পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 23

রিমন কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে এসেছে।মাদৌলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—” ম্যাডাম এটা নিয়ে উদ্ধার করুণ।”
মাদৌলি একবার রিমনের হাতের দিকে তাকালো আর একবার অরিত্রানের মুখের দিকে।অরিত্রান চোখ নাচিয়ে বললো,
—” আরে নিচ্ছেন না কেনো??টেক ইট। এন্ড চিললল।”
অরিত্রান ঘাড় কাত করে রিমনের দিকে তাকিয়ে বললো,
—” তুই দেখ এদিকে কেউ যাতে না আসে।আমি একটু প্রেম আলার করবো ম্যাডামের সাথে।”
রিমন পিছনে মুড়ে দাঁড়িয়ে পরে।মুখ কিটমিট করে সে হাসি চেপে রাখছে।ব্যাপারটা তার কাছে খুবই মজার।অরিত্রান পা নামিয়ে নেয়।পায়ের মাঝে হাত ভাজ করে রেখে চোখ সরু করে তাকালো।মাদৌলি এবার ঠকঠক করে কাঁপছে।বাবা কই কই করে বারণ করেছে অরিত্রানকে বেশি ঘাঁটাতে না।রেগে গেলে ভয়ংকর মাচলা হয়ে যাবে।এখন তার সত্যি ভয় লাগছে।অরিত্রান মাথা তুলে আবার চেয়ারের সাথে ঠেস দিয়ে বসে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বলে,
—” হুম তো কি যেনো বলছিলেন মিস মাদৌলি??কষ্ট করে আবার রিপিট করেন।”
মাদৌলির কাশি উঠে যায়।কাশতে কাশতে বলে,
—” আসলে না মানে ইয়ে!!”
অরিত্রান হাসলো।উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে গুঁজে রাখা রিভলভার বের করে আবার বসলো।মাদৌলির এবার প্রচন্ড ভয় লাগছে।অরিত্রান ঠান্ডা গলায় বলে,
—” কই সব ভালোবাসা উবে গেছে মিস মাদৌলি!! আর বলবেন না ওই ওয়ার্ড গুলো।যারে বলে ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড। তা শুরু করেন শুনি কয়েক বার আরো।তারপরে না হয় আপনার চাপ্টার ক্লোজ করবো।”
মাদৌলি কাঁপা গলায় বলে,
—” দেখেন আমি কিন্তু চেঁচিয়ে সবাইকে বলে দিবো আপনি নুহাশ না অরিত্রান খান।”
অরিত্রান ভীতূ হয়ে বললো,
—” ওহহহ্ ভয় পেয়েছি। ভালোবাসার মানুষকে এভাবে কেউ ভয় লাগায়??ভেরী খারাপ ব্যাপার!! ভেরী!!এতক্ষণ আপনাকে সময় দিয়েছি।আপনার লাক ভালো আজ আমার মুড ভালো ছিলো।কিন্তু এখন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।আপনার কি মনে হয় আমি ভয় পাবো।এতক্ষণ শুধু ভালো মুডের সুযোগ নিয়েছেন আপনি।আর দিতে পারবো না তো মিস মাদৌলি। এবার অত টাইম নেই।”
অরিত্রান মাদৌলির মাথার মাঝ বরাবর রিভলভার ঠেকিয়ে কথাগুলো বলে।মাদৌলি ভয়ে চোখ বুজে চেঁচিয়ে বলে,
—” সরি সরি আর কখনো বলবো না।তবুও মারবেন না।আমি সরি।সত্যি সরি।”
অরিত্রান উঠে মাদৌলির হাতটা পিছনে চেপে ধরে মাদৌলি চেঁচিয়ে উঠতেই অরিত্রান বললো,
—” ডোন্ট সাউট।একদম না।আমাকে কি তোর নাটকের হিরো মনে হয়।যে আদো আদো গলায় প্রেম নিবেদন করবি?না কি ওই থার্ডক্লাস বয়ফ্রেন্ডদের মত মনে হয় যাদের মত ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পেন পেন করবি?আর কি যেনো মরে যাবি বলেছিস।কষ্ট করে দেরিতে মরতে যাবি কেনো।নে এখনই শুট করে দি।”
—” না না। আর সামনেও আসবো না।সত্যি।”
অরিত্রান একটু শব্দ করে হেসে উঠে।হাতটা আরো মুড়িয়ে বললো,
—” মেয়েদের একটু সম্মান করতে চাচ্ছি বুঝলি।আসলে কি হয়েছে হঠাৎ করেই আমার মাঝে নতুন রূপের আগমন হয়েছে।তাই বলে যে আগের টা ভুলে যাবো তেমন তো নয়।তাই তোকে এতক্ষণ সুযোগ দিয়েছি।এবার আর পারলাম না।আয় তোর ভালোবাসার একটা হেল্লে করে দি।দাড়া।তা তোর এই থার্ডক্লাস উপচে পড়া ভালোবাসার কাহিনী কি ক্লাবে,পার্টিতে যত ছেলে আসে সবার বেলায় এমন উবে উবে পরে?তা যাই হোক।ছাড়।তোর একটাই দোষ।এই অরিত্রানের অনুমতি ছাড়া তাকে টার্চ করা!!এটাই বড় ভুল।তোর ওই ভালোবাসি টাসি মাফ করে দিলাম।তার কারন একটাই ওই শব্দদয়কে আমি মানে আমার নতুন রূপ সম্মান করে।”
অরিত্রান চেয়ারের সাথে মাদৌলির দু’হাত চেপে দেয়।মাদৌলি চেঁচিয়ে উঠে।সে এক বিকট শব্দ।চেয়ারটাকে ঠাস করে পিছনে ফেলে অরিত্রান নিজের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে।মাদৌলি সেন্সলেস হয়ে নিচেই পরে আছে।অরিত্রান নিজের গায়ের শার্ট খুলে ছুঁড়ে দেয়।গায়ে সাদা হাতা কাটা গেঞ্জি।প্রচণ্ড ঘৃণা লাগছে এই শার্ট পরে থাকতে। এ মেয়ে বেশি কাবিল।সে জানে না তার আহর আহর প্রেম,রুম ডেট,পার্টি,মাতলামো অরিত্রান জানে।অরিত্রানের জীবনে যেই একবার পা দেয় তার সব ডিটেলস তখনই অরিত্রানের কাছে চলে আসে।তিন বছর আগে থেকেই এই মেয়েকে সে চিনে।কি কি করেছে সবই জানে।নিজের সাথে জড়িত ব্যাপার বাদে অরিত্রান কখনো অন্যের ব্যাপারে নাক গলায় না।আজও ছেড়ে দিতো।শত হোক এই মেয়ে তাকে কিছুই করেনি বা এর দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হয় নি।কিন্তু রাগটা জড়িয়ে ধরায় হয়েছে।অরিত্রান একদম নিজের গায়ে নিজের অনুমতি ছাড়া কারো স্পর্শ করা পছন্দ করে না।একদম না।এই মেয়ের ভালোবাসার হাঙ্গিবাঙ্গি ও তাকে এতটা রাগিয়ে দিতে পারে নি যতটা জড়িয়ে ধরায় হয়েছে।
অরিত্রানকে এভাবে দেখে রিমন বললো,
—” ওয়েট ব্রো।শার্ট ছাড়া যাবি?মেয়েরা বেহুঁশ হয়ে যাবে।আমি শার্টের অডার্র দিয়ে দিয়েছি।চলে আসবে।আর দুই তিন মিনিটে।”
অরিত্রান বাঁকা চোখে তাকিয়ে হাসলো।পিঠ চাপড়ে বললো,
—” তোর বুদ্ধি ইদানীং খুব কাজে দেয়।সবই কি রিমির কামাল!!”
রিমন শুধু হাসে জবাব দেয় না।ঘাড় কাত করে মাদৌলিকে একবার দেখে নেয়।এই মাদৌলি বহুত প্যান প্যান করছে।এবার আরো কর প্যান প্যান!!ছাগল একটা।শুধু ছাগল না মাগল ও।নামের সাথে মিলে গেছে।রিমন কথাগুলো বিড়বিড় করেই হাঁসে। এই মেয়ে বহুত ছেলেরে নিয়ে হাডুডু খেলছে।এবার এরে নিয়ে একটু খেলা হয়েছে তো কি এমন হইছে।কপাল ভালো মেরে দেয় নাই।মেরে দিলেও ভালো হতো।তবে আজ অরিত্রানের মন ভালো একদম রিফ্রেশ মাইন্ড ।তাই ছেড়ে দিলো।অরিত্রান পিছনের দিকে আর একবারো তাকালো না।রিমন শার্ট নিয়ে এসে হাতে দিলো।অরিত্রান শার্ট পড়তে পড়তে ভার্সিটির বাহিরে চলে এসেছে।রিমন অরিত্রানের ফেলে দেওয়া শার্ট টা তুলে নিলো।তা না হলে এটা নিয়ে আবার কিছু না কিছু হবে।

____________________
ওয়াসেনাত চোখমুখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।রিমি এখনো তার প্রশ্নের উত্তর পেলো না।তাই সে হা করে ওয়াসেনাতর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
—” পানি ঢাল তো। মুখে পানি দিবো।”
রিমি পানি ঢালায় মনোযোগী হয়ে পানি ঢালছে।পানি ঢালা শেষে ওয়াসেনাত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সামনে হাঁটা দেয়।রিমি পিছন থেকে কয়েক বার ডেকে থেমে যায়।কারন তার পিছনে চেঁচামিচি হচ্ছে। রিমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে অনেকেই ভার্সিটির ২য় তলায় উঠছে।তাও হন্নে হয়ে।রিমিও আগ্রহ প্রকাশ করে সেদিকে পা বাড়ায়।উপরে উঠেই সে শিহরিত। এই মেয়েকেইত জাপ্টাজাপ্টি করতে দেখেছে।আর এ এখানে পড়ে আছে।কিন্তু কেনো??সবাই পানি মেরেও মাদৌলির জ্ঞান ফিরাতে পারেনি।তাই তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ওয়াসেনাতকে গেটের দিকে যেতে দেখেই অরিত্রান তার নাম ধরে ডেকে উঠে।ওয়াসেনাত একদম পাত্তা না দিয়েই হাঁটে। যেনো তার কানে কোনো কথাই আসছে না।সে চিনেই না আশেপাশের কাউকে।অরিত্রান বেশ কয়েকবার ডেকে ব্যর্থ হয়।ওয়াসেনাত খুব বিরক্ত। তার একদম ইচ্ছে করছে না এই লোকের সাথে কথা বলতে।কথা বললেই সে ইমোসনাল হয়ে পরবে।আর সে মোটেও এটা চায় না।আপাতত তার বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে।হঠাৎ অরিত্রান একদম ওয়াসেনাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওয়াসেনাত দ্রুত হাঁট ছিলো।গেটের বাহিরে এসেগেছে অনেক আগে।তার খবরই নেই।অরিত্রান হুট করে সামনে দাঁড়াতেই ওয়াসেনাত তার বুকের সাথে বেসামাল ভাবে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেয়েই ওয়াসেনাত চমকে উপরের দিকে তাকায়।অরিত্রানের লাল চোখ।এভাবে কেউ তাকে কখনো ইগ্নোর করে নি। এসব মেয়ের চক্করে সে সত্যি বিরক্ত এখন।একজন পাগল আর একজন তাকে পাগল বানাচ্ছে।একজনকে তো মেরে এসেছে। আর একে তো কিছু বলতেই পরবে না।নিজেরই কষ্ট হয়।কেমন জানি কলিজা ছিঁড়া টাইপের অবস্থা। ওয়াসেনাত দু’কদম পিছিয়ে এসে চেঁচিয়ে বললো,
—” সমস্যা কি আপনার??পিছনে পিছনে কেনো আসছেন??নাম ধরেইবা এত চেঁচাচ্ছেন কেনো??”
অরিত্রান বিস্ময়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো,
—” আমি তোমাকে ডেকেছি এটা তুমি শুনেও পিছনে তাকাও নি??বা জবাবও দিলে না??হুয়াই?? ”
ওয়াসেনাতের রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো।সে চেঁচিয়ে বললো,
—” আমার কি ঠেকা পড়েছে আপনার ডাকের জবাব দেওয়ার??দিতে ইচ্ছে করেনি তাই দি নি।”
অরিত্রান অবাক। সাথে তার তেজি রাগ বাড়ছে।হচ্ছে টা কি আজ!সকাল থেকে এলোমেলো কান্ড হচ্ছে।অরিত্রান এক রাশ বিরক্তি ঝেড়ে বললো,
—” কি হয়েছে বলবা??এত মেজাজ দেখাচ্ছ কেনো??এনি প্রবলেম!”
—” অবশ্যই প্রবলেম এই যে আপনি আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছেন এটাই প্রবলেম। আপনি বাদে আমার লাইফে আর কোনো প্রবলেম নেই।এই যে হাত ভেঙেছেন!সেই থেকে প্রবলেম। আপনি আস্ত একটা প্রবলেম। লাইফে এসেই সব এলোমেলো করে দিলেন।যান না যান, নিজের প্রেমিকার কাছে।আমার পিছনে কি করছেন বলেন তো।মাফ চাই দোয়াও চাই।বিদেয় হন।আপনি ছাড়া আমার লাইফটা অনেক সুন্দর। আপনি এসেই কেমন এলোমেলো করে দিলেন সব।একদম সব।”
ওয়াসেনাত কাঁদছে।রাস্তার সবাই উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।তারা এগুলো প্রায় দেখে।ভার্সিটির পাশ দিয়ে চলাচল করলেই প্রেমিক প্রেমিকার ঝগড়া কান্না,আবার হাসি আনন্দের নানা দৃশ্য। এতে কেউ কেউ বিরক্ত হয় আবার কেউ বেশ মজা পায়।অরিত্রান হতবাক। সে বুঝতেই পারছেনা আসলে সে কি করেছে??বা এখন কি করবে??সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এতটা বিস্ময়ে সে তার লাইফে আর কখনো পড়েছে কি না মনে নেই তার।একটু আগে এক মেয়ে ভালোবাসি বলে বলে কেঁদেছে এখন একজন তার জীবনে কেনো এলো তার জন্য কাঁদছে। অরিত্রান অবাক হয়েই বললো,
—” আচ্ছা তোমরা মেয়েরা কান্না ছাড়া কিছু পারো না??সকাল থেকে মেলোড্রামা চলছে মনে হচ্ছে। কিসব হচ্ছে আমার সাথে।এই একদম কাঁদবে না।একদম না।তুমি কাঁদলে রাতের দুই এক ঘন্টার ঘুমও গায়েব হয়ে যায় আমার।মহা জাদু জানে এই কান্না।একদম কাঁদবে না।”
ওয়াসেনাতের রেগে মেগে আগুন।পাশে রিক্সা আসতে দেখেই সে চেঁচিয়ে বললো,
—” মামা দাঁড়ান।”

অরিত্রান রিক্সা চালকে একবার দেখে নিয়ে বললো,
—” মামা হবে না নানা হবে তোমার।মামা তো উনার ছেলে হবে তোমার।”
ওয়াসেনাত কান্নায় মনোযোগী।অরিত্রানের দম বন্ধ হয়ে আসছে।একটা মেয়ের কান্নায় সে বিরক্ত হয়েছে আর একটা মেয়ের কান্না তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে।হচ্ছে টা কি এসব??ওয়াসেনাত চোখ মুছতে মুছতে রিক্সায় উঠে বসে।অরিত্রান রিক্সা এক হাতে চেপে ধরতেই ওয়াসেনাত আবার চেঁচিয়ে বললো,
—” সমস্যাটা কি আপনি??রিক্সা চেপে ধরেছেন কেনো??”
—” স্টুপিডের মত চেঁচাচ্ছ কেনো??কি হয়েছে তোমার??কথাই বলার সুযোগ দিলে না।আর কি বার বার সমস্যা কি, সমস্যা কি করছো??এটা তো আমার করার কথা।কি সমস্যা তোমার??এমন rough use মানে কি??”
ওয়াসেনাত জবাব দিলো না।নাক লাল হয়ে আছে তার।সাথে চোখটাও।অরিত্রান মুখের দিকে তাকাচ্ছে না।কেমন জানি জ্বালা করছে তার বুক।এভাবে কেউ কাঁদে?তাও বিনা কারনে?অরিত্রান বেশ রেগে ধমকের সুরে বললো,
—” stop crying just stop.”
ওয়াসেনাত চুপ তো করলোই না উল্টা আরো শব্দ করে কেঁদে দিলো।অরিত্রান তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে আছে।নীল চোখে পানি টইটুম্বুর হয়ে আছে।কি মারাত্মক চাহনি।রিমনের মত তার একটু জ্ঞান হারাতে ইচ্ছে করছে,এই চোখে ডুবতে ইচ্ছে করছে,ভাসতে ইচ্ছে করছে।ওয়াসেনাত কেঁদে কেঁদে বললো,
—” ওই রিক্সা মামা আপনি দাঁড়াই আছেন ক্যান??চলেন তো।”
অরিত্রান ভ্রুকুটি করে।তার এখন ইচ্ছে করছে ওয়াসেনাতকে তুলে নিয়ে যেতে।কিন্তু তা সে করছেনা।ওয়াসেনাতের সাথে সে মোটেও খারাপ কিছু করতে চাচ্ছে না। যাতে সে কষ্ট পায়।সে সব সেট করতে চাচ্ছে। নিজের মত গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে। ওয়াসেনাত নিজের হাতের নখ বসিয়ে অরিত্রানের হাতে খামচি দেয়।বেশ জোড়েই লাগে সে খামচি।অরিত্রান হাত সরিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে বললো,
—” এত জেদ কেনো তোমার??বোকার সাথে সাথে এত জিদ্দি!! কিভাবে সামলাবো আমি!!”
ওয়াসেনাত চোখ বুজে শ্বাস নেয়।চেঁচিয়ে রিক্সা চালককে বললো,
—” চলেন নানা
কথাটা বলেই জিভ কাঁটে।বিড়বিড় করে বলে,এখনো!!এখনো এই লোকের কথা তোর কানে বাজে!ছ্যাঁকা খেয়ে সাদ মিটেনি!!
—” মামা চলেন তো!!ফালতু!”
অরিত্রানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওয়াসেনাত গায়েব।অরিত্রান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।চারটা আঙ্গুলের নখ বসে গেছে।একটা দুইটা থেকে তো রক্তও পড়ছে।অরিত্রান হাসে।নিজের হাত নিজেই ছুঁয়ে দেয়।কিন্তু এত রাগের কারন তার মাথায় ঢুকলো না।
কিছুটা দূরে যেতেই ওয়াসেনাত রিক্সা থেকে নেমে পরে।রিক্সার ভাড়া দিয়ে সোজা হাঁটা শুরু করে।তার যে কি করতে ইচ্ছে করছে সে নিজেও জানে না।হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়লো একটা লোক মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।আর তার ঠিক সামনে থেকে একটা গাড়ি আসছে।ওয়াসেনাত কয়েক বার চেঁচালো।কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে এই চিৎকার সে শুনলোই না।তাই বাদ্য হয়ে সে এগিয়ে তার কাছে যায়।পিছনে দাঁড়িয়ে দেয় এক ধাক্কা।দুঃখের হলেও সত্য সে নিজেও ধপ করে পরে বাম হাতটা হালকা ছিঁড়ে ফেলেছে।একেই সে দুঃখে আছে।ছ্যাঁকা কপাল তার।এসব উপরে এসে এখন আবার ব্যথা।সব রাগ একত্রিত করে সে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো,
—” ভাইরে ভাই আন্ধা হলে ঘরে বসে থাকতে পারেন না।তার উপরতো কানে কালা মনে হয়।তবে ফোন কানে কেন??আপনারা রাস্তায় নামেন কেনো বলুন তো?অসহ্য কর।কেনো যে আজ বাসার বাহিরে এসেছি।খারাপ কিসমত।”
ওয়াসেনাত হাত, জামা ঝেঁরে উঠে দাঁড়ায়। যাকে উদ্দেশ্য করে এত বকা।সে হা করে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত মুখ তুলে তাকাতেই আঁতকে উঠে।বুকটা ধুরুধুরু করে কাঁপছে।কাঁপা কাঁপা বাম হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নেয় ওয়াসেনাত।ভয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শিরশির করে কম্পিত হচ্ছে ।
ইহানের চোখ তো বিশ্বাসই করতে পারছে না ওয়াসেনাত জীবিত।এর শোকে পাগল হওয়ার উপক্রম ছিলো তার।আর এই মেয়ে দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে।ইহানকে দেখেই ওয়াসেনাত ভয়ে চমকে উঠে।কয়েক পা পিছিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—” আআপনি??”

ইহান এখন হা করে আছে।তার মাথা কাজ করছে না।হাত বাড়িয়ে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটাকি সত্যি নাকি কল্পনা।হতেই পারে এটা কল্পনা!মাঝে মাঝেই সে অদ্ভুত রূপে ওয়াসেনাতকে দেখে।অরিত্রানের ভয়ে গা ডাকা দিয়ে বিদেশে ছিলো এত দিন।কালই দেশে এসেছে।যেতে সে একদম চায় নি।কিন্তু বাবা জেল থেকে কড়া ভাবে আদেশ দিয়েছে।তাই যেতে হয়েছে।নিজের বাড়িটা পুড়ে গেছে শুনেই তার অবস্থা খারাপ ছিলো।তার উপর ওয়াসেনাতকে সে ওখানেই রেখে ছিলো।মেয়েটার মৃত্যুতে সে গভীর শোকে নেতিয়ে ছিলো এত দিন।
ওয়াসেনাত ভয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। সামনের রিক্সায় কিছু না বলেই সে উঠে বসে।এই লোককে তার বড্ড ভয় করে।তাকে যে এই কিডন্যাপ করেছে এটা সে জানে।ভুলেও এর ছায় মাড়াতে চায় না সে।কিন্তু এভাবে হুট করে সামনে আসবে এটা ভাবতে পারেনি ওয়াসেনাত।ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।ইহান এখনো স্তব্ধ।
_____________________
আজ দু’দিন পরে ওয়াসেনাত বাড়ির বাহিরে পা রেখেছে।আজও বাহিরে পা রাখার ইচ্ছে ছিলো না।তবুও অরূপ,রিমি,নোড়া কল করে করে তার বাবাকে ডিস্টার্ব করছে।না পারতে আজ সে বেড়িয়ে এসেছে।ঢাকা শহরের অলিগলি ঘুরে সন্ধ্যায় অরূপ তাকে নামিয়ে দিয়েছে বাসার সামনে।কারো সাথে তেমন কথা বলেনি সে।অরূপ অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে মন খারাপ কি না ওয়াসেনাত এড়িয়ে চলেছে সবাইকে।হাতের প্লাস্টার খুলেছে। হাতটা নাচিয়ে নাচিয়ে সে দেখছে আর মাঝে মাঝে ডুকড়ে কাঁদছে। তার মনে হচ্ছে সে বড্ড আবেগি মেয়ে।এমন আবেগি মেয়ে তো সে ছিলো না।হঠাৎ এত কান্না কেনো??একদম নিজের কাছে নিজের কান্ড গুলো ন্যাকামি লাগছে।কিন্তু কিছুতেই চোখগুলোকে বুঝাতে পারছে না।কেনো এত ন্যাকামি তার!একদম ড্রামা কুইন টাইপের।আরে এটা তো বাস্তব জীবন।এখানে এত ন্যাকামি মানায় না।ওয়াসেনাত বারং বার নিজেকে বুঝায়।তবুও হাতটার দিকে তাকলে তার চোখ ভিঁজে আসে।রিমি আজ কিছু একটা বার বার বলতে চেয়েছে।কিন্তু সে শুনেনি।আচ্ছা, রিমি কি বলতে চেয়েছে??নুহাশশ কি তাকে খুঁজেছে??একটা রুডি শয়তান লোক।তাকে কেনো খুঁজবে সে।তার তো জানে মান মাদৌলি আছে।কিভাবে জাপ্টে ধরেছিলো!!ওয়াসেনাত আবার কাঁদে, আবার চুপ হয়ে যায়।একবারো তো এই দু’দিনে তার খবর নিলো না ছেলেটা!!তাহলে সে কেনো এত চিন্তা করে, মরাকান্না করছে।আজব!ওয়াসেনাত চোখমুছে নেয়।উঠে দাঁড়ায়। এভাবে আর বসে থাকবে না সে।ভালোবাসায় হার জিত থাকেই।সবাই জয়ী হবে,ভালোবাসা পেতে হবে এমন তো কিছু লেখা নেই।তার ভালোবাসা না হয় একতরফা থাকুক।একদম একলা আকাশের মত একলা ভালোবাসা!!

____________________
অরিত্রানের কখনো জ্বর হয় না।কিন্তু আজ হঠাৎ করেই গাঁ কাঁপুনি দিয়ে তার জ্বর এসেছে।এ জ্বর সামান্য না।ভয়ংকর তাপমাত্রার জ্বর।শরীর পুড়ে যাচ্ছে সে জ্বরে।আজ সন্ধ্যা থেকে রুমে প্রচুর ভাঙ্গচুর করেছে সে।হোটেলের সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।শুধু ভারী জিনিস গুলো বাদে।রিমন ভয়ে এক কোণায় কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে শুধু নিরবে সব গিলেছে।কিছুই করতে পারে নি সে।ভয়ে তার অর্ধেক জান ওখানেই শেষ।অরিত্রানকে এত রাগতে সে আগে কখনো দেখেনি।গত দু’দিন অরিত্রান নিজের সব কাজ ছেড়ে শুধু ওয়াসেনাতদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।ভার্সিটিতে তাকে কত খুঁজেছে। কিন্তু তার দেখা মিললো না।আজ যখন অরূপের সাথে ফুচকার দোকানে ওয়াসেনাতকে দেখেছে তখন থেকেই মাথা আগুন হয়ে আছে।ওয়াসেনাত নামক এই মেয়েতে কি আছে জানে না অরিত্রান। সে যে তাকে বড্ড উম্মাদ করে তুলেছে!!
অরিত্রান এই গরমে কম্বল মুড়ে শুয়ে আছে।রিমন এসেছে অরিত্রানের রাগ কমেছে কি না দেখতে।কিন্তু এসেই অরিত্রানের এমন শুয়ে থাকাটা তার মোটেও ভালো লাগলো না।কাছে এসে মাথায় হাত দিতেই তার সর্বাঙ্গ চমকে উঠলো।সে ভাবতে পাড়ছে না অরিত্রানের জ্বর এসেছে!!শুধু জ্বর না হাত কেঁটে রক্ত শুকিয়ে গেছে তার।সেই রক্ত আবার সাদা চাদরে লেগে বাজে একটা অবস্থা। রিমন প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেছে।কি করবে ভাবতে ভাবতেই অরহাম খানকে একটা ফোন করলো সে।তিনি বলেছে দ্রুত আসছে।ডাক্তার এসেছে মাত্র।হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।রিমন অবাক, হতবাক। তার এত বছরের অভিজ্ঞাতায় অরিত্রানের কখনো জ্বর হয় নি।অরিত্রান ডাক্তার পছন্দ করে না।সে খুব কম ডাক্তারের কাছে যায়।ইনজেকশনে তার প্রচণ্ড ভীতি কাজ করে।সেই ছোট থেকে।রিমনের খুব হাসি পায়।একবার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো অরিত্রানের।তখন তাকে ইনজেকশন দিতে এসেছিলো যে ডাক্তার তাকেই অরিত্রান মেরে হাড্ডি ভেঙে হসপিটাল থেকে পালিয়ে ছিলো।রিমনের বেশ অদ্ভুত লাগে।যে কিনা সারাদিন ছুরিকাঁচি নিয়ে থাকে।মানুষ মারতে যার হাত কাঁপে না।সে ব্যক্তি ভয় পায় সামান্য সুঁই!! ইনজেকশন!!যদিও অরিত্রান কখনো নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে না।এমনকি ইনজেকশনের ভীতির কথাও সে কখনো প্রকাশ করেনি।কিন্তু রিমন জানে।খুব গোপনেই নিজের মাঝে কথাটা রেখেছে সে।
অরিত্রানের জ্বর নামানো গেলো না।এ জ্বর আগে কখনো দেখেনি হয় নি অরিত্রানের।ডক্টর শাহিন অবাক।কারন অরিত্রানের কখনো জ্বর হয় না।কিন্তু আজ এত জ্বর কেনো??ইনজেকশন দিয়েও এই জ্বর কমানো যাচ্ছে না।তার চোখেমুখে বিস্ময়।অরহাম উঠে পড়ে লেগেছে নাতিকে সে নিয়ে যাবে বাড়ি।অনেক হয়েছে আর না।তিনি তার কথায় সত্যি অনড় ছিলেন।অরিত্রানকে তার নিজের তৈরি বাংলোতে নিয়ে আসা হয়েছে।পরিবারের মৃত্যু আর দাদার প্রতি অধিক ক্ষোভ তাকে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।ভিন্ন দেশে সে বাড়ি তৈরি করেছে।তবে এর কারন একটাই সবাইকে দেখানো অরিত্রান কত প্রভাবশালী। অরিত্রানের হুঁশ নেই।তাই তাকে নিয়ে যা ইচ্ছে করছে সবাই।জ্বরের বেগ তীব্র। খুব তীব্র।
ডক্টর শাহিন বসে আছে অরিত্রানের মাথার কাছে।তার আর এক পাশে বসে আছে তার দাদা।রিমন ঘরময় পাইচারি করছে।কেনো এত জ্বর হয়েছে তা জানে না কেউ?
পর পর তিন ঘন্টা পরে অরিত্রানের বিড়বিড় শব্দ কানে আসে ডক্টর শাহিনের।অচেতন ভঙিতে সে বিড়বিড় করে একটা নাম নিচ্ছে।শাহিন কান খাড়া করে।মুখের কাছে কান নিয়ে শুনতে পায় একটা না দু’টো নাম নিচ্ছে সে।একজন তার মা।আম্মু বলেই ডাকছে সে আর একটা নাম চিনলো না তিনি।ভ্রুকুঁচকে অরহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
—” ওয়াসুপরী কে??”

রিমন বিমুগ্ধ গলায় বললো,
—” ওয়াসেনাত নাম ওর ওয়াসুপরী না।”
অরহাম খানিকটা অবাক।তিনি নিস্তব্ধ হয়েই বসে আছে। আগে কখনো এই নাম তিনি অরিত্রানের মুখে শুনেনি।তবে নামটা সে চিনে।ওই দিনের রাস্তার মেয়েটা।মনে পরার ভঙিতে তিনি জিজ্ঞেস করলো,
—” হঠাৎ এই নাম কেনো শাহিন??”
শাহিন অরিত্রানের হাত দেখতে দেখতে বললো,
—” অরিত্রান এই নামেই ডাকছে।”
রিমন এগিয়ে এসে দাদাকে বললো,
—” অরিত্রান ভালোবাসে ওয়াসেনাতকে।আমার মনে হয় এই জ্বরের মূল কারন সে।”
রিমন ভেবেছে কথাটা শুনে অরহাম খান চমাকাবেন,অবাক হবেন কিন্তু অরহাম খান অবাক হলেন না।চমকালেনও না।খুব স্বাভাবিক ভঙিতে বসে থাকলেন।এটা দেখে রিমন নিজেই অবাক হলো।

অরিত্রানের জ্ঞান যখন ফিরে রাত তখন দশটা বাজে।নিজেকে সে একটা ভিন্ন পরিবেশে আবিষ্কার করেছে এটা নিয়ে তার তেমন মাথা ব্যথা নেই।সবার অতঙ্ক ছিলো এটা নিয়েই।অরিত্রান হয় তো রেগে যাবে হাঙ্গামা করবে।ভাঙ্গচুর করবে।কিন্তু সবাইকে অবাক করে সে কিছুই করলো না।উঠে বসলো।খাবার খেলো না।নিজের সব প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে আছে তার।তার দাদা সখ করে কিনে রেখেছে।অরিত্রান তার দাদার সাথে তেমন মন খুলে কথা বলেনা। তাই অরহাম বেশ ভয় পায় তাকে।তবুও তিনি অরিত্রানের পাশে বসলো।তাকে আশ্চর্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে রেখে অরিত্রান তার কোলে মাথা রেখেছে।একদম হাটুর উপরে।কি অদ্ভুত!তিনি বাকরূদ্ধ হয়ে বসে বসে শুধু অরিত্রানকেই দেখছেন।অরিত্রান নিশ্চুপ।কিছুসময় পরে সে এভাবেই উঠে রুমের বাহিরে হাঁটা দেয়।রিমন দৌড়ে আসে।উত্তেজিত হয়ে বলে,
—” কোথায় যাচ্ছিস??”
অরহাম উচ্চ শব্দে ডাকে,
—” রিমন যেতে দেও।”
রিমন কিছুই বুঝতে পারলো না।দাদার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
—” যেতে দিলেন কেনো দাদাজান??জ্বর এখনো অনেক আছে।ও তো কিছু খায় নি।এমন কি কথাও বললো না এখনো।”
অরহাম হাসলেন।হেসে হেসেই বললেন,
—” হৃদয়ে যখন ভালোবাসা উপচে উপচে পড়ে।বিবেক তখন লোপ পায়।সবদিকে ভালোবাসা আর ভালোবাসাই চোখে পরে।বাকি সব বৃথা মনে হয়।”
রিমন এর কিছুই বুঝলো না।কিন্তু ছুট লাগালো অরিত্রানের পিছনে।
#চলবে______