পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 05

দূর ভাবী আমি কি কথা বলব যা কথা হবে বিয়ের পরে হবে এখন কথা বলার ইচ্ছে নেই।
মোবাইলের ওপাশ থেকে সাইমুন অনবরত বলে যাচ্ছে,,
— হ্যালো হ্যালো কে বলছেন?
অবন্তিকা সাইমুনের কন্ঠ শুনে কেটে দিতে পারেনি,,
— আমি অবন্তিকা!
সাইমুন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। অসস্থি বাড়ছে। ভিতরে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।
— ও আপনি!! কেমন আছেন??
— ভালো। আপনি??
— ভালো, বিকেলের নাস্তা করেছেন??
— হুম
দুজন চুপ কেউ কোন কথা বলছে না। এভাবে ২ মিনিট চলে যাবার পর অবন্তিকা বলে উঠলো,,
— আচ্ছা আজ তাহলে রাখি পরে কথা হবে।
মোবাইল রাখতেই সাইমুন দেখলো মুনতাহা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুনিতাহার উপস্থিতি সাইমুনের মনে কম্পন তুলে দিলো।
সাইমুনের চেহেরায় লুকায়িত ভাব। যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
মুনতাহার সাইমুনের কথার স্টাইলে বুঝেছে অবন্তিকার সাথে কথা বলছিলো। তারপরেও সাইমুন কে কিছুই বলল না।
— তোমার চা রেখে গেলাম খেয়ে নিও।
মুনতাহা বুঝেনিতো আমি কার সাথে কথা বলেছি। ও কি রাগ করেছে। মনে মনে কি ভাবছে আমি অবন্তিকা কে নিয়ে বেশি খুশি।
মুনতাহা যেতেই সাইমুন পিছন থেকে ডাক দিলো,
— মুনতাহা!
— হুম কিছু বলবে??
— না মানে আমাকে অবন্তিকা কল দিয়েছিলো।
— হুম বুঝেছি।
— কিভাবে??
— এত বছর ধরে তোমাকে চিনি। তোমার সব হাবভাব আমি ভালো করে জানি। ভালোবাসার মানুষের এটুকু না বুঝলে আর কি ভালোবাসলাম। তুমি নাহয় আমাকে ভালোবাসোনি কিন্তু আমি তো ভালোবেসেছি তাই না??
— তোমাকে আমি ভালোবাসিনি এ কথা বলতে পারলে!!
— খুব ভালোবেসেছ! সেজন্য আজ ২ য় বিয়ে করছ তাইনা। তোমার আচরণ আমাকে প্রতিটি মিনিট বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা ভালোবাসছ আমায়।
বাচ্চা অনেকের হয়না। মনে আছে আমার খালাতো বোন ঝিনুকের কথা। ওর বিয়ের ৫ বছর হচ্ছে বাচ্চা হচ্ছে না তাই বলে ওর জামাই আরেকটা বিয়ে করেনি। ওরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। শুনেছি একটা বাচ্চা দত্তক নিয়েছে। খুব সুখে আছে।
মুনতাহার কথার কোন উত্তর সাইমুনের কাছে নেই।
— বেশি ভেবো না। আমার উত্তর লাগবে না।
আর হ্যাঁ আমাকে সাফাই দেয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার হবু বউয়ের সাথে কথা বলতেই পারো। দুদিন পর বিয়ে করবে এখন থেকে মনের কথা আদান প্রদান না করলে কখন করবে।
এখনি দুজন দুজনকে বুঝাপাড়ার সময়। তাছাড়া যখন বউয়ের সাথে একান্ত সময় কাটাবে তখন কি আমার পারমিশন নিবে??
— এভাবে কেন বলছ। সত্যি আমি কল দি নাই। তুমি কি সারাক্ষণ রাগ দেখিয়ে কথা বলবে আমার সাথে।
— নরমালি বলছি। মোটেও রাগ করছিনা। কার সাথে রাগ করব বলো। তুমি কি আদো আমার আছ?? আমার সাইমুন অনেক আগে মরে গেছে আমার কাছে। যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে অবন্তিকার হবু বর।
মুনতাহা মুখে কাপড় দিয়ে কান্না করতে করতে ছাদে চলে গেলো।।
না আমাকে নিজের ইমোশন গুলো কন্ট্রোল করতে হবে। ভালোবেসেছি পাপ করিনি সব সময় মেয়েরা কেন অবহেলিত হবে। অনেক ছোট করেছি নিজেকে আর না। যে যেভাবে সুখে থাকতে চায় তাকে সেভাবে থাকতে দেয়া দরকার।
বার বার ছুটে গিয়ে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে আত্মসম্মানবোধ কে খুন করতে চাই না। যদি সত্যি সাইমুনের মনে আমার জন্য ভালোবাসা থাকে ও ঠিক ফিরে আসবে সময় থাকতে।
মুনতাহার আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখিদের দিকে তাকিয়ে আছে। দমকা বাতাসে মুনতাহার খোপা খুলে চুল বাতাসে উড়ছে। মুনতাহার লম্বা চুল দেখে একসময় সাইমুন প্রেমে পড়েছিলো। প্রতি রাতে মুনতাহার চুলের গন্ধে সাইমুন নিজেকে বিলিয়ে দিতো। সাইমুনের চুল এতটাই পছন্দ যে মুনতাহা কে কখনো চুল কাটতে দেয়নি।
আকাশ তার বিশালতা দিয়ে পুরো পৃথিবীটাকে আবৃত করে রাখে। মানুষ চাইলে তার হৃদয়টা আকাশের মত বিশাল করতে পারে না। আচ্ছা আকাশের ও কি মন খারাপ হয়!! হয়ত হয়।। সেই কষ্ট গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মুনতাহার প্রিয় গানের লাইন গুলো মনে পড়ে গেলো। যখন সাইমুনের সাথে ঝগড়া করে মন খারাপ হতো মুনতাহা প্রায় সাময় ওর প্রিয় গান শুনতো,,
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
তোমারে দেখিতে দেয় না।
মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না।
মোহমেঘে তোমারে
অন্ধ করে রাখে
তোমারে দেখিতে দেয় না।
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা।।
ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাইয়া ফেলি চকিতে
….
সাইমুনের সাথে কথা বলার অবন্তিকার চোখ ছলছল করছে আহনাফ এর কথা মনে করে। ক্লাস নাইন থেকে আহানফের সাথে সম্পর্ক হয় অবন্তিকার ।
প্রথম দেখেছিলো অবন্তিকার বেস্টফ্রেন্ড তিনার বয়ফ্রেড এর সাথে মেলায় দেখা করতে গিয়ে। খুব সাধাসিধে ছেলে ছিলো আহানাফ। চলাফেরায় কোন আভিজাত্যের ছোঁয়া নেই। তবে কথাতে ছিলো জাদুমন্ত্র। ভীষণ সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। যে কেউ আহানফের কথা মুগ্ধ হয়ে শুনবে।
আহানফের কথা অবন্তিকার এতই ভালো লেগেছে সেখান থেকে নাম্বার দেয়া নেয়া শুরু।
পরে বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেমে রূপান্তরিত হয়।
খুব সুন্দর সময় কাটছিলো ওদের। দুজনের মধ্যে ঝগড়া হলেও বেশি সময় টিকতো না। কেউ কারো সাথে কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পার‍তো না।
দেখতে দেখতে স্কুল কলেজ পার করে দিলো। যেখানে এখকার সম্পর্ক গুলো ১ বছর টিকে না সেখানে আহানাফ অবন্তিকার সম্পর্ক ৭ বছর চোখের পলকে চলে গেলো ।
অবন্তিকা যখন অনার্সে ভর্তি হলো। অবন্তিকা কে বাসায় বিয়ের চাপ দিচ্ছে। ভালো ভালো পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে। একটার পর একটা কারণ দেখিয়ে অবন্তিকা মানা করতে থাকে। কোনভাবে অবন্তিকা আহানাফ কে হারাতে পারবে না।
আহানাফ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছোটখাটো একটা জব করে নিজে চলার মত। ভালো চাকুরীর সন্ধান করছিলো অবন্তিকার বাবার সামনে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এরমধ্যেই রেজাউল করিম মেয়ের রিলেশনের কথা জেনে যায়। রেজাউল করিম ভাবতেই পারছে না তার মেয়ে এমন একটা ছেলের সাথে প্রেম করবে। যাদের ফ্যামিলি কোনভাবে তাদের সাথে যায় না।
রেগেমেগে অবন্তিকা ডাক দিলো,,
— অবন্তিকা কোথায় তুমি?? তাড়াতাড়ি আমার সামনে আসো।
…চলবে…