পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 33

বিশাল জায়গা জুড়ে কুঞ্জভিলা।চারপাশে গাছ,বাগান।মাঝে দুই’তলা বাড়ি।সাদা রঙের বাড়ি।পাশে বিশাল পুকুর।তার পাশে বট গাছ।সেই বট গাছে আপন মনে দুলছে দুটি’কাঠের দোলনা।লম্বা দড়ি দিয়ে বাধাঁনো দোলনার দড়িতে সবুজ রঙের লতা পেঁচিয়ে গাছ ছুঁয়েছে।লতার কোণায় কোণায় ঝুলে লাল ফুল।ছোট ছোট লাল ফুলগুলোর নাম জানা নেই ওয়াসেনাতের।বাতাসের কারনে দুলছে দোলনাগুলো।বৃষ্টির পানি জমেছে লতার খাঁজে খাঁজে।লাল ফুলের ছোট পাপড়িতে শিশির কনার মত জমেছে বৃষ্টির অসংখ্য পানি।ওয়াসেনাত তাকিয়ে আছে সেই দোলনার দিকে।অরিত্রান তাড়া দিয়ে বললো,
—-“ চলো আর কত ভিঁজবে??ঠান্ডা লাগবে তো!”
ওয়াসেনাত নাক ছিটঁকে বললো,
—-“ না আমি এখন দোলনায় দুলবো।আর আপনি ধাক্কা দিয়ে দোলাবেন।”
অরিত্রান কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকালো।বৃষ্টিতে ভিঁজে চুপ চুপ হয়ে আছে দু’জনেই।এর মাঝে ওয়াসেনাতের কথাটা একদম ভিত্তি হীন বলে মনে হচ্ছে তার।ওয়াসেনাত সামনে এগিয়ে যেতেই অরিত্রান হাত চেপে ধরে।বলে,
—-“ তুমি কি ছোট বাচ্চা??দোলনায় কেন দুলতে হবে??”
ওয়াসেনাত চু করে শব্দ করে।একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে সে বললো,
—-“ বাচ্চারাই শুধু দোলনা দুলে কে বলেছে আপনাকে??এই দোলনায় সবাই দুলতে পারে।চলেন তো!!”
অরিত্রানের ধরে রাখা হাত ঝাড়িয়ে ওয়াসেনাত নিজেই অরিত্রানের হাত মুঠো বন্ধি করে।এরপরে টানতে টানতে বড় গাছটার নিচে নিয়ে দাড় করায়।ওয়াসেনাতের চোখে মুখে হাসি দেখে অরিত্রান নিজেও হালকা হাসলো।দোলনা একটু উপরে হওয়াই ওয়াসেনাত উঠতে পারছেনা। কয়েক বার লাফিয়ে উঠতে চেয়েও পারছে না।বসতে গেলেই দোলনা সরে যাচ্ছে।অরিত্রান হাসলো।দু’হাত বুকে গুঁজে গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে দাড়িঁয়ে পরে সে।ওয়াসেনাত বিরক্ত হয়ে উঠেছে।বার কয়েক এমন টানা হেচঁড়া করে সে ক্লান্ত। অরিত্রানের মাথায় আসে না।এতো বড় মেয়ে কিনা দোলনায় দোলার জন্য এত পরিশ্রম করছে!!আশ্চর্য!ওয়াসেনাতের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে কেঁদে দিবে।অরিত্রান শব্দ করে হাসছে।অরিত্রানের দিকে চোখ লাল করে তাকায় সে।বৃষ্টির পানিতে চোখ লাল হয়ে উঠেছে ওয়াসেনাতের।অরিত্রান হাত নামিয়ে নেয়।দু’হাত মেলে উঠিয়ে ঠোঁট উল্টে অরিত্রান বললো,
—-“ আমি কি করলাম??তুমি নিজেই উঠতে পারছ না।এতে আমার দোষ কি??”
ওয়াসেনাত কোমড়ে দু’হাত গুঁজে নাক ফুলিয়ে বললো,
—-“ এই দোলনায় একা একা উঠা যায় না।কারো হেল্প লাগে।একটু হেল্প করলে কি হয়??”
অরিত্রান দায় সারা ভাব নিয়ে বললো,
—-“ আমি পারবো না হেল্প করতে।এটা আমার সাথে যায় না।আমি এই জীবনে কাউকে তেমন হেল্প করছি কিনা মনে নেই।তোমাকে হেল্প করার তো প্রশ্নই আসে না।”
ওয়াসেনাত ভাবী অবাক হলো।বলে কি !!হেল্প করতে এতো কাহিনী!!রাগি কন্ঠে সে বললো,
—-“ আপনি বউ পাবেন না আমাকে হেল্প না করলে!!”
অরিত্রান হো হো করে হেসে উঠলো।এভাবে শরীর দুলিয়ে তাকে আর কখনো হাসতে দেখেনি ওয়াসেনাত।দু’হাত কোমড়ে দিয়ে সে হাসছে।ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান হাসি থামিয়ে বলে,
—-“ আমার তো বউ নতুন করে পাওয়ার প্রয়োজনই নেই।আমার বউ নিয়ে তোমাকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে না।আমি নিজেই তার সব চিন্তায় মেতে আছি।তুমি বরং ভাবো কিভাবে দোলনায় উঠে বসবে।”

অরিত্রানের কথায় হালকা কপাল কুঁচকে আসে ওয়াসেনাতের।সে জানে এই দোলনায় তার একার পক্ষে বসা যাবে না।তাই মুখ গোমড়া করে বললো,
—-“ চলেন চলে চাই।আর বসতে হবে না দোলনায়।বৃষ্টিতেও আর ভিজঁতে হবে না।আমাকেও আর হেল্প করতে হবে না।”
ওয়াসেনাত চোখ বাকিয়ে অরিত্রানকে দেখে।না চেহারায় কোন পরিবর্তন নেই।ওয়াসেনাত হাঁটা শুরু করে।আর ভাবে,মানুষটা এমন কেন??একদম অনুভুতি শূন্য টাইপের।সবই আগের মত।শুধু ভালোবাসাটা যোগ হয়েছে।ওয়াসেনাত মনে মনে এটা ভেবেই যেন খুশি। ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে।কিছুদুর যেতেই নিজেকে শূন্যে অনুভব হচ্ছে ওয়াসেনাতের।ভয়ে চোখ বড় করে পাশে তাকিয়ে অরিত্রানকে আবিষ্কার করে ।ওয়াসেনাত হাসে।অরিত্রানের মুখ গম্ভীর।সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত গলা জড়িয়ে ধরলো না।মুখ গোমড়া করে সে বললো,
—-“ কোলে কেন নিলেন??”
অরিত্রান পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
—-“ বাচ্চাদের দোলনায় বসাতে হলে কোলে নিয়েই বসাতে হয়।”
ওয়াসেনাত কপাট রাগ নিয়ে বললো,
—-“ আমি বাচ্চা!!!”
অরিত্রান জবাব দিলো না।হালকা ছেড়ে দিতেই ওয়াসেনাত দু’হাতে অরিত্রানের গলা জড়িয়ে ধরে।অরিত্রান ঠোঁট বাঁকা করে।ওযাসেনাত রাগি গলায় বলে,
—-“ সব সময় এমন ভয় দেখান কেন??”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের পিঠে রাখা হাতটা একটু চেপে বললো,
—-“ তুমি যদি প্রথমেই গলা জড়িয়ে নিতে তাহলে তো আমার কষ্ট করে ভয় দেখানো লাগতো না।”
—-“ আপনাকে ইদানিং ঝগড়টে মনে হয়।”
ওয়াসেনাতের এমন কথায় অরিত্রান শুধু নিঃশব্দে হাসলো।দোলনার কাছে এসে বললো,
—-“ গলা জড়িয়ে ধর শক্ত করে।”
ওয়াসেনাত ধরলো।অরিত্রান একটু ঝুঁকে দোলনায় একটা হাত রেখে টেনে ওয়াসেনাতকে ধীরে বসিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত খুশিতে খিলখিল করে হেসেঁ দোলনার দু’পাশে হাত রাখে।অরিত্রান পিছনে দাড়ায়।ওয়াসেনাত দু’পা সোজা করে রাখে।অরিত্রান হালকা হালকা ধাক্কা দেয়।ওয়াসেনাত বিরক্ত গলায় বলে,
—-“ আরে এতো আস্তে আস্তে দিচ্ছেন কেন??আমি কি বাচ্চা মেয়ে!”
অরিত্রান তীক্ষ্ন চোখে তাকায়।ওয়াসেনাত মাথা ঘুরিয়ে অরিত্রানের দিয়ে তাকায়।অরিত্রান গম্ভীর মুখে বললো,
—-“ আরো জোড়ে দিতে হবে!!”
—-“ তো!!”
—-“ তো মানে কি??হ্যা ইয়া না বলো।”
—-“ হ্যা।অনেক জোড়ে ঠেলবেন প্লিজজজজ।”
অরিত্রান জোড়ে ধাক্কা দিতে শুরু করে।ওয়াসেনাত দুলছে।হাসছে।সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।অরিত্রান চোখ ছোট করে হাসে।ওয়াসেনাত নিজের দু’হাত মেলে চোখ বুঝে বৃষ্টির পানি গায়ে মাখে।অরিত্রান ধাক্কা দিতে ব্যস্ত।পাশ থেকে চিৎকারের শব্দে অরিত্রান সেদিকে তাকায়।বাচ্চারা হাসাহাসি করছে তাদের দিকে তাকিয়ে।অরিত্রান তাকাতেই ছুটাছুটি করে ভিতরে চলে গেছে।আবার কিছুক্ষন পর পর উঁকিঝুঁকি দিয়ে হেসে গড়িয়ে পরছে।অরিত্রান বাচ্চাগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে দিতেই ওয়াসেনাতের দোলনার সাথে ধাক্কা লেগে যাচ্ছিলো।অরিত্রানের দৃষ্টি তীক্ষ্ন।হাত দিয়ে দোলনা থামিয়ে দেয় সে।ওয়াসেনাত বিরক্ত।মাত্র তো সে আকাশে উড়ছিল।এর মাঝেই এভাবে থামিয়ে দেওয়ার মানে কি??
—-“ এই এই আপনি দোলনা থামালেন কেন??”
অরিত্রান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।চোখ ছোট করে বললো,
—-“ বাচ্চাগুলো কে??”
ওয়াসেনাত মাথা উচুঁ করে একবার দেখে নেয়।তারপর হেসে বলে,
—-“ হাসান,রাফি,অন্ত,মেহুল,মারি,মিরা,রাবেয়া,তাহসিন, তাফসি,আ
অরিত্রান কথার মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—-“ ওদের নাম জিজ্ঞেস করিনি।ওরা কে জিজ্ঞেস করেছি।”
—-“ কুঞ্জবাড়ির সদস্য।”
অরিত্রান কনফিউজড হয়ে বললো,
—-“ মানে??”
—-“ মানে ওরা এই বাড়িতে থাকে।এটা ওদেরই বাড়ি।”
অরিত্রান যেন ভারি অবাক হলো।ভ্রু কুচঁকে সে বললো,
—-“ ওদের বাবা মাও থাকে এখানে??মানে ওরা কি তোমাদের বাড়িতে ভাড়া থাকে??”
—-“ আরে না।ওদের বাবা মা নেই।”

অরিত্রান থমকালো।মনের কোথাও ব্যথা হচ্ছে।নিজের সাথে ওদের খুব মিল খুঁজে পাচ্ছে।ওয়াসেনাত বুঝতে পেরে বললো,
—-“ এটা আমার বাবার এতিমখানা।বাবার চোখে অসহায় কেউ পরলেই তাদের এখানে নিয়ে আসে।এটা শুধু এতিমখানা না বৃদ্ধাশ্রমও।এখানে অনেক দাদা দাদুও আছে।বাবার প্ল্যানটা কি দারুন!!বাচ্চারা মা বাবার মত যত্ন করে এমন গার্ডিয়ান পেয়েগেলো।আর বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়ের কাছে অবহেলিত বাবা মায়েরা কিছু বাচ্চা পেয়েগেলো।”
অরিত্রান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো,
—-“ তোমার হিটলার বাপ তো দেখি দয়াবান খুব।”
ওয়াসেনাত তেমন কিছু শুনতে পেলো না।কিন্তু হিটলার শব্দটা তার কান এড়ালোনা।সে চোখ ছোট করে সন্দেহের চোখে তাকায় অরিত্রানের দিকে।বলে,
—-“ এই আপনি হিটলার কাকে বললেন??”
অরিত্রান ভড়কে গেলো।নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
—-“ তোমার বাবা মানুষটা খুব দয়াবান বলেছি।তুমি একটু বেশি শুন কানে।”
ওয়াসেনাতের বিশ্বাস হলো না।চোখ ছোট করেই সে তাকিয়ে আছে।অরিত্রান তাকে ধাক্কা দিতে শুরু করে।ওয়াসেনাতের মনোযোগ আবার আকাশে উড়ায় চলে যায়।অরিত্রান নিজ মনে হাসলো।ওয়াসেনাতের বাচ্চামু গুলো তাকে আরো ঘায়েল করে।আরো ভালোবাসতে শিখায়।”হৃদয় একটা যুদ্ধক্ষেত্র।ভালোবাসা হচ্ছে তলোয়ার।আর সেই তলোয়ার দিয়ে হৃদয় জয় করার কাজ যে করে সে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষ।”
________________________________
অরিত্রানের জীবনের সবচাইতে বড় পরীক্ষা মনে হচ্ছে আজই।খেতে বসেছে সে।কিন্তু বিশাল ড্রায়নিং টেবিলে না।নিচে বসেছে সে।ফ্লোরে!!পা গুটিঁয়ে নিচে বসতেই তার অবস্থা খারাপ।একেই সে সবসময় ফিটিং করা ড্রেস পরে।তার উপর নিজেকে এমন গুটিয়ে বসা তার জন্য মোটেও সুবিধান হচ্ছে না।আজ তাকে একটা ভয়ংকর অফার দেওয়া হয়েছে।সেটা হচ্ছে আজ বাচ্চাদের সাথে ,ওয়াসেনাতের সাথে একসাথে খাবার খাওয়ার অফার করা হয়েছে।এই ভিজা শরীর শুকিয়ে নিতে ঘন্টাখানিকের মত ফ্যানের নিচে বসে ছিলো সে।এখন তার বেশ ঠান্ড লাগছে।ওয়াসেনাতকে দেখতে বেশ খুশি খুশি লাগছে।অরিত্রানকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ওয়াসেনাত।তাদের দু’জনকে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে।ওয়াসেনাত অবাক হচ্ছে।সে তো বলেছে বন্ধু তাহলেও এত হাসির কি আছে!!বাচ্চারা অরিত্রানকে নিয়ে অনেক মজায় আছে।তারা হাসা হাসি করে অরিত্রানের গায়ে পরছে।এতে অরিত্রানের অনেক বিরক্ত হওয়ার কথা কিন্তু সে হচ্ছে না।তাদের সাথে সেও হাসছে।গল্প করছে ।যেন তাদেরই একজন সদস্য।ওয়াসেনাত ভারি অবাক হয়ে দেখছে এই দৃশ্য।বাচ্চাদের একটাই কথা অরিত্রানকে দেখতে একদম নায়ক নায়ক লাগে।কয়েকজনের তো এতোই পছন্দ যে তারা অরিত্রানের সাথে ছবিও তুলছে।ওয়াসেনাতের ফোন দিয়ে।অরিত্রান হাসছে,কপাল কুঁচকাচ্ছে।মাঝে মাঝে গম্ভীর হচ্ছে।ওয়াসেনাত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সব।নানুবু হাত দিয়ে ঠেলছে ওয়াসেনাতকে।নানুবু এখানের একজন বয়স্ক সদস্য।পান খেয়ে লাল হওয়া দাঁত বের করে তিনি হাসছেন।ওয়াসেনাত কপাল কুঁচকে বললো,
—-“ কি!!”

জবাব দিলেন না তিনি। তার সাথে বসে থাকা বাকিরাও হাসছে।ওয়াসেনাত কৌতুহলি হয়ে তাকিয়ে আছে।তারা একে অপরের কানে কানে কিসব বলছে আর হাসছে।ওয়াসেনাত বললো,
—-“ নানুবু!!কি হয়েছে??”
নানুবু কিছু বললো না।আবার গা দুলিয়ে হাসা শুরু করলো।ওয়াসেনাত বিরক্তি সুর টেনে বললো,
—-“ বলবে কি হয়েছে??এভাবে হাসছ কেন??”
এতক্ষণে নানুবু পানের পিক ফেলে বললো,
—-“ এই সোনার মানিক কে গো নাতনি??”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
—-“ বললাম না আমার ভালো বন্ধু।”
পাশ থেকে আর একজন বৃদ্ধা হেসে বললো,
—-“ কেমন ড্যা বন্ধু!!”
ওয়াসেনাত লাজুক হেসে বললো,
—-“ আমাকে লজ্জা দিতে চাচ্ছ তাই না দাদু!!”
সবাই হো হো করে হেসে ফেলে।কয়েক জন এগিয়ে এসে ওয়াসেনাতের পাশে বসে বললো,
—-“ আমগো পলারে পছন্দ হইছে।এক্কারে হীরার টুকরা।”
ওয়াসেনাত ঠোঁট ফসঁকে হেসে ফেলে।হাসতে হাসতে বলে,
—-“ তোমাদের কাছে তো পৃথিবীর সব ছেলেই হীরা,মনি,মুক্তা।কালা চাঁদরেও হীরা মনে হয় ধলা চাঁদরেও হীরা মনে হয়।তবে দুই ধরনের হীরাই আছে।ব্ল্যাক ডাইমন্ড,হোয়াইট ডাইমন্ড ।”
কথাটা বলেই ওয়াসেনাত হাসে তার সাথে তালমিলিয়ে হাসে কাজের মেয়ে রিতা।রিতার সাথে আরো কয়েকজন কাজের মানুষ আছে।এরাও এখানের সদস্য।বাচ্চাদের আর বৃদ্ধাদের দেখাশুনা করে এরা।
আজকের খাবার বিরিয়ানি।অরিত্রানের চোখ কপালে।সে চোখ গোল করে করে তাকিয়ে আছে প্লেটের দিকে।অনেক আগে কোন একদিন এই ধরনের খাবার সে খেয়েছে বলে তার মনে পড়ছে।আবার পড়ছে না।অনেক বছর বিদেশে থেকে তার খাবারের তালিকা একদম পাল্টে গেছে।তার খাবার তেল,মশলা,ছাড়া।এত স্পাইসি খাবার পিছনে ফেলে আশা ১০–১২ বছরে কখন খাওয়া হয়নি তার।ওয়াসেনাত বেশ অয়েস করে খাচ্ছে।মুখের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন কি না কি খাচ্ছে!!অরিত্রান খাচ্ছে না।ওয়াসেনাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত হাত দিয়ে খাচ্ছে।এতেও অরিত্রান নাক ছিঁটকাচ্ছে।লম্বা নাকটা উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে সে।সবাই খাচ্ছে শুধু অরিত্রান তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত অনেক সময় পরে সবার দিকে তাকিয়ে অবাক।সবাই খাওয়া বন্ধ করে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে আরো অবাক।অরিত্রান না খেয়ে শুধু তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।দৃষ্টি স্থির।ওয়াসেনাত সবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার অরিত্রানের দিকে তাকায়।জোড়পূর্বক হাসির চেস্টা করে সে বললো,

—-“ কি হয়েছে আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন??”
অরিত্রান কিছু বললো না।সে তাকিয়ে আছে।চোখের পাতা ফেলছেনা।ওয়াসেনাত দাঁত বেড় করে সবার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে।সবাই কপাল কুঁচকে কৌতুহলি হয়ে তাকিয়ে আছে।বাচ্চারাও খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের চোখের সামনে হাত নাড়ায়।তবুও তার খবর নেই।না পারতে ওয়াসেনাত হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দেয় অরিত্রানকে।সবাই হো হো করে হেসে উঠে একসাথে।অরিত্রান ভড়কে যায়।অপ্রস্তুত হয়ে সে চারপাশে তাকায়।ওয়াসেনাত লজ্জায় মাথা নতজানু করে।অরিত্রান চুলের মাঝে হাত ঢুকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে একটু হাসার চেস্টা করে।ওয়াসেনাত দাঁতে দাঁত চেপে কন্ঠ নামিয়ে বললো,
—-“ এমন ক্যাবলার মত তাকিয়ে থাকার মানে কি??”
অরিত্রান কিছু বলার আগেই নানুবু বললো,
—-“ কি দাদুভাই তুমি কি নিজের হাতে খেতে পারোনা??”
ওয়াসেনাত সহ বাচ্চারা অবাক হয়ে চেঁচিয়ে বললো,
—-“ কি??”
অরিত্রান হাবার মত তাকিয়ে আছে।সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।বৃদ্ধারা হাসছে।মুখটিপে হাসছে।নানুবু আবার বললো,
—-“ এত অবাক হউ ক্যা মিইয়া।এটা কোন সমস্যা না।তোমারে খাওয়াই দেওয়া লাগে না??”
অরিত্রান অবাক।সাথে বিস্মিত!ওয়াসেনাত কপাল কুচঁকে বললো,
—-“ কি বলো দাদু এই বুড়া ছেলেরে খাইয়ে দেওয়া লাগে??এই আপনাকে সত্যি কেউ খাইয়ে দেয় বাসায়??”
অরিত্রান হতবাক।ওয়াসেনাতের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।অরিত্রান এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
—-“ আমি চামচ দিয়ে খাই।”
ওয়াসেনাত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে বললো,
—-“ বাচা গেলো।আমি তো অবাক!!এত বড় ছেলেকে যদি হাতে ধরে খাইয়ে দেওয়া লাগে তাহলে তো দুনিয়া শেষ।এই রিতা চামচ নিয়ে আয় তো।”
নানুবু দ্রুত বললো,
—-“ এই না না।বিরিয়ানি চামচ দিয়ে খাইতে মজা না।হাতের স্বাদ কি আর চামচে ফাইবা দাদুভাই!!”
ওয়াসেনাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-“ তাহলে কিভাবে খাবে??উনি তো হাতে খেতে পারে না।”
নানুবু দাঁত কেলিয়ে বললো,
—-“ ক্যান হাত দিয়া খাইব।”
—-“ আরে উনি তো হাতে খেতে পারে না।”
—-“ তো কি হইছে।আর একজনের হাতে তো খাইতে পারে।কি দাদুভাই পাড়ো??”
অরিত্রান কিছু বললো না।সে বুঝার চেষ্টা করছে আসলে কি বলছে এরা।ওয়াসেনাত বললো,
—-“ ও তুমি খাইয়ে দিবে!!ভালো দেও।”
বলেই নিজের খাওয়ায় মন দেয় ওয়াসেনাত।পাশ থেকে একজন বললো,
—-“ নারে হ্যাতি তো নিজে খাইবো।তুমি খাওয়াই দেও।”
ওয়াসেনাত চোখ বড় করে তাকায় সবার দিকে।সবাই মিটমিট করে হেসে খাওয়াই মন দেয়।ওয়াসেনাতের ঠোঁট আপন গতিতে হা হয়েগেছে।অরিত্রান অবাক।কিছুসময় পরে সেই অবাকতা কাটিয়ে একটা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।অদ্ভুত ভাবে সবাই হাসতে হাসতে ভিতরের ঘরে চলে যায়।বাচ্চারা যেতে চায় না।তবুও যেতে হয়েছে তাদের।অরিত্রান ওয়াসেনাতের কোলে ধাপ করে মাথা রাখে।ওয়াসেনাত চোখ ছোট করে অরিত্রানের মুখের দিকে তাকায়।অরিত্রান পায়ের উপর পা রেখে বললো,
—-“ কি হলো তোমাকে খাইয়ে দিতে বলেছে চোখ দিয়ে আমাকে গিলে খেতে নয়।”
ওয়াসেনাত এখনো হা।অরিত্রান কাত হয়ে ওয়াসেনাতের কোমড় পেঁচিয়ে কোলে নাক ঘঁষে।মুহূর্তেই ওয়াসেনাত কেঁপে উঠে।অরিত্রান উঠে বসে ওয়াসেনাতের সামনে।প্লেট নিয়ে ওয়াসেনাতের বাম হাতে দেয়।সোজা হয়ে ওয়াসেনাতের মুখামুখি বসে।বলে,
—-“ দেও শুরু করো।আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।”
অরিত্রান মনে মনে ভাবছে সে কিভাবে খাবে।সে তো এমন খাবার খায় না।আবার লোভ সামলাতেও পারছেনা ওয়াসেনাতের হাতের ছোঁয়া পাওয়ার।ওয়াসেনাত লজ্জায় কুকঁড়ে আছে।ভেবে পাচ্ছেনা কিভাবে খাওয়াবে।সংকোচ কাটিয়ে অরিত্রানের মুখে খাবার তুলে দেয়।অরিত্রানের বেশ হাসি পাচ্ছে ওয়াসেনাতের মুখ দেখে।সে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে।কিন্তু মুখটা চুপসে আছে।খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে অরিত্রান ওয়াসেনাতের আঙ্গুলে ছোট ছোট কামড় বসিয়ে দিচ্ছে।ওয়াসেনাত রেগে চেঁচিয়ে বললো,
—-“ আপনাকে খাওয়াতে পারবো না।”
অরিত্রান ভারি ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো,
—-“ কেন??”

ওয়াসেনাত রেগে বললো,
—-“ কেন মানে যানেন না??আপনি তিন বার কামড়ে দিয়েছেন আমার আঙ্গুলে।”
অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে হাসে।পানি খেয়ে দুঃখি ভাব নিয়ে বলে,
—-“ ব্যথা পাচ্ছ বুঝি?”
ওয়াসেনাত কিছু বললো না।প্লেট নিচে রেখে বাম হাতে অরিত্রানের বাহুতে জোড় খামঁচি দেয়।অরিত্রানে কোনো ভাব ভঙ্গি প্রকাশ হলো না।ওয়াসেনাত ঠোঁট উল্টে বললো,
—-“ আপনি মানুষ না কি রোবট??”
অরিত্রান হাসলো।বললো,
—-“ তোমার এই খামঁচি দেওয়ার স্বভাবের সাথে আমি পূর্ব পরিচিত।এখন বলো বেশি ব্যথা পেয়েছ??”
ওয়াসেনাত ছোট করে বললো,
—-“ হুম!!”
ওয়াসেনাত মাথা নিচু করে আছে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত টেনে নিয়ে আঙ্গুল গুলোতে ঠোঁট বসিয়ে চুমু খেয়ে নিলো।অরিত্রানের ঠোঁটের স্পর্শে ওয়াসেনাতের হাত কেঁপে উঠে।কাঁপে শরীর।ভিজা ঠোঁটের স্পর্শে ভেতর থেকে কাপিয়ে তুলছে ওয়াসেনাতকে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ আর কামড়ে দিবো না।ব্যথাও পাবে না।তোমার ব্যথায় ব্যথিত হয় আমার হৃৎপিন্ড!”
ওয়াসেনাত মনে মনে বিড়বিড় করে ,আপনি যদি এভাবেই আদর করে দেন তাহলে আবার আঙ্গুলে কামড়ে দিয়েন।আমি কিছু বলবো না।কিন্তু মুখ ফুটে বলা হলো না।কিছু কথা খুব গোপনে থাকে।একান্তে নিজের অন্তরে।ওয়াসেনাত হঠাৎ করেই বড্ড আবেগি হয়ে পরে।প্লেট সরিয়ে রেখে সে অরিত্রানের গলা জড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পরে অরিত্রানের শক্ত বুকে।অরিত্রান অবাক হয়।মেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ এমন কান্ড করে যে তার মত ব্যক্তিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।ওয়াসেনাত গভীর গলায় বললো,
—-“ অনেকে বলে প্রথম দিকে সবার ভালোবাসাই বেশি বেশি থাকে তারপর সব উড়ে যায়।আপনার ভালোবাসা প্রথম থেকেই এত এত বেশি যে আমার ভয় লাগছে খুব।আপনার কন্ঠ কানে আসতেই বুক কাঁপে আমার!বড্ড বেশিই কাঁপে!সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরে!রগে রগে তেজি রক্ত আরো দ্রুত চলে।অনেক অনেক দ্রুত।”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হেজাবের উপরে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু আঁকে।দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে বলে,
—-“ ভালোবাসা কখনই কমে না।এর রূপ রং পরিবর্তন হয় না।ভালোবাসা আলাদা ,সব কিছুর উর্ধ্বে।যখন তুমি কাউকে ভালোবাসবে তার সাথে তোমার হৃৎপিন্ডের শব্দের আদান প্রদান হবে।আমার হৃৎপিন্ডের শব্দ তোমার নাম কারা হয়েছে পরীজা।একবার এই শব্দের আদান প্রদান হলে কিছুই আর করার থাকে না।এই শব্দের যেমন কোন পরিবর্তন নেই ভালোবাসার রঙেরও পরিবর্তন নেই।তাই তোমার প্রতি যে ভালোবাসার জন্ম হয়েছে তা বহু বহু জন্মেও শেষ হবে না।ভালোবাসি পরীজা!!”
অরিত্রান আবার একটা চুমু বসিয়ে দেয় ওয়াসেনাতের হেজাবের উপরে।ওয়াসেনাতের চোখের পানিতে আবার অরিত্রানের পিঠ ভিঁজে উঠছে।অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে হেসে দেয়।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
—-“ তুমি খুব বাচ্চা পরীজা।আমার বাচ্চা পরীজা!!”
___________________________
বৃষ্টি থেমে গেছে।ঘাস ভর্তি মাঠ সতেজ সবুজ হয়ে আছে।সেই মাঠের মাঝে চোখ বেঁধে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে অরিত্রান খানকে।তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে বাচ্চারা।অরিত্রানের চোখ বন্ধ।কান খাড়া।তার কানে ভেসে আসছে খিলখিল হাসির শব্দ।সেই হাসি যে ওয়াসেনাতের এটা শত মাইল দুরে থেকে ও বুঝতে পারবে সে।মাঝে মাঝে আবার চাপা একটা হাসি কানে আসছে।এটাও ওয়াসেনাতের।হাসি আটকাতে সে মাঝে মাঝে মুখ চিপে হাসছে।অরিত্রানের অবস্থা করুন।তার নিজেকে অবলা পুরুষ মানুষ মনে হচ্ছে।মনে মনে ভাবছে,জীবনে কখনো তার এমন একটা অবস্থা হবে সে ভেবেছে কি!!ভালোবাসা তাকে কত কিছু হওয়াতে বাধ্য করছে!!অরিত্রানের আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবচাইতে শক্তিশালি নারী জাতি।এদের কাছে একটা অদ্ভুত পাওয়ার আছে।সেটা দিয়েই তারা সব কিছু করাতে বাধ্য করতে পারে।এই যেমন কিছুক্ষণ আগে সে বলেছে কানামাছি নামক খেলা সে খেলবে না।তবুও খেলতে হচ্ছে।ওয়াসেনাত নাছোড়বান্দা।খেলতে হবে মানে হবে।রাজি হয়নি সে তবুও চোখ বেধে দেওয়া হয়েছে।
অরিত্রান দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বললো,
—-“ ওয়াসেনাত আমি তোমাকে দেখতে পাসছিনা।কোথাই তুমি?এটা কেমন খেলা?”
ওয়াসেনাত হাসিতে ফেটে পরে।খিলখিল করে হেসে সে বললো,
—-“ দেখবেন কিভাবে !আপনার চোখ তো বাধাঁ।”
অরিত্রান ভারি গলায় বললো,
—-“ খুলে দেও কাপড়।”
ওয়াসেনাত চেঁচিয়ে বললো,
—-“ না না।আগে ধরেন।তারপর খোলা হবে।আপনি এখন চোর।”
অরিত্রান চেঁচিয়ে বললো,
—-“ হোয়াট!!!আমি জীবনে এই কাজ করি নি।এত বড় কথা আমাকে কেউ বলতে পারেনি।আর ইউ…..”
ওয়াসেনাত মিনমিন করে বললো,
—-“ আরে ওই চোর আর এই চোর এক না।এটা খেলার চোর।
অরিত্রান রাগে নাক ফুলায়।সাপের মত ফঁস ফঁস করছে সে।এটা আবার কেমন খেলা।চোর বলা হয় যেই খেলায়!!অরিত্রান বিড়বিড় করে বলে,ডিজগাস্টিং!!”
অরিত্রানের জীবন আজই শেষ।চারদিক থেকে এত চিমটি খেয়ে সে প্রচন্ড রেগে আছে।রাগ দমন করা মোটেও তার সাধ্যে নেই।তবুও চুপ করে আছে সে।অরিত্রানের অস্থিরতা দেখে ওয়াসেনাত নিজেই ধরা দেয়।অরিত্রান তো সেই একজায়গায় দাড়িয়ে আছে।তার কোন নড়চড় নেই।ওয়াসেনাত অরিত্রানের হাতে নিজের হাতের কব্জি মুঠো করিয়ে বললো,

—-“ এবার আমার চোখ বাধাঁ হবে।”
অরিত্রানের চোখ খোলা হলো।চোখে সব ঝাপসা লাগছে।হাত গিয়ে চোখ কচলিয়ে সে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়।প্রতিটি ছেলে এমন কাউকে চায় যে তাকে বুঝবে।অরিত্রান আস্তে করে বললো,
—-“ ইউ আ’র পারফেক্ট ফ’র মি!!”
ওয়াসেনাত হাত নাড়িয়ে খুঁজে চলেছে।কিন্তু কেউ তার হাতের নাগালেই আসছে না।শুধু চলছে হাসা হাসির গুঞ্জন।ওয়াসেনাত দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত।হাপিয়ে উঠেছে সে।অরিত্রান একটু দুরে দাড়িঁয়।সে খেলছে না।তবে ওয়াসেনাত তার কাছে আসতেই সরে যাচ্ছে।ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রাখছে।বাচ্চারা এই দৃশ্যেও মজা পাচ্ছে।”
কয়েক মিনিট পরেই ওয়াসেনাত কাউকে জাপ্টে ধরে।সবাই চিৎকার করা শুরু করে।আবার থেমেও যায়।ওয়াসেনাত ভাবে এটা নিশ্চুই অরিত্রান।কিন্তু পরক্ষণেই সে সরে আসে।গায়ের ঘ্রাণটা কেমন যেন!!!অরিত্রানের গায়ের ঘ্রাণ ওয়াসেনাতের চেনা আছে।ওয়াসেনাত ভারি অবাক হলো।অরিত্রান বাদে এখানে তেমন বড় কেউ নেই।তাহলে এটা কে??ওয়াসেনাত দু’হাতে চোখের কাপড় সরিয়ে নেয়।চোখ ছোট ছোট করে প্রথমে তাকায়।তারপর ধীরে ধীরে ঝাপসা চোখ পরিষ্কার হয়ে আসে।সামনে তাকিয়ে ওয়াসেনাত হতবাক।অরিত্রান তার সামনে দাড়িয়ে আছে।একটু কাত হয়ে দেখতেই সে চমকে উঠলো।বিপরীত লোকটাকে দেখেই ভয়ে কেঁপে উঠলো সে।চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ ভেসে উঠেছে।দু’হাতে অরিত্রানের ডান হাতের মোটা বাহু চেপে পিছনে লুকিয়ে পরে সে।অরিত্রান একবার ওয়াসেনাতের ভীতু হওয়া মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার সামনে চোখ রাখে।ওয়াসেনাত খামঁছে ধরেছে অরিত্রানের বাহু।যেন এটিই তার শেষ আশ্রয়স্থল।
#চলবে__________