প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 14

তো না বলবেন না?(আমি)
__হয়তো না!(উনি)
আমি তো আপনার না আপনার বাবার পছন্দ।
__এখন আমার ও পছন্দের।
মানে?
__আজ সন্ধ্যায় দেখা করি?আই সোয়ার ড্রিংক করে আসবো না।
মানে টা কি আপনি রাগ করেন নি আমার কথায়?
__কেনো রাগ করবো? আমার তো ভালো লেগেছে।
কি?
__আপনার কথা।
অহহ।যাক!
উহুহ যাক বলিয়েন না।আপনাকে ও আমার ভালো লেগেছে।শুনুন এখন আসি আর সন্ধ্যের সময় রেডি থাকিয়েন পিক করবো। আসছি! আল্লাহ্‌ হাফেজ!

সে চলে গেলো আমি সালা ক্যাবলা হয়ে দাঁড়ায় আছি।আমি এত্ত গুলো কথা নষ্ট করলাম ওরে খারাপ লাগানোর জন্য আর ওরে ভালো লাগলো? মানুষ টা পায়জামা এইটা?

আমি মুখ গোম্ভির করে নিচে এলাম।এসে দেখি সবাই আমাকে দেখে বেশ খুশি হয়ে গেলো সুবহা তো নাচতে নাচতে আমার সামনে এসে বললো!

প্রথম দেখাতেই মেরে দিলে?(সুবহা)
__কিহ? কি মারলাম?(আমি)
আরেহ ওই স্পর্শ রে।ও তো আব্বুর কাছে থেকে (আমার বাবাকে আব্বু বলে ডাকে) পারমিশন নিয়ে গেলো।
__কিসের?(অবাক হয়ে)
তোমাকে সন্ধ্যায় ঘুরতে নিয়ে যাবে।
__এএহ?

কাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শুনি?(জারিফ হারামযাদা জানি কই থেকে আসলো সাথে সমুদ্র ও আছে শেষ এইবার আমি শেষ সুবহা ও তো তো থামবে না)
__কাউকে কে(আমি)
বল? আমরাও যাই।(জারিফ)
__বউ কে নিয়ে যা না!(আমি)
আরেহ বলিয়ো না।নীরাপ্পি তো ছক্কা পেরে দিয়েছে!(সুবহা)
__কিসের ছক্কা সুবহা?(সমুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে)
আরেহ আপ্পি কে যে দেখতে এসেছিলো সন্ধ্যাবেলা তার সাথে ডেট আছে আপ্পির।

(বইন চুপ কর আমি মনে মনে বলে যাচ্ছি!)
__কখন দেখতে এসেছিলো?(চোখ তার অলরেডি লাল হয়ে গেছে আল্লাহ্‌ মালুম এখন কি হবে)
আরেহ তোমারা আসার একটু আগেই তো।
__অহ ওইযে ছেলে টা বের হয়ে গেলো সে?(সমুদ্র)
হুম।ওইটাই।দেখতে সুন্দর না? আপ্পির সাথে মানাবে অনেক।তাই না ভাইয়া?(সুবহা)

গেলো গেলো সব গেলো! আমাকে মেরে শান্তি হবে এই মেয়ের?এয় এতো বাচাল কেনো? চুপ কর না বাবা।আমাকে এমনি তেই মেরে তুই ভুত করে দিয়েছিস এখন আমার মরা ভুত কে সমুদ্র আবার মারবে!আমি মনে মনে বলে যাচ্ছি কিন্তু কেউ শুনছে না।সমুদ্রর কান আর নাক ও লাল হয়ে গেছে।

__মানাচ্ছি আমি!(সমুদ্র)
কি?(সুবহা)
__কিছুনা। নাম কি ছেলের?(আমার দিকে তাকিয়ে বললো)
সসসস।তুরু এই আপু নাম টা জানি কি?
__স্পর্শ চৌধুরী। (আমি)
হ্যা কি একটা কঠিন নাম। স্পর্শ!(সুবহা)
__হুম। এইবার বায়ুবীয় হবে।(সমুদ্র)
কিহ?(সুবহা মুখ কেলটে)
__কিচ্ছু না।এই তোর তোর কাজ নেই? জারিফ কএ নিয়ে গিয়ে কিছু খাওয়া যাহ!
__হুম যাই!(বলেই চলে গেলো সালা আমারে জল্লাদের কাছে রেখে গেলো)

আমি মানে মানে কেটে পড়ার চিন্তায় আছি।সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!আমি চলে যেতে চাইলেই সে আমার হাত টা ধরে ফেললো!

বইরে চলো কথা আছে?(সমুদ্রর গলার স্বর ও চেঞ্জ হয়ে গেছে)
__না আমার একটু কাজ আছে।(আমাকে কি পাগল পিপড়ায় কামড় দিছে রে ভাই? যে এখন আপনার সাথে যাবো)
তুই বাইরে যাবি? কি না?(দাতে দাত চেপে)

এই মানুষ টা কে এখন আমার ভয় লাগছে। কি করবো এখন?
__না মানে….(সে আর কিছুই বলার সুযোগ দিলো না চিলের মত ছু মেরে আমাকে বাইরে এনে গাড়িতে ধাক্কা মেরে বসিয়ে দিলো)

গাড়ি চলছে হাই স্পিডে।আমার গলা শুকিয়ে আসছে।এই মানুষ টাকে আমি কখনো এত্ত রাগ করতে দেখি নি আমার উপর।আজ প্রথম কি করবো বুঝতে পারছি না।সে ড্রাইভ করছে আর একের কর এক সিগারেট শেষ করছে।জানালার গ্লাস বন্ধ থাকায় গন্ধ টা বাইরে যেতে পারছে না।খুব বাজে একটা অবস্থা।আমি আর সহ্য ও করতে পারছি না।ওকে কিছু বলতেও পারছি না।ভয় কাজ করছে। সহ্য করতে না পেরে কাশি হওয়া শুরু হলো।

ও কাচ টা নামিয়ে দিলো।কিন্তু সিগারেট টা ফেললো না।

স্পিড টা একটু কমান!যেকোনো সময় একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাবে।

সে কিছুই বললো না উল্টো গাড়ির স্পিড আরো বাড়লো!

আমি আর কিছু বললাম না খোলা জানালায় মাথা একটু বের করে দিয়ে বাতাস উপভোগ করতে লাগলাম।গাড়ি টা হুট করেই ব্রেক কসলো।আমি কপালে একটু ব্যাথা ও পেলাম।সে গাড়ি ব্রেক করে বসে আছে আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।সমুদ্র হাইপার হয়ে গেলে এমন টা করে।অন্য আরো একটা সিগারেট ধরালো।আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।এসে বেশ বুক টা ধক করে উঠলো।গাড়ি ঘেসে দাড়ালাম উল্টো হয়ে।এই তো সেই জায়গা যেখানে সমুদ্র আমাকে প্রপোজ করেছিলো।তবে সেটা প্রপোজ না থ্রেড ছিলো।এই জায়গাতেও কত স্মৃতি আমার। এইখানে একটা কদম গাছ থাকার কথা।মনের অগোচরেই গাছ টা কে খুঁজছিলাম। এখানেই ওকে বলেছিলাম ফুল পেরে দিতে এই মশাই পুরো একটা গাছ হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো।পুরোনো স্মৃতি মনে আসতেই ঠোঁটের কোণঘেঁষা একটু হাসি এলো।

অনিকেত প্রান্তর এর ফ্লুট থিমটা বাজতেছে।মানে আমার ফোন বাজতেছে।কেউ কল দিয়েছে।ফোন টা গাড়ীর সিটে আমি পিছন ফিরে ফোন টা নিলাম দেখি তখন ও সে সিগারেটই খাচ্ছে এইটা নিয়ে ২৮ টা।

আন্নোন নাম্বার এর ফোন।রিসিভ করলাম,

হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!
__ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কে বলছেন?
__বাইক ভালো লাগে না কার?
স্য্ররি?
__বললাম বাইক ভালো লাগে নাকি কার?
বাইক!কিন্তু কে বলছেন?
__স্পর্শ! স্পর্শ চৌধুরী!
অহহ স্পর্শ? নাম্বার কোথায় পেলেন?
__জিনি এসে দিয়ে গেছে!
কিহহ?
__আপনার বাবা দিয়েছে!
অহহ!
__হুম সন্ধ্যাবেলা রেড়ি থাকিয়েন।
আসলে আমি না……..(কথা টা শেষ করতে পারলাম না কারন সমুদ্র এসে কান থেকে ফোন টা ছু মেরে মাটিতে সজোরে আছাড় মারছে!)

আ আ আ আমার ফোন?আজব ছুড়ে মারলেন কেন?(নিচে হেলতেছিলাম সে টেনে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো)
__রাখ তোর ফোন!(সমুদ্র)
আমার ফোন!(ফোন এর দিকে তাকিয়ে)

সে আমার মুখ টা তার দিকে ফিরিয়ে বললো,

এই তোর কথা কানে যায় না? কি বলছিলাম তোকে?(সমুদ্র)
__কি বলছিলেন?(চোখে চোখে রেখে।চোখ গুলো দেখার অবস্থায় নেই তার।আমার নিজের ই খুব ভয় করছে)
বলছিলাম না যা করতে যাচ্ছিস ওর ফল ভালো হবে না!
__আমি কি গাছ গাড়ছি যে ফল পাবো? আর এই গুলো কি ধরনের বিহ্যাভ?আপনি ফোন আছাড় মারলেন?
যা করছি ভালো করছি। দরকার পরলেও তোকেও আছাড় মারবো!
__ এই কি সব কথা রে ভাই! জানো আমার ওয়েট কত?
এই তোর কোন কালের ভাই আমি?আর কত ওয়েট তোর?
__৪৯!৪৯ কেজি! হুহহ আইছে আমারে আছাড় মারতে।

সমুদ্র ফিক করে হাসে দিলো,

কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার গলার পিছনের অংশ টা টেনে নিজের খুব কাছে এনে বললো,

“নীরা করিস না এমন টা।প্লিজ!আমি পারবো না রে তোকে অন্য কারো সাথে দেখতে।সত্যি ই পারবো না!”

কথা টা শুনে আমি কেপে উঠলাম।তার আমি এতো টাই কাছে যে প্রতি টা কথার পর নিঃশ্বাস এর শব্দ আমার কান ভেদ করে হৃদ পিন্ডে প্রবেশ করছে।আর আমার ধুকধুকানি বাড়িয়ে দিচ্ছে।ওর চোখ এখনো লাল তবে অনেক টাই শান্ত।

(চলবে……)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *