প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 15

“নীরা করিস না এমন টা।প্লিজ!আমি পারবো না রে তোকে অন্য কারো সাথে দেখতে।সত্যি ই পারবো না!”

কথা টা শুনে আমি কেপে উঠলাম।তার আমি এতো টাই কাছে যে প্রতি টা কথার পর নিঃশ্বাস এর শব্দ আমার কান ভেদ করে হৃদ পিন্ডে প্রবেশ করছে।আর আমার ধুকধুকানি বাড়িয়ে দিচ্ছে।ওর চোখ এখনো লাল তবে অনেক টাই শান্ত।আমার ও ইচ্ছে করছে এই চোখে ডুব দিতে!আমি অনেক্ষন ওর নিঃশ্বাস এর শব্দ উপভোগ করলাম আর শিউড়ে শিউড়ে উঠলাম।তখন ই মনে পরে গেলো গোটা ক্যাম্পপাসের সামনে ওর করা অপমান টা।আমি চোখ বন্ধ করে ধাক্কা দিয়ে শরিয়ে দিয়ে বললাম,

কিছু মানুষ কে আমি কখনোই ক্ষমা পরবো না।এমনকি মৃত্যুর আগ মুহূর্তে যদি আমাকে বলা হয় তাদের ক্ষমা করে দিলে তোমাকে আবার বাচিয়ে দেওয়া হবে আমি মৃত্যুকেও বেছে নিবো!তার মধ্যে তুমি একটা।পারবো না আমি!(আমি)
__নীরা নীরা প্লিজ এমন টা করিস না।প্লিজ।(আবার কাছে টেনে)
আমি এমন টাই করবো!তুমি না আমায় বলেছিলে আমার মত মেয়ে নাকি তোমার যোগ্য না।তাহলে এখন কেনো এসেছো?এক বার ভেংগে চুরে মজা পাওণি না? আবার এসেছো?শোনে অনেক কষ্টে নিজেকে জড়া লাগিয়েছি।আর চাই না কেউ ভেঙে যাক।এমন কি তুমি ও না।

__নীরা আমার রিজন ছিলো। তোকে এমনি এমনি কষ্ট দেই নি রে।(পিঠে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে এনে কানের কাছে বলছে)

আমি কেপে কেপে উঠছি ওর প্রতিটা কথায়!বহুদিন পর কাছে পেলে যা হয়।আমার সমস্যা হচ্ছে ওর এতটা কাছে আসাতে।আমি কি বলবো ভুলে যাচ্ছি!ও আমার কাঁধে ঠোঁট বসিয়ে আলতো আলতো করে ছুয়ে দিচ্ছে।কি এক বিচ্ছিরী অবস্থা আমার!আমি ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম।

__এইটা আপনার বেডরুম না। এইটা একটা পাব্লিক প্লেস।আর আমি আপনার প্রেমিকা না।আমি আপনার…. (আমি)
হ্যা তুমি আমার? বলো? কি তুমি আমার কি?
__আমি আপনার প্রাক্তন!আর কি কারন ছিলো? অন্য কারো মোহে পরে গেছিলেন এই তো? তাই না?
তোর মোহ ই কাটিয়ে উঠতে পারলাম না আর অন্য কারো কি করে পরবো?
__তাহলে বলেন কি কারন ছিলো আমাকে নিয়ে এভাবে মজা করার?কি কারন ছিলো আমাকে এভাবে মজার পাত্রী বানিয়ে দেওয়ার? বলেন?

বলবো সব ই বলবো?একটু সময় দাও।আমি সব বলবো নীরা। সব!
__সময় নেই।তুমি তোমার সময় নাও ওই সময়ে আমি অন্য কারো সাথে বিয়ে টা সেড়ে ফেলি।তারপর আমাকে আর আমার বর কে এক সাথে তোমার মিথ্যে বানোয়াট কাহিনী শুনিয়ো।এমনি তেই বাবা তো ছেলে দেখে ফেলেছে। অহহ তুমি তো তাকে দেখছো তাই না? মানাবে আমাদের কি বলো?

ওর শান্ত চোখ গুলো খানিকের মধ্যেই জলন্ত শিখায় পরিণত হলো!আতকে উঠলাম আমি।আল্লাহ্‌ কি বলে ফেললাম এমনি ই ক্ষেপে আছে। কেনো নিজের বিপদ ডেকে আনছিস নীরা!

এই কি বললা? তোমার বর না? এই তোর কথা কানে যায় না? রাগ উঠাচ্ছিস কেনো? কি চাচ্ছিস তুই? বল কি চাচ্ছিস?(কথা টা বলেই গাড়ির গ্লাসে জোড়ে বাড়ি মারলো)

হাত দিয়ে রক্ত ঝড়া শুরু হলো।ওই দিকে জনাবে লক্ষ ই নাই।সে ওই হাত দিয়েই আমার গলায় একটু হালকা চেপে ধরে বললো!

“খুন করবো না গুম করবো নিজেও জানি না।”
__যা মন চায় করিয়েন এখন চলেন।হাত কেটে ফেলেছেন।রক্ত পরছে। গাড়িতে ফার্ট এইড বক্স আছে?

না নেই। তুমি গাড়িতে ওঠা আমি তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি।(গম্ভীর স্বরে)
__কিন্তু হাত টা কেটে গেছে তো।
তোমাকে অত ভাবতে হবে না।উঠো।

সারা রাস্তা হাত ছুঁয়ে দেখতে দেয় নি।আর গাড়ি কোথাও থামায় ও নি।বাড়ির সামনে এসে বলল,

যাও বাসায় যাও(সমুদ্র)
__হাত টা ব্যান্ডস করে নিয়েন।(আমি)
আপনাকে অত ভাবতে হবে না।
__হুম সেটাই তো।অন্য কেউ তো আছে!(আমি)

আমি বলেই চলে আসছিলাম সে পিছন থেকে ডেকে বললো,

নীরা?(সমুদ্র)
__হুম?
ছেলেটার নাম জানি কি?

__স্পর্শ চৌধুরী।

সে আর কিছু না বলে চলে গেলো।আমি বাসায় এসেই রুমে ঢুকে আগে চেঞ্জ করে নিলাম না হলে অনেক এর কথার জ্বালায় সিদ্ধ হয়ে যেতাম।মাথা টা খুব ধরেছে তাই ভাবলাম ঘুমোবো।শুতে যাবো মা এসে আজির!

কই গেছিলি?(মা)
__বাইরে একটু কাজ ছিলো।
অহহ তো স্পর্শ কে কেমন লাগলো? আমার তো ভালোই লেগেছে।
__মা এক দিনে মানুষ চেনা যায় না।
হুম তা ঠিক এই জন্য ই তো আজ তোকে বাইরে নিয়ে যাবে।ভালো মত কথা বলিস তোর যা কথার শ্রীরি।
__মা আমি যাবো কিনা শিয়র না।
কেনো?
__এমনি।(বলতে বলতে ফোন টা অফ করলাম আমার সমুদ্রর আছাড়ে মরেই গেছিলো প্রায়)
তোর বাবা অনেক আশা করেছে।
__হুম
দেখ কি করবি!
__আচ্ছা এখন যাও আমি ঘুমোবো।
এই অবেলায়!
__মাথা ধরেছে!
আচ্ছা ঘুমা।

মা চলে গেলো এখন আমি পড়লাম চিন্তা যাবো কিনা সন্ধ্যায়! না যাওয়াটাই বেটার আবার সমুদ্র ক্ষেপে যাবে।ওয়েট আমি কেনো জাবো না? কারন সমুদ্র ক্ষেপে যাবে এই জন্য? ও ক্ষেপে গেলে আমার কি?
আমাকে ও তো এগিয়ে যেতে হবে।সেও গেছে। আসলে সহ্য হচ্ছে না তার, সে সামনে থাকতে অন্য কোনো ছেলের সাথে মানে সে হচ্ছে জেলাস।হোক গা আমার কি?

আমার কিছুই না। ওর জন্য অন্য জন কে আমি অপমান করতে পারি না।
“আর যে মানুষ আমাকে একবার ছেড়ে চলে যেতে পারে,সে আবার ও যেতে পারবে।”

তাই আমি যাবো।দেখা করবো নিজেকে একটা সুযোগ দিবো।কিন্তু এখন ঘুমোবো পরের টা পরে দেখা যাবে।আমি কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি।ঘুমিয়েছি ১;৪৫ এর দিকে আর উঠলাম পুরো ৬টায়।ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা সোভায় বসে আছে বাচ্চামো চেহারা নিয়ে।আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম “কি হয়েছে?”

__স্পর্শ নাকি তোকে বহু বার কাল দিয়েছে। তুই রিসিভ করিস নি।তাই আমায় ফোন দিয়েছিলো।রুমে এ এসে দেখি তুই ঘুমোচ্ছিস তাই বসে রইলাম।(বাবা)

অহহ তো ডাকো নি কেনো?কতক্ষন যাবৎ আছো?(আমি)
__ঘুমোচ্ছিলি তোকে বহুদিন যাবৎ এভাবে ঘুমোতে দেখি না।তাই দেখছিলাম!এই তো একটু আগেই এলাম।
অহহ।আচ্ছা স্পর্শ এর সাথে কথা বলে নিচ্ছি।
__আচ্ছা।শুন মা আমার ছেলে টা কে ভালো লেগেছে।
হুম শুনেছি আর বুঝেছিও।যাও আমি ফ্রেশ হয়ে কথা বলে নিচ্ছি।
বাবা চলে গেলেন।বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।অন্নোন নাম্বার রিসিভ করলাম,

হ্যালো!
__অলরেডি ১২টা কফি শেষ করেছি। আর কটা শেষ করতে করতে আপনি আসবেন?
যদি বলি আসবো না!(আমি)
__তাহলে আর কি আপনার বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতে হবে।শুনেছি আপনি খুব ভালো কফি বানান।
__তা কে বললো আপনাকে এইটা?
আমি বললাম!কেনো ভুল বলেছি?
__কাইন্ড অফফ।
ব্যাপার না কারো কারো হাতের বিষ ও খাওয়ার যোগ্য হয়।আপনি না হয় তাদের মধ্যে কেউ হলেন।
__তাদের হাতের বিষ খাওয়ার ভাগ্য লাগে।
আরেহ সব কি ভাগ্যের উপর ছাড়া যায়?কিছু তো নিজেকেও করে নিতে হয়।তো পিক করবো কি?
__উহুহ আড্রেস টেক্সট করেন!
আসছেন তাহলে?
__যাবো কে বললো?
মন পড়তে পারি আমি।
__তাই নাকি?তো বলেন এখন কি ভাবছি!
যদি সঠিক বলি তাহলে আসতে হবে।রাজি?
__উউউউ আচ্ছা রাজি।আর যদি বলতে না পারেন তাহলে সব কিছু থেকে ব্যাক অফ করবেন।
অউচ!শর্ত একটু ভারি হয়ে গেলো না?
__ম্যাবি! রাজি থাকলে বলেন না হয় ব্যাক অফ করেন।
উহুহ স্পর্শ একবার যা ভেবে নেয় তা করেই ছাড়ে।সেচ্ছায় না হলে জোর করে।যাবে বলে “বাই হুর্ক অর বাই কুর্ক!
__তো বলেন কি ভাবছেন?
আপনি এখন কিছুই ভাবছেন না। আপনি ভাবছেন আমি ভাববো আপনি কিছু একটা ভাবছেন এইটা বলবো আর আমি ফেঁসে যাবো।আর আপনি কেবল ঘুম থেকে উঠলেন এই সময় কারো কিছু সেভাবে ভাবতে ইচ্ছে করে না।তাই আপনি ও কিছু ভাবছেন না।আমাকে বোকা বানানোর জন্য।ঠিক তো মিস নীরা?
বাহ লোক টার আইকিউ তো বেশ ভালো।আমি আসলেই কিছু ভাবছিলাম না।

তো মিস নীরা আমি জিতে গেছি তো?আই অলরেডি টেক্সট ইউ দ্যা অ্যাডড্রেস!(স্পর্শ)
__এই গোট ইট!আই ইউল বি দেয়ার ইন টুয়েন্টি মিনিটস। (আমি)
আই উইল বি ওয়েটিং।

আমি ফোন কেটে দিলাম!উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলাম।এই মক্কেল রে তাড়াইতে হবে কারন সুবিধার মানুষ ঠেকছে না।মানুষ টা চালাক।এখন দেখার বিষয় সে আসলেই শুধু
চালাক না দুরুত্তর!

জায়গাটাতে গেলাম।সে কফির মগে ডুবে আছে।যেতেই উঠে এলো রিসিভ করার জন্য।গিয়ে বসলাম টেবিলে চোখ যেতেই দেখি ১৫টা কফির মগ।দেখে একটু হেসেই বললাম,

কফির ফ্যাক্টরি তে তো অকাল পরে যাবে।(আমি)
__কি আর করার! অপেক্ষা করতে করতে এই অবিস্থা।(স্পর্শ)
আসলে ঘুমিয়ে গেছিলাম!
__ব্যাপার না।

আমি আসে পাশে তাকালাম রেস্টুরেন্ট পুরো ফাকা।এত জনঘনত্ব জায়গার এই জায়গায় কেউ নেই কেনো?ব্যাপার টা কি হলো?বা হচ্ছে?(মনে মনে কথা বলছি নিজের সাথে)

__ব্যাপার টা কিছুই হচ্ছে না।আসলে পুরো রেস্তোরা টাই আজকের জন্য বুক করেছি।

কথা টা শুনে প্রায় চমকে গেলাম!সে কি করে জানলো আমি মনে মনে তো বলছিলাম।আমি চোখ কিছু টা বড় বড় করেই তার দিকে তাকিয়ে আছি!

চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *