না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 29

মিরা মিহান বাড়ি ফিরে এলে মিহানকে মিরা ফ্রেশ হতে বলে মিরা হল রুমে সোফায় বসে আইসক্রিমের প্যাকেট গুলো সামনের টেবিলে রাখে। একটা আইসক্রিম খেতে খেতে টিভিতে গান ছাড়ে ফুল ভলিউমে। গানের শব্দে রান্না ঘর থেকে সবাই হল রুমে চলে আসে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে একদম বাচ্চাদের মত করে আইসক্রিম খাচ্ছে।
সেজুথি আন্টি : মিরা এত জোরে কেউ গান শুনে! আর বাইরে থেকে এসে আইসক্রিম নিয়ে বসে গেছো, ঠান্ডা লাগবে তো!
মিরা কারো কথা যেনো শুনতেই পাচ্ছে না। সে নিজের মত করে খেয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে মিরা মামা আর মামু চলে এসেছে এদিকে। মামু টিভি অফ করে দিয়ে মিরার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মিরা ভ্রু কুঁচকে বলে।
মিরা : দেখো মামু এরকম করে তাকিয়ে থাকবে না। আমার কিছু পেট খারাপ করবে।
মামা : আমরা তো এখনো তোর আইসক্রিমে নজর দিলামই না এরমধ্যে তোর পেট খারাপ হবে।
মিরা দুই মামা মিরার দুই পাশে বসে পড়ে।

সেজুথি আন্টি : কি হলো তোমরা আবার ওর পাশে বসলে কেনো?
মামি : ওকে একদম জ্বালাতন করবে না। তোমাদের কাজে যাও। আর মিরা এতগুলো আইসক্রিম খেলে তো ঠান্ডা লাগবে।
মামা : আমরা কোথায় ওকে জ্বালাতন করছি। প্রথম তো ওই শুরু করেছে।
সেজুথি আন্টি : মানে?
মিরা মামা আর মামু কিছু না বলে মিরার আইসক্রিম দুজনে দুই কামড়ে খেয়ে নেয়। ওদের এমন কাজে বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। মিরা একবার হাতের দিকে তাকাছে আর একবার দুই মামার দিকে তাকাছে। মিরা রাগে ফোস ফোস করতে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে।
মিরা : নানু! নানু! নানু!
মামা : ভাইয়া মা আসলে কিন্তু আমাদের খবর আছে।
এরমধ্যে মিরার নানু এসে উত্তেজিত হয়ে বলে।

নানু : কি হয়েছে মিরা? এত জোরে চিৎকার দিলি কেনো?
মিরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে।
মিরা : তোমার ডাকাত ছেলেরা আবার আমার আইসক্রিম খেয়ে ফেলছে।
নানু : কি! তোরা আবার শুরু করেছিস।
মামু : আসলে মা,,,
নানু : এই চুপ। মিরা আমি তোকে কি শিখিয়ে দিয়েছিলাম মনে নেই ?
মিরা হাসি মুখে বলে।
মিরা : হ্যা নানু মনে আছে।

নানু : তাহলে বসে আছিস কেনো যা ওদের আইসক্রিম খাইয়ে আয়।

মামা : না মা আমি আর জীবনে মিরার আইসক্রিম খাবো না। তাও তুমি এমন করো না।

মিরা : না আজ তোমাদের আমি আইসক্রিম খাওয়াবই।

মামু : মামনি তুই না আমার লক্ষী মেয়ে। এমন করে না।

মামা : মা তুমি মিরাকে কিছু বলো না।

নানু : কেনো তোদের কাজটা করার সময় মনে ছিলো না?

মিরা একটা আইসক্রিমের প্যাকেট ছিরে ওর মামুর মুখে ভালো করে আইসক্রিম মাখিয়ে দিতে থাকে।

মামু : মিরা না। এমন করিস না। তুই না আমার ভালো মা।

মিরা হাসতে হাসতে বলে।

মিরা : মামু তোমাকে কি মিষ্টি দেখতে লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না।

মিথি : এসব কি হচ্ছে?

নিশু : আপু এরকম করলো কেনো?

মিরা ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলে।

মিরা : মামা এবার তোমার পালা।

মামা একটা ঢোক গিলে বলে।

মামা : না। প্লিজ না।

মিরা : তা বললে তো হবে পিচ্চি মামা।

মিরা দৌড়ে গিয়ে ওর মামার মুখেও একই ভাবে আইসক্রিম মাখিয়ে দেয়। দুই মামা মুখ ভার করে বসে আছে, মিরা আর নানু হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।

নিশু : আপু তুমি এভাবে হাসছো কেনো? বড় বাবা আর বাবাকে এইভাবে আইসক্রিম মাখিয়েছো কেনো?

নানু : তোর এই দুই বাবা মিরাকে আইসক্রিম খেতে দেখলেই ওর আইসক্রিম নিয়ে খেয়ে ফেলতো। তখন মিরার কান্না থামানো যেতো না। তাই আমি শিখিয়ে দিয়েছি ওরা যদি আর আইসক্রিম খেতে আসে তাহলে ওদের মুখে আইসক্রিম মাখিয়ে দিবি। আর আজ তাই হলো।

নানুর কথা শুনে মিথি আর নিতু হেসে দেয়। মামি রেগে গিয়ে বলে।

মামি : তোমার বয়স বাড়ছে না কমছে?

সেজুথি আন্টি : একদম ঠিক হয়েছে এখন।

মিরা হাসতে হাসতে বলে।

মিরা : থ্যাংক ইউ মামনি আর মামি। নিশু আমার জন্য দুটো আইসক্রিম রেখে বাকিগুলো সব তোমাদের।

মামা : না এত অপমান সহ্য করা যাচ্ছে না ভাইয়া। কিছু একটা করো।

মিরা : আমি জানি এখন তোমরা আমাকে মুখেও আইসক্রিম লাগতে চাইবে। কিন্তু তা আমি হতে দিবো না।

একথা বলে মিরা নিজের রুমের দিকে দৌড় দেয়। উপস্থিত সবাই কিছুক্ষণ মিরার যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে পরে হা হা করে হেসে দেয়।

মামু : দেখলি কি পাজি মেয়ে? ঠিক বুঝে গেছে?

নিশু : যাই বলো বাবা তোমাদের দুজনকে দেখতে খুব ভালো লাগছে।

মামা : মা তুমি কি আমাদের নিজেদের মা?

নানু : তোদের এই ফালতু কথা শুনার আমার সময় নেই।

মামা : মা তুমি সব সময় আমাদের সাথে এমন করো।

নানু : বেশি কথা না বলে মুখ পরিস্কার করে আয়। তারপর বকবক করিস।

ওরা দুজন চলে গেলে সবাই হাসতে থাকে।

মিরা রুমে গিয়ে দেখে মিহান একা একা হাসছে।

মিরা : কি হলো তুমি একা একা হাসছো কেনো?

মিহান : হাসছি আমার বউয়ের দুষ্টুমি দেখে।

মিরা : আমি আবার কোথায় দুষ্টুমি করলাম?

মিহান মিরার নাক টিপ দিয়ে বলে।

মিহান : নিচে এতক্ষণ কি করছিলে?

মিরা : সব দেখে নিয়েছো?

মিহান : জ্বী।

মিরা : এসব কিছু না। তুমি দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে খেতে যাবো।

মিহান : আচ্ছা।

মিরা ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে খেতে যায়। খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে বিশ্রাম নিতে চলে যায়।মিহানের বুকের উপর শুয়ে মিরা আর মিহান গল্প করতে থাকে। এরমধ্যে ওদের কানে গানের আওয়াজ বেসে আসে।

🎵মম জিবনও যৌবনও,
মম আঁখিলো ভবনও, তুমি ভরিবে গৌরবে।
নিশি দিনের সময়,
“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম,
তুমি রবে নিরবে নিবিড় ও নিভিত পূর্নিমায় 🎶
নিশি দিনের সময়,
“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম “তুমি রবে নিরবে,🎶

জাগিবে কাগি, তব করুন ও আখিঁ। তব অন্ঞ্চল ও ছায়ায়, মোরে এএ রহিবে ঠাকি 🎶(২)

মম দুঃখ বেদন ও মম সপল ও সভন ও, তুমি ভরিবে সৌরভে, নিশি দিনে এসময়।🎶

“তুমি রবে নিরবে হ্নদয়ে মম, তুমি রবে নিরবে নিবিড় ও নিভিত পূর্নিমায়।
নিশি দিনে এসময় “তুমি রবে নিরবে ”
হুহুহ🎶
তুমি রবে নিরবে 🎶🎵

মিহান : কে গান গাইছে। গলাটা তো খুব সুন্দর।

মিরা : নানু গান গাইছে। এখন বোধহয় নানা নানু তাদের বারান্দার দোলনায় বসে আছে।

মিহান : তুমি জানলে কি করে?

মিরা : আমি তাদের প্রেম কত দেখেছি। তাই আমি সব জানি।

মিহান : বুঝছি পাকা বুড়ি এবার ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

মিরা মুচকি হেসে মিহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে।

মিরা : আচ্ছা।

মিহান মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মিরা ঘুমিয়ে পড়লে মিহান একচিল হেসে মিরার মাথায় একটা চুমু দেয়।

চলবে… 🍁