পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 06

বাবার চিৎকার শুনে অবন্তিকার বুকে ধুকপুক শুরু হয়েছে। মনের মধ্যে কচমচ করছে রিলেশনের কথা জেনে গেলো নাতো। অবন্তিকা জানে ওর বাবার পক্ষে আহানাফ এর মত ছেলেকে উড়িয়ে দেয়া কোন ব্যাপার না।
অবন্তিকা ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো,,
— জি বাবা।
— কি শুনছি এসব?? আমার মেয়ে হয়ে তোমার রুচি এত খারাপ!! তুমি কিভাবে এরকম একটা ছেলের সাথে রিলেশনে করো ?? উত্তর দাও চুপ করে থেকো না।
— না মানে বাবা। আ….আ…মি
— তুমি কি ভুলে গেছো তুমি কার মেয়ে। তোমার ফ্যামিলি স্টাটাসের সাথে কোন দিক দিয়ে এ ছেলে তোমার যোগ্য?? আমি লাস্ট বার বলছি এ ছেলেকে নিয়ে যদি আর কোন দিন কথা শুনি আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
— বাবা আমি ওকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ ওর কোন ক্ষতি করিও না।
— রাস্তার ছেলেটা বিয়ে করে তোমাকে কি খাওয়াবে কি পরাবে। এখনো বুঝতে পারছো না জীবন কত কঠিন। জানোতো অভাব আসলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। টাকা না থাকলে এ সমাজে কেউ সম্মান দেয় না। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।
— বাবা আমার সমস্যা নেই। আমি সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
অবন্তিকার কথা শুনে রেজাউল করিমের মাথায় রক্ত উঠে গেছে। যে মেয়ে বাবার সামনে দাঁড়াতে ভয় পেতো। সে আজ মুখে মুখে তর্ক করছে।
প্রেম ভালোবাসার শক্তিটাই এমন সকল ভয় জড়তাকে চুটকি মেরে উড়িয়ে দেয়। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য এটুকু সাহস তো থাকা লাগা।
আজ অবন্তিকা চুপ থাকলে নিজের ভালোবাসা কে অপমান করা হতো।
রেজাউল করিম রেগে কটমট করে,,
— চুপ! একদম চুপ একটা কথাও বলবা না। আমি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছি। সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর। ছেলে কৌটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে। দেখতে শুনতে ভালো তুমি সুখে থাকবা।
বিয়ের আগের দিন রাতে অবন্তিকা আহানাফ এর হাত ধরে পালিয়ে যায় এক কাপড়ে। তারপর তারা ট্রেনে উঠে সিলেট গিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে। আগে থেকে আহানাফ সব ঠিক করে রেখেছে। দু’জন ছোট্ট নীড়ে বাসা বাঁধে আপন মনে। বিলাসিতা না থাকলেও সুখের কোন অভাব ছিলো না। আহানাফ যা ইনকাম তা দিয়ে দুজনের ভালো দিন কাটে।
রেজাউল করিম মেয়ের এভাবে পালিয়ে মেনে নিতে পারেনি৷ তার উপর বর পক্ষের কাছে চরমভাবে অপমানিত হন।
তখনই ঠিক করলেন যেভাবে হোক অবন্তিকা কে খুঁজে বের করবে। যে ভাবা সেই কাজ।। চারদিকে লোক লাগিয়ে ১ মাসের মধ্যে ওদের খোঁজ পেয়ে যায়।
রেজাউল করিম আহানাফের মা কে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিতে থাকে৷ আহানাফ যদি অবন্তিকা কে ছেড়ে না দেয় আহানাফ এর বেঁচে থাকা কঠিন করে দিবে।
এর আগে কয়েক বার এলাকার ছেলেপুলে দিয়ে মারধোর করেছেন। আহানাফ নিষেধ করার পরেও ওর মায়ের অনুরোধে অবন্তিকা বাধ্য হয়ে আহানাফ কে ডিভোর্স দেয়।
তারপর থেকে অবন্তিকা ওর বাবা কে মনে প্রাণে ঘৃণা করে। অবন্তিকার সেদিনের পর নিজের ভালো মন টাকে গলা টিপে মেরে ফেলে। তখন থেকে নতুন অবন্তিকার জন্ম হয়। আর কারো সাথে খারাপ আচরণ না করলেও বাবার সাথে এক মুহুর্তের জন্য সুন্দর করে কথা বলেনি। বাবা বলেও ডাকেনি…
সব বাবা মা মনে করে মেয়েকে বড় লোক পরিবারে বিয়ে দিলে সুখে থাকবে।। রেজাউল করিমও তার ব্যাতিক্রম না।।।
আজকালকার সমাজে মান সম্মান নির্ভর করে টাকার উপর। লোক দেখানো সুখে থাকতে সমাজে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য টাকা গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনে সুখে থাকার জন্য যেমন টাকা দরকার তেমনি ভালোবাসা ও দরকার। টাকা আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া সব কিছুই মূল্যহীন।
অবন্তিকা মনে মনে স্থির করেছে এবার বাবার পছন্দে বিয়ে করে বাবা কে শাস্তি দিবে। বুঝিয়ে দিবে টাকা দিয়ে সব সময় সুখে থাকে না।
….
রাতে ঘুমাতে এসে মুনতাহা কে না দেখতে পেয়ে সাইমুনের বুকটা কেঁপে উঠলো। অনেক দিন পর রুমে শূন্যতা অনুভব করছে৷ মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে ফেলেছে।
বের হয়ে পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে মুনতাহা কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে চুল এলিয়ে শুয়ে আছে। সাইমুনের সাহস হলো না ভিতরে গিয়ে মুনতাহার সাথে কথা বলার। দূর থেকে দেখে চলে এসেছে।
সারা রাত সাইমুনের এক ফোটাও ঘুম হলো না। যখন মুনতাহা ছিলো তখন ওকে এড়িয়ে চলতো। সাইমুন নিজেও জানেনা মুনতাহা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
…..
মুনতাহার মা সব জানার পরে মুনতাহা কে জোর করেছে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। মুনতাহা ইচ্ছে করে যায়নি। ভালো করে জানে মায়ের কাছে গেলে চারদিকের মানুষ ওর সাথে সাথে মা কে ও খোটা দিবে।
স্পেশালি মুনতাহার ভাবি উঠতে বসতে কথা শুনাবে। মুনতাহার বিয়ে হয়েছে দেখে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলো ওর ভাবি। ভাবি ভেবেছে আপদ বিদায় হয়েছে । তার চাইতে এ বাড়িতে পড়ে থাকা অনেক ভালো।
মুনতাহা শুধু নিজের চোখে দেখতে চায় সাইমুন তার বউ কে কিভাবে আপন করে নেয়। মুনতাহা জানে সে বেশিদিন এ বাড়িতে থাকতে পারবে না৷ কোন মেয়ের পক্ষে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না৷ তাই মুনতাহা ঠিক করে রেখেছে সময় হলে নিজ থেকে চলে যাবে।
বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। মুনতাহা আগের মত সাইমুনের কাছে যায় না। বুঝাতে চেষ্টা করে না সাইমুন কে ছাড়া থাকতে বড্ড কষ্ট হয়।
..।।
বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয় স্বজন আসা শুরু করেছে। মুনতাহার জন্য কেউ আফসোস প্রকাশ করছে আবার কেউ খোঁচা মারছে।
মুনতাহার খালা শাশুড়ী নেহারা বেগম এসেছে। মুনতাহা কে দেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,,
— কিরে সাইমুনের মা ওরে বিদায় করিস নি।
— আসলে বড় আফা সে অনেক কথা তোমাকে সব পরে বলব।
— তুই কি পাগল! ঘরের টারে না তাড়িয়ে নতুন বউ রে আনবি। ওর বদ নজর পড়বে না নতুন বউয়ের উপর। পরে যদি ওদের সুখ দেখে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে তখন সামলাতে পারবি??
— আফা ও কথা দিছে কিচ্ছু করবে না। তুমি এত ভেবো না।
— তুই সহজ সরল তাই তোরে বোকা বানাচ্ছে। দেখিস ঘরে নাতিপুতি আসলে না জানি বাচ্চাটার….
মুনতাহা এতক্ষন চুপ ছিলো কিন্তু এখন সীমার বাইরে হয়ে যাচ্ছে। মুনতাহা শান্ত গলায় খালা শাশুড়ী কে সালাম দিয়ে,,
— খালামনি কিছু মনে করবেন না আমি মা হতে পারব না এটা সত্যি। কিন্ত্য এতটা জঘন্য মনের না যে একটা মাছুম বাচ্চার ক্ষতি আমি করব?? এটা কি করে ভাবতে পারলেন।
— শুনো মাইয়া এমনি এমনি চুল পাকেনি কম তো দেখলাম না। সবাই প্রথমে বলে পরে হিংসায় জ্বলে যায়।
— একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট সে মা হতে পারবে না। কিন্তু আশেপাশের সবাই তার কষ্ট কমানোর পরিবর্তে পারলে বাড়িয়ে দেয়। একটা বার সে মেয়েটার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করে না
আচ্ছা খালামনি আজ যদি আমার জায়গায় আপনি থাকতেন আপনার কেমন লাগতো??
— কি কইলা তুমি।। আমি তোমার জায়গায় থাকুম কেন?? আমি ৪ টা পোলা মাইয়ার মা। নিশ্চয় বিয়ার আগে পাপ করছ তার শাস্তি পাচ্ছ।
মুনতাহা একটু রাগ করে বলে উঠলো,,
— খালামনি!! কি বলছেন আপনি!
……চলবে….