প্রেমময় প্রদীপ !! Part- 04
পলকহীনভাবে প্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে সাফা । প্রেম তা বুঝতে পেরে হালকা কেশে উঠলে খানিকটা লজ্জা পেলো সে ।
একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে সে বলল-
আপনি আমার স্বপ্নেও এসেছিলেন ।
-তাই নাকি!
-হ্যাঁ । সত্যি করে বলুন তো কে আপনি?
-প্রেম ।
-থাকেন কোথায়?
-প্রদীপের মাঝে ।
-এতটুকু একটা প্রদীপের মাঝে আপনি থাকেন কি করে! সম্ভব নয় এটি ।
-হ্যাঁ, আমি ওখানেই থাকি । আর প্লিজ আপনি আমাকে আপনি করে বলবেন না । আপনি আমার ম্যাডাম এখন ।
.
সাফা নিজের শরীরে নিজেই চিমটি কেটে মুখে শব্দ করে উঠলো-
আউচ!
.
প্রেম বলল-
কি হয়েছে ম্যাডাম?
-সেদিনের মতো স্বপ্ন দেখছি কিনা যাচাই করলাম । তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছি না!
.
উচ্চশব্দে হাসতে থাকলো প্রেম । এ যেন মন ভোলানো হাসি!
হাসি থামিয়ে প্রেম বলল-
আপনার তিনটে ইচ্ছে পূরণ করব আমি ।
.
এসব স্বপ্নের মতো মনেহচ্ছে সাফার কাছে । সে জানতো, আলাদীনের চেরাগের কাহিনী টাও কাল্পনিক । তবে আজ কি দেখছে সে! সত্যিই তার কাছে থাকা প্রদীপ থেকে কেউ বের হয়ে তিনটে ইচ্ছে পূরণের কথা বলছে! কি করে সম্ভব এটা?
মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে সাফার ।
কি করবে বুঝতে না পেরে তাড়াহুড়ো করে প্রদীপটি হাতে নিলো সে । তিনবার ঘষতেই প্রেম ধীরেধীরে ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে প্রদীপের মাঝে প্রবেশ করলো ।
বিছানার উপরে ধপাস করে বসে পড়লো সাফা । একটু আগে কি ঘটে গেল?
সত্যিই কি তার তিনটি ইচ্ছে পূরণ করবে এই প্রদীপে থাকা প্রেম?
.
.
সারারাত ঘুম হয়নি সাফার । নিজের কাছে প্রদীপটি রেখে, সেটির দিকে তাকিয়ে রাতটি পার করেছে সে ।
সকালে উঠে ওয়ারড্রবের ড্রয়ারে প্রদীপটি সে সামলে রাখলো । বাসার কাউকে কিছু জানালো না । মা বাবা জানলে যদি প্রদীপটি ফেলে দিতে বলে?
তাই এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো সে ।
.
.
কলেজে এসেই তনিমা ও রাইমাকে বলল-
আজ ক্লাস করতে হবেনা । তোরা দুজনি আমার সাথে আমার বাসায় যাবি ।
.
দুজনি একইসাথে বলে উঠলো-
কেনো?
.
গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো তাদের সাফা ।
সবটা শুনে হাসতে থাকলো তনিমা ও রাইমা । রাইমা তো হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে পড়েছে!
এদিকে তাদের অবস্থা দেখে রাগে ফুঁসতে থাকলো সাফা ।
তনিমা তা বুঝতে পেরে হাসি থামাতে ইশারা করলো রাইমাকে ।
রাইমা নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে বলল-
তুই আমাদের সাথে মজা করছিস সাফা । হ্যাঁ আমরা দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, জ্বীনি বের হবে প্রদীপটা থেকে । তাই বলে তুইও…
.
রাইমাকে থামিয়ে সাফা বলল-
আমি সত্যি বলছি ৷ আর প্রদীপ থেকে কোনো দৈত্য আসেনি । এসেছে সুন্দর একটি ছেলে ।
.
তনিমা বলল-
সে কি! ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল দৈত্য?
.
আবারো হেসে ফেললো তারা ।
সাফা বলল-
আমি জানি এটা বিশ্বাস করার মতো নয় । আমি নিজেই করতে পারিনি । তাই তো বলছি তোরা চল আমার সাথে । নিজের চোখে যখন দেখবি তখন বিশ্বাস করবি ।
.
এরই মাঝে আগমন ঘটলো শফিকুল ও তাইফের ।
সাফাকে বলল শফিকুল-
তুমি কিন্তু এখনো কিছু জানাওনি সাফা । আমার বন্ধু তোমার মুখে ভালোবাসি শোনার জন্য ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করতে পারছেনা ।
.
একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ্য করছে তানিশা ।
তানিশা…
এই ক্লাসের মেধাবী, সুন্দরী ও চটপটে মেয়েদের মাঝে একজন ।
নিজে চটপটে হলেও শান্ত স্বভাবের মানুষ তার প্রিয় । তাই ক্লাসের শুরু থেকেই তাইফকে ভালো লাগে তার । ভালোবাসেও বলা যায় ।
যতই চটপটে হোক, ভালোবাসার কাছে মানুষ দূর্বল । তাই ক্লাসের সবার সাথে তেমন একটা না মিশলেও তাইফের সাথে সবসময় নিজ থেকেই কথা বলে সে । কিন্তু এখনো মনের কথা জানাতে পারেনি । মেয়ে বলে হয়তো!
তবে তাইফকে নানাভাবে মুগ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে সে সারাক্ষণ ।
যাতে তাইফই তাকে প্রপোজ করে বসে ।
কিন্তু ইদানীং তাইফের মতিগতি ভালো লাগছেনা তার । তেমন একটা কথাও বলেনা তার সাথে তাইফ ।
ভালোভাবে খবর নিয়ে জানতে পারলো, তাইফ পছন্দ করে সাফাকে ।
সাফাকে শুরু থেকেই অপছন্দ তানিশার । দুজনের মাঝে সবকিছুতেই প্রতিযোগিতা লেগে থাকে । তবে ভালোবাসা নিয়েও যে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, এমনটা ভাবেনি তানিশা ।
সাফার পাশে তাইফকে যেন মানতে পারছেনা সে ।
মনের রাগ মেটানোর জন্য কিছু তো করা প্রয়োজন!
তানিশা ধীরপায়ে তাদের কাছে এগিয়ে এসে সাফার দিকে তাকিয়ে বলল-
পিকনিকের দিনই তোমাকে একটা কথা বলব ভেবেছিলাম সাফা ৷ বাট সুযোগ হয়নি ।
.
সাফা বলল-
কি কথা?
-তুমি পিকনিকে যে ড্রেসটি পরেছিলে না? খুব বেশি বাজে দেখাচ্ছিল তোমাকে । মনেহয়েছে ড্রেসটি অনেক সস্তা । আমি জানি তোমার রুচি খারাপ । পিকনিকের সময় তো অন্তত ভালো একটা ড্রেস পরবে! আমার কাছ থেকেও আইডিয়া নিতে পারতে । প্রয়োজনে আমার থেকে ধার নিতেও পারতে । বডি সাইজও একই আমাদের । তাছাড়া আমরা আমরাই তো!
.
শফিকুল ও তাইফের সামনে এই ধরনের কথা বলা তানিশার উচিত হয়নি । তনিমা ও রাইমা রেগে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনি সাফা বলল-
তোমার কাছে কি আইডিয়া নিব? তুমি যে ড্রেসটি পরেছিলে, ঠিক তেমন একটা ড্রেসটি বছরখানেক আগেই আমি পরে ফেলেও দিয়েছি ।
.
তানিশা ভ্রু জোড়া কুচকে বলল-
অসম্ভব! এটা আমার মামা ইন্ডিয়া থেকে পাঠিয়েছে ।
-ওহ তাই বুঝি! আমি অবশ্য এখান থেকেই নিয়েছিলাম । বিশ্বাস হয়না? এলবামে ছবিও আছে । কাল নিয়ে আসব ।
.
তানিশা আর কোনো কথা না বলে দ্রুত চলে গেল সেখান থেকে ।
শফিকুল বলল-
ভালো শিক্ষা দিয়েছ মেয়েটিকে ।
-উহু! এতটুকুতে কিছু হয়নি । ওকে আরো বড় একটা শিক্ষা দেয়া উচিত ।
.
তানিশা ব্যাগটা রেখে ক্লাসের বাইরে চলে গেল ।
তাইফের দিকে তাকিয়ে সাফা বলল-
মুখের ভেতরে কি?
.
মৃদু স্বরে তাইফ বলল-
সেন্টার ফ্রুট ।
-ওটা আমায় দাও ।
.
শফিকুল দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বলল-
এত ভালোবাসা এখন থেকেই? ওর মুখেরটায় চাই তোমার!
.
তাইফা লজ্জা পেয়ে বলল-
আমি তোমার জন্য দোকান থেকে নিয়ে আসছি এখুনি ।
.
সাফা বলল-
ধ্যাত! এত ভালোবাসা আমার মাঝে নেই, জন্মাবেনা কখনোও । আমি একটা দরকারে চেয়েছি ।
-কি?
-বলছি । আর কাজটি তুমিই করবে ।
-বাট করব টা কি?
-সেন্টার ফ্রুটটা তানিশার সিটে গিয়ে লাগিয়ে এসো । আজ পুরো ক্লাসে ওকে হাসির পাত্রি বানাবো ।
-কি!
-হ্যাঁ । এক সেকেন্ড! এত অবাক হচ্ছ কেনো? তুমি আমাকে ভালোবাসো বলো, আর ওই মেয়ে আমাকে অপমান করে গেল সেটা দেখলেনা?
-তাই বলে…
-তুমি পারবে কি পারবেনা?
-কেউ দেখলে?
-এখনো সবাই এসে পৌঁছায়নি । যারা এসেছে বাইরে ঘুরাঘুরি করছে । সো কেউ দেখবেনা । তবুও রাইমা, তনিমা পাহারা দিবে ।
.
তাইফকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাফা বলল-
যাবা তুমি!
.
বাধ্য ছেলের মতো সাফার মন রক্ষা করার জন্য কাজটি করলো তাইফ ।
সাফা সিদ্ধান্ত নিলো, প্রথম ক্লাসটি করেই তনিমাদের নিয়ে বাসায় যাবে সে । তামাশা না দেখে যাবে কি করে!
মনেমনে কামনা করতে থাকলো, তানিশার চোখে যেন না পড়ে তার সিটে কি রয়েছে ।
সাফার আশা পূরণ হলো ।
তানিশা খেয়ালই করলো না ।
প্রথম ক্লাস শেষ হবার পর সে উঠতেই সাফা ইচ্ছে করে হাসতে থাকলো । সাথে যোগ দিলো রাইমা ও তনিমাও ।
তানিশা বুঝতে পারলোনা তাকে দেখে হাসছে কেনো!
একটু পরেই ক্লাসের সবাই, তানিশার জামার পেছনে সেন্টার ফ্রুট লাগানো দেখে হাসতে থাকলো । ক্লাসের সবাই ব্যাপারটা ভালোই উপভোগ করতে থাকলো । তানিশা সবার সাথে খুব বেশি ভাব নিতো কিনা!
এই যেন তাকে অপমান করার সুযোগ পেয়েছে তারা..
তানিশার বান্ধবী তাকে জানালো সবার হাসার কারণ ।
তার বুঝতে বাকি রইলো না কাজটি কার ৷ কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই তার কাছে ৷ তাই চুপচাপ ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে ক্লাস ছেড়ে ।
.
এদিকে সাফার মুখে হাসি দেখে তাইফের মনেও ভালো লাগা করছে । এই প্রথম মনেহচ্ছে, সাফার খুশির জন্য মানুষও খুন করতে পারবে সে!
.
.
তনিমা ও রাইমাকে নিয়ে বাসায় এলো সাফা ।
সামিনা রশিদ তাদের দেখে বললেন-
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসেছ তোমরা?
.
সাফা মুখটা বাঁকিয়ে বলল-
মেহমানের সাথে বুঝি এভাবে কথা বলে?
-আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি । আমি নিজেই কত ফাঁকি দিয়ে ঘুরেছি এমন ।
-আমরা কিন্তু ঘুরিনি, বাসায় চলে এসেছি আড্ডা দিতে ।
-হুম ভালো মেয়েরা । যা সাফা, বান্ধবীদের নিয়ে ভেতরে যা ।
.
সাফা বান্ধবীদের সাথে নিজের রুমে এসে দরজাটি বন্ধ করে দিলো । দ্রুত ড্রয়ার থেকে প্রদীপটি বের করে বলল-
এখুনি তোরা বিশ্বাস করবি আমার কথা । এই প্রদীপ থেকে প্রেম বের হয়ে আসবে ।
.
কথাটি বলেই তিনবার প্রদীপের গায়ে ঘষলো সাফা ।
ঠিক আগের মতোই চারদিকে ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছে সে ।
সাফা বলল-
দেখেছিস ধোঁয়া?
.
তনিমা ও রাইমা বলল-
কোথায়?
.
সাফা বলল-
মজা নিস না তোরা আমার সাথে ।
.
রাইমা ও তনিমা চারদিকে তাকাতে থাকলো । তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা ।
একটু পরে ধোঁয়া কেটে যেতেই সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় প্রেমকে দেখতে পেলো সাফা ।
সে লাফিয়ে বলে উঠলো-
এই দেখ প্রেম ।
.
তনিমা ও রাইমা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল-
এসব মজা না করলেও পারতি সাফা ।
.
দুজনে বিছানার উপরে বসে পড়লে তাদের পাশে এসে সাফা বলল-
তোদের সামনে আস্ত একটা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখছিস না?
.
তনিমা বলল-
দেখলে কেনো দেখিনি বলব! এমন প্রেম যদি দেখতামই তোর তিনটে ইচ্ছের একটি আমি নিয়ে ফেলতাম ।
.
রাইমা বলল-
হ্যাঁ আমিও । আমরা তোর বান্ধবী, আমাকেও একটা ইচ্ছে পূরণের সুযোগ দিতিনা বল?
.
ওরা কেনো এমন বলছে সাফা বুঝতে পারছেনা ।
এমন সময় প্রেমের হাসির শব্দ শুনতে পেলো সে । তার দিকে সাফা তাকাতেই সে বলল-
আপনি ছাড়া আর কেউ আমায় দেখবেনা ম্যাডাম । আমি শুধু আপনার ।
.
চলবে