পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 07

যা কইতাছি একদম ঠিক। বিয়ার আগে আকাম কুকাম না করলে এমন হইব কেন। সাইমুন রে তখন কইছিলাম মাইয়া টা সুবিধার না কে শুনে কার কথা।
— হুম এখন আপনাদের পছন্দে হচ্ছে আশাকরি এবার সুবিধার হবে। আপনাদের মনের মত হবে। এ সংসারে সুখ শান্তি ফিরে আসবে।
মুনতাহার শাশুড়ী দুজনের কথার মাঝখানে বলে উঠলো,,
— মুনতাহা আর কথা বাড়াইও না। ভুলে যেও না উনি তোমার গুরুজন। তুমি তোমার কাজে যাও। দেখো বাজার কি কি লাগবে।।
— জি মা যাচ্ছি। তবে গুরুজনদেরও উচিত ছোটদের মন বুঝা।
খালামনি, মা দুজনকে বলি একজন মেয়ে হয়ে যদি আরেকজন মেয়ের কষ্ট না বুঝেন তাহলে মেয়ে হয়ে লাভ কি।
আমার মা ঠিক বলতো সংসার কে জান্নাতে পরিণত করার জন্য যেমন একটা মেয়ে যথেষ্ট তেমনি সংসার কে জাহান্নাম করার জন্য একটা মেয়েই যথেষ্ট।
….
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলে এসেছে। ছাদে ছোট করে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই বড় করে আয়োজন করতে চেয়েছিলো কিন্তু সাইমুনের এক কথা ওর এসবে ইচ্ছে নেই।
সবাই হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে বিজি। মুনতাহা সারাদিনে একবারের জন্য সাইমুনের সামনে যায় নি। সাইমুন ব্যাপার টা খেয়াল করেছে। কয়েক বার নানা কাজের বাহানা দিয়ে মুনতাহার খোঁজ করেছে।
মুনতাহা বুঝেও না বুঝার ভান করেছে। ফেলে দেয়া জিনিসের দিকে বার বার তাকাতে নেই তাতে খারাপ লাগা কাজ করে।
সাইমুনের অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ কি জানি ভাবতে থাকে। বেশি ভাগ সময় বারান্দায় বই পড়ে কাটিয়ে দেয়। অফিসের কাজে মন বসাতে পারছেনা।
সাইমুন ভাবছে ও চাইলে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারবে না। বিয়ে ভেঙ্গে দিলে সারাজীবনের জন্য বাবা ডাক শুনা বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া ওর মা বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলছে। মুনতাহার পক্ষে তো কোনদিন মা হওয়া সম্ভব না। আজ হোক কাল হোক বিয়ে তো করা লাগবে।
মুনতাহার শাশুড়ী মা কে খুব খুশি লাগছে। অবশেষে উনার ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে মানুষ নিজের সুখের জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠে যে নিজে যা করে তাই ঠিক মনে হয়। সত্যি মিথ্যার ধার ধারে না। তাই বলে সম্পর্কের বুনিয়াদ হবে এত বড় মিথ্যে দিয়ে!
মুনতাহার শাশুড়ী ভাবছে যা করছে ঠিক করছে। বউয়ের বাচ্চা হবে না জেনেও মাথায় তুলে রাখবে নাকি! এমন উদার শাশুড়ী খুঁজে পাওয়া যাবে না । বউ ভালো হবার পরেও কত শাশুড়ী বউদের নির্যাতন করে। তার তুলনায় উনি বহুত ভালো। মুনতাহা কে এ বাড়িতে থাকতে দিয়েছে এটাই কম কি!

ওইদিকে অবন্তিকার ভাবী অবন্তিকাকে তাড়া দিচ্ছে পার্লারে যাওয়ার জন্য। অবন্তিকার মন পড়ে আছে আহানাফ এর কাছে। আহানাফ কে ভীষণ মিস করছে। কত মাস কথা হয় না। আহানাফ যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও অবন্তিকা বাবার ভয়ে করেনি।
হঠাৎ অবন্তিকার নাম্বারে অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। অবন্তিকা ভাবছে কে হতে পারে সাইমুন নাতো। বিয়ের আগে বেটার লাড্ডু ফুটের অসহ্য।।
— অবন্তি কেমন আছ??
— কে আহানাফ??
— যাক তাহলে চিনতে পারছ?? আমি তো ভাবছি ভুলে গেছে নতুন মানুষ কে পেয়ে। এবার অন্তত সুখে থাকবে।
— কার কথা বলছ??
— কেন অবন্তি বুঝতে পারছ না, যাকে কাল বিয়ে করবে তার কথা বলছি। এখন তো তোমার সুখের দিন।
আহানাফ এর কথা অবন্তিকার কলিজা চেপে উঠলো।
— ও আচ্ছা ঠিক বলছ জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবার না হয় একটু সুখের মুখ দেখব। আমার ফ্যামিলি বিয়ে নিয়ে খুব খুশি তাই আমিও খুশি।
— ভালো খুব ভালো। আমি চাই আল্লাহ তোমাকে খুব সুখে রাখুক। আমি তো তোমাকে সুখ দিতে পারিনি।
— এখন এসব কথা থাক।
— আচ্ছা আমার সাথে কাটানো সময় এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে। আমার কথা মনে পড়বে না তোমার?? নাকি নতুন কারো ভালোবাসায় আমাকে ভুলে যাবে।
আহানাফ কি ভাবছে আমি বিয়ে নিয়ে খুব খুশি। ও কি জানেনা,আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। কখনো কি জানতে পারবে আমি মন থেকে বিয়ে টা করছিনা।
অবন্তিকা মোবাইল দূরে নিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ নাক মুছে,,
— যা অতীত হয়ে গেছে তা নিয়ে কথা বলতে চাই না। তুমিও আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবে। তোমার মত ছেলেকে ভালো না বেসে থাকতে পারবে না। রাখছি আমার কাজ আছে।
— আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না বিয়েতে মন দাও। আমার এ জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই।
— হুম।।
— আচ্ছা রেখে দাও। সুখের সময় কষ্ট কে না মনে করাই ভালো তাহলে কষ্ট বাড়ে।
.
.
অবন্তিকার বুক ফেটে কান্না আসছে। সত্যি কি অতীত কে পিছনে ফেলে দিতে পারবে। জিদের বশে ভুল কাজ করছে নাতো নানা কথা অবন্তিকার মাথায় উঁকি দিচ্ছে।
অবন্তিকার ভাবী সামিহার তাড়াতে অনেক টা বাধ্য হয়ে পার্লারে সাজতে যায় অবন্তিকা। যতই
মেক আপ করায় অবন্তিকার চোখের পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে যেটুকু পেরেছে সাজানো হয়। মনে আনন্দ না থাকলে হাজার সাজালেও কাউকে সুন্দর লাগে না।
অবন্তিকা ভাবছে ,,
আচ্ছা আমি কি সাইমুন কে কখনো মেনে নিতে পারবো?? সাইমুনের তো কোন দোষ নেই। সাইমুন কি আমার বিয়ের কথা জানে!! মনেহয় বাবা ওদের কিছুই বলেনি।
আহানাফ কে আমার পক্ষে ভুলা সম্ভব না। আজ সাইমুনের জায়গায় যফি আহানাফ থাকতে আমার দিনটা অন্য রকম হতো। কেন বাবা আমার আহানাফ কে কেড়ে নিলো। একটা বার ভাবলো না আমি কিসে ভালো থাকবো
যেভাবে হোক বাবাকে শাস্তি দিতে হবে। তার জন্য যা করার আমি করব।
রেজাউল করিম অনেক বড় করে মেয়ের হলুদ করছেন। মেয়ের বিয়েতে কোন কমতি রাখতে চান না। কিন্তু মেয়ের মনে যে সুখের কমতি আছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। নিজের পছন্দে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন এটাই অনেক।
….
.
সন্ধ্যায় চারদিকে লাল নীল বাতি জ্বলছে। পুরো বাড়ি আলোকসজ্জায় পরিপূর্ণ। মুনতাহার শাশুড়ী সাইমুনের খালাতো, মামাতো ভাই বোনদের বলছে,,
—কিরে তোরা সবাই শাড়ী পাঞ্জাবি পরে রেডি হবি কখন। এখন ৮ টা বাজতেছে সাজতে সাজতে ১২ টা বাজাই দিবি।
রাহি তুই ও বসে থাকবি। সবাইকে নিয়ে রেডি হয়ে উপরে যা।
— ঠিক আছে মা। তুমি ভেবো না আমরা সময়মত রেডি হয়ে যাব।
ভাই বোনদের মধ্যে নিপা বলে উঠলো,,
— আন্টি সাইমুনের ভাইয়ার বিয়েতে মত আছে তো? ভাইয়া খুশিতো?
মুনতাহার শাশুড়ী একটু চুপ থেকে,,
— মত না থাকলে কি বিয়ে করছে। তোরা কোথায় ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ করবি তা না এসব কথা নিয়ে পড়ে আছিস। তোদের সবার জন্য একি শাড়ী পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। সবাই গিয়ে রেডি হয়ে নে। সাথে সাইমুন কে ও রেডি হতে বল।

সাইমুন মুনতাহা কে ডেকে পাঠিয়েছে কি খুঁজে পাচ্ছে না বলে। মুনতাহা রুমে আসতে সাইমুন চারদিকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়,,
— মুনতাহা কেন আমাকে এড়িয়ে চলছো??
— এড়িয়ে চললাম কোথায় আমার স্বামীর বিয়ে আমার কত কাজ। আমার কি ঘুরে বেড়ালে চলবে।
সাইমুন মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরে ,
— প্লিজ আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা কর। একটা বাচ্চা আসলে দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে।
— ছাড়ো আমাকে।। বাচ্চা মানে বুঝো। বাচ্চা কি এমনি এমনি আসে। একটা মেয়ের জন্য এতই সহজ সতীনের সংসার করা। তুমি মেনে নিতে আমি যদি দুইটা স্বামী নিয়ে সংসার করতাম??
— ফালতু কথা বলবা না। কেন বুঝছ না মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে করতে হচ্ছে।
— কর না আমি কি বাঁধা দিয়েছি। আমাকে যেতে দাও। বাসা ভর্তি মানুষ কেউ দেখলে হুদাই ঝামেলা বাড়বে।
মুনতাহা যাবার আগে সাইমুন কে বলল,,
— আমাকে ভালোবাসলে বিয়ে টা কখনো করতে না। করছ যেহেতু অবন্তিকা কে নিয়ে ভাবো। সব মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরের ঘরে আসে। তার উপর মেয়েটা জানেনা তোমার ঘরে আরেকটা বউ আছে। তুমি আজকাল সত্যি মিথ্যের পার্থক্য বুঝ না।
আমাকে কষ্ট দিচ্ছ দাও যে আসবে তাকে কষ্ট দিও না।
মা খালামনি দেখলে যাতা কথা শুনাবে। আমাকে স্বান্তনা দেয়ার লোক না থাকলেও কথা শুনানোর অনেকে আছে।
।।
সাইমুন কে জোর করে সবাই পাঞ্জাবি পরিয়ে ছাদে নিয়েছে।
সাইমুনের সেদিকে মন নেই। বার বার এদিক সেদিক তাকিয়ে মুনতাহা কে খুঁজছে।
সবাই আসলেও মুনতাহা আসেনি। মুনতাহা কি আসবেনা তাহলে!! দূর কি ভাবছি এসব না আসলে ভালো। আমাকে এভাবে দেখে আরো কষ্ট পাবে।
সবাই যে যার যার মত মজা মাস্তিতে ব্যাস্ত।
–কিরে সাইমুন ভাই নতুন ভাবীর কথা কি খুব মনে
পড়ছে।। আহা মুখ টা শুকিয়ে গেছে নতুন ভাবীর কথা ভেবে।
সাইমুনের কাছে সবার হাসি তামাশা বিষাক্ত লাগছে।সাইমুন রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,,
—সবাইকে শেষ বারের মত বলে দিলাম আজাইরা মজা করতে আসবি না।
পরিস্থিতি থমথমে কেউ তেমন হৈ চৈ করছে না। সবাই চুপচাপ। এক মুহুর্তের মধ্যে পরিবেশের রং পাল্টে গেলো।
হঠাৎ মুনতাহার উপস্থিতিতে সাইমুন অবাক হয়ে যায়। এই কোন মুনতাহাকে দেখছে!!
……চলবে……