পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 34

পৃথিবী বর বিচিত্র।যাকে যার পছন্দ না ঘুরে ফিরে তাদের একবার হলেও আমনা সামনা হবেই।অরিত্রানের সবুজ চোখ দুই করে চার কার্ণিশ লাল হয়ে উঠছে।তার সামনের ব্যক্তিরও একুই অবস্থা।কালো চোখ আর কালো নেই।লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।অরিত্রান প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাড়িঁয়েছে।তার সামনে দাড়িঁয়ে ইহান চৌধুরী।ইহানের বুকটা কাঁপছে।তবুও সে শান্ত হয়ে দাড়িঁয়ে আছে।নিজের ভয়কে জয় করতে চাচ্ছে।অরিত্রানের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের টি-শার্ট খাঁমছে ধরে আছে।তার আঙ্গুল গুলো অরিত্রানের পিঠে চাপ খাচ্ছে।অরিত্রানের দৃষ্টি ভয়ংকর রকমের হিংস্র।ওয়াসেনাত অরিত্রানের পিছন থেকে মাথা বের করে একবার সামনে তাকায়।সামনের ব্যক্তিকে দেখেই ভয়ে আবার অরিত্রানের পিছনে লুকায়।কয়েক সেকেন্ড পরে ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে কাত হয়ে ঘুরে তার মুখটা দেখে নেয়।ভয়ে চুপসে যায় সে।ভয়ে ঢোক গিলে পিছনে চলে আসে।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে এরা চোখে চোখেই খুন করবে দু’জন দু’জনকে।ওয়াসেনাতকে অরিত্রানের এত কাছে দেখে ইহানের রক্ত টগবগ করে উঠছে।রাগে শরীর জ্বলছে।চোখ হচ্ছে লাল।ওয়াসেনাত নিজের পা উচুঁ করে অরিত্রানের কানের কাছে মুখ নিয়ে মিনমিন করে বললো,
—-“ এই লোকটা আমাকে কিডনাপ করেছে।আর এই বাড়ি দখল করতে চায়।ভালো লোক না এই লোক।”

অরিত্রান কিছু বললো না।ওয়াসেনাত যানেই না এই ইহানই সেই ইহান।এই লোক যে কি তা অরিত্রানের চাইতে বেশি কেউ যানে বলে অরিত্রানের মনে হয় না।ইহানের দৃষ্টি এতসময়ের পরে ওয়াসেনাতের দিকে যায়।যার জন্য এত দুর ছুটে আসা।আর এসেই অরিত্রানের সাথে দেখা হবে ভাবতেও পারেনি সে।হঠাৎ বাতাস শুরু হয়।ওয়াসেনাতের হিজাবের অংশ উড়ছে।উড়ছে তার জামা।ইহানের চোখ স্থির হয়ে আছে।চোখে জ্বল জ্বল করছে কারো রূপ।এই রূপেই যেন সে মরতে পারবে।ওয়াসেনাত উড়না সামলাতে সামলাতে আবার অরিত্রানের পিছনে চলে আসে।ইহানের ভয় আর কাজ করছে না।সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে দেখার জন্য এক দুর ছুটে আসা সার্থক মনে হচ্ছে তার।ওয়াসেনাতকে হঠাৎ করে আর দেখা যাচ্ছে না।ইহান বিরক্ত হচ্ছে।বিরক্ততে কপাল কুঁচকে সে অরিত্রানের দিকে তাকায়।অরিত্রান আগের মত তাকিয়ে আছে।সে তো ভেবেছে অরিত্রান তাকে মেরে হাড্ডি ভেঙে দিবে কিন্তু সে এমন কিছুই করছে না।শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য!কিন্তু এই অরিত্রানের জন্য সে ওয়াসেনাতকে দেখতে পাচ্ছেনা।ইহান ডান হাত দিয়ে অরিত্রানের বুকে হাত দেয়।তাকে সরিয়ে দিতে ধাক্কা দিতে চায়।অরিত্রানের রাগটা ওখানেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।রাগ চেপে রাখতে না পেরে সে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে গাল বরাবর ঘুঁষি বসিয়ে দিয়েছে।ইহান ছিটকে পরে।ওয়াসেনাত চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।অরিত্রান স্থির।তাকে দেখে বেশ স্বাভাবিক লাগছে।কিছুক্ষণ আগের কিছুই যেন তার মনে নেই।ইহান নাকমুখ ফুলিয়ে অরিত্রানের বুকে ধাক্কা দেয়।অরিত্রান পিছিয়ে যায়।ওয়াসেনাত মৃদু চিৎকার করে উঠে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের দিকে তাকাতেই ইহান ঘুঁষি বসিয়ে তার ঠোঁট ফাটিঁয়ে দেয়।ওয়াসেনাত অবাক!!অরিত্রানের রক্ত দেখে সে আর্তনাদ করে উঠে।অরিত্রানও থেমে নেই।ছোট খাটো একটা বকসিন গেম হয়ে গেছে।অরিত্রানের রক্তে ওয়াসেনাতের হৃৎপিন্ড লাফাচ্ছে।চোখে পানি জলজল করছে।কান্না আটকে রাখার কারনে গাল নাক লাল হয়ে গেছে।অরিত্রান ইহানকে ইচ্ছামত পিটাচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিনের ক্ষোব মিটাচ্ছে।ইহান আর মারছে না।থামাতে ও চেষ্টা করছেনা।সে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের দিকে।ওয়াসেনাত উত্তেজিত হয়ে শুধু অরিত্রানকে দেখছে।ইহানের গার্ডস চলে এসেছে।অরিত্রান হাত ঝাকাঁতে ঝাঁকাতে দাড়িঁয়ে পরে।ইহানের রক্তাক্ত মুখ দেখেও ওয়াসেনাত ফিরে তাকালো না।ব্যাপারটা তাকে ব্যথিত করছে।এত মার খেয়েও ইহান হাসতে হাসতে উঠে বসে।অরিত্রানও ঘাসের উপরে বসে পর।ঘাসের পিছনে দু’হাত রেখেছে সে।ডান হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।এক ভ্রু কুঁচকে অরিত্রান ইহানের দিকে তাকিয়ে হাসছে।সাথে হাসছে ইহান।ওয়াসেনাত হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িঁয়ে আছে।দু’জনের গতিই সে বুঝতে পারছে না।ইহান হাসতে হাসতে বললো,
—-“ তোর হাতের জোড় তো আরো বেরে গেছে।কাহিনী কি??”
অরিত্রান জবাব দিলো না।চোখ বাঁকিয়ে আগের মত তাকিয়ে আছে।ইহানের গার্ডসদের মধ্যে একজন সাহস করে বললো,
—-“ বস আপনি তো অনেক ব্যথা পেয়েছেন।চলেন আপনাকে নিয়ে যাই।”
ইহান ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

—-“ ভালোবাসায় তো জান হাজির।আমি তো এই রূপে মরতেই এসেছি।”
ওয়াসেনাত অপ্রস্তুত হয়ে পরে।এদের কিছুই সে বুঝতে পারছে না।অরিত্রান এত চুপ কেন??একদম রাগ প্রকাশ পাচ্ছে না।সে চুপ চাপ বসে হাসছে।ইহান ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছে।ইহান তাকিয়ে আছে তো আছেই।তার চোখই সরছেনা।যেন সে এক অবিশ্বাস্য কিছু দেখছে।অরিত্রান ইহানের চোখ পড়ছে।হাত মুঠো করে সে ঘাস খামঁছে ধরছে।আঙ্গুল ঘাসে ডেবে যাচ্ছে।চোয়াল শক্ত থেকে শক্ত হয়ে উঠছে।ইহান এবার অরিত্রানের চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে।হাসতে হাসতে বলতে শুরু করে,
—-“ তোর সাথে কি আমার জন্মের কোন সম্পর্ক আছে??সব সময় দেখি একই জিনিসে পাগল হই দু’জনে।গুড!ভেরি গুড!”
অরিত্রানের কোন জবাব পেলনা ইহান।অরিত্রান আর্ধশোয়া হয়ে পায়ের উপরে পা তুলে।ঠোঁট গোল করে শিশ বাজায়।ইহান একটু ভড়কে গেলো।অরিত্রান মিনিট পাঁচ এক শিশ বাজিয়ে ইহানের চোখে চোখ রাখে।ইহান কেঁপে উঠে পিছিয়ে যায়।অরিত্রান শব্দ করে হেসে উঠে।আবার শিশ বাজিয়ে বললো,
—-“ সব সময়ই তো হার কপালে থাকে এবার তো হৃৎপিন্ডের মামলা।”
ইহার নিজেকে সামলে হাসলো।মাথা দু’পাশে কাত করে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“ আরে বাস্ অরিত্রান খানেরও দেখি হৃৎপিন্ড আছে।বেশ বেশ ভালো।তবে এইবার জিতটা আমার হওয়া চাই।হুসনেপারীর ব্যাপার দোস্ত ইসসসস্ সরি দুশমন।বিশ্বাস কর তোর সাথে দুশমনির এত বছরে এই প্রথম মার খেয়ে মজা পেলাম।আচ্ছা থামলি কেন?আবার মার তো।এই হাসির জন্য আমি তো মরতেও পারি।আহহহ্ কেয়া স্মাইল্!!আমি ফিদা!!!দিল হারকে ব্যাঠা হু ইয়ার!!আবার স্যরি দুশমন!!”
অরিত্রানের চোখে আগুন।ইহান ওয়াসেনাতের দিকে ঠোঁট বাঁকা করে হেসে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত চোখমুখ কুঁচকে আছে।ইহান যখন মাইর খাচ্ছিলো ওয়াসেনাতের কেন যেন অনেক ভালো লাগছিলো।তাই তো সে হেসে দিয়েছে।তবে সেই হাসি নিঃশব্দের।ওয়াসেনাত অরিত্রানের হাত ধরে বললো,
—-“ চলেন তো এখান থেকে।এই লোক আস্ত একটা অসভ্য!!”ওয়াসেনাতের অগ্নীময় নীল চোখ।
ইহান বুকের বা পাশটায় হাত দিয়ে বললো,
—-“ মারডালা!!”

ইহান ধপ করে ঘাষের বুকে শুয়ে পরে।অরিত্রানের চোখে রক্ত জমেছে।ওয়াসেনাত সেই দৃশ্য দেখে আতঁকে উঠে।দ্রুত অরিত্রানকে টানতে থাকে।ইহান ঘাষের উপর একহাত রেখে সেখানে মাথা রাখে।গায়ের কালো জ্যাকেট খুলে আবার আগের মত একহাতে ভর দিয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে।অরিত্রান ইহানকে পর্যবেক্ষণ করছে।ওয়াসেনাত হাটু গেরে বসে পরে অরিত্রানের পাশে।নিজের উড়নার কোণা দিয়ে অরিত্রানের ঠোঁটের রক্ত মুছে দেয় সে।বাতাসে ওয়াসেনাতের জামা,উড়না উড়ছে সাথে তালমিলিয়ে উড়ছে অরিত্রানের লম্বাটে সামনের সিল্কি চুল।অরিত্রানের ঠোঁটে ওয়াসেনাতের হাত লাগতেই ওয়াসেনাত নিজেই আর্তনাদ করে বললো,
—-“ ওহ্ লেগেছে না।কি দরকার ছিলো এই বেয়াদপ লোকটার সাথে লাগার।অসভ্য একটা।”
ওয়াসেনাত গরম চোখে তাকায় ইহানের দিকে।ইহান তাতেও ইমপ্রেস হচ্ছে।ঠোঁটের হাসি আরো মেলে যাচ্ছে তার।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মুখ নিজের হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে হিজাবের পাশ থেকে বেরিয়ে আসা চুলগুলো আবার ঠেলে দেয়।হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে গালের লাল অংশে হাত বুলিয়ে দেয়।মাথাটা কাত করে ইহানের দিকে তাকায় সে।বাঁকা করে হেসে বলে,
—-“ হার মোবারক হো!!”
ইহান এবার ক্ষেপে গেলো।শোয়া থেকে উঠে এসে ওয়াসেনাতকে ঠেলতে হাত বাড়ায়।অরিত্রান হাত ধরে শান্ত চোখে বললো,
—-“ পরীজা আমার।”
অরিত্রান এক লাফে দাড়িয়ে হাত মুছড়ে ধরে।ইহানের মুখশ্রী পরিবর্তন হয়ে গেছে।ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।দাঁতে দাঁত চেপে সে হাত ছাড়াতে চায়।অরিত্রান হাসে।গা দুলিয়ে হেসে বললো,
—-“ তোর কপাল ভালো তুই আমার প্রিয় শত্রু।তা না হলে এত দিনে তোর”
কথা শেষ করার আগেই ইহান বললো,
—-“ আমার জায়গা মাটির নিচে হতো।রাইট!!”
ইহান ব্যথা নিয়ে হাসছে।অরিত্রান ছুঁড়ে দেয় ইহানকে।ইহানের গার্ডসরা এগিয়ে এসে ধরে তাকে।ইহান ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে ঠোঁট বাকিঁয়।ওয়াসেনাত অরিত্রানের হাত ধরে বললো,

—-“ চলেন।”
ইহান গলা উঁচিয়ে বললো,
—-“ হুসনেপারী নীলে কিন্তু মারাত্নক লাগে তোমাকে।আমি তো ফিদা।”
ইহার বিশ্রি করে দাঁত ক্যালিয়ে হাসে।পাশে থুঁ মেরে মুখের রক্ত ফেলে দেয়।তারপর অরিত্রানের দিকে তারিয়ে বললো,
—-“ আমি জানি আমাকে তুই ততক্ষণ মারবিনা যতক্ষণ সেই খুনিকে না পাস।তবে সে যে কোথায় আমি নিজেও যানি না।তোর সাথে ডিলে যেয়ে লাভ নেই।তা না হলে অদলবদল করে নিতাম।এ ইশক্ আসান নেহি হে মেরি দুশমান।”
ওয়াসেনাত রেগে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
—-“ আপনি যাবেন এখান থেকে না কি ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?”
ইহান চোখ ছোট করে বুকের পাশে হাত রেখে বললো,
—-“ নরম হাতের ধাক্কা কেন শুধু জীবন দিতেও রাজি।এই চোখের প্রেমে পরে গেলাম হুসনেপারী!ওয়াহহহহ্ কি তেজ!!তাই তো বলি অরিত্রানের মত পাথর গলে গেলো কিভাবে।আই লাইক ইট।এন্ড লাভ….”
অরিত্রান ইহানের গাল বাকাঁ করে দিয়েছে বাকি কথা বলার আগে।গার্ডসরা টেনে নিয়ে আসে ইহানকে।গেটের দিকে যেয়েও ইহান পিছনে পিরে ওয়াসেনাতের দিকে হাত নাচায়।উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দেয়।ওয়াসেনাত ঘৃন্য চোখে তাকায়।অরিত্রানের আজ প্রথম নিজেকে নির্বোধ মনে হচ্ছে।সে চাইলেই ইহানের এই মাথা আলাদা করে দিতে পারতো কিন্তু তারও একটা জায়গায় আটকে পরতে হয়েছে।কিন্তু অরিত্রান ছেড়ে দেওয়ার মানুষ না।ওয়াসেনাত অরিত্রানের ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারছেনা।অরিত্রান একবার গম্ভীর তো একবার হাসছে।ওয়াসেনাতের কুঁচকানো ভ্রু দেখে অরিত্রান বললো,
—-“ লাভ নেই।তোমার অরিত্রানকে বোঝা যতটা সহজ অরিত্রান খানকে বোঝা কঠিন পরীজা।তুমি পারবে না।এটা।চলো বাসায় যাওয়া যাক।”
ওয়াসেনাত কয়েক সেকেন্ট তাকিয়ে থেকে বললো,
—-“ যাওয়ার আগে সবাই কে বলে যাই চলেন।”
—-“ ওকে।”

_______________________________________
সারাটা পথ অরিত্রান তেমন কথা বললো না।ওয়াসেনাতের সাথে গলি পর্যন্ত হেঁটে এসেছে সে।কিছু দূর দাড়িঁয়ে সে ওয়াসেনাতের চলে যাওয়া দেখেছে।ওয়াসেনাতও ঘুরে ঘুরে কয়েকবার তাকিয়েছে।মাঝে আবার একটু মিষ্টি হাসিও গিয়েছে।অরিত্রানের সকল হতাশার অবসান সেখানেই যেন হয়েছে।সেও একটু হাসলো।ওয়াসেনাত ভাবছে অন্যকথা।তার মনে হচ্ছে ওই ইহান আর ওই ইহান নিশ্চুই এক।তা না হলে এত রাগ শুধু শুধু কেন দেখাবে।অরিত্রান খুন করে এটা জানা কথা কিন্তু এভাবে মারামারি করবে এটা তো অদ্ভুত কান্ড।কি করে সম্ভব এটা!!বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় ওয়াসেনাত।
রাত প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই।ওয়াসেনাত জীবনে প্রথম নিজের ঘরে চোরের মত ঘুরছে।বাবার লাইব্রেরির সামনে দাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় সে।সে ধীর পায়ে পা টিপে টিপে লাইব্রেরিতে ডুকে পরে।খুব সাবধানে সে খুঁজ চালাচ্ছে।কিন্তু লাইব্রেরি জুড়ে এত এত বই তার নিজেরই মাথা ঘুরছে।এত বইয়ের মাঝে সেই ভিডিও কোথায় পাবে সে??ভাবতে ভাবতেই ওয়াসেনাত লাইব্রেরির সব বই এলোমেলো করে খুঁজতে শুরু করে।এতো খুঁজেও ওয়াসেনাত হতাশ হলো।না নেই কোন ক্লু।ঘামে একাকার শরীর নিয়ে যেই ওয়াসেনাত পিছনে তাকালো সাথে সাথে চমকে উঠলো সে।ভয়ে আড়স্ট হয়ে গেছে মুখের চোয়াল।ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু।তৌফিক শান্ত গলায় বললো,
—-“ মামনি এখানে কি করছো?”
ওয়াসেনাত ভয়ে রিতিমত কাঁপছে।তৌফিক হাতের পানির বোতল এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
—-“ এই নেও পানি পান করো আগে।”
ওয়াসেনাতের হাত কাঁপছে থরথর করে।সে বোতলটা নিতেই পারছে না।কাঁপা হাত আরো কাঁপছে।তৌফির এবার বোতলের ঢাকনা খুলে দিলো।বললো,
—-“ এতো রাতে লাইব্রেরিতে বই খুঁজতে আসার তি দরকার ছিলো বলো তো মামনি??তাই তো আজ এভাবে ভয় পেলে।এটা মোটেও উঁচিত না।এখন ঘুমের সময়।এই নেও পানি পান করো।”

ওয়াসেনাত পানি নিলো।খেয়েও নিলো।সে বোঝতে পেরেছে তার বাবা কিছুই বোঝেনি।কথাটা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস নেয় সে।পানি খাওয়ার পরে ওয়াসেনাত বললো,
—-“ বাবা যা খুঁজতে এসেছি তা পাইনি।আমি বরং ঘুমাতে যাই।”
ওয়াসেনাত পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়।টেবিলে একটা কার্ড দেখতে পায়।কৌতুহলি হয়ে বাবাকে প্রশ্ন করে ,
—-“ এটা কে দিয়েছে বাবা??”
তৌফিক একবার তাকালো তারপর বললো,
—-“ অরিত্রান খানের বাড়িতে কালকে পার্টি আছে।ইনভাইট করেছে।”
ওয়াসেনাত আনমনেই বললো,
—-“ কই আমাকে তো এমন কিছু বলেনি উনি??”
তৌফিক ফট করে কথাটা ধরে নিয়ে বললো,
—-“ কে বলেনি তোমাকে??”
ওয়াসেনাত ভড়কে যায়।নিজেকে সামনে সে বললো,
—-“ আসলে বাবা রিমির যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে অরিত্রান খানের আত্নিয় হয়।সে হিসাবে তাকেও ইনভাইট করার কথা রিন্তু রিমি তো আমাকে এমন কিছুই বললো না।তাই বললাম এই আর কি!!!”
তৌফিক কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে বললো,
—-“ ও।তুমিও রেডি থাকবে।পরিবার নিয়ে না গেলে অরিত্রান খান কি না কি করবে।যাই হোক।তোমাকেও কার্ড দেওয়া হয়েছে।ভেবে পাচ্ছিনা ওর কাছে এত খবর যায় কিভাবে!!তুমি আমার কে এটা বলার প্রয়োজন নেই।বাবার সাথে যাবে আর বাবার সাথেই আসবে।এখন যাও।”
_____________________________________
ইহান সোফায় বসে আছে।তার সামনে বসে আছে তার বাবা ইমান চৌধুরী।ইহানের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে তিনি বেশ চিন্তিত।আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।কোথায় আমুদফুরতি করবে তা না ছেলের এমন অবস্থায় তিনি শিহরিত।ইহানের গালে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে নার্সে।ইমান বেশ উত্তেজিত গলায় বললো,
—-“ এত মার খেলি আর একটাও দিয়ে আসতে পারলি না??”
ইহান মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
—-“ মারতে তো গিয়েছিলাম বাবা।কিন্তু পারলাম কই।মেয়েটা কেঁদে দেয় দেয় অবস্থা।ওই চোখে কান্না মানায় না।”
ইমান হতাশ গলায় বললো,
—-“ সেটা তো জানি তুই জীবনেও অরিত্রানের সাথে পারবি না।সব সময় শুধু মার খাবি।”
ইহান আবার হাসলো।তারপর মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বললো,
—-“ আজকের মার ভিন্ন বাবা।আজ ইচ্ছে করে খেয়েছি।”
ইমান ভারি অবাক গলায় বললো,
—-“ হোয়াট!!মানে কি??মার খেয়ছিস কেন??তাও নিজের ইচ্ছেতে???”
—-“ ওর জন্য তো শুধু মার না জীবন দিতেও রাজি বাবা!!এমন রূপে মরাও কম হবে।”
—-“ মেয়ের মামলা না কি??”
ইহান রেগে মদের বোতল ছুঁড়ে বললো,
—-“ মেয়ে!!ও সাধারন মেয়ে না বাবা।ও আলাদা।পাগল করা চোখ,নেশা লাগানো ঠোঁট,চোখা লাল নাক,ইশশশশ্ আমি পাগল হয়েছি বাবা।জাস্ট পাগল।ওকে চাই আমার।”
ইমান হেসে বললো,
—-“ অপেক্ষা কেন??তুলে নিয়ে আসলেই হবে।”
ইহান হাসলো।বললো,

—-“ আমার জীবনের সবচাইতে বড় শত্রু অরিত্রানও যে চায় ওকে।তবে এবার জিত আমার নামে।”
বলেই আর একটা মদের বোতলে চুমুক দেওয়া শুরু করে।ইমান আতঁকে উঠে বললো,
—-“ পাগল হলি না কি??অরিত্রানের হাতে জীবন দিতে চাস!!তোর কত মেয়ে লাগবে আমি জোগাড় করে দিবো ওই মেয়ে বাদ।
—-“ স্যরি দু’সে ও ছাড়া গতি নেই।সি ইজ মাই ফার্স্ট লাভ!!আমার প্রথম প্রেম বাবা!!প্রথম!!
—-“ পাগলের মত বকা বন্ধ কর।মরতে চাস না কি??
ইহান চোখ বুজে ওয়াসেনাতের খেয়ালে ডুব দেয়।বন্ধ চোখেই সে বললো,
—-“ হুম!!পাগল তো আগেই হয়েছি।আর মৃত্য !!সেটা তো হুসনেরপারীকে দেখেই হয়েছে।তবে এবাবের যুদ্ধ ভিন্ন বাবা।একদম ভিন্ন।
ইহান হাসতে শুরু করে।ইমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে!!এই হাসি সাধারন না।ভয়ংকর এর মানে!!
#চলবে________