Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 49
পরদিন সকালে নাস্তা সেড়ে নিয়ে কংলাক পাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো রুহী আর রোয়েন।বেশ কিছুক্ষন জার্নির পর কংলাক পাড়ায় পৌছুলো ওরা।খড়ের ঘর আছে বেশ কিছু পাহাড়ের ওপর।রুহী দৌড়ে পাহাড়ের একটু কিনারে চলে এলো।রোয়েন রুহীর পিছু এসে দাঁড়ালো।রুহীর সারা মুখ জুড়ে হাসি যেন থামতেই চাচ্ছেনা।রুহীর হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিতে থাকলো রোয়েন।
পাশে তাকায় রুহী।রুহী নিজের আঙ্গুল গুলোকে রোয়েনের আঙ্গুলের ভাজে দিয়ে দিলো।মুচকি হেসে সামনে তাকায় রোয়েন।
রুহী রোয়েনের কাছে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে মাথা রাখলো।রোয়েন রুহীকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
সেখানে বেশ কিছুক্ষন সময় কাঁটিয়ে পাহাড়ে ঘুরাঘুরি করতে লাগলো।একজায়গায় এসে থামলো ওরা।
একটা ঘরের সামনে বয়স্ক একজন আধিবাসী মহিলা রান্না করছে।রুহী কোন কিছু না ভেবেই সেদিকে দৌড় দিলো।
রুহী কোথায় যাও?ফিরে আসো?ডাকতে ডাকতে রুহীর কাছে এসে দাঁড়ালো রোয়েন।
বয়স্কা মহিলা ভাঙ্গা বাংলায় বলল কোথা থেকে এসেছো তোমরা বাছা?
ঢাকা থেকে দাদিমা?কি রাঁধছো?রুহী এভাবে কথা বলছিলো যেন মহিলাটাকে খুব চিনে ও।
মহিলা পাতিলের ওপর থেকে ঢাকনা সরালো।মুরগী রান্না হচ্ছে।বন্য মুরগী জানালো বয়স্ক মহিলা।
রুহী চলো।অনেক হয়েছে দাঁতে দাঁত চাপলো রোয়েন।
বাছা দুপুরে খাইয়া যাও।বৃদ্ধা বলে উঠলো।
রোয়েন কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো রুহী কোমড় বেঁধে কাজে নেমে গেছে।বৃদ্ধা কে সাহায্য করছে রুহী।খুব জমিয়ে গল্প করছে ওরা।অবাক চোখে রুহীকে দেখছে রোয়েন।
রুহীর জেদের কাছে হারমানলো রোয়েন।দুপুরে বৃদ্ধার ঘরেই খেলো ওরা।বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে কষ্টের কথা বলেছে ওদের।ওনার স্বামী আধিবাসী ছিলেননা।তার কাছেই বাংলায় কথা বলা শিখেছিলেন।বেশ সুখেই কাঁটছিলো তাদের সময়।ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। তাদের ৬জন ছেলে মেয়ে আছে।নামের মাত্র সন্তান তারা।
স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে মেয়েরা ওনাকে ছেড়ে যেতে থাকে।তারা শহরে গিয়ে নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত।বৃদ্ধ মা বেঁচে আছে কিনা সেটা ও হয়ত জানেনা তারা।রুহী কাঁদছে বুড়ির কথায়।রোয়েন রুহীর কান্না দেখছে।খুব বেশি নরম মনের রুহী।এতো টা নরম হলে যে কেউ সহজেই ওর ক্ষতি করতে পারবে।ভাবতে থাকে রোয়েন।
বিকেলে রোয়েন রুহী আসতে চাইলে বৃদ্ধার কান্নায় আসতে পারেনা ওরা।বৃদ্ধা ওদের একরাতের জন্য থাকতে বলছে তার কাছে।
শেষ মেষ ওরা থেকে গেলো বৃদ্ধার কাছে।রুহী দাদীকে সরিয়ে রাতের রান্না করছে।গায়ের গেঞ্জীটা চেঞ্জ করে একটি লাল সুতির শাড়ি পরো নিয়েছে ও। এখানে আসার পর রোয়েন কিনে দিয়েছিলো ওকে।অবশ্য দাদী পরিয়ে দিলো ওকে শাড়ী ওনাদের স্টাইলে।বেশ উঁচু করে পরানো হয়েছে শাড়ী।কোন কুঁচি নেই।শাড়ীর আঁচলটাকে কোমড়ে গুঁজে দেয়া হয়েছে।কোঁকড়া চুল গুলো কে সাইড করে খোপা করিয়ে দিয়েছে দাদি।রোয়েন রুহীকে দেখে বড় সড়ো ধাক্কা খেলো।উপজাতি মেয়েদের মতো লাগছে।তবে খুব সুন্দর লাগছে রুহীকে এই নতুন রুপে।
রুহী রান্না করছে মাটির চুলায়।রোয়েন রুহীকে দেখছে।বৌ বৌ লাগছে ওর মায়াবতীকে একদম।
বুড়ি দাদি অনেক্ষন আগে বেরিয়ে গেছেন।এখনো ফিরে আসেননি।রুহী রান্না সেড়ে রোয়েনের কোলের ওপর এসে বসলো।
রুহী গলায় চুমু খাচ্ছে রোয়েন।রুহী রোয়েনের চুলের ভিতর হাত ঢুকিয়ে খামচে ধরেছে।
হঠাৎ ঘরের ভিতর খুটখাট শব্দ পেয়ে রুহী সরে এলো রোয়েন থেকে।দুজনে ঘরে চলে এলো।বুড়ি একটা রুম থেকে বেরিয়ে দরজা আটকে দিলো।
দাদি কই গিয়েছিলে?জিজ্ঞেস করে উঠলো রুহী।
কাজে গেছিলাম দাদু।রান্না হলো?জিজ্ঞেস করে উঠলো বুড়ি দাদি।
জি দাদি।খেতে চলো।বলে উঠলো রুহী।তিনজন মিলে খেয়ে নিলো ওরা।রুহী আর রোয়েনকে রুমটির সামনে আনলো বৃদ্ধা।
খাটটাকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন উপজাতি স্টাইলে বাসর সাজানো যাকে বলে।
রোয়েন আর রুহী নিজেদের স্বামী স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলো।
তোমরা কাছে থাকছো সেজন্য খুশি হয়ে এই ছুট্টো উপহার দিলাম।বলে উঠলেন বৃদ্ধা।
রোয়েন চোখ বড় করে রুহীর দিকে তাকায়।রুহী মাথা নিচু করে লজ্জা মাখা হাসি দিচ্ছে।
রোয়েন রুহীর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।কিছু বলতে যেয়ে ও পারছেনা।
বৃদ্ধা ওদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন তার রুমে।
বুড়ির রস কম নয়।বিড়বিড় করে বলল রোয়েন।
কিছু বললে?জিজ্ঞেস করলে রুহী।
নাহ কি বলবো?ভাবছিলাম ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দাদীর ও নিশ্চয় কষ্ট হয়েছে।ওনার কষ্টটাকে তো বৃথা যেতে দেয়া যায়না তাইনা?একনাগাড়ে বলল রোয়েন।
রুহী অবাক হয়ে রোয়েনকে দেখছে।
রোয়েন বাঁকা হেসে রুহীকে কাঁধে তুলে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।রুহীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে একটু উবুঁ হলো রোয়েন ওর ওপর।
রুহীর কপালে চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে রুহীর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে রোয়েন।
রুহী ওর মাথা একটু উঠাতেই রোয়েন নিজের কপাল রুহীর কপালে ঠেঁকালো।গভীর নিশ্বাস টেনে নিয়ে চোখ বুঁজে বলতে লাগলো কি করে ভাবলে এসব করবো আমি?প্রমিজ করেছিলাম বিয়ের পর তোমাকে নিজের করে নিবো এর আগে নয়।কথাটা বলে চোখ খুলল রোয়েন।
রুহী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
রোয়েন রুহীর ওপর থেকে সরে গিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলো।রুহীর চুলের ওপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ঘুমিয়ে পড়লো রোয়েন।
পরদিন বৃদ্ধার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওরা।কাপ্তাই গিয়ে প্যাকিং সেড়ে নিবে ওরা।পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হবে।
পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়ে পড়লো ওরা হোটেলের বিল মিটিয়ে।রুহীর মুখ শুকিয়ে এসেছে।ঢাকায় পৌছুতেই আলাদা হয়ে যাবে।রোয়েন রুহীকে নিয়ে রেলস্টেশন পৌছে গেলো।পুরো জার্নিতে চুপ করে বসেছিলো রুহী।
ঢাকায় পৌছুতেই রুহীকে ওদের বাসায় নিয়ে এলো রোয়েন।রাত সাড়ে বারোটা বাজে।রুহী গাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গিয়ে আবার ও ফিরে এলো।
রোয়েন জানালা খুলতেই রুহীর ওর হাত চেঁপে ধরলো।হাতের পিঠে অসংখ্য চুমু বর্ষন করলো কাঁদতে কাঁদতে।
তারপর কি মনে করে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়লো রুহী।
রোয়েন রুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাতটাকে স্পর্শ করলো।রুহীকে ছেড়ে থাকতে যে ভীষন কষ্ট হবে।কথা গুলো ভেবে নিজের বাসায় চলে যায় রোয়েন।
চলবে