না চাইলেও তুই আমার !! Part- 30
মিরা ঘুম থেকে উঠে মিহানকে ওর পাশে পায় না। বিছানা থেকে উঠে ফোন নিতে গিয়ে দেখে, ফোনের নিচে একটা চিরকুট আছে। মিরা চিরকুট টা পড়া শুরু করে দেয়।
মিরা : আমাকে নিয়ে না ভেবে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেও। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। তোমার পাগল ডাক্তার তোমার কাছে খুব তাড়াতাড়ি আসছে।
মিরা চিরকুট টা পড়ে ঠোঁটে একচিল হাসি ফুটিয়ে তুলে।
মিরা : আমাকে ঘুমের মধ্যে রেখে কোথায় গেলো? কাল রাত থেকে সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ করে যাচ্ছে। আল্লাহ ই জানে কি করবে মিহান। না এসব পরে ভাবা যাবে আগে ফ্রেশ রেডি হয়ে নেই।
মিরা ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হতে শুরু করে দেয়। কালো শাড়ি, লিপস্টিক, কাজল, কালো চুড়ি, কালো টিপ, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। এক কথায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে মিরাকে। মিরা শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামে।মিরা হল রুমে এসে দেখে মিথি, নিশু আর মিশু বসে আড্ডা দিচ্ছে। মিরাকে দেখে মিশু বলে।
মিশু : ওয়াও আপু তোমাকে কি কিউট লাগছে দেখতে।
মিথি : ভাইয়া তোমার এই রূপ দেখলে তো পাগল হয়ে যাবে ভাবী।
মিরা লজ্জা পেয়ে বলে।
মিরা : ধ্যাত কি যে বলো না তোমরা।
নিশু : আমাদের কাছে এত লজ্জা কিসের। এত সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছো এখন?
মিরা : আমি জানি না। কাল রাত থেকে মিহান বলছে কি সারপ্রাইজ আছে। আমাকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। কিছুক্ষন পর এসে না কি নিয়ে যাবে।
মিরার কথা শুনে মিশু সুর টেনে বলে।
মিশু : ও হো। সারপ্রাইজ!
নিশু : শাড়িও বুঝি ভাইয়া পছন্দ করে দিয়েছে।
মিরা : হ্যা ওই পছন্দ করে কিনে আনছে।
মিথি : কিন্তু ভাইয়া কোথায় কোথাও দেখেছি না?
মিরা : আমি জানি না রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। একটু পরে এসে না কি আমাকে নিয়ে যাবে।
মিরারা আরো কিছুক্ষন কথা বলতে থাকে এরমধ্যে কে যেনো একের পর এক গাড়ির হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। মিশু বিরক্ত হয়ে বলে।
মিশু : উফ কে রে তখন থেকে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
নিশু : এত কথা না বলে দেখে আয় কে এমন করছে।
মিশু গিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।
মিশু : জিজু।
মিরা : মিহান এসেছে?
মিশু : জিজুকে চেনা যাচ্ছে না আপু। উফ কি লুক।
নিশু : এই তো মাথা গেছে।
মিথি : ওর কথা ছাড়া তো আমরা বাইরে গিয়ে দেখে আসি।
ওরা সবাই মিলে বাইরে বের হয়ে দেখে মিহান বাইকে বসে একের পর এক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। মিরা মিহানকে দেখে হা হয়ে যায়। মিহান কালো শার্ট, কালো জিন্স পড়া, চোখে সানগ্লাস, চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে কপালে এসে ছুঁয়েছে। মিথি মিরাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।
মিথি : কি গো ভাবী আমার ভাইয়ার থেকে তো চোখই ফিরছে না।
মিথির কথায় মিরা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। মিহান মুচকি হেসে বলে।
মিহান : মিরা ওঠো আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিরা কিছু না বলে আস্তে করে বাইকে বসে পরে। মিথিরা সবাই মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।
মিথি : ভাবীকে কি সারপ্রাইজ দিবে ভাইয়া?
মিহান : তোকে বলবো কেনো? যা তো। জান তুমি ভালো করে আমাকে ধরে বসো না হলে পরে যেতে পারো।
মিরা মুচকি হেসে মিহানের কাঁদে হাত রাখে মিহান বাইক চালানো শুরু করলে পিছন থেকে মিথিদের হাসাহাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর মিহান নিরিবিলি জায়গায় দেখে বাইক থামায়।
মিরা : কি হলো এখানে বাইক থামালে কেনো?
মিহান মিরার হাত ধরে বাইক থেকে নামিয়ে মিরার দুই গালে দুই হাত দিয়ে, কপালে সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে।
মিহান : জানো তুমি যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছিলে না তখন তোমাকে একদম রানীর মত লাগছিল। ইচ্ছে করছিল তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু তখন ওদের কারনে অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করসি।কিন্তু এখন আর পারছি না কন্ট্রোল করতে।
মিহান থামলে মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহান এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। মিরা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মিহানকে অবাক করে দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু পর বুঝতে পেরে মুচকি হেসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে। মিরা আরো নিবীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।
পাশ দিয়ে এক জোড়া কাপেল যাওয়ার সময় ওদের এই অবস্থায় দেখে বলে।
ছেলেটা : দেখছো মেয়েটা ছেলেটাকে কত ভালোবাসে। তুমি কখনো আমাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরোনি।
মেয়েটা : কি বললে আমি কখনো তোমাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরিনি?
ছেলেটা : আরে রাগ করছো কেনো। আমি তো মজা করছিলাম।
মিরা আর মিহান ওদের কথা শুনে ছেড়ে দিলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিহান : ঘুরতে এসেছো রোমিও জুলিয়েট?
ছেলেটা : জ্বী। সপ্তাহে একদিন সময় পাই ওকে নিয়ে ঘোরার। আপনারাও ঘুরতে এসেছেন?
মিহান : হ্যা। তা তোমরা বিয়ে করেছো?
ছেলেটা : সামনে মাসের ২৫ তারিখ আমাদের বিয়ে। আপনারা বিয়ে করেছেন?
মিহান : হ্যা। কিন্তু অনুষ্ঠান হয়নি। কিছুদিন পর অনুষ্ঠান হবে। এত কথা হলো কিন্তু তোমাদের নাম তো জানা হলো না!
ছেলেটা : আমি আবির একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করি। আমার হবু বউ পাখি।
পাখি : হ্যালো ভাইয়া। আপনাদের পরিচয় তো জানা হলো না।
মিহান : হ্যালো। আমি ডাক্তার মিহান চৌধুরী। আমার বউ মিরা চৌধুরী।
মিরা : তোমাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
পাখি : থ্যাংক ইউ আপু।
ওরা আর কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। মিহান মিরাকে বাইকে উঠতে বললে, মিরা এবার উঠে মিহানকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখে। মিহান একটু হেসে বাইক চালাতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর অন্ধকার হতে শুরু করে মিহান একটা মাঠে এসে বাইক থামায়। বাইক থেকে নেমে মিহান নিজের রুমাল দিয়ে মিরার চোখ বেধে দেয়।
মিরা : মিহান কি করছো। চোখ বাধলে কেনো? আর এ কোথায় নিয়ে এসেছো আমায়?
মিহান : বলছিলাম না সারপ্রাইজ। এখন চুপ চাপ চলো। আমি না বললে চোখের বাঁধন খুলবে না।
মিরা আর কিছু না বলে মিহানের হাত ধরে হাটতে থাকে। কিছুক্ষন পর মিহান মিরার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে।
মিহান : কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়াও জান আমি এখনি আসছি।
মিহান চলে গেলে মিরা মিহানকে ডাকছে কিন্তু মিহান সাড়া দিচ্ছে না। মিরা মনে ভয় করতে শুরু করে।
মিরা : মিহান তুমি যদি এখন সাড়া না দেও তাহলে আমি চোখ খুলে ফেলাম।
মিহান কিছু না বললে মিরা চোখের উপর থেকে রুমাল খুলে ফেলে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে মিহান হাটু গেড়ে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে বসে আছে। মিরা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মিরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাভ বানানো আর চারপাশে অসংখ্য মোমবাতি জ্বলছে। মিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে।
মিরা : এসব কি মিহান?
মিহান : ভালোবাসি! কতটা ভালবাসি তা বলতে পারবো না। তোমার সবটাকে আমি ভালোবাসি। প্রথম তোমার সেই রক্তমাখা মুখ দেখে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার রাগকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার অভিমান কে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার কষ্টগুলো কে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার হাসি মুখটা কে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার দুষ্টুমি কে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার মুখে পাগল ডাক্তার শব্দটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার পছন্দের কবিতা,
যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম।
কে যে আমায় কাঁদায় আমি কী জানি তার নাম।।
কোথায় যে হাত বাড়াই মিছে, ফিরি আমি কাহার পিছে–
সব যেন মোর বিকিয়েছে, পাই নি তাহার দাম।।
এই বেদনার ধন সে কোথায় ভাবি জনম ধ’রে।
ভুবন ভরে আছে যেন, পাই নে জীবন ভরে।
সুখ যারে কয় সকল জনে বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে–
গভীর সুরে “চাই নে’ “চাই নে’ বাজে অবিশ্রাম।।
[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]
এটাকেও ভালোবেসে ফেলেছি। এখন তোমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেও পারি না বরং বলতে পারো আমি ভাবতে চাই না। তুমি হবে আমার আগামী দিনের পথ চলার সাথী? আমার সাথে বৃষ্টি ভেজার সাথী? কোন এক জোছনা রাতে এক সাথে চন্দ বিলাশ করার সাথী? আগে ভালোবাসা কাকে বলে বুঝতাম না। কিন্তু এখন বুঝি ভালোবাসা মানে তুমি। ভালোবাসা মানে তোমার মুখের হাসি। একটু ভালোবাসবে আমায়? কথা দিচ্ছি নিজের ভালোবাসা দিয়ে তোমায় আগলে রাখবো।
মিহান একটুকু বলে থামলে মিরা মিহানের হাত থেকে ফুল নিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মিহান মিরাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে।
মিহান : কান্না করছো কেনো? ভালোবাসো না আমায়?
মিরা আবার মিহানকে জড়িয়ে ধরে বলে।
মিরা : বাসি! বাসি! খুব ভালোবাসি তোমায়। নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার হাসি মুখে ঘায়েল হতে ভালোবাসি। তোমার পাগলামি গুলোকে ভালোবাসি। না চাইতেও তোমার জোর করে নেওয়া ভালোবাসাকে ভালোবাসি। মাঝে মাঝে আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তোমার বোকা বোকা কথা খুব ভালোবাসি। আমার জীবনে তুমি আর মামু ছাড়া কেউ নেই। পারবো না হারাতে তোমাকে কোনো মতে। তুমি সব সময় একটা কথা বলো না!#না_চাইলেও_তুই_আমার ঠিক তেমনি তুমি না চাইলেও তুমি আমার। তোমার ভালোবাসার মায়াজালে আটকে গেছি আমি। পারবো না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে। তোমার সবটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
মিরার কথা শুনে মিহান একটু হেসে বলে।
মিহান : ভালোবাসি বউ।
মিরা : ভালোবাসি পাগল ডাক্তার।
মিহান মুচকি হেসে মিরার মুখটা উচু করে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে। মিরা হেসে মিহানের বুকের সাথে মুখ ঘষতে থাকে।
চলবে… 🍁