প্রিয়তমা

প্রিয়তমা !! Part- 02

বরফ ঘষছি গালে আর আয়নায় ডান গালটা দেখতে লাগলাম.. তিনটা লাল দাগ স্পষ্ট..কেমন লম্বা লম্বা আঙ্গুল রে বাবা!!!যেমন লম্বা সাদিফ ভাই তেমন লম্বা তার আঙ্গুলগুলো!!…এক রাশ বিরক্তি নিয়ে এসব বরফ লাগানো অফ করে দিয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম..ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক এ লগ ইন করলাম উদ্দেশ্য কিছু সুন্দর গল্প পড়া.. যেই একটা ভালো গল্প পেয়ে পড়া শুরু করলাম এমন সময় মেসেঞ্জার এ টুং করে মেসেজ আসলো..”এই পুচকি মেয়ে পড়া না পড়ে এখন এফবি তে কি করিস!?ছেলেদের সাথে লাইন মারার টাইম না এখন..পড়া সব কমপ্লিট করে রাখ..নাইলে কালকে বাম গালটাতে পাঁচ আঙ্গুলেরই চাপ বসে যাবে..বাই দা ওয়ে গালে বরফ লাগিয়েছিস!??”

*
*
🌸
মেসেজ পড়ে আমি শোয়া থেকে বসে গেলাম.. সাদিফ ভাইয়ার মেসেজ!!!.. হায় আল্লাহ্ কি ভাষার শ্রী!!..আমি কখন আবার ছেলের সাথে কথা বললাম!!..আর লাইন মারার ই বা কি..কত ছেলে আগে পিছে ঘুরে কখনো তো চোখ তুলে তাকালামও না আর এই লোকটা কিনা!!! ওহ বাবা!! আবার বরফ লাগলাম নাকি জিজ্ঞেস ও করলো..হাহ কত দরদ!!! মারার সময় দরদ কই ছিল!? নাহ এই বিষয়ে আর ভাবা যাবে না.. জঘন্য লোক!!রিপ্লাই এ একটা সেন্টি ইমোজি দিয়ে ফেসবুক থেকে লগআউট করেই পড়া শুরু করে দিলাম…পড়তে পড়তে কখন দশটা বেজে গেলো হুশ ছিল না..যাক অনেকক্ষণ পড়লাম.. রুম থেকে বের হয়ে দাদীর কাছে গেলাম এই তিন ঘণ্টা রুম থেকে বেরই হলাম না মাও ভাবলো পড়ছি তাই কেউ ডিস্টার্ব করতে আসেও নি..

**
**
আমাকে দেখেই দাদী একটা কিউট হাসি দিয়ে বললো “শেফালী ফুল যে!! আয় বুড়ির পাশে বসে একটু পা টা মালিশ করে দে”আমিও হেসে দাদীকে জড়িয়ে ধরে গালের সাথে গাল ঘষে দিলাম আর দাদী আমার কুটকুট করে হাসতেই শুরু করলো..আমিও হেসে দাদীর পা মালিশ করতে লাগলাম…
দাদী তার আর দাদার প্রেমের কাহিনী বলা শুরু করলো ..এই আর নতুন কি..তবে যতবারই শুনি ততবারই মনে হয় কি প্রেম ছিল তাদের দুজনের!!..দাদার অভ্যাস গুলা কেন জানি মনে হয় সাদিফ ভাইয়ার সাথে হুবহু মিলে যায়..কারণ দুইজনের অভ্যাসই এই রাগে বোম আর এই একদম ভালো মানুষ….
**

**
দাদীকে খাবার দিয়ে মায়ের ডাকে মায়ের কাছে গিয়ে দেখি মা খাবার নিয়ে বসে আছে..মা আর আমি একসাথে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম..কিন্তু খাবারের চেয়েও বকা বেশি খেতে হয়.. কারণ একটাই আমি ভাত পছন্দ করি না.. আর শুধু মা না গুষ্টির সবাই আর স্পেশালি মি. সাদিফ ভাইয়া এই ভাত আর খানার কারণে আমাকে বকে সবসময়..বাট আই রিয়েলি হেইট খানা অ্যান্ড আই কান্ট লাভ দেম এভার!!!…এই বকা গুলা শুনলে বাবা আর ভাইয়ার কথা অনেক মনে পড়ে …বাবাই ছিলেন যে আমাকে অনেক ভালবাসতো..দুইবছর আগে বাবা আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন…বাবার কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসলো..কারণ, ভিতর টা যে ভিষন পুড়ে যায়..!!আর ভাইয়া সে আপাদত স্পেন এ..বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরে ভাইয়া.. আর বড় খালুই তাদের স্পেনের বিজনেস দেখাশুনা করার জন্যে ভাইয়া কে পাঠিয়ে দেয় স্পেনে আর আমাদের সংসারটাকে রক্ষা করতে সাহায্য করেন…
*
*

🌸
সকালে কলেজ যেতে হবে তাই মা কে কাজে সাহায্য করে মায়ের সাথেই শুয়ে পড়লাম..বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের সাথেই থাকি..এখনো এই অভ্যাস বদলায় নি আর না কখনো বদলাবে!!…

আধা ঘণ্টা ধরে শুয়ে আছি ঘুমের “ঘ” ও আসছে না.. ফেসবুকেও লগিন করতে মন চাচ্ছে না এই সাদিফ ভাইয়া নামক আতঙ্কের জন্যে!!..উনার নাম মনে আসতেই পুরানো স্মৃতি মনে চলে আসলো…!!!

*
*
তিন বছর আগের কথা!!..আমি সবে মাত্র ক্লাস নাইন এ.. ডে শিফট হওয়ায় স্কুল থেকে আসতে আসতে প্রায় বিকাল হতো..আর স্কুল থেকে এসেই ফরয কাজ ছিল আমার গোসল করা… কাধ থেকে ব্যাগ রেখে স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে গোসল করতে চলে গেলাম…হঠাৎ ভাইয়া আর মায়ের চিৎকার শুনে আমি কোনমতে গোসল সেরে কাপড় পরে রুম থেকে বের হয়ে অবাকভাবে তাকিয়ে থাকলাম..একটা ছেলে লম্বায় ছয় ফুট তো হবেই..উনি আমার বড় ভাই মানে রাফসান ভাইয়ের কলার ধরে অনবরত থাপ্পড় দিতেই থাকলো.. মা ঐ লম্বুর হাত ধরে টানছিলেন ..আর ভাই… সে তো “ছাড় সাদিফের বাচ্চা ছাড়”!!বলেই চিল্লাচ্ছিল..ছোটো মানুষ আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন মাথাটা পুরাই ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যাচ্ছিলো.. কি যেন ভেবে আমি এক দৌড়ে ঐ লম্বুর পা ধরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম..”প্লিজ লম্বু ভাই ছেড়ে দেন ভাইয়া কে”..ঘটনার আকস্মিকতায় তৎক্ষণাৎ লম্বু ভাই ভাইয়ার কলার ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু ধরে উঠে দাড় করালেন!!..কান্না করার ফলে আমার মুখ তখন লাল টমেটো..আর ভেজা চুল সব মুখের উপরে..উনি আস্তে করে মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিলেন আর নিচের ঠোঁট চেপে হাসি দিলেন…চুল সরানোর পর আমি মাথা বেশ উঁচু করে উপরে লম্বু ভাইটাকে দেখলাম!! উফফ..কি সুন্দর সেই হাসি!!আর এইদিকে আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে মা আর ভাইয়া উনার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বিকট ভাবে হাসতে লাগলেন..আমি এই ঘটনার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না…

মা হেসে হেসে বলতে লাগলেন..আরে শেফা ফুল!! এইটা তোর বড় খালার ছেলে…তোর সাদিফ ভাই!!আর রাফসান কে মারার কারণ হলো আজকেই ছেলেটা স্পেন থেকে আসলো আর তোর গুণধর ভাই তাকে রিসিভ করতেই গেলো না… তাই সাদিফ অনেক রেগে আছে… এতক্ষণে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম… আর আড় চোখে উনাকে দেখতে লাগলাম..উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে ব্ল্যাক কালার শার্ট টা খুবই মারাত্নক লাগছিল আর উনার চুল দাড়ি সব কি সুন্দর সেটিং করা যেন এই দাড়ি আর চুলের কাটিং টা তার জন্যেই করা…

“কিরে রাফসান, ছোট খালা এটা কি আমাদের পুচকি শিফু নাকি!!”সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক…! উনি আমাকে চিনে!!আবার মনে মনে ভাবলাম চিনবে না কেনো উনি আমাকে সেই ছোটো থেকেই চিনে..মায়ের মুখ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বুঝলাম আমি ছোট থাকতেই উনি স্পেনে পাড়ি জমান উনার বাবার সাথে আর ছোট থেকে ঐখানেই বড় হলেন..এখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফিরলেন… উনি স্পেনে পাড়ি জমানোর সময় আমার বুদ্ধিও হয়নি…কারণ বুদ্ধি হলে নিশ্চয়ই উনাকে আমি মনে রাখতাম…সেদিন উনি আমাকে যতক্ষণ দেখছিলেন ততক্ষণ পুচকি টমেটো বলে খেপাচ্ছিলেন আর হো হো হাসছিলেন…লজ্জায় আমি তখন কিছুই ভাবতে পারছিলাম না.. নিচের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম..সেই দিনই মনে হয় আমার সাথে উনার একমাত্র ভালো ব্যাবহারের দিন ছিল.. কারণ এর পর থেকেই উনার তুই তোকারি আর আমাকে ইনসাল্ট করা উনার রুটিনে যুক্ত করে নিলেন……

🌸

অতীতের ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে
নিজের করা বোকামির কথা ভেবে নিজেই হেসে লজ্জায় লাল..মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে দিলাম মাও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন…
*
*
ঐদিনের দিনটা আমার জীবনের অনেক লজ্জাময় একটা দিন ছিলো!!……এসব ভাবতে ভাবতেই মা কে জড়িয়ে ধরে একটা প্রশান্তির ঘুম দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আর ভাবছি…

আমার মত বোকাও হয় নাকি!!!!!

চলবে…♥️

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে… হ্যাপী রিডিং♥️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *