফিরতেই হঠৎ করে শান্তকে দেখে পিছিয়ে গিয়ে দুম করে খাটে বসে গেলো ভয়ে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে বললো তোমাকে মানা করি নাই এই টাকা ফেরত দিতে আসবা না!!
.
তো?আপনার টাকা আমি মুফতে কেন নিব?

তোমাকে আল্লাহ কি মাটি দিয়ে বানিয়েছে??আজব মেয়ে তুমি
খালি ভাত আর নুন খেয়ে খেয়ে মাথা গেছে তোমার!সেধে টাকা দিয়ে হেল্প করতে চাচ্ছি আর তুমি কিনা বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছো!মুফতে নিবা না তো?ঠিক আছে
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাথরুমের দিকে
.
এই এই কি করতেসেন আপনি,হাত ছাড়ুন আমার,বাঁচাও বাঁচাও
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বললো চুপ করো
তারপরও যখন আহানা চুপ হচ্ছে না তখন আহানার মুখ চেপে ধরলো সে
.
চুপ!একদম চুপ,আমি কি তোমাকে রেপ করবো নাকি?হাত ধরলেই এত চেঁচাও কেন সবসময়?
.
তো কি করবেন?বাথরুমে নেন কেন?
.
শান্ত দরজা খুলে এক পাহাড় ময়লা জামা দেখালো,এগুলা ধুয়ে দাও,বিনিময়ে ২হাজার টাকা নাও
.
আমাকে কি আপনার বুয়া মনে হয়?আমি বুয়াগিরি করে টাকা নিব না
আহানা চলে যেতে নিতেই শান্ত হাত টেনে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরলো ওকে
.
আহানা চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে রেখেছে,সিনেমায় দেখেছিল নায়করা এমন করে কিস করে নায়িকাকে,তা ভেবে আহানার ভয় করছে
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে ব্রু জোড়া নাচিয়ে বললো তোমার আসলে কি মনে হয়?
তোমার মত বোকা,শয়তান বেয়াদব মেয়েকে আমি কিস করবো?আমি?শাহরিয়ার শান্ত?ভেরি ফানি,হয় কাজ করে টাকা নাও নয়ত এমনি এমনি নাও,আমার কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই,কিন্তু তোমায় টাকা নিতেই হবে
.
আহানা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো আমি টাকা নিব না,বাই
কথা শেষ করে আহানা হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো রুম থেকে
শান্তর মেজাজ গেলো গরম হয়ে,উফ এই মেয়েটা এমন কেন!!!
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে মিষ্টিদের বাসায় ঢুকলো,যাক বাবা টাকাটা রাখতে পেরেছি এটাই অনেক!
.
হ্যাঁ বাবা,পরের সপ্তাহে ইনশাল্লাহ আমি তোমার কাছে থাকবো,ঈদের আগের দিনই রওনা হবো,ওকে বাই,নাহ বেশিদিন থাকবো না,পরের মাস থেকে আবার পরীক্ষা,হুম আচ্ছা
শান্ত কথা বলতে বলতে বাইকে উঠে ভার্সিটির দিকে চলে গেলো
আহানা বাসায় ফিরে রান্নাবান্না সেরে খেয়ে নিয়ে ভার্সিটিতে আসলো
.
আহানা!

কি এশা?আমাকে ডাকলে?
.
তোমার ওড়নায় এটা কি গিট্টু দিয়ে রাখসো?
.
আহানা চমকে ওড়না হাতে নিয়ে গিট্টু দেখে অবাক হলো,কিসের গিট্টু এটা,আমি তো দেই নাই
ভাবতে ভাবতে গিট্টুটা খুললো সে,ভিতরে ২হাজার টাকা
উফ!!
এই বান্দরটা আমার নাগাল পেলো কই,আসার পর থেকে তো দেখলাম না একবারও
আবার আমার ওড়নায় গিট্টু বাঁধলো কখন!
শান্ত বাইকে বসে দাঁত কেলিয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে
এটা দেখে আহানার গা জ্বলে যাচ্ছে,ইচ্ছে করছে গিয়ে চুল ছিঁড়ে দিই বেয়াদবটার
চলবে♥