না বললেও ভালোকিন্তুবাসি !! Part- 17
মোহনা : কি? 😤
মমতা : যেটা শুনলি। ছিঃ ছিঃ ছিঃ … খান বাড়ির মান-সম্মান সব খেয়ে ফেলল।
মোহনা : বাবা প্রথম আর শেষবারের মতো তোমাকে warn করছি। তোমার মাকে চুপ করাও। মুখ সামলে কথা বলতে বলো। না হলে জিভ টেনে ছিরে ফেলবো। আর তুমি জানো আমি এটা পারবো।
মমতা : কি বললি? কি বললি তুই? তোর সাহস তো কমনা… তুই আমার জবান টান দিয়ে ছিরবার চাস?
শুভ্র : মা মা … রুমে চলো। আরাম করবে চলো।
মমতা : ক্যালা আমি যামু ক্যালা? ওই মাইয়া ওই… তোর কলিজা তো কম না তুই আমার জবান ছিরবার চাস…. কোন কলিজায় এমন কথা কস?
.
মোহনা : যে কলিজায় আপনি আমাকে চরিত্রহীনা বলছেন।
মমতা : তুই তো চরিত্রহীনাই …
মোহনা : কি কি? আপনার এতো বড় সাহস আপনি আমাকে…
মোহনা চারদিকে দেখতে লাগলো। শুভ্র ছুটে মোহনার কাছে গেলো।
শুভ্র : মামনি মামনি… রুমে যাও…. মা না ভালো আমার…
অভ্র : পিকু আমার ভাইয়ার ১টা কথা শোনো তুমি রুমে যাও ভাইয়া এসে তোমার সাথে কথা বলছি। তুমি কিছু না বলে রুমে চলে যাও।
মোহনা : তোমাদের সমস্যাটা কি? তোমরা ওই কুটনি বুড়িকে কেন চুপ করাচ্ছো না? এই বুড়ির তো আজকে আমি হাড়গোর সব ভাঙবো।
মমতা : তুই তো করবিই। তুই তো আজরাইল। লজ্জা শরম বলতে তোর কিছু আছে।
শুভ্র : মা রুমে চলো। দিপ্তী মাকে রুমে নিয়ে যাও।
মমতা : খবরদার…
মোহনা : ওই বুড়ি… তুই তো অস…
শুভ্র অশ্রুসিক্ত নয়নে হাত জোর করে
বলল : মামনি … please চুপ থাকো। please ….
মোহনা সব মানতে পারে ২টা জিনিস ছারা। ১টা হলো ওর চরিত্র নিয়ে কথা আর ২ হলো ওর বাবার চোখের পানি। ও সব মেনে নিলেও বাবার চোখের পানি ও মানতে পারেনা। তাই চুপ হয়ে গেলো।
.
মমতা : থামলি ক্যালা? কইতে থাক… কি কবি? মুখ থাকল তো। ছিঃ ছিঃ… সাদী হয় নাই কিছু হয় নাই কিভাবে থাকে অন্য ছেলে গো বাড়ি। নির্লজ্জ ।
শুভ্র : মা … ও তো…
মমতা : তুই আমার মুখের ওপর কথা বলস? আরেকবার বললে কি করবো নিজেও জানিনা। মাইয়ারে সাসন (শ্বাসন) করা পারস না। সাদী ছারা কিভাবে থাকলো। ৩ ৩ বার বাড়ি ছেরে পালায় যায়? কোথায় গেছিলো কার সাথে গেছিলো? কোন ছেলের সাথে রাত কাটাইছে? ক্যাঠায় বলতে পারবো? সাগর গো বাড়িতে ছিলো না জানি কি কি করছে? তা না হইলে অমন সোনার টুকরা ছেলে অর পিছনে ঘুরে? তোর মতো মেয়েরে বাংলা ভাষায় কি বলে জানোস? ইংরেজী ভাষায় বলে prostitute…
অভ্র : দীদা…
মোহনা : আরো কিছু বলবেন?
মমতা : তুই আমার মাইয়া হলে না টুকরো টুকরো করে কেটে নদীতে ফেলে দিতাম। নষ্টা মেয়ে…
মোহনা : আপনার ৭জনমের ভাগ্য যে আপনি আমার মা না….
বলেই মোহনা রুমে চলে গেলো।
.
৫মিনিট পর…
সাগর এলো।
সাগর : আরে দীদা যে… কবে এসেছো?
মমতা : আরে সাগর দাদুভাই যে… ভালো আছো?
সাগর : হামম। তুমি ভাে আছো?
মমতা : হামম।
সাগল খেয়াল করলো যে সবার মুখ ভারি। সাগর মনে করলো মমতা আর মোহনার মধ্যে ঝামেলা হয়েছে তাই মনে হয়।
সাগর মনে মনে : নিশ্চয়ই দীদা কিছু করেছে। এই মহিলা আমার দীদা হলে কি যে করতাম নিজেও জানিনা।
সাগর : ভাবি… মোহো রুমে? দেখোনা ফোন রেখেই চলে এসেছে। দীদা বসো আমি ওর ফোনটা দিয়ে আসছি।
.
সাগর মোহনার রুমে গেলো। গিয়ে খানিকটা অবাক হলো। কারন মোহনা মেঝেতে বসে বেডে মাথা উপুর করে রেখেছে। সাগর কখনোই মোহনাকে এভাবে দেখেনি। সাগরের কেমন ১টা খটকা লাগলো। ও মোহনার কাছে গিয়ে দারালো। বসলো। বসে মোহনার মাথায় হাত রাখলো।
সাগর : মোহোপাখি… কি হয়েছে? এভাবে বসে আছো যে? খারাপ লাগছে?
মোহনা : …
সাগর : মোহোপাখি… দেখি তো মাথাটা তোলো তো..
মোহনা না মাথা তুলল না কোনো কথা বলল।
সাগর : কি হলো….
মোহনা মাথা না তুলে ঠান্ডা সুরে
বলল : আপনি চলে যান প্লিজ….
মোহনার কথায় সাগর স্পষ্ট বুঝতে পারলো যে মোহনা কাদছে। যেটা সাগরকে আরো অবাক করলো। কারন সাগর জানে মোহনা কখনো কান্না করেনা। হাজার ব্যাথা পেলেওনা। ওই একটু ভ্যা ভ্যা ই করে। তাই আজকো মোহনার কান্না সাগরের জন্য ১টা বড় ধাক্কা।
সাগর : আমি তো যাবোই… কিন্তু যাওয়ার আগে একটু ঝগড়া না করলে কি চলে মিস নাগিন?
মোহনা : …
সাগর : get up get up…
মোহনা:…
সাগর টেনে টুনে মোহনাকে উঠালো। কান্না করতে করতে মোহনার চোখ মুখ ফুলে গেছে। সাগর কখনো ভাবেনি এমন ১টা situation এর মুখোমুখি ওকে হতে হবে। এমনভাবে মোহনাকে দেখবে।
সাগর : হায়… কি দেখছি আমি? মোহোপাখি কাদছে? মিস নাগিন কাদছে? the queen of the jungle কান্না করছে? ভাবা যায়!
মোহনা : ….
সাগর : বুঝেছি মোহোপাখির মন খারাপ কারন চকোলেট খেতে পারছেনা… কারন রোজা…
মোহনা আবারও ঠান্ডা সুরে
বলল : সাগর প্লিজ চলে যান….
সাগর : যাবোনা।
সাগর মোহনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে
বলল : এখন বলো তো কি হয়েছে? দীদা কিছু বলেছে? just ignore her… মানুষের কথা কবে থেকে মোহনাকে effect করে?
মোহনা : ….
সাগর : বলো? কি হয়েছে? কি ঝামেলা করেছে দীদা? কি সমস্যা? বলো….
.
মোহনার মন তো খারাপ ছিলোই। রাগও ছিলো। তবে মমতার থেকে বাবা আর ভাইয়ার ওপর। মমতাকে ও ওর রাগের যোগ্যও মনে করেনা… এতো কথা শোনালো মমতা অথচ বাবা ভাইয়া কিছুই বলল না আর না মোহনাকে বলতে দিলো। তার মধ্যে সাগর । যার জন্যেই সব হয়েছে । এই মুহুর্তে সাগরকে খুন করতে ইচ্ছা করছে ।
মোহনা : আপনি কি যাবেন?
সাগর : উহু…
বলেই মোহনার হাত জোরা নিয়ে কিস করলো। মোহনার রাগ out of control হয়ে গেলো। ঠাস করে সাগরকে থাপ্পর মারলো। সাগর হতবাক।
মোহনা : আপনি সব সমস্যার কারন। যেখানে বাবা ভাইয়া was quiet ছিলো সেখানে আপনি কি করবেন? কে আপনি? who the hell are you? just get out from here…
সাগর : ….
মোহনা : যান…
সাগর : ….
সাগর চলে গেলো।
মোহনা বেডে হেলান দিয়ে নিচেই বসে রইলো। সাগর ভেবে পাচ্ছেনা কাহিনি কি?
.
দিপ্তী : এটাই ভাবছো তো যে তুমি থাপ্পরটা কেন খেলে?
সাগর : ভাবি তুমি?
দিপ্তী : আমি চেচামেচি শুনে ভেতরে যেতে নিয়েছিলাম । তখন দেখে ফেলেছিলাম। sorry for that…
সাগর : its ok… but বলবে কি হয়েছে?
দিপ্তী : of course বলবো। কারন আজকে চুপ থাকলে নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে থাকবো ।
দিপ্তী সাগরকে সব বলল। যা শুনে সাগরের মাথা গরম হয়ে গেলো। রেগে আগুন হয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো।
মমতা : আরে সাগর দাদুভাই… আসো এ…
সাগর : don’t call me দাদুভাই মিসেস মমতা খান… আমার সামনে এমন ঢং ধরার কোনো মানে নেই…
শুভ্র : সাগর ত…
সাগর : বড়আব্বু… কোনো কথা না…
মমতা : ওরে বাবারে রেগে গেছে দেখি আমার দাদুভাই। বুঝেছি ওই অপয়াটাই কিছু বলেছে।
সাগর : just shut up…. don’t call her that… কি অপয়া কি? অলক্ষি কি? আপনি কি হ্যা অাপনি কি? আপনি যদি এতোই লক্ষিমন্তর হন তবে আপনার মেয়ে কেন মরলো? তাও ৬-৭মাস বছর বয়সে। তখন তো আর মোহো ছিলোনা। তবে কেন আপনার মেয়ে মরলো? এর মানে কি আপনি অলক্ষি? আপনি যদি এতোই লক্ষি হন তবে আপনার স্বামী কেন মরলো? ওই stupid আদিম চিন্তাধারার জন্য ওই ছোট ১টা মেয়ের কতো বড় ক্ষতি হয়েছে? আপনি যে আচরন মোহোর সাথে করেছেন, নিজের নাতনির সাথে করেছেন সেটা কেউ শত্রুর মেয়ের সাথেও করে না। তুমি ওর জীবনের actual happiness টাই কেরে নিয়েছো। যেকোনো মেয়ের জীবনের সবথেকে বড় dream থাকে মা হওয়ার। but u snatch that… এর কোনো নিশ্তয়তা নেই যে মোহো মা হতে পারবে কি পারবেনা। mental problem টা মানলাম solve না হলে নেই। সেটা মোহো মেনে নিয়েছে। কিন্তু যদি মোহো ওই কথাটা জানতে পারে আপনার কপালে কি আছে কেউ জানে না। last কথা বলতে চাই যে আপনি বয়স্ক মানুষ। মৃত্যু আপনার দ্বারে। কি জবাব দেবেন? যে আমি ১টা বাচ্চা মেয়ের সাথে এতো বাজে বাজে কাজ করেছি । এই যে আপনাকে আমি দীদা বলে ডাকি , respect দেখাই সেটা আপনার জন্য না। মোহোর জন্য । মোহোর দীদা বলে আপনাকে respect দেখাই। believe me.. i hate you… whatever … বড়আব্বু আর ভাইয়া… মিসেস খানের ওপর যতোটা না রেগে আছি তারথেকে বেশি তোমাদের ওপর রেগে আছি। আমার মোহো যখন এতো খারাপ এতো কিছু ওকে নিয়ে। খান বাড়ির লজ্জা যখন আমার মোহো। তখন আমি আমার মোহোকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। আমার বউ করে। ভাবি মোহোর সব কাগজপত্র তো তুমি রেখেছো। সেগুলো নিয়ে গাড়িতে বসো। actually তুমি marriage registry office এ চলে যাও। আমি মামনি বাবা আর ২ আপু দুলাভাইয়াকে আসতে বলছি। আমি মোহোকে নিয়ে আসছি।
দিপ্তী : হামম। কিন্তু office তো মনে হয় বন্ধ।
সাগর : বন্ধ হলে ম্যাজস্ট্রেটের বাসায় যাবো। but বিয়ে তো হবেই । আজকেই। বাবার friend আছে ১জন ম্যাজিস্ট্রেট। তুমি আমাদের বাসায় চলে যাও।
.
মোহনা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। কেন যেন সাগরকে থাপ্পর মেরে ওর রাগটা একটু কমেছে। এটা নরমাল। কারন জাহান্নাম হয়ে গেলেও হাজার রাগ উঠলেও সাগরের ওপর রাগ ঝারলে মোহনা সবসময় relieve feel করে। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। মোহনা যখন রাগ ঝারে তখন সাগর চুপ থাকলেও তারপর দিন সাগর ঠিকই শাস্তি দেয়। তাই মোহনা একটু ভয়ও পাচ্ছে। কারন সাগরকে থাপ্পর মেরেছে। ছেলেদের থাপ্পর মারার experience মোহনার আছে। কিন্তু সবাইকে থাপ্পর মারা সাগরকে থাপ্পর মারা তো আর এক না। তাই মোহো ভয় পাচ্ছে। এগুলোই ভাবছিলো তখনই হঠাৎ মোহনার মনে হলো যে ও হাওয়ায় ভাসছে। মোহনা চোখ মেলল। তাকিয়ে দেখে ও সাগরের কোলে। মোহনা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলো। কারন যেই লোকটাকে actually যেই arrogant লোকটাকে ১০-১৫মিনিট আগে থাপ্পর মেরেছে সেই লোক ওকে কোলে তুলে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। মোহনা তো আজকে damn sure যে আজকে সাগর ওকে মেরেই ফেলবে। সাগর মোহনাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। then drive করতে লাগলো।
.
সাগর একদম সামনের দিকে তাকিয়ে drive করছে।
মোহনা : আপনি কি আমাকে মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছেন?
সাগর : …
মোহনা : কিভাবে মারার plan করেছেন? মানে পানিতে ডুবিয়ে? নাকি ছাদ থেকে ফেলে?
সাগর জানে কোনো কিছুর নিয়ে আজাইরা ভাবনা চিন্তা না করার নামই মোহনা। তাও সাগর কোনো কথা বললনা।
মোহনা : আচ্ছা দেখুন সব ধরনের suicide attempt তো করেছি। accept গুলি খাওয়া , হাতের রগ কাটা & গলা টিপে types ছারা। আপনি আমাকে shoot করে মারতে পারে। তাও একে বারে কপালে। যেন পলকেই মরে যাই।
সাগর : ….
মোহনা : আচ্ছা মরার আগে শেষবারের মতো চকোলেট খেতে পারি?
সাগর : মরবে কি না জানিনা। তবে আরেকটা কথা বললে থাপ্পর অবশ্যই খাবা।
মোহনা : how rude… ? এটা কিন্তু ঠিক না।
সাগর : চুপ থাকবা?
.
একটুপর…
গাড়ি সেগুনবাগিচার ১টা বড় সরো apartment এর নিচে থামলো।
মোহনী মনে মনে: বাবারে… no no… আজকে থেকে no বাবা… মোহনারে কতো উচু building ….ছাদ থেকে পরলে তো টা টা bye bye…
গাড়ি থেকে নেমে সাগর আবার মোহনাকে কোলে তুলে লিফ্টে উঠলো। 15th floor এ গিয়ে থামলো। বাম দিকের flat টা তে ঢুকলো। মোহনা অনেক অবাক হলো। কারন ওখানে ছোটআব্বু , ছোটআম্মু, ভাবি , ২আপু , ২দুলাভাইয়া আর ১টা অচেনা মধ্যবয়স্ক লোক আর মহিলা বসে আছে।
মোহনা মনে মনে : এরা সবাই আমার মৃত্যুর সাক্ষী হবে? 😱😱😱।
সাগর মোহনাকে বসালো।
মধ্যবয়স্ক লোকটার কাছ থেকে কাগজটা নিয়ে
সাগর বলল : signature করো।
মোহনা : my death warrant ?
সাগর : marriage registry paper ….
মোহনা : কি?
শিখা : হ্যা মা। signature করে নে। আমি দেখি আর কার সাহস হয় যে তোকে কথা শোনায়। ওই মহিলার চেহারাও আর তোকে দেখতে হবেনা।
অহনা : আর না শুভ্র খানের।
দিপ্তী : আর না অভ্র খানের…
মোটামোটি সবাই বলল। বাবা ভাইয়ার ওপর প্রচন্ড অভিমানে মোহনার মাথাও hang হয়ে আছে। তাই ও signature করে দিলো। ও করার পর সাগরও করলো।
সাগর-মোহনার বিয়ে হয়ে গেল।
.
চলবে….