প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 13

রাতে ঘুম ভাঙল, দেখি ৩;৫৬ বাজে,
সমুদ্রর ৪টা মিসডকল, সাথে একটা মেসেজ।

“নীরা যা করতে যাচ্ছো তার ফল কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম। সব ফলের জন্য প্রস্তুত থেকো!”

কিসের ফল? আমি আবার গাছ লাগালাম কবে?

মধ্য রাতে এরকম এসএমএস দেখে একটা মানুষের মাথায় এই কথা টাই প্রথমে আসবে তাই আমার ও ব্যতিক্রম হয় নি। আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে সুবহার ডাকে ঘুম ভাঙল। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে ব্রেকফাস্ট এর জন্য গেলাম।দেখি খাবার টেবিলে এক নতুন মুখ।হ্যাংলা পাতলা উজ্জ্বল শ্যাম মত এক ছেলে বসে বসে পরোটা চিবচ্ছে।তবে খুব অনিচ্ছা নিয়ে চিবচ্ছে না।কিন্তু আমার মা আর খালা খুব খুশি নিয়ে তাকে খাওয়াচ্ছে।ব্যাপার টা কি কে এই ভদ্র নম্র বাচ্চাটা যে আম্মুর হাতের পরোটা নামক ভালোবাসার কষ্ট খাচ্ছে?(পরোটাকে কষ্ট বলার এক কারন আছে কারন আম্মুর তৈরী পরোটা কেউ ১টার বেশি খেতে পারে না।খুব বেশি মোটা করে।আম্মু কে দিয়ে পরোটার ব্যবসা করলে ব্যবসা লাটে উঠবে শিয়র)
আমি সুবহা কে চোখ দিয়ে ইশারা করে ডাকলাম।

হ্যা আপি বলো?(সুবহা)
__কে এই মক্কেল রে।আম্মু এত্ত আদর করছে!
আদর না জামাই আদর বলো!
__কিহ?
হ্যা।তোমার জন্য একে দেখা হচ্ছে কি জানি নাম বললো!সসসসসসস!
__স্পর্শ। স্পর্শ চৌধুরী।
ওমা নাম ও দেখি জানো!
__কাল আব্বু বলেছে।কিন্তু এই জনাব একটু বেশি ই পাতলা না?
আরেহ পাতলা তে কি যায় আসে বলো?আমার তো বেশ ভালো ই লেগেছে!
__অহহ তাই নাকি?
হুম।বেশ কিউট ছেলে টা।
__আচ্ছা আচ্ছা।জারিফ কে বললো?
আপি কি যে বলো না তুমি! আমি তো তোমার জন্য বলছি!
__হুম বুঝছি।আজ বাদে কাল বিয়ে একটু টাংকি কম মার।
আপ্পি!
__খাইতে যা।আমি এই মক্কেল রে নিয়ে একটু থিসিস করি!

সুবহা চলে গেলো।আমি স্পর্শ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দেখছি।হাতে একটা ঘড়ি,পরনে পাঞ্জাবী তাও আবার সাদা সাথে ব্লু জিন্স।চোখে চশমা মোটা ফ্রেমের।হাতে একটা রুপার আংটি।অন্য কোনো মানুষের সাধারন একটা সাজ কিন্তু আমার কাছে মনে হলো না।কোথাও জানি কিছু একটা গল্ডোগল আছে!ঘাপলা লাগছে!আমি গিয়ে চেয়ারে বসাতে সে আমার দিকে তাকালোও না।আব্বু বললো,

নীরা এই হলো স্পর্শ,
__অহহ।খাওয়া করছেন তাই সালাম দিলাম না।(আমি)
হুম ঠিক আছে(বেশ হেসে)

খাওয়া শেষ করে আম্মু আব্বু আমাদের উপরে মানে ছাদে কথা বলতে পাঠিয়ে দিলো। সে আগে থেকেই ছিলো ছাদে আমি গেলাম পরে।

বেশ ভালো দেখতে আলোয় দেখে বুঝতে পারলাম।সুদর্শন বলা যেতে পারে।

আমি তাকে খুতিয়ে দেখা শুরু করলাম,

কেমন আছেন?(স্পর্শ হেসে হেসে)
__আলহামদুলিল্লাহ। ভালো!আপনি?(আমি)
আমিও ভালো আছি।আসলে বাবা চাইছিলেন আমি আপনার সাথে কথা বলি।
__অহহ বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা একটা কথা বলি?
হ্যা বলুন?
__এই যে একটুকু সময় যে আমাকে দেখলেন এতে আমাকে বর্ণনা করুন!
স্যরি?(উনি বেশ অবাক হয়ে)
__বললাম যে আমাকে বর্ণনা করুন।
আমি তো আপনাকে ভালো মত চিনি ই না।তাহলে কি করে?কেবল তো দেখা!
__কিন্তু এই টুকু সময় এ আমি আপনাকে অর্ধেক এর বেশি বর্ণনা করতে পারবো!
স্যরি বিশ্বাস করতে পারলাম না।কাউকে দেখে এত তাড়াতাড়ি বর্ণনা করা সম্ভব না।
__তাহলে শুধু করি? কি বলেন?(আমি)
হ্যা অবশ্যই।

__বাবা বলেছে আপনি আমাকে ছবি দেখে পছন্দ করেছেন।কিন্তু আপনি আমাকে দেখেন নি।যদি দেখতেন তাহলে খাবার টেবিলে একবার হলেও আমার দিকে তাকাতেন।
উলটো আপনাকে আজ জোর করে আপনার বাবার /মা পাঠিয়ে দিয়েছে।তার প্রমাণ আপনার পাঞ্জাবি। আপনি পাঞ্জাবীর প্রাইস ট্যাগ টা খোলার সময় পান নি।আর পাঞ্জাবী টা আপনার বাবার কেনা।কারন পাঞ্জাবীর সাইজ ৪৪।যা আপনার সাইজের চেয়ে খানিক টা বড়।যদি আপনার মা কিনতেন তাহলে ৪২ সাইজের ই কিনতেন।

তারমানে আপনার মা ও জানেনা যে আপনি আমাকে দেখতে আসবেন।পুরো টাই আপনার বাবার কারনে করা।আর আপনি একজন চেইন স্মুকার আপনার প্যান্টের পকেটে ব্যানসন আছে যা কাগজ দিয়ে মড়ানো।এখানে আসা আগে আপনি একটা খেয়ে এসেছেন।কড়া পারফিউম এ তা অন্যরা বুঝতে পারে নি।আপনি সারা রাত বাসায় ছিলেন না।হয়তো বারে না হয় অন্য কোথায়।আর আপনি শুধু স্মুকার নন একজন ড্রিংকার ও।কারন আপনি কাল রাতেই স্কচ খেয়েছেন যার খানিক টা আপনার ব্লু জিন্স এ পরেছে। এম্নিতেই স্কচে কিছু পরিমাণ ব্লিচ জাতীয় দ্রব্য বেশি থাকে আর তাতে ব্লু কাপড়ে পড়াতে জায়গাটা সাদা হয়ে গেছে।অন্য কিছু ধরতে পারা যেত এই সাদা দাগ টাকে, কিন্তু ধরলাম না কারন আপনার শরীরের চামড়া অনেক পাতলা।বাসায় মা কে গিয়ে বলবেন ভিনেগার /লেবু দিয়ে ধুয়ে দিতে।আর আপনি রাতে খাওয়া করেন নি।আপনার ক্ষুদা পেয়েছিলো।বাসায় যে ছিলেন না তার আরেকটা উদাহরণ আপনার তীব্র ক্ষুদা।তীব্র ক্ষুদা বলবো কারন আপনি আমার মায়ের বানানো আড়াইটে পড়োটা খেয়েছেন যেখানে দেরটা খাওয়া কষ্ট সাধ্য।আপনি সকালে বাসায় আসাতে আপনার বাবা আপনাকে পাঞ্জাবী পরিয়ে সুশীল আর নম্র বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।চশমা আপনি পরেন না বা অভ্যাসী নন। হাতে আপনার প্রাক্তন এর দেওয়া ঘড়ি আর আংটি। হয়তো প্রাক্তন এর নাম ওরশি ছিলো যদি ভুল না করি।কারন আপনার ঘড়ি এর বেল্টের নিচে ওই নাম টা লিখা। আর ওপরে আপনার নাম মানে স্পর্শ। এর আরো এক মানে হয় ঘড়ি টা কাস্টোমাইজড।শুধু ঘড়ি ই না আপনার আংটি টাতেও ওই নাম।এখন আপনি বলতে পারেন প্রাক্তন ই কেনো?মা বা বোন ও হতে পারে।আপনার সাথে এখানে গল্প করার আগে বাবার কাছ থেকে আপনার মায়ের নাম শুনে এসেছি। আর বোন হওয়ার কোনো চান্স নেই কারন আপনার আংটির নিচের সাইড টা কে লিখা মাই লাভ।তো বোন এই টা লিখবে না বরং বোন লিখবে বানর,হনুমান,ইতর এই টাইন্স কিছু।তো বিয়ে টা বা মেয়ে দেখতে আসা কোনো টাই আপনার ইচ্ছে তে না।আমি আপনার নয় আপনার বাবার পছন্দ তো সমস্যা নেই আমি বাবা কে বলে দেবো আপনার অন্য কোথাও পছন্দ আছে আর আপনি আপনার বাবা কে এই টাই বলিয়েন যে আমার ও অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে।

সে আমার দিকে ভুত দেখার মত দেখে আছে। সে কি ভাবছে বুঝতে পারছিনা।কারন মুখে বিস্মিত ভাব আছে কিন্তু তার চোখ হাসছে।যা আমাকে কনফিউজড করে দিচ্ছে।বুঝে উঠতে পারছি না।

এইটা বললে মিথ্যে বলা হয়ে যাবে না?(উনি)
__এই যে আপনার বা আমার অন্য কোথাও সম্পর্ক বা পছন্দ আছে।
তো? সমস্যা কোথায়?(আমি)
__আমি আবার মিথ্যে কম বলি।
আচ্ছা।
__হুম।এতো নিখুঁতভাবে আগে আমাকে কেউ দেখেনি।
তো না বলবেন না?
__হয়তো না!
আমি তো আপনার না আপনার বাবার পছন্দ।
__এখন আমার ও পছন্দের।
মানে?
__আজ সন্ধ্যায় দেখা করি?আই সোয়ার ড্রিংক করে আসবো না।

চলবে!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *