পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 24
রাত ১১টায় এসে ঘড়ির কাটা আটকে পড়েছে।ওয়াসেনাত মৃদু পায়ে ছাদের দিকে পা বাড়িয়েছে।মেয়েদের আঁচল মাটিতে ঝুঁলে কিন্তু ওয়াসেনাতের ঝুঁলছে চুল।বিশাল লম্বা চুলগুলো আজ খোলা।মুক্ত হয়ে তারা নিজেদের মত গুটিশুটি মেরে আপন মনে ফ্লোরে খেলা করছে।ওয়াসেনাতের হাঁটার তালে তারাও দুলছে।লম্বা সরু চুল।এঁকেবেঁকে পড়ে আছে নিচে।ফ্লোরের সাথে মিশে মিশে ছাদের একটা কোণায় এসে হাজির।সাথে তাদের মালিক।এত রাতে চুল ছেঁড়ে ছাঁদে আসতে নেই ওয়াসু!!আজ আম্মু থাকলে এই কথাটাই বলতো তিনি।ওয়াসেনাত ভারী অবাদ্ধ!মায়ের নিষেধ না মেনে সে কিন্তু ছাদে পা রাখতো।দৌড়ে বেড়াতো।আবার হুট হাট হোঁচট খেয়ে হাঁটুর অনেক অংশ ছিঁড়ে ফেলতো।মায়ের কাছে এসে কাঁদতো না সে।চুপিচুপি নিজের রুমে ঘাপটি মেরে থাকতো।তবে আজ কেনো কান্না??চারিদিক সুনসান নীরবতা। রাত ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে। বারছে এর অন্ধকার। শা শা বইছে বাতাস।সেই বাতাসের ঝাপটানিতে দুলছে ওয়াসেনাতের চুল।আকাশে চাঁদ নেই।চাঁদ আজ বিলুপ্ত। মেঘের আড়ালে নিজেকে লিকাইত করেছে।অন্ধকার আকাশ হলেও আলো আছে জমিনে।বাসার সামনের চিপা রাস্তার কোণায় কোণায় ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে।তীর্যক আলো এসে জমছে ওয়াসেনাতের মুখে।ছাদের আলো নিভানো।বিশাল জায়গা জুড়ে ছাদ।সেই ছাদের চার কোণা ভরা ফুল গাছে।ডান দিকে একটা দোলনা আছে।নিচের বড় বড় গাছগুলো বেয়ে ছাদে এসে পড়েছে।কাঠগোলাপ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া আরো অনেক গাছে।ওয়াসেনাতের দৃষ্টি স্থির।স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।বাতাসের তাড়ায় ওয়াসেনাতের কপালে ছড়িয়ে থাকা কয়টা চুল অবাধ্যের মতো উড়ছে।মাঝে মাঝে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে তাকাচ্ছে ওয়াসেনাত।আবার দৃষ্টি আগের মতো।ঘুম আসছে না।তাই ছাদে হাঁটতে এসেছে।কিন্তু এই মহনীয় বাতাসে তার মনটা বড্ড অবাধ্য হয়ে ভাসছে।
হঠাৎ একজোড়া হাত রেলিংয়ের উপরে দেখে ওয়াসেনাত চমকে তাকায়।হাতগুলো ক্রমশ উপরের দিকে উঠছে।কেউ দেয়াল বেয়ে ছাদে উঠতে চাচ্ছে!এত রাতে কেউ দেয়াল বেয়ে উঠছে!ওয়াসেনাত তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে পাশের কোণায় থাকা লাঠি তুলে নেয়।এক হাতে লাঠি রেখে আর এক হাতে ছাদের লাইট জ্বালাতে হাত বাড়ায়।এর মাঝেই কেউ উঠে এসেছে ছাদে।তাগড়া এক যুবক।মুখ দেখা যাচ্ছে না।হাত ঝাড়ছে সে।জামা ঝাড়ছে।ওয়াসেনাত সতর্ক!কয়েক কদম পিছিয়ে লাইটের সুইচ খুঁজে চলেছে সে।ভয়ে বুক কাঁপছে।এত রাতে কেউ কেনো ছাদে আসবে এটাই তার মাথায় আসছে না?কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ওয়াসেনাত।সে কি চিৎকার করে বাবাকে ডাকবে!কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দে বাহিরে আসছে না।কেনো??ওয়াসেনাত ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে দাড়িয়ে আছে।লাইট জ্বালাতেই লাঠি দিয়ে পিছনে কয়েক ঘাঁ দেয়।মুহূর্তে সে ব্যক্তি মৃদু আর্তনাদ করে বলে,
—” হোয়াট দ্যা হেল!!”
সামনে ফিরে তাকাতেই ওয়াসেনাত আরো চমকে উঠে।কে এই লোক?সবুজ চোখের এই মানবকে খুব পরিচিত মনে হলেও এই মুহূর্তে তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না।সে বুঝতেই পাড়ছে না কে এই লোক।কিন্তু কন্ঠ অদ্ভুত!! ভারী আশ্চর্যের বিষয় এটা নুহাশের কন্ঠের মতো শুনাচ্ছে।ওয়াসেনাত ভাবে,হয় তো সব সময় তার কথা ভাবে বলেই এটা হচ্ছে। যাকে দেখতে আলাদা তার কন্ঠ এক কেনো হবে?ওয়াসেনাত চেঁচিয়ে বললো,
—” চোর!!চোর!!চোর!
পিছনের সাইডের দেয়াল বেয়ে উঠেছে অরিত্রান। রিমন হা করে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।পাঁচটা বারি পড়েছে অরিত্রানের সুঠাম দেখে।অরিত্রান ঠাই দাড়িঁয়ে আছে ।এতগুলো মার খাওয়ার পরেও অরিত্রানের নড়চড় নেই।ব্যাপারটা ওয়াসেনাতকে খুব ভাবাচ্ছে।মাথাই কাজ করছে না তার।ভয়ে চুপসে গেছে সে।সাহস জুগিয়ে ওয়াসেনাত আবার মারতে যাবে তখনি অরিত্রান খপ করে হাতটা ধরে নেয়।লাঠিটা ঠাস করে পরে যায়।মৃদু আলো দুজনের উপরে পরছে।দু’জোরা চোখ একুই জায়াগায় নীবন্ধিত।অরিত্রানের সবুজ চোখ লাল হয়ে আছে।ওয়াসেনাত আতঁকে উঠে।হাত ছাড়াতে চায়।কিন্তু পারছেনা। অরিত্রান নিঃশব্দে কিছু সময় হাসে।ওয়াসেনাত আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হাসার কি হলো সে বুঝতে পারছে না।বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়।লোকটাকে ভারী অসুস্থ লাগছে।গোলাটে সবুজ চোখের দু’পাশের কার্ণিশ লাল হয়ে আছে।চোখ জোড়ার কোণায় আকুতি ভরা।কিছু বলতে চায়,খুব করে বলতে চায়।ওয়াসেনাত লক্ষ করে,এই স্পর্শ তার খুব চেনা!কিন্তু লোকটাকে যে আচেনা লাগছে।ওয়াসেনাত পূনোরায় নিজের হাত টানাটানি শুরু করে।অরিত্রানের হাতের দিকে তাকিয়ে ওয়াসেনাত নিজের হাত ছাড়াতে চায়।হঠাৎ করে ওয়াসেনাতের চোখ আটকা পরে অরিত্রানের ডান হাতের উপর।হাতের এক অংশে চারটা কালো আঙ্গুলের ছাপ।তার স্পস্ট মনে আছে নুহাশের হাতে ওই দিন সে খামঁচি দিয়েছে।তাহলে এর হাতে এই দাগ আসলো কিভাবে?আর কন্ঠটাও একুই।ওয়াসেনাত চাপা আওয়াজ করে বলে,
—-“ নুহাশ সাহেব!!”
অরিত্রান বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকায়।তার হাঁসফাঁস লাগছে,রাগ উঠছে খুব।ওয়াসেনাতের নরম গাল লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে।আশেপাশের সব ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছে।এই নামটাই তার পছন্দ হচ্ছে না।অরিত্রানের প্রচুর রাগ হচ্ছে।এত রাগের কারন সে জানে না।জ্বরের উত্তাপে,রাগে শরীর ঘামছে।ওয়াসেনাতকে আর একটু কাছে টেনে নিয়ে আসে অরিত্রান।উঁচু গলায় বলে,
—-“ একদম এই নামে ডাকবে না।আমি নুহাশ নই।”
ওয়াসেনাত ভয়ে কুঁকড়ে গেছে।দু’টা মানুষের একুই রকম কন্ঠ।একুই রকম বলার ধরন।কিন্তু চেহারা ভিন্ন।কিভাবে এটা সম্ভব??কি আশ্চর্য!!ভয়ে আতঙ্কে ওয়াসেনাত আর কিছুই বলতে পারলো না।মিইয়ে যাওয়া গলায় শেষ বার বললো,
—-“ তাহলে কে আপনি???”
অরিত্রানকে কিছু বলার বা বুঝার সুযোগ না দিয়ে ওয়াসেনাত কাঁপতে শুরু করে।অরিত্রানের হুঁশ হয়।জ্বরের তাপে সে কি করছে নিজেও জানে না।অরিত্রান দ্রুত ওয়াসেনাতের হাত ছেড়ে দিলো।হাত ছাড়া পেতেই ছিঁটকে ওয়াসেনাত কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো।জীন ভূত ভেবে সে দোয়া দূরূদ পড়া শুরু করে।ভয়ে মুখটা চুপসে গেছে।অরিত্রান কিঞ্চিত হেসে রেলিং ঘেঁষে দাড়াঁয়।ওয়াসেনাত বিড়বিড় করে দোয়া পড়ছে।অরিত্রান নিচু গলায় বললো,
—-“ ওয়াসুপরী আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।আই নিড সাম ফুড!!যাও খাবার নিয়ে এসো তো।আসা করি খাবার আছে!!”
বিস্ময়ে হতবাক ওয়াসেনাত।চোর হলে খাবার কেনো চাইবে??আর নুহাশ হলেও বা খাবার কেনো চাইবে।যার এত দামি গাড়ি আছে সে তো আর গরীব না।ভূত হলে তো খাবার চাইবেই না।ওয়াসেনাত গভীর চিন্তায় মগ্ন।অরিত্রানের তাড়া।বললো,
—-“ আমার জানা মতে তোমার বাবার যথেস্ট টাকা আছে।সে হিসেবে খাবারও থাকার কথা।যাও।”
ওয়াসেনাত কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।থরথর করে কাঁপছে সে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের মুখের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়।আর একটু পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
—-“ ভয় পচ্ছো?”
অরিত্রানের কোমল গলা।ওয়াসেনাত শিউরে উঠে।বড় বড় চোখ করে বলে,
—-“ আসলে কে আপনি??”
অরিত্রান কোমল স্বরে বলে,
—-“ বলবো।সত্যি আমি খুব ক্ষুধার্ত।আজ দু’দিন কিছুই খাইনি।”
ওয়াসেনাতের বড্ড মায়া হলো।দ্রুত বললো,
—-“আপনি কে জানি না।কিন্তু ক্ষতি করতে না চাইলে আমি খাবার নিয়ে আসতে পারি?”
অরিত্রান আবার হাসলো।ওয়াসেনাত নিশ্চিত এ নুহশ!!কিন্তু এই চোখ তো নুহাশের না।এক ভয়ংকর গোলকধাঁধায় ফেঁসে গেছে ওয়াসেনাত।অরিত্রান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—-“ তোমার ক্ষতি এ জীবনে আমার দ্বারা অসম্ভব।নিশ্চিন্তে যেতে পারো।আর হে জার্নালিস্ট বাবাকে কষ্ট করে ডাকতে যাবে না।এখন গভীর নিন্দ্রায় আছে।শুধু শুধু কষ্ট দেওয়া কি উঁচিত??”
ওয়াসেনাত জবাব দিলো না।তীক্ষ্ন চোখে একবার তাকিয়ে দেয় এক দৌড়।ওয়াসেনাতের দৌড়র দেখে অরিত্রান শব্দ করে হেসে উঠে।
______________________
ওয়াসেনাত হাঁপাচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড ঝিম মেরে সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে থাকে।ভয়ে রিতিমত থরথর করে কাঁপছে সে।আর উপড়ে যাবে না ঠিক করে।পরক্ষনেই ভাবে বাবাকে ডেকে সব বলবে।কিন্তু ক্ষুধার কথা মনে পরতেই তার খুব মায়া হয়।পা টিপে রান্না ঘরে যায় সে।ওভেন চালু করে সব খাবার গরম করে।ধৌঁয়া উঠা ভাত আর গরুমাংস ছিলো।খাবার নিয়ে সে চিন্তায় পরে যায়।ভয়ও লাগছে খুব।লোকটা যদি মানুষ না হয়ে জীন ভুত হয়??মা ছোটবেলায় বলেছে চুল ছেঁড়ে ছাদে যাওয়া উঁচিত না।তার উপর রাতে তো একদম না।ওয়াসেনাত নিজের চুলের দিকে একবার তাকায়।চুল কিভাবে বাঁধবে ভাবে কিন্তু কারো সাহায্য ছাঁড়া সে চুল বাঁধতে পারে না।এখন কি করব??ওয়াসেনাত সব ভাবনা চিন্তা এক পাশে রেখে গুটি গুটি পায়ে আবার ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।শেষ সিঁড়িতে উঠে ওয়াসেনাত বুকে ফুঁ দেয়।মাথা কাত করে উঁকিঝুঁকি দেয়।ছাদের কোন ঘেঁষে অরিত্রান নিচে বসে আছে।চোখ জোড়া বন্ধ।এক পা ভাঁজ করা।আর একটা সামনে ছড়িয়ে আছে।ওয়াসেনাত একবার ভালো করে তাকায়।পায়ের প্রতিটি ধাপ খুব যত্নে ফেলে।সামান্যতম শব্দ না করে অরিত্রানের সামনে বরাবর দাড়িঁয়ে পরে।অরিত্রানের চোখ বন্ধ।নিষ্প্রান হয়ে যেনো পড়ে আছে।ওয়েসেনাত গভীর ভাবে তাকায়।হলুদ টি-শার্ট,কালো ট্রাউজার গায়ে।মুখে অসুস্থের একটা দীর্ঘ ছাপ।কপালে আয়েসে লেপ্টে আছে সিল্কি চুলগুলো।ওয়াসেনাতের ইচ্ছে করছে হাতটা এগিয়ে নিয়ে চোখের কোনার চুলগুলো সরিয়ে দিতে।শুকঁনো একজোড়া লাল ফেকাঁসে ঠোঁট।একটা লোকের দুই রূপ!কিন্তু কেনো??
—-“ হাতের জিনিসটা নিচে রাখো।”
ওয়াসেনাত আবার এক দফা চমকালো।বললো,
—-“ আপনি কি চোখ বন্ধ করেও দেখেন??আচ্ছা আপনি মানুষ তো?? নাকি জীন ভূত!!”
অরিত্রান চোখ বন্ধ রেখেই হাসে।ওয়াসেনাত ভ্রুকুঁচকে তাকায়।অরিত্রান বুকে হাত রেখে বলে,
—-“ তোমার হৃদস্পন্দনের সাথে আমি পরিচিত।সেই শব্দটাইতো আজ এখানে টেনে এনেছে।”
ওয়াসেনাত আড়ামাথা কিছুই বুঝলো না।হা হয়ে হাতের প্লেট নিচে রাখে।প্লেট রেখে সরে যাবে তখনি অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত নিজের মুঠোয় নেয়।ওয়াসেনাত হতবুদ্ধি হয়ে ধপ করে বেসামাল ভাবে অরিত্রানের পাশে বসে পরে।অরিত্রান চোখ খুলে তাকায়।লাল চোখ।ওয়াসেনাতের হাতটা খুব জোড়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।ওয়াসেনাত নিজের হাত ছাড়াতে চায়।অরিত্রান তীর্যক চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।ওয়াসেনাতের চোখে মুখে ভয়।অপিত্রান নিচু গলায় বলে,
—-“ ভয় কেনো পাচ্ছ??আমাকে সবাই ভয় পায়।কিন্তু তার তো কারন আছে।কারন আমি তাদের ভয় দেখাতে চাই।তোমাকে তো চাই না।আমি চাই সারা দুনিয়া আমাকে ভয় পেলেও তুমি পাবে না।আরে ওরা তো আমাকে ভয়ংকর রূপে দেখে ভয় পায়।তোমাকে তো আমি আমার সেই রূপ দেখায় নি।তাহলে কিসের এত ভয় তোমার??”
—-“ নুহাশ সাহেব আপনি কি লেন্স লাগিয়েছেন?ওয়াসেনাতের উত্তেজিত গলা।
অরিত্রান ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়াসেনাতকে আরো কাছে নিয়ে এসে বললো,
—-“ তোমার মুখে ওই নাম এত সুন্দর লাগে কেনো??কেনো এত সুন্দর করে ওই নামে ডাকো??আচ্ছা আমার নামটাও কি তুমি এমন সাহেব বলে ডাকবে??তুমি বরং রুডি সাহেব বলে ডেকো।আপনি বড্ড রুড!!কথাটা একদম এখানে লাগে।”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাত নিজের বুকের বাঁ পাশটায় চেপে ধরে।তারপর আবার বলে,
—-“ তুমি আমার সাথে এমন কেনো করো??কেনো চৌখা নাকটা লাল করে রাগ করো??এতরাগ কেনো তোমার??সে রাগে আমাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করছ।”
অরিত্রান থামে ।গলাটা শুঁকিয়ে যাচ্ছে।মুখটা তেতো হয়ে আছে।ওয়াসেনাতের হাত গরম হয়ে উঠছে অরিত্রানের বুকের উত্তাপে।দু’জনে খুব কাছে।শা শা বাতাসের শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে নিঃশ্বাসের গতি।দু’জনে কান খাড়া করে শুনছে।দূরত্ব মিলিয়ে এক হচ্ছে নিঃশ্বাসের উত্তাপ।অরিত্রানের স্থির দৃষ্টিতে কাঁপন ধরছে ওয়াসেনাতের হৃৎপিন্ডে।বুকের তুমুল উত্তাপের শব্দে শরীরের হাড়ে হাড়ে কাঁপন ধরছে।ওয়াসেনাতের পায়ের পাতা শিরশির করছে।অরিত্রানের সাথে তাল মিলিয়ে তার হৃৎপিন্ডও তুমুল শব্দ করে ধুপুধুপু করছে।শরীরময় এক উত্তাপ খেলে যাচ্ছে।কয়েক মুহূর্ত নিস্তব্ধতায় কেঁটে যায়।ওয়াসেনাত নিশ্চুপ।তার ঠোঁট অতিক্রম করে কোনো কথাই বেড় হচ্ছে না।যেনো ঘোড়ের মাঝে আছে।পিনপিনে নীরবতা ঝাপিয়ে অরিত্রান প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো,
—-“ অরূপের সাথে এত হাসি এত কথা কেনো পরীজা??”
ওয়াসেনাত ভারী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তার নাম তো পরীজা না।ওয়াসেনাত ভাবছে,লোকটা কি ভুল জায়গায় চলে এসেছে??অরিত্রানের রাগ উঠে।কপাল কুঁচকে ওয়াসেনাতের হাতটা আরো চেপে জিজ্ঞেস করে,
—-“ বলো এত হাসি ,কথা কেনো বলো ওর সাথে??ও কে তোমার??কি হয় ও??”
ওয়াসেনাত এবারো চুপ করে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।অরিত্রানের রাগ বাড়ে।ওয়াসেনাতের চোখে কড়া নজর নিক্ষেপ করে ক্রোদ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করে,
—-“ কথা বলছো না কেনো??আমার কথা শুনতে কি খুব খারাপ??বলো??আন্সার মি??”
অরিত্রান উদ্বিগ্ন হয়ে পরে।ওয়াসেনাতের হাতটা মোছড়ে বুকের সাথে চেপে ধরে।ওয়াসেনাত আর্তনাদ করে উঠে,
—-“ উউউ ব্যথা লাগছে!!এত জোড়ে কেনো চেপে ধরছেন??”
অরিত্রানের হাত মুহূর্তে কোমল হয়ে আসে।উত্তেজিত ভঙ্গিতে আলতো করে হাত মুছে দেয়।মাথা ঘুড়ছে তার।কেমন জানি উম্মাদ উম্মাদ লাগছে।অরিত্রান ওয়াসেনাতের চোখে চোখ রাখে।তার মনে হচ্ছে যত দেখছে তত নেশা ধরে যাচ্ছে।এই চোখে নেশা আছে।যার তেজ মাদকের চাইতেও মারাত্নক!!অরিত্রানের কি জেনো হলো,মাথা কাত করে ওযাসেনাতের কাঁধে রাখে।ওয়াসেনাতের লম্বা চুলের কিছু অংশ তার কোলে পড়ে আছে।অরিত্রান সেই চুলে হাত বুলায়।ওয়াসেনাত আতঙ্কিত হয়ে সরে বসতে চায়।হঠাৎ তার মনে হলো লোকটার শরীর প্রচন্ড গরম।হাত বাড়িয়ে কপাল ছুঁয়ে দেখে।আতঁকে উঠে ওয়াসেনাত!!হালকা চেঁচিয়ে বললো,
—-“ এত গরম শরীর!!আপনার তো প্রচন্ড জ্বর!গাঁ পুড়ে যাচ্ছে একদম!!”
অরিত্রান মৃদূ হেসে চুলের সুবাস নিতে নিতে বলো,
—-“ আমার তো সব পুড়ছে ওয়াসুপরীজা!একদম সব!আচ্ছা তোমার কি পুড়ছে??এত কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার!সব এলোমেলো লাগছে।আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি !!এতটা অনুভুতি আমাকে আগে কখনো ছুঁয়ে যেতে পারেনি।কোনো মেয়ের স্পর্সে কখনো কোনো ছেলেকে কাঁপতে শুনেছো??কিন্তু আমি কেঁপেছি।ভয়ংকর এক কাঁপুনি আমার একটু একটু করে তৈরী করা পাথরের বুকটা কাঁপিয়ে ঝনঝন করে ভেঙ্গে গুড়িঁয়ে দিয়েছে!কত শক্তি তার ছোঁয়ায়??ভয়ংকর একজোড়া চোখ তার।সে চোখে ডুবে আজ জ্বলছে এই হৃৎপিন্ড নামক যন্ত্রটা।ভষ্ম হচ্ছে হৃদয় নামক মাংসপিন্ড।আজ এই জ্বরের উত্তাপও তার চোখের উত্তাপের কাছে কম মনে ইচ্ছে।আমি মনে হয় মরেই যাবো ওয়াসুপরীজা!মরেই যাবো এই ভয়ংকর চক্ষুশিখায়।তার ছোঁয়ায় যেমন দম বন্ধ হয় ,তার থেকে দূরত্বে গেলে তেমন মৃত্যু যন্ত্রনা হয়।এতটা কেনো যন্ত্রনা দিচ্ছে সে আমায় বলবে??কেনো এমন হচ্ছে আমার??কেনো??আমি তার ছোঁয়া তার মায়া সব কিছুতে জ্বলছি।তার হাসি,লাজুক ভঙ্গি,কান্না,সব আমাকে পোড়াচ্ছে।জ্বালা পোড়ার আগুনে আমি দগ্দ।আমি তার নীলাভ চোখে নিজের সর্বোনাশ দেখেছি।আঠাইশ বছরের সব আবেগ,অনুভুতি তার জন্যেই উপচে পড়ছে এই হৃৎপিন্ড জুড়ে।সব ঢেলে দিচ্ছি তার দুয়ারে।এত বছরের জীবনে আমি কিছুই চাইনি।যা প্রয়োজন কেড়ে নিয়েছি।কিন্তু আজ বড্ড চাইতে ইচ্ছে করছে।বলতে ইচ্ছে করছে,আমার এক আকাশ সমান ভালোবাসা চাই।আর কিছুতে কুলাবে না বুঝলে!আকাশের যেমন শেষ নেই,সে ভালোবাসারও শেষ হবে না।অফুরন্তু হবে সেই ভালোবাসার স্রোত।যাতে আমি ভাসবো।ভেসে ভেসে কেটিয়ে দিবো জীবন নামের ভয়ংকর কঠিন সময় গুলো সহজে।তার বিনিময়ে আমি তাকে দু’টি হাত দিবো।একটি চউড়া বুক দিবো।হাতগুলো তাকে আগলে রাখার জন্য আর বুকটা তার চুল ভর্তি মাথাটা রাখার জন্য।জানো সে শুধু রূপবতী না সে কেশোবতী ও!! আমি কি তার রূপের মায়ায় পরেছি নাকি গভীর অন্তরের নাজুকতায় মরেছি জানি না।শুধু মনে হয় সে আমার দম বন্ধের কারন।মনে হয় ভালোবাসা নামক ইম্পসিবল বাক্যে আজ আমি ঘায়েল।মারাত্নক ভাবে আহত!তাকে গভীর ভাবে ভা
অরিত্রান নিস্তেজ হয়ে পরে।ওয়াসেনাত আরো শুনতে চায়।এত অনুভুতি মিশ্রিত কথা আগে কখনো শুনেনি সে।প্রতিটি কথা যেন হৃদয়ে গেঁথে গেছে!শিরায় শিরায় কাঁপন ধরাচ্ছে।রঞ্জে রঞ্জ অনুভুতিরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।শরীরের লোমগুলো শিরশির করে খাড়া হচ্ছে।মন বলছে যেন কথাগুলো তারই উদ্দেশ্যে।সব অপরিচিত ভাব ভুলে লজ্জায় লাল হচ্ছে তার দু’পাশের কানের লতি!!অরিত্রানের নিশ্চুপতা তার অনুভুতিগুলোর বিচ্ছেদ ঘটায়।ওয়াসেনাত মাথা কাত করে তাকায়!জ্ঞান হারিয়েছে অরিত্রান।ঘাড় কাত করার কারনে অরিত্রান ওয়াসেনাতের কাঁধ থেকে সরে এসেছে খানিকটা।ওয়াসেনাত হতবাক নয়নে অপলক তাকিয়ে থাকে কিছুসময়।আর ভাবে জ্বরের তাপে সেন্সলেস হয়েছে!
#চলবে……..