প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 22
মোহনগঞ্জ এসে ট্রেন থামলো,আহানা বাবুটাকে টাটা দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে,পাক্কা ২বছর পর সে আবার মোহনগঞ্জে এসেছে
.
জ্বি দাদি ফোন নাম্বার সেভ করেছি,অবশ্যই কল করবেন আমাকে,আমিও করবো
.
কার গলা এটা,ঐ বাঁদরটার?
আহানা পিছন ফিরে তাকালো,এত এত মানুষের ভীড়ে শান্তকে দেখতে পেলো না সে
মনে হলো শান্তর গলা শুনলাম,ও এখানে কেন আসবে,আমিও না!
আহানা একটা রিকসার খোঁজে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
শান্ত কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,গান চলতেসে আর সে এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকসা খুঁজতেসে
ওমা একটা রিকসাও নেই,আমাকে কি হেঁটে যেতে হবে নাকি?
.
আহানা হাঁটা ধরলো রিকসা না পেয়ে
শান্ত ও অবশেষে রিকসা না পেয়ে হেঁটে চললো
কাঁধে একটা ব্যাগ আর হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে
মোহনগঞ্জের ফ্ল্যাটফর্ম থেকে বাম পাশে যে রোড গেছে তা থেকে ক্ষেতে নামতে হয় সেখান দিয়ে একটা ক্ষেত পার হলেই মেইন রোড
আহানা তার হাতের ব্যাগটা মুঠো করে ধরে নামলো ক্ষেতে
শান্ত রিকসার খোঁজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে সেও ক্ষেতে নামলো,আশেপাশে কেউ নেই,শুধু সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে
আহানা নতুন জামা পরে এসেছিলো আজ তাই শান্ত ওকে ঠিক চিনতে পারলো না তবে চুল দেখে শান্তর কেমন জানি মনে হলো এটা আহানা,আর হাত ঝুলিয়ে হাঁটার স্টাইল দেখেও আহানা মনে হচ্ছে
শেষে কনফিউশন দূরে করতে শান্ত চিৎকার দিয়ে বললো আহানা!!!
.
আহানা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো,পিছন ফিরে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত ও চমকে গেলো আহানাকে দেখে
.
আপনি!!
.
তুমি??এখানে?
.
আপনি এখানে কি করতেসেন?আমাকে ফলো করতে করতে এতদূর চলে এসেছেন?
.
আজব তো!তোমাকে ফলো করবো কেন আমি?আমি আমার বাসায় যাচ্ছি ঈদের ছুটি পেয়ে
.
তো?আমিও তো যাচ্ছি ঈদের ছুটি পেয়ে
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার পাশে এসে দাঁড়ালো
.
ইয়া আল্লাহ!!
এই বাঁদরটাকে তুমি সবসময় আমার সাথেই কেন রাখো!
মেইন রোডে উঠে আহানা শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালো
শান্ত সানগ্লাসটা পরে জ্যাকেট টেনে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলো
তারপর একটা ভাব নিয়ে বুক ফুলিয়ে ডান পাশের রোডের দিকে চললো
.
হুহহহ,বেয়াদবটার ঢং দেখলে গা জ্বলে যায় আমার
আহানা চোখ রাঙিয়ে বাম পাশের রোডটার দিকে চলে গেলো
♣
বাবা?সেই সকাল থেকে বাগানে বসে আছো,বাসায় আসো নাস্তা করে যাও
.
মিতু জোর করিস না,আজ কতটা দিন পর শান্ত আসতেসে আমি ওর জন্য বাইরেও অপেক্ষা করতে পারবো না?কি বলিস তুই
.
থাকো তাহলে,মা বকলে আমি বলবো তুমি আসতে চাও না
কথাটা বলে মিতু চলে গেলো বাসার ভেতরে
শান্ত বাসার গেট খুলে ভিতরে পা রাখতেই কেউ একজন এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে
গায়ের গন্ধ পেয়ে শান্ত চোখটা বন্ধ করে ফেললো,বাবা♥
.
কেমন আছিস
ভালো,তুমি কেমন আছো সেটা বলো
.
তোকে দেখে খুব ভালো আছি আমি
আয় ভেতরে আয়
বাবা শান্তর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন
.
মা,মিতু আর সায়ন কোথায়?
.
সায়ন ঘুমাচ্ছে,মিতু আর ওর মা বাসায়,চল নাস্তা করবো তোর সাথে
.
এখনও খাও নাই কেন?সকাল ১০টা বাজে
.
না আমি আমার ছেলের সাথে খাবো,চল
.
শান্ত মুচকি হেসে বাসার ভিতরে ঢুকতেই মুখো মুখি হলো তার সৎ মা রেণুর সাথে
উনি শান্তকে দেখে মোটেও খুশি হোন নি,তারমুখে বিরক্তি ছিল এতক্ষণ,তাও মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন এসেছো তাহলে!
শান্ত হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে কাছে এসে সালাম দিলো
উনি সালাম নিয়ে চুপ করে থেকে বললেন রাসেল?রাসেল!!গরুকে ঠিকমত ঘাস দিচ্ছো তো?
উনি ব্যস্ততার দোহায় দিয়ে চলে গেলেন সামনে থেকে
শান্ত মুখটা ছোট করে ভাবলো পাশে বাবা দাঁড়িয়ে আছে বাবার কথা ভেবে হেসে দিয়ে বাবার হাত ধরে ডাইনিং এ গিয়ে বসালো
খালা!খালা,খাবার দিয়া যাও,আমি আর আমার বাবা খাবো,জলদি দাও
.
কে এরকম ছাগলের মত চিৎকার করে এত সকাল সকাল!
.
শান্ত থেমে গিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো,সায়ন নামতেসে বিরক্তি নিয়ে,শান্তকে দেখে ব্রু কুঁচকে হেসে দিয়ে বললো ওহহহ তুমি?আমি ভাবলাম ছাগল ডাকতেসে
.
সায়ন!!!
সায়ন বাবার ধমকে মুখটা বাঁকিয়ে আবার উপরে চলে গেলো
সায়ন মিসেস রেণুর আগের সংসারের ছেলে,মিতু এই সংসারের,মানে শান্তর বোন
.
মিতু রুটি নিয়ে এসে ডাইনিং এ রেখে বললো শান্ত ভাইয়া!
.
শান্ত সিঁড়ির থেকে চোখ নামিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে হাসলো,মিতু!কেমন আছো?
.
ভালো,তুমি?
.
ভালো!
খালা রান্না করতেসে তাই আমি নিয়ে আসলাম
.
বাবার সাথে বসে খাওয়ার সময় এসব ভুলে গেলো শান্ত,হেসে হেসে খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে ফিরে আসলো
সারাটা রুম জুড়ে শুধু মায়ের ছবি
ছবিগুলোতে হাত বুলাতে গিয়ে শান্তর চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো
মা চলে যাওয়ার ১০টা বছর কেটে গেছে,মায়ের মৃত্যুর পরপরই একটা কেলেঙ্কারির জেরে বাবা রেণু আন্টিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়,তারপর তাদের কোল জুড়ে মিতু আসে,মিতুর বয়স এখন ৭বছর
মিতু আমাকে দেখতে পারে তবে একজন বোনের তুলনায় কম,সে তার মায়ের মত
শান্ত মায়ের একটা ছবি নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো
.
আসবো?
.
হুম বাবা আসো,বলতে হয় নাকি আবার
.
কি করিস?
হুমমম জানতাম,আসলেই মায়ের ছবি নিয়ে বসবি
.
কি আর করবো বাবা,আমার লাইফে তোমরা দুজন ছাড়া আর কে আছে
.
বিকালের দিকে তোর মায়ের কবর দেখে আসিস
.
হুম
.
বাবা শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন
.
শান্ত মায়ের ছবিটা আবারও ওয়ালে টাঙিয়ে রুম থেকে বের হলো,সায়ন উচ্চস্বরে গান শুনতেসে
মাথা ধরে আছে,কফিও খাইনি
শান্ত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো,হঠাৎ খালা দৌড়ে এসে শান্তর হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন
উনাকে শান্ত খালা বলে ডাকেন,কারন মা যেদিন এই বাড়িতে প্রথম এসেছিল সেদিন সাথে করে উনাকে এনেছিলেন,উনি মাকে কাজে সাহায্য করতেন,আজ এতটা বছর ধরে উনি এখানে,মালির বউ,আমাদের বাগানের যে মালি আছে টুটুল মিয়ার বউ তিনি,শান্তকে খালা অনেক ভালোবাসেন
ছলছল চোখে শান্তর হাত ধরে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি
শান্ত মুচকি হেসে উনাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো
.
খালা কেঁদো না তো,আমাকে এত ইমোশনাল করবা না বলে দিচ্ছি
হ বাবা,তুমি আইছো,আমি অনেক খুশি হয়েছি বাবা
শান্ত হেসে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উনি বললেন বাবা সোফায় গিয়ে বসো আমি তোমার কফি আনতেসি
উনি রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন এক দৌড়ে
শান্ত একটা ম্যাগাজিন নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো
মিতু সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো
মিতু মেয়েটা অনেক ভদ্র,বেশি মিশতে চায় না,আর ওর মা ওকে যা বলে তাই করে,হয়ত উনি মানা করেছেন আমার সাথে যেন কথা না বলে
খালা কফি এনে শান্তর সামনে রেখে চলে গেলেন রান্নার কাজে
শান্ত কফির মগটা নিয়ে বাগানের দিকে গেলো,আগে যেসব ফুল ছিল সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই এখন নেই,হয়ত মরে গেছে,নতুন ও আনা হয়েছে
রেণু মায়ের ফুলের খুব শখ তাই হয়ত তার নাম রেণু,ফুলের রেণু
কফি শেষ করে একটা ফুল ছিঁড়তে যেতেই রেণু ছাদে থেকে বললেন শান্ত!ফুলে হাত দিও না,ওটা আমার শখের গাছ
শান্ত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো সরি
♣
আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে আশ্রমের গেটের দিকে চেয়ে আছে,কতদিন পর এসেছে সে
গেট খুলে ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে এগিয়ে গেলো
কতটা বদলে গেছে সব,চেনাই যাচ্ছে না
আশ্রমের ভিতরে আসতেই আহানার থেকে ২/৩বছরের ছোট হবে এমন কয়েকটা মেয়ে এসে আহানার হাত টেনে ধরলো
সবার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠে আছে
আহানাও খুব খুশি হলো তাদের দেখে,এদের সাথে কত খেলেছে সে
সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো আহানা
সবাই খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে ওকে পেয়ে
দূর থেকে একজন আহানা বলে এগিয়ে আসলেন
আরিফ উদ্দিন,উনি সালেহা বেগমের গত হওয়ার পরই ম্যানজারের পদ পেয়েছেন
উনি আহানাকে চিনতে পেরে আহানার মাথায় হাত রেখে বললেন কেমন আছো?
.
ভালো আছি স্যার😊,আপনি কেমন আছেন?
.
ভালো আছি কোনোরকম, ভালো করেছো এখানে এসে,অনেকদিন তোমাকে দেখি না
আহানা হেসে দিয়ে মেয়েগুলোকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো
দুপুরের খাবার খেয়ে শান্ত হাঁটতে বের হয়েছে
এখানের একটা আশ্রম আছে নাম “শান্তি নিবাস”
শান্তর মায়ের নামের আশ্রমটা,উনার নাম ছিল শান্তি রহমান
উনার অনাথ বাচ্চাদের প্রতি দূর্বলতা কাজ করত অনেক,তাই তার কথাতেই শান্তর বাবা এই আশ্রমটা বানান,আশ্রমটা বানানোর পরই শান্তর মায়ের নামে লিখে দেন
এরপর থেকে শান্তর মা নিজের হাতে এই আশ্রমের প্রতিটা কোণা সাজিয়েছেন
উনি মারা যাওয়ার আগে বলে গেছিলেন উনার কবর যেন আশ্রমের ভেতরে দেওয়া হয়
শান্ত আশ্রমটার ভিতরে ঢুকতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার,কতটাদিন পর মায়ের সাথে দেখা করবে সে
হাতে গোলাপি চুড়ি আর রজনীগন্ধা নিয়ে আশ্রমের আমগাছটার পিছনের দিকে গেলো শান্ত
মায়ের কবরের চারপাশ দিয়ে টাইলস করা বাউন্ডারি
গেটটাতে তালা দেওয়া
আরিফ উদ্দিন শান্তকে দেখে দৌড়ে এসে গেটের তালা খুলে দিলেন,শান্তকে সালাম দিলেন
শান্ত ব্রু কুঁচকে তাকালো উনার দিকে
উনি জিহ্বা কামড় দিয়ে বললেন অভ্যাস কি করবো বাবা তারপর চলে গেলেন চেয়ার আনার জন্য
শান্ত বাউন্ডারির ভিতরে ঢুকে কবরটার কাছে গিয়ে মাটিতে বসে গেলো
গোলাপি চুড়িগুলো কবরের উপরে রাখলো সে,তারপর রজনীগন্ধা ফুল কবরের পাশে রেখে দিলো
কয়েকটা শুকনো মেহগনি গাছের পাতা পড়ে আছে সেগুলো হাত দিয়ে ফেলে দিলো
কবরটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে দিলো শান্ত
মা,ফিরে আসো না আমার কাছে,আমি যে তোমাকে ছাড়া গোটা দুনিয়া অন্ধকার দেখি মা,শুনতে পাচ্ছো?মা কথা বলো না কেন!
কেন চলে গেলো আমাকে রেখে,আমাকেও নিয়ে যেতে,কেন আমাকে এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় একা রেখে গেলো বলো,কি দোষ করেছিলাম আমি মা!মাগো একবার তোমার শান্তর মাথায় হাত বুলাতে ফিরে আসো না মা!
.
আহানা পুকুরে নেমেছিল মুখ ধোয়ার জন্য
কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি মুখটা ভালো করে মুছে পুকুর ঘাট থেকে উঠে এসে কবরস্থানের দিকে এগিয়ে গেলো
আরে এটা তো শান্ত,উনি এখানে কি করে?
আহানা আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালো
শান্ত কবর থেকে মাটি নিয়ে হাতে ঘষে লাগাতে লাগাতে কাঁদতেছে
আহানা কবরের দিকে চেয়ে দেখলো কবরের উপর গোলাপি চুড়ি আর রজনীগন্ধা
এই কবরটা তো যতদূর জানি এই আশ্রমের মালিকের কবর,তার নাম শান্তি রহমান,উনার সাথে শান্তর কি সম্পর্ক??
.
শান্ত কবরে হাত রেখে নিচু হয়ে সেখানে মাথা রাখলো আর কাঁদতে কাঁদতে বললো মা দেখো তোমার ছেলে কাঁদতেসে মা,দেখো না,আমার চোখ মুছতে আসবে না?
মা?তার মানে উনার ছেলে শান্ত?শান্তর মা মারা গেছেন!আমি তো জানতাম ও না,এর আগে তো শান্তকে আশ্রমে দেখলাম না,হয়তবা দেখেছি মনে নেই,আমি তো এই কবরের দিকে বেশি আসতাম না কখনও,আমার ভয় করতো এখানে জঙ্গল বলে তাই হয়ত শান্তকে এর আগে এই আশ্রমে দেখিনি
আহানা শুকনো পাতার উপর দাঁড়িয়েছে তাই খসখস শব্দ হচ্ছে
শব্দ পেয়ে শান্ত পিছন ফিরে তাকালো
আহানাকে দেখে চোখ মুছে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো শান্ত
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো সরি ডিস্টার্ব করার জন্য
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
তুমি এখানে কি করতেসো?
.
আমি তো!এমনি
.
ওহ
.
আপনার মা উনি?
.
হুম
.
আপনাকে কখনও কষ্ট দিয়ে থাকলে সরি,আমি বুঝি মা হারানোর কষ্ট,মা হারা কাউকে কষ্ট দিয়ে গুনাহ করতে চাই না
.
নাহ,যাদের মা বাবা আছে তারা বুঝে না মা /বাবা হারানোর কষ্ট,কোনোদিন ও বুঝে না,কিভাবে বুঝবে?যেটা তাদের আছে সেটার অনুপস্থিতিতে কেমন লাগে সেটা তারা বুঝবে না,আমাকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার নেই,যাও এখান থেকে,আমাকে একা থাকতে দাও!
.
আহানা চুপ করে থেকে চলে গেলো
.
শান্ত মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,সন্ধ্যা হয়ে গেছে
অন্ধকার ও নেমে এসেছে
.
শান্ত বাবা?বাসায় যাবা না?সাঁঝবেলা এখানে থাকা ঠিক না বাবা
.
যাচ্ছি
.
আরিফ উদ্দিনের কথায় শান্ত চোখ মুছে বেরিয়ে গেলো
তারপর আশ্রমের ম্যানেজারের রুমে এসে কাগজ পত্র দেখতেসে সে
বাবা বলেছে আসার সময় এসব দেখে আসতে
আরিফ উদ্দিনের সাথে কথা বলে নিয়ে আশ্রমটা ঘুরতে ভিতরে গেলো সে
আহানা আনমনে পুকুরঘাটে বসে চোখের পানি ফেলতেছে,এখন না সেই তখন থেকে যখন শান্ত বলেছে যাদের আছে তারা জানে না”” না থাকার কষ্ট!””
সে তো জানেই না আমার কেউই নেই আমি তো আপনার চেয়েও ভালো বুঝি আপনজন কেউ না থাকার কি ব্যাথা,যন্ত্রনা!
অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক,এই পুকুরঘাটটা আগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে,গাছগাছালিতে ভূতুরে বানিয়ে দিয়েছে কেমন!
আহানা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আওয়াজ
পায়ের কাছে নরম কিছু লাগলো আহানার কাছে,দেখতে যাওয়ার আগেই সেটা কামড় বসিয়ে দিলো তার পায়ে
আহানা এক চিৎকার দিয়ে পা ধরে ২/৩টা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসলো
আশ্রমের লাইটের আলোয় একটু একটু দেখতে পেলো এক হাত লম্বার চেয়েও বেশি বড় একটা সাপ চলে যাচ্ছে,পুকুরের উপরের ঘাটে কিভাবে উঠলো এটা??
.
শান্ত আহানার চিৎকার শুনতে পেয়ে আশ্রম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো
অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না
.
আহানা?
এত অন্ধকারে ও কোথায়,চিৎকার দিলো কেন,কেনো বিপদ হয়নি তো!!
.
আহানা ব্যাথায় মনে হয় মরে যাবে
শান্ত আশ্রমের গেটের সামনে এসে পুরো আশ্রমের যতগুলো বাতি আছে মোট ১৪টা বাতি সে জ্বালিয়ে দিলো
আহানার আর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না
আহানা!!আহানা??কোথায় তুমি?
.
কি হলো বাবা?আহানাকে খুঁজছো কেন?কি হয়েছে?
.
ওকে দেখেছেন কোথাও?
.
ওকে তো মনে হয় পুকুরঘাটে দেখেছিলাম তাও বিকালবেলায়,এখনও থাকার তো কথা না
.
শান্ত এক দৌড়ে পুকুরঘাটের দিকে গেলো
আহানা পা চেপে ধরে উঠার চেষ্টা করতেসে
শান্ত তড়িগড়ি করে নিচে নেমে আহানার দিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়লো
.
কি হয়েছে আহানা?পায়ে কি হয়েছে তোমার
.
আহানার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,বলার চেষ্টা করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
শান্ত চিৎকার দিয়ে বললো ডাক্তার ডাকতে
আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে পুকুর ঘাটের উপরে নিয়ে আসলো
ওকে মাটিতে রেখে বাতির আলোতে আহানার পায়ের দিকে তাকালো,বাতি ছিল লাল রঙের,ঠিকমত দেখতেছে না শান্ত
চিন্তায় তার সারা গা ঘেমে গেছে
জ্যাকেট খুলে ফেললো তারপর সেটা থেকে ফোন বের করে নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে শান্ত আহানার পায়ের উপর ধরলো,সাপের কামড়ের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে
শান্ত আহানার গায়ের থেকে ওড়না টান দিয়ে ছিঁড়ে হাঁটুর নিচে বেঁধে ফেললো যাতে বিষ বেশিদূর যেতে না পারে
বিষাক্ত কিনা কে জানে,আহানার মুখ দিয়ে ফ্যানা তো বের হচ্ছে না তাও ভয় করছে শান্তর
ডাক্তার আসতেসে সাথে আরিফ আঙ্কেল ও
শান্ত নিজের জ্যাকেটটা আহানাকে পরিয়ে দিলো কারণ ওর ওড়না ছিঁড়ে পা বেঁধেছে সে
ডাক্তার দেখে বললেন না বিষাক্ত সাপ নয় তবে ব্যাথা পেয়েছে সাথে ভয় ও পেয়েছে আর তাই জ্ঞান হারিয়েছে,বিষাক্ত হলে নীল হয়ে যেতো আর নানা লক্ষণ দেখা দিতো,আমি বরং ব্যাথার একটা ইনজেকশান দিয়ে দিচ্ছি জ্ঞান ফিরলে ঔষুধ খাইয়ে দিবেন
শান্ত মাথার ঘাম মুছে আহানাকে কোলে টেনে বসলো সিঁড়ির উপর
ডাক্তার ইনজেকশান বের করলেন
শান্তর মনে হচ্ছে ওকে ইনজেকশান দিবে,ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার
আহানার হাতে ইনজেকশান দেওয়ার সময় শান্ত আহানাকে টেনে সরিয়ে নিলো
না ধরবেন না ওকে,দেওয়ার দরকার নেই এটা
শান্ত বাবা?এটা দিলে আহানার ব্যাথা কমবে,তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে
.
শান্ত আহানার হাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো
আরিফ উদ্দিন হেসে বললেন কি বাবা ভয় করছে নাকি?ইনজেকশন তো আহানা মাকে দেওয়া হচ্ছে আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীরে দিচ্ছে
.
জানি না,ভয় করছে
চলবে♥